বিয়েবাড়ির পরে

বিয়েবাড়ির পরে

ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহে অবশেষে ঋত্বিক-মুকুটের বিয়েটা ঘটল। দু জনেই জানে বিয়েটা হবে, অথচ কেউই উদ্যোগ করে কথাটা পাড়ছিল না। ঋত্বিকের দিকে বাবা-মা কেউই নেই। কিন্তু মুকুটের আত্মীয়স্বজন অগুনতি। মুকুটের মা শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, মুকু, তুই-ই বরং ওকে প্রপোজ কর, ছেলেটা কাজপাগল তো! ভুলো-মতো।

মুকুট হাঁ হাঁ করে উঠেছিল। কিন্তু তার বাবা শ্লেষের হাসি হেসে যখন বললেন, ‘এই তোর আধুনিকতা? এই তোর নারীবাদ!’ তখন বেচারি হার স্বীকার করে নেয়। পরদিনই ঋত্বিককে গিয়ে বলে—তোর পাগলামোর জন্যে আমাকে আর কত গালমন্দ শুনতে হবে?

ঋত্বিক অবাক হয়ে বলে, আমার জন্যে তোকে? গালমন্দ? ব্যাপার কী বল তো!

—বিয়েটিয়ে করবি তো আমাকে? না শুধু ওয়ার্কিং পার্টনার? খোলাখুলি বল তা হলে আমি অন্য জায়গায় মানে অন্য পাত্রফাত্র খুঁজি। —মুকুট বলে।

—যাচ্চলে! তো এ কথাটা এতদিন বলিসনি কেন? অন্য পাত্রফাত্র হাটা। আমি রেডি।

তবে বিয়ে উত্তর-আধুনিক। নো পুরোহিত, নো সপ্তপদী, নো সম্প্রদান, নো বরমাল্য, নো সিঁদুর। মুকুটের মা রাগ করে বললেন, রেজিস্ট্রেশনটাই বা তা হলে ইয়েস কেন? লিভ-টুগেদার করলেই বা ক্ষতি কী ছিল?

রিসেপশন হল মুকুটদের বাড়ির কমিউনিটি লন-এ। নিমন্ত্রিত বেশি নয়। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব। তবে জিনাদের পুরো পরিবার নিমন্ত্রিত। কেননা, ক্রমশ ক্রমশই জিনার দিদিভাই, জিনার বাবা অর্থাৎ শ্বশুর, জিনার দুই ভাসুরঝি—এদের সঙ্গে মুকুটের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে। জিনা ছাড়াও মল্লিকার সঙ্গে মুকুটের কথাবার্তা হয় ফোনে। কল্যাণবাবুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও মুকুটের কম হয় না ইদানীং।

দেখা গেল মুকুট আর ঋত্বিকই আদর-অভ্যর্থনা, খাওয়ানোদাওয়ানোর ব্যাপারটা সামলাচ্ছে। মুকুটের মা আশ মিটিয়ে সেজেছেন। কাকিমা, মাসিমা, বোনেরা সবাই। খালি মুকুটই কোনওমতে শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নীল রঙের একটা সিল্ক। কিন্তু বাকি চেহারা সেই একরকম। কোনও গয়না-ই সে পরবে না। পরলে নাকি তাতে গোরুচোরের মতো দেখাবে। ঋত্বিক আর এক কাঠি বাড়া, ধুতি পাঞ্জাবি তো নয়ই, পায়জামা পাঞ্জাবি পর্যন্ত নয়। সুটফুটও নয়। সে স্রেফ আগের দিনে পাটভাঙা ট্রাউজার্সের সঙ্গে একটা ধোপদুরস্ত শার্ট পরেছে। টি-শার্টটা নাকি কোনওক্রমে খোলানো গেছে। তার ওপরে লেখা ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ব্লু।

তবে জিনাদের উপভোগের ঘটনা বড় কম ঘটল না। এক মাসি মুকুটকে খুব সুন্দর কানবালা উপহার দিয়েছেন। তাঁর আবদার সেটা তাকে এক্ষুনি এখানেই পরতে হবে। মুকুট অবলীলায় জমকালো কানবালাগুলো কানে গলিয়ে নিল। কান পর্যন্ত ছোট চুল, তেলা মুখ, চুল উড়ে কপালটা ঢেকে গেছে। শাড়িটাকে অদ্ভুতভাবে পরেছে। আঁচলটা পুরো সামনে টেনে এনে কোমরে গুঁজে নিয়েছে। হঠাৎ কানে ঝলমলে কানবালা পরায় যে মজাটা হল তাতে ঋত্বিকও যোগ দিল। মুকুট বলল, দেখ আমার কোনও ইয়ে নেই। মাসি আদর করে দিয়েছে, না পরলে কান্নাকাটি করছে, তো ঠিক আছে বাবা, পরে নিচ্ছি।

সেই শুনে তার এক কাকিমা ঠোঁট ফুলিয়ে বললেন, ‘এত বড় কথা। মাসিরটা পরবি, আর কাকিরটাই দোষ করল? আমার হারটা যদি না পরিস তা হলে কেউ আর আজ আমাকে জলগ্রহণ করাতে পারবে না।’ তিনি একটা জমকালো হার পরিয়ে দিলেন মুকুটের গলায়। এভাবেই হাতে বালা পরানো হল, কোন পিসি আত্মঘাতী হবেন বলায়।

তখন ঋত্বিকের কাকা একটা আংটি নাচিয়ে বললেন, ‘বাপধন, সকলকার সব কথাই যখন থাকছে, তখন তোমার এই বৃদ্ধ কাকার কথা মেনে আংটিটি না হয় বউমার আঙুলে পরিয়েই দিলে!’

কাকার বয়স বোধহয় সবে পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে।

শুনে ঋত্বিক হঠাৎ তৎপর হয়ে বলল, ‘আংটি? পরাতে যদি হয়ই কাকু তা হলে তোমার আংটি কেন, নিজের আংটি আমি নিজেই পরাব।’

ওস্তাদ জাদুকরের মতো সে শূন্যে হাত বাড়িয়ে একটা চমৎকার মুক্তোর আংটি বার করল এবং শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে সেটা মুকুটের আঙুলে পরিয়ে দিল।

মুকুটের মা নিশ্বাস ফেলে জিনাকে বললেন, যাক বাবা, তোর বন্ধুটা তা হলে একেবারে ছন্নছাড়া বাউন্ডুলের পাল্লায় পড়েনি। মিনিমাম একটা সেন্‌স আছে।

মুকুট কিন্তু রাগ করে বলল, ও যেন এক্সপেক্ট না করে আমিও ওকে এখন আংটি পরাব। কেননা, আমাদের মধ্যে পরিষ্কার কথা হয়ে গিয়েছে যে প্রাচ্য পাশ্চাত্য কোনও রকম অনুষ্ঠানই আমরা পালন করব না। আংটিমাংটিই যদি হবে তা হলে মালাই বা কী দোষ করল?

বলবার সঙ্গে সঙ্গেই কে বা কারা রজনীগন্ধার দুটো মোটা মালা একটা মুকুটের হাতে আরেকটা ঋত্বিকের হাতে ধরিয়ে দিল। মালাবদলও হয়ে গেল তুমুল হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে। ঋত্বিক সঙ্গে সঙ্গে মালাটা খুলে জিনার হাতে দিয়েছিল। মুকুট কিন্তু সেই মালা গলায় পাঁচমিশালি গয়না পরেই কোমরে আঁচল গুঁজে নিমন্ত্রিতদের খাওয়াদাওয়ার তদারকি করতে লাগল।

বরকে অনেক কষ্টে নিয়ে এসেছে জিনা। বিমান কিছুতেই এলেন না। চেনেন না, শোনেন না, স্ত্রীর পরিচয়ে নেমন্তন্ন যাওয়া এমন কথা তিনি নাকি কখনও শোনেননি। নিখিল এসেছে জিনাকে নিয়ে। কল্যাণবাবু বাকিদের নিয়ে এসেছেন। নিখিলের সঙ্গে এই প্রথম পরিচয় ঋত্বিক এবং মুকুটেরও।

বাড়ি এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে এক এক করে গয়নাগুলো জিনা খুলছে, নিখিল একটা পা টুলটার ওপর তুলে দিয়ে বলল, তারপর জিনারানি! তোমার বন্ধুবান্ধবরা যে এত প্রোগ্রেসিভ তা তো জানা ছিল না?

জিনাও ওদের বাড়াবাড়িতে একটু বিরক্ত। যতই কেন সারা পৃথিবী ঘোরার অভিজ্ঞতা থাক, দেশাচার হল দেশাচার। সে বলল আমিই কি জানতাম! একটু সিঁদুর পরাতে কী আধুনিকতা নষ্ট হয় আমি বুঝি না বাবা!

—সিঁদুর? তোমার মুকুট সিঁদুরফিঁদুরের মর্ম কী বুঝবে? তুমি তো আগে বলনি মেয়েটির প্রস্টিট্যুটদের সঙ্গে ওঠা-বসা!

—ওঠা-বসা আবার কী? ও তো একাধিক এন.জি.ও-র স্পেশ্যাল অ্যাডভাইজার। বিরাট দেশজোড়া ব্যাপার। ওদের উন্নয়নের জন্যে… জিনা মনে মনে একটু ভয় পেয়েছে। এই যদি নিখিলের মনোভাব হয় তা হলে জিনার কাজকর্মের কথা জানতে পারলে ও কী করবে?

ঠুকে ঠুকে পাইপে তামাক ভরছিল নিখিল। পাইপটা এবার দাঁতে চেপে বলল, দুটোয় কোনও তফাত আছে বুঝি?

—তফাত নেই? জিনা অবাক।— ছ বছর থাইল্যান্ডে, নরওয়ে, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় ইউ.এন.ও-র চাকরি করেছে মুকুট। সোসিওলজিতে ডক্টরেট ওর কর্নেল য়ুনিভার্সিটির।

—হাই-ফাই বেশ্যা কাকে বলে জান? নিখিলের গলায় সংযত শ্লেষ।

—বাজে কথা বলো না। ছিঃ!

—এইসব এন.জি.ও যারা চালায় তারা লেখাপড়া জানা ফান্ডা-অলা স্মার্ট আধুনিকা মেয়েদের কাজের নামে কবজা করে বুঝলে ম্যাডাম? তারপর তাদের সেরকম হাইক্লাস কাস্টমারের কাছে পাঠায়। ইউ.এন.ও-র অফিসার, এমব্যাসিট্যাসির সাহেবসুবো… কে যে এজেন্ট আর কে খদ্দের বুঝতেই পারবে না তোমার মতো গর্দভরা… দেখো হয়তো ওই ঋত্বিকই ফার্স্টক্লাস এজেন্ট একটা। নামে বিয়েটাও রইল…

—তুমি চুপ করবে?

—সত্যি কথা শুনলে রাগ হয়ে যায়, না?—বলতে বলতে নিখিল জিনার গয়না খোলা ডান হাতটা হঠাৎ বজ্রমুষ্টিতে চেপে ধরল—বেলেল্লাপনা অনেক দূর এগিয়েছে মনে হচ্ছে? আর কোনওদিন ওই মুকুটফুকুটের সঙ্গে দহরমমহরম করেছ তো, একটা মোচড় দিল সে জিনার হাতে, জিনা ককিয়ে উঠতে ছেড়ে দিল হাতটা।

—পতিতোদ্ধারিণী! হুঁঃ!

হাতটা টনটন করছে। হিংস্র দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে নিখিল।

একে কিছু বোঝাতে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। এটুকু জিনা বুঝে গেল। এ থাকে এর নিজস্ব ধারণার জগতে। নিজেকে বা অপর কাউকে বদলাবার কথা ভাবে না। এর মনের বাড় নেই, ধ্যানধারণার অগ্রগতি নেই। তেমন তেমন জায়গায় এ আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে! ডান হাতের লাল পলার মতো দাগটার দিকে সে একবার তাকাল। আদিম যুগের পুরুষ প্রথম কি এভাবেই শাসন করেছিল তার নারীকে? সেই আদিম এখনও এইভাবে বেরোবার সুযোগ খুঁজছে? সে ঘর থেকে বেরিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বার করল, ঠান্ডা কমপ্রেস দিতে থাকল কবজিতে অনেকক্ষণ। বাড়ির এ অংশে তাদের একটাই শোবার ঘর, আর একটা শ্বশুরমশাইয়ের। তৃতীয় একটা ঘর আছে। সেটাকে তারা বলে টি.ভি-র ঘর। সোফা-কোচ এসব আছে। কিন্তু শোবার কোনও ব্যবস্থা নেই। তা হোক সে নিঃশব্দে টি.ভি-র ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। এই এটুকু ছাড়া তার কোনও আড়াল নেই। আর কোনও জায়গাও নেই।

অনেক অনেকক্ষণ ঘুমোতে পারেনি জিনা। ভাবতে ভাবতে একসময়ে মনে হল সত্যিই তো সে কতটুকু জানে? বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে বলতে গেলে তার কোনও জ্ঞানই নেই। মুকুট আর ঋত্বিক তাকে যতটুকু দেখিয়েছে, যতটুকু বুঝিয়েছে তার ওপর নির্ভর করেই তো তার সব ধারণা। তবে ঋত্বিক যে সত্যি সত্যিই মাত্র বছর দেড়েকের মধ্যে বাচ্চাগুলোর মধ্যে একটা ভালর দিকে পরিবর্তন আনতে পেরেছে এটা সে দেখেছে নিজের চোখে। কিন্তু মুকুট? মুকুট কেন বলল এদের খানিকটা লেখাপড়া শিখিয়েই ছেড়ে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য! কেন নিরুৎসাহ করল জিনাকে যখন সে মেয়েদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার কথা বলল? নমিতাদি নামে যে প্রজেক্ট ডিরেক্টরের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত, তিনি তো ওর কথা হেসেই উড়িয়ে দেন। এখন যদি জিনা বলে ওঁরা এইভাবে একটা সাক্ষর বারবনিতা সম্প্রদায় সৃষ্টি করবার চেষ্টা চালাচ্ছেন, সব দেশে চালান দিতে পারবেন বলে? কী উত্তর দেবেন ওঁরা? বিভিন্ন দেশে বসবাস এবং কথাবার্তা, কাজ চালানোর জন্যে যতটুকু দরকার শুধু ততটুকু নিয়েই তো এঁদের মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা দেওয়া বা ডিগ্রি ডিপ্লোমা লাভ করলেই যে স্বর্গলাভ হয় না, তা সবাই জানে। কিন্তু ওটা তো একটা ছাড়পত্র। যে কোনও চাকরি, উচ্চতর শিক্ষা, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ-এ যাবার একটা অনুমতিপত্র। ন্যূনতম। এইটুকু থাকলে একটা মানুষের ভেতরে জোর আপনি আসে। পৃথিবীর দরজা তার সামনে খুলে যায়। সে বেরোতে চাক বা না চাক। অথচ এই সামান্য কথাটা নমিতাদিরা বুঝতে চান না। হয়তো নিখিল যা বলছে তা ঠিক, মুকুটের ক্ষেত্রে ঠিক নয়, কিন্তু অন্য অনেকের ক্ষেত্রে ঠিক। এবং মুকুট এটা জানে। এরকম ঘটনা ঘটছে, অথচ মুকুট জানে না এটা তো হতে পারে না! এত বছরের অভিজ্ঞতা! জিনার মতো ভ্যাবাকান্তও নয়, খাঁচার পাখিও নয়। এইসব ভাবতে ভাবতে তার মাথা গরম হয়ে যেতে থাকল। নিখিলের ভয় বা রাগ তো হতেই পারে! গোঁয়ার-গোবিন্দ মানুষ, রাগও প্রচণ্ড, ওর দুশ্চিন্তার চেহারা ওইরকমই হবে! এর আগে কোনওদিন জিনার গায়ে হাত তোলেনি ঠিক, কিন্তু হাত না তোলার মতো মার্জিত, সুভদ্র মানুষ তার স্বামী নয়, এটা সে বুঝে গেছে!

এইভাবে কখনও ঋত্বিককে, কখনও মুকুটকে, কখনও নিখিলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে করাতে, তাদের হয়ে জবাবদিহি দিতে দিতে তার শেষ রাতের ঘুমটা এসেছিল। ঘুমের মধ্যে মানুষ অনেক কিছু বিস্মৃত হয়ে যায়। দরজায় টোকা শুনে সে পরিস্থিতি একেবারে ভুলে গিয়ে ঘুমচোখে দরজা খুলে দিল।

—খুব লেগেছে? —নিচু গলায় নিখিল জিজ্ঞেস করল, দেখি?

জিনা হাতটা সরিয়ে নিল। তার চোখে সহসা জল আসে না, এখন সে টের পায় ঘুমভাঙা চোখে অশ্রুর কামড়।

—জিনা, তুমি তো জান আমি একটু… এসো, ঘরে এসো।

অনুনয়ের সুর তার গলায়। জিনা সামান্য একটু বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ও দিকের ঘর থেকে বাবার কাশির শব্দ পেয়ে সে আর দেরি করে না। পত্রপাঠ ফেরত আসে।

—তুমি তো জান, আমি কাজে এত ব্যস্ত থাকি ন’টা-দশটার আগে বাড়ি ফিরতে পারি না। তোমার জন্যে কি আমার ভাবনা হয় না! নিশ্চিন্ত থাকতে না পারলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তুমি ওই মুকুটটুকুটের সঙ্গে মেলামেশা করো না জিনা। শি ইজ ডেঞ্জারাস। এনিওয়ে ওদের সমাজটমাজ আলাদা। বাবা পাইলট ছিলেন, ওর মাকে দেখলে না? দিব্যি তো জিন উইথ লাইম পেগের পর পেগ ওড়াচ্ছিলেন! তুমিও তো আমার সঙ্গে পার্টিফার্টিতে গেছ, কখনও সফ্‌ট্‌-ড্রিংক ছাড়া কিছু নিয়েছ! ওদের এড়িয়ে চলো। কোথায়, কখন, কী ফাঁদে পড়ে যাবে, তুমি নিজেই বুঝতে পারবে না।

জিনার তর্ক করতে ইচ্ছে করছিল না। তখনও চোখে ঘুম জড়িয়ে আছে। শেষ রাত। তা ছাড়া এসব বিষয়ে ভাল করে ভাবনা-চিন্তা না করে, না জেনে-শুনে আলোচনার মধ্যে সে আর যাবে না। প্রথম সুযোগেই মুকুটকে কতকগুলো কথা জিজ্ঞেস করবার আছে তার। সে পাশ ফিরে চোখ বুজল। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝল—ঘুম অত সহজ নয়। কেননা নিখিল বউয়ের সঙ্গে সন্ধিস্থাপনের শারীরিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এই শেষ রাতে। ভাল লাগছে না, তার এখন এসব ভাল লাগছে না, মন না থাকলে শুধু শুধু শরীরকে উত্তেজিত করে কিছু লাভ হয় না। এরকম মনহীন মিলনে সে আনন্দ পায় না। অন্যজনও কি পাবে? তার ভেতরের বিমুখতা স্পর্শ করবে না ওকে? কিন্তু উপায়ই বা কী!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *