অদৃশ্য ঘাতক – ১

০১.

গত এক সপ্তাহ ধরে স্যাণ্ড ক্ৰীকের কাছে ফেরিস পোস্ট অফিসের সামনে অসময়ে রাউণ্ডআপ করছে বিলি বেঞ্চলি। তার বড় ছেলে অ্যাডামের ইচ্ছে সবকটা লঙহর্ন বেচে হেফার কিনবে। প্রতিবেশী র‍্যাঞ্চারদের আপাতত গরু বেচার কোনও ইচ্ছে নেই, প্রত্যেকটা র‍্যাঞ্চ তাদের বেশির ভাগ কাউহ্যাণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছে ওদের সাহায্য করার জন্য।

সব লঙহর্ন ঝেঁটিয়ে ওনায় পাঠাচ্ছি এবার, বিউয়েল স্টোরের সামনে ঘোড়া থামিয়ে স্টোরের দরজায় দাঁড়ানো অলিভা বিউয়েলের উদ্দেশে বলল অ্যাডাম। বড়জোর আঠারো হবে অলিভার বয়স। হালকা পাতলা। বাসায় বানানো একটা ছিটের, ম্যাক্সি পরেছে। পুরো দুই, হাজার ক্যাটল, হাসল অ্যাডাম। সিগারেট ধরাল সময় নিয়ে, তারপর জিজ্ঞেস করল, রলিন্স থেকে আমাদের বুক করা ট্রেনের খবর এসেছে?

হ্যাঁ, আজকের স্টেজে তুমিও গরুর সাথে ওমাহা পর্যন্ত যাবে, না?

চোখে ঈর্ষা নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল অলিভা। মনে মনে ভাবছে, ইস, শুধু ছেলেরাই কেন ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়!

মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম বেঞ্চলি। বাবা ছাড়া আমাদের র‍্যাঞ্চের সবাই, যাবে। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল সে, ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে ছুটতে শুরু করার আগে বলল, তোমার বাবাকে তৈরি থাকতে বোলো। রাউণ্ডআপ শেষ, বাবা সবাইকে তোমাদের এখানে ড্রিঙ্ক করার প্রস্তাব দিয়েছে, আসছে ওরা, আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই এখানে পৌঁছে যাবে।

অলিভা বিউয়েলদের দরজার ওপরে একটা মস্ত হলদে রঙা সাইনবোর্ড। বড় বড় লাল অক্ষরে তাতে লেখা: ফেরিস পোস্ট অফিস ওয়াইয়োমিঙ। ফেরিস কোনও শহর নয়, স্যাণ্ড ক্ৰীকের তীরের কয়েকজন র‍্যাঞ্চার বাঁচিয়ে রেখেছে ফেরিসকে। ক্রীকের ওপর দিকে দুমাইল দূরে ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চ, দুমাইল ভাটিতে গ্র্যাণ্ড র‍্যাঞ্চ। ওদুটো র‍্যাঞ্চেরও নির্দিষ্ট স্টোর আর গলা ভেজানোর জায়গা রয়েছে। তবু যেহেতু পোস্ট অফিস ফেরিসেধারে কাছের সবাই এখানে আসতে বাধ্য হয়।

ঘরে ঢুকে ওর ব্যস্ত বুড়ো বাপের সামনে দাঁড়াল অলিভা। ভদ্রলোক সর্বকাজের কাজী। স্যাও ক্রীকে অবশ্য সবাই প্রায় তাই। শহর থেকে অনেক দূরে বলে প্রত্যেককেই স্বাবলম্বী হতে হয়। হেনরিখ বিউয়েল। একই সাথে মার্চেন্ট, পোস্ট মাস্টার, স্টেজ এজেন্ট, হোটেলম্যান, র‍্যাঞ্চার আর ব্ল্যাকস্মিথ।

লম্বা একটা ঘরের মাঝখানে স্টোর। ডানদিকে পার্টিশন দিয়ে। আলাদা করা একটা ঘরে সে বার খুলেছে। বামদিকের পার্টিশনের ওধারে পাবলিক ডাইনিঙ রূম, মাঝ বরাবর একটা কাঠের মই বেয়ে। উঠে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় হোটেলে। হোটেল মানে ডাইনিঙ রূমের ওপরের ঘরটা। কয়েকটা চৌকি বিছানো আছে, ভাড়া দেয়া হয়। স্টোরের পেছনে দেয়ালে কাঠ দিয়ে কবুতরের খুপরির মত বানানো। আছে। সুইটওয়াটার থেকে শুরু করে ল্যারামি প্লেইনস পর্যন্ত ছড়ানো ছিটানো র‍্যাঞ্চলের সব চিঠিপত্র ওই গর্তগুলোর মধ্যে রাখা হয়। মিস্টার বেঞ্চলি তার নোকজনদের নিয়ে আসছে, বাবাকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে বলল অলিভা। মাথা ঝাঁকাল হেনরিখ বিউয়েল, বার রূমে গিয়ে ঢুকল। ওই ঘরে অলিভার ঢোকার অনুমতি নেই, নিজের ঘরে গিয়ে আধঘণ্টা ধরে সাজল সে। আজ অনেক লোক আসবে ওদের এখানে।

*

বিলি বেঞ্চলির পেছনে, পনেরো, জন রাইডার, ঘোড়া থেকে নামল। স্টোরের সামনে হিচর‍্যাকে ঘোড়া বেঁধে শক্ত গড়নের র‍্যাঞ্চারের পিছু নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকল সবাই। বিলি বেঞ্চলির চেহারা চৌকো; বড় ছেলে অ্যাডামের চেয়ে ছোট ছেলে জোডির সাথেই বেশি মিল। তীরের একটা পুরানো ক্ষত আছে র‍্যাঞ্চারের পায়ে, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে।

ক্রুরা সবাই স্টোরের ভেতর দিয়ে বাররূমে চলে এল। দুএকজন, ছাড়া সবার কোমরেই সিক্সগান ঝুলছে। শক্ত লোক সবাই, তবে রসবোধের অভাব নেই। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা অলিভাকে লক্ষ্য করে চোখ টিপল অনেকে বারে ঢোকার আগে। কি আউটফিটের জ্যাক অলিভার থুতনি নেড়ে দিয়ে বলল, যত দেখি তত সুন্দর মনে হয় তোমাকে। শুধু যদি বার্ট আর্থারের কোমরে সিক্সগান না ঝুলত এখনই চুমোয় চুমোয় তোমাকে ভরিয়ে দিতাম আমি।

কথাটা শুনতে পেয়ে স্টোর আর বারের ভেতর সবাই হেসে উঠল। ওরা জানে আধুনিক রোমিও বার্ট আর্থার কখনোই সিক্সগান ঝোলায় না। আর্থার ওদের হাসিতে যোগ দেয়নি। ওকে নিয়ে আরও হাসি ঠাট্টা হতে পারে বুঝতে পেরে ওর কোনও চিঠিপত্র এসেছে কিনা জানতে চাইল সে অলিভার কাছে। ওর লাল চেহারা বলে দিচ্ছে মেয়েটার প্রতি ওর দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা করা পছন্দ করে না সে।

এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট খুপরিটা হাতড়াল অলিভার একটা সীড ক্যাটালগ ছাড়া আর কিছু নেই, আর্থার। H মার্ক করা খুপরিটার ওপর চোখ পড়ল ওর। এখনও আছে চিঠিটা। সাত সপ্তাহ হলো কেউ ওটা নিতে আসেনি। আর্থারকে চিঠিটা দেখাল অলিভা। হিউ হুবার্টের নামে, মাইলস সিটি, মনটানা থেকে পাঠানো হয়েছে খামের ওপর লেখা আছে। আর্থার, এই লোককে চেনো তুমি?

জীবনে কোনদিন নামও শুনিনি, জবাব দিল আর্থার লজ্জিত চেহারায়, যেন না চেনাটা বিরাট ভুল হয়ে গেছে।

বার থেকে বেরিয়ে এসে জে বারের কোনও চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইল কিলরন হার্পার। একটা খুপরি থেকে বের করে তার হাতে তিনটে খাম ধরিয়ে দিল অলিভা, তারপর হিউ বার্টের চিঠিটা দেখাল। আমার পরিচিত কেউ না, বলল কিলরন।

বার ছেড়ে একে একে এঘরে এল সবাই নিজেদের চিঠিপত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। প্রত্যেককে পড়ে থাকা চিঠিটা দেখাল অলিভা, কেউ চিনল না প্রাপককে।

বোধহয় কোনও ভবঘুরে পাঞ্চারের কাছে লেখা, মত প্রকাশ করল স্পুকি র‍্যাঞ্চের এক রাইডার।

সবার শেষে মেইল সংগ্রহ করতে এল রিলি বেঞ্চলি, অলিভার কাছ থেকে চিঠিগুলো নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখল। হতাশার ছাপ দেখা গেল র‍্যাঞ্চারের চেহারায়, তার ছোট ছেলে জোডির কোনও চিঠি নেই, ওগুলোর মধ্যে।

 আজ থেকে দুবছর আগে র‍্যাঞ্চের কাজ ভাল লাগে না বলে পুবে চলে গেছে জোডি বেঞ্চলি। জানিয়েছে পারতপক্ষে আর কখনও ফিরে আসবে না। বাবার সাথে কোনও যোগাযোগও রাখেনি সে।

র‍্যাঞ্চার সরে যাওয়ার পর মাডি গ্যাপের মার্কো গাজিনি অলিভাকে বলল, বুড়ো বেঞ্চলি জোডির ব্যাপারটা সহজভাবে নেয়নি।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল অলিভা। এক মাতাল রেকর্ডিং ক্লার্কের , মুখ থেকে র‍্যাঞ্চারের উইলের কথা প্রকাশ হয়ে গেছে। বিলি বেঞ্চলি অসুস্থ অবস্থায় উইলটা যখন করেছিল তখন ঋণে ডুবে ছিল তার র‍্যাঞ্চ।

জোডিকে নগদ অর্থ আর অ্যাডামকে ক্যাটল দিতে উইলে নির্দেশ দিয়েছে সে। সে সময়ের হিসেবে ভাগাভাগিটা সমানই ছিল, কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। হাজার হাজার ডলার লাভ করেছে বুড়ো বেঞ্চলি গত দুবছরে, সমস্ত টাকা আরও ক্যাটল কেনার পেছনে ব্যয় করেছে। এক বাক্স .৪৫, লম্বা একজন আগন্তুক অলিভার চিন্তার জাল ছিড়ে দিল। লোকটা কিছুক্ষণ আগে এসেছে। ক্রুদের কেউ না। একটা কালো কোট পরেছে সে, প্যান্টটা হাফ বুটের মধ্যে গোঁজা। সিক্সগানটা উরুতে। নিচু করে বেঁধেছে। এখানে সবাই তাকে চেনে জোসেফ ওয়েন নামে। নিজের পরিচয় দেয় ক্যাটল বায়ার হিসেবে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ তাকে ক্যাটল কিনতে দেখেনি। সেটেলমেন্টগুলোর জুয়ার টেবিলেই। তাকে দেখা যায় বেশি।

স্টোরের দ্বিতীয় তাক থেকে গুলির বাক্স নিয়ে ওয়েনের দিকে বাড়িয়ে ধরল অলিভা, টাকা শুনে নিল। কারও সঙ্গে কোনও কথা হলো না ওয়েনের। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল বক্স বির ক্যাটল ড্রাইভ দেখার জন্য। একটু পরই ফাঁকা হয়ে গেল স্টোর, যার যার র‍্যাঞ্চের দিকে ঘোড়া ছোটাল সাহায্য করতে আসা কাউহ্যাণ্ডরা।

স্টোর গোছানোর সময় চিঠির খুপরিগুলোর দিকে তাকাল অলিভা। H লেখা গর্তে চিঠিটা নেই দেখে অবাক হলো সে। কে নিল? সবাইকে চিঠিটা দেখিয়েছে অলিভা, কেউ বলেনি সে চেনে প্রাপককে। সাতু। সপ্তাহ আগে মনট্যানার মাইলস সিটি থেকে আসা একটা চিঠি কেউ গোপনে সংগ্রহ করবে কেন? ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করল অলিভা, তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল অন্য কাজে।

০২.

বিলি বেঞ্চলির ক্যাটল যেদিন ওমাহায় পৌঁছুল সেদিনই ওয়াইয়োমিঙের। মেডিসিন বোতে অনেকক্ষণের জন্য থামল একটা ইউনিয়ন প্যাসিফিক প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ওটা আবার যখন রওয়ানা হলো দ্বিগুণ সতর্ক হয়ে উঠল। শেরিফ রস লেম্যান। গতমাসের ঘটনাটা ভুলতে পারেনি সে।

বগির সবাই লক্ষ করল বন্দীর হাত শেরিফ সীটের হাতলে হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে আটকে দিয়েছে। গম্ভীর চেহারায় বসে আছে লেম্যান। কোলের ওপর রাখা হ্যাটের তলা দিয়ে সিক্সগানের নল দেখা যাচ্ছে। পরবর্তী স্টেশন কার্বন। গতবার ওখানে যা ঘটেছে এবারও ঘটতে পারে।

বগির পেছনদিকের সীটে বসা এক তরুণী পাশের লোকটার দিকে তাকাল কৌতূহলী দৃষ্টিতে। ওরা কারা?

আমার মনেও একই প্রশ্ন জেগেছে, এই প্রথমবারের মত মুখ খুলল, শহুরে পোশাক পরা লোকটা। একটু অপেক্ষা করো, আমি ব্রেকম্যানকে জিজ্ঞেস করে জেনে আসি।

ডেনভারের জুয়াড়ী প্যাট্রিক হল সীট ছেড়ে উঠে ব্রেকম্যানকে খুঁজতে গেল। কিছুক্ষণ পর সমস্ত তথ্য জেনে ফিরে এল সে।

বন্দীর নাম এডমণ্ড হুপার, রলিন্সে খুনের দায়ে কোর্টে দাঁড়াবে।

রলিন্স? আপনমনে বলল যুবতী। আমিও তো ওখানে যাচ্ছি! কি। করেছে লোকটা?

ব্রেকম্যানের কাছ থেকে শোনা তথ্যগুলো যুবতীকে জানাল প্যাট্রিক হল। দুবছর আগে এই লোক আর তার তিন সঙ্গী ট্রেন ডাকাতি করার জন্য রেল লাইন উপড়ে ফেলেছিল। সময় মত ব্যাপারটা একজন সেকশন ফোরম্যানের চোখে পড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থামিয়ে শেরিফকে খবর দেয় লোকটা। দুবৃত্তদের তাড়া করে একটা উইলোর বনে পৌঁছায় পাসি।

সেখানে ওদের মধ্যে লড়াই হয়েছিল? নড়েচড়ে বসল মেয়েটা।

না। অ্যাম্বুশ করে আউট-লর দল, পাসির দুজন সদস্য মারা যায়। ঘোড়া কেড়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল দুবৃত্তরা। চারজনের মধ্যে দুজনকে চেনা যায়, একজন হচ্ছে এডমণ্ড হুপার অন্যজন বাড লরেন্স। কথা থামিয়ে মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে শুনছে কিনা খেয়াল করল প্যাট্রিক হল, তারপর বলে যেতে থাকল। এই গ্রীষ্মে খবর এল মনট্যানার মাইলস সিটিতে হুপার আর লরেন্সকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গুজব রটল কার্বনে হুপারকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। তাই গত মাসে শুধু লরেন্সকে নিয়ে শেরিফ এই ট্রেনে ফিরছিল।

লরেন্স তাহলে তখন রলিন্সের জেলে?

মাথা নাড়ল জুয়াড়ী। কার্বনে ওরা শেরিফের কাছ থেকে লরেন্সকে কেড়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে।

.

দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। জানালা দিয়ে বিস্তৃত প্রান্তর আর দূরের মেডিসিন বো মাউন্টিনের জঙ্গলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রোসা। সামনের স্টপেজ কার্বন, বগিতে ঢুকে অনুচ্চস্বরে জানিয়ে গেল একজন ব্রেকম্যান।

বন্দীর দিকে তাকিয়ে লোকটা কি ভাবছে বোঝার চেষ্টা করল রোসা। হুপার বোধহয় প্যান্ট নষ্ট করে ফেলেছে, বলল একজন যাত্রী।

তার পাশে বসা র‍্যাঞ্চার মাথা কঁকাল। কার্বন পেরনোর পরও লোকটা জীবিত থাকলে ওর ভাগ্য বলতে হবে। লরেন্সকে ওখানেই। ঝোলানো হয়েছে। পাসির মৃত সদস্য দুজন কার্বন শহরের লোক ছিল।

তোমার কি মনে হয় আবারও ওরা চেষ্টা করবে?

বোধহয় না, কুঁচকে বলল র‍্যাঞ্চার। ওরা জানে না শেরিফ এই ট্রেনে যাচ্ছে। খবর গোপন করার সবরকম চেষ্টা করেছে শেরিফ।

গম্ভীর চেহারায় রোসার দিকে তাকাল প্যাট্রিক হল। চলো তোমাকে অন্য কোচে বসিয়ে দিয়ে আসি। কার্বন পেরিয়ে যাওয়ার পর এখানে এসে বোসো আবার।

মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল রোসা। জানতে চাইল, কার্বনে না থেমেও তো চলে যেতে পারে ট্রেনটা?

না। কার্বন কোল টাউন, এঞ্জিনে কয়লা নিতে ওখানে থামতেই হবে।

লম্বা হুইসল দিয়ে চালক বুঝিয়ে দিল ট্রেন কার্বনে প্রবেশ করছে। গতি কমে আসায় ধীর লয়ে খটখট আওয়াজ করছে এখন ফিশপ্লেট। স্টেশনে থামার পর জানালা দিয়ে প্ল্যাটফর্ম আর রাস্তাটা দেখল রোসা। লোক চলাচল করছে রাস্তায়। পোশাক দেখে বোঝা যায় বেশিরভাগই মাইনার। কোমরে সিক্সগান ঝুলছে অল্প দুএকজনের।

মনে হচ্ছে এবার কিছুই ঘটবে না, কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে হতাশ কণ্ঠে বলল যাত্রীদের কে যেন।

র‍্যাঞ্চার আঙুল তুলে রোসার দিকের জানালা দেখাল। ডিপোর পাশে টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখেছ? লরেন্সকে ওটাতেই ঝোলানো। হয়েছিল।

 শেরিফ রস লেম্যানের চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ দূর হয়ে যেতে শুরু করেছে। হাতের উল্টোপিঠে তাকে কপালের ঘাম মুছতে দেখল রোসা। এঞ্জিনের দিক থেকে ধাতব শব্দ ভেসে আসছে। বোধহয় কয়লা তোলার কাজ শেষের পথে।

.

আক্রমণ হলো বগির দুদিক থেকেই। নিখুঁত সময়জ্ঞান। দুমাথার দরজা। দিয়ে যোলো জন সশস্ত্র লোক ঢুকে পড়ল হুড়মুড় করে। কাউকে চেনার উপায় নেই, মুখোশ পরে আছে। শেরিফকে ঘিরে দাঁড়াল তারা। ভয়ে। ককিয়ে উঠল এডমণ্ড হুপার, কর্ণপাত করল না লোকগুলো। একজন হাত বাড়িয়ে শেরিফের কোল থেকে সিক্সগানটা তুলে নিল। চাবিটা দাও, রস, বলে উঠল আরেকজন।

সবার কথা বলার ভঙ্গিই বন্ধুত্বপূর্ণ। বোঝা যায় শেরিফকে ওরা পছন্দ করে। চাবি নিয়ে বন্দীর হ্যাণ্ডকাফ খুলে ফেলা হলো। থামাও! ঈশ্বরের দোহাই, ওদের থামাও! হুপারের আর্তনাদ ফেঁপানিতে পরিণত হলো। বগি থেকে তাকে হেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যেতে এক মিনিটও লাগল না লোকগুলোর।

নিরস্ত্র, অসহায় শেরিফ অনুসরণ করল ওদের। যোলোজন মুখোশ পরা সশস্ত্র লোক হুপারকে টেনে নিয়ে ডিপোর প্ল্যাটফর্মের দিকে যাচ্ছে জানালা দিয়ে দেখল রোসা। শেরিফ আপ্রাণ চেষ্টা করছে উন্মত্ত, লোকগুলোকে বোঝাতে। কয়েকজন তাকে ঠেলে সরিয়ে দিল। টেলিগ্রাফ পোস্টের ক্রসআর্মের ওপর দিয়ে রশি গলিয়ে দেয়া হলো। বাড লরেন্সও এই খুঁটিতে ঝুলে মরেছে।

হুপারের গলায় ফাঁস পরানো হতেই প্যাট্রিক হল হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে দিল যাতে দৃশ্যটা রোসাকে দেখতে না হয়। দেখতে। না হলেও হুপারের কাকুতি মিনতি কানে এল ওর। কিছুক্ষণ পর লিঞ্চিঙ মবের নেতা কথা বলে উঠল। আমরা তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি, হুপার। আমাদের কথা শুনলে রলিন্সে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবে, তা না হলে এখানেই তোমাকে ঝুলিয়ে দেব। তোমরা চারজন ছিলে। তুমি আর লরেন্স ছাড়া বাকি দুজন কারা?

আতঙ্কিত হুপার বুঝতে না পারায় একই কথা আবারও পুনরাবৃত্তি করা হলো। আমি বলব! সব বলব…আগে গলা থেকে দড়ি সরাও, কেঁদে ফেলল হুপার।

তুমি সত্যি বলছ বোঝার আগ পর্যন্ত দড়ি দড়ির জায়গাতেই থাকবে! ধমকে উঠল একজন।

হুপারের বলা প্রত্যেকটা কথা বোসা মনোযোগ দিয়ে শুনল। কোর্টে দাড়ানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য হড়বড় করে কথা বলে চলেছে আউট ল।

আমরা চারজন ছিলাম। আমি, লরেন্স, গ্যানন উইলিস আর…

কোন্ গ্যানন উইলিস? কথা কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল একজন মুখোশধারী। যে লোকটা শাইয়ানে গানফাইটে মারা গেছে?

হ্যাঁ,ফোপানোর ফাঁকে ফাঁকে বলল হুপার, সেই আমাকে খারাপ পথে টেনে এনেছে।

আগে তুমি খুব ভাল মানুষ ছিলে, না? প্রাণে বাঁচতে চাইলে ফালতু কথা বন্ধ করে চার নম্বর খুনীর নাম জানাও, সাবধান করল একজন। দুইবার হুইসল বাজিয়ে ড্রাইভার বুঝিয়ে দিল ট্রেন ছাড়তে দেরি নেই।

অন্যজন হিউ হুবার্ট। আমি সত্যি বলছি, হুবার্ট এখন ওয়াইয়োমিঙের ফেরিসে। ট্রেনে ওঠার জন্য মরিয়া হুপার কবুল করল।

অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল ভীড়ের মধ্যে। ফেরিস? ফেরিস তো এই কাউন্টিতেই! উত্তরে ঘোড়া ছোটালে রলিন্স থেকে মাত্র একদিনের পথ

মিথ্যে বলে লাভ নেই, হুপার, ঠাণ্ডা স্বরে বলল লিঞ্চিঙ মবের নেতা। গত এক বছর ধরে তুমি মনটানায় ছিলে, হিউ হুবার্টের খবর। তুমি জানো কোত্থেকে?

বাড লরেন্স বলেছে, বিশ্বাস করো আমি সত্যি কথা বলছি। ধরা পড়ার আগে হুবার্টের কাছে টাকা চেয়ে ফেরিসে চিঠি লিখেছিল সে।

ব্যাটা মিথ্যে কথা বলছে।

ঝুলিয়ে দাও শালাকে!

ভীড়ের মধ্যে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত প্রকাশ করল। কেউ নিশ্চিত লোকটা মিথ্যে কথা বলছে। সুযোগ নিল শেরিফ রস লেম্যান। উঁচু গলায় বলল, হুপার মিথ্যা বলছে কিনা সহজেই বোঝা যাবে। ফিরে। গিয়ে ফেরিসে খোঁজ নিলেই আমি জানতে পারব হিউ হুবার্টের নামে। ওখানে কোনও চিঠি গিয়েছিল কিনা। আমি কথা দিচ্ছি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তোমরাও কিন্তু কথা দিয়েছিলে অচেনা খুনীদের নাম বললে হুপারকে তোমরা আমার হাতে ছেড়ে দেবে।

আবার দুইবার হুইসল বাজাল অধৈর্য ড্রাইভার। রোসা শুনতে পেল নিচু গলায় লোকগুলো আলোচনা করছে। কিছুক্ষণ পর ওদের নেতা উঁচু গলায় বলল, আমরা জানি বিচারে এমনিতেই ফাঁসি হবে হুপারের। বেশ, শেরিফ, ওকে রলিন্সে নিয়ে যাও তুমি।

এক মিনিট পর বন্দীকে নিয়ে বগিতে উঠল শেরিফ রস লেম্যান, সীটের হাতলে আবার আটকে দিল হুপারের হাত। ট্রেন চলতে শুরু করায় ধাতব শব্দ উঠল ফিশপ্লেটের।

আমি প্যাট্রিক হল, ম্যাম।

পাশে বসা লোকটার গলার আওয়াজ শুনে চোখ তুলে তাকাল বোসা। চওড়া কাঁধ লোকটার। পরনে শহরে তৈরি দামী কোট। ক্লিন। শেভড চেহারাটা সুদর্শন। কোঁকড়ানো কালো চুল। দেখতে সুন্দর, তবু কেন যেন সহজ হতে পারল না রোসা। রুক্ষ একটা ভাব আছে লোকটার মধ্যে। চোখ জোড়া মায়া দয়াহীন। আমি রোসা হিগিনস, মিস্টার হল, বলল সে। রলিন্সে যাচ্ছি। তুমি?

রলিন্স।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল রোসা, কিন্তু আর একটা কথাও বলল না প্যাট্রিক হল। জানালা খুলে দেয়ার জন্য ঝুঁকল লোকটা। তার ফাঁক হয়ে যাওয়া কোটের ভেতর হোলস্টারে রাখা অস্ত্রটা চোখে পড়ল রোসার। মুখ ফিরিয়ে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল সে।

০৩.

নর্থ প্ল্যাট রিভার পার হওয়ার পর কণ্ডাক্টর এল বগিতে। যাত্রীদের উদ্দেশে বলল, আমরা রলিন্সে থামার পর শেরিফ তার বন্দী সহ নেমে যাওয়ার আগে সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।

 একজন যাত্রী জানতে চাইল, হুপারকে গুলি করতে গিয়ে কেউ আমাদের খুন করে বসবে সেই ভয় পাচ্ছ?

 ফ্যাকাসে চেহারায় হাসল কণ্ডাক্টর। না। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি। থাকবে প্ল্যাটফর্মে।

তাহলে আমাদের চিন্তার কিছু নেই। মাথা ঝাঁকাল র‍্যাঞ্চার।

তারপরও আমরা ঝুঁকি নেব না। এবার স্ট্যানলিকে দুদিকে নজর রাখতে হবে, বলল কণ্ডাক্টর। ল্যারামি জেল থেকে পাঁচজন হাজতী পালিয়েছে। পশ্চিমে আসছে ওরা।

তো? জিজ্ঞেস করল র‍্যাঞ্চার।

একজনের চুরি করা ঘোড়াটা গতকাল পাওয়া গেছে স্যাডল গিয়ারসহ। সম্ভবত রলিন্সে লুকিয়ে আছে লোকটা, চেষ্টা করছে নতুন ঘোড়া যোগাড় করার। অথবা হয়তো ভাবছে এই ট্রেনে উঠে পড়বে। লোকটা সে চেষ্টা করলে ডেপুটি তাকে গুলি করবে।

কণ্ডাক্টর চলে যাওয়ার পর প্যাট্রিক হল তাকাল রোসার দিকে।–চিন্তিত চেহারায় হাসল রোসা, জানতে চাইল, এদিকে সবসময়েই এরকম গোলমাল চলে?

না। কখনও কখনও পুরো একসপ্তাহ পার হয়ে যায় একজন লোকও গুলি খায় না বা ফাঁসিতে ঝোলে না।

ব্রেকম্যানের চিৎকার শোনা গেল। সামনের স্টপেজ রলিন্স। আমরা। না বলা পর্যন্ত সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।

শহরের মধ্যে গতি কমিয়ে প্রবেশ করল ট্রেন, থামল লম্বা একটা প্ল্যাটফর্মের পাশে। বড় রাস্তা দেখা যায় এখান থেকে। এক সারিতে কয়েকটা সেলুন আর একটা হোটেল রয়েছে রাস্তার উল্টোপাশে। একজন মহিলাকেও দেখা গেল না কোথাও, অথচ অন্তত শখানেক লোক দাঁড়িয়ে আছে উঁচু বোর্ডওয়াকে।

 বিশাল প্ল্যাটফর্মে লম্বা একটা লোক ছাড়া আর কেউ নেই। গ্রীক দেবতার মত চেহারা লোকটার। সোনালী চুল। বুকে ঝুলছে একটা স্টার। কোমরের হোলস্টার উরুর সাথে বাধা। ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নীল চোখের দৃষ্টিতে চারপাশ জরিপ করছে সে। অস্বাভাবিক। কোনকিছু দেখলেই মোকাবিলা করবে।

বোর্ডওয়াকে দাঁড়ানো একটা লোকও নড়ল না। বগির ভেতর শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাল রোসা। শেরিফ লেম্যান তার বন্দীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে নেমে ডেপুটির সাথে কথা বলল শেরিফ। রোসা শুনতে পেল ডেপুটি স্ট্যানলি বলছে, তোমার সাথে জেল পর্যন্ত যেতে পারলে ভাল হত, কিন্তু ট্রেন ছাড়ার আগে এখান থেকে আমার নড়া উচিত হবে না।

শেরিফ সমঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, কণ্ডাক্টরের কাছে শুনেছি। তুমি আসার আগ পর্যন্ত ডিপোতেই অপেক্ষা করব।

কার্বনে কোনও ঝামেলা হয়েছিল?

হ্যাঁ, প্রায় সেই আগের বারের মতই। তবে এবার কিছু নতুন তথ্য আদায় করেই হুপারকে ছেড়ে দিয়েছে ওরা। কাল তদন্ত করতে ফেরিসে যেতে হবে তোমাকে।

ফেরিস? ওখানে কেন? চারপাশে নজর রাখার ফাঁকে জানতে চাইল স্ট্যানলি। নিচু হয়ে ট্রেনের তলায় কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখল।

ফাঁসির দড়ি গলায় এঁটে বসবে এই ভয়ে অচেনা খুনী দুটোর নাম বলে দিয়েছে হুপার। তাদের একজন হচ্ছে হিউ হুবার্ট। লোকটা বোধহয়, ফেরিসে লুকিয়ে আছে। ওই জায়গার পোস্ট অফিসে তার নামে চিঠি এসেছে। পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে যদি দেখ সত্যি লোকটার চিঠি, এসেছে ওখানে, তাহলে তাকে ধরে আনতে হবে তোমার।

বন্দীকে নিয়ে ডিপোর ওয়েটিঙ রূমের দিকে চলে গেল শেরিফ। প্ল্যাটফর্মে আবার একা হয়ে গেল বিশালদেহী স্ট্যানলি। চুপ করে বোর্ডওয়াকে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে শখানেক লোক, কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায়। ট্রেনের এঞ্জিনটা অলস দানবের মত নিথর পড়ে আছে। মাঝে মাঝে হিস হিস শব্দে চিমনি দিয়ে দম নিচ্ছে। দীর্ঘ একটা মিনিট গড়িয়ে গেল।

বগিগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ব্রেকম্যান চেঁচাল। এখন নামতে পারে সবাই। রোসার জানালার সামনে এসে থামল সে। তোমাকে নিতে কেউ আসছে, মিস?

মনে হয় না, তবে ম্যাক্সওয়েন হাউসে আমার জন্য রূম বুক করা থাকবে।

তাহলে ম্যাক্সওয়েলের পোর্টার আসবে। বগিতে উঠে এসে রোসার সুটকেস তুলে নিল ব্রেকম্যান। চলো, লোকটাকে চিনিয়ে দিই।

ব্রেকম্যানকে অনুসরণ করে প্ল্যাটফর্মে নামল রোসা। জানালা দিয়ে প্যাট্রিক হল দেখল একজন হোটেল পোর্টার মেয়েটার লাগেজ বুঝে নিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে নামার পর লক্ষ করল রাস্তার বাঁকে হারিয়ে গেছে রোসা।

যাত্রীরা সবাই নামায় ডিপোর পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এল মুহূর্তে। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ব্রেকম্যানের হাতে নির্দেশ লেখা একটা কাগজ ধরিয়ে দিল এজেন্ট। ব্যাগেজ কারের দরজা খুলে নেমে এল, ব্যাগেজম্যান, স্থূপীকৃত মালপত্র ট্রলিতে তুলে ঠেলতে শুরু করল। স্থানীয় লোক, প্রত্যেকদিনের মেইল পোস্ট অফিসে পৌঁছে দেয়াও এরই দায়িত্ব।

প্ল্যাটফর্মে শুধু নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ল না ডেপুটি স্ট্যানলি। এখনও ট্রেনে উঠে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পলাতক খুনীর। ট্রেন ছাড়তে বেশি দেরি নেই। মালপত্রের ওঠানামা শেষ হলেই রওনা। দেবে।

কিছু জরুরী তথ্য জানতে ডিপোতে ঢুকল প্যাট্রিক হল। ওয়েটিঙ, রূমের স্টোভের পাশে বন্দীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেরিফ। ডেপুটির জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের পাশ কাটিয়ে টিকেট কাউন্টারে এসে দাঁড়াল হল। চৌকো ফোকর দিয়ে একজন টেলিগ্রাফারকে দেখে। জিজ্ঞেস করল, বিলি বেঞ্চলির র‍্যাঞ্চটা কোথায় বলতে পারো?

তথ্যের অভাব নেই অপারেটরের, কথা শুরু করার পর থামতে আর চায় না। বিলি বেঞ্চলি তো? বক্স বির মালিক। এখান থেকে উত্তর দিকে , যেতে হবে। পঁয়তাল্লিশ মাইল গেলে তবেই স্যাণ্ড ক্রীকের তীরে তার র‍্যাঞ্চ। সপ্তাহে দুবার ওখানে স্টেজ যায় চিঠি নিয়ে। কিন্তু আগামী দুদিন যাবে না, যেতে চাইলে তোমাকে ঘোড়ায় করে যেতে হবে।

ধন্যবাদ, হাসল প্যাট্রিক হল। সকালে স্টেবল থেকে স্যাডল হর্স ভাড়া করে রওয়ানা হয়ে যাব।

ডেনভারের জুয়াড়ী ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এই সময় বুদ্ধিটা খেলে গেল অপারেটরের মাথায়। এক মিনিট শোনো, মিস্টার! কাল যদি তুমি বক্স বিতে যাও তাহলে ছোট্ট একটা কাজ করে দেবে?জবাবের অপেক্ষা করল না সে, ফোকর দিয়ে একটা খাম বের করে ধরে বলল, আজকে ওমাহা থেকে এই টেলিগ্রামটা এসেছে। তুমি পৌঁছে দিলে তাড়াতাড়ি পাবে র‍্যাঞ্চার।

বেশ, কাঁধ ঝাঁকিয়ে খামটা কোটের পকেটে পুরল জুয়াড়ী।

গোপন কথা না, গরু বেচে কত পাওয়া গেছে এই খবর সবাই জানে, গোপন তথ্য ফাঁস করে আমি দায়িত্বে অবহেলা করছি মনে কোরো না,কৈফিয়ত দিল টেলিগ্রাফার।

ডিপো থেকে বেরিয়ে এল প্যাট্রিক হল, হাঁটতে শুরু করল বোর্ডওয়াকে উঠে।

নতুন যাত্রীরা সবাই বগিতে ঢুকে বসে পড়েছে যে যার জায়গায়। ট্রেন নড়ে উঠল হুইসল দিয়ে। প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আছে ডেপুটি স্ট্যানলি, ব্যাগেজম্যান ট্রলি ঠেলে তার দিকে এগুলো। এই মুহূর্তে ওরা দুজন ছাড়া আশেপাশে কেউ নেই।

ট্রেনের ধাতব চাকাগুলো ধীরে ধীরে ঘুরতে শুরু করেছে। বলা যায়, পলাতক আসামী হয়তো এখনও ট্রেনে উঠে সরে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। শেষ বগিটাও প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল, গতি বেড়ে গেল। ট্রেনের, এখন আর কেউ উঠতে পারবে না।

ট্রলি ঠেলে ডেপুটির পাশে পৌঁছুল ব্যাগেজম্যান, পুবে ব্যাগেজ শেড়ের দিকে এগুলো। লোকটার উপর চোখ পড়তে দুটো ব্যাপার লক্ষ করল ডেপুটি। বুড়ো ব্যাগেজম্যানকে ভীত দেখাচ্ছে। লোকটার বাঁ গালে রক্ত জমে নীল হয়ে আছে। তাকে থামিয়ে ডেপুটি জিজ্ঞেস করল, কে মেরেছে, স্টিভ?

কেউ না। পড়ে গিয়ে লেগেছে।

লোকটার কাঁপা কাঁপা গলার স্বরে স্পষ্ট আতঙ্ক। সন্দেহ হলো স্ট্যানলির। তোমার ছেলে কোথায়, স্টিভ? আজ স্টেশনে আসেনি তোমাকে সাহায্য করতে, কোথায় সে?

অসুস্থ, চকিতে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো।

উঁহু, একটু আগেই ওকে রাস্তায় ডাক্তারের জুতো পালিশ করতে দেখেছি। মিথ্যে বলছ কেন? ব্যাগেজম্যানের হাত আঁকড়ে ধরল স্ট্যানলি। 

আবার ভীত চোখে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো। ফিসফিস করে বলল, ওর ক্ষতি হয়ে যাবে!

 হতে দেব না, তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছে।

ট্রেন আসার আগে লুকিয়ে শেডে ঢুকে পড়েছে এক লোক। ভেবেছিল ট্রেনে উঠে পালিয়ে যেতে পারবে।

চোখ সরু হয়ে গেল ডেপুটির। ওখানেই তার সঙ্গে তোমাদের দেখা হয়েছে?

হ্যাঁ, আমাকে ঘুসি মেরেছে লোকটা, গালে হাত বোলাল বুড়ো। তোমাকে এখানে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে সে। আমার ছেলের বুকে পিস্তল ধরে আছে। আমাকে বলেছে যাতে তার জন্য একটা ঘোড়া যোগাড় করে দিই।

সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করল না ডেপুটি, ব্যাগেজম্যানের ক্যাপটা মাথায় পরল বুড়োর কাছ থেকে নিয়ে। এখানেই দাঁড়াও, স্টিভ, তোমার বদলে ট্রলি নিয়ে আমি শেডে ঢুকব।

একটু কুঁজো হয়ে শেডের দিকে ট্রলি ঠেলতে শুরু করল স্ট্যানলি। স্তূপীকৃত ব্যাগেজের পেছন থেকে শুধু ক্যাপটা বেরিয়ে আছে। শেডের দরজা দিয়ে সে ট্রলি নিয়ে ঢুকলে খুনীর স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে ঘোড়ার খবর নিয়ে এসেছে বুড়ো ব্যাগেজম্যান। যখন সে বুঝবে, লাগেজের পেছনে কে, ততক্ষণে বেশি দেরি হয়ে যাবে সম্ভবত।

শেডের ভেতরে ঢুকে গেল ডেপুটি। আধমিনিট পর প্রায় একই সঙ্গে গর্জে উঠল দুটো সিক্সগান। বিশ সেকেণ্ড পর শেড থেকে বেরিয়ে এল। স্ট্যানলি। ডানহাতে সিক্সগান, বাঁ হাতে ধরে আছে আতঙ্কিত একটা বাচ্চা ছেলেকে।

 লেফটি ইক, প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর এসে ডিপোর দরজায় দাঁড়ানো শেরিফের উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।

রলিন্সের সবাই লেফটি ইকলসের নাম শুনেছে। পলাতক আসামীদের মধ্যে এই লোক ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনী। ল্যারামির জেল ভেঙে বেরিয়ে আসার পর ওয়াইয়োমিঙের কোনায় কোনায় উচ্চারিত হয়েছে এই লোকের নাম।

স্টেশন মাস্টার কোত্থেকে যেন ছুটে এল হন্তদন্ত হয়ে। ডাক্তার ডাকব, স্ট্যানলি?

গম্ভীর চেহারায় মাথা নাড়ল ডেপুটি। দরকার নেই, করোনারকে খবর দাও।

০৪.

পরদিন সকালে প্যাট্রিক হল চমৎকার একটা মেয়ার ভাড়া করল স্টেবল থেকে। তৈরি হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটল স্যাণ্ড ক্রীক লক্ষ্য করে। ফেরিস আর সেমিনো মাউন্টিনের মাঝখানের প্রেইরি তাকে পথ দেখাল। আরেকবার চলার পথেই টেলিগ্রামটা পড়ল সে। টেলিগ্রাফারকে গোপনীয়তা ভঙ্গের দোষ দেয়া যায় না। আজকের কাগজেই নিশ্চয়। খবরটা বেরিয়েছে।

ওমাহা। অগাস্ট ১০।

বিলি বেঞ্চলি

ফেরিস ভায়া রলিন্স ওয়াইয়োমিঙ

তোমার ক্যাটল ঠিকমত পৌঁছেছে স্টপ ছাপান্ন হাজার চারশো ডলারে বিক্রি হয়েছে স্টপ কথামত পুরো টাকার হেফার কেনা হবে স্টপ চারদিনের মধ্যে ডাকোটা থেকে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে।

 হেফটন লাইভ স্টক কমিশন কোং।

আরেকবার মাথা ঝাঁকাল প্যাট্রিক হল খামটা পকেটে রেখে। এতগুলো ক্যাটল বিক্রির খবর গোপন থাকে না। মনে মনে ভাবল ডেনভারে সে মিথ্যে শোনেনি, টাকা আছে র‍্যাঞ্চারের।

তিনঘণ্টা একটানা ঘোড়া ছুটিয়ে বেল প্রিঙসে পৌঁছাল প্যাট্রিক হল। রাস্তা এখানে দুভাগ হয়ে গেছে। ডান দিকে বাঁক নিয়ে উত্তর-পুবে বাজার্ড গ্যাপ আর ফেরিসে গেছে একটা রাস্তা। অন্যটা বামে, উত্তর পশ্চিমে রঙ্গিস আর ল্যানডারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে। বেল ঙিসের স্টেজ স্টেশনে ছোট্ট রেস্টুরেন্টে এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য থামল সে।

কিছুক্ষণ পর আবার রওয়ানা দিল। রলিন্স থেকে আসা একজন রাইডারকে দেখতে পেল সে। কাছে আসতে চিনে ফেলল। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি!

মনিঙ, স্ট্রেঞ্জার, ঘোড়া দুটো পাশাপাশি চলে আসার পর বলল ডেপুটি।

হাঁটার গতিতে একসাথে এগুলো ওরা। প্যাট্রিক হল অস্ত্র ঝোলায়নি। কিন্তু আজ ডেপুটির কোমরে দুটো হোলস্টার, স্যাডলে একটা কারবাইন। একটা সিগারেট রোল করে ঠোঁটে ঝোলাল সে, তামাক আর কাগজ বাড়িয়ে ধরল হলের দিকে। জানতে চাইল, গতকাল ট্রেন থেকে তোমাকে নামতে দেখেছিলাম না?

হ্যাঁ, গতকালের গাড়িতেই দেখেছ। ডেনভার থেকে এসেছি, আমি প্যাট্রিক হল, হ্যাণ্ডশেক করল সে ডেপুটির সাথে। বিলি বেঞ্চলির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

কেন সে র‍্যাঞ্চারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে প্রশ্ন করতে পারে, ডেপুটি। জবাব তৈরি রাখল হল। কিন্তু পশ্চিমের নিয়ম মেনে ব্যক্তিগত ব্যাপারে আগ্রহ দেখাল না স্ট্যানলি।

বিকেলে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছাল ওরা। রলিন্সের সবচেয়ে বড় সেলুনটাও ডেভিড মুরের, র‍্যাঞ্চে থাকারই সময় পায় না সে। আজও মুর রলিন্সে, তবে তার নিঃসঙ্গ কুক দুই রাইডারের খাতির যত্নে ত্রুটি রাখল না।

বুড়ো কুক টেবিলে খাবার দেয়ার পর প্যাট্রিক হলকে ব্যক্তিগত প্রশ্নটা করেই ফেলল কিছুক্ষণ উসখুস করে। বিলি বেঞ্চলির ওখানে কেন যাচ্ছ, মিস্টার? মাইনের ব্যাপারে হলে গিয়ে লাভ নেই, মাইন বেচে দিয়েছে সে। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ব্যবসার জন্য গিয়েও লাভ, নেই, সব ক্যাটল বেচে দিয়েছে র‍্যাঞ্চার।

তৈরি জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমি জোডির ঠিকানা জানতে এসেছি। আসলে সে ভালমতই জানে জোডি কোথায় আছে, তবে না জানার ভান করলে র‍্যাঞ্চারের সাথে দেখা করার একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

আমার মনে হয় না র‍্যাঞ্চার জানে তার ছোট ছেলে কোথায়, বলল কুক। দুবছর আগে জেদ করে চলে গেছে জোডি, কখনও শুনিনি বাবাকে কোনও চিঠি দিয়েছে সে।

ওর একটা ভাই আছে, তাই না?

হ্যাঁ, ওই দুই ছেলেকে নিয়েই বিলি বেঞ্চলির সংসার। জোডি চলে যাবার পর অ্যাডাম ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ নেই তার। অ্যাডাম হয়েছে। ঠিক ওর বাবার মত। দুজনে খেটে দাঁড় করিয়েছে বিশাল র‍্যাঞ্চটা। ওর বাবা মারা গেলে অ্যাডামই হবে সবকিছুর মালিক।

জোডিকে ত্যাজ্যপুত্র করা হয়েছে? অতি কৌতূহল প্রকাশ না করে অলস গলায় জিজ্ঞেস করল প্যাট্রিক হল।

ব্যাপারটা আসলে অন্য জায়গায়। ক্যাটল একটাও পাবে না জোডি, মারফতি হাসি হেসে ওদের দুজনের দিকে তাকাল বুড়ো কুক। র‍্যাঞ্চার–উইলে সব গরু অ্যাডামকে আর টাকাগুলো জোডিকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মজার কথা হলো আজকাল সব টাকা বিলি বেঞ্চলি ক্যাটলে খাটায়।

পরচর্চায় বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল স্ট্যানলি। রওয়ানা হয়ে যাবো। আমার সাথে আসবে, প্যাট্রিক?

ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে এগুলো ওরা দুজন। মাঝের জমিতে ছোট একটা র‍্যাঞ্চ আছে। ওখানে পৌঁছে–কুয়ার পাড়ে নামল ডেপুটি, গাধাকে পানি দিতে ব্যস্ত র‍্যাঞ্চারের কাছে জানতে চাইল হিউ হুবার্ট নামের কাউকে সে চেনে কিনা।

চিন্তিত চেহারায় বাদামী গোঁফে তা দিল র‍্যাঞ্চার। চিনি না, কিন্তু মনে পড়ছে নামটা। ও, হ্যাঁ, এই লোকের নামে ফেরিস পোস্ট অফিসে একটা চিঠি এসেছিল। গত সপ্তাহের এই দিনে কে যেন চুরি করেছে চিঠিটা।

কে?

জানা যায়নি।

প্যাট্রিক হলের দিকে তাকাল ডেপুটি। তারমানে হুপার মিথ্যে বলেনি।

র‍্যাঞ্চারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্যাও ক্রীকের দিকে এগুলো ওরা। দুজন। ক্রীকের সাথে উত্তর-পুবে মাইল বারো এগিয়ে নর্থ প্ল্যাট নদীতে শেষ হয়েছে উপত্যকা। প্রতি দুই মাইল পর পর তিনটা র‍্যাঞ্চ চোখে পড়ল প্যাট্রিক হলের।

একটা ওয়াগন ট্রেইল বামে চলে গেছে। ওখানটায় ঘোড়া থামাল ডেপুটি। হাত উঠিয়ে রাস্তাটা দেখাল। এ-পথে গেলেই বক্স বিতে পৌঁছে যাবে।

ডেপুটি চলে যাওয়ার পর স্টেজ রোড ধরে বক্স বির দিকে এগুলো জুয়াড়ী। ক্রীক থেকে সরে এসেছে রাস্তাটা। কিছুক্ষণ পর একটা গেটের। সামনে থামল তার মেয়ারটা। গেট পোস্টের ওপর টাঙানো একটা বোর্ডে বড় করে লেখা আছে বক্স বি। মস্ত আঙিনার ওপাশে রুক্ষ চেহারার কাঠের র‍্যাঞ্চহাউস। বার্ন, করাল সবই আছে, তবে প্যাট্রিক হল খেয়াল করল কোনও বাগান নেই। র‍্যাঞ্চটায় মেয়েলি হাতের স্পর্শ পড়েনি বোঝা যায়।

গেট পেরিয়ে এগুনোর সময় র‍্যাঞ্চ সম্বন্ধে জোডি কি বলেছিল মনে পড়ল তার। হোমস্টেড ছাড়া আর কোনও জমি ওদের নিজস্ব না। ওয়াইয়োমিঙের অন্যান্য বড় র‍্যাঞ্চের মতই ফ্রী রেঞ্জ ব্যবহার করে বক্স বি। লক্ষ লক্ষ একর সরকারী জমির স্বঘোষিত মালিক ওরা। জমি কিনে এবং ট্যাক্স দিয়ে টাকা নষ্ট করতে রাজি নয় বুড়ো বেঞ্চলি।

তারমানে বক্স বি র‍্যাঞ্চের নিজস্ব জমি বলতে, প্রায় কিছুই নেই! ক্যাটল কেনার পেছনে বিশাল অঙ্কের টাকা ঢেলেছে র‍্যাঞ্চার। সে মারা গেলে সব ক্যাটল বড় ছেলে অ্যাডাম পাবে, ব্যাংকে সামান্য যা কিছু টাকা আছে সেটা পাবে জোডি।

 গত এক ঘণ্টা ধরে একটা কথা ভাবছে প্যাট্রিক হল। টেলিগ্রামটা আরেকবার পড়ে পকেটে রেখে দিল সে। চোদ্দ তারিখে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে। র‍্যাঞ্চার চোদ্দ তারিখের আগে মারা গেলে গরু বেচার সমস্ত নগদ টাকা চলে যাবে জোডির হাতে!

হিচ র‍্যাকে ঘোড়া বেঁধে র‍্যাঞ্চহাউসের দরজায় নক করল প্যাট্রিক হল। কেউ জবাব দিল না। বাড়ির পেছনে কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে হাজির হলো সে। বয়স্ক, শক্ত-পোক্ত একজন লোক কুড়াল দিয়ে রান্নার কাঠ কাটছে। আগে না দেখলেও বুঝতে পারল এই লোকই বিলি বেঞ্চলি।

আগন্তুককে দেখে একটু খুঁড়িয়ে হেঁটে সামনে এসে দাঁড়াল র‍্যাঞ্চার। হাওডি?

আমি ডেনভার থেকে জোডি বেঞ্চলির ব্যাপারে এসেছি। প্যাট্রিক হল। হাত বাড়িয়ে দিল জুয়াড়ী।

উজ্জ্বল হয়ে উঠল র‍্যাঞ্চারের চেহারা, হাতটা জোরে কঁকিয়ে ছেড়ে দিল। তুমি জোডির বন্ধু? জোডি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছে, তাই না?

আমি ওর কাছে টাকা পাই সেজন্য ওকে খুঁজছি।

মুহূর্তে বিলি বেঞ্চলির চেহারায় হতাশা কালো ছায়া ফেলল। গেছে। দুবছর হলো, একটা চিঠিও দেয়নি জোডি। কত টাকা নিয়েছে ও তোমার কাছ থেকে?

ওয়ালেট থেকে একটা প্রমিসারি নোট বের করে র‍্যাঞ্চারের চোখের সামনে ধরল প্যাট্রিক হল। এক মাসের পুরানো নোট, টাকা পরিশোধ করতে হবে নব্বই দিনের মধ্যে। বাইশ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে নব্বই দিনের মধ্যে শোধ করবে লিখে সই করেছে জোডি বেঞ্চলি।

জোডিরই সই, তিক্ত চেহারায় মাথা ঝাঁকাল র‍্যাঞ্চার। চোখ তুলে বলল, জানতাম জোডির খরচের হাত লম্বা, কিন্তু এতখানি ভাবতেও পারিনি। কি কিনেছে সে, এক স্টেবল ভরা রেসের ঘোড়া?

কার্ড গেম, বলল প্যাট্রিক হল। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অ্যাকাউন্টে টাকা নেই তবু চেক লিখে খেলা চালিয়ে গেছে সে জেতার আশায়।

তুমি ছিলে ওই খেলায়?

হ্যাঁ। চেক বইয়ের পাতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে স্বীকার করেছে ওই চেকগুলোর এক কানাকড়িও মূল্য নেই। এমনকি ওই ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টও ছিল না কোনও কালে। সে আমাকে বাইশ হাজার ডলারের প্রমিসারি নোট লিখে দেয়, আমিও তাকে সমান অঙ্কের জাল চেক ফেরত দেই। চেকগুলো ছিড়ে ফেলে সে। এক সপ্তাহ পর গায়েব হয়ে

যায়। ভাবলাম বোধহয় বাড়িতে পালিয়ে আসবে, তাই খোঁজ নিতে এসেছি।

আসেনি।

নোটটা ওয়ালেটে রেখে দিল প্যাট্রিক হল। তোমার কথাই সত্যি _ বলে মেনে নিচ্ছি। দুঃখিত, তোমাকে বিরক্ত করলাম, ঘুরে দাঁড়াল সে।

দাঁড়াও! এক পা আগে বাড়ল বিলি বেঞ্চলি, এ-ব্যাপারে কি করবে তুমি?

ওকে খুঁজে বের করব, শীতল হেসে র‍্যাঞ্চারের মুখোমুখি দাঁড়াল, জুয়াড়ী। নব্বই দিনের সময় সীমা পেরিয়ে গেলে ওকে কোর্টে দাঁড় করাব।

জুয়ায় হারজিতের ব্যাপারে কোর্ট কেস নেয় না।

শ্রাগ করল প্যাট্রিক হল। প্রমিসারি নোটের কোথাও লেখা নেই জুয়ার কথা। তাছাড়া ওর লেখা একটা নকল চেকও আছে আমার কাছে। ওয়ালেট থেকে একটা ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত চেক বের করে। র‍্যাঞ্চারকে দেখাল সে। জোডির কোনও অ্যাকাউন্ট নেই প্রমাণ হাতে। রাখতে ব্যাংকে দিয়েছিলাম এটা। এই ব্যাপারে কোর্ট কিন্তু কেস নেয়। হাসি হাসি হয়ে গেল জুয়াড়ীর চেহারা। অবশ্য তুমি চাইলে ব্যাপারটা আমরা এখনই মিটিয়ে ফেলতে পারি। বেশি না, প্রতি ডলারে মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট করে দিলেই হবে।

না, এক কথায় উত্তর দিল র‍্যাঞ্চার। তোমার বক্তব্যকে ব্ল্যাকমেল।; বলা যায়। ব্ল্যাকমেলারকে ফুটো পয়সা দিয়েও বিশ্বাস করি না আমি।

প্রতি ডলারে চল্লিশ সেন্ট, মিস্টার বেঞ্চলি।

না।

তিরিশ।

না, দূর হও! প্রতিটা মুহূর্তে আরও বেশি রেগে উঠছে বুড়ো র‍্যাঞ্চার।

 শ্রাগ করল প্যাট্রিক হল। বিশ?

চড়াৎ শব্দে প্রচণ্ড জোরে চড়টা পড়ল জুয়াড়ীর গালে। চার আঙুলের দাগ বসে গেল সাথে সাথে। মনের ভেতর আরও গভীর একটা ক্ষতে। রক্ত জমল। হোলস্টারের দিকে হাত বাড়িয়েও থেমে গেল সে। নিরস্ত্র র‍্যাঞ্চারকে খুন করলে আইনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না, জেরাল্ড স্ট্যানলি জানে বক্স বিতে এসেছে সে।

দূর হও! রাগে কাঁপতে কাঁপতে চেঁচাল বিলি বেঞ্চলি।

মাথা ঠাণ্ডা রেখে নির্লিপ্ত চেহারায় ঘুরে দাঁড়াল প্যাট্রিক হল। হিচর‍্যাকে এসে ঘোড়ায় চড়ল। র‍্যাঞ্চটা একমাইল পেছনে ফেলে আসার পর পকেটে রাখা টেলিগ্রামটার কথা মনে পড়ল তার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *