অদৃশ্য ঘাতক – ১০

১০.

লবিতে এসে অ্যাডাম বেঞ্চলিকে রেজিস্টার খাতায় সই করতে দেখল ডেপুটি। লইয়ার অ্যাডামের কাঁধে হাত দিয়ে নরম গলায় সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুমি বিশ্রাম নাও, অ্যাডাম, আমরা সবকিছু সামলে নেব।

মাথা নাড়ল অ্যাডাম। তার বাদামী চোখ জোড়া জ্বলছে। লাগেজ খুলে গানবেল্ট কোমরে ঝুলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর স্ট্যানলিকে দেখতে পেল সে। শেরিফের সাথে কথা বলব আমি। শহরে আছে?

হাতের ইশারায় পথ দেখাল স্ট্যানলি। দুজনে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে বোর্ডওয়াক ধরে হাঁটতে শুরু করল। অ্যাডাম যথেষ্ট লম্বা, তারপরও ডেপুটির কাঁধ সমান মাত্র। পরনের টাউন স্যুট লম্বা ট্রেন জার্নিতে আভিজাত্য হারিয়েছে। পার আর বুট দেখে বোঝা যায় র‍্যাঞ্চার।

চুপচাপ হাঁটছিল ওরা কার্বন কাউন্টি জার্নালের সাংবাদিক স্যাম গারউড এসে জোটার আগ পর্যন্ত। লেকটা অ্যাডামের দিকে প্রশ্নবান ছুঁড়তে শুরু করল। কে খুন করেছে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?

চোয়াল শক্ত হয়ে গেল অ্যাডামের, জবাব না দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।

দমবার পাত্র নয় সাংবাদিক। হিউ হুবার্ট লোকটা কে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?

থমকে দাঁড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল অ্যাডাম, তোমার কি ধারণা?

এখানে প্রশ্ন করতে এসেছে সাংবাদিক, জবাব দিতে নয়। অ্যাডামের কথা গায়েই মাখল না সে। জোডির খবর জানো? প্যাট্রিক হল ওর কাছে কত টাকা পায়? প্রতিবেশীদের সাথে কোনও গোলমাল ছিল তোমার, বাবার?

 সাংবাদিকের ঘাড় ধরে ঠেলা দিয়ে বোর্ডওয়াক থেকে নামিয়ে দিল। অ্যাডাম। তোমার কিছু জানা থাকলে বলো, নাহলে দূর হয়ে যাও। আমার সামনে থেকে।

নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে বাধল স্ট্যানলির। আড়ামের। মত ভদ্র নম্র যুবক এভাবে বদলে যেতে পারে!

শেরিফকে অফিসেই পেল ওরা। ডেস্কের পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করল রস লেম্যান গম্ভীর চেহারায়। জানাল সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে খুনীকে পাকড়াও করার জন্য।

আমিও তোমাদের সাথে খুঁজব তাকে, বলল অ্যাডাম। আমাকে বিনা বেতনের ডেপুটি করো লোকটা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত।

আড়চোখে অ্যাডামের উরুতে বাঁধা সিক্সগানের বাট দেখল লেম্যান, কি যেন ভাবল দুএক মুহূর্ত। তারপর বলল, যদি কথা দাও লোকটাকে চেনামাত্র খুন করবে না, ডেপুটি হতে পারো। আমাদের লোকবল কম, ভাল একজন ডেপুটি পেলে কাজের অগ্রগতি দ্রুত হবে।

আমি রাজি, গম্ভীর কণ্ঠে বলল অ্যাডাম।

তাহলে ডানহাত উঁচু করো।

অস্থায়ী ডেপুটি হিসেবে অ্যাডিমি বেঞ্চলিকে শপথ গ্রহণ করাল শেরিফ। একটা ব্যাজ তার বুকে সেঁটে দিয়ে বলল, যতক্ষণ এটা পরে থাকবে, আমার নির্দেশ মানতে হবে তোমাকে। আমার প্রহ্ম নির্দেশ হচ্ছে আজ সারারাত ভালমত ঘুমাবে তুমি। কাল থেকে আমার নির্দেশ মত খুনীকে খুঁজতে শুরু করবে।

 আপত্তি করল না অ্যাডাম, মাথা ঝাঁকিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। একটা চেয়ার টেনে আরাম করে বসল স্ট্যানলি, সিগারেট ধরাল। শেরিফের ঘোড়া বাইরের হিচর‍্যাকে দেখে এসেছে তাই জিজ্ঞেস করল, তোমার ঘোড়াটা যাওয়ার পথে বানে রেখে যাব?

আমার আর ওই বেচারার কপালে বিশ্রাম নেই, ক্লান্ত চেহারায় হাসল রস লেম্যান। কে নাকি সালফার প্রিঙসে স্পাইক হানুনাকে দেখেছে। গুজবও হতে পারে, তবে যাওয়া উচিত।

রলিন্স থেকে দক্ষিণে যোলো মাইল দূরে সালফার স্প্রিঙস। হোয়াইট রিভার স্টেজ রুটের ঘোড়া ওখানে বদলে নতুন ঘোড়া সরবরাহ করে স্টেশনটা।

তোমাকে কে জানাল? জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলি।

স্টেজ ড্রাইভার কার কাছে যেন শুনেছে আমাকে এসে বলল। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে। কথায় কথায় বার্নে স্টেজ ড্রাইভার আমার ভাইকে জানিয়েছে সালফার স্প্রিংসে লরা নামের একটা মেয়ে কিছুদিন ছিল, খুবই নাকি সুন্দরী। এই লরাও আমাদের লরা হতে পারে।

হাত বাড়িয়ে রাইফেল আর হ্যাট তুলে নিল শেরিফ। আমি যাচ্ছি। তুমি খোঁজ নাও স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা সাতজন রাইডারের মধ্যে কজন এখনও শহরে আছে। কালকেই ফিরে আসার চেষ্টা করব। দরজায় পৌঁছে থমকে দাঁড়াল শেরিফ, চিন্তিত চেহারায় কাঁধের ওপর দিয়ে বলল, চোখ-কান খোলা রেখো, স্ট্যান। ঘণ্টাখানেক আগে ডেভিড মুরের সেলুনে গিয়েছিলাম। কি যেন বলাবলি করছিল লোকগুলো, আমাকে দেখেই চুপ হয়ে যায়। আমি চলে যাচ্ছি ভান করে ব্যাটউইঙের, এপারে চলে আসতেই আবার আলোচনা শুরু করে ওরা।

মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। শেরিফকে শ্রদ্ধা করে সে, জানে বিনা কারণে সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেনি রস লেম্যান। শহরের লোকজন কি হুপারকে ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা ভাবছে?

শেরিফ ঘোড়া দাবড়ে শহরের বাইরে চলে যাবার পর একজন কনস্টেবলকে সর্বক্ষণ অফিসে থাকতে বলে রাস্তায় বেরিয়ে এল সে। ডেভিড মুরের সেলুনে যাওয়ার পথে হেয়েস হোটেল চোখে পড়তেই মনে পড়ে গেল গ্যানন উইলিসকে লরা নামের মেয়েটা মধ্য সেপ্টেম্বরে এই হোটেলে উঠতে বলেছিল। সিদ্ধান্ত বদলে হোটেলে ঢুকল স্ট্যানলি। জিজ্ঞেস করায় ক্লার্ক জানাল লরা নামের কেউ এই হোটেলে থাকেনি কখনও।

হোটেলের বাররূমে ঢুকে দেখল একটা টেবিলে বসে ফিসফিস করে কথা বলছে কয়েকজন। ডেপুটির ওপর চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে চুপ হয়ে গেল সবাই। ওদের মধ্যে র‍্যাফটার ক্রসের স্যাণ্ডি পেকোসও আছে। টেবিলের ধারে এসে দাঁড়িয়ে স্ট্যানলি বলল, গোপনীয় কিছু না হলে আমাকেও বলতে পারো।

না, না, গোপন কিছু না, তাড়াহুড়ো করে বলল স্যাণ্ডি পেকোস। ল্যারামি জেল ভেঙে বেরনো আসামীদের ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা।

লোকটা মিথ্যে বলছে স্পষ্ট বুঝতে পারল স্ট্যানলি। শেরিফ ঠিকই বলেছে, সেলুন আর বারগুলোয় বসে কোনও একটা পরিকল্পনা আঁটছে লোকজন।

স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা রাইডারদের কয়জন শইরে আছে খোঁজ নিতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। একটা সেলুনে দেখল ম্যাভরিক প্লামারকে। ঘণ্টাখানেক আগে দেখেছে বিল লেপম্যানকে। পকেট থেকে লিস্টটা বের করে তিনটা নামের পাশে নখ দিয়ে দাগ দিল স্ট্যানলি।

দুটো লিভারি বার্ন ঘুরে জস হারমার আর জুডাস অ্যাডলারের ঘোড়া দেখতে পেল। তারমানে ওরা এখনও শহরে আছে।

হারমার আর ফিরে যাবে না, তথ্য যোগাল বাচাল সহিস। রলিন্সে আসতে বাধ্য করায় বসের ওপর খেপে আছে। বলেছে এই অপমান সহ্য করে চাকরি করা যায় না।

আরও কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে লিস্টের সবগুলো নামের পাশে নখ দিয়ে চিহ্ন দিল স্ট্যানলি। স্যাণ্ড ক্রীকের সাত রাইডারের একজন ছাড়া বাকি কেউ ফিরে যায়নি। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের ডাইনিং রূমে খাওয়ার সময় লইয়ার আর রোসাকে তদন্তের অগ্রগতি জানাল সে।

তাহলে কি দাঁড়াল ব্যাপারটা? টাক চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কিলরন হার্পার ফিরে গেছে। লু মেয়ার আর জস হারমার অপমানিত বোধ করায় কাজ ছেড়ে দিয়েছে। লুমেয়ার চলে গেছে দক্ষিণে, হারমার শহরেই আছে। আরও আছে ম্যাডরিক প্লামার, স্যাণ্ডি পেকেসি, বিল লেপম্যান আর জুডাস অ্যাডলার।

প্যাট্রিক হলকেও হিসেব থেকে বাদ দিয়ো না। হাসল স্ট্যানলি।

হ্যাঁ, মুখ শুকিয়ে গেল লইয়ারের। এখনও অ্যাডামকে কিছু বলিনি, কিন্তু কালকে বলতে হবে। ফিউনারালের পরেই আলাপ করতে আসবে অ্যাডাম।  

তুমি শেষকৃত্যে যাবে না? রোসা জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলিকে।

যাওয়া উচিত, স্ট্যানলি বলল, দেখি পারি কিনা। র‍্যাঞ্চারের সম্মানে সকাল দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত দোকানপাট। সবাই ওখানে গেলে শহর খালি হয়ে পড়বে, আমার এখানেও থাকা উচিত।

.

পরদিন সকাল দশটায় শহরের ছোট্ট গির্জায় প্রার্থনা করতে আসা মানুষজনের জায়গা হলো না। পঞ্চাশ মাইল দূর থেকেও এসেছে কেউ কেউ। গির্জার সামনে ট্রেনের মত লম্বা লাইন হলো ক্যারিজ আর ওয়াগনের। লাশ কবরস্থানে নেয়ার পথে নীরবে অনুসরণ করল সবাই। মিছিলের শেষে শেরিফের ছোট ভাইয়ের পাশে ঘোড়া হাঁটিয়ে এগুলো স্ট্যানলি।

জিম লেম্যান আর্মি স্কাউট ছিল। গত বছর একটানা একশো সত্তর মাইল ঘোড়া ছুটিয়ে মীকার ম্যাসাকারের খবর রলিন্সে বয়ে এনেছিল সে। অবিশ্বাস্য কাণ্ডটা ঘটানোয় সারা দেশের খবরের কাগজগুলো ওকে নিয়ে আরও অনেক অবিশ্বাস্য গল্প ফেঁদেছে। শেরিফের তিন ভাইয়ের মধ্যে জিমের নাম ডাকই সবচে বেশি।

 কবরস্থানে যাওয়ার পথে ওরা দেখল দুপাশের রাস্তার সব দোকানপাট বন্ধ। বালির ওপর অশ্ব খুরের মৃদু শব্দ ছাড়া চারদিকে অন্য কোনও আওয়াজ নেই।

ফিফথ স্ট্রীটে শবযাত্রা পৌঁছুনোর পর কালো হুড দেয়া ক্লোক পরা এক মহিলা ডেপুটির দৃষ্টি আকর্ষণ করল হাত নেড়ে। হুডে চেহারা ঢেকে থাকায় মহিলাকে চিনতে পারল না ডেপুটি, জিম লেম্যানকে হাতের ইশারায় এগিয়ে যেতে বলে বোর্ডওয়াকের পাশে ঘোড়া থামাল।

তুমিই ডেপুটি স্ট্যানলি? নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল মহিলা।

তিরিশ হবে না বয়স, আন্দাজ করল স্ট্যানলি। মহিলা যথেষ্ট সুন্দরী। কাছ থেকে দেখে চিনতে পেরে বলল, তুমি রেল লাইনের উল্টোধারে দাঁড়িয়ে আছ, মার্গারিট।

রলিন্সে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে যেসব মেয়েরা দুনিয়ায় আদিমতম–পেশা বেছে নিয়েছে তারা রেল ট্র্যাকের এদিকে আসবে না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার না থাকলে এ সিডার স্ট্রীটে কেন এসেছে, ভাবল স্ট্যানলি।

সেলুনের লোকজন মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে শেরিফকে সরিয়ে দিয়েছে হিপারকে জেল ভেঙে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য, সময় নষ্ট না কিরে তথ্যটা দিয়েই নিজের গন্তব্যে পা বাড়াল পতিতা।

পরিস্থিতি বুঝতে সময় লাগল না স্ট্যানলির। কবরস্থান শহর থেকে একমাইল উত্তরে। সবাই যাচ্ছে সেখানে র‍্যাঞ্চারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে, খালি শহরে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে উন্মত্ত মাতালরা!

১১.

কবরস্থানে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ড্রাগস্টোরের সামনের হিচর‍্যাকে ঘোড়া বাঁধল স্ট্যানলি। পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেল পাথরের জেল হাউসে।

কনস্টেবল ওকে আসতে দেখেছে, দরজা খুলে দিল সে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল, তোমাকে শবযাত্রায় দেখেছি বলে মনে হচ্ছে, ডেপুটি!

কথা বাড়াবার সুযোগ দিল না স্ট্যানলি। শটগান লোড করো, এড, অ্যামুনিশনের বাক্স খুলে হাতের কাছে রাখো। কার্বনের মত একই ঘটনা এখানে ঘটাতে চাইছে কিছু লোক।

বেআইনী কিছু যাতে না ঘটে সেজন্যেই আমাকে চাকরি দেয়া হয়েছে। হাতের তালুতে থুতু দিয়ে চাপড় মারল কনস্টেবল। র‍্যাক থেকে শটগান হাতে নিয়ে দুটো ট্রিপল এ শেল ভরল দ্রুত হাতে। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে না গেলে বাকশট ব্যবহার করবে না।

সিডার স্ট্রীট কাভার দাও তুমি, বলল স্ট্যানলি, আমি ফিফথ স্ট্রীটের দিকে নজর রাখব।

দুদিকের দরজাতেই ওপরের অংশে মোটা শিক আছে লিঞ্চিও মবকে বাধা দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার সুবিধার্থে। নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ফাঁকা রাস্তাটা দেখল ডেপুটি। উল্টোদিকের বিল্ডিঙের দোতলায় জানালা দিয়ে রোসাকে একপলকের জন্য দেখতে পেল সে।

কই আমার তো মনে হয় না কিছু ঘটবে, খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বলল কনস্টেবল।

হওয়া শুরু হয়ে গেছে, সাবধান, এড! ফিফথ স্ট্রীটে আশেপাশের গলি থেকে একদল লোককে বেরিয়ে আসতে দেখে সতর্ক করল স্ট্যানলি। উত্তর দিক থেকে দ্রুত, নিঃশব্দ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে ওরা অমোঘ নিয়তির মত। সংখ্যায় পঞ্চাশজনেরও বেশি। সশস্ত্র লোকগুলো পরিচিতি প্রকাশের ভয়ে মুখোশ পরে আছে।

দুটো দরজাই বন্ধ, জেলহাউসে ঢোকার আর কোনও পথ নেই। জানালাগুলো দেয়ালের অনেক উঁচুতে, মোটা শিক দেয়া।

রাস্তার মোড়ে এসে দুভাগ হয়ে গেল নীরব লোকগুলো। দুদরজার সামনে অবস্থান নিল। কেউ কেউ পরিচয় ঢাকার জন্য মুখের নিম্নাংশে রুমাল বেঁধেছে। ওর দিকের লোকগুলোর মধ্যে অন্তত ছয়জনকে চিনতে পারল স্ট্যানলি। মুখোশ পরা থাকলেও লাল শার্টের কারণে বিল লেপম্যানকে চিনে ফেলল।

সিডার স্ট্রীটের দিক থেকে একটা কণ্ঠস্বর চেঁচিয়ে বলল, দরজা খুলে দাও, এড ম্যাকলিন, হুপারের সাথে কথা আছে আমাদের।

জবাবে দরজার গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগানের নল বের করে লোকগুলোর মাথার দুফুট ওপর দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ল কনস্টেবল। অবিচল কণ্ঠে সাবধান করল, পরের বার হাত কেঁপে গেলে কিন্তু তোমাদের গায়ে লাগবে।

সিডার স্ট্রীটে ভীড় করে থাকা লোকগুলো নিচু স্বরে গালি দিয়ে দুএক ফুট পিছালেও স্ট্যানলির দিকে জড় হওয়া লোকগুলো এগুলো।

ওরা ভেবেছে ভেতরে কনস্টেবল একাই আছে। লোকগুলো যখন দরজা থেকে ফুট দশেক দূরে, গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগান বের করে ট্রিগার টানল স্ট্যানলি। উঁচুতে গুলি করার ঝুঁকি নিল না সে। রাস্তার উল্টোদিকে লইয়ারের অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে উৎসুক চোখে কাণ্ডকারখানা দেখছে বোসা। লিঞ্চিঙ মবের একফুট সামনে ধুলো ওড়াল ট্রিপল এ ছররা।

চমকে উঠে পিছিয়ে গেল লোকগুলো। একজন মাতাল ফাটা গলায় জানতে চাইল, তোমার সাথে আরও কেউ আছে, এড?!

তৈরি জবাব দিল কনস্টেবল। শেরিফ আর তার তিন ভাই এখন আমার সাথে। গুজব ছড়িয়ে দিয়ে আর যাকে হোক রস লেম্যানকে বোকা বানাতে পারোনি তোমরা।

তুমিও মিথ্যে বলে আমাদের বোকা বানাতে পারোনি, এড, ব্যঙ্গ করে বলল ভীড়ের সামনে দাঁড়ানো নেতা গোছের একজন। আমরা। জানি শেরিফ সালফারে গেছে। তার ভাইদের যেতে দেখেছি। শবযাত্রায়।

ওটা জেরাল্ড স্ট্যানলির ঘোড়াটা না? একজন আঙুল তুলে ড্রাগস্টোরের সামনে হিচর‍্যাকে বাঁধা ঘোড়াটা দেখাল। সে-ই বোধহয় কনস্টেবলের সাথে আছে!

চুপ হয়ে গেল লোকগুলো। এই নামটাকে ভয় পায় কাউন্টির আইন অমান্যকারীরা। ওরা ভেবেছিল সবার সাথে স্ট্যানলিও শবযাত্রায় গেছে।

আমরা তোমার সাথে লাগতে চাই না, স্ট্যানলি, উঁচু গলায় বলল একজন। আমরা চাই হুপারের মুখ খোলাতে। হুবার্টের খবর আদায় করেই ওকে তোমার হাতে তুলে দেব আমরা।

টম, দরজার শিকের মধ্যে শটগানের ব্যারেল নড়িল স্ট্যানলি,  বাড়াবাড়ি করলে গুলি করতে বাধ্য হব।

মুখোশ পরে থাকার পরও ডেপুটি তাকে চিনে ফেলায় ভয় পেয়ে ভীড়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল টম সোরেনসন। নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করল লোকগুলো। ওরা স্বপ্নেও ভাবেনি জেরাল্ড স্ট্যানলির মুখোমুখি হতে হবে।

লোকগুলোর সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে করিডরের দরজা খুলে ভেতরে তাকাল ডেপুটি। ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে মুখে উবু হয়ে কটে বসে আছে এডমণ্ড হুপার, দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে নামছে। আমাকে ওদের হাতে তুলে দিয়ো না, কতির গলায় বলল সে, ওদের ঠেকাও।

ডিসেম্বরে বিচারে তোমার ফাঁসি হবে। তবু আমি দেখব কোর্টরুমে। যাতে জীবিত পৌঁছুতে পারো, করিডরের দরজা বন্ধ করার আগে বলল স্ট্যানলি। ফিরে এসে দরজার শিকের পাশে দাঁড়িয়ে দেখল তর্কাতর্কি শেষ করেছে লোকগুলো। নেতা বদল হয়েছে, এখন আটজনের উপদলে ভাগ হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তিনজন। কোত্থেকে যেন তিনটা কাঠের গুঁড়ি জোগাড় করে আনা হয়েছে।

দুটো গুঁড়ি এদিকের দরজা ভাঙার জন্য রেখে বাকিটা অন্য রাস্তায়। ভীড় করে থাকা লিঞ্চিঙ মবের ব্যবহারের জন্য দিয়ে এল কয়েকজন লোক।

জ্যাক হিগিনসের জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। অবাক চোখে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে রোসা। মাঝে মাঝেই ভয় মেশানো দৃষ্টিতে

রাস্তার মোড়ে ক্রস আর্ম লাগানো টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখছে। কার্বনের, মতই এখানেও কয়েকজনের হাতে দড়ির ফাঁস!

দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াও তোমরা! কাঠের গুঁড়ি হাতে তেড়ে আসার সময় চেঁচাল কয়েকজন দুদিক থেকে।

জবাবে ওদের মাথার একফুট ওপর দিয়ে শুভেচ্ছা পাঠাল। কনস্টেবল। স্ট্যানলি গুলি করল পায়ের কাছে।

হাউমাউ কান্নার আওয়াজ ভেসে এল সেলের ভেতর থেকে। গলা ছেড়ে বিলাপের ফাঁকে ফাঁকে কাদছে হুপার। চেঁচিয়ে হুমকি দিতে শুরু করল রাস্তায় দাঁড়ানো সশস্ত্র লোকগুলো।

স্ট্যানলি বুঝতে পারছে এভাবে ওদের বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে। কোনও অপরাধবোধ নেই লোকগুলোর, ছোটবেলা থেকে যা স্বাভাবিক বলে জানে তাই করতে এসেছে। অপরাধীর মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে ঝুলিয়ে দেয়াকে খারাপ কিছু মনে করে না ওরা। খেপে ওঠার আগ পর্যন্ত সাধারণ ভালমানুষ সবাই। হুপারের মত একটা খুনীকে বাঁচাতে ওদের খুন করতে পারবে না কনস্টেবল বা সে।

আসছে ওরা! এড ম্যাকলিন চেঁচাল ডেপুটির উদ্দেশে।

স্ট্যানলির দিকের লোকজন গুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তেড়ে আসার হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু আসছে না। ওরা চায় ডেপুটি ব্যস্ত থাকুক, তাহলে কনস্টেবলকে সাহায্য করতে পারবে না। এড ম্যাকেনলির শটগান গর্জে উঠেছে আওয়াজে বুঝল স্ট্যানলি। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল কয়েকজন।

দমেনি লোকগুলো, কাঠের গুঁড়ি কনস্টেবলের দরজায় সশব্দে আঘাত করায় কেঁপে উঠল জেলহাউস। দরজা অক্ষত আছে, ভেঙে পড়ার শব্দ হয়নি। আরেকবার! গুড়িসহ পিছিয়ে যেতে যেতে চেঁচাল কয়েকজন।

ওর দিকের লোকগুলো এক পাও এগোয়নি। ওদের মাথার ওপর দিয়ে জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। মেয়েটা নেই, বোধহয় ভয় পেয়ে সরে গেছে। ড্রাগ স্টোরের সামনে হিচর‍্যাকের ওপর চোখ পড়তে দেখল ওর স্যাডল চড়ানো স্ট্যালিনও গায়েব!

.

গুঁড়ি দিয়ে কনস্টেবলের দরজায় চারবার আঘাত করা হলো। বোল্ট আটকে আছে, কিন্তু ভাঙতে শুরু করল দরজার কাঠ। চারবার আগুন উগরেছে এড ম্যাকেনলির শটগান। চার-পাঁচজন গালি দিয়ে খোঁড়াতে, খোঁড়াতে পিছিয়ে গেছে, কিন্তু চলে যায়নি।

অন্যদিকের দরজায় হুমকি ধামকি ছাড়া অন্যকিছুর মোকাবিলা করতে হচ্ছে না স্ট্যানলিকে, কিন্তু কনস্টেবলকে সাহায্য করতেও যেতে পারছে না সে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে শটগান টেনে নিলেই এক পা এগিয়ে আসে লোকগুলো, শটগান তাক করলেই আবার পিছিয়ে যায়। ভয় দেখানোর জন্য একটা গুড়ি লক্ষ্য করে গুলি করল স্ট্যানলি। মুখ খিস্তি করে পিছিয়ে গেল লোকগুলো, কিন্তু এখনও তুলে ধরে আছে গুঁড়িটা।

কারা যেন আসছে! চেঁচিয়ে উঠল একজন।

স্ট্যানলিও শুনতে পেয়েছে শব্দটা। দ্রুতগতিতে এদিকে ছুটে

আসছে কয়েকটা ঘোড়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ওদের। ছয়জন অশ্বারোহী, প্রত্যেকের হাতেই উদ্যত সিক্সগান কবরস্থানের দিক থেকে আসছে। স্ট্যানলি হঠাৎই বুঝতে পারল জানালায় রোসাকে দেখতে পায়নি কেন, বুঝতে পারল ওর ঘোড়াটা হিচর‍্যাক থের্কৈ কেন উধাও হয়েছিল।

ভাগো এখান থেকে, মাতালের দল! কাছে এসে গর্জে উঠল শেরিফের দুই ভাই, জিম আর নেলি। মীকার ম্যাসাকারে অসামান্য বীরত্ব দেখিয়েছিল জিম। গোটা শহরের আদর্শ সে। জিম লেম্যানের দিকে আঙুলও তাক করবে না রলিন্সের কেউ।

কাঠের গুঁড়িগুলো মাটিতে ফেলে নিমেষে আশে পাশের গলিতে ঢুকে গা ঢাকা দিল পঞ্চাশ-ষাটজন লোক, চেহারা ঢেকে রাখতে ব্যস্ত সবাই। স্ট্যানলি সিদ্ধান্ত নিল কাউকে বিচারে দাঁড় করাবে না। রক্ত যা  ঝরেছে ওদের নিজেদেরই ঝরেছে।

 দরজা খুলে জিম লেম্যানকে ঢোকার পথ করে দিল কনস্টেবল।  গভীর চেহারায় ভেতরে ঢুকে করিডরের দরজা খুলে হুপারকে দেখল জিম। তোমার মত খুনীকে বাঁচাতে আমরা ফিউনারাল ছেড়ে এখানে আসিনি, হুপার, বলল সে মাথা নেড়ে। এসেছি এড আর স্ট্যানলির যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য।

ডেভিড মুর এক পা এগিয়ে স্ট্যানলির দিকে তাকাল। জিম ঠিকই। বলেছে, জ্যাক হিগিনসের ভাতিজির মুখে যা শুনলাম তাতে মনে হয়েছিল তোমাদের বিপদ হতে পারে।

অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাগস্টোরের সামনে দাঁড়াল স্ট্যানলি। সিডার স্ট্রীটের শেষ মাথায় ধীরে ঘোড়া ছুটিয়ে রোসাকে আসতে দেখল। ঘোড়া চড়ায় অনভ্যস্ত পরিশ্রান্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে জ্ঞান হারাবে ওয়াইয়োমিঙে নতুন এসেই ইতিহাস গড়া মেয়েটি।

দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ঘোড়াটাকে থামাল স্ট্যানলি। দুহাত বাড়িয়ে রোসাকে নামিয়ে আনল। গম্ভীর গলায় বলল, অসংখ্য ধন্যবাদ, রোসা।

না, না, এমন আর কি, লজ্জায় লাল হয়ে স্ট্যানলির কাছ থেকে। এক পা সরে দাঁড়াল বোসা।

অফিসে যাবে, না হোটেলে?

হোটেলে।

একসাথে হেঁটে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ঢুকল ওরা। রোসা পাশে থাকায় রাস্তায় প্যাট্রিক হলকে কখন পাশ কাটিয়ে এসেছে খেয়াল করেনি স্ট্যানলি। কিন্তু ডিপোতে ট্রেন থামার শব্দে মাথার ভেতর সতর্ক ঘণ্টি বেজে উঠল ওর।

 রোসাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল। ডিপোর। কাছাকাছি পৌঁছে-বোর্ডওয়াকে জুয়াড়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এইমাত্র পৌঁছুনো ক্যাটল ট্রেনের দিকে।

ক্যাটল নামাতে শুরু করেছে বক্স বির কাউহ্যাণ্ডরা। ছাপ্পান্ন হাজার ডলারের ক্যাটল, আপনমনে বলল স্ট্যানলি। কার? অ্যাডাম, না জোডির? জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখল চেহারায় চতুর হাসি ফুটে উঠেছে লোকটার।

১২.

ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে লইয়ারের সাথে স্ট্যানলি আলাপ শুরু করল। রোসা এখনও ঘর ছেড়ে বেরয়নি, এলে তখন খাবারের অর্ডার দেয়া হবে।

উইলের ব্যাপারটা অ্যাডামকে বলেছ?

ফিউনারালের পরপরই বলেছি, বলল জ্যাক হিগিনস, কোনও উৎসাহ দেখায়নি। বাবার খুনীকে খুঁজে বের করার আগে বৈষয়িক কোনকিছু ভাবতে চাইছে না সে।

গরু চেনে অ্যাডমি। ওমাহা থেকে যেগুলো এনেছে সেগুলোর কথা–বলছি। লইয়ারকে মাথা ঝাঁকাতে দেখে প্রশ্নটা করল স্ট্যানলি, ওগুলো অ্যাডামের, না জোডির?

আইনত জোডির। র‍্যাঞ্চার মারা যাওয়ার সময়কার নগদ টাকা দিয়ে যা-ই কেনা হয়েছে সব জোডির হবে। আমাকে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উইলে ভাগাভাগির আগ পর্যন্ত। সব ক্যাটল বক্স বির রেঞ্জে নিয়ে যেতে বলেছি কাউহাদের।

 ওদের দেখেছি শহর থেকে ক্যাটল বের করে ফেরিসের পথ ধরতে। সাথে অ্যাডামও আছে।

রাতে ওরা ক্যাম্প করার পর অ্যাডাম ফিরে আসবে রলিন্সে। বিলি বেঞ্চলির হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার আগে শান্তি পাবে না ছেলেটা।

লেপম্যান, আর স্যাণ্ডি পেকোসকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে অ্যাডাম, বলল স্ট্যানলি, এডমণ্ড হপারকে জেল ভেঙে বের করে হুবার্টের পরিচয় জানার চেষ্টা করছিল যে লোকগুলো তাদের মধ্যে পেকোসও ছিল।

আর কাউকে চিনেছ? মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করল লইয়ার।

এই যে লিস্ট পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে জ্যাক হিগিনসকে দিল স্ট্যানলি। লিস্টের এগারোজনের মধ্যে পেকোস ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা বাকি ছয়জন রাইডারের কারও নাম নেই।

শেরিফ সালফার থেকে ফিরেছে?

হ্যাঁ, সন্ধেয়। গুজবটা কে রটিয়েছে বের করতে না পারায়। সাংঘাতিক রেগে আছে।

দুজন পুরুষ আর একজন তরুণী গেন্ট হোটেল ডাইনিং রূমে, প্রবেশ করল। কম বয়সী লোকটার হাত স্লিঙে বাঁধা। ওদের দেখেই একসাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল লইয়ার আর স্ট্যানলি। আমাদের  সাথেই বসো?

অন্য টেবিল থেকে একটা চেয়ার এনে অলিভার বসার ব্যবস্থা করে দিল স্ট্যানলি। জোসেফ ওয়েনের পাশে বসে পড়ে অলিভা হাসল, এখনও ওয়েনের মাংস কেটে দিতে হয় আমাকে। ডেপুটি লক্ষ করল গত কদিনেই অলিভা যেন তরুণী থেকে যুবতী হয়ে গেছে। তুমি ওকে ঠুটো করে দেয়ার পর থেকেই আমার দেখাশোনা বাদ দিয়ে ওকে নিয়ে পড়েছে অলিভা, হাসিমুখে অভিযোগ করল হেনরিখ বিউয়েল।  

ওয়েনের কাঁধে দক্ষ হাতে বাধা ব্যাণ্ডেজ। আমরা ফিউনারালে এমনিতেই আসতাম। ওকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে, বলল অলিভা।

শহরে থাকবে কতক্ষণ? জোসেফ ওয়েনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল স্ট্যানলি।

শ্রাগ করে কাঁধের ব্যথায় মুখ বিকৃত করল ওয়েন। হুবার্ট যতক্ষণ আছে আমিও থাকব।

তোমাকে কে বলল হুবার্ট রলিন্সে?

আঙুল তুলে র‍্যাকে ঝুলিয়ে রাখা নিজের হ্যাটটা দেখাল ওয়েন। গত সপ্তাহে দুইবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে হুবার্ট, কিন্তু এই সপ্তাহে একবারও না। কেন? সবার ওপর চোখ বোলাল সে, কারণ এ সপ্তাহে আমি ছিলাম ফেরিসে, আর সে রলিন্সে। আমার কথা যদি বিশ্বাসযোগ্য না মনে হয় তাহলে বুঝিয়ে দাও জানালা দিয়ে গুলি করে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডকে কে খুন করল।

যুক্তি আছে কথায়। গুড ইভনিং, মিস্টার হল। পরিচিত কণ্ঠস্বরে চিন্তার জাল ছিড়ে গেল স্ট্যানলির। এইমাত্র ডাইনিং রূমে এসেছে রোসা। ডেনভারের জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে হাসছে সে। অকারণেই গা জ্বলে উঠল স্ট্যানলির, বুকের মধ্যে জ্বলে উঠল অভিমান।

রোসা এসে একটা চেয়ার টেনে বসল চাচার পাশে, উঠে দাঁড়িয়ে সাহায্য করল না ডেপুটি। ওদের উদ্দেশে হাত নেড়ে কোণার একটা টেবিল দখল করল প্যাট্রিক হল।

কিছু বলেছে? চোখের ইঙ্গিতে জুয়াড়ীকে দেখিয়ে জ্যাক, হিগিনসকে প্রশ্ন করল স্ট্যানলি।

না।

ক্যাটল ট্রেনের ওপর চোখ রেখেছিল, জোডি আসবে ভেবেছিল হয়তো।

সাপার শেষ হওয়ার পর মেয়েরা যার যার নিজেদের ঘরে চলে গেল। পুরুষরা হোটেলের রেলিঙ দেয়া পোর্চে এসে বসল ধোয়া গেলার। জন্য। বিল লেপম্যান আর জুডাস অ্যাডলার উঠেছে হোটেলে। একজন ছাড়া বাকিরাও শহরে,টাক চুলকে ডেপুটির বলা কথাটা আওড়াল জ্যাক হিগিনস।

সন্ধে নেমেছে, লেপম্যান বা অ্যাডলার হোটেলে ফেরেনি। ওদের একজন হুবার্ট হলে আজকের ঘটনা শোনার পর জীবনে আর ফিরবে কিনা কে জানে। এডমণ্ড হুপারকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে হুবার্টের পরিচয় নিশ্চয়ই জেনে নিত জনতা।

রাস্তার ওপারের সেলুন থেকে কোলাহল ভেসে আসছে। হিচরেইলে থেমে ঘোড়া বাঁধল তিনজন কাউহ্যাণ্ড। বারের পিয়ানো বাজছে। বিলিয়ার্ড বলের পরস্পর ঠোকাঠুকি খাওয়ার ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে। তিন কাউহ্যাণ্ড সেলুনে ঢোকার সময় লণ্ঠনের আলোয় তাদের চেহারা চিনতে পারল স্ট্যানলি। ওদের মধ্যে জস হারমারও আছে। লোকটা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, বলল সে।

বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে হোটেলের পোর্চে উঠল লম্বা এক লোক। ডেপুটির দিকে তাকিয়ে হেসে ভেতরে চলে গেল। জুডাস অ্যাডলার, সাতজনের একজন, মনে মনে বলল স্ট্যানলি।

আরও এক ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, বিল লেপম্যান, এখনও ফেরেনি। একসময় বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল হেনরিখ বিউয়েল। বোর্ডওয়াকে পদশব্দ শুনে চোখ তুলে তাকাল স্ট্যানলি। অ্যাডাম বেঞ্চলি। কাউহ্যাণ্ডদের এগিয়ে দিয়ে বার্নে ঘোড়া রেখে এসেছে। পোর্চের রেলিঙে বসে স্ট্যানলির কাছ থেকে তামাক নিয়ে সিগারেট বানিয়ে ঠোঁটে ঝোলাল অ্যাডাম, আগুন ধরিয়ে একবুক ধোয়া টেনে বলল, আমি চিন্তা করে দেখেছি, স্ট্যানলি, তোমার ধারণা ঠিক নাও. হতে পারে। লিঞ্চিঙ মবে বিল লেপম্যান ছিল বলেই ওকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না। মাথা নাড়ল অ্যাডাম। ধরো মার্গারিট এসে তোমাকে যদি সতর্ক না করত তাহলে?

স্ট্যানলি বুঝে ফেলল অ্যাডাম কি বলতে চাইছে। কবরস্থানে চলে যেতাম আমি, লোকজন হুপারকে জেল ভেঙে বের করে বার্টের পরিচয় জেনে নিত ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে।

তারমানে মার্গারিট হুপারকে জানে বাঁচিয়েছে। কেন? গ্যাননের _ কাছে চিঠি লেখা লরাই তো মার্গারিট হতে পারে, তাই না?

ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল স্ট্যানলির কাছে। লইয়ার বলল, ওই পেশার মেয়েরা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

আমি খোঁজ নিতে যাচ্ছি, উঠে দাঁড়াল জোসেফ ওয়েন, হুবার্টের খোঁজে আমি নরকে যেতেও রাজি।

আমিও যাব, আইনগত পরামর্শ দরকার হতে পারে তোমার, টাক চুলকাল লইয়ার।

ওরা চারজনই হাঁটতে শুরু করল নিষিদ্ধ পল্লীর দিকে। জ্যাক হিগিনস ছাড়া বাকি তিনজন সশস্ত্র। রেল লাইন পেরিয়ে ডানে মোড় নিয়ে এগুলো ওরা।

বড়সড় দোতলা কাঠের বাড়িটা চমৎকার। দরজায় লাল লণ্ঠন জ্বলতে না দেখলে ভদ্রলোকের বাড়ি বলে ভ্রম হয়। হিচরেইলে মাত্র। দুটো ঘোড়া, আজ খদ্দের বেশি নেই। জোসেফ, ওখানে থেমে দাঁড়িয়ে বলল লইয়ার, তুমি আর আমি এখানেই দাঁড়াই। স্ট্যানলির কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট চাইলে আমরা ওর হয়ে জাজের কাছ থেকে নিয়ে আসব।

পোর্চে উঠে রশি টেনে ঘণ্টি বাজাল অ্যাডাম। কিছুক্ষণ পর দরজা। খুলে উঁকি দিল মাঝ বয়েসী এক মহিলা। মার্গারিটের সাথে কথা আছে, আমাদের, ডেকে দাও, বলল স্ট্যানলি।

ওদের দুজনের শার্টে পিন দিয়ে লাগানো ব্যাজ দুটো পালা করে দেখল মহিলা, তারপর বলল, আমার লাইসেন্স দেখতে চাইলে দেখতে পারো। মার্গারিট বিকালের ট্রেনে চলে গেছে।

আবার আসবে?

কি জানি।

আমাদের কাছে ওয়ারেন্ট নেই, স্বীকার করল স্ট্যানলি, ওর রূমটা। সার্চ করতে চাই, আপত্তি আছে?

মাথা নেড়ে দরজা ছেড়ে পঁড়াল মহিলা। দোতলায়। আট নম্বর রূম।

ডেপুটি দুজন বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দিল মহিলা। বাইরে হিচর‍্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে লইয়ার আর জোসেফ ওয়েন। একটা কার্ট হুইলের, অন্যটা স্পুর্কি র‍্যাঞ্চের, ঘোড়া দুটো। দেখিয়ে বলল সে।

দোতলার একটা ঘরের জানালায় লণ্ঠনের আলো দেখতে পেল ওরা। জানালা দিয়ে কাঁধ বের করে ওদের উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি, মালপত্র সহ ভেগেছে। তোমরা স্টেশনে গিয়ে খবর নাও কোন ট্রেনে গেছে, আমরা ঘরটা সার্চ করে ওখানে তোমাদের সাথে দেখা করব।

দ্রুতপায়ে হেঁটে ডিপোতে পৌঁছে গেল ওয়েন আর লইয়ার। টিকেট কাউন্টারে প্রৌঢ় লইয়ার এজেন্টকে মার্গারিটর চেহারার হুবহু বর্ণনা জানানোয় অবাক হলো ওয়েন।

চার নাম্বার ট্রেনে গেছে, বলল এজেন্ট, শাইয়্যানে যাবার।; ওয়ানওয়ে টিকেট কেটেছে সে।

সাথে আর কেউ ছিল?

না। মাথা নেড়ে দেয়ালঘড়ি দেখল এজেন্ট। ট্রেন এক ঘণ্টা আগে শাইয়্যানে পৌঁছে গেছে।

দৌড়ে স্টেশনে এল উদগ্রীব ডেপুটি দুজন। স্ট্যানলির হাতে একটা। পুরানো খাম। খামের গায়ে প্রাপকের নাম ঠিকানা ঝাঁপসা হয়ে গেলেও পড়া যায়। ওটা লইয়ারকে দেখিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল স্ট্যানলি, ও যে লরা হতে পারে সেকথা আমার মাথায়ই আসেনি। আমার বদলে, কাউন্টির টপ ডেপুটি তোমারই হওয়া উচিত ছিল।

টেলিগ্রাফ অপারেটরের কাউন্টারে গিয়ে মার্গারিটের খোঁজ জানতে চেয়ে শাইয়্যানের পুলিশ চীফের কাছে একটা টেলিগ্রাম পাঠাল সে।

ফিরে এসে দাঁড়াল অপেক্ষমাণ বাকি তিনজনের পাশে। আরেকটা ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার, স্ট্যানলির দিকে তাকিয়ে বলল অ্যাডাম। স্যাও ক্রীকের সাতজন রাইডারকে সন্দেহ করা হচ্ছে বলেছ। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরে এই কাউন্টিতে এসেছে কে?

 নোটবুক বের করে নামের পাশে লিখে রাখা তারিখগুলো দেখল স্ট্যানলি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে, সবার পরে এসেছে ম্যাডরিক প্রামার। এ বছরের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত অন্য কোথাও ছিল সে। কোথায় বলেনি।

শাইয়ানে গ্যানন উইলিস খুন হয়েছে কবে?

আবার নোটবুকের পাতা উল্টে দেখল স্ট্যানলি। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে।

উইলিসের এখানে আসার কথা ছিল হুবার্টের সাথে কোনও একটা অপকর্মে অংশ নেয়ার জন্য। সে আসত সেপ্টেম্বরে। কিন্তু ধরে গ্যানন মারা যাওয়ায় একা হয়ে পড়ল হুবার্ট, এবং আরেকজনকে আসতে বলল। নতুন লোকটা এলাকা চিনতে জুলাই মাসেই চলে আসবে না? কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অ্যাডাম বলল, আমার ধারণা ওই সাতজন রাইডারের মধ্যেই হুবার্ট আর তার সহকারী আছে। তারিখ মিলিয়ে দেখল বার্টের সহযোগী হতে পারে একমাত্র ম্যাভরিক প্লামার।

ডিপোর বিশাল দেয়াল ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা বাজে। বারগুলোয় খোঁজ নিলেই ওকে পাওয়া যাবে, বলল স্ট্যানলি। ওয়েনের দিকে তাকাল। তুমি আর মিস্টার হিগিনস গোল্ড রাম আর হোটেলগুলোয় দেখো। অ্যাডাম সাউথ ফ্রন্টে যাও। আমি যাচ্ছি নর্থ ফ্রন্টে। প্লামারকে দেখতে পেলে কিছু করে বোসা না তোমরা, আমাকে খবর দিয়ো।

আলাদা হয়ে গেল ওরা। ডেভিড মুরের সেলুনে যাচ্ছে অ্যাডাম। গোল্ড রূম সেলুনের দিকে হাঁটতে শুরু করল লইয়ার আর ওয়েন। পুব ব্লকের সবকটা বারে টু দিল স্ট্যানলি। একটাতেও নেই প্লামার। একজন বারটেণ্ডার ক্ষোভের সাথে বলল ফরচুন সেলুনে গিলতে যায় লোকটা।

দুব্লক হেঁটে ফরচুন সেলুনে ঢুকল স্ট্যানলি। কমদামী মদ বেচা হয় এখানে। জুয়ার প্রায় সবরকম ব্যবস্থা আছে। প্লামারকে এক একট টেবিলে বসে থাকতে দেখল সে। হ্যাট খুলে টেবিলে রেখেছে লোকটা। ফ্ল্যাপলেস হোলস্টার থেকে উঁকি দিচ্ছে .৪৫ সিক্সগান। সামনে গিয়ে দাঁড়াল স্ট্যানলি। এটা আগে দেখেছ কখনও? পুরানো খামটা বাড়িয়ে ধরে জানতে চাইল। তীক্ষ্ণ চোখে দেখল লোকটার চেহারায় কোনও পরিবর্তন হয় কিনা।

না। কেন? নির্বিকার চেহারায় চোখ সরু করে পাল্টা প্রশ্ন করল। প্রামার।

শহর ছেড়ে চলে গেছে মার্গারিট নামের একটা মেয়ে। তাকে খুঁজছি। আমি। তাতে আমার কি? গ্লাস তুলে হুইস্কিতে চুমুক দিল প্লামার।

ওর ঘর সার্চ করার সময় আরেকটা জিনিস পেয়েছি, মিথ্যে বলেনি।

স্ট্যানলি, ঘরে একটা নেলকাটার পেয়েছে সে। লোকটা যদি সত্যিই হুপারের সঙ্গী হয়ে থাকে, উল্টোপাল্টা ভেবে ভয় পেয়ে যাবে হয়তো। হয়তো ভাববে কারও নাম, ঠিকানা বা কোনও চিঠি পেয়েছে ডেপুটি, ওর পরিচয় জেনে ফেলেছে।

কি খুঁজে পেয়েছে লোকটা হয়তো জিজ্ঞেস করবে, মনে মনে আশা করল স্ট্যানলি। ওই প্রসঙ্গের ধার দিয়েও গেল না প্লামার। চেয়ার পেছনে ঠেলে উঠে দাঁড়াল।

কার্বন কাউন্টিতে এক দেড় মাস থেকেছে তেমন কোনও লোক স্ট্যানলির বিরুদ্ধে ড্র করার সাহস পেত না। কিন্তু অতদিন থাকেনি প্লামার। ডেপুটির ড্র কখনও দেখেনি সে, তবে নিজের দ্রুততায় আস্থা। আছে।

 দুজন কাস্টোমার সেলুনের ব্যাটউইং ঠেলে ভেতরে ঢুকে থমকে দাঁড়াল। দেখল সিক্সগানের দিকে হাত বাড়াল প্লামার, পরক্ষণেই কুঁজো হয়ে আছড়ে পড়ল মাটিতে। অবাক চোখে ওরা তাকিয়ে থাকল ডেপুটির সিক্সথানের ধোয়া ওঠা নলটার দিকে। স্ট্যানলির হাতে কখন সিক্সগান উঠে এসেছে দেখতে পায়নি দুজনের একজনও।

টেবিল পাশ কাটিয়ে ঝুঁকে পড়ে মৃতদেহটা দেখল স্ট্যানলি।  গ্রেফতার করতে পারলে ভাল হত, মনে মনে বলল সে, একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ চিরতরে চলে গেল লোকটা।

১৩.

তেরো সকালের রোদে গম্ভীর চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে প্যাট্রিক হল। রলিন্সের আবহাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না তার। সেলুনে, হোটেলে, বারে, রাস্তায় সবাই উত্তেজিত। হিউ হুবার্টকে চায় ওরা। অস্বস্তি বোধ করছে জুয়াড়ী। প্রমাণ হয়ে গেছে ডেপুটির হাতে কাল রাতে মারা পড়া লোকটা হবার্টের সঙ্গী ছিল। ধরা পড়ার ভয়ে পতিতালয় থেকে পালিয়েছে এক যুবতী। হুবার্টের সঙ্গী সাথী আর কয়জন আছে চিন্তাভাবনা করতে শুরু। করেছে শহরবাসী।ওকে সন্দেহ করে বসলে বিপদ হতে পারে। সাবধানে চলতে হবে, সিদ্ধান্ত নিল প্যাট্রিক হল। হোটেল রূমে ডেপুটির সাথে গোলমালে জড়ানো ভুল হয়ে গেছে। এখন জোডি এসে সম্পত্তি বুঝে নেয়ার আগ পর্যন্ত ঘাপটি মেরে বসে থাকা উচিত। জোডির কাছ থেকে পাওনা আদায় করা কঠিন হবে না।

সকালে গোল্ড রূমে জুয়া খেলার ব্যবস্থা নেই, তবু ওখানে গিয়ে হাজির হলো সে। সিসিলিয়ার ওপর চোখ পড়তে মনে মনে বলল, গত বছরও ডেনভারের সেলুনে তোমাকে দেখেছি, সুন্দরী। এই পচা শহরে এসে চাকরি নিয়েছ যখন, বোঝা যায় ভাল ঝামেলা পাকিয়ে দিয়ে তারপর এসেছ এখানে!

 প্যাট্রিক হলকে চেয়ার টেনে বসতে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে টেবিলের ওপর বসল সিসিলিয়া। ঝুঁকে পড়ে কার্ডিগানের ফাঁক দিয়ে দৈহিক সম্পদের উপরের অংশ প্রায় উন্মুক্ত করে জানতে চাইল, জোডির কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়েছ?

জোডি? কোন জোডি? পাল্টা প্রশ্ন করল প্যাট্রিক হল।

জোডি বেঞ্চলি। তুমি জানো না সে ফিরেছে?

অসম্ভব, মাথা নাড়ল হল। প্রতিটা ট্রেনের ওপর নজর রেখেছি আমি।

মালগাড়ির ওপর রাখোনি, হাসল সিসিলিয়া। কাল মাঝরাতের ট্রেনে এসেছে সে। উঠেছে হেয়েস হোটেলে।

জোডি এখন কোথায় আছে জানো?

বোধহয় হোটেলে।

 বারটেন্ডারের রেখে যাওয়া হুইস্কির গ্লাস একচুমুকে শেষ করল, প্যাট্রিক হল। টেবিলের ওপর একটা কয়েন রেখে সিসিলিয়ার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই সেলুন থেকে বেরিয়ে এল। হেয়েস হোটেলের কাউন্টারে গিয়ে জানতে চাইল জোডি বেঞ্চলি কোথায়।

জোডি? বিষণ্ণ চোখ জোড়া তুলে তাকাল হোটেল ক্লার্ক। বোধহয় লইয়ারের অফিসে গেছে। বিলি বেঞ্চলির কপাল ভাল ছেলের এই অবস্থা দেখে যেতে হয়নি তার। কাল রাতে যখন পৌঁছুল, শুয়োরের মত দুর্গন্ধ সারা গায়ে। কয়দিন অভুক্ত ছিল ঈশ্বর জানে। মুখে কয়েক সপ্তাহের না কামানো দাড়ি, পকেটে ফুটো পয়সা নেই, চোখে। ডাকাতের দৃষ্টি…

 ক্লার্কের বয়ান শোনা ধৈর্যে কুলাল না প্যাট্রিক হলের। হোটেল থেকে বেরিয়ে দ্রুতপায়ে জ্যাক হিগিনসের অফিস লক্ষ্য করে হাঁটা দিল। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখল দরজাটা ভেড়ানো, ভেতর থেকে উত্তপ্ত গলার আওয়াজ ভেসে আসছে। কথা শোনার জন্য অফিসে না, ঢুকে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল ডেনভারের জুয়াড়ী।

বেঞ্চলিদের সমস্ত দেনা পাওনার ব্যাপারটা আপাতত তুমি দেখছ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দিয়েছি, আঙ্কল, বলল রোসা।

আইনগত ঝামেলা মেটার আগ পর্যন্ত সম্পত্তি আগের মতই।থাকবে। র‍্যাঞ্চের সমস্ত খরচ তার আগ পর্যন্ত আমি বহন করব উইলের নির্দেশ অনুযায়ী…

আর একদিন কি আমি না খেয়ে থাকব? লইয়ারকে থামিয়ে দিয়ে খেঁকিয়ে উঠল জোডি। উইলে বাবা আমাকে টাকা দিয়ে গেছে তুমিই বলেছ। সেই টাকা থেকে কিছু ছাড়ো, আমার পকেট একদম ফাঁকা।

আমার যা আছে সবই তো তোমারও। অ্যাডাম বেঞ্চলির কণ্ঠস্বর চিনতে না পারলেও কে হতে পারে আন্দাজে বুঝল জুয়াড়ী। একবার অন্তত বাবার কথা রাখো। বাবা চেয়েছিল ফিরে আসো তুমি। চলো,

নাপিতের দোকানে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নেবে। তারপর র‍্যাঞ্চে যাবার পথে কথা বলব আমরা।

র‍্যাঞ্চ জাহান্নামে যাক! অবুঝের মত চেঁচাল জোডি বেঞ্চলি, ওই গরুগুলো আমার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। সব টাকা ফেরত চাই আমি। মনে রেখো, হিগিনস, একটা কানা কড়িও ছাড়ব না!

 আমার কিছু করার বা বলার নেই, গম্ভীর স্বরে বলল লইয়ার। তোমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। হলেও যে টাকা, তুমি চাইলেই পেয়ে যেতে তা নয়। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আরও অনেক জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা পেতে তোমার দেরি হবে। হোটেলের ম্যানেজারকে গিয়ে বোলো তোমার বিল যেন সে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। সমস্ত ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর পাওনা টাকা কেটে রাখব আমি।

সিঁড়ির ল্যাণ্ডিঙে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট শুনেছে প্যাট্রিক হল। নিঃশব্দে রাস্তায় নেমে এল সে, হেয়েস হোটেলে ঢুকে লবিতে বসল জোডির দেখা পাবার আশায়। বুঝে গেছে আপাতত ছোঁকরাকে মুচড়ে টাকাআদায় করা যাবে না। তবু দেনার কথাটা ওকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার।

*

লইয়ারের অফিসে অ্যাডামের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকল বাকি তিনজন। আমার মনে হয়, একটু আগে বলেছে সে, জোডি তাড়াতাড়ি  পাওনা বুঝে পাবে তার একটা ব্যবস্থা করা যায়।

ভুরু কুঁচকে গেল জ্যাক হিগিনসের। ব্যাপার কি, অ্যাডাম, সব, ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছ নাকি?

না। আমার বুঝতে ভুল না হলে যা আমি চাই তা-ও পাওয়া যাবে। ওই ব্যবস্থায়।

একটা চেয়ারে রুগ্ন দেহটা এলিয়ে দিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে বড়, ভাইয়ের দিকে তাকাল জোডি। মনে কোন চালাকি থাকলে ভুলে যাও, অ্যাডাম। আমি প্রাপ্য টাকা বুঝে নেবই।  

তুমি জানো কারও সাথে বাটপাড়ি করা আমার স্বভাব নয়, রোসার ডেস্কের কোনায় বসে নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল অ্যাডাম। একটা সিগারেট রোল করে জিজ্ঞেস করল, খাও? জোডি সিগারেটটা নেয়ায়, ম্যাচ। জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দিল। নিজের জন্য রোল করল আরেকটা সিগারেট। অবাক বিস্ময়ে অ্যাডামকে দেখছে রোসা। পশ্চিমে এই কদিনে বহু ধরনের মানুষ দেখেছে সে, কিন্তু তারা কেউ সামনে। দাঁড়ানো এই মানুষটার মত নয়। কিছু একটা আছে অ্যাডামের ভেতরে যেটা আর কারও নেই।

আমার একটা কথা রাখো, জোডি। র‍্যাঞ্চে ফিরে চলো, সমস্ত কিছুর অধিকার তোমার হাতে তুলে দেব আমি। শর্ত, না? ব্যঙ্গ ঝরে পড়ল জোডি বেঞ্চলির হাসিতে। আমি জানতাম চালাকি আছে।

কোনওচালাকি নেই। তুমি শুধু বক্স বিতে গিয়ে থাকবে। কয়েকদিন। কোনও কাজ করতে হবে না, সমস্ত দিক সামলাবে কাউহ্যাণ্ডরা।…

আমি রলিন্সের হোটেলে থাকলে তোমার এত অসুবিধা কিসের? সন্দেহ ফিরে এল জোডির চোখে।

অসুবিধা নেই, তবে বাবার ইচ্ছে পূরণ হোক সেটাই চাই। তোমাকে বেশিদিন র‍্যাঞ্চে থাকতে হবে না, কোনও কাজ করতে হবে। বিনিময়ে তুমি চাইলে আমি কাগজে লিখে সই করে দেব আমার কোনও সম্পত্তি চাই না।

চিন্তিত চেহারায় দাড়ি চুলকাল জোডি বেঞ্চলি। অ্যাডামের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না সে, তবে সত্যি সত্যিই যদি কাগজে লিখে দেয় কোনও সম্পত্তি নেবে না তাহলে মন্দ কি! অ্যাডাম সম্পত্তি নেবে না জানলে ঝামেলা অনেক কম হবে। খুব দ্রুত গরুগুলো বেচে নগদ টাকা হাতে পাবে সে। কয়দিন থাকতে হবে? অবশেষে জিজ্ঞেস করল জোডি।

 জবাবটা শুনে থতমত খেয়ে গেল লইয়ার আর রোসা। চেয়ারে বসে বড় ভাইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জোডি।

নয়শো গরু আছে বক্স বির। পঞ্চাশটার বাচ্চা প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানে থাকবে তুমি। তারপর ওই পঞ্চাশটা বাচ্চা গরু ছাড়া আর সবকিছুই তোমার হয়ে যাবে।

তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি, অ্যাডাম? চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল লইয়ার। একমাসের মধ্যেই তো অন্তত দুশো বাচ্চা হবে হেফারগুলোর। আমি গরু চিনি না, তা-ও তো বুঝেছি ওগুলোর পেট দেখে। তাছাড়া সম্পত্তি জোডি পাবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। যদি প্রমাণ হয় খুনের সাথে সে জড়িত, তাহলে?

খবরদার, ফালতু কথা বলবে না, উকিলের দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠল জোডি। এইমাত্র যা বললে লিখে দেবে তুমি? জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে অ্যাডামের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। প্রস্তাবটা লোভনীয়। অবশ্যই, মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম। একটা দশ ডলা; নোট বের করে বাড়িয়ে ধরল ছোট ভাইয়ের দিকে। নাপিতের দোকানে চুলদাড়ি কেটে এসো। একঘণ্টা পর বাকবোর্ড ভাড়া করে রাস্তা থেকে তোমাকে তুলে নেব আমি।

কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে টাকাটা নিল জোডি, অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জানতে চাইল, সব আমার হয়ে গেলে তুমি চলবে কি করে?

 দুবছর আগে আমাদের নিজেদের পঞ্চাশটা গরুও ছিল না। ঠিকমত র‍্যাঞ্চ চালালে আবার আমার সব হবে, হাসল অ্যাডাম। জোডি চলে যাবার পর আপন মনে বলল, কি ঘটে দেখি। প্যাট্রিক হল ওর কাছে টাকা পায়। আমি দেখতে চাই জোডিকে র‍্যাঞ্চে চলে যেতে দেখে লোকটি কি করে।

বিরক্তিতে মাথা চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কি আর করবে, একবার র‍্যাঞ্চে গেছে জোডির খোঁজে। রাস্তা যখন চেনে আবার যাবে।

হয়তো একবার নয়, দুইবার গেছে।

প্রমাণ কোথায়? ভ্রূ কুঁচকাল চিন্তিত লইয়ার। দ্বিতীয়বার রাতে গিয়ে থাকলে তোমার বাবাকে সে-ই খুন করেছে। কিন্তু আইন চায় প্রমাণ।

খুনের জায়গায় সাধারণত যায় না খুনী। দেখি জোডির পেছন পেছন বক্স বিতে প্যাট্রিক হল যায় কিনা।

তোমার ভাইকে সেজন্যেই র‍্যাঞ্চে পাঠাচ্ছ? কণ্ঠস্বরে কেন যেন হতাশ মনে হলো রোসাকে।

না। আরও কি যেন বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল অ্যাডাম।

ওর মনের কথা বুঝে ফেলল লইয়ার। মাথা নেড়ে বলল, ভাবছ ক্যাটলগুলোর প্রেমে পড়ে যাবে জোডি। কিন্তু আমার মনে হয় না কাজ হবে।

অত নিশ্চিত হয়ো না, হাসল অ্যাডাম। জোডির বয়স যখন দশ ছিল তখনকার একটা স্মৃতি মনে আছে আমার। বজ্রপাতে একমাসের বাচ্চা রেখে মারা গিয়েছিল একটা গরু। বাচ্চাটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বোতলে করে দুধ খাইয়ে বড় করেছিল জ্যোডি। ঘটনাটা ও ভুলে যেতে পারে, আমি ভুলিনি। হয়তো মনের গভীরে এখনও ক্যাটল ভালবাসে ও।

তুমি ছাপ্পান্ন হাজার ডলার হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছ, অ্যাডাম। বড়ধরনের ঝুঁকি। গরুগুলো পেয়েই বেচে দেবে জোডি, জুয়া খেলে প্যাট্রিক হলের মত কারও কাছে খুইয়ে বসবে সব।

তুমি বুঝতে পারছ না, মিস্টার হিগিনস, আমার যা কিছু আছে তা জোডিকে আমি দেব না কেন! অসহায় ভঙ্গিতে শ্রাগ করল অ্যাডাম।

কিন্তু আমি বুঝেছি, হঠাৎ বলে উঠল রোসা। মেয়েটার দৃষ্টিতে উষ্ণতা দেখতে পেল অ্যাডাম। টাকা বা সম্পত্তির কথা ভাবছ না তুমি, ভাবছ শুধু জোডির কথা। ওর ভালর জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে রাজি আছ। তুমি।

মেয়েটা ওর মনের কথা বুঝে ফেলায় লজ্জায় বাচ্চাছেলের মত দুগাল লাল হয়ে উঠল অ্যাডামের। রোসার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে লইয়ারের উদ্দেশে বলল, জোডির সাথে আমার চুক্তির কাগজপত্র তৈরি করে ফেলো, মিস্টার হিগিনস। আমি বাকবোর্ড ভাড়া করে ফিরে এসে সই করে দেব।

.

হেয়েস হোটেলের লবিতে জোডির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করল অধৈর্য প্যাট্রিক হল। একঘণ্টা পরেও যখন ফিরল না, জোডির খোঁজ করতে চেয়ার ছাড়ল সে। একের পর এক বারে খুঁজে দেখল। পোন্ড রূমে ঢোকার আগে ওকে পাশ কাটাল একটা বাকবোর্ড। পেছনে,স্যাডল। চড়ানো অবস্থায় বাধা আছে একটা ঘোড়া। বাকবোর্ডের রাস ধরে আছে অ্যাডাম বেঞ্চলি, পাশে জোডি। দাড়ি গোঁফ কামানোয় বাচ্চা ছেলের মত দেখাচ্ছে তাকে।  

প্যাট্রিক হল ওদের থামানোর জন্য হাঁ করার আগেই ওকে পেরিয়ে গেল বাকবোর্ড। দ্রুতগতিতে ছুটছেফেরিসের পথে। পেছন থেকে তাকিয়ে রইল প্যাট্রিক হল।

১৪.

ক্যাটলগুলো নিয়ে বক্স বির পথে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ এগিয়েছে কাউহ্যাণ্ডরা। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ওদের পাশে পৌঁছে গেল বাকবোর্ড। নয়শো গরু আর বিশটা ষাড় নিজেদের ওড়ানো ধুলোতেই প্রায় চোখের আড়াল হয়ে আছে। ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফঁক–দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওগুলোকে।

তোমার কথামতই ধীরেসুস্থে যাচ্ছি, বাকবোর্ডের পাশে ঘোড়া ছুটিয়ে অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল ফোরম্যান ল্যারি। রাত নামার আগে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছুতে পারলে ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পেছনের সারির পেট ফোলা গরুগুলোকে আঙুল তুলে দেখাল সে। পেটে বাচ্চা নিয়ে জোরে হাঁটতে পারছে না।

ওগুলোকে আলাদা করে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে রেখে যেয়ো, বুদ্ধি বাতলে দিল অ্যাডাম। জোডিকে দেখিয়ে বলল, আমার ভাই। রাঞ্চে থাকির্বে কয়েকদিন। র‍্যাঞ্চে ফিরে সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে, দিয়ে। ত্রুরা কেউ একবছরের বেশি চাকরি করেনি বক্স বিতে। জোডিকে কেউ চেনে না, নাম শুনেছে শুধু।

নড করে ঘোড়া বাকবোর্ডের পাশ থেকে সরিয়ে নিল ল্যারি। এগিয়ে যেতে যেতে জোডিকে গরুগুলো দেখাল অ্যাডাম। চমৎকার, তাই না!

গরু তো গরুই, নির্বিকার চেহারায় জবাব দিল জোডি।

ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছে কুকের সাথে কথা বলল অ্যাডাম। কুক জানে বসের বন্ধু ছিল বিলি বেঞ্চলি। বেড়ার ভেতর গরুগুলো রাখতে দিতে আপত্তি করল না সে। দুশো গরু আলাদা করে রাখা হলো হোল্ডি ফেন্সে।

সন্ধের পর বাজার্ড গ্যাপে পৌঁছুল বাকবোর্ড। দীর্ঘক্ষণের নীরবতা ভেঙে অ্যাডাম জিজ্ঞেস করল, প্যাট্রিক হল তোমার কাছে কত পায়?

কত পায় বলেছে?

কিছু বলেনি। তোমার লেখা একটা নোট তার কাছে আছে জানিয়েছে, বাবার কাছে তোমার ঠিকানা জানতে এসেছিল। সে ভালমতই জানত আমার ঠিকানা, বলল জোডি, আমাকে চিঠিতে তাগাদাও দিয়েছে।

কত পায়?

তোমার জানার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।

জোর করল না অ্যাডাম, নোকটা মিথ্যে বলেছে কেন ভাবল চিন্তিত চেহারায়।

স্পূকি র‍্যাঞ্চে রাত কাটাল ওরা। সকালে পৌঁছে গেল স্যাণ্ড ক্রীকে। উপত্যকায় ফোঁটার মত দেখাচ্ছে অন্যান্য র‍্যাঞ্চের গরুগুলোকে। ওগুলোর সাথে ছেড়ে দেব আমাদেরগুলো, বলল অ্যাডাম, পরবর্তী রাউণ্ডআপে আলাদা করে নিলেই হবে, ওমাহা থেকেই ক্যাটলগুলো ব্যাণ্ডিঙ করিয়ে এনেছি।

ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চে পৌঁছুনোর রাস্তায় পড়ে বামে মোড় নিল ওরা। বেলা দশটার সময় পৌঁছে গেল বক্স বিতে। বাকবোর্ড ঘুরিয়ে জোডির কাছ থেকে বিদায় নিল অ্যাডাম। বাকবোর্ডের পেছনে স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাও দড়ির টানে ফেরিসের দিকে রওনা হলো। আজকে ফেরিসে বিশ্রাম নিয়ে কালকে রলিন্সে ফিরে যাবে সে, কেন যেন ওর মনে হচ্ছে বাবার খুনীকে খুঁজে পাবার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে।

.

পরদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য বাবাকে ডাকল অলিভা বিউয়েল। তারপর ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে গিয়ে ট্র্যাপ ডোরে করাঘাত। করল। ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেছে, অ্যাডাম, ঘুম থেকে ওঠো।

কাঠের মেঝেতে অ্যাডামের পায়ের শব্দ পেল অলিভা।

আধঘণ্টা পর টেবিল ঘিরে বসল ওরা তিনজন। কেমন ঘুমিয়েছ? হেনরিক বিউয়েল জিজ্ঞেস করল।

মোটামুটি, জবাব দিল অ্যাডাম। কাল বিকেলে পৌঁছে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখেছে সে। স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাকে বেঁধেছে বার্নের ভেতর।

সকালেই রওয়ানা হতে চাইবে মনে করে ঘোড়াগুলোকে দানাপানি, খাইয়ে এসেছি, গালে পোরা সেদ্ধ ডিমটা চিবিয়ে গিলে ফেলে বলল অলিভার বাবা।

 হাসি হাসি চেহারায় অলিভার দিকে তাকাল অ্যাডাম। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি রাতে কোথায় ছিলাম, কি বলবে তুমি?

অ্যাডামের প্রশ্নে অবাক হলো অলিভা। কেন, বলব আমাদের সাথে ছিলে!

তুমি কি বলবে, হেনরিখ?

মেয়ের মত বাবাও নিশ্চিত অ্যাডাম সারারাত এখানে ছিল।

তাহলে ভুল বলবে তোমরা, তিক্ত স্বরে বলল অ্যাডাম। রাত একটায় জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়েছি আমি। বার্ন থেকে গোপনে। ঘোড়া বের করে পাঁচমাইল দূরের বক্স বি থেকে ঘুরে এসেছি।

কেন? বোকা বোকা দেখাল অলিভাকে।

সময় জানার জন্য। রাত দুটোয় পৌঁছেছি ওখানে। তিনটের মধ্যেই ফিরে এসে বার্নে ঘোড়া রেখেছি।

কিন্তু কেন? চোখ জোড়া আরও বড় বড় হলো অলিভার।

কেউ এভাবে বক্স বিতে যেতে পারে কিনা দেখার জন্য। উঠে। দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে তুলে মাথায় হ্যাট পরল অ্যাডাম। রলিঙ্গে কেউ। গেলে তাকে দিয়ে বাকবোর্ড পাঠিয়ে দিয়ো, বার্নে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে পৌঁছে বলল সে, এই মুহূর্তে আমি দেরি করতে চাই না।

অ্যাডাম ঘোড়ায় চড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে আসার পর হেনরিখ বিউয়েল দরজায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে জানতে চাইল সে কোথায় যাচ্ছে।

প্যাট্রিক হল নামের এক লোকের সাথে দেখা করতে, রলিন্সের পথে দ্রুত ছুটন্ত ঘোড়া থেকে জবাব দিল অ্যাডাম বেঞ্চলি।

.

ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চের মাইল তিনেক আগে ল্যারি এবং অন্যান্য কাউহ্যাণ্ডদের গরু তাড়িয়ে আনতে দেখল অ্যাডাম। ওদের পাশ কাটানোর আগে ল্যারিকে বলল, জোডি জানতে চাইবে কয়টা গরুর বাচ্চা হলো। ওকে বোলো নিজে গিয়ে খোঁজ নিতে। স্যাডল চড়িয়ে একটা ঘোড়া তৈরি রেখো ওর জন্য, গরুর বাচ্চা গুনতে কাজে লাগবে। ফোরম্যানকে অবাক চোখে তাকাতে দেখে রাসে ঝাঁকি দিয়ে হাসল অ্যাডাম। পরে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব, ল্যারি।

।বিকেলে বেল প্রিঙসে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টের সামনে থামল পরিশ্রান্ত অ্যাডাম। করালে ঘোড়াটা একজনের দায়িত্বে বুঝিয়ে দিয়ে জানতে চাইল ভেতরে কেউ আছে কিনা।

অপরিচিত একজন এসেছে লাঞ্চ করতে। বলছে ল্যানডারে যাবে। জানাল করাল ম্যান।

নতুন এসেছে এখানে?

হ্যাঁ, ঘোড়া দলাইমলাই করতে করতে জবাব দিল করাল ম্যান। নতুন লোক না হলে জিজ্ঞেস করত না কোনদিকের রাস্তা ধরে গেলে ল্যানডারে পৌঁছানো যাবে।

কৌতূহলী অ্যাডাম রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখল কাউন্টারের পাশে একটা, টেবিলে বসে আছে লোকটা। সরু, লম্বাটে চেহারা। গায়ের ফ্যাকাসে ত্বক দেখে বোঝা যায় কখনও র‍্যাঞ্চে কাজ করেনি। পুরানো, কুঁচকে যাওয়া একটা শহুরে কোট পরেছে, কলারে কফির দাগ। গোগ্রাসে খাচ্ছে। শ্লৈষ্ট থেকে বেকন আর স্টেক তুলে।

পরিচিত কুকের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল অ্যাডাম। একটা প্লেটে আমাকেও দাও।

ওর গলার আওয়াজ শুনে তাকাল লোকটা। চোখের দৃষ্টি আটকে গেল অ্যাডামের বুক পকেটের ওপর। লোকটা উঠে দাঁড়ানোর পরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না অ্যাডাম। ডেপুটির চাকরি

বেশিদিন করলে ও বুঝতে পারত লোকটার চেহারা ওর বুকের ব্যাজ দেখেই বদলে গেছে। অপ্রস্তুত অ্যাডাম দেখল কোটের পকেট থেকে পিস্তল বের করে; ট্রিগার টিপল লোকটা। চুলে সিথি কেটে খুলির চামড়া ছিড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট। ঝুঁকিতে আছড়ে পড়ল অ্যাডাম। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় দেখতে পেল না ওকে টপকে এক দৌড়ে করালে গিয়ে ঘোড়ায়। উঠে ছুটেছে আগন্তুক।

মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটায় জ্ঞান ফিরল অ্যাডামের। মাথায় হাত। বুলিয়ে চোখের সামনে এনে দেখল রক্তাক্ত হয়ে গেছে তালু। ওর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে কুক আর করালের সেই লোকটা। রেস্টুরেন্টের মালিক স্টেশন মাস্টার কালকের আগে কোনও স্টেজ আসবে না দেখে বউকে নিয়ে রলিন্সে গেছে।

শুধু চামড়া ছড়েছে, ওকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে মন্তব্য করল, কুক।

কোথায় গেছে? চারপাশে তাকিয়ে দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইল অ্যাডাম।

ল্যানডারের রাস্তা ধরেছে। টেলিগ্রাফ লাইনটা থাকলে রঙ্গিসে খবর। পাঠিয়ে ওকে ধরার ব্যবস্থা করা যেত। আফসোস করল করাল ম্যান। কালকের স্টেজে খবর পাঠানোর আগেই কাউন্টি ছেড়ে পালাবে। লোকটা।

ওকে চিনতে পেরেছি আমি, উত্তেজিত স্বরে বলল কুক। তাই তো বলি ঢোকার পর থেকেই চেনা চেনা লাগছে কেন! ওর ছবি দেখেছি, রলিন্স পোস্ট অফিসের দেয়ালে সাঁটা ওয়ান্টেড পোস্টারে। পাইক হাননা!

 ল্যারামি জেল ভেঙে পালানো পাঁচ অপরাধীর কথা মনে পড়ল। অ্যাডামের। ডেপুটি স্ট্যানলির হাতে ট্রেন ডিপোতে মরেছে একজন। তিনজন আবার ধরা পড়েছে, স্পাইক হান্নাই কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখনও।

আমার দোষেই ব্যাপারটা ঘটল, বলল কুক। পরিচিত চেহারা দেখে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম রলিন্স পোস্ট অফিসে সে কাজ করে, কিনা। তখন থেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছে লোকটা। তারপর ডেপুটির ব্যাজ পরা তোমাকে ঢুকতে দেখে মনে করেছে খেল খতম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *