রবি পথ – আবুল হায়াত
রবি পথ -আবুল হায়াত
প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০২৪
প্রকাশক : শাহরিন হক
সুবর্ণ প্রকাশনী
.
উৎসর্গ
যাঁর আদর্শ অনুসরণে রবিপথ পরিক্রমন
আমার আব্বা এম.এ. সালাম
ও
যাঁর আশ্রয় প্রশ্রয়ে উপযুক্ত পরিক্রমন
আমার আম্মা শাসুন্নাহার বেগম-কে
অপার শ্রদ্ধায়
.
উপক্রমণিকা
“প্রভাতের ফুল ফুটিয়া উঠুক
সুন্দর পরিমলে
সন্ধ্যাবেলায় হোক সে ধন্য
মধুরসে ভরা ফলে।”
এমনি একটা আশাবাদ নিয়েই জীবন কাহিনি লেখা শুরু করেছিলাম দশ বছর পূর্বে। বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে, একটু রস-কষ দিয়ে লিখব যাতে পাঠক পড়ে আনন্দ পায় এই ছিল বাসনা।
শুরুটাও করেছিলাম বেশ নাটকীয় কায়দায়-কিন্তু যত সময় বয়ে যেতে লাগল আমার মধ্যে চলে এলো ঢিলেমি আর বিরক্তি। কত কথা যে ভেসে আসতো লাগলো আমার মনে, অনেকটা বন্যার পানির তোড়ের মতো। কিন্তু সব কথা কি লেখা যায়। মানুষ এসব কথা আমার পড়বেই বা কেন! না থাক, লিখে কাজ নেই।
এই ভেবে রাখলাম ফেলে কিছুদিন। আবার নানাজনের পরামর্শে আর উদ্দীপনায় দোনোমনো করে করলাম শুরু। এভাবেই চলতে লাগলো দশটি বছর ধরে লেখা।
হলো ছাইপাঁশ। আমি নিশ্চিত এটা অত্যন্ত সাধারণ মানের একটা আত্মজীবনী হয়েছে। কিন্তু বিপাশার অনুপ্রেরণার ভাষাটা আমাকে প্রায় উজ্জীবিত করতো এইভাবে— যে জন্যে লিখতেই হলো—
“আব্বু, তোমার লেখাটা শ্রেষ্ঠ লেখা, আর কারো কাছে না হলেও তোমার নিজের কাছে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং মনে করো না তোমার জীবনী অন্য কেউ তোমার চেয়ে ভালো লিখতে পারবে, কখনো পারবেনা।”
শুধু বিপাশা কেনো, গোটা পরিবারটাই আমাকে একপ্রকার বাধ্য করল লেখাটা শেষ করতে-
লিখে ফেলো, যা মনে আসে লিখে ফেলো, দরকার আছে। হ্যাঁ লিখলাম, যা মনে এলো তাই লিখলাম। এর অনেক কথা হয়তো না লিখলেই ভালো হতো। আবার কিছু কথা যা সত্যিই ভালো হতো, তা লিখতে পারিনি হয়তোবা। এসব কারণেই মনে হয় জোলো কিছু একটা হয়েছে।
দোষ গুণ, ভালো-মন্দ বিচারের ভার পাঠককূলের। আমি তো আমার শ্রেষ্ঠ লেখাটা (বিপাশার অভিমতে) লিখেই দিলাম, আমি খালাস! ব্যাস্!
লেখাটা ছাপানোর ব্যাপারে অনেকেই উৎসাহ দেখিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তবে নাতাশার বন্ধু স্নেহাস্পদ তিথি (সুবর্ণ প্রকাশনীর) আবেগ ও উচ্ছ্বাস আমাকে বিশেষভাবে আলোড়িত করায় সিদ্ধান্ত নিলাম তার হাত দিয়েই বইটি মলাট-বদ্ধ হোক! তারই আগ্রহ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টারই ফল এই ‘রবি পথ’। আন্তরিক আশীর্বাদ রইল তিথির জন্যে।
বইটির প্রচ্ছদ, গেটাপ, এবং অন্যান্য সবকিছুই, বিশেষ করে, বইটি যাতে খুব সহজ সরল স্বাভাবিক-দর্শন হয়, বিপাশার চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভূত।
বইটি পাঠকের মনের মতো যদি হয়, বা, তাঁদের যদি একটুও ভালো লাগে, তার প্রশংসা উপর্যুক্ত সকলেরই, বাদ বাকি সবকিছু আমারই।
আবুল হায়াত
নভেম্বর ২০২৪
.
প্রকাশকের কথা
বরেণ্য অভিনয় শিল্পী আবুল হায়াত যেই মমতা দিয়ে তাঁর জীবনের বর্ণিল অধ্যায়গুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন, প্রকাশক হিসাবে নয় পাঠক হিসেবে তা আমি প্রথম পড়েছি, এটা আমার জন্য বিশাল একটা প্রাপ্তি! ওনার অসামান্য বয়ানে লেখাগুলো আমার মনে চলমান ছবির মতো সহজভাবে ধরা দিয়েছে। “লেখক” আবুল হায়াতের লেখার ভক্ত হই পত্রিকার জন্য লেখা ‘এসো নীপবনে’ কলামগুলো পড়ে। তিনি আদতেই যে শতভাগ একজন শিল্পী তা তাঁর লেখা, অভিনয় জীবন ও ব্যক্তিজীবন সর্বক্ষেত্রেই স্পষ্ট। তাই শিল্পী আবুল হায়াতের একটি বই আমি বের করবো এমন সুপ্ত ইচ্ছা আমার ছিল। আর সেটা সম্ভব হলো তার আত্মজীবনী ‘রবি পথ’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে।
আবুল হায়াত একজন প্রথিতযশা নাট্যব্যক্তিত্ব। তিনি আমাদের দেশের টেলিভিশন ও মঞ্চে রেডিও ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, নাটক লিখেছেন এবং অনুবাদও করেছেন। নাটক অন্তপ্রাণ মানুষটি কতোটা রবীন্দ্র অনুরাগী তা বুঝতে পারলাম ওনার এই আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে। তাই এই বইটির নামকরণ ‘রবি পথ’ আমাদের কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। এটি পড়ে আরো মনে হয়েছে একজন রুচিবান সাহিত্যপ্রেমী নিজেকে যেভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখনীতে, যার লেখায় সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার যুগ্মস্রোত এসে মিলেছে সেই বইটি অবশ্যই মলাটবদ্ধ করবে ‘সুবর্ণ’।
সৃজনশীলতার বিস্তার এবং দেশের নবীন-প্রবীন লেখকদের লেখা প্রকাশে ‘সুবর্ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আহমেদ মাহফুজুল হক (জাহাঙ্গীর)-‘আমার বাবা’ নিষ্ঠাবান একজন সেনাপতি ছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে কতটুকু যোগ্য সৈনিক হতে পেরেছি তা জানি না, তবে এটুকু উপলব্ধি করেছি ‘জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা’। ‘রবি পথ’ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, এই যে কয়েক মুঠো সাদাকালো আর রোদভাঙা ভাবনা, স্মৃতি আর অনুভূতির টুকরো টুকরো চিরকুট শিল্পী আবুল হায়াত মেলে ধরেছেন তা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়বদ্ধতা থেকে বইটি আমি প্রকাশ করা সঙ্গত মনে করেছি। লেখকের ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা ও অভিমতে গড়ে ওঠা ঝরঝরে লেখাগুলোর বিস্তৃত বিষয়াদি তাঁর শৈশব, দেশভাগ, জন্মভূমি ছেড়ে নতুন ভূ-খণ্ডে থিতু হওয়া, অতঃপর নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, পরবর্তীতে শিল্পকলার সাথে বসবাসের দিনলিপিগুলো মিলেমিশে হয়েছে অসামান্য এক স্মৃতিকথা।
তাই আমার মনে হয়েছে লেখাগুলো যেমন লেখকের একান্তই নিজের, আবার একই সাথে তা খুব করে পাঠকের জন্যেও। বইটির প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ অন্য কেউ এমনভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে পারবেনা বলেই অভিনেতা আবুল হায়াতের জ্যৈষ্ঠ কন্যা বিপাশা হায়াতের কাছেই বিষয়টি সঁপে দিয়েছিলাম। তিনি যে একজন অসামান্য অঙ্কনশিল্পী ও অভিনেত্রী-শুধু তাই নয়, ওনার সাথে এ বইটির কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম তিনি ভীষণ রকমের একজন মাটির মানুষ! আর আমার ছোটবেলার বন্ধু নাতাশা হায়াত (আবুল হায়াতের কনিষ্ঠ কন্যা) না থাকলে হয়তো এই বইটির সাথে আমার ও ‘সুবর্ণ’র যুক্ত হওয়াই সম্ভব হতো না। আমি আন্তরিকভাবে বিপাশা আপু ও নাতাশাকে ধন্যবাদ জানাই।
পরিশেষে আমি বলতে চাই বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি থেকে থাকলে তার জন্যে পাঠকের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ইচ্ছে থাকলো আগামী সংস্করণে ভুলগুলো শুধরে নিবো। বইটি পাঠকের ভালো লাগলে আমাদের সকলের প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
সকলের মঙ্গল কামনায়
শাহরিন হক
২০২৪
Leave a Reply