ফাঁস – ১

এক

সময়টা হল সকাল, কলকাতার কাছাকাছি কোনো একটা পল্লি। মানুষের কলকোলাহলে জেগে উঠেছে। একালের একটি হাউসিং এস্টেট। ঢ্যাঙা ঢ্যাঙা বিশ্রী বাড়ি। ওইরকমই একটি বাড়ির প্রবেশমুখ, সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে। অপরিচ্ছন্ন, জীবনে ঝাঁট পড়ে না। চারপাশে গোটাকতক আধমরা গাছ। এক একরকম চেহারার মানুষ ঢুকছে—বেরোচ্ছে। চারপাশে বাড়ি, মাঝখানে টাক—পড়া খোলা একটা মাঠ। কোথাও পড়ে আছে প্লাস্টিকের ব্যাগ, কোথাও পড়ে আছে আইসক্রিমের কাপ। পাঁচমিশেলি আবর্জনার ছড়াছড়ি। এই মাঠেই মর্নিং ওয়াক করছেন শৌখিন এক বৃদ্ধ। পরিধানে ধপধপে সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি। হাতে একটা বাহারি ছড়ি। সাঁই করে একটা সাইকেল চক্কর মেরে চলে গেল। আরোহী এক যুবক। ফ্ল্যাটের একদিকে একতলার সংলগ্ন একচিলতে জমিতে আর এক প্রবীণ মানুষ বাগান করার ব্যর্থ চেষ্টা নিত্যদিনের মতো আজও করছেন। হাতে খুরপি, মাঝে মাঝে নিচু হচ্ছেন। পরে পরেই সোজা হয়ে এক হাত দিয়ে কোমরের পিছন দিকটা চেপে ধরছেন। ভদ্রলোকের নাম নিত্যানন্দ। যিনি বেড়াচ্ছেন তাঁর নাম পরমানন্দ।

নিত্যানন্দ নিজের মনেই বলছেন, এই কোমর! সারাটা জীবন ভুগিয়ে গেল। নিচু হয়ে কনকন, সোজা হলে খটাস।

পরমানন্দ রাউন্ড দিতে দিতেই শুনলেন। বাগানের বেড়ার কাছাকাছি এসে বললেন, এসব নেগলেকটের ফল, কোমর হল কবজা। তাকে কবজায় রাখতে গেলে যোগাসন করতে হয়, রোজ ভুজঙ্গাসন করো, উপকার পাবে। ভোগটাই শিখলে, যোগটা শিখলে না। আমাকে দেখো, এই বয়সেও ফিট।

নিত্যানন্দ একটু হেসে বললেন, শুধু ফিট নয়, ফিটফাট। তুমি ভাই ব্যাচেলর মানুষ, সংসারীদের শতেক জ্বালা। রিটায়ার করার পর সাহেবি কায়দায় গার্ডেনিং শুরু করলাম। না হল গার্ডেন, না গেল কোমরের বার্ডেন। আচ্ছা, টেলিভিশনের মেয়েগুলো অমন কোমর দুলিয়ে নাচে কী করে? আমি সেদিন বাথরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করেছিলুম, তিনদিন শয্যাশায়ী।

পরমানন্দ বললেন, তোমার যেমন বুদ্ধি, কোমরে বল—বিয়ারিং ফিট না করলে ও নাচ নাচা যায় না। তুমি বিকেলে এসো, ভুজঙ্গাসন প্র্যাকটিস করাব।

পরমানন্দের কথা শেষ হতে না হতেই ভিতর থেকে ভেসে এল এক আর্ত নারীকণ্ঠ, শিগগির এসো, খোকা দরজা খুলছে না। নিত্যানন্দ খুরপি ফেলে ভিতরের দিকে দৌড়লেন। পরমানন্দ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিত্যানন্দের ফ্ল্যাটে ঢুকলেন। নিত্যানন্দের ফ্ল্যাটের একটি ঘর দরজা—বন্ধ, বাইরে সবাই— নিত্যানন্দের স্ত্রী মালিনী, মেয়ে পূর্ণা।

নিত্যানন্দ— দরজা খুলছে না, ধাক্কা মেরেছে?

মালিনী— অনেকবার।

নিত্যানন্দ— অনেকবার! তাহলে কী হবে?

নিত্যানন্দের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ছড়ি হাতে পরমানন্দ। তিনি ছড়ি দিয়ে দরজায় টোকা মারতে মারতে বললেন, দরজা ভাঙতে হবে। সাইকেলে যে ছেলেটি বাইরে পাক মারছিল তার নাম মোহন। হইচই শুনে সেও ঢুকে পড়েছিল। কেউ লক্ষ করেনি। মোহন বললে, দাঁড়ান কাকাবাবু, ভাঙার আগে আমি বাইরের জানালা দিয়ে দেখে আসি। মোহন চলে যেতেই পরমানন্দ বললেন, এ স্কাউন্ড্রেলটা কোথা থেকে এল? পূর্ণা ভুরু কুঁচকে বলল, স্কাউন্ড্রেল বলছেন কেন? পরমানন্দ মেঝেতে ছড়ি ঠুকে বললেন, কেন বলব না। এমন কোনো পাপ নেই যা করেনি। মোহনকে আসতে দেখে নিত্যানন্দ বললেন, চুপ চুপ আসছে। মোহন এসে বলল, ঘরে কেউ নেই, এমটি। সকলে একসঙ্গে বলে উঠলেন, তাহলে! মোহন দরজার ওপর দিকটা দেখিয়ে বললে, তাহলে এই, দরজার ওপর দিকে তাকান। বাইরে থেকে ছিটকিনি তোলা। পরমানন্দ এতক্ষণের সমালোচনা ভুলে বলে উঠলেন, রাইট ইউ আর। তোমার চোখ আছে, আমাদের থেকেও নেই। মোহন বললে, আপনারা এত ভয় পেলেন কেন? ভাবলেন, আত্মহত্যা করেছে। তাই না?

মালিনী বললেন, ছেলেটা বড়ো ডিপ্রেশানে ভুগছে। পরমানন্দ একটু তিরিক্ষি গলায় বললেন, একালের এই এক ফ্যাশন হয়েছে। যৌবন আর ডিপ্রেশন। আমাদের কালে এসব ছিল না। নিত্যানন্দ উত্তর দিলেন, আমাদের কালে টিভিও ছিল না, কম্পিউটারও ছিল না। পরমানন্দ বললেন, এর জন্য প্রয়োজন মেডিটেশন ও প্রাণায়াম। এক দুই তিন চার, চার তিন দুই এক। ভ্রমণ প্রাণায়াম। কুম্ভক নেই। একেবারে ফিতে মাপা শ্বাস—প্রশ্বাস। মনের সব বিক্ষিপ্ততা হাওয়া। যাই, আমার ফিফটি রাউন্ড এখনও বাকি। পরমানন্দ বেরিয়ে যেতেই পূর্ণা বললে, মোহনদা, দাদার কী হয়েছে জানো তুমি? মোহন বললে, জানি। নিত্যানন্দ ও মালিনী একসঙ্গে বলে উঠলেন, জান তুমি? মোহন বেশ গম্ভীর গলায় বললে, এপাড়ার সকলের সব খবর আমি জানি। আমি এক যাযাবর, আমি এক টিকটিকি, দেয়ালে দেয়ালে আমি ঘুরি। মালিনী দুঃখের গলায় বললেন, আমাদের কিছুই বলে না। তুমি জানো তো বলো না। মোহন বললে, আমি বলাবলির মধ্যে নেই। আমার হল কার্য—কারণ, কারণ—কার্য, খোকা আমার বন্ধু জ্যাঠামশাই।

মালিনী অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লেন, সেই মেয়েটা? মোহন একটু বাঁকা হেসে বললে, কোনো মেয়ের জন্য কোনো ছেলে একালে বিষ খাবে না। সে হত অতীতে, ইতিহাসে। হীর—রণঝা, লায়লা—মজনু, শাহজাহান—তাজমহল। জ্যাঠাইমা, কারণ অন্য। পূর্ণা প্রাথমিক উত্তেজনাটা কেটে গেছে দেখে নরম গলায় জিজ্ঞাসা করল, মোহনদা, চা খাবে? মোহন বললে, না আমি কোনো বাড়িতে চা, জলখাবার, ভাত খাই না। চায়ের দোকান, হোটেল আমার জায়গা। একবারই চা খেয়েছিলাম এক বাড়িতে। পরে জানতে পারলুম, তারা কাপটা ফেলে দিয়েছিল। ভেবেছিল, আমার মতো একটা জঘন্য ছেলের ডিজিজ থাকাই স্বাভাবিক। ভদ্দরলোকেদের ব্যাপারই আলাদা ভাই, তাই সকালে উঠিয়া মনে মনে বলি/সারাজীবন আমি যেন ছোটোলোকই থাকি।

দুই

রাত হয়েছে। গুপীর চায়ের দোকান। বাইরে রোল ও চাউমিনের ঠেক। সেখানে গুপীর যৌবনবতী বউ সামাল দিচ্ছে। চেহারার চটকও আছে, প্রদর্শনও আছে। এপাড়ার সোফিয়া লোরেন, সবাই সোফিয়া বলেই ডাকে। দোকানের ভিতরে একটা গুলতানি, তার মধ্যে মোহনও আছে। প্রশান্ত চোখে একটা ঠাকুরদা মার্কা চশমা পরে খুব জ্ঞান দিচ্ছে। প্রশান্ত বলে তাকে কেউ আর ডাকে না। বলে জ্ঞানদা।

প্রশান্ত খুব গম্ভীর মুখে বলছে, ভারতের এখন যা অবস্থা, তাতে সব অচল হয়ে যাবে। একটা পরিবর্তন চাই। সর্বত্র দুর্নীতি, পটলে দুর্নীতি, আলুতে দুর্নীতি, চায়ে দুর্নীতি— কোনো কিছুতেই কিছু নেই। মানুষে মানুষ নেই, পুকুরে মাছ নেই।

মোহন বললে, কুকুরে কিন্তু কুকুর আছে। খেতে দিলে লেজ নাড়ে, ইট মাড়লে কেঁউ কেঁউ করে।

প্রশান্ত বললে, এই মানুষ ছাড়া আর সব ঠিক আছে। কোনো বাবা কুকুর বলবে না, আমার ছেলেমেয়েরা আগের মতো নেই। নো জেনারেশন গ্যাপ।

হঠাৎ একটা ছেলে ঢুকল, সামান্য একটু উত্তেজিত। তাকে দেখেই মোহন বললে, কী হল রে? অমন চনমন করছিস? বাঘ বেরিয়েছে? ছেলেটি বললে, মধুচক্রে পুলিশ হানা। মোহন জিজ্ঞাসা করল, কী অপরাজিতায়? ছেলেটি বলল, হ্যাঁ বউদি, ক্যাচ—কট—কট। প্রশান্ত দার্শনিকের মতো বলে উঠল, ঘরে ঘরে ব্রথেল, যুবসমাজ জাগো, উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত। মোহন বললে, ধপাস করে শুয়ে পড়। প্রশান্ত জিজ্ঞাসা করল, ক’ জোড়া? ছেলেটি বলল, তিনজোড়া। প্রশান্ত বলল, খোঁজ নিয়ে দেখ, সব টিন—এজার। বুঝলে এ বাজার অর্থনীতি দেশটার বারোটা বাজাবে। লোভ, লোভ, বাইবেলে আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।

গুপী চায়ে চিনি গুলতে গুলতে বললে, না খেয়ে মরার চেয়ে খেয়ে মরাই ভালো। মরতে তো হবেই। প্রশান্ত বললে, তোমরা খাচ্ছ না, তোমার বউকে কী মধুচক্রে যেতে হচ্ছে। গতর খাটিয়ে খাচ্ছ। তোমরা হলে উজ্জ্বল উদাহরণ। মোহন তোমার কী মত?

মোহন বললে, পৃথিবীটাকে আরও একটু বুঝি তারপর বলব, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। আপনার টিউটোরিয়াল হোমের কী হল? সেই প্রশ্নপত্র আউট। গুপী চায়ের কাপ সাজাতে সাজাতে বলল, আ মোহন, তোমার এই এক বদ অভ্যাস, মানুষের লেজে পা দেওয়া।

প্রশান্ত বললে, না, না, ও ঠিক বলেছে, আমরা সবাই অসৎ। আমি টিউটোরিয়াল তুলে দিয়েছি। আমি সৎ হবার চেষ্টা করছি। কিন্তু মোহন, তুমি কি সৎ?

মোহন বললে, না, আমি একশো ভাগ অসৎ, এক অ্যান্টিসোশ্যাল।

প্রশান্ত বললে, আমি তা মনে করি না, তুমি সাহসী। তুমি যা তুমি তাই। তোমার মধ্যে অভিনয় নেই। প্রশান্ত সিগারেটের প্যাকেট দেশলাই পকেটে ভরে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। মোহন বললে, প্রশান্তকে আমরা জ্ঞানদা বলি, মানুষটা কিন্তু বেঁচে আছে। কিছুক্ষণ পরে মোহনও বেরিয়ে গেল। রোল—কাউন্টারের সামনে সোফিয়া বললে, রাতে আসছ তো? মোহন বললে, না এলে খাব কোথায়? সোফিয়া জিজ্ঞাসা করলে, চললে কোথায়? মোহন বললে, সমাজসেবায়। রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

তিন

একটা অন্ধকার ঘুপচিমতো জায়গা। কালো কালো গোটা কয়েক সিল্যুয়েট। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় স্পষ্ট হচ্ছে চেহারা। সেই অন্ধকারে মোহন প্রবেশ করল। কে যেন একজন বলে উঠল, মোহনদা। মোহন জিজ্ঞাসা করল, এখানে খোকা এসেছে? কণ্ঠস্বর বলল, না। মোহন নিজেকেই জিজ্ঞাসা করল, গেল কোথায় সকাল থেকে, সত্যিই স্যুইসাইড করল নাকি? কণ্ঠস্বর বললে, করতে পারে। দু’লাখ টাকা চোট হয়ে গেছে। মোহন বললে, মানে? কণ্ঠস্বর বললে, তুমি জান না, সব খবরই তো রাখ। মোহন বললে, আমি একটা খবরই রাখি। পূর্ণা আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু ভালোবাসা আমার মধ্যে নেই। ভালোবাসার চেয়ে ভালো একটা বাসা একালে অনেক দামি। ভালোবাসা নয় ভালো বাসা। এক প্রোমোটার আমার পিছনে লেগেছে। বলছে, অনন্তদের বাড়িটা ম্যানেজ করে দিতে পারলে নগদ তিন লাখ ও ফ্রি একটা ফ্ল্যাট তিনতলায়। কণ্ঠস্বর বললে, করে দাও। ওরাও তো মোটা পাবে। মোহন বললে, বাড়িটার ইতিহাস জানিস? গান্ধীজি তিন দিন কাটিয়েছিলেন। তার আগে সি আর দাশ ওখানে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে মিটিং করেছেন। শ্রীঅরবিন্দ আসতেন। ওটা জাতীয় সম্পত্তি। একটা মন্দির। প্রতিটি ইঁটে লেখা আছে বিপ্লবের কাহিনি। ওখানে পায়রার খোপ করে স্বার্থপরদের সংসার বসাবে?

কণ্ঠস্বর বললে, তোমার ইতিহাস—ভূগোল রাখো, টাকাই সব। এই যে আমার বাবার বাইপাস করাতে হবে। দেড় থেকে দু’লক্ষর ব্যাপার। এই মাসের মধ্যে নামাতে না পারলে মন্ত্র পড়তে হবে পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম। মাকে বললুম, বের করো তোমার গহনাপত্র। অনেক হাঁটকা—হাঁটকির পর লেংটি ইঁদুরের লেজের মতো একটা হার বেরোল। সে কী গো এই তোমার অবস্থা। বোনের বিয়েতে গহনা গোত্রান্তর হয়ে গেছে। তোমার ওই প্রোমোটারকে আমার দিকে ঠেলে দাও, এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ইতিহাসে বর্তমানের স্ট্রাকচার তুলে দেব। অ্যাডভান্স দু’লাখ।

মোহন বললে, কাকাবাবুর বয়স হল কত?

কণ্ঠস্বর, পঁয়ষট্টি।

মোহন বললে, ম্যাক্সিমাম। নড়বড়ে আরও ধর পাঁচ বছর। সত্তর! এই পাঁচটা বছরের দাম দু’লাখ। ভেরি কস্টলি। চোখ, হাঁটু, গাঁটের কী হাল?

কণ্ঠস্বর, গ্লুকোমা, আরথ্রাইটিস।

মোহন বললে, এবার ছুটি করে দে।

কণ্ঠস্বর, যায় না। হৃদয় খুব দুর্বল। মাটির মা দুর্গাকে বিসর্জন দিতে চোখে জল আসে।

মোহন বললে, দু’লাখ পাবি কোথায়?

কণ্ঠস্বর বললে, ওই প্রোমোটার। এক্স জমিদারের চার ছটাক জমি।

মোহন বললে, যাবি কোথায়?

কণ্ঠস্বর, একটা খুপরি তো মিলবে।

মোহন বললে, তোর জুতোর ব্যবসার কী হল?

কণ্ঠস্বর, ক্যাপিটাল নেই।

মোহন জিজ্ঞাসা করল, চাকরি?

কণ্ঠস্বর, চাকর আছে, নো চাকরি।

মোহন জিজ্ঞেস করল, উপায়?

কণ্ঠস্বর বললে, নিরুপায়।

অদূরেই বড়ো রাস্তা। মাঝে মাঝে গাড়ি চলে যাচ্ছে হু—হু শব্দ। হেডলাইটের একঝলক আলোয় অন্ধকারের চরিত্ররা স্পষ্ট হতে না হতেই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই আলো—আঁধারিতে ত্রস্ত নারী—কণ্ঠস্বর, দাদা এখানে আছিস?

কণ্ঠস্বর বললে, কী হল? তুই এখানে? বাবা?

নারীকণ্ঠ, না, দিদিকে থানায় নিয়ে গেছে।

কণ্ঠস্বর, কেন?

নারীকণ্ঠ, দিদি ওখানে ছিল।

নারীকণ্ঠ, কোনখানে, পথ অবরোধে?

নারীকণ্ঠ, না, ওইখানে।

অন্ধকারে মোহনের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, বুঝতে পারছিস না কেন? রেবাদের ফ্ল্যাটে, মধুচক্রে।

কণ্ঠস্বর, মাকে বল, একটা দড়ি নিয়ে যেতে, গলায় দিয়ে ঝুলে পড়ুক।

মোহন বললে, কেন? এই তো জ্ঞান দিচ্ছিলিস, টাকাটাই সব। কল্যাণী তুই বাড়ি যা, আমি দেখছি।

চার

পাড়ার নেতা বিধান বোসের ডেরা। বিধান আর মোহন মুখোমুখি।

বিধান।। মোহনানন্দ আনন্দেই আছ। একটু ভুঁড়ি নেমেছে মনে হচ্ছে।

মোহন।। উদুরি হচ্ছে দাদা।

বিধান।। কী কারণে অধমের কাছে আগমন?

মোহন।। সেবার তোমার রাইভ্যাল মুকুন্দের জিয়োগ্রাফি পালটে দেবার পর তুমি বর দিতে চেয়েছিলে রাজা দশরথ। কৈকেয়ী এখন বর চাইতে এসেছে। টেলিফোনটা তোলো।

বিধান।। তুলে?

মোহন।। থানায় ও.সি.—কে বল, রেবাদের ঠেক থেকে মাধুরী বলে যে মেয়েটাকে তুলে এনেছে তাকে যেন ছেড়ে দেয়।

বিধান।। মাধুরী কে?

মোহন।। কল্যাণ চৌধুরীর বড়ো মেয়ে।

বিধান।। লাইনে নেমে পড়েছে?

মোহন।। না। অবশ্য রটে যাবে সেইরকম। মাধুরী বিউটিশিয়ানের কোর্স করেছে। ফেসিয়াল, হেয়ার ড্রেসিং এইসব। আমার ধারণা, রেবাদের ফ্ল্যাটে ও ওইসব করাতেই গিয়েছিল। তারপর হঠাৎ পুলিশ—হানা।

বিধান।। বাজে জায়গায় যায় কেন?

মোহন।। বারণ করে দেব। তুমি এখন টেলিফোনটা তোলো।

বিধান।। আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।

মোহন।। তাহলে আরও একটা বর চাই।

বিধান।। আবার?

মোহন।। তোমার কোনো কাজই সহজ নয়।

বিধান।। সহজ হলে তোমাকে বলব কেন?

মোহন।। কাজটা শুনি।

বিধান।। এক ব্যাটাকে ফাঁসাতে হবে।

মোহন।। ভুঁড়ি।

বিধান।। না, ক্যারেকটার।

মোহন।। হয়ে যাবে।

বিধান।। কী বর চাই?

মোহন।। মাধুরীর বাবার বাইপাস করাতে হবে। তুমি বাজোরিয়াদের কাছ থেকে লাখ দুই ম্যানেজ করে দাও।

বিধান।। হয়ে যাবে।

বিধান মোহনকে বললেন, হ্যান্ডসেটটা নিয়ে এসো। রিসিভারের বোতাম টিপছেন। পিঁক পিঁক করে আওয়াজ। মোহন পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *