আয়নামহল – ৫

পাঁচ

স্কট লেনের পার্টি অফিসে বসে প্রুফ দেখছিলেন অজিতেশ। একটা প্রস্তাবের খসড়া, অজিতেশেরই বানানো। বিমা আর ব্যাঙ্ক শিল্পে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ কতটা যুক্তিযুক্ত এবং কেন্দ্রীয় সরকার যদি শেষ পর্যন্ত বিদেশি পুঁজি লগ্নিতে সম্মতি জানায় তখন কী-ই-বা ভূমিকা হবে পার্টির মোটামুটি এটাই খসড়ার প্রতিপাদ্য বিষয়। পরশু রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে প্রস্তাবটা পাস হয়ে গেলে মার্চের শেষে কেন্দ্ৰীয় কমিটির বৈঠকে সেটা পেশ করা হবে। কিন্তু টাইপে এত ভুল করেছে ধীমান! শোধরাতে শোধরাতে অজিতেশের যে আঙুল ব্যথা হয়ে গেল!

চায়ের কেটলি হাতে ঢুকল নকুল। টেবিলে ঠকঠক দু’খানা মাটির ভাঁড় রেখে বলল, আপনাদের বিল কিন্তু একশো টাকা পেরিয়ে গেছে জেঠু।

অজিতেশ কাগজের তাড়া থেকে মুখ তুললেন। চশমা খুলে রাখলেন টেবিলে। চোখ রগড়াচ্ছেন। টেবিলের অপর প্রান্তে চিন্ময়। একটা ঢাউস বই খুলে পাতা উলটোচ্ছে, আর মাঝে মাঝে কাগজ গুঁজে যাচ্ছে পাতায়। অজিতেশ ফের চশমা পরে নিয়ে বললেন, কী হে, নকুলের ওয়ার্নিং বেল শুনতে পেলে?

বছর পঞ্চাশের চিন্ময় একটা ভাঁড় তুলে চুমুক দিল, ছাড়ুন তো দাদা! ওকে তো বলাই আছে আড়াইশো না হলে পেমেন্ট দেব না।

নকুল গোঁজ মুখে বলল, গোটা পঞ্চাশেকও যদি দিতেন….

অজিতেশ বললেন, আমি দিয়ে দেব টাকাটা? তুমি না হয় আমায় পরে পে করে দিয়ো!

দিতেই পারেন। তবে মাসখানেকের আগে কিছু পাবেন না।

অজিতেশ মুখ টিপে হাসলেন একটু। ভালমতোই জানেন, মাসখানেক কেন, কোনও দিনই পাওয়া যাবে না। চিন্ময়ের ভাঁড়ার সর্বদাই শূন্য। পার্টি ভাঙতে ভাঙতে অণু-পরমাণুর দশায় চলে এলে বোধহয় এরকমই হয়। সারা রাজ্যে তাঁদের সদস্য সংখ্যা এখন চারশো ও হবে কিনা সন্দেহ, ফান্ড আসবে কোত্থেকে? প্রায় প্রতি মাসেই পেনশনের টাকা থেকে এরকম দুশো-তিনশো তাঁর গচ্চা যাচ্ছে।

টাকাটা দিতে অজিতেশের আপত্তি নেই। তবে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বুকটা চিনচিন করে ওঠে। সেই আটাত্তর উনআশি সালে, পার্টি যখন রাজ্যে প্রায় মুছে যাওয়ার দশা, তখনও ঠিক এতটা খারাপ অবস্থা ছিল না। ভোটে হেরে গেছে নেতারা, তবু অফিসের ঠাটঠমক ভালই বজায় ছিল। মুখ শুকনো করে বসে আছে সবাই, কিন্তু চা মুড়ি শিঙাড়া এসে যাচ্ছে। আর এখন পঞ্চাশ-একশো টাকার জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়।

অবশ্য সেই পার্টি আর অজিতেশের এই পার্টি এক নয়। পার্টি লাইন বদলে কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়ল, আর অজিতেশ পার্টি ছাড়লেন। একদা যারা ডাঙ্গের প্রতিটি বাণীকেই অমৃতসমান মনে করত, তারা ডাঙ্গের লেজুড় হওয়ার অপরাধে অজিতেশকেই পার্টি থেকে বের করে দিল। ডাঙ্গে আর তাঁর কন্যার রাজনীতিতেও থিতু হতে পারলেন না অজিতেশ, চোখা চোখা প্রশ্ন তোলার অভিযোগে সেই ছাদটাও গেল। এখন নতুন পার্টিতে…. নতুনই বা কোথায়, নয় নয় করে পনেরো বছর হয়ে গেল… কোনওক্রমে টিকে থাকা। এখানে আর কিছু না হোক, নিজের মতটুকু তো জোরের সঙ্গে ঘোষণা করতে পারেন। তিয়াত্তর বছর বয়সে এটুকুই বা কম কী!

নকুলকে টাকাটা দিয়ে আবার কাজে মনোযোগী হলেন অজিতেশ। এক হাতে খচখচ কলম চালাচ্ছেন, অন্য হাতে চায়ের ভাঁড়। বড়জোর মিনিট পনেরো, আঙুলের সঙ্গে সঙ্গে চোখও এবার বিদ্রোহ শুরু করেছে। চশমা নামিয়ে চোখের মণি দুটো টিপলেন আস্তে আস্তে। সম্প্রতি শিখেছেন ব্যায়ামটা। কাজ হয়, টনটনানি কমে একটু।

চিন্ময় আড়ে আড়ে দেখছিল অজিতেশকে। জিজ্ঞেস করল, থকে গেলেন নাকি, অজিতদা?

একটু।

আর ক’পাতা বাকি?

তিনটে শিট।

আজ তা হলে ছেড়ে দিন। কাল দুপুর দুপুর এসে দেখে দেবেন, ধীমান সন্ধেবেলা কারেকশন টারেকশন করে প্রিন্টআউট বের করে নেবে।

ম্যাটারটা আজই দিয়ে দিতে পারলে ভাল হত না? ফাইনাল প্রিন্ট বের করার আগে কাল আর একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারতাম। নইলে ধীমানের যা কাজের ছিরি, কত ভুল যে থেকে যাবে!

না না, ধীমান যথেষ্ট সিরিয়াস, দেখে বুঝেই করবে।

ঘোড়ার মাথা করবে। তোমাদের, আজকালকার ছেলেদের, আমার চেনা আছে। মুখে ফটর ফটর করবে, সভাসমিতিতে জ্বালাময়ী ভাষণ দেবে, অথচ আসল কাজের বেলায় ঢুটু। কিছু মনে কোরো না চিন্ময়, ধীমান আজ নেতা হয়েছে বটে, আমাদের যৌবনকালে পার্টি কিন্তু ধীমানদের দিয়ে মাইকটেস্টিংয়ের বেশি কিছু করাত না। এ-কথা আমি ধীমানকেও সামনাসামনিই বলি।

সত্তরোর্ধ্ব অজিতেশের চোখে পঞ্চাশোর্ধ্ব আজকালকার ছেলে চিন্ময় হোহো হাসছে, আপনার যৌবনকালের কথা ভুলে যান, অজিতদা। ধীমানকে যতই হেলাফেলা করুন, ও যে ক্রাউডপুলার এটা তো মানবেন। যে-ক’টা লোক আমাদের মিটিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সে তো ওই ধীমানের জন্যই। এর পর পার্টির কী হবে, ভাবুন তো! আমাদের পিছনটা তো ফাঁকা। নো পরের জেনারেশন।

এটা তো তোমাদের ত্রুটি। পরের প্রজন্মকে তোমরা কনভিন্স করতে পারছ না।

কেন মনকে চোখ ঠারছেন, দাদা? এখন কোথায় কটা ক্যাডার আদর্শের টানে আসে? সিপিএমই বলুন, কি কংগ্রেস, তৃণমূল, যেখানে যত ইয়াং ছেলে গিয়ে পিলপিল করে ভিড়ছে, তারা মার্কসবাদ বোঝে, না গাঁধীবাদ? কিস্যু না। বুঝে তাদের ঘেঁচুটা হবে। তারা পার্টিতে আসছে কিছু এক্সপেক্টেশন নিয়ে। সেটা চাকরি হতে পারে, ক্ষমতা হতে পারে কিংবা কোনও না-কোনওভাবে রুটিরুজির একটা সিকিওরড বন্দোবস্ত…

আশায় বাঁচে চাষা। কটা ছেলে পার্টি করে চাকরি-বাকরি পাচ্ছে, অ্যাঁ?

দেবে কোত্থেকে? চাকরি আছে নাকি? চিন্ময় চেয়ারে হেলান দিল, তবে আশাটা তো দিতে পারছে। আশা সাপ্লাই করার ক্ষমতাটুকু তো পার্টিগুলোর আছে। সে জায়গায় আমরা? স্টেটে ফ্রন্টের পোঁ ধরে নেই, সেন্ট্রালে আমাদের মাইক্রোস্কোপেও দেখা যাচ্ছে না, এস-ইউ-সি, টেস- ইউ-সি’র মতো লড়কে লেঙ্গে করে মাস বেস তৈরি করতে পারি না, শক্তিশালী বিরোধীপক্ষও নই… এখনকার ছেলেমেয়েরা আমাদের কাছে আসবে কেন?

তা হলে আর কী, পার্টি তুলে দাও। কংগ্রেসের সঙ্গে একটা সুতো তো বাঁধাই আছে, সবাই মিলে সেখানেই ভিড়ে যাক।

চিন্ময় ধূর্তের মতো হাসল, ধুত, তা হয় নাকি! বড় দলে গিয়ে চুনোপুঁটি হয়ে থাকার চেয়ে নিজেদের ছোট দলে বড়সড় থাম হয়ে থাকা অনেক বেশি সম্মানের। এখনও ইলেকশনের আগে কংগ্রেসের চাঁইরা দস্তুরমতো খাতির করে আমাদের ডাকে, পরামর্শ টরামর্শ চায়… ওদের দলে মিশে গেলে থোড়াই আমাদের পুঁছবে!

অজিতেশ ঝুম হয়ে গেলেন। চিন্ময় ভুল বলেনি। এরকম একটা যুক্তি তাঁর অবচেতনেও কি খেলা করে বেড়ায় না? বেটার টু রেইন ইন হেল, দ্যান টু সার্ভ ইন হেভেন…! তা ছাড়া সেই কোন বাহান্ন- তিপান্ন সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টি করছেন তিনি, এক ধরনের নিয়ম-নীতি-শৃঙ্খলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে এখন আদর্শগত পার্থক্য যতই কমে আসুক, ওদের ওই ঢিলেঢালা সংস্কৃতিতে তিনি কখনও নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবেন না। তিনি তো আর গিরগিটি নন যে, যেমন খুশি রং বদলে ফেলবেন! তার চেয়ে এই ভাল, গায়ে একটা মার্ক্সবাদী গন্ধ নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত কাটিয়ে দেওয়া।

আর ক’টা দিনই বা? পাঁচ বছর? সাত বছর? কি দশ?

চিন্ময় হাত বাড়িয়েছে, দিন, কাগজগুলো তুলে রাখি।

দু’-চার সেকেন্ড তবু চোখ কুঁচকে ভাবলেন অজিতেশ। বললেন, না হে, আমরা ব্যাকডেটেড লোক তো, কাজ হাফফিনিশড় রেখে যেতে মনটা খুঁতখুঁত করছে।

বেশ, তবে দেখুন আস্তে আস্তে।

হাতের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় পৌনে সাতটা। তারও মিনিট দশেক পর কাঁধের ঝোলাটি গুছিয়ে প্রাচীন বাড়িটার স্যাঁতসেঁতে ঘরখানা ছেড়ে বেরোলেন অজিতেশ। একতলার দু’খানা ঘর নিয়ে তাঁদের অফিস। কলকাতা জেলা কমিটির, রাজ্য কমিটিরও। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির একটা দপ্তর ছিল এখানে। দল ভাঙাভাঙির পরেও ঘর দুটোকে কোনওক্রমে কবজায় রাখতে পেরেছিলেন অজিতেশরা। নামমাত্র ভাড়া, মাসে তিরিশ টাকা। বাড়িওয়ালাও ঝামেলাবাজ নয়, কলকাতা শহরে তার আরও বাড়ি আছে, অজিতেশদের উৎখাত করার জন্য তার আদৌ কোনও ব্যস্ততা নেই। বোধহয় টের পেয়ে গেছে, এরা নিজেরাই ধীরে ধীরে লোপ পেয়ে যাবে। লাভ হয়েছে চিন্ময়ের। সে পার্টির একমাত্র হোলটাইমার, বিয়ে-থা করেনি, পার্টির অফিস‍ই তার ঘরসংসার।

চিন্ময়ও বেরিয়েছে অজিতেশের সঙ্গে। কলেজ স্ট্রিটে তার একটা নিজস্ব আড্ডা আছে, যাবে সেখানে। খানিক দূর পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন অজিতেশ। বাসটাসে খুব একটা চড়েন না পুরনো কলকাতার গন্ধমাখা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে তাঁর বেশ লাগে। ধবধবে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা রোগা লম্বা শরীর ঈষৎ ঝুঁকিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট ধরে চলেছেন তিনি, ফাল্গুনের হাওয়ায় উড়ছে তাঁর শুভ্র কেশ। সুকিয়া স্ট্রিটের মোড়ে এসে দাঁড়ালেন মিষ্টির দোকানের সামনে, গোটা পাঁচেক রসগোল্লা কিনলেন। বয়সের কারণে খাওয়া দাওয়ায় অনেক বাঁধাবাঁধি এসে গেছে, কিন্তু এই মিষ্টির আসক্তিটুকু ছাড়তে পারেননি। রাতে খাওয়ার পাতে একটা রসগোল্লা তাঁর চাইই চাই।

মোড় থেকে অজিতেশের বাড়ি মাত্র কয়েক পা। ভাগের বাড়ি। একতলার সামনের দিকটা অজিতেশের। প্রায় রাস্তার গায়েই দরজা। অজিতেশ ঢুকে দেখলেন টিভি চলছে বসার ঘরে, গৌরী খবর শুনছেন। এক কাঁড়ি খবরের চ্যানেল হয়েছে ইদানীং, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব চ্যানেলেরই খবর শোনেন গৌরী। নেশা।

রসগোল্লার ভাঁড় খাবার টেবিলে রেখে শোওয়ার ঘরে গেলেন অজিতেশ। পাঞ্জাবি খুলে ব্র্যাকেটে ঝোলাতে গিয়ে হঠাৎই চোখ পড়ল মেঝেয়। বড় কালো বাক্সখানা শোভা পাচ্ছে ঘরের মধ্যিখানে। অজিতেশ প্রশ্ন ছুড়লেন, কী গো, হারমোনিয়ামটা বাইরে কেন?

টিভি বন্ধ করে গৌরী এসে দাঁড়িয়েছেন দরজায়। হেসে বললেন, ঝাড়াঝুড়ি করছিলাম। টেনে বের করতে গিয়ে কোমর বেঁকে গেছে, আর ঢোকাতে পারিনি।

অনেকটা পথ হেঁটে অজিতেশের চিত্ত এখন বেশ প্রফুল্ল। হালকা গলায় বললেন, ঢোকানোর দরকার কী? বহুকাল পর বেরিয়েছে যখন, আজ একটু গানটান হোক না।

তুত্, আমার কি আর দম আছে? বছরে এগারো মাস হাঁপাচ্ছি…। তোমার শখ হয় তো তুমিই বসে যাও।

আমি তো ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক। গীতিকার, সুরকার। গায়ক-গায়িকা তো তোমরা।

ছিলাম। সবটাই পাস্ট টেন্স। তোমারও। আমারও।

হুম। কতকাল যে আর নতুন গানটান আসে না! একটু যেন আনমনা দেখাল অজিতেশকে, সব কিছুই কেমন চেঞ্জ হয়ে গেল! একসময়ে গান ছিল ওয়েপন, ভাবতাম গান দিয়েই সমাজটাকে বদলে ফেলব। কী বোকা যে ছিলাম!

আসল কাজটা তো করেছিলে। গৌরীর চোখেমুখে যুবতীর কৌতুক, মাঠেঘাটে গান শেখানোর ছলে আমাকে গেঁথে ফেলতে তো ভুল হয়নি!

তোমার মনে আছে?

মেমরি লস করার মতো দশা তো এখনও হয়নি।… দাও, বাক্সটা ঢুকিয়ে দাও। আমি চা করে আনছি।

বাক্সটাকে ঠেলে খাটের তলায় পাঠিয়ে বিছানায় বসলেন অজিতেশ। অনেক কাল পর নিজেরই লেখা একটি গণ-সংগীতের সুর ভাঁজছেন। দু’-এক কলি গেয়ে উঠেও থেমে গেলেন। আবার ভার হয়ে আসছে বুক। কত উত্তাল সময় যে পার হয়ে এসেছেন! গণনাট্য সংঘের রাজ্যশাখার গানের দিকটা তো তিনি একাই সামলেছিলেন বেশ কয়েক বছর। কত কাজ তখন, কত কাজ! একটার পর একটা ইস্যুতে পার্টি ঝাঁপিয়ে পড়ছে রাস্তায়, মিটিংয়ে রক্ত গরম করা নতুন নতুন গান চাইছে….। সুভাষদাকে দিয়ে তখন গান লিখিয়ে নিচ্ছেন অজিতেশ, দীনেশদা কবিতায় সুর করছেন…। অজিতেশ নিজেও বসে পড়ছেন কলম নিয়ে। তেলেঙ্গানা, তেভাগা, শরণার্থী সমস্যা, শ্রমিক ধর্মঘট, কৃষক আন্দোলন, ট্রাম-বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে লড়াই, ফুড মুভমেন্ট… পার্টি আড়াআড়ি ভেঙে গেছে, তবু কাজে কামাই নেই। দিনগুলোকে তখন কত ছোট মনে হত। এই আসছে, এই চলে যাচ্ছে! স্কুলের চাকরিটা বজায় রেখেও কী করে যে সামাল দিয়েছেন অজিতেশ! ভাগ্যিস গৌরী ছিল পাশে পাশে! পথেও। ঘরেও। সংসার করার কণামাত্র ঝক্কি তাঁকে বইতে দেয়নি গৌরী। খুকু যে কীভাবে বড় হল, স্কুল কলেজ পাশ করল, অজিতেশ টেরও পেলেন না।

সেই ব্যস্ত অজিতেশ এখন প্রায় স্থবির। শরীরে না হলেও মনে তো বটেই। কত বছর যে আর গান আসে না। লেখার তাগিদই অনুভব করেন না কোনও। কী একটা যেন শুকিয়ে গেছে ভেতরে! কী-ই যে!

গৌরী কাপ প্লেট হাতে ঘরে এসেছেন। অজিতেশের হাতে চা-টা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, আজ আবার মীরাদি ফোন করেছিল।

ঝপ করে নামটা ঠিক ঠাহর করতে পারল না মগজ। অজিতেশ ভুরু কুঁচকে তাকিয়েছেন।

গৌরী বসলেন পাশে। বললেন, দিব্য কাল নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পেয়েছে।

এবার মাথায় ঢুকল ব্যাপারটা। অজিতেশ আলগাভাবে বললেন, তো?

তো আবার কী? জাস্ট খবরটা শুনলাম, তাই তোমায় জানাচ্ছি।

আমি জেনে কী করব? সে বেঁচে থাকলেই বা কী? মরে গেলেই বা কী?

ছি, ওভাবে বলতে নেই। বেচারা প্রায় মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এল…

বেচারা বেচারা কোরো না তো। দিব্যর ওপর আমার কোনও সিমপ্যাথি নেই।

তোমার সব এক্সপ্রেশনই বড় চড়া চড়া বাপু। হয় নীচের সা, নয় ওপরের সা, মাঝে যেন আর কিচ্ছু নেই। গৌরী লঘু স্বরে বলল, এখনও এত খেপে থাকার কী আছে? যাকে নিয়ে বিবাদ, সেই খুকু পর্যন্ত গিয়ে দেখে এল…

গেছিল নাকি!

হ্যাঁ। কবে যেন? এই বোধহয় তিন-চার দিন …

আমায় বলোনি তো!

আমিই তো আজ জানলাম। দিব্যর নিউজটা দেওয়ার জন্য ফোন করেছিলাম, তখনই বলল।

ভাল। মা দিব্য দিব্য করে উচাটন, মেয়ে অত অপমানের পরেও তাকে দেখতে যাচ্ছে… তোমরা পারোও বটে।

না-পারার কী আছে? মানুষ যখন বিপদে পড়ে, তখন কেউ পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে বসে না।

ওসব রুল মানুষের বেলায় খাটে। বাট দিব্য ইজ নট এ হিউম্যান বিয়িং। ওকে তুমি হায়না বলতে পারো, নেকড়ে বলতে পারো, টিকটিকি গিরগিটি যা-খুশি বলতে পারো, কিন্তু মানুষ বোলো না।

অজিতেশের ফরসা মুখখানা লাল হয়ে গেছে চকিত উত্তেজনায়। গৌরী অবাক স্বরে বললেন, তোমার এখনও দিব্যর ওপর এত রাগ? কেন?

না, রাগ নয়। আই সিম্‌পলি হেট হিম।

কেন? তোমার মেয়েকে কষ্ট দিয়েছে বলে?… মানছি, দিব্যর চরিত্রে অনেক গন্ডগোল ছিল। অনাচারও সে কম করেনি। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলো তো, তোমার মেয়েও কি একশো ভাগ ধোওয়া তুলসীপাতা ছিল? দিব্যর বউ থাকা অবস্থাতেই দিব্যর ছাত্রর সঙ্গে…। কণাদ আজ আমাদের জামাই। সে ভাল ছেলে। তাকে আমরা খুব পছন্দও করি।… তবে ওই সময়ে ওদের রিলেশন তৈরি হওয়াটাকে কি ন্যায় কাজ বলা যায়?

আমি দিব্য আর খুকুর মধ্যে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্টেড নই। কেটে কেটে বললেন অজিতেশ, খুকুকে জিজ্ঞেস করে দেখো, কখনও জানতে চেয়েছি কিনা। তুমি বলে গেছ, আমি শুনে গেছি, ব্যস। তবে হ্যাঁ, খুকুর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় আমি খুশিই হয়েছি। কিন্তু আমি ওকে ঘেন্না করি অন্য কারণে। ওর মতো লোভী আর রুথলেসলি অ্যাম্বিশাস আমি জীবনে আর দুটো দেখিনি।

বুঝেছি। গৌরী ফিক করে হাসলেন, দিব্য তোমার পিছু পিছু পার্টি ছাড়তে রাজি হয়নি তো, তাই এত চক্ষুশূল।

তুমি আমাকে এত মিন ভাবলে? এতকাল দেখার পরেও? অজিতেশ রীতিমতো আহত, কত কমরেডই তো রয়ে গেছে পুরনো পার্টিতে, তাদের কারও সম্পর্কে আমি এমন কমেন্ট করি? কখনও করেছি?

গৌরী থতমত খেয়েছেন। বিড়বিড় করে বললেন, তা হলে আর কী কারণ থাকতে পারে?

থাক। আর ভাবতেও ভাল লাগে না।

তবু শুনি?

তোমরা দিব্যকে চেনোই না। তাকে তোমরা তো দেখেছ ঘরের মধ্যে। অ্যাজ জামাই।

তার আগেও দেখেছি। এ-বাড়িতে তো প্রায় প্রতিদিনই আসত। তোমার মেয়ের সঙ্গে তখন প্রেমপর্ব চলছে…। গৌরীর গলায় যেন সামান্য উপহাস, ভাব তোমার সঙ্গেও কিছু কম ছিল না। খুকুকে কলেজ থেকে তুলে নিয়ে এসে খুকুর থেকেও খুকুর বাবার সঙ্গে তার বেশি আড্ডা জমত। তুমি তাকে নিয়ে এখানে যাচ্ছ, সেখানে যাচ্ছ…

ওটাও তোমার ঘরে বসেই দেখা, গৌরী। ওপর ওপর। আলগা আলগা।

তুমিই বুঝি একমাত্র ভেতর থেকে দেখেছিলে? দিব্যর অন্তরের অন্তস্তল পর্যন্ত!

ব্যঙ্গটা বিঁধল অজিতেশকে। তবে উত্তেজিত হলেন না। চোখ থেকে খুলেছেন চশমা। মুখের ভাপে আবছা হল চশমার কাচ, পরনের গেঞ্জি দিয়ে ঘসে ঘসে মুছলেন বাষ্প। দু’দিকে মাথা দুলিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, নাহ্, আমিও তখন কিছুই দেখতে পাইনি। তা হলে হয়তো আত্মীয়তার সূত্রে জড়াতে দ্বিধা করতাম।… ঠিকই বলেছ, আমিও ওর কম অ্যাডমায়রার ছিলাম না। কী চমৎকার প্রাণবন্ত ছেলে, পার্টির হয়ে কার্টুন আঁকছে, পোস্টার বানাচ্ছে, উদাত্ত গলায় গান গাইতে পারে … ভাল না-লেগে উপায় আছে? তখনও কি বুঝেছি, চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষকে ও কীভাবে ইউটিলাইজ করছে, এক্সপ্লয়েট করছে…! কত জোগাড়যন্ত্র করে, সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে কথাবার্তা বলে ওর মস্কো যাওয়ার বন্দোবস্ত করলাম। আমায় তখন কী তেলটাই না মেরেছে! সলিল চৌধুরীর পরে আমার মতো আর একটাও প্রতিভা নাকি গণনাট্য সংঘ পায়নি! আমার মতো নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক কর্মী নাকি গোটা দেশে বিরল! আমার মতো র‍্যাশনাল থিঙ্কার নাকি দেখাই যায় না!… আশ্চর্য, বারবার শুনতে শুনতে আমিও ছাগলটাকে কুকুর ভাবতে শুরু করেছিলাম। কী শাহেনশা ছেলে, এক বছরের স্কলারশিপ নিয়ে গিয়ে পাক্কা তিনটে বছর কাটিয়ে এল!

তা এতে দোষের কী আছে? গৌরী চোখ ঘোরালেন, মস্কো থেকে টাকা জমিয়ে সে ফ্রান্স ইতালিতে দু’-এক বছর থেকে আসতেই পারে।

অবশ্যই পারে।… তবে যেটা তুমি জানো না সেটা জেনে রাখো, কন্টিনেন্ট যাওয়াই ওর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। প্যারিসে যাওয়ার জন্য আগে ইন্ডিয়া গভর্নমেন্টের স্কলারশিপের চেষ্টা করেছিল, পায়নি। তখনই ও পার্টির রুটটা ধরে। এবং আমার চ্যানেলটাকেই ইউজ করে।

ওমা! এসব আজগুবি ধারণা তোমার কোত্থেকে হল?

না গো, আজগুবি নয়। দিজ আর ফ্যাক্টস্। আমায় বীরেনদা বলেছিলেন। খুকুর সঙ্গে বিয়েটা হয়ে যাওয়ার সাত-আট বছর পর। আমি আর বীরেনদা তখন এক পার্টিতে নেই, দিব্যও বীরেনদার পার্টিতেই, তবু বলেছিলেন। খামোখা মিছে কথা বীরেনদা বলবেন কেন? এবং শুনলে অবাক হবে, আমি দিব্যজ্যোতি সিংহকে একদিন সরাসরি জিজ্ঞেসও করেছিলাম। সত্যাসত্য যাচাই করার জন্য। সে আমাকে হাসতে হাসতে বলে দিল, কিছু অ্যাচিভ করতে গেলে কাউকে না- কাউকে তো ধরতেই হয়। আর আমি তো আপনাকে ঠকাইনি, ফিরে এসে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি! আপনার কি মনে হয় না, এটা একটা ফেয়ার ডিল?

যাহ্, দিব্য নিশ্চয়ই ওটা মজা করে বলেছিল। তোমার সঙ্গে তো ওর এরকম হাসিমশকরা চলতই।

জানতাম এরকমই কিছু বলবে। তাই তোমাকেও জানাইনি। খেয়াল করে দ্যাখো, শেষের দিকটায় আমি ওর সঙ্গে কথা বলতাম না। দিব্য এলেই কোনও না-কোনও অছিলায় বেরিয়ে যেতাম বাড়ি থেকে। ভাবতে পারি না, আমাকেই সিঁড়ি করে… ওফ্, কী অপমান!

আহা, ওভাবে দেখছ কেন? হবু জামাই তো শ্বশুরের কাছ থেকে একটু-আধটু ফেভার নিতেই পারে।

তার জন্য আমায় সরাসরি অনুরোধ করলেই তো যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা তো ও করেনি। আমাকে মিথ্যের হাওয়া দিয়ে ফুলিয়েছে, ফাঁপিয়েছে। ওই বীরেনদাকেই ও পরে বলেছে, আমার মতো বোদা লোকগুলোর জন্যই নাকি গণনাট্য আস্তে আস্তে মরে গেল। আমি বেরিয়ে যাওয়ায় দল নাকি একটা ইউজলেস এলিমেন্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে।

বীরেনদা এটা নির্ঘাত বানিয়ে বানিয়ে বলেছেন। তোমাকে তাতানোর জন্য। দিব্য এরকম বলতে পারে আমি বিশ্বাসই করি না।

এটাই তো তোমাদের দিব্যর সাকসেস। আমার থেকেও তুমি তাকেই বেশি বিশ্বাস করবে। আরও একটা কথা শুনবে? বীরেনদা একটা দৈববাণী করেছিলেন। বলেছিলেন, বীরেনদার পার্টিকেও যতটা দরকার ছিল, ও নিংড়ে নিয়েছে। এবার বড় নাওয়ে খুঁটি বাঁধবে। দু’বছরের মধ্যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। দিব্যি কায়দা করে ও সরে গেল বড় শরিকের কাছে। এত তো খবর শোনো, কাগজ পড়ো, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, গত পাঁচ-সাত বছর ধরে কাদের সঙ্গে ওর ছবি বেরোচ্ছে? সেই সব নেতাবন্ধুরাও দিব্যি খুব পুলকিত, দ্যাখো কত বড় এক আর্টিস্টকে আমরা দলে পেয়েছি! আমাদের ফেভারে দিব্যজ্যোতির মতো আর্টিস্ট ইলেকশন ক্যাম্পেন করছে, যে-কোনও ইস্যুতে আমাদের হয়ে কথা বলছে …! আসলে তো ও সেখানেও নেই। গোটাটাই ফক্কিকারি। ধান্দাবাজি। মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কেমন বিশাল একটা জমি বাগিয়ে নিল হাওড়ায়।

গৌরী বললেন, সে তো মানুষের ভালর জন্যই। গ্রামের মেয়েদের উন্নয়ন টুন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে…

ওটা তো বাইরের শো। আদতে করে কী জানো? গাঁয়ের মেয়েবউদের দিয়ে কম পয়সায় দেখনদারি সব জিনিস বানায়, আর চড়া দামে সেগুলো বেচে। কলকাতায় ওর কাস্টমার কম। ওর মাল বেশির ভাগই যায় দিল্লি বম্বে বাঙ্গালোর…। লন্ডন নিউ ইয়র্কেও পাঠাচ্ছে। স্রেফ মুনাফাদারি বিজনেস। লোককে বলে বেড়ায়, লাভের প্রতিটি পাইপয়সা নাকি ওর প্রতিষ্ঠানকে বড় করার জন্যই…! হুঁহ্, আমি বিশ্বাস করি না।

গৌরী আর কোনও বাদানুবাদে গেলেন না। খালি কাপ প্লেট নিয়ে বেরিয়ে গেছেন ঘর থেকে। অজিতেশও উঠে এলেন বসার ঘরে। বুকটা সামান্য হালকা হালকা লাগছে। কত দিনের জমা ক্ষোভ যে উগরে দিতে পারলেন আজ! ক্ষোভ? নাকি যন্ত্রণা?

সাবেকি বেতের সোফায় বসে খবরের কাগজখানা উলটোলেন আর একবার। বাইরে সান্ধ্য কোলাহল, কান পেতে শুনলেন একটু। রিকশার টুংটাং, গাড়ির হর্ন, মানুষের গুঞ্জন মিলেমিশে এক বিচিত্র ঐকতান তৈরি হচ্ছে। পাশের বাড়িতে প্রেশার কুকারের সিটি বেজে উঠল, ওই তীব্র ধ্বনিও যেন মিশে গেল অর্কেস্ট্রায়। ইস, এইসব জ্যান্ত আওয়াজকে ধরেবেঁধে যদি একটা কম্পোজিশন তৈরি করা যেত!

কাল্পনিক তালবাদ্যের ঝংকারে খানিকক্ষণ বুঁদ হয়ে রইলেন অজিতেশ। সংবিৎ ফিরল গৌরীর ডাকে, কী গো, এবার খাবে তো?

কটা বাজে?

পৌনে ন’টা।

এক সময়ে রাত্তির সাড়ে এগারোটা বারোটার আগে খেতে বসার কথা চিন্তাই করতে পারতেন না অজিতেশ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সময়টা কেমন এগিয়ে এল। নাকি ব্যস্ততা কমে আসায়? উদাস গলায় বললেন, রুটি হয়ে গেছে?

এই তো বানালাম।

লাগাও তবে।

তিনখানা ঘর আর বাথরুম রান্নাঘরের মাঝে ফালি জায়গাটুকুতে ছোট খাবার টেবিল। মুখোমুখি বসেছেন স্বামী-স্ত্রী। ক্যাসারোল খুলে রুটি বার করতে করতে অজিতেশ বললেন, হ্যাঁগো, টুকুসের পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছে না?

হ্যাঁ। সামনের মঙ্গলবার অবদি চলবে।

কেমন দিচ্ছে?

ওইটুকু ছেলের আবার ভাল-খারাপ দেওয়া!

কিন্তু তোমার মেয়ের কাছে তো সেটা খুব বিরাট ব্যাপার।

খুকুর তো টেনশন করাটাই অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে।

স্বাভাবিক। এক সময়ে নার্ভের ওপর তো কম ধকল যায়নি।

হুঁ।

আর কোনও কথা নেই, চুপচাপ খাচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী। অতি সামান্য আয়োজন। রুটি আর আলু পনিরের সবজি। এবং একটি মিষ্টি। রাতের আহার হালকাই পছন্দ করেন অজিতেশ। ডিম মাংস খাওয়া অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন, পনির টনিরই এখন তাঁর প্রিয় আইটেম। তা ছাড়া সাধ্যেরও তো একটা ব্যাপার আছে। বাড়িভাড়া লাগে না ঠিকই, কিন্তু স্কুলমাস্টারের পেনশনে খুব বেশি বড়মানুষি করা যায় কি? বুড়ো বয়সে অসুখ বিসুখের জন্যও তো কিছু না-কিছু সঞ্চয় রাখতে হয়।

টেবিলে জল নিতে ভুলে গিয়েছিলেন গৌরী। উঠে রান্নাঘর থেকে জগটা নিয়ে এলেন। বসে আলগোছে গলায় জল ঢাললেন একটু। হঠাৎই বলে উঠেছেন, তোমায় একটা প্রশ্ন করব? রাগ করবে না তো?

কী?

আচ্ছা এমন নয় তো, দিব্য তোমাকে মই করে অনেকটা ওপরে উঠে গেছে, আর তুমি একটা অনেক বড় জায়গা থেকে গুটোতে গুটোতে ক্রমশ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছ… সেই জন্যই তোমার দিব্যর ওপর এত রাগ?

অজিতেশ স্থির হয়ে গেলেন। সাতচল্লিশ বছরের পুরনো স্ত্রীর মুখ থেকেও এই কথা তাঁকে শুনতে হল! এটাও কি তাঁর প্রাপ্য ছিল? হয়তো!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *