অদৃশ্য ঘাতক – ২০

২০.

চারমাইল পুবে সেমিনো পর্বতের কাছাকাছি অক্স বো র‍্যাঞ্চের দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পটা। দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত। পাশে জঙ্গলের দিকে বয়ে যাচ্ছে একটা ঝর্না। ছোট ছোট বাধ বানিয়েছে বিভারের দল, ফলে অনেকটা জায়গার মাটি সিক্ত হয়েছে পানিতে।

ওখানে পৌঁছুনোর পর গাছের আড়াল থেকে ডাক দিল হবার্ট। জঙ্গলে ঢুকে প্যাট্রিক হল দেখল দুটো প্যাক হর্সের দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে হিউ হুবার্ট। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা জানতে চাইল সে, এখানে আসতে কেউ তোমাকে দেখে ফেলেনি তো, প্যাট্রিক?

না। অ্যাডাম বেঞ্চলির ব্যাপারটা খুলে বলল জুয়াড়ী। তারপর রাগে দুহাত মুঠি করল। ভুল করেছি। ওকে শেষ করে দেয়া উচিত ছিল। আমি ওর সামনে ট্রেইলে নেই টের পেয়ে এখন ফিরে আসতে পারে লোকটা।

 চোখ সরু করে দুএক মুহূর্ত ভাবল হুবার্ট, তারপর নিষ্ঠুর একটুকরো হাসি খেলে গেল তার ঠোঁটে। তোমাকে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসব আমি। কয়েকটা গরু ট্রেইলে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তোমার ট্র্যাক মুছে ফেলব। অ্যাডামের কপাল ভাল হলে আমার সাথে দেখা হবে না ওর।

ঝোপঝাড়ে বুজে যাওয়া উঁচু একটা ট্রেইল ধরে পাহাড়ের দিকে। এগুলো ওরা দুজন। পাক হর্স দুটো প্যাট্রিক হলের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে পথ দেখাচ্ছে হুবার্ট ওরফে অ্যাডলার। অসংখ্য পাইনগাছ জন্মেছে। পাহাড়ের গায়ে। ওগুলোর মাঝে হলুদের ছোপ দেখে চেনা যাচ্ছে মধ্য, সেপ্টেম্বরের অ্যাসপেনগুলোকে। সামনের পথ আরও অনেক খারাপ। বিপজ্জনক, বলল হবার্ট, আমি পথ না দেখালে বাকি জীবন চেষ্টা করেও ক্যাম্প খুঁজে পাবে না আর্চার বা রবিনসন।

অপেক্ষাকৃত কম ঢালু ট্রেইল ধরে পাহাড়ের গায়ে আরও দুমাইল, এগুলো ওরা দুজন। তিন হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে এল। প্রায় পুরো পথই হেঁটে এগুতে হলো ওদের। একবার একটা মাদি ভালুক তেড়ে আসতে গিয়েও সিদ্ধান্ত বদলে বাচ্চাসহ ঢুকে গেল ট্রেইলের পাশে গভীর জঙ্গলে।

পাহাড়ের একটা তাকে উঠে বামে মোড় নিয়ে সরু একটা শিকারের ট্রেইল ধরে আধমাইল এগুলো ওরা। তারপর ডানদিকের পাহাড়ে উঠতে শুরু করল অবিশ্বাস্য ঝুঁকি নিয়ে। কোনও ট্রেইল এখানে কোনকালে ছিল বলে মনে হলো না প্যাট্রিক হলের। পা ফস্কালে ঢাল বেয়ে কয়েক–হাজার ফুট গড়িয়ে নামতে হবে। গাছের গুঁড়ি বা পাথরে বাড়ি খেলে দেহের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কেউ আসে না। এদিকে, মন্তব্য করল হুবার্ট।

পাহাড়ের ওপরে একটা মেসামত জায়গায় উঠে এল ওরা। একটা বিশাল হরিণ ওদের দেখে জঙ্গলের ভেতরে ছুটে পালাল। ওরা আওয়াজ পেল হরিণটা পানির ওপর দিয়ে শব্দ তুলে ছুটছে। আমরা ওই ঝর্না ধরে এগিয়েই ক্যাম্পে পৌঁছে যাব, বলল হুবার্ট।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঝর্না অনুসরণ করে এগুলো ওরা। আরেকটা মোটামুটি খাড়া ঢাল বেয়ে একটা ক্লিফের পাদদেশের সমতল ভূমিতে পৌঁছে থামার নির্দেশ দিল হুবার্ট। ক্যাম্পে এসে গেছি। প্যাকহর্স দুটো থেকে মালপত্র নামিয়ে একটা তাঁবু দাড় করাল ওরা দুজন। এই তাবুতে থাকার সুযোগ ওদের হবে না, বাইরে ঘুমাতে হবে। ওদের। তবু আর্চার আর রবিনসনের জন্য। এক সপ্তাহের খাবার এনেছে। হবার্ট চারজনের আন্দাজে। ক্যাম্প করার আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস আনতেও ভুল করেনি।

ওদের সাথে ফেরিসে দেখা করব আমি, কাজ শেষে বলল হুবার্ট, রলিস থেকে ফেরিসেই আসবে ওরা।

প্যাট্রিক হলের ঘোড়াটা ছাড়া বাকি তিনটে নিয়ে চলে গেল সে। জানে চার লক্ষ ডলারের মুলো ঝুলানোর পর ক্যাম্প থেকে নড়বে না জুয়াড়ী গায়ে আগুন লাগলেও।

.

মঙ্গলবার, চোদ্দই সেপ্টেম্বরে এডমণ্ড হুপার হার্টের পরিচয় বলে দিয়ে স্ট্যানলিকে চমকে দিল। পাঁচমিনিট পর অফিসে ঢুকে উত্তেজিত চেহারায়। ডেস্কের ওপর বসল ডেপুটি। জিজ্ঞাসু চোখে কনস্টেবল এডকে তাকাতে দেখে বলল, এডমণ্ড হুপার হুবার্টের ছদ্মনাম বলে দিয়েছে!

কে?.

লু মেয়ার! বাকি ছয়জন স্যাণ্ড ক্রীক রাইডারদের মধ্যে একমাত্র সে-ই চলে গেছে কাউন্টি ছেড়ে। 

লোকটা কোথায় গেছে সে সম্বন্ধে হুপার কিছু বলেছে?

না, তবে আমরা জানি সে দক্ষিণে স্নেক রিভারের দিকে গেছে। অ্যাডাম বা ওয়েন যেকোন একজনকে নিয়ে আজই রওয়ানা হয়ে যাব আমি।

ম্যাক্সওয়েল হোটেলের টেবিলে ব্রেকফাস্ট নিয়ে মাত্র বসেছে। ওয়েন, অ্যাডাম আর রোসা। প্যাট্রিক হলের গায়েব হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অ্যাডাম শোনাচ্ছে এমন সময় ওখানে হাজির হলো স্ট্যানলি। সে চেয়ার টেনে বসার পর অ্যাডাম বলল, আমি মনে করেছিলাম আমার সামনে ট্রেইলে কোথাও আছে প্যাট্রিক হল। কিন্তু শহরে ফিরে খবর নিয়ে দেখেছি হোটেলে ফেরেনি। বুঝতে পারছি না কোথায় গেছে।

আমি বোধহয় জানি কোথায় গেছে, বলল স্ট্যানলি। দক্ষিণে স্নেক রিভারের দিকে।

ওদিকে যাবে কেন? জানতে চাইল ওয়েন।

হয়তো হুবার্টের সাথে যোগ দিতে গেছে। এডমণ্ড হপার কিছুক্ষণ আগে বলে দিয়েছে যে লু মেয়ারই আসলে হিউ হুবার্ট। আমরা জানি স্নেক রিভারের ব্যাগসে একটা র‍্যাঞ্চে কাজ নিয়ে চলে গেছে লোকটা। আমি হুবার্টকে ধরে আনতে যাচ্ছি, তোমাদের মধ্যে কে যাবে আমার সাথে?

আমি, অ্যাডামকে হাঁ করতে দেখে দ্রুত বলে উঠল জোসেফ ওয়েন।

আমি এখানেই থাকছি তাহলে, গম্ভীর চেহারায় সবার দিকে  তাকাল অ্যাডাম। আগেও একবার স্বীকারোক্তি দিয়ে পরে অস্বীকার করেছে হুপার। আমি জানি না কেন, তবে মনে হচ্ছে লোকটা আমাদের  ভুল পথে ঠেলে দিতে চাইছে।

আমার তা মনে হয় না, প্রতিবাদ করল ওয়েন। মিথ্যে বলে। হুপারের কি লাভ!

তবু… কথা শেষ করল না চিন্তিত অ্যাডাম।

বেশ, ট্রেনগুলোর ওপর তুমি আর বোসা নজর রাখো, বলল। স্ট্যানলি। কালকে যদি ভয়া হান্টার দুজন আসে, ওদের অনুসরণ করে হয়তো ব্যাগসে পৌঁছে যাবে তুমি। ওদিকে প্রচুর হরিণ আছে। স্নেক, রিভারেই হয়তো ক্যাম্প করেছিল ওরা গ্যানন উইলিস আর হার্টের সাথে। সেজন্যেই সম্ভবত স্নেক রিভারে গেছে হুবার্ট। উঠে দাঁড়াল ডেপুটি স্ট্যানলি। চলো, ওয়েন, এখনই রওয়ানা হব আমরা।

ওরা দুজন তাড়াহুড়ো করে চলে যাবার পর রোসা অ্যাডামের দিকে তাকাল। বক্সি বিতে গিয়ে জোডির দেখা পেয়েছ, অ্যাডাম? কেমন আছে সে?

চিন্তা কেটে গিয়ে মুহূর্তের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল অ্যাডামের মুখ। হাসল সে। ভাল, আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে ও।

.

চোদ্দই সেপ্টেম্বর যেদিন হুপার মুখ খুলেছে সেদিনের তিন নাম্বার ট্রেনে রলিন্সের পথে পশ্চিমে আসছে দুজন লোক। ওদের ব্যাগেজের সাথে দুটো গানকেস আছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোকটার চেহারায় অসংখ্য। ভঁজ, ওয়ালনাটের মত। চোখে উদ্বিগ্ন চাহনি। শাইয়্যানে প্রকাশিত দি নিউজ পত্রিকাটি পড়ছে সে গভীর মনোযোগের সাথে। হিউ হুবার্টের কীর্তি কাণ্ড ফলাও করে ছাপিয়েছে আজকের পত্রিকায়।

অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার পাশে বসা বেঁটে লোকটার কানের কাছে মুখ এনে বলল ওয়ালনাট।

কপালে কাটা দাগওয়ালা লোকটা হিউ হুবার্টের ওপর লেখা আর্টিকেলটা আগেই পড়েছে। হাসল সে ফাটা বাঁশের শব্দ তুলে। বুড়ো মেয়েছেলের মত খামোকা চিন্তা কোরো না তো, উইডো। হুবার্টের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি! পাইপ ধরিয়ে নিশ্চিন্ত চেহারায় ধোয়া ছাড়তে লাগল সে।

কিন্তু, ল্যানট্রি, অধৈর্যকণ্ঠে বলল পাকাচুল। যে সাতজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে হুবার্ট হিসেবে, তাদের মধ্যে আমাদের গাইড জুডাস অ্যাডলারের নামও আছে।

শ্রাগ করল ওয়ার্ড ল্যানট্রি। তো কি হয়েছে? এডমণ্ড হুপার তো সাতজনের একজনকেও হুবার্ট বলে ধরিয়ে দেয়নি। এমনকি হুবার্টের  অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে সে, বলেছে ফাঁসির দড়ি এড়াতে হাওয়া থেকে হুবার্টকে তৈরি করেছে।

পেপারের দিকে নজর ফিরিয়ে উইডোফিল্ড বলল, কিন্তু আমাদের আরেকজন গাইড ছিল গ্যানন উইলিস। পেপারে বলছে লোকটা আউট-ল ছিল।

হ্যাঁ, ছিল। এখন আর নেই, মারা গেছে সে, পাকাচুলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল ল্যানট্রি।

চিন্তা দূর হলো না উইডোফিল্ডের মাথা থেকে। মেডিসিন বোতে ট্রেন থামার পর আজকে বেরনো রলিন্সের একটা খবরের কাগজ কিনল সে। এই পেপারেও সামনের পৃষ্ঠা দখল করে আছে হুবার্ট। রলিন্সের ভেতর দিয়ে আমাদের যেতে না হলেই ভাল হয়, ল্যানটি, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল উইডোফিল্ড। জুডাস অ্যাডলারকে সন্দেহ করে থাকলে ওর ওপর চোখ রাখবে শেরিফ।

কিন্তু রলিন্সে অ্যাডলারের সাথে আমাদের দেখা হবে না, উইডো, আবারও পাকাচুলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল বেঁটে ল্যানট্রি। বুড়ো মেয়েমানুষের মত অযথা ভয় পেয়ো না, স্টেজে করে ফেরিসে যাওয়ার পর ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যেতে আসবে সে।

 তবুও আরেকবার ম্যাপ দেখো, ল্যানট্রি, অন্য কোনও পথে। ফেরিসে পৌঁছতে পারলে ভাল হয়।

কোলের ওপর থেকে কার্বন কাউন্টির ম্যাপ তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলে দেখল ল্যানটি। কিছুক্ষণ পর বলল, আমরা ফোর্ট স্টীলে নামতে পারি।

ফোর্ট স্টীল থেকে ফেরিস পর্যন্ত স্টেজ সার্ভিস আছে?

দাঁড়াও, ব্রেকম্যানকে জিজ্ঞেস করে আসি। ট্রেন কার্বনে থেমেছে, উঠে দাঁড়িয়ে-বলল ল্যানট্রি। কিছুক্ষণ পর ব্রৈকম্যানকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে ফিরে এসে বসল আবার। না, উইডো, স্টেজ সার্ভিস নেই। তবে ফোর্ট স্টীলের বার্নে বাকবোর্ড ভাড়া পাওয়া যাবে।

আমরা তাহলে ফোর্ট স্টীলে নেমে একদিন থেকে তারপর বাকবোর্ড ভাড়া করে ফেরিসে যাব। বার্নে কথায় কথায় জানাব জমি কিনতে এসেছি, পছন্দ হলে র‍্যাঞ্চ করব। এদিকে খালি জমির অভাব নেই, কেউ সন্দেহ করবে না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড।

বুড়ো মেয়েমানুষের মত উইডোফিল্ডকে চিন্তা করতে দেখে দেখে গত দুবছরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি। আপত্তি করল না সে।

.

সেদিন বিকেলে তিন নম্বর ট্রেন থেকে সব কজন যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো রোসার। আজ চৌদ্দ তারিখ, অথচ আসেনি হান্টার দুজন।

 তোমার চাচার কাছে কোনও খবর পৌঁছে দিতে হবে, মিস হিগিনস? মাথায় টুপি, মুখে লাল লাল ফুটকি ভরা একটা বাচ্চা ছেলে জিজ্ঞেস করল রোসাকে। শাইয়্যান থেকে গ্রীন রিভার পর্যন্ত ট্রেনে খবরের কাগজ বিক্রি করে ছেলেটা। বাড়ি গ্রীন রিভারে হওয়ায় সে জানে ওখানে একটা কেস লড়তে গেছে রোসার চাচা।

প্রতিদিনের মত আজও ছেলেটাকে একটা ক্যাণ্ডি দিল রোসা। হেসে বলল কোনও খবর নেই দেয়ার মত।

ট্রেন নড়ে উঠতেই দৌড়ে একটা বগিতে উঠে পড়ল ছেলেটা, রোসা ফিরে এল ম্যাক্সওয়েল হোটেলে।

পরদিনও তিন নম্বর ট্রেন হতাশ করল ওকে। গ্যাননের কাছে লরার লেখা চিঠিতে মধ্য সেপ্টেম্বরের কথা উল্লেখ থাকায় ও ধরেই নিয়েছিল। হান্টাররা আসবে সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। কিন্তু আসেনি ওরা।

.

পনেরো তারিখে রলিন্স থেকে ফেরিসে আসা স্টেজে হান্টার দুজনকে দেখতে না পেয়ে রোসার তুলনায় অনেক বেশি হতাশ হলো হিউ হুবার্ট।

বিউয়েলদের বারে বসে আধবোতল হুইস্কি গলা দিয়ে নামিয়ে। দিল। কিছুক্ষণ পর স্টেজ ড্রাইভার এসে বসল তার পাশে। রলিন্সে নতুন কিছু ঘটেছে? জানতে চাইল হুবার্ট।

শোনোনি তুমি? চোখ টিপল স্টেজ ড্রাইভার। হুবার্টের ছদ্ম পরিচয়। ফাঁস করে দিয়েছে হুপার। স্ট্যানলি আর জোসেফ ওয়েন ব্যাগস থেকে লু মেয়রকে ধরে আনতে ছুটেছে! আমার কিন্তু আগেই সন্দেহ হয়েছিল যে লু মেয়ারই হুবার্ট। চারপাশে তাকিয়ে কথাটা অলিভা আর তার বাবা শুনতে পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে তৃপ্তির সাথে গ্লাসের হুইস্কি গলায় চালান দিল স্টেজ ড্রাইভার।

বিস্ময়ে চমকে গেলেও কাউকে টের পেতে দিল না জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। কোন্ খেলা খেলছে এডমণ্ড হুপার? বোধহয় বুদ্ধিটা প্যাট্রিক হলের মাথা থেকে বেরিয়েছে। সুবিধাই হয়েছে, তবে মনে শান্তি ফিরে পেল না হুবার্ট। আসছে না কেন হান্টার দুজন!

বেডরোল নিয়ে ঘুমানোর জন্য ক্রীকের তীরে চলে এল সে। ফোর্ট স্টীলের দিকের অব্যবহৃত ট্রেইলে চোখ পড়তেই চমকে উঠল দ্বিতীয়বার। ওদিক থেকে হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে একটা বাগি। দুজন লোক বসে আছে সীটের ওপর। দুজনকেই সে চেনে ভালমতন।

উন্মত্তের মত বাকবোর্ডের কাছে দৌড়ে গেল হুবার্ট। ওকে দেখে। চওড়া হাসি ফুটল হান্টার দুজনের চেহারায়।

 বিউয়েলদের ওখানে সাপার সারার সময় ফোর্ট স্টীল থেকে বাকবোর্ড ভাড়া করে এখানে আসার কারণ ব্যাখ্যা করল উইডোফিল্ড। অলিভা বা তার বাবার মনে কোনও সন্দেহ জাগল না। ফোর্ট স্টীল থেকে এদিকে আসার পথে বিস্তৃত জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে, এরা যদি র‍্যাঞ্চ করে ভালই তো! মনে মনে শুধু হাসল হিউ হুবার্ট।

পরদিন সকালে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখে রওয়ানা, হলো ওরা তিনজন। দুঘণ্টা পর পৌঁছল অক্স বো লাইন ক্যাম্পে। ওখান থেকে বুনো পরিবেশের দিকে এগিয়ে চলল ট্রেইল ধরে। খাড়া পাহাড় বেয়ে ক্যাম্পে যেতে হবে ওদের শিকার করতে হলে।

২১.

ষোলো তারিখ, বৃহস্পতিবার পশ্চিম থেকে আসা দুই নম্বর ট্রেন তিন ঘণ্টা দেরিতে রলিন্সে পৌঁছল, আজও রোসা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে, তবে হান্টারদের দেখা পাবার আশা নেই তার মনে। পুবের লোকরা পশ্চিম থেকে আসবে সেই সম্ভাবনা কম। হকার ছেলেটা দুই নম্বরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, রোসাকে দেখে প্ল্যাটফর্মে নেমে হ্যাট ছুঁলো। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলল, তুমি কি সব ট্রেনের জন্যই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করো, ম্যাম?

ওর হাতে একটা ক্যাণ্ডি ধরিয়ে দিয়ে হেসে ফেলল রোসা, মাথা ঝাঁকাল। স্ট্যানলির নির্দেশ ভুলে বলে বসল, দুজন হান্টারের জন্য অপেক্ষা করি, টড।

হান্টার? পরশু রলিন্সের টিকেট থাকার পরও ফোর্ট স্টীলে নেমে গেছে দুজন বোকা হান্টার।

 শ্বাস বন্ধ হয়ে এল রোসার। কোনমতে জিজ্ঞেস করল, দেখতে কেমন ছিল ওরা?

একজন লম্বা, অন্যজন বেঁটে। বেঁটে লোকটার গলা ফাটা বাঁশের মত। পাশে বসা পাকা চুলওয়ালা লোকটাকে উইডো উইডো বলে ডাকছিল।রোসা ওর কথা শুনতে আগ্রহী দেখে আরও কিছু বলার ইচ্ছে বোধহয় ছিল টড মুলিনসের, কিন্তু ট্রেন নড়ে ওঠায় বাড়ি যাবার কথা মনে পড়ে গেল ওর। বিদায় নিয়ে চলন্ত ট্রেনের বগিতে লাফিয়ে উঠে হাত নাড়ল রোসার উদ্দেশে।

যা জানার জানা হয়ে গিয়েছে রোসার। ওই শিকারী দুজন ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড আর ওয়ার্ড ল্যানট্রি না হয়ে যায় না। অ্যাডামকে খুঁজতে। দ্রুত পায়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ফিরে এল রোসা।

টডের চোখে ধরা না পড়ে গেলে ঠিকই চালাকিটা করে পার পেয়ে যেত ভুয়া শিকারীরা। সারাদিন খুঁজে রাতে অ্যাডামের দেখা পেল রোসা। ওর মুখে সবকথা শুনে কপালকে ধন্যবাদ দিল অ্যাডাম। হোটেল লবিতে রাখা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি এখনি ফোর্ট স্টীলের পথে রওয়ানা হচ্ছি। ওখান থেকে খবর নিয়ে পৌঁছে যাব ওরা যেখানে গেছে।

হোটেলের সামনে হিচর‍্যাকে বাধা ঘোড়াটায় অ্যাডাম উঠে বসার। পর স্টিরাপে দাঁড়িয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরল রোসা। তোমার একা যাওয়া উচিত হবে না, অ্যাডাম। ওদের সাথে যদি হিউ হবার্ট থাকে… কথা শেষ না করেই কেঁপে উঠল সে।

আমি চাই হবার্ট থাকুক, স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেল বের করে। ম্যাগাজিন পরীক্ষা করে আবার রেখে দিল অ্যাডাম। স্যাডলে ঝুঁকে পড়ে বাচ্চা মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়ার মত রোসাকে নামিয়ে দিল। মাটিতে। চিন্তা কোরো না, রোসা, আমি সতর্ক থাকব।

অ্যাডামের চলে যাওয়া দেখতে চায় না বলে ঘুরে দাড়াল রোসা, নির্জনে কাঁদার জন্য দৌড়ে চলে গেল হোটেলে নিজের ঘরে। ওর মন বলছে বিপদে পড়তে যাচ্ছে অ্যাডাম। অনেকক্ষণ পর জানালা দিয়ে দেখল ফেরিসের অন্ধকার ট্রেইল গিলে নিয়েছে নিঃসঙ্গ অশ্বারোহীকে।

হোটেল থেকে বেরিয়ে শেরিফের ভাই জো লেম্যানের সাথে দেখা করল রোসা। পথে যারাই ওর সুন্দর দুচোখ লাল দেখেছে, বুঝতে পেরেছে কেঁদেছে মেয়েটা। বুঝতে পারল জিম লেম্যানও। সমস্ত ঘটনা শুনে ওকে আশ্বস্ত করল, চিন্তা কোরো না, ম্যাম, কালকের মধ্যেই স্ট্যানলির কাছে আমি নিজে খবর পৌঁছে দেব।

জিম লেম্যান যদি বলে খবর পৌঁছে দেবে তাহলে চিন্তার কারণ নেই, এক বছর আগে আর্মি স্কাউট থাকার সময় চব্বিশ ঘণ্টায় সে একশো ষাট মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল। মনে খানিকটা স্বস্তি পেল রাসা। স্ট্যানলি আর ওয়েনকে নিয়ে দ্রুতই ফিরে আসবে জিম। ওরা হয়তো অ্যাডামকে সাহায্য করতে পারবে।

.

রাতের ঠাণ্ডা নেমেছে ওয়াইমিঙের পাহাড়ী এলাকায়। রলিন্সের দক্ষিণে ছুটে চলেছে জিম লেম্যান, রলিন্সের পুবে, প্রতিশোধের আগুন বুকে চেপে এগুচ্ছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। রলিন্সের উত্তর-পূবে সেমিনো মাউন্টিনের ওপর খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্প করেছে হিউ হুবার্ট আর তার সাথে আসা হান্টাররা।

 রাতে দুইবার তাবু থেকে উঁকি দিয়েছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি, দুবারই দেখেছে গাইডদের অন্তত একজন জেগে বসে আছে ক্যাম্পফায়ারের পাশে। লোকগুলো কি কিছু টের পেয়েছে, পালা করে পাহারা দিচ্ছে ওদের?

দূরের জঙ্গলে গর্জে উঠল একটা প্যানথার। ভয়ে হ্রেসাধ্বনি করল একটা ঘোড়া।

সকাল বেলা ওয়ার্ড ল্যানট্রি উইডোফিল্ডকে ক্যাম্প থেকে খানিক দূরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ওরা সব টের পেয়ে গেছে, উইডো। সর্বক্ষণ নজর রাখছে আমাদের ওপর।

 সারাদিন শিকারের অভিনয় করে কাটাল ওরা। ল্যানট্রি একটা হরিণকে গুলি করে মিস করল ইচ্ছে করে। বিকেলে আবার উইডোফিল্ডকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে জানাল সে লুটের টাকা। রাখার জায়গাটা খুঁজে পেয়েছে, তারার আলোতেও ওখানে পৌঁছতে পারবে। . আজ রাতে? ফিসফিস করে জানতে চাইল উইডোফিল্ড।

হ্যাঁ, আজ রাতে।

রাতে সাপার সারার পরে ক্যাম্পফায়ার ঘিরে বসল চারজন। খানিকক্ষণ গল্প করার পর বেড রোলগুলোর কাছে ঘুমাতে চলে গেল হুবার্ট, দুএক মুহূর্ত পরই নাক ডাকতে লাগল তার। আগুনে আরেক টুকরো কাঠ ফেলো, বিড়বিড় করল ল্যানট্রি।

কাঠের টুকরো তুলে আগুনে ফেলার জন্য প্যাট্রিক হল ঘুরে বসতেই হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে তার মাথায় প্রচণ্ড জোরে নামিয়ে আনল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড। জ্ঞান হারিয়ে নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়ল জুয়াড়ী, টেরও পায়নি আঘাতটা দুজনের কে করেছে।

উঠে দাঁড়িয়ে বেড রোলের কাছে গিয়ে ঘুমন্ত হুবার্টের মাথাতেও হাতের একই কারিশমা দেখাল উইডোফিল্ড। বোধহয় জ্ঞান হারানোয় নাক ডাকার আওয়াজ আরও গুরুগম্ভীর হয়ে উঠল হুবার্টের। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করল প্রাক্তন ব্যাংকার দুজন। এখন চার লক্ষ ডলার নিয়ে সরে পড়ায় বাধা দেবার কেউ নেই।

.

সকালের রোদ মুখে পড়ায় কিনা কে জানে, আগে জ্ঞান ফিরল প্যাট্রিক হলের। শূন্য তাঁবু দেখেই ঘটনা বুঝে ফেলল সে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে হুবার্টের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। হুবার্টের জ্ঞান ফেরার পর ব্যথায় বিকৃত চেহারায় আঙুল তুলে ক্যাম্পের সামনে পড়ে থাকা স্যাডলগুলো দেখাল। ওখানে থাকার কথা চারটে স্যাডল, কিন্তু আছে মাত্র দুটো।

হিউ হুবার্ট উঠে বসার পর বলল সে, ওরা আমাদেরকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে!

কফি চড়াও, বিড়বিড় করে বলে বাকি ঘোড় দুটো খুঁজতে চলে। গেল হিউ হুবার্ট। কফির পানি বসানোর ফাঁকে প্যাট্রিক হল দূর থেকে ভেসে আসা হুবার্টের প্রাণবন্ত গালাগাল শুনতে পেল। হাতের কাছে পেয়েও চার লক্ষ ডলার হারানোর ব্যথা অন্য আর সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে লোকটাকে!

উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রি ঘোড়া দুটো সাথে নিয়ে যেতে পারত, কিন্তু অনভিজ্ঞ বলে নেয়নি। দড়ি খুলে ভাগিয়ে দিয়েই ভেবেছে কাজ হয়ে যাবে। ওরা জানে না রাতে প্যানথারের ভয়ে মানুষজনের কাছ থেকে দূরে কোথাও যাবে না পোষ মানা ঘোড়া। ওগুলোকে খুঁজে বের করতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগল না হুবার্টের।

ঘোড়া দুটোকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে এল সে। স্যাডল পরিয়ে দাঁতের ফাঁকে বলল, অনেকদূর চলে গেছে এতক্ষণে।

না, যায়নি, কফির মগ বাড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাল জুয়াড়ী। রাতে ওই ট্রেইল বেয়ে ওরা নামতে পারবে না। কিছুদূর নেমে অপেক্ষা। করে ভোরে রওয়ানা হতে হয়েছে ওদের।

যাবে কোথায়? দাঁতে দাঁত পিষল হুবার্ট। শহুরে লোকগুলোর কাছে বোকা বনে যাওয়ায় আত্মসম্মানে ভীষণ লেগেছে তার।

দশমাইলের বেশি এগোতে পারেনি, এটা নিশ্চিত। ঘোড়া চড়তে অভ্যস্ত নয়, তাছাড়া খাওয়া আর ঘুমও দরকার ওদের। আমার মনে হয় বিউয়েলদের স্টোরে গিয়ে বাকবোর্ডে করে সরে পড়তে চাইবে ওরা।

কফি শেষ করে ক্যাম্পের সবকিছু ফেলে রওয়ানা হয়ে গেল হুবার্ট, আর প্যাট্রিক হল। বিপজ্জনক গতিতে গাছের ফাঁক দিয়ে পিছলে নামতে বাধ্য করল ওদের ঘোড়া দুটোকে। আধঘণ্টা পর একটা খোলা জায়গায় পৌঁছল। ওখান থেকে পুরো স্যাণ্ড ক্রীক উপত্যকা দেখা যায়। ক্রীকের উজানে ভাটিতে তিনটে র‍্যাঞ্চ, মাঝখানেরটা বিউয়েলদের।

বিউয়েলদের র‍্যাঞ্চ আর স্টোর লক্ষ্য করে ছুটছে দুজন অশ্বারোহী। অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়ে গেছে তারা। ওগুলো যে ঘোড়া তা-ও ঠিক মত বোঝার উপায় নেই এখান থেকে, তবু ওখানে কারা যাচ্ছে আন্দাজ করে নিল প্যাট্রিক আর হুবার্ট।

ওরাই যদি রবিনসন আর আর্চার হয় তাহলে এতক্ষণ স্যাডলে বসে থেকে হাত-পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে ওদের, বলল জুয়াড়ী। ওরা বিশ্রাম নিয়ে বাকবোর্ডে চড়ে ভাগার আগেই পৌঁছে যেতে পারব আমরা।

চলো তাহলে, দেরি কিসের? ভয়ঙ্কর একটুকরো হাসি খেলে গেল জুডাস অ্যাডলারের ভাবলেশহীন চেহারায়। স্পারের খোঁচায় পাহাড় থেকে দ্রুতগতিতে নামতে বাধ্য করল ওরা ঘোড়াগুলোকে।

.

অলিভা আর তার বাবা একজন কাস্টোমারের সঙ্গে লাঞ্চে বসেছে এমন সময় বাইরে ঘোড়ার শব্দ পেল। ওরা ভেরেছে কোনও একটা র‍্যাঞ্চ থেকে চিঠি নিতে এসেছে কেউ, হেনরিখ উঠে স্টোরে গেল ওদের সাথে দেখা করতে। আলভা টেবিলে বসে থাকল জোডি বেঞ্চলিকে সঙ্গ দেয়ার জন্য।

বক্স বি থেকে রসদ কিনতে এসেছে জোডি। অলিভা খেয়াল করল বদলে গেছে ছেলেটা, আগের সেই রুক্ষ দুর্বিনীত ভাব চেহারা থেকে বিদায় নিয়েছে। অলিভা স্টোরে জোডির ব্যাপারে র‍্যাঞ্চারদের গালগল্প মন দিয়ে শুনেছে। ভাল-মন্দে মেশানো সব কথা। কেউ বলছে ভাইকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এসেছে ছোঁকরা, আবার কেউ কেউ মতামত দিয়েছে যে অ্যাডাম ছোটভাইকে মানুষ করে ফেলেছে। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, কার্বন কাউন্টিতে ফিরে আসার পর কখনও আর জুয়ার টেবিলে দেখা যায়নি জোডিকে।

আজকে মালপত্র কিনেই ফিরে যেত জোডি, কিন্তু কৌতূহলী অলিভার নিমন্ত্রণে লাঞ্চে বসতে বাধ্য হয়েছে।

অ্যাডাম ফিরবে কবে, জোডি?

বলেনি, তবে মনে হয় শিগগিরই।

ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে গেল স্টোর থেকে হেনরিখ বিউয়েলের বিস্মিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসায়। কি ব্যাপার, মিস্টার ল্যানট্রি? আমার। তো ধারণা ছিল কমপক্ষে একসপ্তাহ পর শিকার থেকে ফিরবে তোমরা। [ ক্লান্ত একটা অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল জোডি। থাকার কথা ছিল এক সপ্তাই, কিন্তু উঁচুতে উঠতেই শরীর অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। বাঁচতে চাইলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঁচু অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে, আমাকে।

ভিনসেন্টের ক্রনিক হার্ট ট্রাবল, মিস্টার বিউয়েল। বাকবোর্ডে তুলে ওকে তাড়াতাড়ি রেলরোডে নিয়ে যেতে হবে, কথা বলে উঠল ল্যানট্রি, কিন্তু শুনে জোডির মনে হলো একসাথে বলছে দুতিনজন।

তোমাদের গাইড আসেনি সাথে?

প্যাক হর্স ছুটে যাওয়ায় ওগুলোকে সে খুঁজতে গেছে, চলে আসবে, বুক চেপে ধরে বলল উইডোফিল্ড। তুমি বাকবোর্ডে ঘোড়া, জুতে দাও, মিস্টার বিউয়েল, আমার দম এখানে বন্ধ হয়ে আসছে।

পরস্পরের দিকে তাকাল অলিভা আর জোডি। ওরা জানে চাইলেও রওয়ানা হতে পারবে না লোকগুলো। বাকবোর্ডের হার্নেস ছিড়ে ঘোড়াটা নিয়ে ল্যাঙড়া একটা সোরেল ওখানে বেঁধে রেখে গেছে কেউ একজন। ওরা জানে কাজটা কার।

হেনরিখ বিউলের মুখে কথাটা শুনে অধৈর্য ল্যানট্রি বলল, তাহলে। আরেকটা ঘোড় বাধো বাকবোর্ডে।

দুঃখিত, মিস্টার ল্যানট্রি, ঘোড়া আর নেই এখানে। রাউণ্ডআপ করে, ধরে আনতে সময় লাগবে। হাতের ইশারায় ডাইনিঙ রূম দেখাল হেনরিখ বিউয়েল। ততক্ষণে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে যাও। লোকগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে, কিচেনে চলে গেল। অলিভা। হেনরিখ বিউয়েল হান্টার দুজনকে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢোকার পর জোডি চমকে উঠল ওদের চেহারার অবস্থা দেখে। ওর মনে হলো ঘোড়ার পেছনে রুক্ষ জমিতে হেঁচড়ে আধমাইল নিয়ে গেলেও এত কাটা হেঁড়ার দাগ থাকত না লোকগুলোর সারা শরীরে। রাতেই বাধ্য হয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে, জানাল উইডোফিল্ড।

উঠে স্টোররুমে চলে এল জোডি, জানালা দিয়ে হান্টার দুজনের ঘোড়াগুলো দেখল চিন্তিত চেহারায়। ও বুঝতে পারছে মিথ্যে বলছে লোকদুটো, গোপন করছে কিছু একটা। কোনও গাইড রাতে পাহাড় থেকে নামতে দেবে না এই এলাকায় নতুন আসা কাউকে। তারওপর। একজনের নাকি হৃদরোগ আছে!

আরেকটা ব্যাপার জোডির নজর কেড়েছে। বয়স্ক লোকটার যদি সত্যিই হার্টে ট্রাবল থাকে তাহলে তাকে ভারি একটা বস্তা বইতে দিচ্ছে কেন ভাঙা গলাওয়ালা লোকটা? স্টোরের মেঝেতে ব্যাগটা নামিয়ে রেখেও হাতমুখ ধধায়ার জন্য যেতে পারত ওরা। যায়নি কেন?

ঘোড়া দুটোর একটা জোডির কাছে খুব পরিচিত ঠেকছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়ে গেল জোডির, ওই বে ঘোড়ায় করেই গত রোববার বক্স বিতে এসেছিল প্যাট্রিক হল!

কিচেনে হেনরিখ বিউয়েল কথা বলছে শুনতে পেল জোডি। স্পাইক হানাই, মিস্টার ল্যানট্রি। ডিক উলফের করাল থেকে চুরি করা সোরেলটা রেখে তোমাদের রোয়ান নিয়ে গেছে সে। চিন্তা কোরো না, তোমরা খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতেই আরেকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে আসব আমি।

জোডিকে পাশ কাটাল হেনরিখ ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে এসে। হান্টারদের ঘোড়া দুটো করালে নিয়ে গিয়ে স্যাডল নামাল। ওগুলোকে দানাপানি দিয়ে নিজের ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাকবোর্ড টানতে অভ্যস্ত এমন একটা ঘোড়ার খোঁজে। র‍্যাঞ্চের বেশিরভাগ ঘোড়াই স্যাডলে অভান্ত, হার্নেসে বেঁধে ওগুলোর কাছ থেকে কাজ আদায় করা প্রায় অসম্ভব।

ডাইনিঙ রূমে ফিরে জোডি দেখল খেতে বসেছে হান্টাররা। খাওয়ার ফাঁকে ঢুলছে ক্লান্তিতে। মাঝে মাঝে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে। দেখছে বস্তাটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা। আজকে বিশ্রাম নিয়ে কালকেই বরং রওয়ানা হয়ে তোমরা, পরামর্শ দিল অলিভা।

ঝুঁকি নিতে চাই না। জবাবে মাথা নাড়ল ল্যানট্রি। এই উচ্চতায়। ভিনসেন্টের অবস্থার অবনতি হতে পারে।

জোডি স্পষ্ট বুঝল আবারও মিথ্যে বলছে লোকটা। বাকবোর্ডে করে পঞ্চাশ মাইল পথ পার হয়ে রলিন্সে জীবিত পৌঁছতে পারবে না কোনও অসুস্থ লোক। তাছাড়া রলিস উচ্চতার দিক থেকে ফেরিসের চেয়ে মোটেও কম নয়।

অলিভা ওদের দিকে বেকনের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল, বাবা ঘোড়া নিয়ে ফেরার আগ পর্যন্ত তোমাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

জোডি হান্টারদের দিকে তাকাল একদৃষ্টিতে। বাজার্ড গ্যাপ দিয়ে রলিসে যেতে হবে তোমাদের। জায়গাটা ফেরিসের চেয়ে উঁচুতে।

ও দিক দিয়ে যাব না আমরা, খাওয়ার ফাঁকে বলল উইডোফিল্ড, নদীর ধার দিয়ে ফোর্ট স্টীলে পৌঁছব।

ওয়ার্ড ল্যানট্রি অলিভার দিকে তাকাল। আমি বলতে ভুলে গেলে তোমার বাবাকে বোলো ফোর্ট স্টীলের বার্নে ঘোড়াটা রেখে যাব আমরা।

কি যেন একটা আছে লোকগুলোর আচরণে। ওদের এত তাড়াহুড়ো কিসের? কি আছে ওই বস্তাটায়? কৌতূহলী হয়ে উঠল জোডি, সিদ্ধান্ত নিল লোকগুলো চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে এখানে। হয়তো গোপন কোনকিছু জানতে পারবে সে। জীবনে কখনও অ্যাডামের জন্য কিছু করেনি, এবার হয়তো কিছু একটা করার সুযোগ পেয়েও যেতে পারে। ওর ভাই একজন ডেপুটি, ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে উঠল জোডির।

খাওয়া শেষে একজন একজন করে হাত ধুয়ে এল হান্টাররা, বস্তাটা তুলে নিয়ে বারে গেল মদ গিলতে। এক আউন্স হুইস্কি গলায় ঢেলেই একবার বাইরে উঁকি দিয়ে সঙ্গীর পাশে এসে বসল ল্যানট্রি। ঘোড়া ধরে আনতে অনেক সময় নিচ্ছে লোকটা।

কিচেনে গিয়ে অলিভাকে ডিশগুলো ধুতে সাহায্য করল জোডি। কি বুঝছ? ফিসফিস করে জানতে চাইল অলিভা ওর দিকে তাকিয়ে।

ভয় পেয়েছে।

জুডাস অ্যাডলার ওদের গাইড হিসেবে গিয়েছিল।

প্যাট্রিক হল সাথে ছিল না?

না।

ডিশ ধোয়া শেষে অলিভাকে অনুসরণ করে ডাইনিং রূমে এল। জোডি। বাইরে ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে বলল, তোমার বাবা আসছে। বোধহয়।

দুটো ঘোড়া এগিয়ে আসার শব্দ অলিভাও শুনতে পেয়েছে। করালে। এসে থামল ঘোড়া দুটো।

খোলা দরজা দিয়ে বারের ভেতরে তাকাল জোডি। পাশাপাশি বাইরের দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে হান্টার দুজন রাইফেল হাতে। অপরিচিত একজন লোকের পেছন পেছন প্যাট্রিক হলকে ঢুকতে দেখল জোডি। এদের অবস্থা হান্টার দুজনের চেয়েও করুণ।

লোকগুলোর চেহারায় নগ্ন হিংস্রতা দেখে জোডির পেছনে দাঁড়ানো। অলিভার মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ হলো।

চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভুয়া হান্টাররা। রাইফেল তুলতে শুরু করেছে দুজনই। ওরা হুবার্টকে বোকা বানিয়েছে নাকের ডগায় বসে, ছিনিয়ে নিয়েছে চার লক্ষ ডলার। কেউটের মত হোলস্টারে ছোবল মারল হুবার্টের হাত। না না… রাইফেল মেঝেতে ফেলে আর্তনাদ করে উঠল উইডেফিল্ড। কথা শেষ করতে পারল না। গর্জে উঠেছে। হবার্টের সিক্সগান। উইডোফিল্ডের হৃদপিণ্ড ফুটো হয়ে ঝরনার মত রক্ত বেরিয়ে আসায় জোডি মনে মনে বলল এবার সত্যি সত্যিই লোকটার হার্টে ট্রাবল দেখা দিয়েছে।

হাত থেকে বস্তা খসে গেল উইডেফিল্ডের, মাটিতে আছড়ে পড়ল। মৃত সঙ্গীকে দেখল আতঙ্কিত ওয়ার্ড ল্যানট্রি। হাঁ করল চিৎকার করার জন্য। আতঙ্কে ভুলেই গেছে হাতের রাইফেলটা ব্যবহারের কথা। রাগে বিকৃত চেহারায় লাফ দিয়ে তার সামনে পৌঁছে গেল হুবার্ট। সিক্সগানের নল লোকটার মুখে ঢুকিয়ে টাকরায় ঠেসে ধরে ট্রিগার টেনে দিল। মাথার তালু ফুটো করে এক থোকা রক্ত মগজ ছাদে ছিটাল বুলেট।

নীরবতা নেমে এল ঘরে। মেঝেড়ে পড়ে থাকা মৃত হান্টারদের টপকে সিক্সগান হাতে জোডি আর অলিভার দিকে এগোল হবার্ট আর প্যাট্রিক হল।

২২.

সাক্ষী রাখে না হুবার্ট কখনও। বুড়ো আঙুলে সিক্সগানের হ্যামার ওঠাল সে। পাশ থেকে প্যাট্রিক হল তাকে থামাল, এখনই না, হবার্ট। অলিভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাবা কোথায় গেছে?

ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ায় জবাব দিতে পারল না অলিভা। ডাইনিঙ। রূমের ওপরের হোটেল আঙুল ইশারায় দেখাল জুয়াড়ী। ওখানে কেউ আছে?

থাকলে তোমাকে বলবে মনে করেছ? নিজে গিয়ে দেখো গে যাও, অধৈর্য কণ্ঠে ধমকে উঠল হুবার্ট।প্যাট্রিক হল মই বেয়ে উঠে গিয়ে ওপর থেকে চেঁচিয়ে জানাল, হোটেলে কেউ নেই।

নেমে এসে পেছনদিকটা ঘুরে দেখে এসো, নির্দেশ দিল হিউ হুবার্ট।

পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে ফিরে এসে হুবার্টের পাশে দাঁড়াল প্যাট্রিক হল। বলল, এক রাইডার আসছে। পেছনে ঘোড়াও আছে একটা, মনে হয় হেনরিখ বিউয়েল।… ঘোড়ার খুরের শব্দ কাছাকাছি চলে আসার পর হুঁশ ফিরল অলিভার, চেঁচিয়ে উঠল সে, ভেতরে এসো না, বাবা!

দুপা এগিয়ে অলিভার মুখে হাত চাপা দিল প্যাট্রিক হল। একই সাথে সামনে বাড়ল হিউ হবার্ট। সিক্সগানটা সজোরে নামিয়ে আনল অপ্রস্তুত জোডির মাথায়।

কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরতে জোডি দেখল হাত-পা বেঁধে। কাউন্টারের গায়ে ঠেস দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে ওকে। মুখে রুমাল, গোজা। অলিভারও একই অবস্থা। বার থেকে বস্তাটা নিয়ে এসে খুলেছে। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল, ভেতরে হাত ঢুকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে হুবার্ট বলে। উঠল, আছে! সবই ঠিক আছে।

কিন্তু আজকে স্টেজ আসতে পারে এখানে, বাস্তবচিত্র তুলে ধরল জুয়াড়ী। আমাদের ঘোড়াগুলো ক্লান্ত, স্টেজ যদি আসে বিপদ হবে।

জবাব দিতে গিয়েও করালে ঘোড়া থামার শব্দে চুপ হয়ে গেল হবার্ট। পায়ের আওয়াজ কিচেনের দিকে এগিয়ে আসছে শুনে ওদিকে তাকাল। ফিসফিস করে বলল, কিচেনে যাও। লোকটা ঢুকলেই মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলবে।

নিঃশব্দ পায়ে কিচেনে চলে গেল প্যাট্রিক হল। কল্পনার চোখে জোডি দেখতে পেল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হেনরিখের মাথায় সিক্সগান নামিয়ে আনছে লোকটা। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল অলিভার জ্ঞান ফিরেছে। বিস্ফারিত চোখে আর্তি নিয়ে হুবার্টের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।

কিচেনের দরজা খোলার শব্দ হলো। তারপরই খট করে একটা আওয়াজ। সশব্দে ভারী একটা দেহ আছড়ে পড়ল মেঝেতে। দুমিনিট পর ডাইনিঙ রূমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে প্যাট্রিক হল বলল, বিউয়েল।

কি অবস্থা?

অজ্ঞান। কিচেনের নিচের আলু রাখার সেলারে ফেলে ট্র্যাপ ভোর আটকে দিয়েছি।

আর কেউ আছে কিনা দেখেছ?

নেই। হাসল জুয়াড়ী। দুএক ঘণ্টা থাকতে হবে ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য। মেয়েটাকে দিয়ে খাবারের বন্দোবস্ত করিয়ে নিই, কি বলো?

সায় দিল হুবার্ট। গতকাল রাতের পর থেকে কিছুই প্রায় পেটে পড়েনি ওদের। পোস্ট অফিস থেকে চিঠি সংগ্রহের জন্য কেউ এসে পড়তে পারে ভেবে বারে পড়ে থাকা লাশ দুটো কাউন্টারের পেছনে টেনে সরিয়ে রাখল ওরা।

ডাইনিঙ রূমে ফিরে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের ইশারায় জোডি আর অলিভাকে দেখাল প্যাট্রিক হল। এদের কি করবে?

জিম্মি হিসেবে সাথে নিয়ে যাব।

মাথা ঝাঁকাল জুয়াড়ী। ঠিকই বলেছে হুবার্ট। সাথে জিম্মি থাকলে, পালাবার সময় বিপদ হলে বাড়তি সুবিধা পাবে ওরা।

মেয়েটার বাঁধন খুলে কিচেনের কাজে লাগিয়ে দাও, দরজার দিকে। পা বাড়িয়ে বলল হুবার্ট। আমি যাচ্ছি ঘোড়া চারটের দানাপানি দিতে। রাতের খাবারও তৈরি করিয়ে নিয়ো, আজ সারারাত ঘোড়ার পিঠে কাটবে আমাদের সবার।

.

হুবার্ট বেরিয়ে যাওয়ার পর অলিভার বাঁধন খুলে দিল জুয়াড়ী। মুখ থেকে রুমালটা খুলে পকেটে পুরে বলল, চলো, আজকে আমরা বিচার করব তোমার রান্নার হাত কেমন।

কিচেনে ঢুকে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অলিভা, পেছনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকল প্যাট্রিক হল। জানালা দিয়ে বার্ন আর করাল চোখে পড়ছে। অলিভার। ওখানে সেরা চারটে ঘোড়া বাছছে হুবার্ট। ঘোড়াগুলো বার্নে নিয়ে যব দিল তারপর।  

কোনকিছুতেই আর কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না অলিভার মনে। আতঙ্কে কুঁকড়ে আছে ও। চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছে দুজন মানুষকে। ওর বাবা আটকা পড়ে আছে মেঝের তলার সেলারে। ওদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না বুঝতে পারছে স্পষ্ট। বিপদমুক্ত দূরত্বে পৌঁছেই খুন করা হবে ওদের, সাক্ষী রাখবে না প্যাট্রিক হল আর তার সঙ্গী।

একটা পটে সুপ ঢেলে গরম করতে দিল অলিভা। বেকন, বিন আর। বারোটা ডিম ভাজল। রাতে লাগবে, আরও এক ডজন ডিম সেদ্ধ করে। রাখো, বলল প্যাট্রিক হল।

নিচের সেলার থেকে মৃদু একটা শব্দ হতেই আবার চেঁচিয়ে সাহায্য চাওয়ার জন্য হাঁ করল অলিভা। চুপ। একদম চুপ! শান্ত গলায় সতর্ক করল প্যাট্রিক। চেঁচামেচি শুনে আসতে বাধ্য হলে তোমাকে খুন করে। ফেলবে হবার্ট।

 সাহায্য করার মত কেউ ধারে কাছে আছে কিনা ভাবার চেষ্টা করল অলিভা। অন্যদিন চিঠি নিতে র‍্যাঞ্চগুলো থেকে দুএকজন আসে। আজকে কেউ আসছে না কেন! স্টেজ পৌঁছবে সন্ধ্যায়; আরও ছয় ঘণ্টা পরে!  

হঠাৎ বার্ট আর্থারের কথা মনে পড়ল ওর। লোকটাকে পাত্তা না দিলেও প্রতিদিন অন্তত একবার তার আসা চাই। আজ কি আসবে লোকটা? যদি আসেও নিরস্ত্র বার্ট আর্থার কী সাহায্য করতে পারবে? প্যাট্রিক হল সঙ্গীকে হুবার্ট নামে ডেকেছে। হুবার্টই যদি হয় লোকটা,; তাহলে দশজন সশস্ত্র বার্ট আর্থারও কোনও কাজে আসবে না আজ।

কাজের ফাঁকে কিচেনের জানালা দিয়ে উত্তর-পশ্চিমে তাকাল অলিভা। সব সময় ওদিক থেকেই ঘোড়া ছুটিয়ে আসে লোকটা। শেড আর বার্নের দেয়ালে দৃষ্টি বাধা পেল ওর। কারও চোখে না পড়েই বার্নের পেছনের দরজা পর্যন্ত চলে আসতে পারবে বার্ট আর্থার। আজকে লোকজন ওদের এখানে আসছে না কেন? অস্থির চোখে বাইরে তাকিয়ে। ভাবল অলিভা।

বার্ন থেকে বেরিয়ে কিচেনে এসে ঢুকল হুবার্ট। দেয়াল ঘড়ির দিকে। তাকিয়ে দেখল দেড়টা বাজে। তিনটার সময় রওয়ানা হব, বলল সে। ব্যাগটা নিয়ে এসো, প্যাট্রিক, ভাগাভাগি করে ফেলি।

অলিভার রান্না শেষ হওয়ার আগেই টাকা ভাগ করে নিজেদের অংশ বুঝে নিল ওরা। স্যাডলে বাঁধার জন্য ব্ল্যাংকেটে জড়িয়ে নিল। দুজনই দুজনকে খুন করে পুরো টাকা মেরে দেয়ার কথা ভাবছে, আন্দাজ করল অলিভা। আজ হয়তো নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করবে না ওরা, তবে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেই করবে।

কিচেনে খেতে বসল প্যাট্রিক হল বারের দিকে নজর রাখার জন্য। সামনের দিক কাভার করতে স্টোরে বসল হিউ হুবার্ট। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চোখে কৌতুক নিয়ে দেখল হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অসহায় জোডিকে।

খাওয়া শেষে আধঘণ্টা করে ঘুমাল ওরা একে অপরকে পাহারায়। রেখে। তিনটা বাজার দশ মিনিট আগে সামনের দিক থেকে একজন রাইডারকে আসতে দেখে প্যাট্রিক হলের উদ্দেশে হাঁক ছাড়ল হুবার্ট। কে যেন আসছে, প্যাট্রিক, তৈরি হও।

আগন্তুক এখনও আধমাইল দূরে আছে। লোকটার ঘোড়ায় চড়ার। ভঙ্গি কাউবয়দের মত। একপলকের জন্য রাইডারকে দেখার সুযোগ। পেয়েছে অলিভা। স্ট্যালিয়ন ঘোড়াটা আর হ্যাট দেখে ওর মনে হলো অ্যাডাম বেঞ্চলি আসছে।

কটমট করে অলিভার দিকে তাকাল হবার্ট। যদি একটাও শব্দ করো, তোমার বাবাকে পুড়িয়ে মারব?

লোকটা যে কথা রাখবে, মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না, সে-ব্যাপারে। অলিভার মনে কোনও সন্দেহ রইল না।

সামনের দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল প্যাট্রিক হল। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেমে গেছে, হুবার্ট। আমার মনে হয় লোকটা অ্যাডাম। বেঞ্চলি।

ভুয়া হান্টারদের খবর নেয়ার জন্য ফোর্ট স্টীলে গিয়েছিল অ্যাডাম। ওখানে বার্ন মালিকের সাথে কথা বলে বাকবোর্ডের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছে এখানে। হুবার্ট থাকতে পারে সন্দেহ হওয়ায় বাকবোর্ডটা বিউয়েলদের করালে আছে কিনা দেখার জন্য দূর দিয়ে র‍্যাঞ্চহাউসটা ঘিরে বৃত্ত রচনা করল সে।

প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট অলিভাকে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে গেল। জুয়াড়ী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খিস্তি করল। তারপর বলল, বাকবোর্ড আর ঘোড়াগুলো দেখে ফেলেছে।

বার্নে অ্যাডামকে ঢুকতে দেখল ওরা। ওখানে চারটা ঘোড়া যব চিবাচ্ছে দেখেই সে বুঝতে পারবে শিগগিরই কোথাও রওয়ানা হবে চারজন লোক। হয়তো ভাববে দুটো ঘোড়া হান্টারদের জন্য, বাকি দুটো তাদের গাইডদের। ওদের ঘোড়া চিনতে না পারলেও কি সন্দেহ হবে অ্যাডামের মনে?

হুবার্ট কাঁধে রাইফেল তুলে জানালার পাশে দাঁড়াল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে সিক্সগান বের করে প্যাট্রিক হল বলল, ওকে কাছাকাছি। আসতে দাও, হুবার্ট, মিস কোরো না।

হাসল হুবার্ট। আসছে সে।

কারবাইন হাতে বার্ন থেকে বেরিয়ে এগোতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। অ্যাডাম। জিজ্ঞেস করল, হেনরিখ, অলিভা, তোমরা ভেতরে আছ?।

বাড়ির ভেতর থেকে জবাব দিল না কেউ। বাবা আর জোডির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় অ্যাডামকে সাবধান করতে পারল না অলিভা। চেঁচালে জেনেশুনে আত্মহত্যা করা হবে। ওর বাবাকে পুড়িয়ে মারবে হবার্ট। জোডিকে খুন করবে।

জবাব দিচ্ছ না কেন, কোথায় গেলে তোমরা! আবার বলল অ্যাডাম।

 উত্তর দিল না কেউ এবারও। কিচেনের চিমনি দিয়ে ধোয়া বেরচ্ছে দেখল সে।

শালা ঠিকই বুঝেছে আমরা আছি এখানে। রাইফেলের নলের গুঁতোয় জানালার কাঁচ ভেঙেই ট্রিগার টানল হুবার্ট। অকথ্য গালাগাল দিল। অ্যাডামকে গাঁথতে না পেরে।

বাড়ির ভেতর থেকে রাইফেল গর্জে উঠতেই কারবাইন কাঁধে তুলে পাল্টা জবাব দিল অ্যাডাম। হুবার্টের মুখে কাঠের কুচি ঢুকে গেল বুলেটটা জানালার চৌকাঠে লাগায়।

অলিভা জানালা দিয়ে দেখল বার্নের ভেতরে ঢুকে পড়েছে অ্যাডাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। অ্যাডাম বার্নের ভেতর থেকে হয়তো ঠেকিয়ে রাখতে পারবে খুনীগুলোকে।

হুবার্ট পাশের ঘরে গিয়ে জোডিকে বাঁধনমুক্ত করে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে আসায় অলিভার মন থেকে শেষ আশাটুকুও দূর হয়ে গেল। জোডিকে জানালার সামনে দাঁড় করিয়ে হবার্ট বলল, ওকে বলো। তোমরা আছ এখানে।

অ্যাডাম! ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলায় চেঁচাল জোডি। ওরা আমাদের বন্দী করে রেখেছে, অ্যাডাম!

তুমি আর কে? বার্ন থেকে অ্যাডাম জানতে চাইল।

বিউয়েলরা…

 যথেষ্ট হয়েছে, জোডিকে সরিয়ে এনে আবার হাত-পা বাঁধল হুবার্ট। মুখে রুমাল গুঁজে দিল। তারপর অলিভাকে নিয়ে জানালার সামনে দাঁড় করাল যাতে বার্ন থেকে দেখতে পায় অ্যাডাম। চেঁচিয়ে বলল, তুমি চলে গেলে প্রাণে বাঁচবে ওরা। তোমার ভাই আর মেয়েটাকে জিম্মি করে নিয়ে যাব আমরা। যদি বুঝি আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে না, মাঝরাতে ট্রেইলে ছেড়ে দেব।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিল অ্যাডাম। আর কিছু বলবে?

হ্যাঁ, গর্জে উঠল প্যাট্রিক হল। আমরা দেখতে পাই এমন একটা জায়গায় রাইফেলটা নামিয়ে রেখে বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করবে তুমি।

চুপ করে অ্যাডামের জবাবের অপেক্ষা করছে সবাই। অলিভা বুঝতে পারছে খুনী দুটোর প্রস্তাবে রাজি হলে বিরাট ভুল করবে অ্যাডাম। জিম্মিদের তত খুন করবেই ওরা, রাইফেলহীন অ্যাডামকেও যাওয়ার পথে শেষ করে যাবে। ওর .৪৫-এর রেঞ্জের বাইরে থেকে ঝুঁকি না নিয়েই খুন করে ফেলার মতলব আঁটছে প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট।

পাগলের মত চেঁচাল অলিভা। রাজি হয়ো না, অ্যাডাম, রাজি…

হুবার্টের প্রচণ্ড চড়ে ছিটকে পড়ে গেল মেয়েটা। প্যাট্রিক হল জানালায় গিয়ে দাঁড়াল। ভাবার জন্য তোমাকে আমরা দশ মিনিট সময় দিচ্ছি, অ্যাডাম।

ওদের ছেড়ে দাও, আমি তোমাদের জিম্মি হতে রাজি আছি, আশি গজ দূরের বার্ন থেকে স্পষ্ট ভেসে এল অ্যাডামের গলা। ওরা চোখের আড়ালে চলে যাবার পর দুহাত মাথার ওপর তুলে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসব আমি।

পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। লড়াই না করে সরে পড়ার সুযোগ আছে লোভনীয় প্রস্তাবটাতে। তবে অ্যাডাম ভাওতাও দিতে পারে। শালা যদি কথা না রাখে তখন? আপনমনে বলল হুবার্ট। অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল, আমরা দশ মিনিট শুনতে শুরু করেছি, অ্যাডাম। রাইফেলসহই চলে যেতে পারো তুমি, আমরা অনুসরণ করব না। বার্নের পেছন দরজা দিয়ে হাঁটতে শুরু করো।

আর নয় মিনিট পর তোমার ভাইকে খুন করব, হুমকি দিল প্যাট্রিক হল।

 ভয়ে ভয়ে দেয়াল ঘড়িটা দেখল অলিভা। ওটা দ্রুত চলছে নাকি? কিছুক্ষণ আগেই সে দেখেছে আট মিনিট বাকি আছে, আর এখন বড়। কাটাটা দেখাচ্ছে হাতে সময় রয়েছে মাত্র এক মিনিট!

 বার্ন থেকে বেরিয়ে এল অ্যাডাম বেঞ্চলি। শ্রাগ করে বলল, চলে। যাচ্ছি, হবার্ট!

২৩.

বার্নের পেছনে গিয়ে পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করল অ্যাড়াম। লক্ষ রাখল যাতে বার্নের আড়াল পায়। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে চলে গিয়ে দক্ষিণে পা বাড়াল সে। স্টেজ রোডের দিকে ওর চোখ। দুজন অশ্বারোহী আসছে ওদিক থেকে। বার্ন থেকে ওদের দেখেই দল ভারী করার জন্য–হুবার্টদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে অ্যাডাম।

এখনও লোকগুলো একমাইল দূরে আছে। ও জানে না কারা ওরা, তবে সতর্ক না করলে যে স্টোরে ঢুকতে গিয়ে হুবার্টের হাতে মরবে সে ব্যাপারে মনে কোনও সন্দেহ নেই অ্যাডামের।

কাছে আসার পর দুজনকে চিনতে পেরে অবাক হলো অ্যাডাম। স্ট্যানলি আর ওয়েন! ব্যাগস থেকে নব্বই মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হঠাৎ এখানে এসেছে কেন?

নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে জিম লেম্যান তিনবার ঘোড়া পাল্টে তেরো ঘণ্টায় নব্বই মাইল পেরিয়ে। তার মুখে ভুয়া হান্টারদের ফোর্ট, স্টীলে নামার খবর শুনে আর দেরি করেনি ডেপুটি এবং ওয়েন, রলিন্স হয়ে ছুটে এসেছে ফেরিসে।

পাঁচশো গজ দূরে এসে ঘাড় ফিরিয়ে স্টোরটা দেখল অ্যাডাম। ও আরও দূরে চলে যাবে সেই অপেক্ষায় আছে আউট-লরা। ডেপুটি আর ওয়েন ওর সামনে ঘোড়া থেকে নামার পর দুটো রাইফেল গর্জে উঠল স্টোর থেকে।

কি ব্যাপার, অ্যাডাম? জানতে চাইল ক্লান্ত স্ট্যানলি স্টোরের দিকে তাকিয়ে।

শিউরে উঠল অ্যাডাম। এতক্ষণে হুবার্ট জেনে গেছে চালাকি করা হয়েছে তার সাথে। জোডি আর অলিভাকে লোকটা খুন করে বসবে না। তো! মনে হয় না, নিজেকে আশ্বস্ত করল অ্যাডাম। তিনজনকে ঠেকিয়ে রেখে নিরাপদে পালাতে হলে জিম্মি দরকার হবে হুবার্টদের। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল জোডিদের স্টোরে জিম্মি করেছে, বলল সে।

কেউ কারও সাথে কথা বলল না। ওরা জানে কি করা উচিত। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেকে বার্নের আড়ালে চলে এল তিনজন। সরাসরি সামনে বার্ন থাকায় ওদের আর দেখতে পাচ্ছে না হুবার্ট। প্রতিটা মুহূর্তে অ্যাডামের মনে হচ্ছে রাগে উন্মত্ত হয়ে বন্দীদের খুন করে বসবে না তো লোকটা!

 ওদের জন্য এটা একটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক বুদ্ধির খেলা। হেরে গেলে। প্রাণ হারাবে তিনজন মানুষ। মারা যাবে জোডি আর বিউয়েলরা।

বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। নিজেদের ঘোড়া বেঁধে বার্নটা ঘুরে দেখল স্ট্যানলি। তারপর বলল, সামনের দিকে নজর রাখতে হবে না আমাদের। চারটে ঘোড়াই এখানে। পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা মারা গেলেও করবে না ওরা।

বার্নের সামনের দরজা থেকে স্টোরের উদ্দেশে চেঁচাল জোসেফ ওয়েন। অলিভা, আমরা তোমাকে বের করে আনব! হুবার্ট, অলিভার একটা চুল ছুঁলেও নরক পর্যন্ত তোমাকে ধাওয়া করব আমি!

ওয়েনের কথার জবাবে কিচেনের জানালা থেকে গর্জে উঠল একটা রাইফেল। বার্নের দরজায় বুলেট গাঁথল। রাগে গাল দিয়ে উঠে। কারবাইন হাতে বার্ন থেকে এক পা বেরিয়ে এল ওয়েন। পাঁচবার পাম্প করে ম্যাগাজিন খালি করল ট্রিগার টেনে।

দুকাঁধ ধরে টেনে তাকে বার্নের ভেতরে নিয়ে এল স্ট্যানলি। শান্ত, কণ্ঠে বলল, মাথা গরম করে কোনও লাভ নেই ক্ষতি ছাড়া। পরেরবার গুলি করার আগে ভেবে কোরো, অলিভাকে ওরা জানালার সামনে ঠেলে দিলে তোমার গুলিতেই মরবে মেয়েটা।

কি করা উচিত তাহলে? তিক্ত কণ্ঠে বলল ওয়েন। আমার চাচা চাচীকে খুন করেছে হুবার্ট। এখন তার জিম্মি হয়ে আছে আমার প্রেমিকা। তুমি হলে কি করতে?

বুদ্ধি দিয়ে হারিয়ে দিতাম ওদের।

তাহলে ফালতু দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছ কেন, বের করো বুদ্ধি, খেঁকিয়ে উঠল অধৈর্য ওয়েন।

স্ট্যানলি কথা বলার আগেই স্টোর থেকে হুবার্টের গলা ভেসে এল। তোমরা আমাদের ঘোড়া না দিলে ধরা পড়ব আমরা, কিন্তু জোডি আর বিউয়েলদের বাঁচতে দেব না। ভেবে দেখো, অ্যাডাম, খুনীর ফাঁসি একবারই হয়। এখনও সময় আছে, আমার আগের প্রস্তাব মেনে নাও, হাঁটতে শুরু করো তোমরা তিনজন।

 হাসার ভঙ্গিতে দাঁত খিচাল ওয়েন। আমরা তোমাদের কথা শুনে চলে গেলে ওদেরকে ছাড়া রওয়ানা হবে তোমরা?

না, জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমাদের ধাওয়া করা হবে না নিশ্চিত হবার জন্য দুজনকে সাথে নিয়ে যাব। কাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে ওদের।

আমরা তোমাদের বিশ্বাস করব কেন? স্ট্যানলি জানতে চাইল।

না করে তোমাদের উপায় নেই, সশব্দে হাসল প্যাট্রিক হল। আবারও তোমাদের দশ মিনিট সময় দিচ্ছি। খোলা প্রেইরি ধরে হাঁটতে শুরু করো, সময় বেশি নেই তোমাদের হাতে। কথা না শুনলে প্রথমে মেয়েটার দুঊরুতে গুলি করা হবে। সে মরার পর একই ভাবে ধীরে। ধীরে মারা হবে জোডিকেও।

জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল অ্যামি। অসহায় দৃষ্টিতে পালাক্রমে তাকাল ওয়েন আর স্ট্যানলির দিকে। আর আলোচনা সমঝোতার সময় নেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আগুন ঝরানো অস্ত্র হাতে স্টোর আক্রমণ করতে পারে ওরা, কিন্তু তাতে সত্যিকার অর্থে কোনও লাভ। হবে না জিম্মিদের মৃত্যু তরান্বিত করা ছাড়া।

স্ট্যানলি, ওরা আসলেই কি….

 মাথা ঝাঁকাল ডেপুটি। হুবার্ট ঠিকই বলেছে, অ্যাডাম। আরও দুটো খুন করলেও বিচারে তো ফাঁসির বেশি কিছু হবে না ওর।

আর পাঁচ মিনিট। স্টোর থেকে হুবার্টের গলা শোনা গেল।

একটা মিনিট খুব দ্রুত পেরিয়ে গেল। বার্নের পেছনের দরজাটা খুলে গেছে প্রথম টের পেল স্ট্যানলি। তার দেখাদেখি ঘুরে দাঁড়াল বাকি দুজন। দেখল ঘোড়া থেকে মাটিতে নেমেছে নিরস্ত্র একটা লোক।

কি ব্যাপার? বিস্ময় মেশানো কণ্ঠে সবার ওপর চোখ বোলাল বার্ট আর্থার।

চুপ, আর্থার, গলা নামিয়ে বলল স্ট্যানলি, তুমিই আমাদের শেষ ভরসা।

কোট পরে এসেছে বার্ট আর্থার, অলিভার মন পাওয়ার জন্য হাতে বুনো ফুল। চোখ কপালে উঠল তার। ভরসা? কিসের?

আঙুলের ইশারায় লোকটাকে চুপ করতে বলে বার্নের সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁচু কণ্ঠে স্ট্যানলি বলল, তোমরা ঠিকই বলেছ, আইনে ফাঁসির চেয়ে বেশি কিছু নেই। যদি কথা দাও নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ওদের তোমরা ছেড়ে দেবে, তাহলে তোমাদের কথা মেনে পায়ে হেঁটে সরে যাব আমরা।

আমরা রাজি, রওয়ানা হও তোমরা, চেষ্টা করেও গলায় ফুটে ওঠা স্বস্তি চাপা দিতে পারল না জুয়াড়ী।  

স্ট্যানলি বার্নের পেছনে ওদের তিনজনের কাছে ফিরে এল দ্রুত পায়ে। ওদের দৈহিক গড়নের সাথে ওর গড়নের মিল নেই অনুভব করে হতাশ হয়েছে মনে মনে। অ্যাডাম আর আর্থারকে কাপড় বদলাবদলি করে নিতে বলল সে। অ্যাডামের উঁচু ক্রাউনের সমব্রেরো হ্যাট বসিয়ে। দিল আর্থারের মাথায়। ওরা কাপড় বদলে নেয়ার পর বলল, অ্যাডাম বার্নে থাকবে। চলো হাঁটতে শুরু করি আমরা তিনজন।

যাব না আমি, প্রতিবাদ করল ওয়েন। ওদের সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া আছে আমার।

তাহলে অলিভা মরবে, জায়গা মত খোঁচা দিল স্ট্যানলি। আমাকে যেতে হচ্ছে কারণ পেছন থেকে দেখে ওরা বুঝবে চলে যাচ্ছি আমি ওদের নির্দেশ মেনে। তোমাকে চিনবে কাঁধের মস্ত সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে। কিন্তু অ্যাডামের কাপড় পরা আর্থারকে পেছন থেকে চিনতে পারবে না ওরা। কি বলছি বুঝতে পারছ? জেদাজেদি না করে হাঁটতে শুরু করি চলো।

 অ্যাডামও বুঝতে পেরেছে ডেপুটির পরিকল্পনা, ফিসফিস করে ধন্যবাদ দিল স্ট্যানলিকে। খালি হোলস্টার আর গানবেল্ট কোমরে পরে নিল বার্ট আর্থার, হাতে অ্যাডামের রাইফেল ধরে মাথা কঁকাল।

একসাথে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল ওরা তিনজন। বার্নের আড়াল নিয়ে রাইফেলের রেঞ্জের বাইরে চলে যাবার পর বামে মোড় নিল। ক্রীকের ধার দিয়ে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলল। এই মুহূর্তে স্টোর থেকে বিনকিউলার দিয়ে ওদের পিঠ দেখলেও কারও বোঝার উপায় নেই বা পাশের লোকটা অ্যাডাম নয়, অন্য কেউ।

২৪.

একা হয়ে যাওয়ার পর একটা স্টলে ঢুকে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল অ্যাডাম। ও আশা করছে ঘোড়াগুলোয় স্যাড়ল চাপানোর আগে বন্দীদের বাইরে আনবে না হবার্টরা। জোডি আর অলিভা গানফাইটের মধ্যে পড়ে গেলে কি হয় বলা যায় না।

জিম্মিদেরগুলো ধরে চারটা ঘোড়া নেবে ওরা বার্ন থেকে। না, ভুল হলো। প্যাক হর্সও লাগবে ওদের। অ্যাডাম জানে না উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রির কি হয়েছে, তবে বুঝতে পারছে যে করেই হোক টাকা পেয়ে। গেছে হুবার্টরা। টাকা বইবার জন্যও আলাদা প্যাক হর্স নেবে হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। যা খুশি করুক ব্যাংক ডাকাতির টাকা দিয়ে, জোডি আর অলিভার চিন্তা ছাড়া অ্যাডামের মাথায় আর কোনও চিন্তা নেই এই মুহূর্তে।

দড়াম করে বন্ধ হলো কিচেনের দরজা। বুট পরা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে বার্নের দিকে। দুই আউট-লই যদি আসে সুবিধা হবে। অ্যাডামের। ওরা ঘোড়ায় স্যাডল ওঠানোর সময় অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকবে। বন্দী করতে পারবে সে সহজেই।

শুধু প্যাট্রিক হলকে বার্নে ঢুকতে দেখে বুক ভরা আশা দপ করে নিভে গেল অ্যাডামের। জুয়াড়ীকে বন্দী বা হত্যা করলে হুবার্ট টের পাবেই। বার্নের দরজায় নজর না রাখার মত বোকা সে নয়। সেক্ষেত্রে খুন হয়ে যাবে অলিভা আর জোডি। বাচবে না হেনরিখ বিউয়েলও।

একে একে ছয়টা ঘোড়ায় স্যাডল, চড়াল প্যাট্রিক হল। ওগুলোর। দড়ি ধরে বাইরে নিয়ে গেল। অ্যাডাম ভেবেছিল কিচেনের দরজায় থামবে লোকটা। কিন্তু স্টোরের সামনের দিকে চলে গেল সে বাড়ির কোনা ঘুরে।

চমকে উঠল অ্যাডাম। মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে সে। বার্ট আর্থারকে ওর উচিত হয়নি রাইফেলটা দিয়ে দেয়া। তবে এখনও সময় আছে। ওরা প্যাকহর্সে মালপত্র তুলে বন্দীদের বের করে রওনা হওয়ার আগেই স্টোরের সামনে পৌঁছুতে হবে তাকে। দৌড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল সে। হুবার্ট সম্ভবত স্টোরের সামনে জোডি আর অলিভাকে নিয়ে ব্যস্ত, বার্নের দিকে খেয়াল নেই। আর সে দেখল কি দেখল না পাত্তাও দিচ্ছে না অ্যাডাম এখন। ওর সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। হয় মরো নয় মারো।

উন্মত্তের মত উদ্যত সিক্সগান হাতে স্টোরের কোনা ঘুরে সামনে। পৌঁছে গেল অ্যাডাম। ওর দশ ফুট দূরে দাড়ানো ঘোড়াটায় অলিভকে উঠে বসতে বাধ্য করছে হিউ হুবার্ট। প্যাট্রিক হল সিক্সগানের নল জোডির দিকে তাক করে ঘোড়ায় উঠতে ইশারা করছে। জোডির চেহারায় পরিবর্তন আসতে দেখে সন্দেহ হলো জুয়াড়ীর। ঘুরে তাকাল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সে কোমরের কাছ থেকে তাক করল অ্যাডামের দিকে।

পাঁচবার ট্রিগার টানল অ্যাডাম। তিনবার প্যাট্রিক হলের উপর লক্ষ্য স্থির করে, দুবার হিউ হুবার্টের আবছা,শরীর লক্ষ্য করে। পাল্টা জবাব দিল হুবার্ট। লাগাতে পারল না। অলিভা লাথি কষেছে তার দুই উরুর ফাঁকে।

গুলি করে সিক্সগান খালি করল জুয়াড়ী। ঘৃণা ভরা চোখে তাকাল একবার অ্যাডামের দিকে। তারপর টলে উঠে কয়েক মুহূর্ত পর রক্তাক্ত শরীরে মাটিতে পড়ে গেল। অ্যাডাম শুনল কয়েকবার মুখ খিস্তি করল। হুবার্ট। কিন্তু তাকে দেখতে পেল না নিজে মাটিতে পড়ার আগে। হুবার্টকে উবু হয়ে বসে থাকতে দেখল অ্যাডাম। মাটিতে পড়ে গেছে। সিক্সগান, রক্তাক্ত শরীরে খুঁজছে লোকটা। শেষ গুলিটা অ্যাডাম খরচ করল উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। হুবার্টের খুলি ফুটো হয়ে রক্ত বের হতে দেখল। তারপর হঠাৎ করে অন্ধকার আর শব্দহীন হয়ে গেল ওর জগৎ।  

অ্যাডাম জানে না কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল। হেনরিখ বিউয়েলের গলা। প্রথমে শুনতে পেল সে জ্ঞান ফেরার পর। লোকটা বলছে: আমি অন্য ব্যবস্থা করে নেব, ওকে আমার বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দাও,

চেতন অচেতনের মাঝে অ্যাডাম বুঝতে পারল ওকে বয়ে নিয়ে,। খাওয়া হচ্ছে। চোখ মেলে দেখল স্ট্যানলি, জোডি, অলিভা আর ওয়েনের ঘোলা চেহারা। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করল সে। ওর মনে হচ্ছে। আগুনে তপ্ত লোহা বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ। অসহ্য ব্যথা। হেনরিখ বিউয়েলের গলা শুনতে পেল আবার। ডিক উলফের ওখানে দুজন। হান্টার উঠেছে। তাদের একজন ডাক্তার। আমি বার্ট আর্থারকে পাঠিয়ে দিয়েছি তাকে নিয়ে আসার জন্য।

কখন জ্ঞান হারিয়েছে জানে না অ্যাডাম। ও জানে না আজকের স্টেজে রলিন্স থেকে এখানে চলে এসেছে উদ্বিগ্ন রোসা। খবরের পিছু ধাওয়া করে ছুটে এসেছে ডেপুটির বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিন। পোর্চে বসে ছিল স্ট্যানলি, ফ্রেডকে দেখে সে অবাক হয়নি। কিন্তু রোসা এখানে এসেছে কেন?

লম্বা যাত্রা শেষে ক্লান্ত আড়ষ্ট দেহে স্টেজ থেকে নেমেছে বোসা। স্ট্যানলিকে দেখেই প্রথম প্রশ্ন করেছে অ্যাডাম কোথায়।

মেয়েটা ভয় পাচ্ছে অ্যাডাম আহত, ভাবল স্ট্যানলি। অ্যাডামের ভাগ্যের সাথে নিজের ভাগ্যের তুলনা করে কপালকে গাল দিল মনে মনে। অ্যাডামকে ভালবাসে রোসা, খুবই ভালবাসে। মুখে বলল, অ্যাডাম গুলি খেয়েছে, তবে চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার বলেছে এক মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।

অ্যাডলার! মুখ থেকে রক্ত সরে গেল রোসার। স্ট্যানলিকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে স্টোরের ভেতরে ঢুকে গেল অ্যাডামকে দেখার জন্য।  

বিস্মিত চেহারায় ফ্রেড ম্যাকলিনের দিকে তাকাল স্ট্যানলি। আশ্চর্য! আমি রলিন্স হয়ে এসেছি। জুডাস অ্যাডলারই হুবার্ট জানার পরও আমাকে রোসা তখন বলেনি কেন? ১, জানত না তখন, বলল সাংবাদিক। তুমি শহর ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পরে নাস্তার টেবিলে জেনেছে। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্টেজ। ড্রাইভার কফি খেতে হোটেলে ঢোকায় রোসা, জিজ্ঞেস করে ফেরিসে সে দুজন হান্টারকে পৌঁছে দিয়েছে কিনা। ড্রাইভার বলে দেয়নি। কথায় কথায় জানায় ফেরিসে দুজন হান্টার সময় মত না পৌঁছনোয় খুব হতাশ হয়েছে অ্যাডলার নামের একজন গাইড। থেমে দম নিল ফ্রেড। ব্যাপারটা অ্যাডামকে জানানো দরকার মনে করেই ছুটে এসেছে মেয়েটা। চায়নি না জেনে হুবার্টের মুখোমুখি হয়ে মারাত্মক বিপদে জড়িয়ে পড়ুক অ্যাডাম।

তারপুলিনে পেঁচিয়ে বার্নে রাখা হয়েছে হুবার্ট আর তার সঙ্গীকে। ব্যাংকার দুজনও বাদ পড়েনি। বারে গিয়ে দেখো দুটো ব্ল্যাংকেটে চার লক্ষ ডলার আছে।

মাথা চাপড়াল সাংবাদিক। হাতে এরকম একটা স্টোরি, আর আমি পড়ে আছি টেলিগ্রাফ অফিস থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরে! চার লক্ষ ডলার দেখে চোখ জুড়াতে তাড়াহুড়ো করে বারে গিয়ে ঢুকল সে।

কিছুক্ষণ পর সাপার খেতে সবাইকে ডাকা হলো। টেবিলে বসে স্ট্যানলি লক্ষ করল জোডি আর রোসা আসেনি। অলিভা বলল ওরা, অ্যাডামকে একা রেখে আসতে রাজি হয়নি দেখে খাবার পৌঁছে দিয়েছে সে।

 খাওয়া শেষে ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে ঘুমাতে চলে গেল। হেনরিখ বিউয়েল আর ডাক্তার। রাতে সে এখানেই থাকবে। আজ সারাদিন সবার উপর দিয়ে কম ধকল যায়নি। একটু পরে স্টেজ ড্রাইভার, আর ফ্রেডও বুড়ো বিউয়েলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করল। ফিরে যায়নি হতাশ বার্ট আর্থার। আর সবার চেয়ে কোনও অংশে কম ক্লান্ত নয় স্ট্যানলি বা আর্থার। তবু একটা অস্থিরতা পেয়ে বসেছে ওদের। চোখে ঘুম নেই।

 স্টোরে পায়চারি করতে করতে ওরা দেখল বাসন ধুতে অলিভাকে সাহায্য করছে ওয়েন। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি বুকে আরও চেপে বসল। ওদের। শুনতে পেল ওয়েন নরম গলায় বলছে, অলিভা, তোমাকে ছেড়ে আজ চলে যেতে হয়েছিল বলে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী। মনে হচ্ছে আমার।

আর্থার আর স্ট্যানলি দেখল ওয়েনের দিকে তাকিয়ে হাসছে অলিভা। নির্ভরতার হাসি। যেন জানে আজই শেষ, আর কোনদিনও ওকে ছেড়ে যাবে না ওর পছন্দের মানুষটা।

নিঃশব্দে বিদায় নিয়ে চলে গেল বার্ট আর্থার, দরজা খুলে হেনরিখ বিউয়েলের ঘরে এক পা ঢুকে থমকে দাঁড়াল ডেপুটি। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে অ্যাডাম।স্ট্যানলির দিকে পেছন ফিরে বসে আছে রোসা আর জোডি। ওরা দুজন দেখতে পায়নি ওকে।

আমার জন্যই ওর এই অবস্থা, ফিসফিস করে বলল জোডি।

ভাই যে ভাইকে এত ভালবাসে আগে কখনও দেখিনি, বলল রোসা।

আমিও জানতাম না। সম্পত্তি বাড়াবার দিকে ওর এত খেয়াল দেখে ওকে সাধারণ এক স্বার্থপর লোক হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।

এখন তাহলে চিনলে?

পকেট থেকে অ্যাডামের লিখে দেয়া কাগজটা বের করল জোডি। কয়েকটানে ছিড়ে ফেলল কুচি কুচি করে।

কি করছ? প্রশ্ন করল রোসা।

ভাইয়ের কাছে অনেক পেয়েছি, বাপের সম্পত্তি দখল করার কোন দরকার নেই আমার। কোনদিন ওর কথার অবাধ্য আর হব না। ও যা দেবে তাতেই আমি খুশি।

চুপ করে অ্যাডামের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে রইল ওরা দুজন।

 নিঃশব্দে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে স্টোরের সামনের সিঁড়িতে এসে বসল স্ট্যানলি। একটা সিগারেট ধরাল। প্যাট্রিক হলের ওয়ালেট থেকে পাওয়া দুটো কাগজ বের করল পকেট থেকে। ম্যাচের কাঠি জ্বেলে, পুড়িয়ে ছাই করে দিল।

দূরে কয়োট ডাকছে। কিচেনে নিচু গলায় হাসল অলিভা আর ওয়েন। চারটা মৃতদেহ পড়ে আছে বার্নে। আকাশ থেকে খসে পড়ল একটা উল্কা। পৃথিবীতে নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে স্ট্যানলির। এখানে কাজ শেষ। কাল আবার রওনা হয়ে যাবে সে। শেরিফ লেম্যানের সাথে খুঁজে বের করবে আরেক খুনী–স্পাইক হাননাকে। স্টোরের দরজায় মাথা ঠেকিয়ে একদৃষ্টিতে রাতের তারাভরা আকাশে চোখ রাখল সে। ঠোঁটে ঝুলছে বিষণ্ণ একটুকরো হাসি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *