ক্রন্দসী

ক্রন্দসী

“শ্যামার নামের মন্ত্রগুণে
উতলা নগররক্ষী আমন্ত্রণ শুনে
রোমাঞ্চিত; সত্বর পশিল গৃহ মাঝে
 পিছে বন্দী বজ্রসেন নতশির লাজে
আরক্ত কপোল। কহে রক্ষী হাস্য ভরে,
 ‘অতিশয় অসময়ে অভাজন পরে
অযাচিত অনুগ্রহ।”

 ওহ্ ভাষার কী জেল্লা! ‘অতিশয় অসময়ে অভাজনে অযাচিত অনুগ্রহ–’

‘অ’য়ে ‘অ’য়ে ছয়লাপ! তা-ও ইন্সপেক্টর জেনরেল অব্‌ পুলিসের মুখে।

গল্পটি সকলেরই জানা। রবীন্দ্রনাথ এটি কণেবর জাতক থেকে নিয়েছেন। আজকের দিনের ভাষায় বলতে গেলে রাজ্যপালের মেয়ের আঙটি হারিয়েছে। তুমুল কাণ্ড। স্বয়ং আইজি যখন চোর ধরে গবর্নমেন্ট হৌসের দিকে যাচ্ছেন তখন মনে করুন মাতাহারি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি কি তখন ‘উতলা’ এবং ‘রোমাঞ্চিত’ হবেন না? তাঁর মুখে কি তখন থৈ ফুটবে না, চোখ দুটো পলকা নাচ নাচবে না! অবশ্য সামান্য ‘অ’ দিয়ে কবিত্বের প্রকাশ– রবীন্দ্রনাথ অতি মোলায়েম ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পুলিস এর বেশি আর কী কবিত্ব করবে? তবে কি না রবীন্দ্রনাথ যখন কবিতাটি লিখেছিলেন সেদিনের তুলনায় আজকের পুলিস বড্ড বেশি লেখা-পড়া করে আপন সর্বনাশ টেনে আনছে।

আমার অবস্থা হয়েছিল বজ্রসেনের। সে চোর।

আমি তখন বোম্বায়ে। আমার এক বন্ধু ব্যাঙ্কার। নাম জভেরি– অর্থাৎ জহুরির গুজরাটি সংস্করণ। এক বাঙালি ‘ফিলিম-এস্টারে’র শাদি। তিনি তাঁর ব্যাঙ্কার জভেরিকে নেমন্তন্ন করেছেন। জভেরি ব্যাচেলর; আমার সঙ্গে চম্ করে। স্টার সেটি জানতেন। লক্ষৌয়ে প্রতিপালিত বঙ্গরমণী এটিকেট-দুরুস্ত হয়, যত না প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি। বিবেচনা করি আমারও নিমন্ত্রণ ছিল– কিন্তু কসম খেতে পারব না।

রোশনাই বাদ্যি-বাজনা যা ছিল তা এমন কিছু মারাত্মক খুনিয়া ধরনের নয়। কন্যা কুরূপা হলে এসবের প্রয়োজন। ইংরেজিতে বলে লিলি ফুলকে তুলি দিয়ে রঙ মাখাতে হয় না! আজকের দিনের ভাষায় লিপস্টিক্‌-রু মাখাতে হয় না। যাঁরা আছেন এবং যাঁরা আসছেন তাঁদের এক-একজনই একধামা লিলি–না, দুইধামা।

দরিদ্র আবুহোসেন ঘুম ভাঙতে দেখে, সে সুন্দরীদের হাটে। কূজনে গুঞ্জনে গন্ধে অনুমান করল সে খলিফা হারুন-অর-রশিদের হারেমের ভিতর। সাক্ষাৎ পরীস্তান।

আর আমি? অধুনা মৃত ভাস্কর এপস্টাইন আমাকে ‘বৃদ্ধ নিগ্রো’র মডেল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুন্দরীরা আমাকে অবহেলা করেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন, আমিও বুঝি ফিলিম স্টার ‘স্যুটিঙে’র (‘শুটিঙ’ সাদামাটা সিনেমা বাবদে অজ্ঞজনের শুদ্ধ উচ্চারণঃ) ড্রেস না ছেড়েই দাওয়াতে এসেছি।

আমি ভালো করেই জানি, আপনারা সব স্টারদেরই চেনেন, কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে দেখেছেন কি না সে-বিষয়ে সন্দেহ। তদুপরি আরেকটি ছোট কথা আছে। তারকার তুলনা দিয়েই নিবেদন করি। অরুন্ধতী আকাশের ক্ষুদ্রতম তারকা। কিন্তু তিনি বশিষ্ঠের পাশে বসে যখন সপ্তর্ষির সাতটি তারকার একজন হয়ে দেখা দেন তখন মনে হয় ইনি না থাকলে সপ্তর্ষির সাতটি তারকাই মিথ্যা হতেন।

শাদি মজলিসে তাই ক্ষুদ্রতম তারকাটিও চিত্তহারিণী হয়ে দেখা দিয়েছিলেন।

এলেন, মনে করুন– নামগুলো একটু উল্টেপাল্টে দিচ্ছি- শমশাদ বানু লায়লা। পরনে সাটিনের পাজামা। পায়ের এক-একটি ঘের অন্তত দু হাত। স্বচ্ছন্দে যে কোনও বঙ্গসন্তানের তিনটি পাজামা বা পাঁচটি পাতলুন হতে পারে। শমশাদ বানুর কোমরটি বঙ্গরমণীর কাঁকনের সাইজ। তাই কোমর থেকে পর্দার মতো ফোল্ডে ফোন্ডে সে পাজামা নেমে আসাতে বোঝা গেল না তিনি মাডাম পম্পাডুয়ের ফ্রক পরেছেন, না ভাওয়ালের জমিদারবাড়ির লুঙ্গি পরেছেন, না ইরানি বেদেনীদের তাম্বু-পানা ঘাঘরা পরেছেন। আসলে নাকি একে লক্ষৌঈ বড়া মুরি পাজামা বলে। তা সে যে নামই হোক, আমার মনে হল আমি যেন খাসিয়া পাহাড়ে মুশমই জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়িয়ে। বিজলির আলো প্রতি ফোন্ড বেয়ে যেন গলা রুপোর মতো ঝরনাধারায় পায়ের কাছে নেমে এসে শততরঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে শমশাদ বানু লায়লা যেন আস্বচ্ছ দুগ্ধকুণ্ডে কটিতটটি ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

এর সঙ্গে সে-যুগে লম্বা কুর্তা পরা হত। ইনি পরেছেন কঞ্চুলিকা বা চোলি। আমি মাত্র একবার সেদিকে তাকিয়েছিলুম।

মোগল বাদশা মারা গেলে যে ছেলে রাজা হত সে অন্যদের চোখ চোখেরই সুরমা পরার শলা দিয়ে কানা করিয়ে দিত। আমার দুটি চোখই যেন কানা হয়ে গেল। ওরকম কিংখাব আমি দেশ-বিদেশের কোনও জাদুঘরেও দেখিনি। সোনা-রুপোর জরি দিয়ে সে কিংখাবে এমনই কারুকার্য করা হয়েছে যে কিংখাবের একটি টানাপড়েনের রেশমি সুতোও দেখা যাচ্ছে না।

ঘাঘরাটি ছিল যেন শীতল ঝরনা; এ যেন সাক্ষাৎ অগ্নিকুণ্ড।

চোলির হেথাহোথা দু একটি মুক্তো গাঁথা। যেমন বহ্নি নির্বাপিত করার জন্য ক্ষুদ্র হিমিকার নিষ্ফল প্রয়াস।

দু কাঁধ বেয়ে নেমে এসেছে বুলবুল-চশম্ ওড়না।

সেই ছেলেবেলায় দাদিমাকে বুলবুল-চশম শাড়ি পরতে দেখেছি। আর আজ তার-ই ওড়না অতি সূক্ষ্ম মসলিনের এখানে-ওখানে দুটি দুটি করে বুলবুলের চোখের (চশম) মতো ফুটো করে সে দুটি অতি ফাইন মুগা সিল্ক দিয়ে বোতামের ফুটোর মতো কাজ করা হয়। এ রমণীর রুচি আছে। ক্ল্যাসিস্ পড়ে। বুলবুল-চশম্ কালিদাসের যুগের, তার মূল্য ইনি জানেন।

আশ্চর্য! এলো খোঁপা! গামেটল রঙের কৃষ্ণনীল চুলের খোঁপাটি কাঁধে শুয়ে আছে যেন কৃষ্ণকরবীর স্তবক শুভ্র ফুলদানিতে ঘুমিয়ে আছে।

***

হঠাৎ দেখি এক চোখ-ঝলসানো সুন্দরী, বিধবার থান পরে! ইনি বিয়ের পরবে কেন? আমাদের দেশে তো কড়া বারণ। তখন আবার দেখি তার হাতে ফেনা-ভর্তি শ্যাম্পেনের গেলাস। নাহ, ইনি সদ্য স্টুডিয়ো থেকে শুটিঙ অর্ধসমাপ্ত রেখে এসেছেন।

আরও অনেকেই ছিলেন। বেবাক বর্ণনা দিতে হলে তামাম পুজো সংখ্যাটা আমাকেই লিখতে হয়। খর্চায় পুষবে না– সম্পাদক জানেন।

ইতোমধ্যে কৃষ্ণলাল জভেরি এসে আমাকে নিয়ে চললেন সেই তারকা যজ্ঞশালার প্রান্তদেশে অনাদৃতা ঊর্মিলার অবস্থা থেকে টেনেহিঁচড়ে অন্য প্রান্তে। কী ব্যাপার? জভেরি উত্তেজনার মধ্যিখানে ইংরেজি ভুলে গিয়ে গুজরাটিতে কী যেন ‘সুঁ সুঁ’ করলে। কে যেন আমাকে ইন্টারভু দেবে। আমি বেকার। বিধি তবে দক্ষিণ। অদ্য প্রভাতের সবিতা প্রসন্নোদয় হয়েছেন। আম্মো ইস্টার হব।

শমশাদ বানু লায়লা মৃদু হাস্য করলেন। ফিল্মস্টারের ধবধবে সাদা দাঁত নয়। গোলাপির চেয়েও গোলাপি রঙের অতি ক্ষীণ একটি ফিল-স্টারের দাঁতের উপর। কী সুন্দর! তাই বুঝি কালিদাস তাঁর নায়িকার দাঁতের সঙ্গে রাঙা অশোকের তুলনা দিয়েছেন– শুভ্র বন-মল্লিকার সঙ্গে দেননি। আগেই বলেছি, ইনি ক্ল্যাসিকস্। পানের রস গ্রহণ করতে জানেন। অন্য পান কিন্তু জানেন না। হাতে লেমন-স্কোয়াশ।

শুধালেন, ‘আপনি দার্শনিক?’

আমি জভেরিকে ধমক দিয়ে বললুম, ‘জভেরি!’

 জভেরি ভীরু। বলল, ‘আমি কিছু বলিনি।’

আমি বিবি সাহেবাকে চালাকি করে শুধালুম, ‘আমাকে কি এতই বিজ্ঞ মনে হয়?’

 ‘বুদ্দু মনে হয়। বিজ্ঞ মনে হয় ফিল্মস্টারকে, ব্যাঙ্কারকে, পোকার খেলাড়িকে।’

বাধ্য হয়ে বললুম, ‘না। আমি দার্শনিক নই। আমি দর্শনের শত্রু, ধর্ম নিয়ে নাড়াচাড়া করি।’

শমশাদ বানুর মুখে তৃপ্তির চিহ্ন ফুটল।

এতদিনে আমার নীরস শাস্ত্রচর্চা ধন্য হল।

 বললেন, ‘সে তো আরও ভালো। আমি তাই খুঁজছিলাম। আচ্ছা বলুন তো–’ বলে তিনি যেই একটু থেমেছেন, আমি তাড়াতাড়ি বললুম, ‘বিবি সাহেবা, এই জায়গা কি ধর্ম-চর্চার পক্ষে প্রশস্ত?’

অবহেলার সঙ্গে বললেন, ‘নয় কেন? পাপীরাই তো ধর্মচর্চা করবে। ধার্মিকদের তো ওসব হয়ে গিয়েছে। তেলো মাথায় ব্রিলেন্টাইন? সেকথা থাক। আমি শুধোতে চাই, কেউ যদি মরে যায় (আমার মনে হল শমশাদ কেমন যেন একটু শিউরে উঠলেন) তবে আমি মরে গেলে তাঁকে দেখতে পাব কি?’

আমি শুধালুম, ‘কোন্ ধর্মমতে?’

 ‘সে আবার কী?’

 ‘আমি “তুলনাত্মক ধর্মশাস্ত্র” চর্চা করি।’

‘তার মানে?’

 ‘এই মানে ধরুন পৃথিবীতে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান মেলা ধর্ম আছে। আমি প্রত্যেক ধর্মের জন্ম, যৌবন, বর্তমান অবস্থা,– কে কী বলে তাই পড়ি। যেমন প্রত্যেক দেশের ইতিহাস হয়, তেমনি প্রত্যেক ধর্মেরও ইতিহাস হয়।’

একটু অসহিষ্ণু হয়ে বললেন, ‘আমি অতশত বুঝি না। আমি ফিলমে কাজ করি আমি পণ্ডিত নই। আমি জানতে চাই, এতসব ধর্ম পড়ার পর এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত, পার্সনাল মতটা কী?’

মহা ফাঁপরে পড়লুম। বললুম, ‘আমি কখনও ভেবে দেখিনি। মুসলমান ধর্ম বলে– ’

বাধা দিয়ে বললেন, ‘থাক। আপনি তা হলে একটি আস্ত চিনির বলদ। ধর্ম বয়ে বেড়াচ্ছেন– কখনও কাজে লাগাননি।’

আমি বললুম, ‘ধর্ম কি মসলা বাটার জিনিস! নামাজের কার্পেট দিয়ে কি মানুষ বিছানা বাঁধে?’

অতি শান্তকণ্ঠে বললেন, ‘না। কিন্তু নামাজের কার্পেটে মানুষ নামাজ পড়ে; ওটা শিকেয় তুলে রাখে না।’

আমি বললুম, ‘আপনার সঙ্গে আলাপ হওয়াতে ফিলম-স্টারদের সম্বন্ধে আমার ধারণা বদলে গেল। আপনি নিশ্চয়ই বিস্তর লেখাপড়া করেছেন।’

‘কী আশ্চর্য! এ তো কম-সেসের কথা। এটা না থাকলে প্রসার, ডিরেক্টর, এডমায়ারার, লাভারের দল আমাকে কুটিকুটি করে ফেলত না! ওসব কথা থাক্। আপনি আমার কথার উত্তর বেশ চিন্তা করে দিন।’

তার পর জভেরির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওহে জভেরি, ওঁকে একটা শ্যাম্পেন দাও না?’

আমি মাথা নেড়ে বললুম, ‘থাক্। আপনার পাল্লায় পড়ে আমার বিশ বছরের নেশা কপ্পুর হয়ে গেছে। আড়াই ফোঁটাতে আর কী হবে, লায়লীবানু!’

 একটু হেসে বললেন, ‘আপনার মুখে “লায়লী” বেশ মিষ্টি শোনায়।’

সববোনাশ! সববোনাশ!! এ যে ডবল এটাক! পিনসার মুভমেন্ট!

 ওড়নাটি ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে চেয়ারে যেভাবে চেপে বসলেন তাতে বুঝলুম যে এর গায়ে কাবুলি রক্ত আছে। উত্তর না নিয়ে উঠবেন না।

মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, চোখ দুটি বন্ধ– বড় শান্ত প্রশান্ত নিস্তব্ধ ভাব। ওই বেশ পরা না থাকলে মনে হতো তপস্বিনী, কঠোর ব্রতচারিণী সুফি রমণী।

আমি আস্তে আস্তে বললুম, ‘আমার মনে হয়–,’ থামলুম। কোনও উত্তর নেই।

কিছুক্ষণ পর ফের বললুম, ‘আমার মনে হয়–’

অল্প একটু ‘উ’ শুনতে পেলুম।

‘–যে পুণ্যবান লোকের কোনও কামনা আল্লাতালা অপূর্ণ রাখেন না।’

***

 আমি জানি, চতুর্দিকে তখন হই-হুল্লোড়। কিন্তু আমার মনে হল যেন আমি মরুভূমির মাঝখানে দুপুররাত্রে জেগে উঠেছি। দিবাভাগের আতপতাপে দগ্ধ সর্ব কাফেলার মানুষ উট গাধা মোড়া সবাই অকাতরে ঘুমুচ্ছে। আকাশের নৈস্তব্ধ্যকেও যেন মরুভূমির নৈঃশব্দ্য হার মানিয়েছে। কোথা থেকে এল এ শান্তি, এ বিধান? তাকিয়ে দেখি, লায়লার মুখ থেকে।

ততক্ষণে জভেরি শ্যাম্পেন নিয়ে ফিরেছে।

লায়লা উঠে বললেন, ‘আপনার কথা ঠিক।’

তার পর জভেরিকে রাজেশ্বরীর কণ্ঠে বললেন, ‘তুমি থাকো। আমি এঁকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।’

গাড়িতে একটি কথাও হয়নি।

আমি নামবার সময় তাঁকে ‘আদাব আরজ, খুদা হাফিজ’ বললুম। তিনি সযত্নে আমার ডান হাত আপন দু হাতে ধরে মৃদু চাপ দিলেন। সে চাপে ছিল বন্ধুত্ব, সহৃদয়তা। ফি-স্টারের হাতের চাপ আমি এর আগে, এখন এবং এর পরেও কখনও পাইনি।

মধ্যরাত্রি অবধি খাটে শুয়ে শান্তি অনুভব করেছিলুম।

রাত তিনটেয়, বোধহয়, একবার ধড়মড় করে জেগে উঠে ফের শুয়ে পড়েছিলুম।

***

সকালে উঠে দেখি, জভেরি ব্যাঙ্কে চলে গিয়েছে।

 তার পর দেখি, পূর্বরাত্রির প্রসন্নতা মন থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

 কী যেন এক অজানা অস্বস্তির ভাব সর্বদেহমন অসাড় বিকল করে দিয়েছে।

ফোন বাজল। জভেরি চিৎকার করে কী বলছে।

 ‘শোনো, কাল রাত তিনটেয় শমশাদ আত্মহত্যা করেছে। দুটো চিঠি রেখে গিয়েছে। একটা পুলিশকে, একটা তোমাকে। তোমার চিঠিটার নকল যোগাড় করেছি। লিখেছে, ‘মাই ডিয়ার এম, তোমার কথাই ঠিক। আমি চললুম। দেখা যখন তার সঙ্গে হবেই তখন আর দেরি করে লাভ কী? আমি জানি আত্মহত্যা পাপ। আমার পুণ্যের বদলে এটা মাফ হয়ে যাবে।’

এখন মনে পড়ছে সন্ধ্যার সময় জভেরি বাড়ি এসে আমার হাত থেকে ফোন নামিয়েছিল।

এ-জীবনে এই প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলুম। আর এই শেষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *