1 of 2

দুঃখী বৃদ্ধ ও যম

দুঃখী বৃদ্ধ ও যম

এক বৃদ্ধ অতি দুঃখী ছিল। তাহার জীবিকা নির্ব্বাহের কোনও উপায় ছিল না। সে, বনে কাঠ কাটিয়া, সেই কাঠ বেচিয়া, অতি কষ্টে দিনপাত করিত। গ্রীষ্ম কালে, এক দিন, মধ্যাহ্ন সময়ে, সে, কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া, বন হইতে আসিতেছে। ক্ষুধায় পেট জলিতেছে; তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিতেছে; প্রখর রৌদ্রে সর্ব্ব শরীর দগ্ধপ্রায় ও গলদঘর্ম হইতেছে; পথের তপ্ত ধূলি ও বালুকাতে, দুই পা পুড়িয়া যাইতেছে। অবশেষে, নিতান্ত ক্লান্ত হইয়া, কাঠের বোঝা ফেলিয়া, সে এক বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করিতে বসিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, সে মনে মনে কহিতে লাগিল; এরূপ ক্লেশভোগ করিয়া বাঁচিয়া থাকা অপেক্ষা, মরিয়া যাওয়া ভাল; কেনই বা আমার মরণ হয় না। আমার মত হতভাগ্য লোকের মরণ হইলেই মঙ্গল।

 মনের দুঃখে, এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সেই চিরদুঃখী, যমকে সম্বোধিয়া, কহিতে লাগিল, যম! তুমি আমায় ভুলিয়া আছ কেন? শীঘ্র আসিয়া, আমায় লইয়া যাও; তাহা হইলেই আমার নিষ্কৃতি হয়; আর আমি ক্লেশ সহ্য করিতে পারি না। তাহার কথা সমাপ্ত না হইতেই, যম আসিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। সে, তাহার বিকট মূর্ত্তি দেখিয়া, ভয় পাইয়া, জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কে, কি জন্যে এখানে আসিলেন? তিনি কহিলেন, আমি যম, তুমি আমায় ডাকিতেছিলে, তাই আসিয়াছি; এখন, কি জন্যে আমায় ডাকিতেছিলে, বল। তখন সে কহিল, মহাশয়! যদি আসিয়াছেন, তবে দয়া করিয়া, কাঠের বোঝাটি আমার মাথায় উঠাইয়া দেন, তাহা হইলে, আমার যথেষ্ট উপকার হয়। যম, শুনিয়া, ঈষৎ হাসিয়া, অন্তর্হিত হইলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *