তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
(আবদালীর মন্ত্রণা-কক্ষ)
আবদালী। আজ আমরা জয়ী। সম্পূর্ণ জয়ী। সমগ্র পানিপথ মারাঠা সৈনিকের রক্ত আর লাশে ঢেকে দিয়েছি। আপনাদের সকলের সাহস ও সহযোগিতার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
সুজা। সকল প্রশংসাই আল্লাহ্র প্রাপ্য। আমরা উপলক্ষ মাত্র। আর যদি এই রণে জয়ী হওয়ার কথা বলেন তবে তার যশ-গৌরব ষোলআনা আপনার প্রাপ্য। এত বড় একটা বাহিনীকে শৃঙ্খলার সঙ্গে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত করার ক্ষমতা আমাদের কারো ছিলো না।
আবদালী। একটি একটি করে মারাঠা সেনাপতির পরাজয় বা মৃত্যুবরণ করার সংবাদ শুনেছি আর প্রবলতর উৎসাহে সেনা পরিচালনায় উদ্যোগী হয়েছি। পানিপথের প্রান্তরে মারাঠাদের গৌরব-রবি যত দ্রুত অস্তমিত হতে দেখেছি ততোই নব উন্মাদনায় চিত্ত ভরে উঠেছে। নব শক্তিতে শিথিল বাহু কঠিন হয়ে ফুলে উঠেছে।
সুজা। বাদশার পরাক্রম জগতে সুবিদিত।
আবদালী। আমাদের নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কি খুব ভয়াবহ?
সুজা। জাঁহাপনা স্বচক্ষে দেখেছেন।
আবদালী। যা দেখেছি তা অবর্ণনীয়। লাশের ওপর লাশ, তার ওপর লাশ! কেউ উপুর হয়ে, কেউ চিৎ হয়ে, কেউ দলা পাকিয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছে, আঁকড়ে ধরেছে, জাপটে ধরেছে। নানাজনের কাটা কাটা শরীরের নানা অংশ তালগোল পাকিয়ে এক জায়গায় পড়ে আছে। রক্তে রক্ত মিশেছে। কার সাধ্য এই রক্ত-মাংস-অস্থি হাতড়ে শত্রু-মিত্র বেছে বেছে আলাদা করে।
সুজা। তবু চেষ্টা করতে কেউ কসুর করে না। এখনও অনেকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। লাশ উলটে-পালটে মশালের আলোতে পরীক্ষা করে দেখছে প্রিয়জনের মুখের আদলের সঙ্গে কোনোরকম মিল অবশিষ্ট আছে কি-না।
আবদালী। আমি জানি।
সুজা। বিশ্বাস রাওয়ের লাশও আমাদের সৈনিকেরা উদ্ধার করে এনেছে।
আবদালী। বিশ্বাস রাওয়ের লাশ চিনতে পারলো কী করে? শনাক্ত করেছে কে?
সুজা। আমি। চিনতে কোনো কষ্টই হয়নি। পেশবার এই সুন্দর সুকুমার কিশোর পুত্রকে যে একবার দেখেছে সেই মনে রেখেছে। মরণ সে মুখশ্রীকে নষ্ট করতে পারেনি। এত কোমল, এত স্নিগ্ধ, এত উজ্জ্বল যে কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না যে এটা লাশ।
আবদালী। আমাদের হিন্দু রাজকর্মচারীদের নির্দেশ দিন যাতে উপযুক্ত মর্যাদার সঙ্গে মৃতের সৎকার করা হয়। হতভাগ্য অদূরদর্শী কর্মফলভোগী পেশবা। নিজের ছেলেকে রণক্ষেত্রে অধিনায়ক করে পাঠিয়েছিলো কুলগর্বের মোহে অন্ধ হয়ে। আর অক্ষম অবিবেচক রণোন্মাদ সেনাপতি রঘুনাথ সেই বালকের দুঃসাহসকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজে মরেছে, একটি নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক মানব শিশুকে অকালমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সুজা। রঘুনাথ সম্ভবত প্রাণ নিয়ে পানিপথ ত্যাগ করতে পারেননি।
আদালী। ইব্রাহিম কার্দি?
সুজা। আহত। বন্দী। স্বচক্ষে দেখিনি এখনও
আবদালী। কতোটা আহত?
সুজা। শুনেছি আঘাতে আঘাতে সর্বাঙ্গ নাকি বিকৃত হয়ে গেছে। অজ্ঞান অবস্থায় বন্দী হয়েছেন।
আবদালী। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে?
সুজা। কারাগারের ভেতরেই সকল রকম শুশ্রুষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আবদালী। প্রহরীরা সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য?
সুজা। বাদশার নিজস্ব দেহরক্ষীদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে দুজন বিশ্বস্ত লোককে প্রহরী নিযুক্ত করা হয়েছে।
আবদালী। উত্তম। উত্তম। মন্নু বেগ কোথায়?
সুজা। হয়তো বেশ পরিবর্তন করতে বিলম্ব হচ্ছে, আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার জন্য এতক্ষণ এখানে এসে যাওয়া উচিত ছিলো।
আবদালী। মন্নু বেগ কি সব শুনেছে?
সুজা। শোনা অসম্ভব নয়।
আবদালী। নবাব সুজাউদ্দৌলা!
সুজা। জ্বি।
আদালী। মন্নু বেগ হয়তো এক্ষুণি এসে পড়বে। হয়তো অনেক কথা বলবে, অনেক কথা জানতে চাইবে-আমি, আমি তাকে কী জবাব দেবো?
সুজা। যা জানেন তাই বলবেন। আপনি যা বলতে চাইবেন, তাই বলবেন। আপনার গৌরব তাতেই বৃদ্ধি পাবে।
আবদালী। নবাব নজীবদ্দৌলা কোথায়?
সুজা। সামান্য আহত হয়েছেন। সম্ভবত তাঁর যত্ন নিতে গিয়ে আটকে পড়েছেন। ঐ যে ওরা আসছেন।
আবদালী। ভালো। আপনি চলে যাবেন না। আমি আজ অন্য কারো সঙ্গে একা কথা বলতে চাই না।
সুজা। জ্বি।
[নবাব নজীবদ্দৌলা বাহু ও মাথার ক্ষত পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে নিয়েছেন। মন্নু বেগ পুরুষ সৈনিকের বেশ বহুলাংশে ত্যাগ করেছেন। দু’জনে প্রায় এক সঙ্গেই ঢুকবেন। অভিবাদন বিনিময় হবে। ]
আবদালী। খোদা আপনাদের মঙ্গল করুন। (নজীবকে) আপনি আহত হয়েছেন শুনে আমরা দুঃখিত ও চিন্তিত হয়েছি।
নজীব। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমার আঘাত অতি সামান্য। এখন একরকম সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করছি।
আবদালী। আপনার সাহস ও রণকৌশলের যে সকল সংবাদ লাভ করেছি, তাতে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতে মুসলিম শক্তি চিরকাল আপনার নেতৃত্ব লাভ করতে পারলে পরম সৌভাগ্য বলে বিবেচনা করবে।
নজীব। চিরকাল বড় দীর্ঘ সময় শাহেনশাহ্। আপাতত এই বর্তমান মুহূর্তে যে আপনার প্রশংসা লাভ করতে পারলাম সেটাই আমার পরম সৌভাগ্য।
আবদালী। মন্নু বেগের কী অভিমত?
মন্নু। নবাব নজীবদ্দৌলা মুসলিম শিবিরে অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ। তিনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।
আবদালী। যে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আমরা মহা ভয়ঙ্কর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম তা হয়তো অনেকখানি চরিতার্থতা লাভ করেছে। এই যুদ্ধে যাঁরা প্রাণ দান করেছেন, তাঁদের কথা স্মরণ করে আমাদের বিজয়োল্লাস কিছুদিন স্থগিত রাখা আমি সমীচীন মনে করি।
নজীব। বাদশা নিজের সুবিবেচনায় যা স্থির করেন তাই অনুসরণযোগ্য হবে। তবে আমার মত এই যে, বিজয়ী সেনাবাহিনী হত এবং মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করবে বলে জয়োল্লাসকে অবদমিত করে রাখে না। আনন্দোৎসব বাসী হলে তার নিজস্ব মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়ে যায়।
আবদালী। কিন্তু যেখানে বিজয়ের ক্ষতি ও ক্ষয় বিজিতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, সেখানেও কি উৎসবের আলোকমালা সমান তেজে জ্বলে?
নজীব। যতো বড় ক্ষতি ততো বড় লাভ-এই তো জগতের নিয়ম। এ নিয়ে আফসোস করবো কেন! আমি মনে করি আমার সৈন্যবাহিনী তাদের বিজয়োৎসবকে সার্থক করে তোলার জন্য যে বস্তু দাবি করছে বাদশায় তা দান করা উচিত।
মন্নু। তারা কী চাইছে?
নজীব। নবাব সুজাউদ্দৌলা তা জানেন।
আবদালী। তারা কী চায়?
নজীব। তুচ্ছ অচল মৃত বিশ্বাস রাওয়ের লাশ।
মন্নু। কেন?
নজীব। মৃত হোক তবু সে পেশবার পুত্র। তাদের সকল ঘৃণা ও রোষের প্রতীক পেশবার সন্তানের লাশ। উৎসব মঞ্চের একটি প্রধান অলংকাররূপে বিবেচিত হবে। উৎসবের পরিবেশকে একটা তীব্রতা, একটা গাঢ়তা দান করবে।
আবদালী। আমি অপারগ। রাজকীয় সম্মানের সঙ্গে যেন বিশ্বাস রাওয়ের মৃতদেহের সৎকার করা হয়, আমি ইতোমধ্যেই তার ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি।
নজীব। আপনি মহানুভব।
আবদালী। সাধারণ সৈনিককে শান্ত করবার জন্য উপায় উদ্ভাবন করুন।
সুজা। মনে হচ্ছে তারা শান্ত হবে না বলে বদ্ধপরিকর। নবাব নজীবদ্দৌলা একা তাঁর নিজস্ব সৈন্যবাহিনীকে নিরস্ত করতে পারলেও সমগ্র সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রিত করবে কে? তারা সব প্রতি মুহূর্তে আরো বেশি অশান্ত, বেশি অবাধ্য, বেশি মত্ত হয়ে উঠছে। সামনে শত্রু নেই। হয় নিহত, নয় পলাতক। কিন্তু আক্রমণের যে অগ্নিশিখা লক্ষ হৃদয় জুড়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। সামনে শত্রু নেই। হয় নিহত, নয় পলাতক। কিন্তু আক্রমণের যে অগ্নিশিখা লক্ষ হৃদয় জুড়ে দাউ করে জ্বলে উঠেছে তা নিভতে চাইছে না। চারদিকে লক্লক্ করে ছুটে যাচ্ছে। রোধ করতে না পারলে যা পাবে তাই গ্রাস করবে।
নজীব। কেবল আজ নয়, নবাব সুজাদ্দৌলার উক্তি বরাবরই উদাস, উদ্দীপনাহীন, হতাশাব্যঞ্জক। আজকের জয়ের প্রদীপ্ত মুহূর্তেও তিনি নিজের ভাবলোকে সুপ্ত, কর্মলোকে নিস্তেজ। আমি এই যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্যে গর্বিত। জয়লাভের জন্য আনন্দিত। আমার সৈন্যবাহিনীর সকল আচরণে সন্তুষ্ট।
আবদালী। মন্নু বেগের কোন অভিযোগ আছে?
মন্নু। না।
আবদালী। কোনো দাবি, কোনো প্ৰাৰ্থনা?
মন্নু। নবাব নজীবদ্দৌলার প্রার্থনা আপনি মঞ্জুর করেননি। আমার প্রার্থনা যে মঞ্জুর করবেন তার কি নিশ্চয়তা আছে?
আবদালী। করে দেখো। নবাব নজীবদ্দৌলা লাশ প্রার্থনা করেছিলেন তুমি জীবন প্রার্থনা করো, অবশ্যই তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
মন্নু। বাদশা হয়তো আমাকে নিতান্ত শিশু বিবেচনা করছেন। ভাবছেন, এর দাবি এত ক্ষুদ্ৰ যে, তা মেটান মোটেই দুঃসাধ্য হবে না। যদি হয় তাহলে ক্ষতি নেই। নানা রকম ছলনার দ্বারা মন ভুলিয়ে রাখা যাবে।
আবদালী। তুমি আমাদের বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর অবিচার করছো, মন্নু বেগ।
মন্নু। না হলে হয়তো ভেবেছেন এখন এ আর সৈনিক নয়, সামান্য রমণী মাত্র। পুরস্কার লাভের সম্ভাবনায় আবেগে দিশেহারা হয়ে হয়তো এমন এক অসম্ভব বস্তু প্রার্থনা করে বসবে যে, তা চরিতার্থ করার প্রশ্নই উঠবে না। অট্টহাসির ফুঁৎকারে তাকে উড়িয়ে দিলেও কেউ তার প্রতিবাদ করবে না, তাকে অসঙ্গত ভাববে না।
আবদালী। তুমি লক্ষ করোনি, আমি তোমাকে এখনো মন্নু বেগ বলেই সম্বোধন করছি। বীরপনায় তুমি মুসলিম শিবিরের রত্ন স্বরূপ। এই যুদ্ধে জয়লাভের তুমি অন্যতম স্তম্ভস্বরূপ। তুমি বীর এবং মহান। তুমি তরুণ কিন্তু শক্তিমত্ত। তুমি কঠিন কিন্তু করুণাময়। তুমি জয়ী, তুমি তুষ্ট, তুমি ক্ষুব্ধ, তুমি দুঃখী। তোমার সঙ্গে আমি কৌতুক করতে যাবো কেন?
মন্নু। আশা জাগিয়ে যদি বাদশা পরে তা কেড়ে নেন, সে আঘাত আমি সহ্য করতে পারবো না। সে নিষ্ঠুরতার তুলনা থাকবে না।
আবদালী। তোমাকে অদেয় কিছুই নেই।
মন্নু। ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্তি দিন।
নজীব। শুনেছিলাম ইব্রাহিম কার্দি গুরুতররূপে আহত হয়েছেন। তিনি কি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ?
সুজা। আমি জানি না।
[ধীরে ধীরে মঞ্চে প্রবেশ করেছে অমরেন্দ্রনাথ বেশি আতা খাঁ, পোশাকের সর্বত্র রক্তের বড় বড় ছোপ।]
অমর। আমি জানি।
মন্নু। একী আতা খাঁ। কোথায় ছিলে এতদিন? তোমার একী দশা হয়েছে! এখন এলে?
অমর। একটু আগে ফিরেছি।
আবদালী। তুমি কী জানো?
অমর। ইব্রাহিম কার্দির জ্ঞান ফিরে এসেছে। এতদিন পর এই প্রথম স্বাভাবিক নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়েছেন। চিকিৎসক ও শুশ্রূষাকারীরা অল্পক্ষণ হলো তাঁকে নিরিবিলি ঘুমুতে দেবার জন্য নিজেরা কারাকক্ষ ত্যাগ করে চলে এসেছেন।
মন্নু। আমি এখনও বাদশার জবাব শুনতে পাইনি।
আবদালী। মঞ্জুর। এর চেয়ে বড় দাবি হলেও প্রত্যাখ্যান করতাম না।
অমর। (নজীবকে) বেগম সাহেবা আপনাকে সম্বর্ধনা জানাবার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনাকে অনুসন্ধান করছেন।
নজীব। আমাকে মাফ করবেন। বাদশার সঙ্গে একটু পরে এসে আবার সাক্ষাৎ করবো।
[প্রস্থান]
মন্নু। আমি এখনি একবার কারাগারে যাবো। এখনি তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে চাই। অপেক্ষা করতে চাই না।
আবদালী। শান্ত হও। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। একটু অপেক্ষা করো। মুক্তির ফরমান স্বাক্ষর করে এখনি তোমার হাতে দিয়ে দিচ্ছি।
[প্রস্থান]
মন্নু। হিরণবালা কোথায়?
আতা খাঁ। হিরণবালা কোথায়!
মন্নু। সে কী! তুমি একলা ফিরে এসেছো?
আতা খাঁ। না।
মন্নু। কোথায় রেখে এসেছো তাকে?
আতা খাঁ। বাইরে।
মন্নু। বাইরে কেন?
আতা খাঁ। মরে গেছে। আমি যখন তাঁকে খুঁজে পেলাম তখন সে মরে পড়ে আছে। লাশটা কাঁধে ফেলে বয়ে নিয়ে এসেছি। আপনারা অপেক্ষা করুন, আমি গিয়ে মুক্তির ফরমানটি নিয়ে আসি।
[প্রস্থান]
সুজা। আপনাকে উপদেশ দিতে চেষ্টা করা আমার পক্ষে ধৃষ্টতা মাত্র। তবু আপনার চেয়ে বয়সে বড়, সম্ভবতঃ বেশি অভিজ্ঞতাও বটে—এমন কোনো পুরুষের কাছ থেকে দুর্দিনে পরামর্শ গ্রহণ করাকে যদি হেয় জ্ঞান না করেন তাহলে কিছু বলতে পারতাম।
মন্নু। দুর্দিন নয়, আজ আমার সুদিন। আমার নবজীবনের স্বর্ণময় রত্নময় উজ্জ্বল ঊষা।
সুজা। আপনাকে আরো শক্ত হতে হবে।
মন্নু। আমি কেন অযথা আতঙ্কিত হবো? আতা খাঁ কী বলেছে আপনি শোনেন নি? তাঁর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি এখন শান্তিতে ঘুমুচ্ছেন। আমি যাবো। আমি এক্ষুণি তাঁর কাছে যাবো। কারো কোনো পরামর্শে আমি বিচলিত হতে চাই না।
সুজা। ইব্রাহিম কার্দির জ্ঞান যে ফিরে এসেছে এর মধ্যেও কি আতঙ্কের কিছু নেই? জ্ঞান যদি আর কোনোদিন ফিরে না আসতো, তবে তার মধ্যেও কি কোনো মঙ্গল লুকানো থাকতো না? আবদালীর কাছে হাত পেতে যে মুক্তি আপনি ভিক্ষা করে পেলেন, ইব্রাহিম কার্দি কি তা কখনো সজ্ঞানে গ্রহণ করতে পারবেন?
মন্নু। আপনি দার্শনিক। বুদ্ধি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে অভ্যস্ত। আমি নারী। আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্ব জয় করবো। ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্ত করবো। তাকে এই হৃদয়ের রক্ততলে বন্দী করবো। আপনি কেন আমাকে সংকল্পচ্যুত করতে চেষ্টা করছেন?
সুজা। প্রত্যাখ্যানের আঘাত যদি কখনও অভাবিতরূপে কঠিন হয়, তবু যেন তা সইতে পারেন তার জন্যে আপনাকে তৈরি থাকতে বলি। আমি যদি আপনি হতাম, তাহলে আজকে, এ মুহূর্তে বাদশাকে দিয়ে বন্দীমুক্তি ফরমান সই করিয়ে নিতাম না। নিলেও তাকে মুখ্য কর্ম বলে গণ্য করতাম না। তার ওপর নির্ভর করে আশায় বুক বাঁধাতাম না। মরণ যেখানে বাসা বেঁধেছে তার নাম কারাগার নয়।
[আতা খাঁর প্রবেশ]
আতা খাঁ। ফরমান নিয়ে এসেছি।
মন্নু। আর দেরি করবো না। তাড়াতাড়ি চলো।
[দু’জনের প্রস্থান]
সুজা। আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন।
[পর্দা পড়বে।]
দ্বিতীয় দৃশ্য
[কারাগারে সামনে। দুই প্রান্তে দু’জন রক্ষী বশির খাঁ ও রহিম শেখ। বশির খাঁ টহল দিতে দিতে এক সময়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এইমাত্র ধড়ফড় করে জেগে উঠেছে। রহিম শেখ অন্য প্রান্তে পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।]
বশির। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, না?
রহিম। জানি না।
বশির। লক্ষ করোনি?
রহিম। না।
বশির। নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। নইলে মাথার পাগড়ি মাটিতে গড়াগড়ি খাবে কেন? আমার ফুফা মস্ত বীরযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বলতেন, পুরুষ মর্দের পাগড়ি পাটিতে পড়ে গড়াগড়ি যাবে শুধু একবারই, সে হলো যখন মাথা শরীর থেকে আগা হয়ে মাটিতে পড়ে যাবে তখন, তার আগে নয়।
রহিম। তোমার ফুফা তোমাকে জানতো না।
বশির। আল্লাহ্ করেন, তোমার যেন তাই হয়। পাগড়িটা গড়িয়ে মাটিতে পড়বার আগে মুণ্ডুটা যেন খসে পড়ে।
রহিম। আল্লাহ্ যেন তাই করেন।
বশির। কেউ এসেছিলো?
রহিম। না।
বশির। চিকিৎসকদের কেউ?
রহিম। না।
বশির। একবার মনে হলো ভেতর থেকে কে যেন ডেকে উঠলো।
রহিম। ভুল শুনেছো।
বশির। তুমি দেখছি সবই শুনেছো, সবই দেখেছো, কেবল আমার পাগড়িটা কখন গড়িয়ে পড়ে গেলো তাই লক্ষ করোনি।
রহিম। করেছি।
বশির। তখন যে বললে করোনি।
রহিম। বানিয়ে বলেছিলাম।
বশির। বানিয়ে বলেছিলে?
রহিম। তোমার পাগড়ি আমি খোঁচা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলাম।
বশির। তবু ভালো, খোঁচা দিয়ে মুণ্ডুটা ফেলে দিতে চাওনি। কিন্তু এই কৌতুকের কারণ?
রহিম। পরীক্ষা করে দেখছিলাম তুমি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছো কি-না।
বশির। কেন?
রহিম। ভেতরে ঢুকে বন্দীকে একবার দেখে আসতে চেয়েছিলাম।
বশির। রহিম শেখ! এ-সব তুমি কী বলছো?
রহিম। খুব সাবধানে অগ্রসর হতে চেষ্টা করেছি, যাতে কেউ টের না পায়।
বশির। তুমি সত্যি ভেতরে গিয়েছিলে?
রহিম। গিয়েছিলাম।
বশির। কী করেছো তুমি?
রহিম। কিছু করিনি।
বশির। তুমি সর্বনাশ করেছো। তুমি জানো না তুমি কী সর্বনাশ করেছো।
রহিম। আমি কিছু করিনি। আমি শুধু কাছ থেকে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম কার্দির শায়িত দেহটা ভালো করে দেখছিলাম।
বশির। অত কাছ থেকে কেন দেখতে গেলে?
রহিম। দেখি, বন্দী গভীর ঘুমে অচেতন। এত গাঢ় ঘুম, মনে হলো যেন এর কোনো শেষ নেই। এর জন্যে আমি তৈরি ছিলাম না। হঠাৎ বুঝতে পেরে আমি নিজে যে চেতন অচেতন জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
বশির। তুমি কী করেছো আল্লাহ্ জানেন। দোহাই তোমার, সত্য কথা বলো।
রহিম। তুমি যা সন্দেহ করছো আমি তা করিনি।
বশির। তোমার হাতে এ কিসের দাগ?
রহিম। লাল রঙ জমাট বেঁধে কালচে হয়ে গেছে।
বশির। কোত্থেকে এলো?
রহিম। ইব্রাহিম কার্দির বক্ষ থেকে।
বশির। এই বলে শুধু কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলে। এখন বলছো তার বুকের রক্ত তোমার হাতে লেগে রয়েছে। সব কথা স্পষ্ট করে স্মরণ করতে চেষ্টা করো।
রহিম। আরো ভালো করে দেখবার জন্যে একবার তার বুকের ওপর হাত রেখে ঝুঁকে পড়ে দেখছিলাম।
বশির। তুমি তাঁর পাজরের ওপরে হাত রেখেছিলে?
রহিম। রেখেছিলাম। অনেক রক্ত লেগেছিলো সেখানে। কিন্তু সব এত নিস্পন্দ আর ঠাণ্ডা মনে হলো যে, শিউরে উঠে হাত সরিয়ে নিয়েছি। কারা যেন এদিকে আসছে।
বশির। তোমার কোনো কথা আমি বিশ্বাস করি না। যা করেছো করেছো, এখন আর আবোল-তাবোল বকতে হবে না। প্রাণে বাঁচতে চাও তো মুছে ফেলো। আমার এ পাগড়ির ভাঁজের মধ্যে ভালো করে রগড়ে হাত দুটো মুছে ফেলো। (নিজেই সাহায্য করে) কেউ এলে যা বলতে হয় আমিই বলবো। তুমি কোনো কথা বলো না।
[দুই প্রহরী দুই প্রান্তে। মঞ্চে প্রবেশ করে নজীবদ্দৌলা ও জরিনা বেগম। প্রহরীদ্বয় অভিবাদন জানিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে।]
জরিনা। তবু বোধ হয় দেরি করে ফেলেছি। আপনার জন্যই বঞ্চিত হলাম।
নজীব। আমার দোষ কোথায় আমি এখনও বুঝতে পারছি না। তাড়া দিচ্ছিলে বটে, কিন্তু ধরেও রাখছিলে। দু’দিক সামাল দিয়ে যতো তাড়াতাড়ি পেরেছি ছুটে এসেছি।
জরিনা। দেখছেন না সব কী রকম চুপচাপ। ওরা হয়তো এসে ফিরে চলে গেছে।
নজীব। আমার সে রকম মনে হয় না। হয়তো এখন পর্যন্ত কেউ এসে পৌছায়নি। জোহরা বেগম নিশ্চয়ই বাদশার স্বাক্ষরযুক্ত মুক্তির ফরমান না দিয়ে এখানে ছুটে আসবেন না। একটু দেরি হওয়া স্বাভাবিক।
জরিনা। এদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
নজীব। (প্রহরীকে) বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার জন্য কেউ এসেছিলেন কি?
বশির। জ্বি না।
নজীব। দেখলে তো তুমি অযথা হয়রান হচ্ছিলে।
জরিনা। আমার ব্যগ্রতার কারণ আপনি বুঝবেন না। অনেক গুনাহ্ করেছি, আজ তার কিছু স্খালন করতে চাই। জোহরা বেগম আর ইব্রাহিম কার্দির পুনর্মিলনের দুর্লভ মুহূর্তটি স্বচক্ষে দেখে জীবন সার্থক করতে চাই।
[প্রবেশ করবে আতা খাঁ, সুজা ও সম্পূর্ণ রমণীর রূপসজ্জায় মঞ্চ আলোকিত করে জোহরা বেগম। আতা খাঁ প্রহরীদ্বয়কে দেখেই চমকে ওঠে। একবার একে আরেকবার ওকে দেখে। তারপর এগিয়ে যায় রহিম শেখের দিকে জরিনা গিয়ে জোহরা বেগমের বাহু স্পর্শ করে। অন্য পার্শ্বে সুজাউদ্দৌলা। রহিম শেখ বাদশার স্বাক্ষরযুক্ত মুক্তির ফরমান উদ্বেগহীন চোখে দেখে এবং দেখেও তেমনি একই অর্থশূন্য দৃষ্টি মেলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এগিয়ে এসে ফরমানটি হাতে তুলে নেয় বশির খাঁ। পড়ে। পড়ে কুর্ণিশ করে সরে দাঁড়ায়। ভেতরে চলে যাবার জন্য ইঙ্গিত করে কারাদ্বারের দিকে হাত প্রসারিত করে দেয়।]
সুজা। নিশ্চয়ই ইব্রাহিম কার্দি এখনো খুব দুর্বল। প্রচুর রক্তপাতের ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া অস্বাভাবিক রকম দ্রুত হয়ে পড়েছে। এ সময়ে অবাঞ্ছিত মুক্তির এই আকস্মিক সংবাদ কিনা দিলেই নয়?
জোহরা। আমি চিকিৎসককে আসতে খবর দিয়েছি। নিশ্চয়ই তিনি এর কোনো প্রতিকার জানেন।
সুজা। চিকিৎসকের কর্মও প্রকৃতির নিয়মের অধীন। তিনি রোগের কারণ বের করতে পারেন, তার প্রতিকারের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, কিন্তু বিনা কালক্ষেপে নিরাময়ের নিশ্চয়তা দান করা তাঁর সাধ্যাতীত। আপনি যদি ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হন তবে আমি এখনও বলি এ সাক্ষাৎ আরো কিছুদিন স্থগিত থাকুক।
কারাগারের অন্ধকার কুঠুরীর মধ্যে অবসাদগ্রস্ত যে সৈনিক তার আশাহীন জীবনের অন্তিম মুহূর্তকে প্রত্যক্ষ করে, তার জ্যোতিহারা চোখের সামনে অকস্মাৎ জীবনের ও রূপের এই দৃষ্টিসম্মোহনকারী প্রদীপ্ত ঐশ্বর্য নিয়ে আবির্ভূত হওয়া সংগত হবে না।
জোহরা। তাঁর জীবনে আমি আকস্মিক নই, আমি স্বাভাবিক। অন্ধকারটা স্বপ্ন, অলীক। আলোটাই সত্য আলোটাই স্থায়ী। আমি ছাড়া ইব্রাহিম কার্দির জীবনে বাকি সব মিথ্যা মিথ্যা মিথ্যা!
সুজা। আমার একটা শেষ মিনতি রক্ষা করবেন?
জোহরা। হয়তো করবো না, কিন্তু তবু বলুন।
সুজা। আপনার অনুমতি পেলে, প্রথমে আমরা কেউ কারাগারে প্রবেশ করি। আপনি এখানে বা অন্যত্র কোথাও অপেক্ষা করুন। আমরা ক্ষেত্র প্রস্তুত করি, হৃদয়ে আলো জ্বালি, শরীরে বল সঞ্চার করি। তারপর আপনাকে সংবাদ প্রেরণ করলে আপনিও আসবেন।
জোহরা। আমি এই মুহূর্তে একা, সকলের আগে কারাগারে প্রবেশ করছি। আপনারা বাইরে অপেক্ষা করুন, আমি আপনাদের ডেকে পাঠাবো।
সুজা। হঠাৎ যদি কোন কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয়, দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি যদি–
জোহরা। আমার সঙ্গে জরিনা বোন যাবে। আপনারা বাইরে অপেক্ষা করুন। আমি আর দেরি করতে রাজি নই। চলো।
[জোহরা ও জরিনার প্রস্থান]
[সব স্তব্ধ হয়ে অপেক্ষা করে। তারপর অকস্মাৎ সেই স্তব্ধতা বিদীর্ণ করে ভেতর থেকে ধ্বনিত হয় জোহরার তীব্র তীক্ষ্ণ আর্তনাদ-ইব্রাহিম! ইব্রাহিম! ইব্রাহিম! সবাই দৌড়ে কারাগারের ভেতরে ছুটে যায়। বশির খাঁ ভয়ার্ত বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে রহিম শেখের দিকে। রহিম শেখের মুখ সামান্য বিকৃত হয়, স্পন্দিত হয়, তারপর নিশ্চল পাথরের মূর্তির ভ্রম সৃষ্টি করে। পেছন থেকে ধীরে ধীরে ধ্বনিত হতে থাকে—জরিনার কণ্ঠে শোনা যায়: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতে ওয়াল আরদে—তারপর আবার–আফা হাসিবতুম আন্নামা খালাকনাকুম আবাসাউ, ওয়া আন্নাকুম এলাইনা লা তুরজাউন আবৃত্তির কণ্ঠ কিন্তু নিচু হবে যখন রোরুদ্যমানা উদ্ভ্রান্ত জোহরা বেগম আবার মঞ্চে প্রবেশ করবেন। পেছনে পেছনে আসবেন সুজাউদ্দৌলা।]
সুজা। তুমি কেন সাড়া দিলে না? কেন জেগে উঠলে না? কেন ঘুমিয়ে পড়লে? আমি এত কষ্টের আগুনে পুড়ে, মনের বিষে জরজর হয়ে এত রক্তের তপ্তস্রোতে সাঁতরে পার হয়ে তোমাকে পাবার জন্যে ছুটে এলাম। আর তুমি কি–না ঘুমিয়ে পড়লে। ঘুমের কোন্ অতল তলে ডুবে রইলে যে আমি এত চিৎকার করে ডাকলাম তবু তুমি একবারও শুনতে পেলে না। আহা! ঘুমাও। আমি তোমাকে জাগাবো না। তোমার মুখ দেখে আমি বুঝেছি, অনেকদিন তুমি ঘুমাওনি। চোখের দু পাতা মুদে মনের আগুনের লকলকে শিখাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আড়ালে ঠেলে দিতে পারোনি। কষ্ট, ঘুমের বড় কষ্টে ভুগেছো তুমি। ঘুমাও! আরো ঘুমাও! প্রাণভরে ঘুমাও!
আল্লাহ্ যা করেন সবই মঙ্গলের জন্যই করেন। বাদশার যিনি বাদশা খোদ তিনি মুক্তির ফরমান জারি করেছেন। দুনিয়ার এক সামান্য বাদশার ফরমানের চেয়ে তার দাম অনেক বেশি। যিনি প্রকৃত বীর ও মহান তিনি দুয়ের মধ্যে মেকিটা ঠেলে ফেলে দিয়ে সাচ্চাটা কুড়িয়ে নিয়েছেন। ছোট মুক্তিটাকে অবহেলা করে বড় মুক্তিটাকে আলিঙ্গন করেছেন। খোদা তাঁকে শান্তিতে রাখুন।
[সুজাউদ্দৌলা ও জোহরা বেগম দর্শকদের দিকে পেছন ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে। কারাগারের ভেতর থেকে তখন কারো গায়ের দামি কালো জরিপাড় শাল দিয়ে ঢেকে একটি খাটের ওপর শায়িত মৃত ইব্রাহিম কার্দিকে বহন করে বেরিয়ে আসে আতা খাঁ ও নজীবদ্দৌলা, আরো দু’জন সাহায্যকারী। পেছনে তখনও শোনা যাবে: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তাব’ খুযুহু সিনাতু ওয়ালা নাওম। আফা হাসিবতুম আন্নাম খালাক্বনাকুম আবাসাউ, ওয়া–আন্নাকুম এলাইনা লা তুরজাউন ইত্যাদি। ক্রমশ একাধিক কণ্ঠে সম্মিলিতভাবে আবৃত্তিও হতে থাকবে। লাশ বহনকারীরা ধীরে ধীরে মঞ্চ ত্যাগ করবেন।]
।। যবনিকা।।