• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধকুমার সান্যাল

লাইব্রেরি » প্রবোধকুমার সান্যাল » মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধকুমার সান্যাল
মহাপ্রস্থানের পথে - প্রবোধকুমার সান্যাল

সূচিপত্র

  1. মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধকুমার সান্যাল
    1. এই গ্রন্থের প্রসঙ্গে
    2. নিবেদন
    3. উত্তরভাষণ
    4. মহাপ্রস্থানের পথে

মহাপ্রস্থানের পথে – প্রবোধকুমার সান্যাল

উৎসর্গ

শ্রীযুক্ত সুধাংশুভূষণ মুখোপাধ্যায় শ্রদ্ধাস্পদেষু-

এই গ্রন্থের প্রসঙ্গে

কেদার-বদরীর টান হচ্ছে একটা idea-র টান। দেবতাত্মা হিমালয় নামক নাগাধিরাজের প্রতি মনের টান কালিদাসেরও ছিল, আমাদেরও আছে। আমাদের হিন্দুদের কাছে হিমালয় শুধু একটা বিরাট পর্বত নয়, সেই সঙ্গে একটা বিরাট idea, আর বিরাট idea-র টান একরূপ চুম্বক প্রস্তরের টান।

এ বই কাহিনীও বটে। এ কাহিনীও হচ্ছে তার সহযাত্রীদের কাহিনী। এই সহযাত্রীদের মধ্যে কেউ গাঁজাখোর, কেউ ভবঘুরে। আর স্ত্রীলোকদের মধ্যে কেউ বেশ্যা, কেউ দাসী, কেউবা পর্ণ যৌবনা ভৈরবী। লেখক অতি অল্পকথায় কলমের দুই চার আঁচড়ে এদের ছবি এঁকেছেন অথচ এরা প্রত্যেকেই এক-একটি জ্যান্ত মানুষ হয়ে উঠেছে।

প্রববোধকুমার বলেছেন যে, তিনি সাহিত্যিক দৃষ্টিতে সব দেখেছেন। সাহিত্যিক দৃষ্টি যে কাকে বলে, তা আমি জানিনে। কিন্তু সাহিত্যিক শক্তি ব’লে মানুষের একরকম শক্তি আছে। যাকে চর্মচক্ষে অথবা কল্পনাচক্ষে দেখেছি তাকে কথায় সাকার ও সমান করে তোলবার শক্তিই সাহিত্যিক শক্তি, এ শক্তির পূর্ণ পরিচয় প্রবোধকুমার এ পুস্তকে দিয়েছেন। এ কাহিনীর যিনি কেন্দ্র সেই ‘রাণী’ নামক মেয়েটি সাহিত্যের একটি অপূর্ব সৃষ্টি।

কেন যে অপূর্ব যদি জানতে চান ত বইখানা পড়ে দেখুন। এ কাহিনীর পটভূমি হিমালয়, আমাদের গরম অথচ ভিজে স্যাঁতসেঁতে বাঙলাদেশ নয়। রাণীর অন্তরে আমরা সেই নির্মল উদার আকাশ দেখতে পাই যা মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রীদের চারিপাশে বিরাজমান ছিল।

—প্রমথ চৌধুরী

.

আপনি যে তীর্থ-ভ্রমণের একটা বাস্তব চিত্র আঁকিয়াছেন ইহার ফলেই বোধ হয় আপনার ভ্রমণকাহিনী রস-সাহিত্যে রূপান্তরিত হইয়াছে। মানুষের মন এক বিচিত্র জিনিস-কলিকাতার অন্ধ গলিতে অথবা তুষারধবল বদরীনাথের উপর মানুষের অন্তর প্রকৃতি সহজে বদলায় না এবং চিত্তশুদ্ধি না ঘটিলে তীর্থযাত্রার কায়িক ক্লেশের কোনও আধ্যাত্মিক মূল্য নাই। এসব কথা আপনার বইয়ের মধ্যে বেশ ফুটিয়া উঠিয়াছে। আপনার পুস্তক তীর্থযাত্রা-কামীদের হাতে পড়িলে তাঁহাদের মঙ্গল হইবে।

‘রাধারণী’র জন্য আমার বাস্তবিক কষ্ট হইয়াছে এবং আপনার উপর রাগ হইয়াছে—আপনার হৃদয়হীনতার জন্য—যদিও আপনি বলিতে পারেন যে, হঠাৎ ঐ অবস্থায় পড়িলে আমিও ঐরূপ আচরণ করিতাম। হঠাৎ ঐ অবস্থায় পড়িলে আমি কী করিতাম সে অনুমান এখন করিয়া লাভ নাই। তবে একথা আমি বলিতে পারি যে, আমার মতে আমাদের বর্তমান সামাজিক অবস্থায় স্ত্রীজাতির উপর ঘোর অন্যায় ও অবিচার করা হয় এবং তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোক আমরা, তাহা দেখিয়াও দেখি না।

‘রাণী’র যে চিত্র আপনি আঁকিয়েছেন তাহা যেমন সুন্দর তেমনই হৃদয়গ্রাহী হইয়াছে। অন্যান্য পাঠকের মত, আমারও রাণীর সম্বন্ধে আরও জানিতে ইচ্ছা হয়—যখন পুস্তকটা শেষ করি। পাঠক যদি অতৃপ্তি এবং জিজ্ঞাসা-ভাবের মধ্যে পুস্তক শেষ করেন তাহা হইলেই বুঝিতে হইবে যে লেখকের সৃষ্টি প্ৰচেষ্টা ব্যর্থ হয় নাই।

—সুভাষচন্দ্র বসু

নিবেদন

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আমি একখানা নূতন বাংলা বানানের তালিকা পেয়েছিলাম। ‘মহাপ্রস্থানের পথে’র এই দ্বিতীয় সংস্করণে যতদূর সম্ভব সেই তালিকার অনুসরণ করেচি। পুরাতন অভ্যাসবশত ভুলত্রুটি কিছু কিছু রয়ে গেল। তাছাড়া অনেক সতর্কতা সত্ত্বেও ছাপাখানার ভূতের দৌরাত্ম্য নানা জায়গায় প্রকাশ পেয়েছে।

কবি শ্রীযুক্ত কালিদাস রায় মহাশয় নূতন সংস্করণের পরিমার্জনায় আমাকে বিশেষ সাহায্য করেচেন; ভাব ও ভাষা প্রকাশে অনেক জায়গায় আমার রচনার পঙ্গুতা ছিল। তাঁর কাছে ঋণ স্বীকার বাহুল্য।

দ্বিতীয় সংস্করণের প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলব। এই ‘ভ্রমণবৃত্তান্ত ভারতবর্ষে’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে (ইং ১৯৩৩) বাংলাদেশ ও বাংলার বাইরে নানা প্রদেশ থেকে বাঙালী পাঠকরা অনুমান সহস্রাধিক প্রশ্ন ও কৌতূহল-পত্র আমার কাছে পাঠাতে থাকেন। তাঁরা সকলেই আমার পথের সঙ্গী ব্রহ্মচারী, রাধারাণী, গোপালদা, চারুর-মা, রাণী প্রভৃতির ইতিবৃত্ত শোনবার জন্য অত্যন্ত ব্যগ্র। মুখোমুখি যাঁরা আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (নির্ব্বাসিতের আত্মকথা) শরৎচন্দ্র, শিশিরকুমার ভাদুড়ী, রায় বাহাদুর যতীন্দ্রমোহন সিংহ। (‘সাহিত্যের স্বাস্থ্যরক্ষা’)। রাজেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বইখানার নিন্দা- সুখ্যাতির কথা বাদ দিই, কারণ গল্প ও উপন্যাস লেখক হিসাবে ওগুলো আমার গা-সওয়া, কিন্তু এই বইয়ের অন্তর্গত আমার সঙ্গী ও সঙ্গিনীগণ সম্বন্ধে ইংরেজি ও বাংলায় বহু কৌতূহল ও আলোচনা বিভিন্ন সাময়িকপত্রে বহুবার প্রকাশিত হয়েছে।

‘রাধারাণী’র প্রসঙ্গ পাঠ করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যে উচ্ছ্বসিত ভাষায় স্তুতিবাদ করেছিলেন এবং মেয়েটির প্রতি কিছু অবিচার করে ছেড়ে আসার জন্য আমাকে করেছিলেন যে পরিমাণ তিরস্কার, (ভারতবর্ষ, পৌষ ১৩৪০) সেটি আমার নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে; শ্রীযুক্ত প্রমথ চৌধুরী মহাশয় তাঁর অননুকরণীয় ভাষায় ‘রাণী’র স্তবগান করেছিলেন। (বিচিত্রা, আশ্বিন, ১৩৪০)।

যাইহোক, উপরোক্ত বিদ্বজ্জনের উৎসুক প্রশ্নে আমি কিছু গৌরববোধ করলেও তাঁদের নিকট সদুত্তর দিতে পারিনি; নানা কারণে ও নানাকথায় অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছি। বিশেষ করে ‘রাণী’র পরিচয় প্রকাশ করা আমার পক্ষে নিষেধ আছে এছাড়া শিমলা, দিল্লী, মীরাট, কাশী, পাটনা, দার্জিলিং, ফরিদপুর এবং কলিকাতা প্রভৃতি জায়গায় প্রকাশ্য সভায় যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা আমাকে গ্রেপ্তার করে ‘রাণীর প্রসঙ্গ শুনতে চেয়েছিলেন, এই সূত্রে তাঁদের জানাই যে, ‘রাণী’র পিতৃ-পরিচয় বাংলাদেশের জনসাধারণের নিকট পরিচিত; তবে তাঁর পিতাও জীবিত নেই এবং ‘রাণী’ও তাঁর আসল নাম নয়, ও-নাম আমারই দেওয়া। ভারতবর্ষে ভ্রমণ-বৃত্তান্ত রচনার সময় কোন এক তীর্থপথ থেকে তিনি আমার নিকট পত্রযোগে জানিয়েছিলেন যে, ‘রাণী’ নামটাই তাঁর পছন্দ। আজ তিনি কোথায়, জীবিত অথবা মৃত, সে-সংবাদ আমি জানিনে; জানা সম্ভব নয়, সঙ্গত নয়। এখন তিনি আমার স্মরণের পরিমণ্ডলের মধ্যেও নেই, কারণ আমার প্রকৃতিটা নদীর মতো, এর প্রবাহে সমস্তই অকূলের দিকে ভেসে যায়।

আমার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এই যে, পার্বত্য পথে শারীরিক দুঃখ- কষ্টের বর্ণনায় আমি কিছু রং ফলিয়েচি। অভিযোগ অনেকটা সত্য, কারণ, পথে অনেক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের নিঃশব্দ সহিষ্ণুতা দেখে আমিও বিস্মিত হয়েছিলাম এবং তারা আমার মতো কোমর বেঁধে সাময়িক পত্রের পৃষ্ঠায় কান্নাকাটি করতে বসেনি। অথচ, আমি তখন ছাব্বিশ বছরের যুবক, স্বাস্থ্যও ভালো, আমার সহ্যশক্তি তাদের সকলের চেয়ে বেশি থাকা উচিত। যাইহোক, আমার একমাত্র সাফাই এই যে, শহরের যন্ত্রসভ্যতার মধ্যে আমি মানুষ, যানবাহনের সুযোগ- সুবিধার ভিতরে বড় হয়ে উঠেচি, দীর্ঘ পার্বত্য পথ পদব্ৰজে উত্তীর্ণ হওয়া আমার অভ্যাস ছিল না; তাছাড়া শরীর ছিল সে সময়ে অসুস্থ, মন ছিল বিষণ্ণ, সামান্য পরিশ্রমও অত্যধিক ব’লে মনে হ’তো। লজ্জার কথা এই, চারুর মা’র মতো দেহ বৃদ্ধাও কেবলমাত্র ভক্তি ও বিশ্বাসের জোরেই আমাকে টেক্কা দিয়ে চলে গেচে।

কেদার ও বদরীর পথ চিরদুর্গম। কিন্তু সরকারের সাহায্যে প্রতি বছরেই অনেক দুর্গম পথ সুগম হয়ে চলেচে। এতে যাত্রীদের কষ্ট কম হয়, পরিশ্রম বাঁচে, উৎসাহ থাকে সতেজ। চার বছর আগে আমার নিকট যে-যে পথ ভয়াবহ মনে হয়েছিল, আজ সেই পথ দিয়েই অনেক যাত্রী হাসিমুখে ফিরে আসে। সেজন্য আমার বর্ণনায় যদি কিছু অসামঞ্জস্য দেখা যায়, আমি তা’তে লজ্জিত হবো না। আমার যাত্রায় পথের যে-বর্ণনা ফুটেচে, তাকেই পাঠকরা মেনে চলতে বাধ্য।

এই ভ্রমণ-কাহিনীর মধ্যে যারা শুনতে চায় তীর্থদেবতাগণের বর্ণনা, মন্দিরের ইতিবৃত্ত, কেদারনাথ ও বদরীনাথের প্রতি ভক্তজনের হৃদয়োচ্ছ্বাস, তাদের নিতান্তই ব্যর্থ মনোরথ হতে হবে। ভ্রমণ-কাহিনীর মধ্যে থাকবে ভ্রমণ এবং কাহিনী। কেদার ও বদরীর মাহাত্ম্য কীর্তন করবার জন্য এ রচনা নয়, নিজে আমি সংবাদ-সংগ্রাহকও নই; যারা এই দুর্গম তীর্থে যাত্রা করবার জন্য ইচ্ছুক তাদের কৌতূহল মিটানো, মধুর বর্ণনার দ্বারা তাদের প্রলুব্ধ করা কিংবা পথ-নির্দেশ করার জন্যও এ-কাহিনী ফেঁদে বসিনি।

আমি সাহিত্য-ব্যবসায়ী ও গল্পলেখক; সমস্ত পথটার উপরে ছিল আমার চিন্তাপ্রবণ চক্ষু, গল্প-লেখকের বিচিত্র আনন্দ ও অনুভূতি। সামান্য বস্তু আমার চোখে দেখা দিয়েছে অসামান্যরূপে, বড়-বড় ঘটনার ঘাত-সংঘাত আমার কাছে মিথ্যা হয়ে গেচে। তীর্থের চেয়ে তীর্থপথ আমার কাছে অপরূপ, দেবতার চেয়ে সহযাত্রীরা পেয়েছে প্রাধান্য, পরকালের চেয়ে ইহকাল। ধর্মের চেয়ে আমার কাছে বড় ‘মানব-ধর্ম’, অনাত্মীয় বদরীনাথের চেয়ে বড় আমার চারিপাশে এই দুঃখেসুখে ভরা, আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নমুগ্ধ বিপুল জনস্রোত। প্রথম দিকে ছিল আমার সন্ন্যাসীর বেশ, কিন্তু সে মোক্ষলাভের পথ আবিষ্কার করবার জন্য নয়, সে কেবল আমার বৈরাগী মনের বাহ্য রূপ, সমস্ত বিষয় থেকে নির্লিপ্ত থাকার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। জানি, যে-প্রাচীন রীতিতে সাধারণত তীর্থভ্রমণ লেখা হয়, আমার এই ভ্রমণ-কথার ভিতর দিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত হবে, যারা পুণ্যকামী তীর্থযাত্রী তাদের চক্ষু হবে ক্রোধারক্ত; কিন্তু তার জন্য আমি দুঃখিত; প্রাচীন রীতিনীতি প্রাচীনের সঙ্গেই বিদায় হোক, নবীনের কালে যদি সে বাঁচতে চায় তবে তাকে আত্মসংস্কার করতে হবে, নবীনের ব্যবহারের উপযুক্ত হতে হবে, নচেৎ তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। তীর্থযাত্রা কেবল ভক্তের জন্য নয়, আমার জন্যও,-মন্দিরবন্দী দেবতার প্রতি যার মোহ নেই, ধর্মের প্রতি যার নির্ভরতা নেই, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে যে উদাসীন!

ভ্রমণবৃত্তান্তকে সাহিত্যের পদমর্যাদা দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল, তাই চিরাচরিত প্রথাকে প্রায়ই লঙ্ঘন করেচি। সেজন্য যারা পেশাদার ট্যুরিস্ট, তারা আমার বইয়ে সম্পূর্ণ তথ্য নাও পেতে পারেন, কারণ, সংবাদ সংগ্রহের দিকে আমার লক্ষ্য ছিল কম; অনেক প্রয়োজনীয় বিবরণ বাদ দিয়েচি, অনেক নিষ্প্রয়োজনীয়কে তুলে ধরেচি। এখানে ভ্রমণের আনন্দ ও দুঃখটাই বড়, তথ্যের হিসাবনিকাশটা সামান্য। এই কথাটা চিরভ্রাম্যমাণ কবি রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি ক’রে আমাকে এক পত্রে জানিয়েছিলেন, “আমরা শাস্ত্রের হাতে মানুষ, বাঁধা আদর্শের আঁচল-ধরা। কিন্তু কোন্ লেখাটাকে ঠিক ভ্রমণ-বৃত্তান্তের কোঠায় ফেলা যাবে কি যাবে না সে রকম জাতবিচার করে চলা সাহিত্যের দায়িত্ব নয়। ভ্রমণ উপলক্ষ্যে যা কিছু চিন্তা করেচ, সেটা যদি ভালো ক’রে প্রকাশ ক’রে থাকে, তাহ’লেই সন্তুষ্ট থাকব—তার মধ্যে বৃত্তান্ত ব’লে কোনো বালাই না থাকে তবু নালিশ করব না।”

প্রবোধকুমার সান্যাল

উত্তরভাষণ

ভারতীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান পরিচয় ভারতবর্ষের অসংখ্য তীর্থস্থান। পুণ্যভূমি ভারতের স্থাপত্যশিল্প শ্রেষ্ঠতা লাভ করেছে অগণ্য তীর্থপথের দেবমন্দিরে। এই তীর্থপথ যত দুৰ্গমই হোক, তারা আপন মহিমায় চিরকাল ধরে মানুষকে আকর্ষণ করেছে। পুণ্যলাভের কামনায় মানুষ গিয়েছে বনে জঙ্গলে, ছুটেছে সমুদ্রপথে, ঝাঁপ দিয়েছে অনামা নদীর তুফান তরঙ্গে, পেরিয়ে গেচে দুঃসাধ্য মরুপ্রান্তর-জীবন মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে পদে-পদে বাধা, ক্লান্তি, আত্মনিগ্রহ একদিকে-অন্যদিকে নৈরাশ্য, আতঙ্ক, ব্যাধি, বিকার-কিন্তু মানুষ ওদের কাছে পরাজয় স্বীকার করেনি। দুর্লভ্যের আকর্ষণ সকল বাধাবিপত্তির ভিতর দিয়ে তাকে টেনে নিয়ে গেচে।

ভারতের শিয়রে আবহমানকাল থেকে নগাধিরাজ হিমালয় যেন মহাযোগে আসীন। তার ললাটের জটাজটিলতার থেকে নেমে এসেছে অগণ্য স্রোতস্বিনী- তারা যেন সেই দেবাদিদেবের আনন্দেরই ধারা। মহাযোগীর শিরশূড়া চিরতুষারে আবৃত, তার অঙ্গের স্তবকে স্তবকে তীর্থমন্দিরগুলি মণি-মাণিক্যের মত জাজ্বল্যমান। ওদের মধ্যে বদরীনাথ, কেদারনাথ, কৈলাসনাথ—ইত্যাদির দর্শন কোটি কোটি নরনারীর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাম্য। ওদের ওই বিশালতার মহিমা মানুষকে যেন দেবলোক থেকে আহ্বান জানায়-সেই আহ্বান শুনে একদিন তীর্থযাত্রীর দল আত্মবিস্মৃত অস্থিরতায় ওই দুঃসাধ্য দুর্গম তীর্থের পথে বেরিয়ে পড়ে। সংসারের মায়া, স্বজনের মমতা, সম্পদের মোহ-সমস্তই তাদের পিছনে পড়ে থাকে।

একদিন হঠাৎ আমিও বেরিয়ে পড়েছিলাম ওই হিমালয়ের তীর্থপথে। আমার তখন বাসা ছিল হরিদ্বারে এবং বয়স ছিল কম। কিন্তু যাবার আগে আমার মনে ছিল জটিল প্রশ্ন, ছিল উদ্দীপনা, ছিল ভয় ভাবনা। হয়ত পরমার্থ ____ কোন জটিল চেতনাও তখন তরুণ মনে বাসা বেঁধেছিল, হয়ত-বা ____ অজ্ঞানের অন্ধকারে কোথাও কিছু খুঁজে পাবার জন্যও এখানে ____ ফিরছিল। মনে পড়ে সেদিন চিত্তলোকে একটা প্রবল আলো ___  

নিজের ভিতরকার তাড়না আমাকে বারবার ছুটিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে ভারত- পরিক্রমায়। সেতুবন্ধে, কোনারকে, সোয়েডাগন প্যাগোডায়, দ্বারকায়, অজন্তায়, লাণ্ডিখানায়—সেই পরিক্রমা কিন্তু শেষ হয়নি। সেই অন্তর তাড়নাই বুঝি আমাকে নিয়ে চললো হৃষিকেশ ছাড়িয়ে দেবপ্রয়াগ পেরিয়ে। বাইরে হিমালয়ের অনন্ত নিস্তব্ধ মহাশান্তি কিন্তু আমার মধ্যে নিগূঢ় অসন্তোষ, আর অতৃপ্তি-আমার সন্ধানী মন ফিরছে পথে পথে। কিছু আমার চাই, কিন্তু তার সত্য স্বরূপ আমার জানা নেই। অনেক সময় যেতে হয়েছে লোকচক্ষের বাইরে; অনেক সময় বা পিছন ফিরে নিজের পায়ের চিহ্নও মুছে দিয়ে যেতে হয়েছে। নিজের প্রশ্ন নিজেই কান পেতে শুনতুম-একথা জানতুম সে-প্রশ্ন উঠে দাঁড়ায় অস্তিত্বের মূলকেন্দ্র থেকে—যেটাকে বলে পরম পিপাসা, প্রাণসত্তার অন্তহীন অতৃপ্তি।

মনে পড়ছে হরিদ্বারে প্রথম আলাপ ব্রহ্মচারী আর জ্ঞানানন্দর সঙ্গে। কৌতুকপ্রিয়, চটুল, সদানন্দ এবং ঔদরিক ব্রহ্মচারী। সন্দেহ ছিল, সে মেদিনীপুরের কোন এক বিপ্লবীদলের লোক। পুলিশের চোখ এড়িয়ে সে পাহাড় পর্বতে আত্মগোপন করেছে কিন্তু আমার গ্রন্থে সেকথা সেদিন প্রকাশ করা বিপজ্জনক ছিল। মনে পড়ছে হৃষিকেশের কালীকম্বলী বাবার ওখানে প্রথম আলাপ গোপাল ঘোষের সঙ্গে। তিনি আমাকে দেখেই চিন্‌লেন, আমি নাকি জাত সাপ। তারপর একে একে সবাই। বামুনবুড়ী, ন্যুব্জদেহ চারুর মা, নির্মলা, রাঙ্গাশাড়ী, মনসাতলার মাসী, পণ্ডিতজী, সুকুল আর সাধু।—ওরা সবাই সাধারণ, অতি সাধারণ-কিন্তু ওই অন্তহীন গিরিপথের বিচ্ছিন্ন জগতে ওরা ছিল অপার্থিব, ছিল অনন্যসাধারণ। ওদের ভক্তি, অনুরাগ, অধ্যবসায়, কষ্টসহিষ্ণুতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমরা সবাই গিয়েছিলুম পায়ে হাঁটা পথে। যানবাহনের মধ্যে সেকালে পাওয়া যেত কেবল কাণ্ডি, দাণ্ডি এবং ঘোড়া। কিন্তু এদের খরচ বহন করার মতো অর্থসঙ্গতি সেদিন আমাদের কারো ছিল না। এছাড়া সমস্ত পথটা পায়ে হেঁটে প্রদক্ষিণ করার মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক বাহাদুরীও খুঁজে পেয়েছিলুম। চারশো মাইলের কিছু বেশী আমাদের সকলকে হাঁটতে হয়েছিল।

বিজনী, ছান্তিখাল, ব্যাসঘাট, দেবপ্রয়াগ পেরিয়ে আবার জুটলো নতুন সঙ্গী। অঘোরবাবু, রাধারাণী আর তার মা। রাধারাণী স্বভাব-কোমল সে তীর্থে এসেছে পুণ্যলাভের কামনায়। সহোদরার মত তার আচরণ, নিষ্কলুষ তার মন। হঠাৎ রামপুর চটিতে অঘোরবাবুর সঙ্গে বিতর্ক বাধলো ব্রহ্মচারীর। হঠাৎ নাটকীয়ভাবে জানলুম, রাধারাণী এক পতিতা নারী। ঘটনাচক্রে সেদিন একা চলে গিয়েছিলুম নিজের পথে।

মনে পড়ছে ঠিক সেইদিন সন্ধ্যারাত্রির কথা। চন্দ্রা আর মন্দাকিনীর সঙ্গমে অন্ধকারে আমার পথ হারানো। চারিদিকে বনময় পর্বত, অন্ধকারে ভয়চকিত আমার মন সহসা পিছনে ছমছমিয়ে এসে দাঁড়ালো এক ভৈরবী। সর্বাঙ্গে রুদ্রাক্ষের অলঙ্কার, পরনে গৈরিকবাস, দুই হাতে শিঙ্গা আর কমণ্ডলু। চঞ্চল এক পাহাড়ী মেয়ে। মেয়েটি সেদিন পরদেশী পরিব্রাজককে নদীসঙ্গম পার করিয়ে পথ দেখিয়ে চলে গিয়েছিল। গিয়েছিল নদীতীরের পথে-অন্ধকার। অজানায়। তার সেই আকস্মিক আবির্ভাব আজও আমার কাছে রহস্যভরা।

চন্দ্রাপুরী ছেড়ে আবার চললুম নিজের পথে পিছনে পড়ে রইল রুদ্রপ্রয়াগ- আর সেই রুদ্রপ্রয়াগের ঘাটের পাশে সেই মাতৃরূপিণী নারায়ণ-গিরিমায়ীর আশ্রম-সেই দুটি শীর্ণকায়া তরুণী সন্ন্যাসিনী-সোনি আর রপি, আর রইলো পিছনে গুপ্তকাশী, ত্রিযুগীনারায়ণ, গৌরীকুণ্ড, চীরসা ভৈরব আর রামওয়াড়া- শীতার্ত দেহে তুষার-বর্ষণের ভিতর দিয়ে পৌঁছেছিলুম কেদারনাথে। রোগে, জরায়, যন্ত্রণায়, কত যাত্রী পিছনে পড়ে রইলো-তাদের কথা ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারিনি কেদারনাথের সেই উত্তুঙ্গ ধবল-মহিমা, ভুলতে পারিনি যন্ত্রণা- জর্জর তীর্থযাত্রীর আত্মহারা ভক্তিবিহ্বলতা। সেদিন আমাদের পিছনের পথ তুষারপাতের ফলে লুপ্ত হয়েছিল।

মনে পড়ছে মন্দাকিনীর পুল পেরিয়ে পুরাকালের বাণরাজার দেশে পৌঁছানো। বাণরাজার কন্যা উষার নামে উখীমঠ। প্রাণান্তকর চড়াই-পথ ছিল তিনদিন। তারপর তুঙ্গনাথ আর পাঙ্গরবাসার অরণ্য। ওই পথে গোপালদার রসরসিকতা, বামুনবুড়ীর কচকচি, আর চারুর মার মুখ থেকে তার গৃহপালিত গরুর গল্প। সেই নিস্তব্ধ পার্বত্য উপত্যকাতেও সেদিন বাস্তব জীবনের কলরব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। এমনি করে বাইশ দিন হেঁটে চামোলির ধর্মশালায় এসে আমি রোগশয্যায় শুয়েছিলাম। বদরীনাথ পৌঁছতে তখনো চারদিন বাকী।

অলকানন্দায় অবগাহন স্নানের ফলে সেদিন আমার ব্যাধিবিকার শান্ত হয়ে ছিল। তারপর পিপুলকুঠী, গরুড়গঙ্গা, কুমারচটি আর সিংহদ্বার পেরিয়ে যোশীমঠে পৌছেছিলুম। কত গঙ্গা পথে পথে। আকাশগঙ্গা, পাতালগঙ্গা, গরুড়গঙ্গা আর ধবলীগঙ্গা, পিন্দারগঙ্গা আর বিষ্ণুগঙ্গা। তারপর পাণ্ডুকেশ্বর আর লামবগড়ের পথ। কত মার্বেলের পাহাড়, কত পুরাকীর্তি, কত ভূর্জপত্র আর রুদ্রাক্ষের বন। এই পথ দিয়ে স্বর্গারোহণ করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদী। এদিকে যেন কোথায় আছে লোকপাল আর নন্দনকানন। এমনি করে গিয়ে পৌঁছেছিলুম হনুমান চটীতে।

হনুমান চটীর থেকে বদরীনাথ আন্দাজ পাঁচ মাইল। পথ অতিশয় সঙ্কটাপন্ন ছিল সেদিন—চড়াই পথ ছিল দুঃসাধ্য। পথের এক বাঁকে দূরের থেকে প্রথম চোখে পড়ে বদরীনাথের স্বর্ণচূড়া, সেই দৃশ্য দর্শনে পরিশ্রান্ত যাত্রীর সমগ্র অন্তর মথিত করে চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু নেমে আসে। তারা ভগ্ন কম্পিতকণ্ঠে কেঁদে ওঠে—জয় বদরী বিশাললাল কি জয়।

আজও ভুলিনি আমার মনে সেদিন ছিল সংশয়ের যন্ত্রণা। দেখলুম জন্মান্ধ যাত্রী চলেছে দেবদর্শনে, দেখলুম ন্যুব্জদেহ পঙ্গু আর খঞ্জ তীর্থযাত্রী -দেখলুম তাদের অখণ্ড বিশ্বাস। বিশ্বাসের পথ তারা আমাকে দেখিয়েছিল বৈকি। দেখিয়েছিল আত্মসমর্পণের পথ, অহংবুদ্ধি বিসর্জনের পথ। দেবতাত্মা হিমালয়কে সেদিন আশ্চর্য মনে হয়েছিল।

মন্দির ও বিগ্রহ দর্শনের পর বাইরে এসে পথের এক শিলাজতুর দোকানে এক বিধবা মেয়ের সঙ্গে ঘটনাচক্রে আলাপ। মন্ত্রদীক্ষিতা, ব্রহ্মচারিণী, ভক্তিমতী মেয়ে। অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্যে মেয়েটি মুখর, অজস্র আনন্দ উচ্ছলতায় আত্মবিস্মৃত। তিনি তার নিজের নাম রেখে গেচেন রাণী। উত্তর প্রদেশে তার বাসা-তিনি এক বিশিষ্ট সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা। তাঁর পিতার নাম বাঙ্গলাদেশে শাসক মহলে পরিচিত। মনে পড়ছে সেদিন তিনি আমার কৈলাস ভ্রমণের পথ অবরোধ করেছিলেন। বদরীনাথে তিনি আমাদের দলকে ছেড়ে চলে যান, কিন্তু কয়েকদিন পরে কর্ণপ্রয়াগ থেকে তিনি আমার সহগামিনী হন এবং শেষ দিন পর্যন্ত আমরা পাশাপাশি চলতে থাকি। পথে কখনও নেমেছে বর্ষা, কখনো-বা বসন্ত। তাকে সঙ্গে নিয়ে, পেরিয়েছি আদবদরী আর পিন্দারগঙ্গার পথ, মেহলচৌরী, দ্বারীহাট আর রাণীক্ষেত। মনে পড়ছে বনময় পর্বতের সানুদেশে সুশীতল ঝরনার ধারের ছায়াপথে তিনি রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে বসেছেন জপে দেখেছি তাঁর একাগ্রতা, দেখেছি তাঁর শান্ত আয়তনক্ষে বিড়ম্বিত জীবনের অশ্রুর আভাস। ট্যারাপিসি তাঁকে অসম্মানের আঘাত করেছে, দিদিমা করেছেন সস্নেহ শাসন কিন্তু সেই আঘাত আর শাসনের খরতাপে পদ্মের কোরক সেদিন শতদলে বিকশিত হয়েছিল।

ছবির মত আজও যেন দেখতে পাই দুজনে দুই ঘোড়া নিয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলেচি। পথের দুই পাশে অরণ্যপুষ্পের সৌরভ প্রসারিত নির্ঝরের কলতানে মুখরিত-লতাবিতানের ফাঁকে ফাঁকে আমরা বিশাল হিমালয়ের শোভা দেখে-দেখে চলে যেতুম। কখনও দেখতুম অস্তাচলের চূড়ায় নেমেছেন সূর্যদেব, চিড় আর পাইনের বনে অরণ্যপক্ষীর সান্ধ্যকাকলীতে মুখরিত পথ, নিচে নদীতে নেমেছে ছায়ান্ধকার। মনে পড়ছে জ্যোৎস্নারাত্রে সেই গগাস চটীর ধার। পাহাড়ের ধারে পাষাণ-প্রতিমার মতো তিনি আসীন।

জীবন কি ব্যর্থ?—এই ছিল তার প্রশ্ন আনুষ্ঠানিক জপ তপ সাধনার বাইরে আর কি কোন সার্থকতার পথ নেই?

রাণীর কোন প্রশ্নের জবাব ছিল না আমার কাছে কিন্তু তার নিশ্বাস পড়েছিল আমার পাশে—সেই নিশ্বাসে পথের দুপাশের পাইন আর ঝাউয়ের বন ফুঁপিয়ে উঠেছিল।

রেলপথের প্রান্তে এসে একদিন তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। সেদিন তার দুই চক্ষে উচ্ছলিত ছিল জীবন মথিত করা গভীর প্রশ্ন। বিশ্বাস করো কি ইহকাল? বিশ্বাস করো কি পরকাল আর পুনর্জন্ম? বিশ্বাস করো কি, প্রেম মৃত্যুঞ্জয়ী?

সেই প্রশ্নের নিঃশব্দ উত্তর ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছে সেদিন ওই অন্তহীন মহাপ্রস্থানের পথে।

পরিশেষে একটি কথা বলে যাই। আমি লেখক, কিন্তু পরিব্রাজক বলেও আমি অনেকের কাছে পরিচিত। আমার জীবনের খণ্ডকালের কাহিনীকে নিয়ে চিত্রনির্মাণ এদেশে যেমন অভিনব তেমনই অসমসাহসিক প্রচেষ্টা বিশেষত সেই আধুনিক লেখক যখন সশরীরে জীবিত রয়েচেন। এই গ্রন্থের অন্তর্গত বহু নরনারী, যাঁরা সেদিন আমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী ছিলেন, তাঁরা সবাই আমার সেদিনের পরমাত্মীয়। *

-গ্রন্থকার

* ‘মহাপ্রস্থানের পথে’-নামক সিনেমা চিত্রখানি মুক্তিলাভের কালে ‘কথাসাহিত্যে’ প্রকাশিত।-বৈশাখ, ১৩৫৯।

মহাপ্রস্থানের পথে

“উদয়চলের সে তীর্থপথে আমি
চলেচি একেলা সন্ধ্যার অনুগামী,
দিনান্ত মোর দিগন্তে পড়ে লুটে।

… … …

জীবনের পথ দিনের প্রান্তে এসে
নিশীথের পানে গহনে হয়েছে হারা,
অঙ্গুলি তুলি তারাগুলি অনিমেষে
মাভৈঃ বলিয়া নীরবে দিতেছে সাড়া।

ম্লান দিবসের শেষের কুসুম তুলে
একূল হইতে নবজীবনের কূলে
চলেচি আমার যাত্রা করিতে সারা।

… … ….

হে মোর সন্ধ্যা, যাহা কিছু ছিল সাথে
রাখিনু তোমার অঞ্চল-তলে ঢাকা।
আঁধারের সাথী, তোমার করুণ হাতে
বাঁধিয়া দিলাম আমার হাতের রাখী।”

Book Content

উপক্রমণিকা
যাত্রা
পুনরাগমন
সুফল
লেখক: প্রবোধকুমার সান্যালবইয়ের ধরন: Editor's Choice, ভ্রমণ কাহিনী

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.