ঐতিহাসিক

আজ এসেছি তোমাদের ঘরে ঘরে–
পৃথিবীর আদালতের পরোয়ানা নিয়ে
তোমরা কি দেবে আমার প্রশ্নের কৈফিয়ৎ:
কেন মৃত্যুকীর্ণ শবে ভরলো পঞ্চাশ সাল?
আজ বাহান্ন সালের সূচনায় কি তার উত্তর দেবে?
জানি! স্তব্ধ হয়ে গেছে তোমাদের অগ্রগতির স্রোত,
তাই দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো করছ ভবিষ্যৎ
আর অনুশোচনার আগুনে ছাই হচ্ছে উৎসাহের কয়লা।
কিন্তু ভেবে দেখেছ কি?
দেরি হয়ে গেছে অনেক, অনেক দেরি!
লাইনে দাঁড়ানো অভ্যেস কর নি কোনোদিন,
একটি মাত্র লক্ষ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
মারামারি করেছ পরস্পর,
তোমাদের ঐক্যহীন বিশৃঙ্খলা দেখে
বন্ধ হয়ে গেছে মুক্তির দোকানের ঝাঁপ।
কেবল বঞ্চিত বিহ্বল বিমূঢ় জিজ্ঞাসাভরা চোখে
প্রত্যেকে চেয়েছ প্রত্যেকের দিকেঃ
–কেন এমন হল?

একদা দুর্ভিক্ষ এল
ক্ষুদার মাহীন তাড়নায়
পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে একই লাইনে
ইতর-ভদ্র, হিন্দু আর মুসলমান
একই বাতাসে নিলে নিঃশ্বাস।
চাল, চিনি, কয়লা, কেরোসিন?
এ সব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের জন্য চাই লাইন।
কিন্তু বুঝলে না মুক্তিও দুর্লভ আর দুর্মূল্য,
তারো জন্যে চাই চল্লিশ কোটির দীর্ঘ, অবিচ্ছিন্ন এক লাইন।

মূর্খ তোমরা
লাইন দিলেঃ কিন্তু মুক্তির বদলে কিনলে মৃত্যু,
রক্তয়ের বদলে পেলে প্রবঞ্চনা।
ইতিমধ্যে তোমাদের বিবদমান বিশৃঙ্খল ভিড়ে
মুক্তি উঁকি দিয়ে গেছে বহুবার।
লাইনে দাঁড়ানো আয়ত্ত করেছে যারা,
সোভিয়েট, পোল্যান্ড, ফ্রান্স
রক্তমূল্যে তারা কিনে নিয়ে গেল তাদের মুক্তি
সর্ব প্রথম এই পৃথিবীর দোকান থেকে।
এখনো এই লাইনে অনেকে প্রতীক্ষমান,
প্রার্থী অনেক; কিন্তু পরিমিত মুক্তি।
হয়তো এই বিশ্বব্যাপী লাইনের শেষে
এখনো তোমাদের স্থান হতে পারে–
এ কথা ঘোষণা ক’রে দাও তোমাদের দেশময়
প্রতিবেশীর কাছে।
তারপর নিঃশব্দে দাঁড়াও এ লাইনে প্রতিজ্ঞা
আর প্রতীক্ষা নিয়ে
হাতের মুঠোয় তৈরী রেখে প্রত্যেকের প্রাণ।
আমি ইতিহাস, আমার কথাটা একবার ভেবে দেখো,
মনে রেখো, দেরি হয়ে গেছে, অনেক অনেক দেরি।
আর মনে ক’রো আকাশে আছে এক ধ্রুব নক্ষত্র,
নদীর ধারায় আছে গতির নির্দেশ,
অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষা,
আর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *