তৃতীয় রাত

তৃতীয় রাত

পাহাড়ি নদীটা ভীষণ খরস্রোতা। ছোটো স্টিমার কিংবা ইয়ট দ্বীপের গায়ে ভেড়ানো খুবই কঠিন। আটলান্টিকে গিয়ে পড়া নদীটার মোহনাও অনেক চওড়া। এপার থেকে ওপারের কিছুই দেখা যায় না। আর যা ঘূর্ণি দেখলে ভয়ে হিম হয়ে আসে রক্ত।

উজানে চলেছি আমরা। খুব সাবধানে না এগুলো যে কোনো মুহূর্তে ভয়ানক বিপদ ঘটে যেতে পারে। মাঝে মাঝে ডুবো চরাও আছে। স্টীমার আটকে যাওয়ার ষোলআনা আশঙ্কা। নকশা দেখে অত্যন্ত সাবধানে বা তীর ঘেঁষে এগুতে লাগলাম আমরা। এত সাবধানতা সত্ত্বেও দ্বীপ থেকে প্রায় দুশো গজ দূরে থাকতেই ওরকম এক চরায় আটকে গেল স্টিমার। ভাবছি কি করে পৌঁছানো যায় দ্বীপটাতে। এমন সময় শালতি চালিয়ে একজন নিগ্রো ছেলে এগিয়ে এলো আমাদের কাছে।

ছেলেটাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যাক, দ্বীপটাতে তাহলে মানুষ আছে।

আশপাশটা খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলাম। নীল সমুদ্রের পানি খাঁড়ির মুখ পর্যন্ত এসে বাদামি হয়ে গেছে। বিশাল সব ঢেউ আছড়ে পড়ছে দ্বীপের গায়ে। বিস্তীর্ণ নদী মোহনায় ভাসছে বিরাট বিরাট কাঠের গুঁড়ি। দূরে সবুজ গভীর জঙ্গল। চারপাশে কেমন যেন থমথমে বিষণ্ণ আর গুমোট। বাতাস এত সঁতসেঁতে, মনে হচ্ছে শরীর ভিজিয়ে দেবে। পুরো পরিবেশটাই আমার কাছে মনে হলো অশুভ। তবু নামতে হবে ওই দ্বীপটাতে। খাবার পানি না নিলে সেন্ট পল দ্য লোয়ান্দায় পৌঁছুতে পারব না।

আমার একমাত্র সঙ্গী বুড়ো নাবিক প্যাটারসনকে নোঙর ফেলতে বললাম। স্টিমারের গায়ে শালতি ভিড়তেই বড়ো কাঠের একটা পিপে নিয়ে উঠে পড়লাম তাতে। মিনিট দশেক বাদেই ওটা দ্বীপে এসে পৌঁছাল। খাড়া ধাপ বেয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়ল আর্মিটেজ অ্যান্ড উইলসন কোম্পানির সাইনবোর্ড। সাদা চুনকাম করা টানা বারান্দাঅলা নিচুঘর। বড়ো বড়ো কাঠের পিপেয় বারান্দাটা ভর্তি। সৈকতজুড়ে সাজানো তালের ডিঙি আর শালতি। ছোট্ট একটা জেটিও রয়েছে। সাদা পোশাক পরা দুজন ইংরেজ এগিয়ে এলেন। দশাসই চেহারার একজন অভ্যর্থনা জানালেন আমাকে। অদ্ভুত ধূসর তাঁর দাড়ি। অন্যজন লম্বা ছিপছিপে, গোমড়ামুখো। ব্যাঙের ছাতা আকৃতির বিরাট টুপিতে মুখের অর্ধেকটাই ঢাকা পড়েছে।

আপনাকে দেখে সত্যিই খুব খুশি হলাম, টুপি পরা ভদ্রলোক আগে কথা বললেন। আমি ওয়ালকার। আর্মিটেজ অ্যান্ড উইলসন কোম্পানির কর্মচারী। আর ইনি এই কোম্পানির ডাক্তার। মিস্টার সেভারাল। ওরকম কোন ইয়ট আমরা বহুদিন চোখেও দেখিনি।

আমি মেলড্রাম, হাসিমুখে বললাম। জাহাজটার মালিক। ওটার নাম গেমকক।

শখের ভ্রমণে বেরিয়েছেন বুঝি? ওয়ালকারই জিজ্ঞেস করলেন।

তা বলতে পারেন। প্রজাপতি সংগ্রহ আমার নেশা। সেনেগালের পশ্চিম উপকূল ধরে যাত্রা শুরু করেছি।

জায়গা বাছাই আপনার ঠিকই হয়েছে, মৃদু হেসে বললেন ডাক্তার সেভারাল।

হেসে বললাম, হ্যাঁ, এরই মধ্যে প্রায় চল্লিশটা বাক্স ভরে গেছে। আপনাদের এই দ্বীপে নেমেছি খাবার পানি নিতে। তবে খাবার পানির সঙ্গে যদি নতুন কোন প্রজাপতির খবর পাই…।

অবশ্যই পাবেন। ওগগাওয়াই নদীর মুখে প্রচুর প্রজাপতি আছে। সবে শুটি কেটে বেরিয়েছে ওগুলো। থাকুন না দুচারদিন আমাদের এই দ্বীপে। আপনি যে দয়া করে এখানে এসেছেন তাতে আমরা সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। আসলে কি জানেন, গল্প-গুজব করা তো দূরের কথা, সাদা চামড়ার সভ্য মানুষ দেখার ভাগ্যটাও হয় না।

কথা বলতে বলতে আমরা এগিয়ে চললাম। জেটিতে শালতি বেঁধে নিগ্রো ছেলেটাও যোগ দিল আমাদের সাথে।

এখানে তাহলে আপনারা খুবই নিঃসঙ্গ? ডাক্তারকে বললাম।

হ্যাঁ। আগে খুবই অসহ্য লাগত। এখন অবশ্য সয়ে গেছে। কাজে ব্যস্ত থাকি সারাদিনই। সন্ধের পরপরই অবসর তো, সময়টা কাটতেই চায় না।

ওই সময়টা তাহলে কি করেন? জিজ্ঞেস করলাম।

সাধারণত দুজনে গল্পগুজব করি কিংবা মদ খাই। ওয়ালকারের আবার রাজনীতিতে দারুণ ঝোঁক। এসবের ওপর লেখাপড়াও করে প্রচুর।

দ্বীপ সম্পর্কেও অনেক কিছু জেনে নিলাম। এখানকার আবহাওয়া সারা বছর প্রায় একই রকম থাকে। দিনে অসম্ভব গরম। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা। ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামে যখন-তখন। হঠাৎ করে হাড়-কাঁপানো জ্বরে একেবারে শয্যাশায়ী করে ফেলে। সিয়েরালিয়েন থেকে উপকূল ধরে যতই সামনে এগিয়েছি, ততই দেখেছি এই জ্বরের প্রকোপ।

আধ ঘণ্টার মধ্যেই রেডি হয়ে যাবে রাতের খাবার, বললেন ডাক্তার সেভারাল। এ সপ্তাহে খাবার-দাবার তদারকির ভার পড়েছে ওয়ালকারের ওপর। চলুন না, আমরা ততক্ষণে ঘুরে দেখি দ্বীপটা।

ডাক্তারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।

সূর্য ডুবে গেছে। পশ্চিমের আকাশ তখনও রাঙা হয়ে আছে। ঝিরঝিরে ঠান্ডা বাতাস কাঁপন তুলল সারি সারি পাম গাছের পাতায়। সরু পায়ে চলা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। অনবরত কথা বলে চলেছেন ডাক্তার।

এখানে খুবই নিঃসঙ্গ আমরা। তবে জীবনটা একেবারে বৈচিত্রহীন নয়। রোমাঞ্চও আছে যথেষ্ট। অজানা যত রহস্যের মধ্যে বাস করছি বলতে পারেন। ওই যে দূরে গভীর বনটা দেখছেন না? উত্তর-পুব দিকে আঙুল তুলে দেখালেন তিনি। ওটা হলো দুচাইলুর বন। গরিলা আছে অনেক। গ্যাবুন, ভালুক আর বনমানুষও আছে। আর এ পাশের এই বন, দক্ষিণ-পুব দিকে দেখালেন তিনি, এই বনের ভেতর দিয়েই বয়ে এসেছে নদীটা। গভীর রহস্য ঢাকা বন। এখন পর্যন্ত কোনো সভ্যমানুষ যেতে পারেনি ওখানে। নদী মোহনাতে যেসব কাঠের গুঁড়ি ভাসতে দেখছেন, ওগুলো এসেছে ওই বন থেকেই। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ওপর আমার একটু পড়াশোনা আছে–মাঝে মাঝে এমন সব অদ্ভুদ ধরনের অর্কিড গাছপালা ভেসে আসে, যার কোনো নাম নিশানাই আমি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বইয়ে দেখিনি। সভ্য মানুষের কাছে যা কল্পনারও অতীত। বলতে বলতে রহস্যঘন হয়ে ওঠে ডা. সেভারালের চোখ আর কণ্ঠস্বর। ফিসফিস করে বললেন, অজানা ওই বনটাই টিকিয়ে রেখেছে আমাদের ব্যবসা। ভেসে আসা ওই বনের শক্ত খুঁড়ি দিয়েই পিপে তৈরি করি আমরা।

কী গাছ ওগুলো? জিজ্ঞেস করলাম।

অনেক রকমের গাছ আছে। সেগুনই বেশি। এই যে এসে গেছি।

তাকাতেই দেখি সামনে সাদা ঘরটা। কথা বলতে বলতে কখন যে ফিরে এসেছি লক্ষ্যই করিনি।

এটাই আমাদের পিপে তৈরির কারখানা, একটু ইতস্তত করে রহস্যময় কণ্ঠে বললেন তিনি। আচ্ছা এই ঘরটা দেখে কি কিছু মনে হচ্ছে আপনার? এই, মানে–অশুভ কিছু?

ঝট করে ঘরটার দিকে তাকালাম। সাদা রঙ করা কাঠের বেড়া। উঁচু টিনের চালা আর মাটি দিয়ে সুন্দর করে লেপা মেঝে। ঘরের এক কোণে মেঝেতে মাদুর পেতে কম্বল বিছিয়ে বিছানা করা। পাশে একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার ছাড়া পুরো ঘরটাই খালি। বললাম, কই নাতো। তেমন কিছু তো মনে হচ্ছে না।

হ্যাঁ, আর দশটা ঘরের মতো খুবই সাধারণ দেখতে এই ঘরটা; কিন্তু তবু অসাধারণ। আজ আমি একা এই ঘরে থাকব। ওই বিছানায় ঘুমাব। ভাবতেই ভয় লাগছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি ভীতু নই।

এমন করে বলছেন কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

কিছুদিন ধরে এখানটাতে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটছে। আপনি ভেবেছেন এখানকার জীবন একঘেয়ে। কিছুদিন দ্বীপটায় কাটালেই বুঝতে পারবেন, উত্তেজনা আর রহস্যের কোন অন্ত নেই এখানে। সূর্য ডোবার সাথে সাথে আজব কুয়াশায় ঢেকে যায় পুরো দ্বীপ। এখানকার লোকে একে বলে জ্বর কুয়াশা। নদীর ওপারের জলাটা দেখুন।

ছোটো ছোটো ঘন ঝোঁপ-ঝাড় থেকে উঠে আসছে চাপ চাপ বাস্প; চওড়া নদী পেরিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে, দ্বীপের দিকে। বাতাস অনেক বেশি ঠান্ডা আর স্যাঁতসেঁতে।

চলুন, রাতের খাবারের ঘণ্টা পড়েছে। আর হ্যাঁ, এই ঘরটা সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে পরে নাহয় শুনবেন।

আগ্রহ বলছেন কী? আমি তো শোনার জন্য রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছি।

মৃদু হেসে মাথা নাড়লেন তিনি। খালি ঘরটার দিকে ওঁর মগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকা, রাত কাটানোর কথাতে তাঁর ভয় আর সতর্কতার অভিব্যক্তি আমাকে প্রচণ্ড আগ্রহী করে তুলেছে।

কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম, বললাম আমি।

বলুন না।

শ্রমিকদের থাকার যে কুঁড়েঘরগুলো দেখালেন, সেখানে যে কাউকে দেখলাম না?

ওরা রাতে ঘুমানোর জন্য ওই জাহাজটায় চলে গেছে।

তাকিয়ে দেখি নদীর পারের খাড়িতে একটা ভাঙা জাহাজ পড়ে রয়েছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ওই ভাঙা জাহাজে থাকে? কেন? তাহলে ওদের থাকার জন্য এই কুঁড়েগুলো বানানোর দরকার কি ছিল?

কয়েকদিন আগেও ওরা এখানেই থাকত। প্রাণের ভয়ে এখন আর থাকে না। রাতে এই দ্বীপে এখন ওয়ালকার আর আমি ছাড়া কেউ থাকে না।

কিসের ভয়?

চলুন খেতে যাই। খাওয়া-দাওয়ার পর সবই বলব আপনাকে।

খাবার আয়োজনটা বেশ যত্ন সহকারেই করা হয়েছে। বন তিতিরের ঝাল মাংস আর লাল আলুর চাটনি। বেশ সুস্বাদু। খাবার পরিবেশন করল সিয়েরালিয়েনের একটি ছেলে। এ ছেলেটি ভয়ে আর সবার মতো পালায়নি দেখে অবাকই হলাম। খাওয়া শেষ হলো। মদ ঢেলে দিল সে। তারপর নিজের মাথার পাগড়িটা ঠিক করে বিনীত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, স্যার, আপনাদের কি আর কিছু লাগবে?

না মাউসা, আমাদের আর কিছুই লাগবে না, বললেন ওয়ালকার। আমার শরীরটা ভালো না। আজ রাতটা কি তুমি আমার কাছে থাকবে?

মুহূর্তে ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল ছেলেটির মুখ। না-না, স্যার! আমাকে মাপ করুন। ককিয়ে উঠল সে। আপনি বরং আমাদের জাহাজটাতে চলুন। সারারাত জেগে আপনার আমি সেবা করব।

ঠিক আছে, তুমি যাও। আর শোন, ভয় পেয়ে কর্তব্যে অবহেলা কোনো ইংরেজ করে না।

আজকে আমাকে মাপ করবেন, স্যার। গতকাল কিংবা আগামীকাল হলেও নাহয় কিছু একটা করতাম। কিন্তু আজ যে তৃতীয় দিন। আজ আমি কোন কিছুর বিনিময়েই এই দ্বীপে থাকতে পারব না।

কাঁধ ঝাঁকালেন ওয়ালকার। তুমি না থাকলে তো আর আমরা জোর করতে পারি না। তুমি রেডি থেকো, ফাস্ট মেল-বোট এলেই তোমাকে সিয়েরালিয়েনে চলে যেতে হবে। বিপদের সময় যাকে দিয়ে সামান্যতম উপকার হয় না, তেমন কর্মচারীর দরকার নেই আমাদের।

চাকরি যাওয়ার ভয় দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না। কিছুতেই রাজি হলো না সে।

সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন অদ্ভুত দেখলেন তো? আপনিই নিশ্চয়ই ডাক্তারের কাছ থেকে সব কিছু শুনেছেন?

না, ওয়ালকার। ওঁকে এখনও কিছুই বলিনি, বললেন ডাক্তার। পিপে তৈরির কারখানাটা শুধু দেখিয়েছি। কিন্তু তোমাকে দেখে তো মোটেও সুস্থ মনে হচ্ছে না। আবার জাঁকিয়ে জ্বর আসছে নাকি হে?

হ্যাঁ। সারাটা দিনই কেমন খারাপ লেগেছে। এখন মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে যেন হাজারটা কামানের গোলা ফাটছে। প্রায় দশ গ্রাম কুইনিন খেয়েছি। কানের মধ্যেও ভোঁ ভোঁ করছে, ম্লান হেসে বললেন তিনি। তুমি চিন্তা কোরো না। অসুস্থ হলেও তোমার সঙ্গে কারখানায় থাকব আমি।

না-না, ওয়ালকার, বাধা দিলেন ডাক্তার। খারাপ শরীর নিয়ে তোমাকে ওখানে ঘুমোতে যেতে হবে না। তুমি বরং এখনই তোমার বিছানায় শুয়ে পড়। আমি একাই থাকব কারখানায়।

মি, ওয়ালকারের ফোলা ফোলা মুখ, টকটকে লাল চোখ আর অতিরিক্ত কাঁপুনিতে দাঁতে দাঁত বাড়ি খেতে দেখে বুঝলাম, এই সেই আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের ম্যালেরিয়া। যা অতর্কিত হামলা চালিয়ে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলে।

ডাক্তার আর আমি ওয়ালকারকে ধরাধরি করে শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলাম। একটা কড়া ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলেন ডাক্তার, যাতে রাতে ঘুম ভেঙে কষ্ট না পান।

চলুন, ক্যাপ্টেন, আমরা খাবার ঘরে বসে আরেকটু কথা-টথা বলি।

গ্লাসে নতুন করে মদ ঢেলে মুখোমুখি বসলাম আমরা।

সারা বছরই আমাদের দুজনের এই একলা পালা চলে আসছে, বললেন ডাক্তার। ওর শেষ হলেই ধরবে আমাকে। তবে ভাগ্য ভালো যে এক সঙ্গে দুজনে কখনও পড়িনি। আজ রাতে বেচারাকে একাই থাকতে হবে। খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু কোনো উপায় নেই, আজ ভয়ঙ্কর এক রহস্যের সমাধান আমাকে করতেই হবে। ওই কারখানাঘরে বসে রাত জেগে পাহারা দেব। আজ আমাকে জানতেই হবে, কুলিদের মনে কেন এত ভয়? কেন তারা সূর্য ডোবার সাথে সাথে দ্বীপ ছেড়ে পালায়।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমি শুনতে থাকলাম ডাক্তারের কথা। তিনি বললেন, পিপেটিপে যাতে চুরি না হয়, তাই কারখানা পাহারা দেয়া হয়। আজ থেকে ছয় দিন আগে একজন আফ্রিকান রাতে পাহারায় ছিল। সকালে আর তার কোনো চিহ্নই দেখা গেল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করা হল। কোন শালতি কিংবা ডিঙিও খোয়া যায়নি যে ভাবব সে পালিয়েছে। আর পালানোর চেষ্টা করা তো আত্মহত্যার সামিল। কারণ কুমিরে গিজগিজ করছে নদী। জলজ্যান্ত মানুষটি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। এ-ঘটনার ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ আজ থেকে তিনদিন আগে আবারও একজন গার্ড গায়েব হয়ে গেল। সেই একই অবস্থা। কোন পাত্তা নেই। ওয়ালকার আর আমি এই ঘটনাটা যেভাবেই দেখি না কেন, স্থানীয় কর্মচারীরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছে। ওদের ধারণা, এটা কোন ভূতুড়ে ব্যাপার।

তা কী করে সম্ভব? বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

সেটাই তো রহস্য। কোন যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছি না। সবারই বিশ্বাস, দৈত্য-দানবের কাজ। তিনদিন পরপর তার জ্যান্ত মানুষ প্রয়োজন। এটা মাথায় ঢোকার পর থেকে আর কোনমতেই ওরা দ্বীপে থাকতে রাজি নয়। এই মাউসা ছেলেটার কথাই ধরুন, খুবই বিশ্বাসী আর অনুগত। দেখলেনই তো, সেও কোনমতেই রাজি হলো না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে উঠেছে। এ রহস্যের সমাধান তাই করতেই হবে আমাকে। আজকে এসেছে সুযোগ। আরেকটা তৃতীয় রাত। নিজেই আজ টোপ হতে যাচ্ছি। তাছাড়া আর তো কোন উপায় দেখি না।

কোনো সূত্রও কি পাননি? যেমন–ধস্তাধস্তি, পায়ের দাগ অথবা রক্ত টক্ত?

নাহ! কিছু পাইনি।

আশ্চর্য! যা বুঝলাম, আপনার একার জন্য খুব কঠিন হবে। আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি!

সত্যি করবেন? উফ্, বাঁচালেন! ডাক্তার যেন পরম স্বস্তি পেলেন।

যাই, জাহাজে গিয়ে জানিয়ে আসি, আজ রাতে আমি দ্বীপেই থাকব।

চলুন, আমিও আপনার সাথে যাই।

ফেরার পথেই পশ্চিম আকাশে ঘনিয়ে এল ঘন কালো মেঘ। এলোমলো ঝড়ো হাওয়া শুরু হলো। প্রচণ্ড গর্জনে ঢেউ এসে আছড়ে পড়তে লাগল সৈকতে। থেকে থেকে গরম বাতাসের ঝাঁপটা মারতে লাগল মুখে।

ঝড়ের গতি দেখে তো ভালো মনে হচ্ছে না, বিড়বিড় করে বললেন ডাক্তার।

কেন? অবাক হলাম আমি।

যে গরম বাতাস, বোঝাই যাচ্ছে নদীর ওপারের জঙ্গলে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। ওই বৃষ্টির পানিতে ঢল নামবে নদীতে। তার ওপর আসছে জোয়ার। এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্র যেভাবে ফুঁসে ওঠে, মনে হয়, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বুঝি দ্বীপটা।

কারখানায় যাওয়ার আগে ওয়ালকারকে দেখে আসি।

গাঢ় ঘুমে মরার মতো পড়ে আছে ওয়ালকার। তার খাটের পাশের টেবিলে এক গ্লাস লেবুর শরবত করে রাখলেন ডাক্তার। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে কারখানার পথ ধরলাম। কারখানায় পৌঁছে লণ্ঠন জ্বাললেন ডাক্তার। তারপর সলজ্জ হেসে বললেন, বই, তামাক সবই আছে। খুব একটা অসুবিধে হবে না।

লণ্ঠনের আলোয় এতবড় ঘরটা আলোকিত হলো না, বরং কেমন যেন বিষণ্ণ আর স্নান মনে হলো। পাশাপাশি চেয়ার পেতে রাত জাগার জন্যে প্রস্তুত হলাম আমরা। আমার জন্য একটা রিভলভার আর নিজের জন্য একটা শক্তিশালী দোনালা বন্দুক বের করে টেবিলের ওপর রাখলেন ডাক্তার। যাতে দরকার পড়লেই দ্রুত ব্যবহার করা যায় ওগুলো।

দেয়ালে কালো বড়ো বড়ো দুই ছায়া পড়েছে আমাদের দুজনের। হালকা আলোয় ভৌতিক মনে হচ্ছে। আলো এত কম! শিরশির করে উঠল গা। ডাক্তারও বোধহয় ভয় পাচ্ছিলেন, তাই উঠে গিয়ে আরো দুটি মোমবাতি জ্বাললেন। আমার চেয়ে তিনি অনেক বেশি সাহসী। কোনো সন্দেহ নেই। তবু তার মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করলাম। একটা বই খুলে পড়তে বসলেন। কিন্তু এক পাতাও পড়তে পারলেন না। অস্থিরভাবে তিনি বারবার তাকাতে লাগলেন এদিন-সেদিক। কাঠ হয়ে বসে আছি। ভয়াবহ নিস্তব্ধতা যেন দুঃস্বপ্নের মতো চেপে বসে আছে আমার বুকের ওপর। অশুভ রহস্যটা কল্পনার নানান রঙে রাঙিয়ে ভীত-বিহ্বল করে তুলল আমাকে। যেন মৃত্যুদূতের প্রতীক্ষায় অনন্তকাল বসে আছি দুজনে। কেমন তার চেহারা, কীভাবে সে আসবে কিছুই জানি না। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।

ডাক্তারকে দুঃসাহসী মনে হলো। কী সাংঘাতিক! তিনি একাই থাকতে চেয়েছিলেন এই ঘরে! ওরে বাপরে, পৃথিবীর সমস্ত ধন-সম্পদের বিনিময়েও এই ঘরে আমি একা রাত কাটাতে রাজি হতাম না।

অনন্ত যেন এই ভয়াবহ রাত। পানির স্রোতের ক্রুদ্ধ গর্জন। খ্যাপা হাওয়ার শোঁ-শোঁ শব্দ। ঝপাৎ ঝপাৎ করে ভেঙে পড়ছে মাটির চাই। একনাগাড়ে ডেকে যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকা। এত বিকট শব্দের মাঝে বসে আছি তবু মনে হচ্ছে নিদারুণ নিস্তব্ধ সব। হঠাৎ ডাক্তারের হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল বইটা। আমার হৃৎপিণ্ডের শব্দ যেন থেমে গেল। সমস্ত রক্তস্রোত ছলকে উঠল বুকের মধ্যে।

চেয়ারে বসা থেকে ঝটু করে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলেন জানলার দিকে।

কি-ক্কি হয়েছে? ওদিকে কী দেখছেন? এইটুকু কোনোমতে বলতে পারলাম।

আপনি কি কিছুই দেখতে পাননি? উল্টে আমাকেই প্রশ্ন করলেন তিনি।

কই, নাতো৷ কিছুই দেখিনি। আপনি দেখেছেন? কি দেখেছেন?

স্পষ্ট কিছু দেখিনি। মনে হলো বাইরে কিছু একটা দ্রুত সরে গেল।

দোনলা বন্দুকটা তাক করে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। আশপাশটা তীক্ষ্ণ চোখে দেখে নিয়ে হতাশ কণ্ঠে বললেন, কই, কিছুই তো দেখছি না!

হয়তো গাছের পাতা-টাতা নড়তে দেখেছেন। বাইরে যা ঝড়ের দাপট, এ অবস্থায় ভূতেরাও বেরুতে সাহস পাবে না। মোট পরিবেশটা হালকা করার জন্য বললাম আমি।

তা হতে পারে, বলে গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। মেঝে থেকে বইটা তুলে নিয়ে ফের পড়াতে মন দিতে চাইলেন। তা আর হলো না। থেকে থেকে অকারণেই তাঁর দৃষ্টি চলে যাচ্ছে জানালার দিকে। আমিও তাকিয়ে আছি ওদিকেই।

প্রকৃতির তাণ্ডব আরও বেড়ে গেল। ঝড়ের প্রচণ্ড গতি দেখে মনে হলো, উড়িয়ে নিয়ে যাবে বুঝি এই ঘরটাও। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। সেই সঙ্গে মেঘের গর্জন। কান ফাটানো শব্দে আশেপাশে কোথাও বাজ পড়ল। বিদ্যুতের তীব্র ঝলকে ঝলসে গেল চোখ। পরমুহূর্তে শুরু হলো বড়ো বড়ো ফোঁটায় বৃষ্টি। সমানে বৃষ্টি, সেই সঙ্গে ঝড়ের প্রলয়ংকর তান্ডব চলল কয়েক ঘণ্টা ধরে।

ঈশ্বর, দ্বীপটা বুঝি ভেসেই গেল এবার, আপন মনেই বললেন ডাক্তার। এমন বৃষ্টি হতে কোনদিন দেখিনি। তবু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, অভিশপ্ত তৃতীয় রাতটা তো কেটে গেছে। ক্যাপ্টেন, দেখুন ভোর হয়ে গেছে। উচছুসিতভাবে বললেন তিনি, যাক, বোকা লোকগুলোকে তো বলতে পারব, দেখ বেঁচে আছি আমরা!

বাইরে তাকালাম। সত্যি সকাল হয়ে গেছে। থেমে গেছে বৃষ্টি। পরিষ্কার আকাশ। কলকল শব্দে গড়িয়ে চলেছে বৃষ্টির পানি। নদীতে গিয়ে পড়বে।

এতক্ষণ পর মনে পড়ল গেমককের কথা। সারারাত ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় একটুও মনে পড়েনি ওটার কথা। এই বৃষ্টিতে ভেসে যায়নি তো জাহাজটা!

আমার শুকনো মুখ দেখে তিনি বললেন, কফি খাওয়া যাক। যা ধকল গেছে রাতভর।

কারখানা ছেড়ে খাবার ঘরে এসে ডাক্তার বললেন, আপনি অপেক্ষা করুন, আমি ওয়ালকারকে দেখে আসি।

ঘরের ভেতরটা আবছা অন্ধকার। স্পিরিট ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম কফি বানানোর জন্যে। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে এলেন তিনি। ধপ করে বসে পড়লেন একটা চেয়ারে। দেখি তার চোখের কোণে চকচক করছে পানি।

কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে?

ডুকরে উঠলেন ডাক্তার, ও আর নেই!

ধক করে উঠল বুকের মধ্যে। কী বলছেন আপনি? মি. ওয়ালকার মারা গেছেন?

ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন তিনি। হ্যাঁ। মারা গেছে ওয়ালকার।

ডাক্তারকে অনুসরণ করে নিঃশব্দে ঢুকলাম শোবার ঘরে। আবছা অন্ধকার। বিছানায় শুয়ে রয়েছেন ওয়ালকার। মনে হচ্ছে যেন ঘুমাচ্ছেন।

সত্যি মারা গেছেন! বিশ্বাস করতে পারলাম না আমি।

কয়েক ঘণ্টা আগেই, শুকনো খসখসে কণ্ঠস্বর তার।

কিসে? জ্বরে?

না।

তাহলে?

ওর বুকে চাপ দিয়ে দেখুন?

বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দ্বিধা করলাম একবার। মি. ওয়ালকারের বুকে হাত রেখে আলতো চাপ দিলাম। চমকে গেলাম। একি! তুলতুলে নরম! যেন কাঠের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি একটা পুতুল!

ব্যাপার কী? অবাক হলে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

চুপ করে রইলেন তিনি।

কি, কিছু বুঝতে পেরেছেন?

ঘাড় নাড়লেন ডাক্তার। বোধহয় পারছি। আসুন আমার সঙ্গে, বলে দরজার দিকে এগোলেন তিনি।

দরজার বাইরে বেরিয়ে মাটির দিকে তাকালেন। মোটেও খোঁজাখুঁজি করতে হলো না। হাত তুলে দেখালেন তিনি। দরজার কাছ থেকে চলে গেছে মোটা একটা দাগ। যেন অনেক মোটা দমকলের পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভেজা নরম মাটির ওপর দিয়ে।

আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। কিসের দাগ?

আমার কথা যেন কানেই যায়নি ডাক্তারের। তাকিয়ে রয়েছেন বনের দিকে। দাগটা সেদিকেই চলে গেছে। জ্বলে উঠল তার চোখ। আমার দিকে ফিরে বললেন, এক মিনিট, আসছি। বলে তার ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। বেরিয়ে এলেন হাতে বন্দুক নিয়ে। বললেন, আসুন।

নীরবে তার সঙ্গে রওনা হলাম। দাগটা অনুসরণ করে চললেন তিনি। এঁকে বেঁকে চলে গেছে চিহ্ন। অনুসরণ করতে কোন অসুবিধে হলো না।

বেশি দূর যেতেও হলো না। বনের ভেতর শখানেক গজ এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন ডাক্তার। গাছপালা এখানে বেশ ঘন আর বড়ো বড়ো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে এবার শুধু চোখ দিয়ে খুঁজতে লাগলেন তিনি। হঠাৎ ফিসফিসিয়ে বললেন, ওই দেখুন।

দেখলাম। ধক করে উঠল বুক। মোটা একটা ডালে জড়িয়ে রয়েছে। বিশাল কালো চকচকে একটা শরীর। মাথাটা বিরাট। গলার কাছটা ধূসর। ভয়ঙ্কর কুতকুতে দুটো চোখ। এত বড়ো সাপ আমি জীবনে দেখিনি।

আমাদের দেখেই পাক খুলতে শুরু করল সাপটা। মাথাটা ঝুলে পড়তে লাগল নিচের দিকে। শিকার দেখতে পেয়েছে। পুরোপুরি মানুষখেকো হয়ে গেছে ওটা।

দেরি করলেন না ডাক্তার। সোজা মাথাটা সই করে ট্রিগার টিপে দিলেন। ঝটকা দিয়ে দোলনার মতো দুলে উঠল একবার মাথাটা। তারপর পেন্ডুলামের মতো দুলতে লাগল এপাশ ওপাশ। মৃত্যুযন্ত্রণায় মোচড় খেতে গিয়ে আপনাআপনি খুলে গেল পাক। তারপর ঝুপ করে পড়ল মাটিতে।

মরতে এত দেরি করছে কেন? জিজ্ঞেস করলাম।

মরে গেছে। তবে আরও অনেকক্ষণ এরকম করবে। সাপ এমনই করে।

এটাই তাহলে সেই অশরীরী দানব? যার ভয়ে কাতর হয়ে আছে আদিবাসীরা?

হ্যাঁ। এবং ওয়ালকারের হত্যাকারী। তাঁকে পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরেছে।

নিয়ে গেল না কেন তাহলে?

এসেছিল নেয়ার জন্যেই। শুরুতে কারখানায় উঁকি দিয়েছিল। আলো দেখে আর ঢোকেনি। ঢুকেছিল ওয়ালকারের ঘরে, মেরেও ছিল তাকে। কিন্তু গেলার আগেই কোনো কারণে ঘাবড়ে গিয়ে পালায়। সম্ভবত বাজ পড়ার শব্দেই।

এই যে তৃতীয় রাত তৃতীয় রাত করলেন, ব্যাপারটা কি? ভূতপ্রেত তো আর নয়, ঠিক তিনদিন পর পর নিয়ম করে আসত কেন?

সহজ ব্যাখ্যা। তিন দিনে হজম হয়ে যেত মানুষটা, যাকে শিকার করে নিয়ে যেত। খিদে লাগত, তখন আবার আসত নতুন শিকারের সন্ধানে।

তার মানে এলাকাটা এখন বিপদমুক্ত? সাপটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। এখনও নড়ছে ওটা। আরও তো সাপ থাকতে পারে?

না। এখানে এরকম সাপ নেই। ওটা এসেছে ওই ওদিক থেকে। বড়ো বড়ো দ্বীপ আছে, তাতে গভীর জঙ্গল। ওসব জায়গায় এরকম সাপ আছে বলে শুনেছি। নিশ্চয়ই খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে কোন এক দ্বীপে। খোঁজ করতে করতে শেষে আটলান্টিক পেরিয়ে চলে এসেছিল এটা এখানে। চলুন, এক কাপ চায়ের এখন বড়ো দরকার। আর লোকজনকে ডেকে বলতে হবে, বিপদ কেটে গেছে। এবার নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে ওরা। ইস, কি আতঙ্কই না ছড়িয়ে রেখেছিল শয়তানটা এতদিন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *