এ টেল অব জেরুসালেম
সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে এক দুর্গ-শহর।
শত্রুসৈন্য দুর্গ-শহরটাকে ঘিরে রেখেছে। তারা পাহাড়ের শীর্ষদেশে অবস্থান করছে। শত্রু-শিবির থেকে নিচের দিকে তাকালে নজরে পড়ছে উঁচু, প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গ-শহরটা, আর ঐ একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থান করছে শহর আর দুর্গটা।
নিচের পাহাড়ের গায়ের ওই দুর্গ-শহরে কিছুক্ষণের মধ্যেই উপহার আসার কথা। নাদুসনুদুস ভেড়া জবাই করবে। তারপর সে মাংস দিয়ে শত্রুসৈন্যরা পরমানন্দে ভোজ সারবে।
শত্রুসৈন্যরা ছিন্নমুষ্ক।
কিন্তু পাহাড়ের গায়ের দুর্গ শহরের মানুষগুলো কিন্তু ছিন্নমুষ্ক না, সবাই বিধস্য। তাই শত্রুসৈন্যদের সঙ্গে তাদের আহার্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দিক থেকে পার্থক্য তো থাকারই কথা। আত্মম্ভরী ছিন্নমুষ্ক সেনাপতি পাহাড়ের চূড়ায় বসে সদম্ভে স্বগতোক্তি করছে–আমরা উদারচিত্ত। আমাদের ঔদার্যের কথা লোকের কাছে বুক ফুলিয়ে বলার মতোই বটে। আমাদের সমতুল্য কাউকেই দেখছি না। দুর্গ শহরের মানুষগুলো তো আমাদের কাছে মেষ শাবকের তুল্য। দেবতাজ্ঞানে আমাদের পূজা করা ছাড়া তাদের কোনো গতিই নেই। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের কথায় তারা উঠছে-বসছে।
আমরা তাদের চারদিক থেকে অবরোধ করে রেখেছি। কেন? এর পিছনে কোন্ উদ্দেশ্য আছে, তাই না? আমরা তাদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেব। আমরা যদি অন্য ধান্ধা করতাম, সেলামিস্বরূপ মোটা টাকা চেয়ে বসতাম, অনায়াসে তা যে পেয়ে যেতাম, এতে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু আমরা ভুলেও সে পথে হাঁটলাম না। আমরা তো আর কাঙাল নই যে, অন্যের কাছে হাত পাততে যাব। তবে আমরা কি চাচ্ছি? মোটামোটিনাদুসনুদুস ভেড়া, জবাই করার জন্য, মজা করে ভুরিভোজ খাবার জন্য।
একটু পরেই বাঞ্ছিত বস্তু ওপর থেকে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো। ওপর থেকে ভেড়ার মাংস ভর্তি পেটি দড়িতে বেঁধে নিচে নামিয়ে দিল। পিঠে পাথর বেঁধে ভারি করা হল, যার জন্য দড়িটা টানটান হয়ে গেল।
বেশ কয়েকজন মিলে বাক্সটাকে টানাটানি করে তুলে নিল। এর জন্য তাদের বেশ কসরত করতে হয়েছে। গা দিয়ে রীতিমত ঘাম ঝড়ছে। যারা এতক্ষণ মাথা নুইয়ে বাক্সর চারপেয়ে প্রাণীটাকে দেখছিল, তারা সোল্লাসে বলতে লাগল। আরে বাস! দারুণ ভেড়া! খাসা ভেড়া। তাদের একজন দু বাহু তুলে উদ্দাম নৃত্য করতে করতে গলা ছেড়ে উল্লাস প্রকাশ করতে লাগল। বাজাও, কাড়া নাকড়া আর তুরীভেড়ি। গলাছেড়ে গান ধরো সবাই! কী মজা! খাসা ভেড়া! নাদুসনুদুস ভেড়া!
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ইয়া পেল্লাই বাক্সটা ওপরে উঠে গেল। বাক্সটার ঢাকনা খুলতেই শত্রুসৈন্যদের সবার মুখ আমসির মতো শুকিয়ে গেল।
ফ্যাকাশে-বিবর্ণ মুখে সবাই বাক্সটার দিকে তাকিয়ে রইল। কারো মুখেই বাক্ সরছে না। আর চোখের তারায় বিস্ময়ের সুস্পষ্ট ছাপ।
এমন সময় নাদুসনুদুস চারপেয়ে প্রাণী এক লাফে বাক্সটার ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। তবে এটা অবশ্যই ভেড়া নয়। সুবিশাল ছিন্নমুষ্ক শূকর। একেবারেই অপ্রত্যাশিত কাণ্ড।
যার নরম মাংস অতি পবিত্র বিরোচিত হয়–আহারের কথাও মুখে উচ্চারণ করতে নেই। তোবা! তোবা!