২৪. মাল্যবানকে মেসে থাকতেই হল

মেজদারা যতদিন রইলেন শরীর ও মনের নানা রকম অরুচি ও অস্বস্তি নিয়ে মাল্যবানকে মেসে থাকতেই হল।

এই রকম করে সাত মাস কেটে গেল। তারপর মেজদারা চলে গেলেন। কিন্তু বাড়িতে ফিরে এসেও মাল্যবান বিশেষ সুবিধে পেল না এবার আর। কোনো ওষুধপথ্য কিছুই গায়ে লাগে না, মনুর শরীর দিনের-পর-দিন কেমন যে হয়ে যাচ্ছে—এ-কথা ভেবে মাঝে-মাঝে দাম্পত্যজীবনের অমৃত যে বিষফল কিংবা বিষফল নয় বঁইচির ফল; বঁইচির ফল—তা যে বিষফল নয় কিংবা বিষফল, এ-ধোঁকাটা ভুলে যেতে হয়; —প্রণয় আশঙ্কার চেয়ে দয়া জিনিসটাকে ঢের বড়ো বলে মনে হয় আবার।

অমরেশ বলে একটি মানুষ—মধ্যবিত্ত বা হয়তো আর-একটু ওপরের সমাজের প্রায়ই আসছিল উৎপলার কাছে আজকাল। অমরেশের রং ফর্সা বলতে পারা যায় না—লম্বা চেহারায় ঠাট আছে বেশ, মনের উৎকর্ষ তার শরীরের প্রতিভার মতো অতটা চোখে না পড়লেও সাংসারিক বুদ্ধিতে সে কৃতীকুশল—প্রায় সিদ্ধির স্তরে পৌঁছেছে। বয়স পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর হবে। বিয়ে করেছে আট-দশ বছর হল—তিনটি ছেলেপুলে আছে। উৎপলার সঙ্গে কবে কোথায় তার পরিচয় হয়েছিল—হয়তো এখানেই এখনই প্রথম পরিচয়, জানা নেই মাল্যবানের কিছু। অমরেশ ও উৎপলা দুজনে মিলে অনেকটা সময় গান-বাজনা নিয়ে থাকে—দু-জনের মেলামেশা শালীন স্বাভাবিক কিনা এই বিতর্কে অফিসে বাসায় অনেকটা সময় মাল্যবানের মন অভিভূত হয়ে থাকে—মনুর কথা ভুলে যায় সে-দয়া জিনিসটাকে ঢের অকিঞ্চিৎকর বলে মনে হয়।

এই রকম ভাবে দিন কাটছিল। মনু আজকাল নিচের ঘরে মাল্যবানের সঙ্গেই শোয়। অমরেশ সাইকেলে চড়ে আসে। সাইকেলটা নিচের রেখে ওপরে চলে যায়; রাত নটা সাড়ে-নটা দশটার সময় বেরিয়ে যায়। তারপর মাল্যবান ওপরে খেতে যায়। গিয়ে দ্যাখে উৎপলা এমনই নিজের ভাবে বিভোর হয়ে আছে যে কথা বলে তাকে বাধা দিতে ভয় করে। খেতে-খেতে মাল্যবান ভাবে উৎপলার অন্য-সমস্ত চেনা-পরিচিত লোকের চেয়ে এই অমরেশ ঢের আলাদা জীব : অন্য সবাই যেখানে হাৎড়েছে, ঘাঁৎঘোঁৎ খুঁজে ফিরেছে, অমরেশ সেখানে ঠিক শাদা-ওয়ালা পিলাগের ওপর হাত রেখেছে পাকা মিস্ত্রির মতো।

ভাবতে-ভাবতে থালার ভাতগুলো নোংরা কড়কড়ে শুকনো চিড়ের মতো মনে হয় যেন মাল্যবানের; ইচের কুচির মতো চিড়ে খেতে হবে ডাল দিয়ে মাছের-ঝোল দিয়ে; সব মিলে-মিশে সুরকি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তবুও কী যেন কীসের একটা ভয়ে—কাকে ভয়, কেন ভয় ঠিক উপলব্ধি করতে পারে না সে আস্তে আস্তে চিবুতে-চিবুতে নিঃশব্দে গলার ভেতর দিয়ে চালিয়ে নেয় সব। কিন্তু তবুও অমরেশ সম্বন্ধে একটা কথাও স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করতে ভরসা পায় না মাল্যবান।

বুঝতে পারল,নিজের মনটা তার স্বাতীর শিশির হলেও শরীরটা তার শুক্তি নয়, কিন্তু শামুক-গুগলীর মতো ক্লেদাক্ত জিনিস। শরীরটার খাঁজে-খাঁজে যে রয়েছে মাংস—মাংসপিণ্ড, সেগুলোকে অনুভব করে মাল্যবান। একটা অদ্ভুত গলগণ্ডের মতন যেন শরীর-তার মন এক চিমটে সময়ের কিণার থেকে দু-দিনের জন্যে ঝুলে আছে। এই সৃষ্টির ভেতরে।

মনু খাচ্ছে; কিন্তু খেতে-খেতেই টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। মনুকে জাগিয়ে দেবে কিনা ভাবছিল মাল্যবান, না উৎপলা মানুকে কানে ধরে ঘুমের মিথ্যের থেকে ঘরের সংসারের গুমোট মিথ্যের ভেতর জাগিয়ে দেবে?

মনু ঘুমিয়ে আছে, কেউ তার দিকে নজর দিচ্ছে না।

অপরুপ চিত্রিনী যেন আজ শঙ্খিনী হয়ে উঠেছে—টেবিলের এক কিণারে ব

সেখাচ্ছে না কিছু উৎপলা; চিনে মাটির ডিশ একটা সমানে রয়েছে তার, কিন্ত তাতে ভাত নেই, চোখ তার ছাদের ওপারে অনেকখানি ভোলা পৃথিবীর দিকে ফেরাতে পারত সে, কিন্তু ছাদের দিকে পিঠ রেখে দেয়ালের পানে তাকিয়ে আছে সে—কিন্তু তবুও দৃষ্টি তার অনেক দূরে চলে গেছে—মাঝখানে দেয়ালটা কোনো বাধা নয়—চোখে তার ব্যথা নেই—উদ্দীপ্তিও নেই কিছু—আছে কেমন আলোর, প্রতিফলনের থেকে টের পাওয়া যায় যে—আলোর উৎসকে সে-সবের আসা-যাওয়ার মতো একটা ঠাণ্ডা নিঃশব্দ ভাবনাময়তা; মনের এ-রকম আশ্চর্য পরিণতির ভেতর নিশ্ৰুপ হয়ে থাকতে উৎপলাকে তো দ্যাখেনি কোনো দিন মাল্যবান। এ কি ভালো, না মন্দ?

এর মানে কী?

তুমি খাবে না, উৎপলা? মাল্যবান গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললে। তুমি খাবে? এবার একটু জোরে বলতে হল তাকে।

ঈষৎ নড়ে উঠে উৎপলা বসবার ভঙ্গি একটু ঠিক করে নিতে গেল। সে কী ভাবে বসেছিল? ধরণটা তো ঠিক মুহূর্তের উপযুক্ত নয়। ঘণ্টাখানেক আগে এ-রকম ভাবে বসলেও চলত; কিন্তু এখন তো এরকম ভঙ্গি চলে না। তা ছাড়া শাড়িটা কোমরে কেমন ঢিলে হয়ে আছে—খুবই ঢিলে—একেবারেই খুলে গেছে। তো-উৎপলা দাঁড়াতে গেলেই সমস্ত শাড়িটাই খসে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে।

এখন কটা রাত?

বেশ রাত হয়েছে, দশটার কম তো নয়। মাল্যবান বললে।

আজ খেতে দেরি হয়ে গেল।

না, এমন কিছু নয়, আমার ক্ষিদে ছিল না।

শীতের রাত—দশটা কম নয় তো।

তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে? এতক্ষণ? কে? আস্তে-আস্তে একটার-পর একটা প্রশ্ন পেড়ে উত্তরের জন্যে থেমে রইল মাল্যমান।

ও এক জন লোক। উৎপলা কোমরে হাত দিয়ে শাড়ি ঠিক করে নিচ্ছিল।

মাল্যবান না দেখল যে তা নয়, খানিকটা রাতের ঠাণ্ডা টেনে নিতে নিতে দেখল আর-এক বার; উৎপলা দেখল যে মাল্যবান দেখল; মাল্যবানের টনটনে জ্ঞান নেই; বৌ তা জানে; কিন্তু তবু মাজার কাপড় আঁটসাঁট করে নিতে-নিতে উৎপলার মনে হল : মানুষটা তো ঘোরেল কম নয়, আমার দিকে নজর পড়েছে তার; কিন্তু আমি কী করেছি! আমি তো কিছু করিনি।

ও একজন তোক যে, তা তো আমিও দেখেছি–

তবে আর কী-দেখেই তো ফেলেছ।

হ্যাঁ, যখন ওপরে উঠছিল, দেখেছিলাম মানুষটিকে। নিচে সাইকেল রেখে গেল।

তারপর?

আমি ওকে চিনি না তো। এ-বাড়িতে দেখিনি কোনো দিন এর আগে।

উৎপলা নিজের ডিশের ওপর খানিকটা জল ছিটিয়ে হাত বুলিয়ে নিয়ে দুচামচে ভাত রেখে বললে, আমার কাছে যারা আসে, সকলকেই কি তুমি চেন?

অল্পবিস্তর মুখচেনা হয়ে গেছে।

কারা আসে বলো তো?

তাদের নাম বলতে পারব না, তবে রাস্তায় দেখা হলে ভুল হবে না।

চেনা আছে বুঝি সকলের—

তা আছে। মাল্যবান আসল কথার দিকে ঝুঁকে পড়ে বললে, কিন্তু, এ কে?

ভাতের সঙ্গে অল্প মাখন মেখে নিয়ে একটু নুন আর কাঁচা লঙ্কা ঘষতে-ঘষতে উৎপলা বললে, কী উদ্দেশ্য নিয়ে আসে তারা?

তা আমি কী করে বলব। সেটা তোমার নিজের নির্বন্ধের কথা। সেখানে তো আমি হাত দিতে যাইনি কোনো দিন।

উৎপলা কাঁচা লঙ্কার বিচিগুলো বেছে-বেছে ফেলে দিচ্ছিল, বললে, ভালোই করেছ, কিন্তু আজ হাত বাড়াচ্ছ কেন?

মনু ঘুমিয়ে পড়েছে।

তা তো দেখছি।

জাগিয়ে দেব?

এখন না।

ভাতগুলো তো চিঁড়ের মতো।

ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, কড়কড়ে লাগছে তাই।

ঠাকুর এ-রকম বেলাবেলিই বেঁধে চলে যায় কেন?

শীতের রাত, কতক্ষণ বসে থাকবে; হাতের আরো দু-পাঁচটে কাজ সেরে বাড়ি যেতে চায়—সেই চেলায়— বলতে-বলতে খেতে আরম্ভ করল উৎপলা এবার; কাঁচা লঙ্কার কিছু কিছু বিচি আছে এখনও ভাতের ভেতর; অনেকগুলোই সে বেছে ফেলে দিয়েছে।

আমি অবিশ্যি বসিয়ে রাখিনি তাকে।

আমি তোমাকে বলিনি তো যে তুমি দায়ী—

মাল্যবানের মনে হল উৎপলার কথাবার্তায় আগের সেই খড়খড়ে ভাবটা কেটে গেছে যেন, কথা স্বাভাবিক, গলা নরম, আলাপচারি তাৎপর্যে মমতা না থাকলেও ভাবগ্রহণ আছে, আছে ষত্ব-ণত্বের চেতনা—মাল্যবানের সৌকর্যের জন্য।

পরদিনও সন্ধ্যের সময় অমরেশ এলো। অমরেশ তার সাইকেলটা মাল্যবানের ঘরের এক কোণায় তালা মেরে আটকে রেখে গেল। মাল্যবান অফিস থেকে ফিরে বিছানায় শুয়ে ছিল। তার দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে অমরেশ বললে, কী করছেন আপনি।

শুয়ে আছি।

অফিস থেকে এলেন?

এই এলুম।

আপনার স্ত্রী আছেন?

হ্যাঁ, ওপরে আছে উৎপলা।

অমরেশ ওপরে চলে গেল। মাল্যবান ঘরের বাতি নিভিয়ে দিল।

কিন্তু বাইরের একটা আলো ঘরের ভেতর ঠিকরে পড়ছে, অমরেশের সাইকেলটা ঝিক-ঝিক করে উঠছে তাই। যখনই সাত-পাঁচ ভাবে মাল্যবান—অন্ধকারের ভেতর চলে যায়; সুফলা ফলার মতো। অন্ধকারটা কেটে সাইকেলটা ঝলসে ওঠে আবার; মাল্যবানের মনে হল এ হচ্ছে উপচেতনার সঙ্গে চেতমার ঝগড়া; অবচেতনা ঘুমের দিকে টানে—মৃত্যুর দিকে; চেতনা অবহিত হতে বলে, ঢেলে সাজাতে বলে; আচ্ছা, ঢেলেই সাজাবে সে।

চা খাওয়া হয়নি তো। চা খাবে কি? ঠাকুর এসে জিজ্ঞেস করে গিয়েছিল বাবু চা-জলখাবার খাবেন কিনা—তাকে না করে দিয়েছে মাল্যবান।

গোলদীঘিতে যাবে কি? না, কৈ যাওয়া হচ্ছে কোথায়? মাল্যবান শুয়েই ছিল। ওপরে এক-আধটা গান হয়ে গেছে। এস্রাজও বেজে গেছে কিছুটা সময়। গান সহজে আসে—শীতের শেষে পাতা যেমন আসে শিমুলের জারুল পিয়ালের ডালে—ছেলেটির গলায়; খুব স্বাভাবিক ভাবে খুব ভালো গাইতে পারে সে; কোনো এক জায়গায় গিয়ে তারপর ব্যক্তিত্বের দিব্য স্পষ্টতা আছে ছেলেটির (ছেলেটি কেন বলছে অমরেশকে সে? চেহারায় সকালবেলায় সরসতা এখনও খানিকটা লেগে আছে বলে?);—সে কি স্বরকৌশলের সিদ্ধি শুধু? আন্তরিকতা? আত্মা? বুঝতে পারছিল না মাল্যবান। অমরেশের চেয়ে ভালো গান শুনেছে সে অবিশ্যি, কিন্তু এটাও আঘাত করে এসে—দুরকম ভাবে যদিও-শিল্প শেফালীর আঘাতটাই তবুও নিবিড়তর যেন। এস্রাজ বাজাল কি উৎপলা? তারপর একঘণ্টা দেড় ঘণ্টা চুপ মেরে আছে সব—ওপরে কোনো লোকজন আছে বলেই তো মনে হয় না।

সাইকেলটা খুব বেশি ঝিকঝিক চিকঝিক করছে; এবং মালিকও আঁশটে দুধরাজের মতো ঝিকিয়ে উঠছে দোতলার ঘরে? সাইকেলের তালা খসিয়ে রাস্তায় নামিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে মাল্যবানের-এর মালিক যেমন সন্ধ্যে না হতেই দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে বত্রিশ নম্বর বাড়িতেই উপস্থিত হয় তবু–ছায়া যেমন সারাদিন দেহের আগে-পিছে ছুটে নাগাল পায় না, রাতের অন্ধকারে শরীরের সঙ্গে বিনিঃশেষে মিশে যায় তবু, তেম্নি ভাবে এসে পড়ে অমরেশ; তেম্নি ভাবে কোনো বত্রিশ বত্রিশ-শো বত্রিশ-শো-অনন্তের দিগন্তে চলে যাবে নাকি মাল্যবান।

বত্রিশ-শো-অনন্তের দিগন্তে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলদীঘিতে বেড়াতে গেল; বেড়িয়ে যখন ফিরছে তখন প্রায় সাড়ে-নটা—এসে দ্যাখে অমরেশের সাইকেল তখনো দেয়ালে কাৎ হয়ে রয়েছে।

বাবু, আপনাকে ভাত এনে দিই?

কেন?

মা দিতে বলেছেন।

দাও। মাল্যবান ঠাকুরকে বললে।

ভাত খেয়ে নিজের ঘরের ভেতর অনেকক্ষণ পায়চারি করল সে, কিন্তু সাইকেল গেল না।

মনু বিছানার এক পাশে ঘুমিয়ে আছে। মাল্যবান ঘড়িতে দেখল প্রায় এগোরাটা বেজেছে; ওপরে গানবাজনা এক-আধবার দু-চার মিনিটের জন্যে তড়পে উঠে অতলে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে যেন।

মাল্যবান একটা চুরুট জ্বালিয়ে বিছানায় এসে বসল। ঢং করে একটা শব্দ হল, পাশের বাড়ির ঘড়িতে সাড়ে-এগারোটা। এই বারে হয়তো ছেলেটি নেমে চলে যাবে। কিন্তু, কৈ, নামল না তো সে। মাল্যবান ভাবল, গানবাজনা আবার শুরু হবে। হয়তো কিন্তু, তাও তো হল না। যতক্ষণ গান সরোদ হাসি তামাশা চলছিল অন্ধকারে ঢিল মেরে নিজেকে তবুও খানিকটা ব্যস্ত রাখা চলে। কিন্তু সব থেকে গেছে তো এখন—বেশি রাত বেশি অন্ধকার বেশি শীত : এখন কী? কী হচ্ছে এখন। যা হচ্ছে, তা হচ্ছে : মনের হেঁয়ালির কাছে মার খেয়ে কোনো লাভ নেই। মনটাকে সে খুব হাল্কা করে নিল; যেন খুব মজাই হয়েছে ওপরের ঘষর, মনে করে হাসতে লাগল সে; সাইকেলটাকে মনে হল অমরেশের নেপালী বয়ের মতো, সাইকেলের ঝিকমিকানিটাকে ভোজালির ঝলসানির মতো; কোমরে ভোজালি গুঁজে অমরেশের নেপালী চাকরটা যেন বেশি রাতের নিরেট শীতে থুপী বুড়ির মতো বসে আছে, মনিব ওপরের থেকে না নামলে রক্ষা নেই তার, কিছু নেই; কিন্তু তবুও একটা আশ্চর্য প্রতীকের মতো যেন এই নেপালী, এই বোকা নেপালী ভোজালি—আজকের পৃথিবীর। স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক, মানুষ-মানুষে সম্পর্ক, মানুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধে সূক্ষ্মতা হারিয়ে ফেলেছে-সফলতাও সরলতাও; হারিয়ে ফেলেছে সরসতা; আজকের বিমূঢ় পৃথিবীতে সমস্ত পরিচ্ছন্ন সম্পর্ক-গ্রন্থিকে ছেদ করে অপরিমিত গন্ডমুখের অপরিমেয়। মনোবল পথ কেটে চলেছে একটা বোকা নেপালী ভোজালির মতো। সময়কে প্রকৃতিকে পুরাণপুরুষকে (যদি থেকে থেকে কেউ) তবে কী হিসেবে ধ্যান করা যাবে আজ? প্রভু হিসেবে? সখা হিসেবে? পত্নী হিসেবে? না, তা নয়। স্বামী স্ত্রী বা সখা ভাবে নয়, সাধা হবে নেপালী ভোজালিভাবে; ঘুম আসছে না মাল্যবানের।

মাল্যবানের নিজের দোষ নয়; ঘুমেরও দোষ নয়; এই পৃথিবীরই দোষ, শতাব্দীর দোষ; কিন্তু তবুও রাত তিনটের সময় জেগে উঠল যখন সে, তাহলে ঘুমিয়ে পড়েছিল কোনো এক সময়।

সাইকেলটা নেই।

রাস্তার দিকের খোলা দরজা দিয়ে হু-হু করে শীত আসছে। উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল মাল্যবান।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *