জয়িতার হোয়াটস অ্যাপ

।।জয়িতার হোয়াটস অ্যাপ।।

-হাই।

-হাই।

-থ্যাঙ্কস হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার দেওয়ার জন্য।

-ইউ আর লাকি হুহ। কাউকে দিই না আমি। মানে নাম্বার।

-হা হা হা। তাহলে সত্যিই লাকি। আমাকেই দিলে। মানে নাম্বার।

-(হাসির ইমোজি) তবে মানতেই হবে তুমি ভাল বাজাও।

-হ্যাঁ আমি ভালই বাজাই।

-ঈশ (বাদরের দু হাত দিয়ে মুখ ঢাকা ইমোজি)। আমি গীটারের কথা বললাম।

-আমিও তো গীটার বাজানোর কথাই বললাম। তুমি কী ভাবলে?

-(মুখ অন্য দিকে তাকানোর ইমোজি)

-কী হল? বল কী ভাবলে?

-কিছু না। লিভ ইট।

-ওকে। লিভ করলাম। কী করছ?

-কিছু না। শুয়ে আছি। টায়ার্ড।

-ওহ। খুব কাজ করলে বুঝি?

-হ্যাঁ। অফিসে। কল সেন্টার জব। বোঝোই।

-হু হু।

-তুমি কী কর?

-ওই যে, বললাম তো। বাজাই।

-(মুখ বাকানোর ইমোজি) উফ। বেশি ফাজিল তুমি।

-এই না, সত্যি। একটা ব্যান্ডে গীটার বাজাই।

-ওকে।

-ইমপ্রেস হলে না?

-না না। এ আবার কী?

-না মানে ব্যান্ডে গীটার বাজিয়ে কী আর হয়।

-ধুস। আমি সেসব ভাবিই নি।

-তা ঠিক। দুদিন তো ফেসবুকে কথা হল জাস্ট। কী আর ভাববে?

-হু। তুমি খুব বেশি ভাবো নাকি?

-হ্যাঁ। আমি তো ধুম সিরিজের উদয় চোপড়া স্টাইল ভাবি। বউ, দুই বাচ্চা, ছেলে হলে কী নাম হবে। মেয়ে হলে কী নাম হবে। সব।

-(দু চোখ দিয়ে জল বেরোনোর ইমো) ঈশ। জঘন্য একেবারে। জঘন্য…

– (একই ইমো)

-তুমি এর আগে কত জনের সঙ্গে এসব ভেবেছ?

-বেশি না। এখনও সেঞ্চুরি হয় নি। তবে মার্কেটের প্রবলেম হল সবাই কমিটেড। তুমি কমিটেড?

-আমি? না।

– ঢপ মেরে দিলে?

– হা হা বিলিভ মি। না।

-হু। থাক।

-আচ্ছা। অনেক রাত হল। এখন ঘুমাই।

-এখন তো বারোটা সবে। এখনই ঘুমাবে?

-হ্যাঁ। কাল আবার কত কাজ। বেশিক্ষণ জেগে থাকলে গোটা দিনে টায়ার্ড হয়ে থাকি।

-ওকে। গুড নাইট। কাল কথা হবে।

-গুড নাইট।

.

২০ সেপ্টেম্বর, সকাল ৮টা ২০ মিনিট

-গুড মর্নিং জয়িতা।

-গুড মর্নিং।

-উঠলে?

-হ্যাঁ। এই তো জাস্ট।

-তোমার কথা ভাবছিলাম।

-উফ। জাস্ট এক রাতে ভাবাভাবিও শুরু করে দিলে?

– হা হা হা। তা ঠিক। তোমার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। ইউ আর ভেরি কিউট।

-থ্যাংক ইউ। তবে বেশি মাখন লাগাতে হবে না।

-ওকে ওকে। লাগাব না।

-হু। আমি উঠি এখন। ব্রেক ফাস্ট দেবে এখনই। না খেলে মিস।

-ওকে। রাতে পিং কোর ফিরে। বাই।

-বাই।

.

একই দিন। রাত এগারোটা পনেরো

 -ফিরলে?

-হ্যাঁ। ডিনার কমপ্লিট।

-আজ অফিস পার্টি ছিল বুঝি? ফটোগুলো দেখলাম।

-নাথিং স্পেশাল। একটু হল।

-মদ খেলে?

-হ্যাঁ। স্কচ ছিল।

-ওয়াও। দেখি, মাতাল সেলফি একটা।

-উম্মম… না প্লিজ…

-দেখি না প্লিজ।

-ওকে, ওয়েট…

-(একটা সেলফি গেল এদিক থেকে)

-ওয়াও। স্টিল বিউটিফুল। অ্যান্ড…

-অ্যান্ড কী?

-ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে। (জিভ বের করা ইমোজি)

-দেখে নাও। ফ্রি হে।

-(চোখ থেকে জল বের করা ইমোজি) ইউ আর ভেরি স্মার্ট। ভেরি বিউটিফুল।

-ন্যুড চাই বুঝি?

-ছি ছি। কী যে বল।

-চাইলে দিই না। স্ট্রিক্ট রেস্ট্রিকশনস আছে।

-রিয়েলি? কে দিয়েছে রেস্ট্রিকশন?

.

—একই সময়ে অনীশ পিং করছে—

-ওই জয়িতা… স্টানিং লাগছিল আজকে। আই রিয়েলি লাইকড ইউ টুডে।

কোন রিপ্লাই নেই।

.

জয়িতা অন্য চ্যাটে রিপ্লাই দিচ্ছে “কেউ দেয় নি। নিজেই নিজেকে দিয়েছি।এসব দেওয়ার জিনিস না”।

-আমি চাইবও না। নো ইস্যু।

-ওয়াও। জেন্টল ম্যান।

—অনীশ আবার পিং—

-হে জয়িতা। প্লিজ রিপ্লাই। মিসিং ইউ। সেন্ড ন্যুডস প্লিজ।

জয়িতা অনীশকে কোন রিপ্লাই করে নি। অন্য চ্যাটে ছেলেটাকে লিখেছে “আমি টায়ার্ড আছি। এখন যাচ্ছি, বাই, পরে কথা হবে”।

অনীশ বেশ কয়েকবার প্লিজ লিখে কাঁদার ইমোজি দিয়েছে।

.

২১শে সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে আটটা

-গুড মর্নিং।

-গুড মর্নিং…

-কালকে তোমার ছবিটা দেখে সারারাত ঘুমাই নি জানো।

-(হাসার ইমোশন) সকাল সকাল বাটার মেরো না।

-আমরা দেখা করতে পারি? উইকেন্ডে?

-হুউউ, ভাবব।

.

একই সময়ে রজত একটা মিম পাঠিয়েছে জয়িতাকে। রুহি একটা মজার ভিডিও পাঠিয়েছে। বেশ কয়েকটা “হাই” এসেছে মেসেজে, জয়িতা কাউকেই রিপ্লাই দেয় নি।

উপমন্যু একগাদা পাতার চ্যাট হিস্ট্রির প্রিন্ট আউট এখনও পড়তে হবে দেখে একটা হাই তুললেন।

ছেলেটার নাম আকাশ। ফোন করলেন ছেলেটাকে, একটা রিং হতেই একটা ঘুম জড়ানো গলা ভেসে এল “কে বে?”

“আমি সি আই ডি থেকে বলছি। আকাশ বলছ?”

ওপাশ থেকে একগাদা খিস্তি ভেসে এল “বোকাচোদা, সকালে উঠেই প্র্যাংক কল শুরু করে দিয়েছিস? ধরে বাম্বু ভরে দেব”।

উপমন্যু শান্ত গলায় বললেন “শোন বাবা, তুমি অনেক ছোট আমার থেকে। গালাগাল দিও না। একটা কথা বলি শুধু তোমায়, জয়িতা, যার সঙ্গে রাতে চ্যাট করতে তুমি, সে মার্ডার হয়েছে। তুমি আজ কোথায় দেখা করবে বল, আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই”।

ওপাশ থেকে কোন শব্দ পাওয়া গেল না। সম্ভবত ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেছে আকাশের।

.

নিউ আলিপুর।

বাড়ির নাম “দ্য গ্রীন ল্যান্টার্ন”।

বাড়ির গেট বন্ধ ছিল। সিকিউরিটিকে পরিচয় দিতে দরজা খুলে দিল।

অনেকটা বাগান পেরিয়ে গাড়িবারান্দায় গাড়ি পৌঁছতে এক ভদ্রলোক পুলিশের গাড়ি দেখে এগিয়ে এলেন।

উপমন্যু গাড়ি থেকে নেমে আই কার্ড দেখিয়ে বললেন “অনীশ মুখোপাধ্যায় আছেন?”

ভদ্রলোক ফোন বের করে কারো সঙ্গে কথা বলে উপমন্যুকে বললেন “ভেতরে আসুন স্যার”।

উপমন্যু বললেন “আপনি?”

ভদ্রলোক বললেন “আমার নাম লক্ষণ পাল। আমি শংকরবাবুর সেক্রেটারি”।

উপমন্যু বললেন “শংকরবাবু আছেন?”

লক্ষণ বললেন “স্যার এই কিছুক্ষণ আগে ফিরেছেন। বিশ্রাম নিচ্ছেন”।

উপমন্যু বললেন “অনীশ?”

লক্ষণ বললেন “আছেন। আপনি বসুন প্লিজ এসে”।

উপমন্যু বাড়ির ভেতরে গেলেন।

ড্রয়িং রুমে বসানো হল তাকে। উপমন্যু ঘরটা দেখছিলেন।

ঘরের দেওয়ালে বিভিন্ন সেলিব্রিটির সঙ্গে শংকর মুখোপাধ্যায়ের ছবি, আসবাবপত্র প্রতিটি অত্যন্ত দামী দেখে বোঝাই যাচ্ছে। ঘরের সর্বত্র বাহুল্যের ছড়াছড়ি।

অনীশ এল। বেশ লম্বা চেহারা। ফর্সা। চেহারার মধ্যে একটা কাঠিন্য আছে। ঘুমাচ্ছিল সম্ভবত তাই চোখ ফোলা। উপমন্যু অনীশকে মন দিয়ে দেখছিলেন।

উপমন্যু বললেন “আপনি অনীশ?”

অনীশ মাথা নাড়ল।

.

উপমন্যু বললেন “আপনার খানিকটা সময় নেব”।

অনীশ অবাক গলায় বলল “আমার? কেন বলুন তো?”

উপমন্যু হাসিমুখে বললেন “এক যুবতী খুন হয়েছেন। সেই ব্যাপারেই আর কী। আপনি জয়িতা নামে কাউকে চিনতেন?”

অনীশ উপমন্যুর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল “এই নামে অনেককেই চিনি আমি”।

উপমন্যু তার মোবাইলটা অনীশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন “দেখুন একে চেনেন নাকি”।

অনীশ বেশ কয়েক সেকেন্ড জয়িতার ছবির দিকে তাকিয়ে মোবাইলটা উপমন্যুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল “চিনি”।

উপমন্যু থেমে থেমে বললেন “জয়িতা খুন হয়েছে অনীশ”।

অনীশ একটু চমকে উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বলল “ওহ”।

উপমন্যু বললেন “জয়িতার সঙ্গে আপনার হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট আমরা পড়েছি”।

অনীশ আবার চমকাল। বলল “আমি একটু আসছি। আপনি বসুন”।

উপমন্যু তীক্ষ্ণ চোখে অনীশের দিকে তাকিয়ে বললেন “বেশ। আমি আছি”।

সামনে রাখা টেবিলের ওপর খবরের কাগজ রাখা ছিল। উপমন্যু একটা কাগজ নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। মিনিট পাঁচেক বাদে একটা ভারিক্কি গলা কানে এল তার “নমস্কার অফিসার”।

উপমন্যু দেখলেন শংকর মুখোপাধ্যায় এসে দাঁড়িয়েছেন।

উপমন্যু বললেন “ওহ, হোয়াট আ সারপ্রাইজ। আমি ভাবতেই পারি নি আপনার সঙ্গে দেখা হবে”।

মাঝারি ঝকঝকে চেহারাটা থেকে ব্যক্তিত্ব ঝলসে পড়ছে। শংকরবাবু উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বললেন “প্লিজ বসুন অফিসার। আপনাকে কিছু অফার করা হয়েছে?”

উপমন্যু বসে বললেন “না ইটস ওকে। আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল লাগল শংকরবাবু। বাঙালির ব্যবসা হয় না, এ অপবাদ আপনি ঘুচিয়েছেন”।

শংকরবাবু সোফায় বসে বললেন “তা ঠিক। তবে কী জানেন তো অফিসার, ব্যবসায় অনেক মানসিক চাপ থাকে। এত চাপ সহ্য করে টিকে থাকাটাও খুব কঠিন কাজ”।

উপমন্যু বললেন “তা বটে। বাঙালি ভঙ্গুর জাতি। একটু চাপ থাকলেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। দুয়েকটা উদাহরণ বাদে অবশ্যই। সবাই তো আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা শংকর মুখোপাধ্যায় হয় না”।

শংকরবাবু খুশি হলেন সৌরভের পাশে তার নামটা শুনে। বললেন “অনেক ধন্যবাদ অফিসার। যাই হোক, আপনি লক্ষণের কাছে শুনেছেন হয়ত আমি একটু আগেই ফিরেছি। রেস্ট নিচ্ছিলাম এমন সময় আমার ছেলে অনীশ আমাকে ডেকে বলল আপনি এসেছেন। ওকে একটু ভীতও মনে হল। কী হয়েছে একটু খোলসা করে বলবেন প্লিজ?”

উপমন্যু বললেন “অনীশের সহপাঠী একটি মেয়ে, জয়িতা নাম। খুন হয়েছে। সে ব্যাপারেই তদন্ত করতে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি যাতে খুনের ব্যাপারে কিছু কিনারা করা যায়। অনীশের এত ভয় পাওয়ার তো কিছু হয় নি”।

শংকরবাবু চিন্তিত মুখে উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বললেন “সর্বনাশ। এই টুকু বয়সের মেয়ে খুন হয়ে গেল? সত্যিই ব্যাপারটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক মেয়েটির বাবা মায়ের কাছে। অনীশের মা নেই, আমাকে সর্বক্ষণ ওর ব্যাপারে চিন্তা করতে হয়, খবর নিতে হয় ছেলেটা বখে যাচ্ছে না তো… বুঝতেই পারছেন, দিন কাল ভাল নয়। প্রাচুর্য থাকলে সমস্যা কমার পরিবর্তে বেড়ে যায় আজকের দিনে”।

উপমন্যু বললেন “একজ্যাক্টলি স্যার। আমিও বুঝেছি অনীশ খানিকটা ভয়ই পেয়েছে। আমি বেসিক কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারলেই খুশি হতাম। এর বেশি কিছু নয়”।

শংকরবাবু গলা বাড়িয়ে ডাকলেন “লক্ষণ?”

লক্ষণ আশে পাশেই ছিলেন। শংকরবাবুর গলা পাওয়া মাত্র ঘরে প্রবেশ করলেন।

শংকর বললেন “অনীশকে ডেকে দাও। আর নন্দিনীকে বল স্যারের জন্য… আপনি কফি খাবেন?”

উপমন্যু বললেন “চিনি ছাড়া”।

শংকর লক্ষণের দিকে তাকালেন “চিনি ছাড়া কফি। আমাকেও দিতে বল”।

লক্ষণ ঘর থেকে বেরলেন।

অনীশ মিনিট খানেকের মধ্যে ঘরে এল।

শংকর অনীশের দিকে তাকিয়ে বললেন “উনি একটা ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলতে এলেন আর তুমি ভয় পেয়ে আমাকে ডাকতে চলে গেলে?”

অনীশ খানিকটা চমকে বাবার দিকে তাকাল।

শংকর কড়া গলায় বললেন “কেউ যদি সৎ হয় তবে তাকে কোন কিছুর আড়ালে থাকতে হয় না। মনে রেখো বিন্দুমাত্র অপরাধ করলেও তোমার বাবা তোমার পাশে থাকবে না, কিন্তু তুমি যদি নির্দোষ হও তবে আর কেউ থাকুক না থাকুক আমি আছি সব সময়। অফিসার যা যা জিজ্ঞেস করবেন তার প্রত্যেকটা উত্তর সঠিক দেবে। আমার আড়ালে লুকোনোর চেষ্টা করবে না। আমি তোমায় কোন রকম সাহায্য করব না মনে রেখ”।

অনীশ মাথা নীচু করল।

শংকর উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বললেন “কফিটা এক সঙ্গে খেয়ে নেওয়া যাক অফিসার। তারপর আপনি ওর থেকে যা যা জানার সব জানতে পারেন। আমি আপনার তদন্তের কাছে কোন রকম বাধা দেব না”।

উপমন্যু মাথা নিচু করে শংকরকে অভিবাদন জানিয়ে বললেন “বাংলার ঘরে ঘরে আপনার মত বাবা হোক শংকরবাবু”।

.

কফি এল একটু পরে। অনীশ মাথা নিচু করে বসে ছিল।

শংকর কফির কাপ উপমন্যুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন “কিছু যদি মনে না করেন অফিসার, আমি জানতে পারি ব্যাপারটা সম্পর্কে?”

উপমন্যু কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন “ক্রাইমের সংজ্ঞা পাল্টাচ্ছে শংকরবাবু। এই কিছুদিন আগেও ক্রাইমে একটা ডাইমেনশন কম ছিল। এখন একটা চমৎকার ডাইমেনশন যুক্ত হয়েছে, ইন্টারনেট। ছেলে মেয়েরা কৈশোরে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিত পড়ত, এখন হোয়াটস অ্যাপে জোক পড়ে। মিম তৈরী করে। সেখানে অফেন্সিভ কন্টেন্ট তৈরী করতে পারলে গৌরবান্বিত হয়। কিছুদিন আগেই আমরা একটা ষোল বছরের ছেলেকে ধরেছিলাম, সে ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষকে নিয়ে কুরুচিকর মিম বানাতো। ছবি পেলেই হল। মিম তৈরী। যৌন ইঙ্গিতকারী মিম। অনুমতি না নিয়েই সে সব ছবি প্রোফাইল থেকে নেওয়া হত। জিজ্ঞাসাবাদ করায় আমাদের একগাদা বিদেশী নাম বলে বোঝাল এগুলো দোষের কিছু নয়। মানুষ অফেন্ডেড হলেই নাকি তাদের জিত। তারা মনে করে মানুষ যতক্ষণ সহ্য করতে পারছে গোটা ব্যাপারটা, যতক্ষণ মানুষের সহ্যসীমায় পুরো ব্যাপারটা থাকছে ততক্ষণ কোন মজাই নেই। সবটাই অসহ্য করাতেই তাদের জয়। ব্যাপারটা একবারে খারাপও কি বলতে পারি আমরা? এটা পরিবর্তিত মানসিকতা। এই পরিবর্তিত মানসিকতার সঙ্গে এই সমসাময়িক মনস্তত্ত্ব না বুঝতে পারলে সমূহ বিপদ”।

শংকর অনীশের দিকে তাকিয়ে উপমন্যুকে বললেন “বয়সটা একটা ফ্যাক্টর অফিসার। সব কিছু পেয়ে যাওয়াটাও। বাবার হোটেলে বসে, দু চারটে ইংরেজি টিভি সিরিজ দেখে নিজেকে বড় কিছু মনে করাটা এ প্রজন্মের একটা সমস্যা। ওর বয়সে আমরা রীতিমত মাঠে খেলা দেখতে যেতাম। ইডেন গার্ডেনস ছিল আমাদের শীতকালের স্বর্গ। এখন টি টুয়েন্টি এসেছে, খেলার থেকে জুয়া বেশি। বাই দ্য ওয়ে অনীশ, যে মেয়েটি খুন হয়েছে, তার চাকরির ব্যাপারেই তুমি আমাকে বলেছিলে তাই না?”

অনীশ সামান্য চমকে বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।

উপমন্যু অনীশের দিকে তাকিয়ে বললেন “আপনার জয়িতার প্রতি দুর্বলতা ছিল?”

অনীশ এক মনে পায়ের নখের দিকে তাকিয়েছিল। শংকর কফির কাপ হাতেই উঠে বললেন “আমি ভেতরে গেলাম অফিসার। ওর আমার সামনে সংকোচ হতে পারে কথা বলতে”।

উপমন্যু উঠে দাঁড়ালেন “সারটেনলি স্যার’।

শংকর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

উপমন্যু অনীশের দিকে তাকিয়ে বললেন “হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটগুলো পড়েছি বুঝতে পেরেছেন আশা করি। গড়পঞ্চকোটে কী হয়েছিল অনীশ যে সে রাতে জয়িতা কলকাতা ফিরে যাওয়ার জেদ ধরে?”

অনীশ এবার উপমন্যুর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল “আপনি আমাকে ফোন করতে পারতেন। বাবাকে জানানোর কি খুব দরকার ছিল?”

উপমন্যু বললেন “আপনি যদি দোষী প্রমাণিত হন সেক্ষেত্রেও কি আপনার বাবা না জানলেই আপনি খুশি হবেন?”

অনীশ বলল “আপনি জানেন না, আমার বাবা আমাকে সব সময় নিচু নজরে দেখে, সবার সামনে ছোট করে। আজ বাবা সুযোগ পেয়ে গেল শুধু আপনার জন্য”।

উপমন্যু বললেন “বেশ তো, আপনার সুযোগ আছে প্রমাণ করার যে আপনাকে যেমন দেখতে মনে হয় আপনি সেরকম নন। আপনাকে যা যা জিজ্ঞেস করা হবে তার উত্তর ঠিক ঠাক দিন, আপনার বাবাই আপনাকে নিয়ে গর্বিত হবে”।

অনীশ রাগী চোখে কয়েক সেকেন্ড উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বলল “জয়িতা ওয়াজ আ বিচ। একটা হোর। আপনি খোঁজ নিন। অনেক কিছু জানতে পারবেন ওর সম্পর্কে”।

উপমন্যু ঠান্ডা মাথায় বললেন “আমি তো জয়িতা সম্পর্কে আপনার অপিনিয়ন চাই নি। আমি জাস্ট জানতে চাইছি গড়পঞ্চকোটে কী হয়েছিল যে কারণে জয়িতা কলকাতায় ফিরে যেতে চায়?”

অনীশ বড় বড় চোখ করে উপমন্যুর দিকে তাকাল। চারদিকে দেখল। মাথা নিচু করে হাতের আঙুলে শব্দ করতে লাগল।

উপমন্যু বললেন “ইট ওয়াজ এ ডিল তাই না? তুমি জয়িতাকে চাকরি দেবে তার পরিবর্তে জয়িতা তোমার সঙ্গে শোবে? রাইট?”

অনীশ টেবিলে রাখা জলের গ্লাস নিয়ে এক নিঃশ্বাসে জল শেষ করে বলল “বললাম তো শি ইজ এ বিচ। সেদিন একবারও বলে নি… পৌঁছে জানাল শি ওয়াজ অলরেডি প্রেগন্যান্ট”।

উপমন্যু চমকালেন না। শুধু অস্ফূটে বললেন “দিস কেস ইজ গেটিং ফাকিং ইন্টারেস্টিং”।

.

হোয়াটস অ্যাপ ইনবক্স- জয়িতা

.

রুহিকে করা মেসেজ

২৫শে সেপ্টেম্বর সকাল আটটা।

-ওই। উঠেছিস?

-বল।

-একটা হেল্প চাই।

-বাবাহ। এত ভনিতার কী আছে? বল।

-ফেঁসে গেছি ইয়ার।

– (বড় বড় চোখ করা ইমোজি) মানে?

-প্রেগা নিউজ। পজিটিভ।

-ফাক। রিয়েলি?

-হু। জাস্ট চেকড।

-ফাক ফাক ফাক। দাঁড়া ফোন করছি।

রাত সাড়ে এগারোটা

রুহি- কী রে? কিছু হল?

জয়িতা- না। কাউকে বলিস নি তো?

-না না পাগল নাকি তুই?

-ভাল্লাগছে না। কী যে হল!

-তাকে জানিয়েছিস?

-না। কী হবে জানিয়ে?

-তাও ঠিক। টেক কেয়ার রে। চিন্তা করিস না, ওষুধ আছে। শুধু মনটা শক্ত রাখ।

-বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছে খুব।

-মাকে ফোন কর বরং।

-ধুস! এত রাতে সব ঘুমিয়ে পড়েছে।

-ওকে। ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি। দেরী করিস না।

-হ্যাঁ রে। বাই।

-বাই।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *