• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

লাইব্রেরি » প্রেমেন্দ্র মিত্র » ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
ঘনাদা সমগ্র ৩ - প্রেমেন্দ্র মিত্র

ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

সম্পাদনা – সুরজিৎ দাশগুপ্ত

প্রথম সংস্করণ – ডিসেম্বর ২০০১

প্রচ্ছদ – সমীর সরকার

.

ঘনাদা ৩য় খণ্ডের ভূমিকা – সুরজিৎ দাশগুপ্ত 

ঘনাদা বানিয়ে বানিয়ে নিজের বাহাদুরির যেসব গল্প বনমালি নস্কর লেনের এক মেসের চার দেওয়ালের মধ্যে সহবাসী তরুণ বন্ধুদের কাছে বলেছেন সেগুলি ইতিপূর্বেই সংকলিত হয়েছে ‘ঘনাদা সমগ্র’র প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে। আর এই তৃতীয় খণ্ডে সংকলিত হল ঘনাদার পূর্বপুরুষদের সেসব কীর্তিকাহিনী যেগুলি তিনি সান্ধ্যভ্রমণকালে আকাশের নীচে দক্ষিণ কলকাতার কৃত্রিম হ্রদের তীরে একটি নাতিবৃহৎ পর্কটী বৃক্ষকে কেন্দ্র করে উপবিষ্ট চারজন প্রবীণ নাগরিকের উদ্দেশে পরিবেশন করেছেন। প্রথম দু-খণ্ডের গল্পগুলির প্রধান বিষয় ছিল বিজ্ঞান ও ভূগোল, অবশ্য দ্বিতীয় খণ্ডের কয়েকটি গল্পে মহাভারত তথা পৌরাণিক উপাখ্যানও অন্যতম বিষয় রূপে চর্চিত, তাছাড়া অল্পসংখ্যক কিছু গল্পে আছে বুদ্ধির প্যাঁচ, কিন্তু তৃতীয় খণ্ডের একটি ছোটগল্প বাদে বাকি দুটি বড় গল্প ও একটি উপন্যাসের প্রধান অবলম্বনই হল ইতিহাস। অর্থাৎ ইতিহাসের সত্য ঘটনাজালের মধ্যে অসাধারণ উদভাবনী কৌশলে বুনে দেওয়া হয়েছে ঘনাদার পূর্বপুরুষদের নানা রোমাঞ্চকর কাল্পনিক কীর্তিকাহিনী। সত্যের স্বার্থে শুরুতেই বলা উচিত যে এই খণ্ডটি বহুলাংশে পূর্বে প্রকাশিত ‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এর নববিন্যস্ত এবং ‘আগ্রা যখন টলমল’ ও ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ গ্রন্থদুটির প্রথম মুদ্রণ অনুসারে সংশোধিত সংস্করণ, ফলে সতর্ক পাঠক কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘অমনিবাস’-এর পাঠের সঙ্গে এই খণ্ডের পাঠের ভেদ খুঁজে পাবেন। 

বর্তমান খণ্ডের ছোটগল্প ‘রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন’ নেহাতই কাল্পনিক কাহিনী, সম্পূর্ণত রূপকথার মেজাজে লেখা, যার উৎস সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে ত্রয়োদশ কি চতুর্দশ শতাব্দীতে রচিত মার্কো পোলোর বিচিত্র ভ্রমণবৃত্তান্ত। এই গল্পটি প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে এবং প্রথম গ্রন্থিত হয়েছিল সেই বছরেই নাভানা-কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প’ নামক সংকলনে শর পরে ১৯৫৬-তে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রকাশিত ‘সপ্তপদী’ গল্পগ্রন্থে। ‘প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প’র অন্তর্গত ঘনাদার গল্পটিতে উদ্ধৃতি-চিহ্নের ব্যবহারে যে-নীতি অনুসৃত হয়েছিল ‘ঘনাদা সমগ্র’র সবগুলি খণ্ডেই সেই নীতি অনুসারে বর্তমান কালের উক্তির জন্য দুটি ঊর্ধ্ব কমা (“ ”) এবং অতীত কালের উক্তির জন্য একটি ঊর্ধ্ব কমা (‘ ’) উদ্ধৃতি-চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। লক্ষণীয় যে ‘সপ্তপদী’-তে সন্নিবেশিত পাঠে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন যোগ করে গল্পটির শিরোনাম ছিল ‘রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন?’, কিন্তু এই গল্প যখন ১৯৮৩ সালে ‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এর শামিল হয় তখন ওই প্রশ্ন-চিহ্নটি বাতিল হয়। 

লক্ষণীয় যে প্রথম দু-খণ্ডের গল্পগুলির মতো ‘রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন’ গল্পটিও উত্তম পুরুষে লেখা, কিন্তু ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে লেখা অন্য তিনটে কাহিনীতেই লেখক প্রথম পুরুষ রূপে আত্মগুপ্ত। এই খণ্ডের প্রথম গল্পটির প্রথম মুদ্রণে যাঁর দেহ ‘হস্তীর মতো বিপুল’ তাঁর নাম ছিল চিন্তাহরণবাবু, বর্তমান মুদ্রণে তাঁর নাম ভবতারণবাবু করেছি অন্যান্য কাহিনীর সঙ্গে সংগতি রক্ষার জন্য। 

এই খণ্ডের দ্বিতীয় কাহিনী ‘আগ্রা যখন টলমল’ আগ্রার কারাগার থেকে শিবাজির পলায়নের সুপরিচিত বৃত্তান্তের আধারে রচিত। মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসের সেই বিখ্যাত বৃত্তান্তর প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্র যেভাবে ঘনাদার গল্পকে গেঁথেছেন তার চমৎকারিত্ব আমরা সহজেই বিচারে সক্ষম। তৃতীয় কাহিনী ‘দাস হলেন ঘনাদা’ হার্নান্ডো কর্টেজ কর্তৃক মেক্সিকো-বিজয়ের কাহিনীর ভিত্তিতে রচিত। সে-ইতিহাসও আধুনিক ইউরোপীয় ইতিহাসের এক বিখ্যাত অধ্যায়। এখানেও ঘনাদা ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই তাঁর পূর্বপুরুষের কীর্তিকথায় কল্পনার ডানা মেলেছেন। চতুর্থ কাহিনীর অবলম্বন হচ্ছে মেক্সিকোর পরে পেরু-বিজয়ের ইতিহাস। এই দুটি পরস্পর সম্পৃক্ত কাহিনী থেকেই শুরু হয় বিশ্বের ইতিহাসে মহা-ইউরোপীয় সভ্যতার পর্ব এবং একই সঙ্গে মেক্সিকো ও পেরু, বিশেষত পেরু থেকে লুঠ করে আনা সোনার দৌলতে মূল ইউরোপীয় ভূখণ্ডের রেনেশাঁসকালীন অর্থনীতিতে সাধিত হয় এক বিস্ময়কর সমৃদ্ধি। তৃতীয় খণ্ডের অন্তর্গত তৃতীয় ও চতুর্থ কাহিনী দুটি এক বিরল বিশ্বচেতনারও নিদর্শন। 

‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এর সর্বশেষ গল্প ছিল ‘রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন’, অথচ মেসের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে সান্ধ্যভ্রমণকালে প্রবীণ নাগরিকদের আড্ডায় ঘনাদার প্রথম আত্মপ্রকাশ এই গল্পেই। আর ঘনাদার সন্ধেবেলায় লেকের ধারে নিয়মিতভাবে বেড়াতে যাওয়ার কথা প্রথম জানতে পাই ১৯৪৯-এ লেখা ‘ছড়ি’ গল্পটিতে।তবে কেন ১৯৮৩ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র ওই ‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এর জন্য রচনাগুলি বিন্যাসের সময় ঘনাদা কথিত রবিনসন ক্রুশোর গল্পটির স্থান সংকলনের সব শেষে নির্দিষ্ট করেছিলেন? ঘনাদার পূর্বপুরুষদেরকে মহা-নায়ক বানিয়ে ইতিহাসাশ্রয়ী অন্যান্য কাহিনীর সঙ্গে চৈনিক রূপকথার ভাবে ও ভঙ্গিতে রচিত মেয়ে রবিনসন ক্রুশোর গল্পটির মেজাজ-মর্জি পুরোপুরি মিলছে না বলেই এটিকে পৃথকভাবে অন্যান্য গল্পের শেষে স্থান দিয়েছিলেন বলে মনে হয়। বিষয়ের দিক থেকে, স্বাদের দিক থেকে স্বতন্ত্র হলেও বর্তমান কালের আধারে রচিত গল্পটির প্রস্তাবনা অংশের কথন-স্থান দক্ষিণ কলকাতার কৃত্রিম হ্রদের তীর ও শ্রবণের তথা মধ্যে মধ্যে প্ররোচনা প্রদানের জন্য উপস্থাপিত পাত্রগুলি ইতিহাসভিত্তিক অন্যান্য কাহিনীরই অনুরূপ। এবং প্রস্তাবনা অংশের এই স্থান-কাল-পাত্র বিষয়ক সাদৃশ্যের জন্য গল্পটি যখন এই গ্রন্থে প্রবেশাধিকার পেয়েছে তখন রচনাকাল হিসেবে এটির স্থানও অন্যান্য কাহিনীর আগেই হওয়া বিধেয় মনে করেছি। 

‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এ স্বয়ং লেখক কর্তৃক নির্ধারিত রচনাগুলির পরম্পরা ছিল এই রকম—”দাস হলেন ঘনাদা’, ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’, ‘আগ্রা যখন টলমল’ আর ‘রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন’। যেহেতু ‘ঘনাদা সমগ্র’র পূর্ববর্তী দুটি খণ্ডে রচনাগুলির বিন্যাস হয়েছে গ্রন্থ প্রকাশের কালানুক্রম অনুসারে তাই এই খণ্ডেও—পূর্ববর্তী খণ্ড দুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার স্বার্থে–সেই একই নীতিতে রচনাগুলি পরপর সাজিয়েছি। হয়তো ‘দাস হলেন ঘনাদা’ বড় গল্পটি সবার আগে দিয়ে ঘনাদার দাস-বংশের আদিপুরুষ থেকে ঘনাদার কথামালা শুরু করা যেত, কিন্তু গল্পগুলি পরম্পরা নির্ধারণের জন্য এই যুক্তি মানলে তো প্রথম দাসপুরুষ ঘনরাম-এর বৃত্তান্ত দিয়েই ‘ঘনাদা সমগ্র’-র প্রথম খণ্ড শুরু করতে হত। তাতে নিশ্চিতভাবে আরও নানা জটিল বিভ্রান্তি দেখা দিত। তাই ঘনাদার কথামালায় বর্ণিত ঘটনার কালানুক্রম নয়, এই কথামালা রচনারই কালানুক্রম মানার চেষ্টায় আসলে গ্রন্থগুলি প্রকাশের কালানুক্রমই মেনেছি। 

১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আগ্রা যখন টলমল’ প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় তখন একই মলাটের ভেতরে ছিল ‘দাস হলেন ঘনাদা’ বড়গল্পটিও। আনন্দ পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত সেই গ্রন্থটি ছিল এক অভিনব শৌখিন প্রকাশন, তার প্রত্যেক পাতায় ছিল গোলাপি রঙে ছাপা বালুচরি শাড়ির পাড়ের মতো নকশা, ‘আগ্রা যখন টলমল’-এর জন্য এক রকম নকশা আর মান্টা নামে আধুনিক ট্যাঙ্কের প্রথম প্রজন্ম আবিষ্কারের বৃত্তান্ত দাস হলেন ঘনাদা’-র জন্য আর-এক রকম নকশা, শিল্পী ছিলেন অজিত গুপ্ত। প্রেমেন্দ্র যখন ঘনাদার গল্প প্রথম লেখা শুরু করেন তখন থেকেই ঘনাদার জন্য অজিত গুপ্ত ছিলেন মুখ্য শিল্পী। 

১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’। প্রকাশ শুরু হয় ১৩৭৪ বঙ্গাব্দের ৪ শ্রাবণ সংখ্যা থেকে আর শেষ হয় ১৩৭৫-এর কার্তিক সংখ্যায়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থপ্রকাশ কর্তৃক। এটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের বৃহত্তম উপন্যাস তো বটেই, রচনার স্থাপত্যগুণেও এটি এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এ এক সুবৃহৎ চরিত্রশালা— কোনও চরিত্র ঐতিহাসিক, কোনও চরিত্র কাল্পনিক। অত্যন্ত জটিল ও তথ্যসমৃদ্ধ এর কাহিনী এবং কত যে শাখাপ্রশাখায় আর কত যে আবর্তে ও খরস্রোতে তার বিপুল বিস্তার তা অনুধাবনের জন্য এই উপন্যাস ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। উদ্ভাবিত অজস্র কুশীলবের সঙ্গে সংগৃহীত ঐতিহাসিক উপাদানগুলির রসায়নে বিকশিত ও বিবর্তিত হয়েছে ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’র পেরু-বিজয়ের উপাখ্যান। সেই উপাখ্যানের কত গভীরে প্রবেশ করে কী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কত জ্ঞাতব্য বিষয় ও বিবরণ যে আলোচ্য কাহিনীতে সন্নিবেশিত হয়েছে সেগুলির প্রতি পাঠকপাঠিকার মনোযোগ বিশেষ রূপে আকর্ষণ করি। তাঁরা অবশ্যই এটাও লক্ষ করবেন যে নির্মাণ-নৈপুণ্যে ও সংস্থাপন-সৌকর্যে এই উপন্যাস বাংলাসাহিত্যে এক কৌতূহলোদ্দীপক সৃষ্টি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনার জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্রর বিশেষ খ্যাতি ছিল। চিত্রনাট্যের মতোই নাটকীয়তার খাতিরে কালানুক্রম ভেঙে পরের ঘটনা আগে, আগের ঘটনা পরে বলে, আবার কখনও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ পালটে পালটে, কখনও বা দেশানুগত্য লঙ্ঘন করে আতলান্তিক মহাসাগর এপার ওপার করে ইতিহাস নির্ধারিত কাহিনীকে ঢেলে সাজিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের পরিকল্পিত পরিণতির দিকে। উপন্যাসের গঠন-পদ্ধতি সম্বন্ধে গবেষকদের জন্য এতে রয়েছে এক স্পর্ধিত আহ্বান। আবার একই সঙ্গে রয়েছে বহুকাল ধরে গৌরবের বিষয় রূপে পরিবেশিত ইতিহাসের উপর এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোকপাত, ফলে সে-ইতিহাসের তাৎপর্য রূপান্তরিত হয় পাঠকের অধীত জ্ঞানের ক্ষেত্রে ও সংবেদনশীল চিত্তে। 

‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ যখন প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় তখন এর নামপৃষ্ঠাগুলির অংশে এই বিজ্ঞপ্তি ছিল——এ উপন্যাসের ভৌগোলিক বিস্তৃতি, ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূল থেকে সূদূর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব তীরের উত্তুঙ্গ আণ্ডিজ পর্বতমালার দেশ পেরু সাম্রাজ্য পর্যন্ত। সময় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম কয়েক দশক। ইতিহাসের বহু বিচিত্র নাম এ উপন্যাসে ভিড় করে এসেছে। স্মরণ রাখবার সুবিধার জন্যে সামান্য একটু পরিচয়ের সঙ্গে সেগুলির বর্ণানুক্রমিক তালিকা বই-এর পিছনে দেওয়া হল। কাল্পনিক চরিত্রগুলির পাশে (কা) সংকেত দেওয়া আছে। অন্যান্য চরিত্র ঐতিহাসিক, তবে উপন্যাস বলে কিছু কিছু কল্পনার মিশেল তার কোনও কোনওটিতে অবশ্য আছে।’ কিন্তু যখন এই উপন্যাস ‘ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস’-এর অন্তর্ভুক্ত হয় তখন বিজ্ঞপ্তিটি পরিত্যক্ত হয়। ঘনাদা সম্পর্কে স্বয়ং প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখনী নিঃসৃত বলে আজ এই কয়েক ছত্রও আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা অবশ্য কাল্পনিক চরিত্র বোঝাতে প্রথম বন্ধনীর পরিবর্তে তৃতীয় বন্ধনী ব্যবহার করেছি। 

প্রথম যৌবনে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছিলেন, 

‘অগ্নি-আখরে আকাশে যাহারা লিখিছে আপন নাম 
আমি যে তাদের চিনি। 
দুই তুরঙ্গ তাহাদের রথে, উদ্ধত উদ্দাম 
—শোন তার শিঞ্জিনী। 
মোদের লগ্ন-সপ্তমে ভাই রবির অট্টহাসি 
জন্ম-তারকা হয়ে গেছে ধূমকেতু! 
নৌকা মোদের নোঙর জানে না, 
শুধু চলে স্রোতে ভাসি 
কেন যে বুঝি না, বুঝিতে চাহি না হেতু!’ 

পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপের যে-তারুণ্য এক নতুন সমুদ্র-মন্থন শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাস ও পরিচয় পালটে দিয়েছিল সেই তারুণ্যের দুর্জয় অভিযান- স্পৃহায়, তার দুরন্ত দুঃসাহসে, তার তীব্র রক্ত-চাঞ্চল্যে, তার দিগন্ত-জয়ের দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় প্রবলভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তরুণ প্রেমেন্দ্রও, তখন তাঁরও হৃদয় সোচ্ছ্বাসে যাদের জয়গান করেছিল ‘পৃথিবী বিশাল তারা জানিয়াছে, আকাশের সীমা নাই। 

কিন্তু সেইসব ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের প্রতি প্রেমেন্দ্রর নিরঙ্কুশ গুণগ্রাহিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিনি মানুষটা ছিলেন বৈজ্ঞানিক মানসিকতার, জিজ্ঞাসু প্রকৃতির, সত্যের সন্ধানী, ফলে অধ্যয়নে অক্লান্ত ও বিচারে তন্নিষ্ঠ এবং যতই তিনি অধ্যয়নের ও বিচারের পথে অগ্রসর হতে লাগলেন ততই তাঁর কাছে সত্যের আরও এক রূপ উন্মোচিত হল। পাশ্চাত্য সভ্যতার বিস্ময়কর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিনাশ সম্পন্ন হচ্ছে এইরকম একটা উপলব্ধির প্রকাশ দেখা গেল ঘনাদার কোনও কোনও গল্পে, যেমন ‘সুতো’, ‘নাচ’, ‘কাদা’ ‘বেড়াজালে ঘনাদা’ ইত্যাদিতে। ঘনাদার গল্প লেখার জন্য গভীরভাবে ইতিহাস পড়তে পড়তে এই সত্যও তিনি উপলব্ধি করেন যে বহু-বন্দিত ইউরোপীয় রেনেশাঁস-এর গভীরে ছিল ধর্ম প্রচারের ও স্বর্ণ লুণ্ঠনের কখনও গোপন কখনও প্রকাশ্য তাড়না এবং আধুনিক ইউরোপের ইতিহাসে যে ওই তাড়না বরাবরই বিশেষ ভাবে সক্রিয় এই অপ্রিয় সত্যকে আমরা সাধারণত ভুলেই থাকি। এবং মনে হয় সুপরিণত বয়সে পৌঁছে প্রেমেন্দ্র কিছুটা অবচেতনভাবেই ইউরোপীয় পরাক্রমের প্রতিপক্ষ রূপে ঘনাদাকে স্থাপন করেছেন, বিশেষত ‘দাস হলেন ঘনাদা’ ও ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ রচনা দুটিতে। 

এই খণ্ডে সংকলিত ইতিহাসাশ্রয়ী বৃত্তান্তগুলি লেখার জন্য উপকরণ অন্বেষণের কাজে প্রেমেন্দ্রকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলেন তাঁর ঐতিহাসিক বন্ধু ড. প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত মহাশয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশের কালে ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ তাঁকেই উৎসর্গ করেছিলেন লেখক। এই কাহিনীগুলি লেখার সময় প্রেমেন্দ্র যে মানসিক বাতাবরণে বাস করছিলেন তাঁর পরিচয় দেখতে পাই সমসময়ে রচিত ‘শপথ’ নামক কবিতাটিতে— 

“মনে করো দেখেছ কোথায় 
পৃথিবীর দগদগে ক্ষত, 
ঊরুতে, নাভিতে, বুকে, 
উৎপাটিত চোখের কোটরে। 
উন্মাদ গ্যাংস্টার এসে 
পাশব তাণ্ডবে, 
পবিত্র প্রসূতি মাটি 
হত্যা করে পীড়নে, ধর্ষণে। 
ক্ষমা নেই এ পাপের। 

মনে রেখো, মনে রেখো 
ভুলো না শপথ 
সাক্ষী যার মহাকাল 
সাক্ষী মানবতা, 
—চামড়ার রং নয়, 
শ্বেত কৃষ্ণ পীত 
হৃদয়ের কালো রক্ত যেখানে যত না, 
নিংড়ে ফেলে দিতে হবে
 শেষ বিন্দু 
হিংসাজীবী দানব দম্ভের। 

উদ্ভাবনী প্রতিভায়, কাহিনীর গঠনকৌশলে, ভাষার ঐশ্বর্যে ও বিন্যাসে, পরিস্থিতির সংশ্লেষণে ও মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণে, বৃত্তান্তের সীমানার বাইরে ব্যঞ্জনার রহস্য সৃষ্টিতে প্রেমেন্দ্র মিত্র নিঃসন্দেহে বিশ শতকীয় বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গল্পকার, আবার একই সঙ্গে এই খণ্ডের অন্তর্গত রচনাবলির বৃহত্তর অংশে তিনি ইতিহাসেরও একজন বিশিষ্ট ব্যাখ্যাকার। এবং ঘনাদার গল্পমালা আধুনিক বাঙালির সূক্ষ্ম রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতি তথা সংবেদন-ও-সৃষ্টিশীলতার এক স্মরণীয় সাক্ষ্য। 

সবশেষে সংযোজিত হয়েছে একটি অসমাপ্ত গল্প, যেটির নাম প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথমে লিখেছিলেন ‘“তিনি” নেই’, পরে কেটে রাখেন “তিনি”—অর্থাৎ’। এটি আধুনিক দেশ-কাল-পাত্র নিয়ে মেসের সহবাসীদের গল্প, তবু গল্পটিকে এই খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করেছি, কারণ গল্পটি সদ্য আবিষ্কৃত হয়েছে তাঁর কাগজপত্র থেকে একটি ফ্ল্যাট ফাইল-এর ভেতরে, উপরে তাঁর স্ত্রীর হাতের লেখায় আছে ‘ঘনাদার নতুন গল্প’। মনে হয় এটি সত্তরের দশকে লেখা। গল্পের শেষে লেখকের হাতের লেখায় নাম-সই ও তার ডান পাশে ‘ক্রমশঃ’——যা থেকে বোঝা যায়, এটি ধারাবাহিকভাবে কোনও পত্রিকায় প্রকাশের জন্য শুরু করেছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে এটির প্রেস কপি করে দিয়েছেন শ্রীশুভেন্দু দাশমুন্সী। 

মনে হয়, এই খণ্ডটি প্রকাশের সঙ্গে ঘনাদাকে নিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্রর সমস্ত রচনা একত্রে তিন খণ্ডে সংকলিত হল। কেউ যদি এর বাইরে কোনও লেখার খোঁজ পান তবে আমাদেরকে অনুগ্রহ করে জানাবেন যাতে পরবর্তী মুদ্রণের কালে সেটি ‘ঘনাদা সমগ্র’ গ্রন্থভুক্ত করতে পারি। 

এই খণ্ডটি সম্পাদনা সাঙ্গ করে আমি এমন একটা বড় দায়মুক্তি বোধ করছি যা প্রেমেন্দ্র ও বীণা মিত্রর প্রতি আমার একান্ত ভালবাসার ও গভীর শ্রদ্ধার দায়। এই দায় বহনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি তাঁদের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীমৃন্ময়, জ্যেষ্ঠপুত্রবধূ শ্রীমতী অপর্ণা ও কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীহিরণ্ময়ের কাছে ঋণী, এবং একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ আনন্দ পাবলিশার্স-এর উপদেষ্টা শ্রীদ্বিজেন্দ্রনাথ বসু ও তাঁর সহকারী শ্রীরাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। 

সুরজিৎ দাশগুপ্ত 

Book Content

প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প
রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন
আগ্রা যখন টলমল
আগ্রা যখন টলমল
দাস হলেন ঘনাদা
উপন্যাস
সূর্য কাঁদলে সোনা 34 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/34 Steps
০১. অর্থাৎ তস্য তস্য
০২ .হাসির লহরী কী হিংসার তুফান
০৩. বাজির খেলা
০৪. ভুলতে বারণ করেছিলেন
০৫. রাজধানী পানামায়
০৬. মোরালেস-এর ক্রীতদাস
০৭. উৎসবের আনন্দ কোলাহল
০৮. কুড়ি বছর বাদে আবার
০৯. সোরাবিয়ার শয়তানি ফন্দি
১০. আনা শেষ পর্যন্ত
১১. পিজারোর সেভিল-এর বন্দরে
১২. গাঢ় কুয়াশাচ্ছন্ন রাত
১৩. মার্কুইস আর মার্শনেস গঞ্জালেস
১৪. সূর্য কাঁদলে সোনার দেশ
১৫. তৃতীয় অভিযানেও পিজারো
১৬. মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা
১৭. ইংকা আতাহুয়ালপা
১৮. আতাহুয়ালপা যখন পিজারোর ভোজসভায়
১৯. ঘনরামকে তাঁর নির্দিষ্ট সেনাবাসে
২০. দিনের আলোর জন্যে অপেক্ষা
২১. মেয়েটির সমস্ত রহস্য
২২. প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপের সঙ্গে
২৩. অনুমান ভুল হয়নি গানাদোর
২৪. কয়ার ভিকুনার পশমে বোনা থলি
২৫. সূর্যদেবের উত্তরায়ণ
২৬. গানাদো অনেক কিছুই ভাবেন
২৭. কী করছেন তখন গানাদো
২৮. সোরাবিয়া ফেলিপিলিও
২৯. মেঘ-ছোঁয়া উত্তুঙ্গ পাহাড় চূড়া
৩০. হেরাদা ও সোরাবিয়ার তাড়নায়
৩১. বন্দরে জাহাজ লাগাবার পর
৩২. পানামা থেকে বার হওয়া
৩৩. বন্দরের নাম নোমব্রে দে দিয়স
৩৪. ফেরারি গোলাম বলে চিহ্নিত হয়ে
সংযোজন
একটি খসড়া গল্প – তিনি—অর্থাৎ
পরিশিষ্ট
ঘনাদাকে কী করে পেলাম
লেখক: প্রেমেন্দ্র মিত্রবইয়ের ধরন: কিশোর সাহিত্য
ঘনাদা সমগ্র ২ - প্রেমেন্দ্র মিত্র

ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

ঘনাদা সমগ্র ১ - প্রেমেন্দ্র মিত্র

ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.