বুলগাশেম প্যারাডক্স
একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। দেখি, কেউ একজন আমার দিকে একটা পিস্তল তাক করে আছে। লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। তবে বোঝা যায়, সে আততায়ী নয়। এক ধরনের অথোরিটি আছে তার মধ্যে। মানে ব্যাপারটা খুন নয়। এক্সিকিউশন।
বিছানা ছেড়ে দেখি ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। কফি বানিয়ে জানালার ধারে বসলাম। বাইরে ঘন কুয়াশায় বেশি দূর দেখা যায় না। একটা গাড়ির হেডলাইট কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে আসছে। আমারটা এ রাস্তার একমাত্র বাড়ি। তার মানে গাড়িটা আমার কাছেই আসছে। আরেকটু কাছে এলে দেখি সেনাবাহিনীর জিপ।
একটা অস্বস্তি ভর করল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলাম।
চৌকাঠে দাঁড়িয়ে উর্দি পরা এক সেনা কর্মকর্তা।
ড. বুলগাশেম?
বলছি।
আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।
এক্ষুনি?
ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে জিপটা যেদিকে ছুটল, সেটা সেনানিবাস এলাকার উল্টো দিক। আমি চিন্তিত বোধ করলাম। জিপের সহযাত্রীদের কাছ থেকে কিছু জানার উপায় নেই। শহর পেরিয়ে পার্বত্য এলাকার পথ ধরলাম আমরা।
গাড়ি ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটা নির্জন পাহাড়ে উঠছি। গাছপালা একটু কমে এলে আকাশে ভেসে উঠল মানমন্দিরের চূড়া।
তখন মনে পড়ল, প্রায় পরিত্যক্ত এই মানমন্দিরে সামরিক লোকজনের আনাগোনার খবর দেখেছি পেপারে। কী ঘটছে, কৌতূহল অনেকের।
মানমন্দিরের পোর্টিকোয় পাহারা দেখে বুঝলাম, ভবনটা আসলে এরই মধ্যে সামরিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে।
অবজারভেশন কক্ষে যে লোকটা আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন, তিনি মানমন্দিরের বেসামরিক কিউরেটর পি রাঘবন। পরিচয় না থাকলেও একাধিক একাডেমিক সেমিনারে আমি তাকে দেখেছি।
রাঘবন ও আমার মধ্যে যে কথোপকথন হলো, তার নিরস প্রাতিষ্ঠানিক টোন আমার দৃষ্টি এড়াল না। রাঘবন গবেষক থেকে প্রশাসক হয়ে উঠছেন।
আপনি অবাক হচ্ছেন ড, বুলগাশেম, সন্দেহ নেই।
অবশ্যই। প্রথমত অবাক হচ্ছি, একটা জ্যোতির্বিদ্যার মানমন্দিরে সামরিক উর্দির লোকজন দেখে।
ভুলে যাচ্ছেন কেন, মহাকাশ সংস্থা আসলে প্রতিরক্ষা দপ্তরের অংশ। মহাকাশ গবেষণা তো দিনশেষে সামরিক গবেষণাই।
কিন্তু এভাবে টেকওভারের মানে কী?
আমরা একটা নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে আছি।
কত বড়?
অনেক। আপনি যতটা কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বড়।
হুমকির ধরন?
এখনো আমরা পুরোপুরি ঠাহর করতে পারিনি।
উৎস?
সবটা বলা যাবে না। শুধু বলব, হুমকিটা আসছে বাইরের দিক থেকে।
বাইরের দিক মানে?
বাইরের দিক মানে বাইরের দিক।
রাঘবনের কথার মধ্যে এমন একটা ইশারা ছিল, আমরা দুজনেই মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালাম। দুপুর হয় হয়। কুয়াশা কেটে ঝকঝকে রোদে চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
আমি অবিশ্বাস ভরা চোখে রাঘবনের দিকে তাকালাম। প্রতিবাদ করে উঠলাম, দয়া করে এ কথা বলবেন না যে আমরা সংকেত পাচ্ছি।
বলব।
মানে?
মানে আমরা সংকেত পাচ্ছি। অবশেষে। দু শ বছরের টানা চেষ্টার পর।
মানে কেউ সংকেত দিচ্ছে?
দিচ্ছে।
মানে বাইরে সত্যি কেউ আছে!
আছে। এখন আমরা মোটামুটি নিশ্চিত।
তাহলে ঘোষণা করছেন না কেন? এত বড় বৈপ্লবিক, বিস্ফোরক তথ্য কেন চেপে রাখছেন?
কারণ আমরা কনফিউজড।
এই না বললেন, আপনারা নিশ্চিত?
নিশ্চিত, আবার কনফিউজড।
মানে?
আমরা আমাদের রিসেপ্টরে যেসব ডেটা পাচ্ছি, সেগুলো যে সজ্জাতেই সাজানো যাক না কেন, কতগুলো মৌলিক অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে, সেগুলো এত মৌলিক যে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। নানা রকম গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে সেগুলো ফিল্টার করার চেষ্টা করা হয়েছে। কাজ হয়নি। এগুলোর ব্যাখ্যার পঞ্চাশ রকম হাইপোথিসিস দাঁড়িয়ে গেছে। সেগুলো ঝাড়াই-বাছাই করে শেষ পর্যন্ত যেটা টিকেছে, যেটা জিগস-পাজলের টুকরোগুলোকে খাপে খাপে বসিয়ে দিতে পেরেছে, সেই হাইপোথিসিস মেনে নেওয়ার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত নই।
কী সেটা? আমরা এর নাম দিয়েছি হিট্টি প্রোপোজিশন। গণিতবিদ প্রফেসর হিট্টির নাম শুনেছেন তো?
আমি গণিতের লোক নই।
আমি খুব সরল করে শুধু সিদ্ধান্তটা বলি। প্রফেসর হিট্টি বলছেন, আমরা যেসব ডেটা পাচ্ছি, সেগুলো কোনো করপোরাল উৎস থেকে আসছে না।
মানে?
এগুলোর কোনো জাগতিক প্রতিরূপ নেই। মানে এর কোনো বস্তুগত উৎস সরাসরি মিলবে না।
আধ্যাত্মিক ব্যাপার নাকি? সুফিবাদ?
না। সুফিবাদ নয়। প্রফেসর হিট্টি বলছেন, আমরা যেসব ডেটা পাচ্ছি, সেগুলো আসলে স্বপ্নের উপকরণ মাত্র।
স্বপ্ন মানে?
স্বপ্ন মানে স্বপ্ন, আমাদের ঘুমের মধ্যে যেগুলো মস্তিষ্কের মধ্যে তৈরি হয়, বিজ্ঞানের এই তুরীয় অগ্রগতির কালেও যেগুলোর কারণ বা প্রকৃতি আমরা খুব একটা উদ্ঘাটন করতে পারিনি।
আমি থ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। দেখি, কথাটা বলে রাঘবন অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন। বিব্রত ভাব লুকানোর চেষ্টা।
আমরা বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থাকলাম। শেষে আমি বললাম, এটা কোনো প্র্যাকটিকাল জোক নয় তো?
জোক নয়। আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প হাইপোথিসিস নেই। আমরা একপ্রকার নিরুপায়।
তাহলে একটা দুশ বছরের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের এই পরিণতি? মহাবিশ্বে আমরা আমাদের দোসর পেলাম বটে, কিন্তু পুরোটা পেলাম না, পেলাম শুধু তাদের স্বপ্ন?
এক দিক থেকে দেখলে তা-ই। হুম, খুব ক্রুড অর্থে তা-ই বটে। কোনো এক অদ্ভুত কারণে ওদের স্বপ্নগুলো ট্রান্সমিটেড হচ্ছে। আর সেটা ট্রান্সমিটেড হচ্ছে একটা রেগুলার লুপবিশিষ্ট রেডিও-থারমাল তরঙ্গের আকারে, আমাদের রিসেপ্টরগুলো যেটা ডিকোড করতে সক্ষম।
আমি একটু অধৈর্য হয়ে পড়লাম। বললাম, তা এখানে আমার ভূমিকাটা কী? আমাকে তলব কেন?
আপনি কিছু অনুমান করতে পারছেন না?
না। পারছি না।
দেখুন, নিউরোলজিস্ট প্রফেসর সাইলো দোলুশ আপনার নাম প্রস্তাব করেছেন। আমরাও আপনার রেকর্ডস ঘেঁটেছি। অবসরে যাওয়ার আগে আপনি কমপ্যারেটিভ ফিলোলজি পড়াতেন। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটা ডিপার্টমেন্ট খোলার চেষ্টা করেন আপনি, যার বিষয়বস্তু বিভিন্ন পুরোনো বিলুপ্ত বিদ্যা।
যেটা চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়নি।
হয়নি। ফান্ড-সংকটে আটকে গেছে। কিন্তু কিছুদূর এগিয়েছিল কথাবার্তা। আপনি কিছু কোর্স আউটলাইন জমা দিয়েছিলেন। সেখানে একটা জায়গায় সাইকো-অ্যানালাইসিস নামে একটা বিষয়ের উল্লেখ আছে।
ও আচ্ছা, এখন কিছুটা আঁচ পাচ্ছি বটে। হ্যাঁ, সাইকো অ্যানালাইসিসের উল্লেখ ছিল।
এ বিষয়ে আমার তেমন জানাশোনা নেই। তবে প্রফেসর দোলুশ বলেছেন, সেকেলে হয়ে যাওয়া এই বিদ্যা চর্চা করেন, এমন কেউ আর অবশিষ্ট নেই। একজন ছাড়া। আপনিই পৃথিবীর শেষ জীবিত সাইকো-অ্যানালিস্ট।
অতিরঞ্জন।
আপনি বিনয়ী।
আপনারা কী চান?
সাইকো-অ্যানালাইসিসের সঙ্গে স্বপ্ন-বিশ্লেষণের কোনো যোগ কি আছে?
পরোক্ষভাবে আছে। দেখুন, প্রথমত এটা একটা অকেজো বিদ্যা। উনিশ শতকের শেষ দিক আর বিশ শতকের শুরুর দিকে
এটার চর্চা গড়ে উঠেছিল। বেশিদিন টেকেনি। কারণ, মনের রোগ সারাইয়ের জন্যে এই বিদ্যা এমন কিছু হাইপোথিসিসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, যেগুলো পরবর্তীকালে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
বুঝলাম। কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে এই বিদ্যা কিছু দাবি করেছিল কী? করেছিল। এটা ওই বিদ্যার একটা অফশু্যট বলতে পারেন। দাবি করা হয়েছিল, মানুষের স্বপ্নের উপকরণগুলোকে এমনভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব, যা থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার মনের অবস্থার একটা অনুমান পাওয়া যাবে।
তাই নাকি?
এই বিদ্যার যিনি ফাউন্ডার…
সিগমুন্ড ফ্রয়েড।
হ্যাঁ, তিনি এই চর্চাটাকে কিছুদূর এগিয়েও নিয়েছিলেন। তিনি স্বপ্ন বা ড্রিম ইন্টারপ্রিট করতে পারতেন বলে দাবি করতেন। স্বপ্নের উপকরণগুলোকে তিনি সেইভাবে ব্যবহার করতেন, মাইক্রোস্কোপের নিচের বায়োলজিক্যাল নমুনাকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এ বিদ্যার মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। এই শাখার অপমৃত্যু ঘটে।
আমরা যা চাই, তা খুবই পরিষ্কার। আপনি ওই বিদ্যার কলাকৌশল প্রয়োগ করে আমাদের দেওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করবেন। স্বপ্নের উপকরণ আপনাকে দেওয়া হবে। তা থেকে আপনি স্বপ্নদ্রষ্টাদের মন পড়ার চেষ্টা করবেন। আপনি তাদের সভ্যতা, তাদের সমাজ, তাদের আইন-কানুন পুনর্নির্মাণ করবেন। আর বোঝার চেষ্টা করবেন তাদের অভিপ্রায়।
প্রায় অসম্ভব কাজ।
কেন?
দুটি খুবই নড়বড়ে হাইপোথিসিসের ওপর ভর করতে বলা হচ্ছে আমাকে। প্রথমত, অনুমান করে নিতে হচ্ছে, আমাদের দোসরদের…
আমরা তাদের একটা কাজচলতি নাম দিয়েছি–সেকেন্ড কমিউনিটি।
বেশ, ভালো নাম। আচ্ছা, প্রথমত অনুমান করে নিতে হচ্ছে, এই সেকেন্ড কমিউনিটির লোকজনের বায়োলজিক্যাল চাহিদা আমাদেরই মতো, অর্থাৎ খাদ্য, ঘুম এবং যৌনতা ইত্যাকার ব্যাপারগুলোর প্যাটার্ন অভিন্ন। আর দ্বিতীয়ত, সাইকো অ্যানালাইসিসের মৌলিক স্বীকার্যগুলো পৃথিবীতে মানুষের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য, সবখানে সেটা সমভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এগুলো সর্বজনীন। এত বড় দাবি স্বয়ং ফ্রয়েডও করতেন না।
আমরা এ ব্যাপারে আপনাকে ব্লাংক চেক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি ব্যর্থ হলে আমাদের হারাবার কিছু নেই। জুয়ার বোর্ডে অন্ধ দান মারতে সমস্যা কী!
কিন্তু আমাকে এ কাজের যোগ্য মনে করার কোনো কারণ আছে কি?
আছে। অধ্যাপনার শেষ দিকে আপনি কিছু পেপার উপস্থাপন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সেগুলো আপনার উন্মাদনা রোগের বহিঃপ্রকাশ। অনেকে বলেন, আপনাকে বাধ্যতামূলক রিটায়ারমেন্টে পাঠানোর পেছনে কাজ করেছে দলীয় রাজনীতি। আবার অনেকের সন্দেহ, এ ক্ষেত্রে ওই পেপারগুলোর ভূমিকাও কম নয়। পেপারগুলোর বিষয়বস্তু ড্রিম-অ্যানালাইসিস। আপনি একটা মহাজাগতিক স্বপ্নের হাইপোথিসিস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। কী সেটা, আমাদের ধারণা নেই। তবে আপনার ব্যাপারে প্রফেসর দোলুশের শক্ত সুপারিশ আছে।
আপনি শুরুতে কী একটা নিরাপত্তা হুমকির কথা বলছিলেন।
হুমকি আছে। অতি সম্প্রতি আমাদের একের পর এক কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বিকল হয়ে যাচ্ছে। সবগুলোই মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট। প্রথমে অ্যাক্সিডেন্টাল মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে একটা প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। আরও বেশ কিছু অঘটন ঘটেছে, সবটা খুলে বলা যাচ্ছে না। এগুলো যোগ করলে একটা ইনভেশনের আলামত পাওয়া যায়। আর হুমকিটা যেদিক থেকে আসছে, এই স্বপ্নের উপকরণগুলোও সেদিক থেকে আসা। দুটোর মধ্যে আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে কি না, আমরা জানি না। আমরা আপনার অ্যানালাইসিসের দিকে তাকিয়ে আছি।
তার মানে পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা রাষ্ট্রীয় আর্জেন্সি আছে।
আছে বললে কম বলা হবে।
তার মানে আমার কোনো চয়েস নেই?
নেই। আগামী কয়েক দিন আপনি এখানেই থাকছেন। সব বন্দোবস্ত করা আছে। আর আপনার জন্যে এখানে একটি বিশেষ কক্ষ বানানো হয়েছে। একটা সিমুলেশন রুম। আমরা নাম দিয়েছি ড্রিম রুম।
সেটা কী?
এই সব টু ডাইমেনশনাল ডেটাগুলোর আমরা থ্রি ডাইমেনশনাল প্রতিরূপ নির্মাণ করছি। কিছুটা হলোগ্রাফিক ইমেজের মতো। আপনার বুঝতে সুবিধা যাতে হয়।
.
আজ সন্ধ্যায় আমি ড্রিম রুমে ঢুকছি।
একটা গোলাকার সিলড অন্ধকার কক্ষে আমাকে প্রবেশ করতে হবে। তার ভেতরে ভেসে বেড়াবে সৃষ্টির ওপার থেকে আসা অচেনা স্বপ্নের উপকরণ। তাদের ত্রিমাত্রিক চেহারা কেমন। হবে, আমার কোনো অনুমান নেই।
আমি রাজি হয়েছি, রাজি না হয়ে উপায় ছিল না বলে নয়। রাজি হয়েছি, কেননা আমার নিজের স্বার্থ আছে। আমার নিজের হাইপোথিসিসের সত্যাসত্য অনুসন্ধানে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর কী হতে পারে? এই হাইপোথিসিসকে পাগলামি মনে করা হয়েছে, ঠাট্টা করা হয়েছে, এর জন্যে আমাকে একাডেমিক নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
আমি ড্রিম রুমে ঢুকছি। সকলের চোখে একটা বস্তুগত জগৎ থেকে আমি ঢুকছি বস্তুহীন, অস্থির, কাঁপাকাপা এক চৈতন্যলোকে। কিন্তু আমার হাইপোথিসিস, যার আনুষ্ঠানিক নাম বুলগাশেম প্যারাডক্স, তাতে পুরো ব্যাপারটা উল্টানো।
সেকেন্ড কমিউনিটি বলে আসলে কিছু নেই।
আমি কোনো স্বপ্নের ভেতরে ঢুকছি না।
আমি আসলে সাড়ে ১২ শ কোটি বছরের এক অতিকায় মহাজাগতিক স্বপ্নের ভেতর থেকে বেরোচ্ছি।
.
আমি ড্রিম রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালাম। পেছন ফিরে দেখলাম, একটু দূরে রাঘবন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
আমি তার দিকে এমনভাবে হাত নাড়লাম, যেন বিদায় নিচ্ছি, যেন একটা বোর্ডিং ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
আমার আচরণে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন রাঘবন।