কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট – রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট । রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠানের শেষ চিঠি । রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০১২
উৎসর্গ – প্রিয় বন্ধু প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারকে
প্রাক-কথন
মাত্র পঁচিশ বছর বয়েসে আত্মহত্যা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠান কাদম্বরীদেবী। শোনা যায় আত্মহত্যার কারণ জানিয়ে তিনি একটি সুইসাইড-নোট লিখেছিলেন। সেই চিঠি বা নোট এবং আত্মহত্যার অন্য সব প্রমাণ লুপ্ত হয়েছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনিবার্য অনুজ্ঞায়। কাদম্বরীর জীবনের শেষ দিনটির কোনও হদিস মেলেনি কারও কাছে। বিষ খাওয়ার পরে মৃত্যুময় আচ্ছন্নতায় তিনি বেঁচে ছিলেন দুদিন। সেই দুদিনও লুপ্ত ছিল অনেকদিন। এখন আমরা জেনেছি সেই দুটি দিনের কথা খুবই আবছাভাবে।
কেন আত্মহত্যা করলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী, রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠান কাদম্বরী রবীন্দ্রনাথের বিয়ের চার মাস পরেই? কীভাবে কে বা কারা বন্ধ করে দিলেন তাঁর বেঁচে থাকার পথ? ঠাকুরবাড়ির বউ হয়ে আসার পর থেকে কেমন কাটছিল তাঁর জীবন? ঠাকুরবাড়ির মেয়েমহল কেন তাঁকে গ্রহণ করল না? কাদের প্ররোচনার শিকার হলেন তিনি? রবীন্দ্রনাথ কি পারতেন তাঁকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে? না কি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরীর সম্পর্কই তৈরি করল কাদম্বরীর অন্তিম অসহায়তা? আত্মহনন ছাড়া আর কোনও উপায় রইল না তাঁর?
এই উপন্যাসটি লেখা পর্যন্ত একটি প্রশ্নে আমি জড়িত ছিলাম অহরহ কী লিখেছিলেন কাদম্বরীদেবী তাঁর সুইসাইড-নোটে? কী লিখতে পারতেন তিনি? কার উদ্দেশে লিখতেন তিনি তাঁর সুইসাইড-নোট?
আমি ধরে নিলাম কাদম্বরীদেবীর সেই সুইসাইড-নোটটি হঠাৎ পাওয়া গেল তাঁর আত্মহননের একশো সাতাশ বছর পরে। সেটিকে আগুনে ছাই হতে দেননি রবীন্দ্রনাথ। ধরে নিলাম সেই ঝলসানো সুইসাইড-নোটের পাঠোদ্ধার সম্ভব হল শেষপর্যন্ত!
সংবাদ প্রতিদিন-এর সম্পাদক সঞ্জয় বোস টুম্পাই)-কে যখন জিগ্যেস করলাম এবছর যদি আমার পুজোর উপন্যাসের বিষয় হয় কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট, ও মহা-উৎসাহে আমাকে বলল, অবশ্যই! সংবাদ প্রতিদিন-এর পুজো-সংখ্যার সম্পাদক রবিশংকর বল প্রথম থেকে জুগিয়েছে উৎসাহন ও প্রেরণা—আমি কৃতজ্ঞ।
পত্র ভারতী-র কর্ণধার, পরম সুহৃদ ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় যেই শুনল আমার উপন্যাসের বিষয়, গত বছরের মতন এ-বছরেও বলল, রঞ্জনদা, এ-উপন্যাস আর কাউকে নয়, অবশ্যই পত্র ভারতী কে। বিষয়টি ও তার বিন্যাস নিয়ে ত্রিদিবের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি এবং প্রতিবারেই ঋব্ধ হয়েছে আমার ভাবনা, উপকৃত হয়েছে এই উপন্যাস। আমি কৃতজ্ঞ।
সৃঞ্জয় বোসের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা আরও এক জায়গায়। ত্রিদিব তো বলল উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য পত্র ভারতীকেই দিতে—কিন্তু উপন্যাসটি যেহেতু বেরিয়েছিল সংবাদ প্রতিদিন-এর শারদ সংখ্যায়, সঞ্জয়ের অনুমতি ছাড়া তো ত্রিদিবকে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারলাম না। সৃঞ্জয়ের অনুমতি পেতে লেগেছিল তিন সেকেন্ড, কে প্রকাশক জানাবার পর।
কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট বই হয়ে বেরোল কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পর।
রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
১৫ জানুয়ারি ২০১২
কলকাতা
.
কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড নোট
রবীন্দ্রনাথ তখন তেইশ, নতুন বউঠান কাদম্বরীদেবী মাত্র পঁচিশ। ১৮৮৪ সালের ১৯শে এপ্রিল আফিম খেলেন নতুন বউঠান, আত্মহত্যার চেষ্টায়। মারা গেলেন ঠিক দুদিন পরে।
কেন আত্মহত্যা করেছিলেন রবির প্রাণের সখী, প্রিয় বন্ধু কাদম্বরীদেবী? কেন প্রবলপ্রতাপ বাবামশাই দেবেন্দ্রনাথের আদেশে আত্মহত্যার সব প্রমাণ পুড়িয়ে ফেলা হল? ঘুষ দিয়ে বন্ধ করা হল সকলের মুখ? কাদম্বরীদেবী কি লেখেননি কোনও সুইসাইড নোট? নাকি লিখেছিলেন? যা পুড়িয়ে ফেলা হয়!…সেই সুইসাইড নোটে কি সত্যিই কিছু অস্বাভাবকি ছিল? লুকিয়ে ছিল গোপন গহন ব্যথা?
লেখক বলছেন, ‘ঠিক সুইসাইড নোট নয়। এক সুদীর্ঘ চিঠি। চিঠির সর্বাঙ্গ ঝলসে গেছে আগুনে। …ঝলসানো চিঠিটাকে কে বাঁচিয়েছিলেন আগুন থেকে? রবীন্দ্রনাথ? …’
চলুন পাঠক, আমরা ফিরে যাই ১২৭ বছর পূর্বের সেই রহস্যাবৃত সময়ে। …চিঠি নয়, এ এক হতভাগ্য তরুণীর বেদনাবিধুর উপাখ্যান।
রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Arghadipa Chakraborty
Many many thanks for uploading this book. I am earnestly request you to upload the book “মহাভারতের ছয় প্রবীণ” & the book regarding the life of Kadombini Ganguly, the first doctor of India.