২. কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স

কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স

আপনি যদি কোনো জিনিস দ্রুত শিখতে চান, তাহলে প্রথমেই এমন উদাহরণ বের করেন যেটা আপনি অনুসরণ করতে চান। এমন উদাহরণ যেটা আপনার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তাই, আপনি যদি একদম এক্সপার্ট লেভেলে কথা বলতে চান, তাহলে আগে আপনাকে দেখতে হবে এক্সপার্টরা কথা বলে কীভাবে। সেজন্য ইউটিউবে গিয়ে Ted Talk চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখুন। নিজেকে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে আপডেটেড রাখতে চায়, এমন মানুষদের উচিত এই চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে রাখা।

আরেকটা ভালো সোর্স হচ্ছে Toastmasters International যেখানে পৃথিবীর সেরা বক্তাদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ভিডিওগুলো দেয়া আছে। ভিডিওগুলোতে দেখার চেষ্টা করুন কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে তারা গল্পের মাধ্যমে কোনো বিষয় কিংবা জীবনের সুন্দরতম গল্পগুলো অসাধারণভাবে তুলে ধরছেন। বাংলায় শিখতে চাইলে এমন কোনো ইউটিউবার কিংবা উপস্থাপককে ফলো করুন, যার কথাবার্তা আপনার অনেক ভালো লাগে। মূল বিষয় হচ্ছে, আপনার একজন রেফারেন্স দরকার, যার মতো আপনি কথা বলতে চান। একটা পর্যায় পর্যন্ত তাকে কপি করে শিখুন, তারপরে আত্মবিশ্বাস চলে আসলে এক সময় আপনার নিজেরই একটা কথা বলার স্টাইল তৈরি হয়ে যাবে।

কমিউনিকেশন খুবই প্র্যাক্টিকাল একটা জিনিস। তাই, ভিডিও দেখে এবং নিজে অনুশীলন করে শেখাটা অনেক কাজের। তবে, কমিউনিকেশন কিংবা যেকোনো ফিল্ডে এক্সপার্ট লেভেলে যেতে হলে কিছু বই তো পড়তেই হয়। আপনার যদি সেই ইচ্ছাটা থাকে, তাহলে কমিউনিকেশনের জন্য অন্যতম ১০ টি সেরা বইয়ের লিস্ট এখানে আমরা দিয়ে দিলাম। আর যাই হোক, অন্তত How To Win Friends & Influence People বইটা কিন্তু সবারই পড়া আবশ্যক!

*

ভাবিয়া কহিও কথা, কহিয়া ভাবিও না

মাথায় প্রথম যখন কোনো কথা আসে

১) আমার কথাটা কি আরও ভালোভাবে বলা সম্ভব?

২) আমি কি কথাটা অন্য মানুষটিকে আঘাত করার জন্য বলছি?

৩) কথাটা কি না বললেও চলে?

৪) আমি কি অন্য মানুষটির মনের অবস্থা সম্পর্কে জানি?

৫) আমি কি অন্য মানুষটির দৃষ্টিকোণ বুঝতে পারছি?

৬) আমি কি সঠিকভাবে অন্য মানুষটির কথা শুনেছি?

৭) আমার কথা কি অন্য মানুষটিকে বিব্রত করবে?

৮) আমার কথাটা আমাকেই কেউ বললে আমার কেমন লাগতো?

*

দক্ষিণে গিয়ে হাতের বাম দিয়ে সোজা গিয়ে পশ্চিমে!

কোনো অপরিচিত জায়গায় গিয়ে দিক খুঁজছেন। রাস্তায় কাউকে জিজ্ঞেস করলে উনি হাতের ডান-বাম এবং গলির মাথার উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে এমন দিকনির্দেশনা দিবেন, যেটা মেনে চলার চেয়ে ভাঙ্গা কম্পাস দিয়ে গুপ্তধন খোঁজা সহজ! এসব ডান-বাম-উত্তর-দক্ষিণ জানা ভালো, কিন্তু ডিজিটাল যুগে ১০০ বার ফোন করে জায়গাটা কই! জিজ্ঞাসা করার চেয়ে একবার গুগল ম্যাপে লোকেশন পিন শেয়ার করাটা হাজার গুনে সহজ। ফেসবুকেও লোকেশন পিন শেয়ার করা যায়।

একটা দুর্গম জায়গায় এক হাজার জন মানুষ আসলে তাদের প্রত্যেককে ইভেন্টের দিন একজন একজন করে দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেয়ে লোকেশন পাঠানো অনেক সহজ। কেউ ম্যাপ ব্যবহার করতে না পারলে সেটা তার অজ্ঞতার জন্য আপনাকে সময় নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। কিন্তু, ম্যাপ ব্যবহার করার অভ্যাসটা সবার করা উচিত।

*

অফেন্সিভ কমিউনিকেশন

এখন যুগটাই এমন যে, আপনি যা কিছুই বলেন না কেন, কেউ না কেউ কোনো না কোনো বাহানায় মাইন্ড করে বসবে, মানে অফেন্ডেড হয়ে বসবে। এখন এটা তো একদম কমন সেন্স যে, মানুষকে আঘাত করে উস্কানিমূলক কিছু আমরা বলবো না। কিন্তু, সমস্যা হয় তখন, যখন মানুষ মাইন্ড করতে পারে ভেবে আমরা একদম চুপ করে যাই।

এক্ষেত্রে দ্বি-স্তর সূত্র দিয়ে রাখি। আশা করি এটা ব্যবহার করলে অনেকে নিজেকে দোষী না ভেবে কথা বলতে পারবেন।

সূত্র ১ : সমস্যাওয়ালা কথা বলে মানুষ রাগালে আমার দোষ।

সূত্র ২ : সঠিক কথা বলে মানুষ রাগালে সেটা মানুষের পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। আমার দোষ না।

মানুষের অফেন্ডেড হওয়ারও অধিকার আছে, আবার এইদিকে আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারও আছে। সব সময় অন্যের কথা চিন্তা করে নিজেকে সেন্সর করতে গেলে এক সময় নিজের আওয়াজই হারিয়ে। ফেলবেন।

এবং পৃথিবীতে যত বিপ্লবী মানুষ আছেন, প্রথম যখন তারা মুখ খুলেছিলেন, অনেকেই অফেন্ডেড হয়েছিল। একবার খালি চিন্তা করে দেখেন, মানুষ অফেন্ডেড হবে– এই কথা চিন্তা করে যদি মানুষগুলো চুপ থাকতেন, তাহলে। পৃথিবীর আজ কী হত?

সব শেষে এমন কিছু জিনিস, যেগুলো নিয়ে কথা বলাটাই অফেন্সিভ :

১. ভাই, শুনলাম আপনার ডিভোর্স হইসে।

২. শুনলাম, আপনি নাকি বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন?

৩. আপনার চাকরি চলে গেসে কবে?

৪. এবার কোথাও চান্স পাইলা না কেন জানো?

৫. আপনি কিছু করেন না যে?

*

WIIFY কমিউনিকেশন

আমাদের বিজনেস ক্লাসে একদিন নেগোশিয়েশন শেখানো হচ্ছিল। কীভাবে মানুষের সাথে দরদাম করবেন। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতে। কারণ, মিটিং রুমে গিয়ে তো, একদাম ১শ, বাইচ্চা লন ১শ! এসব বলা যাবে না। মিটিং-এ তো সবাই অনেক যৌক্তিকও বটে। এই আইডিয়া ভাই খালি আপনার জন্যই বানানো হয়েছিলো! বললেই যে ক্লায়েন্ট গলে যাবে, এমন ব্যাপারও কিন্তু আসলে না। তাহলে কী করতে হবে? WIFY দেখতে হবে।

WIIFY কী?

Whats in it for you?

অর্থাৎ, আমার কথার মাধ্যমে আপনার লাভটা কোথায়, সেটা আমাকে আগে থেকেই জানতে হবে। কোনো একটা ব্যবসায়িক চুক্তি হলে আপনার যে লাভ তবে সেটা আপনি, আমি, ক্লায়েন্ট সবাই জানি। কিন্তু, এখানে ক্লায়েন্টের লাভটা কী, সেটা বুঝে আপনাকে কথা বলতে হবে। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা নতুন আইডিয়া চাচ্ছে, তাকে আইডিয়া দেন। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা কম দামে কাজটা চাচ্ছে, তাকে লো-বাজেটের আইডিয়া দেন।

স্যার! এই প্রজেক্টটা না হলে আমার এই বছরের বোনাসটা পাবো না। 🙁 এটা না বলে, স্যার! এই প্রজেক্টটা হলে এই বছরে আপনি এই কোম্পানির বেস্ট এমপ্লয়ি হয়ে যাচ্ছেন, তাই না?

আপনি নিজেরটা বাদ দিয়ে অন্যের কথা আগে চিন্তা করতে পারলে কমিউনিকেশনে বহুদূর এগিয়ে যাবেন।

মনে রাখবেন, পৃথিবীতে দুই দলের মানুষ আছে। এক দলের লোক যখন কোনো রুমে ঢুকে, তখন সে বলে, আমি এসেছি! আরেক দল লোক রুমে ঢুকে বলে, আমি আরেহ! তুমিও এসেছো! –লেইল লোওনডেস।

*

কোন কথাটা ভাইরাল হবে?

এখন একটা কথা সব জায়গাতেই চলে, ভাই! ভাইরাল কন্টেন্ট লাগবে!। টাকা ঢেলে বুস্ট করলে সব কন্টেন্টেই ভিউস আনা যায়। কিন্তু, মানুষের শেয়ারের মাধ্যমে ভাইরাল হতে হলে কন্টেন্টে বিস্ময়কর, নতুন এবং জেনুইন (Genuine) একটা ব্যাপার থাকে। এসবের পরও ভাইরাল হবে কি না, সেটা স্থান, কাল, পাত্রবিশেষে ভিন্ন হয়। আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে দেখেছি যে, একই ভিডিও ফেসবুকে হিট হয়েছে কিন্তু ইউটিউবে নর্মাল। এর বিপরীতে এমনও ভিডিও আছে যেটা ইউটিউবে অনেক ভিউস কুড়িয়েছে কিন্তু ফেসবুকে হিট খায়নি। একই ভিডিও! কিন্তু, দুটো প্লাটফর্মে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো রিয়্যাকশন। এমন অনেকবারই হয়েছে এবং এখনও হয়। এর পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগোরিদমের হাত আছেই। তবে এখান থেকে আমাদের আরেকটা শিক্ষা হল, আপনার কথা অসাধারণ হলেও, সেটার সাফল্য নির্ভর করছে আপনি কখন, কোথায়, কার সামনে, কী উপলক্ষে সেটা বলছেন।

আপনি আর আপনার বন্ধু একই গান অনেকদিন ধরে শুনছেন। হঠাৎ ব্রেক আপ হওয়ার পর সেই চিরচেনা ভালোবাসার গান শুনতে গিয়ে দেখেন। আপনার বন্ধু কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। গানের কথা একই আছে, কিন্তু গানের কথা শোনার প্রসঙ্গ (Context) বদলে গেছে। গানের কথাতেই যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে সে আগে কেন কাঁদেনি?

একটা উক্তি হয়তোবা হাজারোবার শুনেছি। কিন্তু, প্রাণপ্রিয় সিনিয়র ভাইয়ের কোনো ভিডিও কিংবা লেকচারে শুনলে কেন জানি একদম কলিজায় গিয়ে লাগে। উক্তিতে যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে লেকচারের শোনার আগে কেন অনুপ্রেরণা পাইনি?

আপনার কবের কোন কথা কার মনে যে দাগ কাটে, সেটা আমি আপনি কেউই বোধ হয় নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি না। তাই, আমাদের উচিত সব সময় আমাদের সেরাটা দেওয়া। আপনি একদম ক্যাজুয়ালি হয়তোবা কথা বলছেন, কিন্তু ওই সময়ে যদি কেউ শতভাগ আবেগ দিয়ে আপনার কথা শুনে, তাহলেও আপনি কি একই কথাগুলোই চালিয়ে যাবেন?

*

স্টোনওয়ালিং (Stonewalling)

উটপাখি নিয়ে একটা গুজব আছে যে বিপদ দেখলে তারা অনেক সময় গর্তে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি যদি বিপদ দেখতে না পাই, তাহলে বিপদ বাস্তবেও নাই– মানসিকতার কথা বলা হয় এই উটপাখির গুজব দিয়ে। যদিও উটপাখি বিপদ দেখে মাটিতে মাথা লুকিয়ে ফেলে না, তবে অনেক মানুষ আছে যারা বিপজ্জনক কমিউনিকেশন দেখলে উল্টা ঘুরে দুই মাইল দূরে চলে যায়। এবং এটা একটা বড় ভুল।

কমিউনিকেশন ভুলভাবে করাটা যেমন বিপজ্জনক, ঠিক তেমনই বিপজ্জনক। হল, কমিউনিকেশন সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা। এটাকে স্টোনওয়ালিং (Stonewalling) বলে। কথা বলে বিপদ হয়, তবে কথা না বলে আরও বিপদ কারণ তখন মানুষ তাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে ঝামেলাকে তাদের মাথায় কয়েকগুণ করে ফেলে। আর কয়েকগুণ বড় হওয়া এই সমস্যা একে আরেকজনকে না বলে দুইজনের মধ্যে দূরত্ব আরও বড় করে।

তাই, চুপ করে থাকার চেয়ে কথা বলে সব বিষয় পরিষ্কার রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, কমিউনিকেট করতে গেলে অনেকে রেগে যাবে, মন খারাপ করবে। কিন্তু, ধীরে ধীরে নীরবতা ভেঙ্গে পরিণতভাবে কথা বলা শিখতে হলে এই আলোচনার পথে হাঁটতেই হবে।

*

আপনার মনমতো একটা সময়

আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া, আমি তাহলে আপনাকে জানাবো পরে।

এমন পরে জানাবো, বলবো বল করতে করতে কতজন মানুষই পরে আর কখনও যোগাযোগ করেননি। এরপর থেকে আপনি যেটা করবেন।

আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া, আমি তাহলে আপনাকে জানাবো পরে।

–অবশ্যই ভাইয়া, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। রবিবার ২ টার সময় আমি নিজেই আপনাকে কল করে জেনে নিব।

আর একধাপ ভালো করতে চাইলে আমি রবিবার একটা রিমাইন্ডার পাঠিয়ে দিব আপনাকে মনে করিয়ে দিতে। এই বলে আপনিঃ

১. মেইল শিডিউল করে রাখুন (যেন রবিবার সকাল ১০টায় অটোমেটিক মেইল চলে যায়)।

২. এসএমএস শিডিউল করে রাখুন (যেন রবিবার সকাল ১০টায় অটোমেটিক এসএমএস চলে যায়)। আপনার ফোনে সেই অপশন না থাকলে ক্যালেন্ডার কিংবা কোনো অ্যাপে রিমাইন্ডার করে মেসেজটা সেভ করে রাখুন। রিমাইন্ডার আসলেই পাঠিয়ে দিন।

৩. মেসেঞ্জারে রিমাইন্ডার সেট করে রাখুন (দুজনের কাছেই রবিবার সকাল ১০টায় মেসেঞ্জার নোটিফিকেশন আসবে)।

একদম সংখ্যা ও সময় দিয়ে কথা শেষ করলে আপনার কথাবার্তা আর মাঝপথে হারিয়ে যাবে না, আর যেই কাজটা করতে চেয়েছিলেন সেটাও আটকে থাকবে না।

*

আমার জন্য আপনার কি প্রশ্ন আছে?

অপশন ১ : আপনার কি কোনো প্রশ্ন আছে?

অপশন ২ : আমার জন্য আপনার কি কোনো প্রশ্ন আছে?

দেখতে একদম একই রকম মনে হলেও, প্রথম অপশনে প্রশ্ন করার একটা চাপ তৈরি করা হচ্ছে দর্শকের উপর। আর দ্বিতীয় অপশনে, উত্তর করার ভারটা নিজের উপর দেখিয়ে প্রশ্ন করার চাপ দেয়া হচ্ছে না।

*

নাম্বার সংগ্রহ করার কমিউনিকেশন

যখন গুরুত্বপূর্ণ কারও কাছ থেকে নাম্বার চাচ্ছেন তখন তিনটি জিনিস খেয়াল রাখবেন :

১. অন্যদের সামনে নাম্বার জিজ্ঞেস করবেন না। আপনাকে হয়তোবা নাম্বার দেওয়া যেত। কিন্তু, অন্যরা নাম্বার পেয়ে যেতে পারে এই ঝুঁকিতে আপনাকে না বলে ফেলতে পারেন।

২. আপনি কি হুট করে এসে নাম্বার চাচ্ছেন না কি আপনাকে বিশ্বাস করার মত ন্যূনতম কোনো কারণ আছে?

৩. সরাসরি নাম্বার না চেয়ে বরং বলুন, স্যার, কোন নাম্বারে কল করলে আপনার সব থেকে বেশি সুবিধা হবে? কিংবা আরও ভালো হবে যদি আপনি বলেন, স্যার, আপনার অ্যাসিসটেন্টের নাম্বারটা কি দেয়া যাবে? আপনি অ্যাসিসটেন্টের কথা বলে তাকে বোঝাচ্ছেন যে আপনি জানেন যে তিনি অ্যাসিসটেন্ট রাখার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তখন আপনাকে আরও খুশিতে পারলে নিজের নাম্বারটাই দিবেন!

*

ইমেইল লেখার আদব-কায়দা

কাগুজে চিঠি-দরখাস্ত এখন বিলুপ্তির পথে। সময়স্বল্পতা আর ডিজিটাইজেশন এর অন্যতম কারণ। আগেকার দিনের চিঠি-দরখাস্তের জায়গা এখন নিয়ে নিয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইলের মতো বার্তা আদান প্রদান মাধ্যমগুলো। অন্য চ্যাটিং সাইটগুলো বেশ ইনফর্মাল হলেও ইমেইল বা বৈদ্যুতিন চিঠি সাধারণত প্রফেশনাল কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। আর কিছু নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানা না থাকার কারণে ভুলও হয়ে যায় প্রায়ই এই ইমেইল পাঠাতে গিয়ে। যেহেতু ইমেইলের ব্যবহার এখনও শুধু প্রফেশনাল কাজকর্মেই আটকে আছে তাই এই ইমেইল পাঠানোর কতিপয় আদব-কায়দা আছে। কথা না বাড়িয়ে সেগুলোই শেখা যাক বরং।

*

To, Cc, Bcc কোনটা কখন আর কেন?

ইমেইল কম্পোজ করার সময় সবার প্রথমে থাকে To, Cc, Bcc. এখানেই বাঁধে প্রথম গোলমাল। কোনটায় কখন কার ঠিকানা যাবে? সহজ করে বললে এই তিন জায়গাতে যাদের যাদের ইমেইল অ্যাড্রেস থাকবে তারা সবাই পুরো মেইলটা পাবে। প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে পার্থক্য কী হলো এদের মধ্যে?

To : প্রকৃত প্রাপক বা যাকে মেইলটা লেখা হয়েছে।

Cc : Cc-এর পূর্ণরূপ Carbon Copy. এই অংশে যার ঠিকানা থাকবে সেও হুবহু একই মেইলটাই পাবে।

Bcc : Bcc এর পূর্ণরূপ Blind Carbon Copy. এই অংশে যার ঠিকানা থাকবে তিনিও একই মেইল পাবেন।

এবার প্রশ্ন করতেই পারেন, একই মেইল সবাই দেখবে তাহলে To তে রাখলেই হতো। এত কাহিনী করার কী আছে? To তে রাখা হলে প্রতিটি ঠিকানার জন্যে একটা করে আলাদা মেইল যেত সবার কাছে। কিন্তু Cc আর Bcc তে রাখা হলে মেইল যাবে একটাই। কিন্তু যাদের যাদের দেখা প্রয়োজন সবাই দেখবে।

এখন চট করে আপনাদের আরেকটা কনফিউশন ক্লিয়ার করি, ইমেইল অ্যাড্রেস একটি গোপনীয় তথ্য। একজনের ইমেইল অ্যাড্রেস তার অনুমতি নিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া অনুচিত। তাই, আপনি যদি প্রাপককে জানাতে না চান যে এই একটা মেইল আর কাদের কাদের পাঠিয়েছেন। তাহলে Bcc তে অন্য ঠিকানাগুলো বসান।

*

সাবজেক্ট লাইন কেন লিখতে হয়?

৩৩ শতাংশ মেইল খোলা হবে নাকি না সেটা নির্ভর করে ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনের ওপরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাবজেক্ট লাইন ছাড়া মেইলগুলো খোলা হয় না। আমাদের মেইলের স্প্যাম ফোল্ডারে স্টোর হওয়া। মেইলগুলোর ৬৯% ও স্প্যাম হিসেবে শনাক্ত করা হয় এই সাবজেক্ট লাইন দেখেই। তাই আপনার মেইলটা কী বিষয়ে সেটা আপনার ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে উল্লেখ করুন। আর হ্যাঁ, একটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরি। এখন আমাদের পাঠানো ৪০% মেইলই চেক করা হয় মোবাইল থেকে। আর মোবাইলে সাবজেক্ট লাইনের ৪-৭ টা শব্দ দেখা যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে সাবজেক্ট লাইনের প্রথম ৪-৭ টা শব্দই যাতে মেইলটা কী নিয়ে সেটা সম্পর্কে ধারণা দেয়। কী থাকা উচিত সাবজেক্ট লাইনে? একটা ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে যেন দুটো প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর থাকে। ইমেইলটা কী নিয়ে? কেন ইমেইলটা গুরুত্বপূর্ণ? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর যেন উল্লেখ থাকে ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে।

*

ইমেইলের টোন কেমন হওয়া উচিত?

ইমেইল লেখার সময় আপনি কোন মেজাজে লিখছেন; আপনি কি বিরক্ত হয়ে লিখছেন নাকি আগ্রহ নিয়ে? আপনি কি প্রাপকের প্রতি খুশি হয়ে লিখছেন নাকি রাগ হয়ে? এই আবেগগুলো ইমেইলের টেক্সটে বোঝানোর উপায় হলো আপনার শব্দচয়ন। ইমেলের টোন খুব বেশি ফর্মালও হওয়া উচিত নয়। আবার খুব বেশি ইনফর্মালও হওয়া উচিত নয়। আর আপনার যথাযথ শব্দচয়নই ঠিক করে দেবে আপনি ঠিক কোন মেজাজে ইমেইল করছেন।

*

ফন্ট আর ফরম্যাট কেমন থাকবে?

আগেই বলেছি ইমেইল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এর প্রতিটা শব্দ বুঝে শুনে ব্যবহার করা উচিত। কোন সাইজের, ব্রণের, রঙের ফন্ট ব্যবহার করছেন সেটা নিয়ে একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ফন্ট সাইজ–যেটা দেওয়া আছে সেটাই ব্যবহার করুন।

ফন্ট কালার-খুব জরুরি না হলে পরিবর্তন করার দরকার নেই।

হাইলাইটিং-আন্ডারলাইন/বোল্ড/ইটালিক যেকোনো একটা ব্যবহার করুন।

হাইপারলিংক-কী যুক্ত করছেন উল্লেখ করুন, এডিট অ্যাক্সেস দিন, লিংকটা সম্ভব হলে ছোট করে দিন।

*

স্যালুটেশন আর ক্লোজিং কখন কেমন হবে?

স্যালুটেশন আর ক্লোজিং অর্থাৎ ইমেইলের শুরুতে সম্বোধন কেমন হবে আর শেষটা কীভাবে করতে হবে সেটা নিয়েও আমরা প্রায়ই কনফিউশনে ভুগি। উদাহরণ দিয়ে বোঝালে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

স্যালুটেশনের বেলায়–

Formal Salutation

Hello Shafiq Bhai,
Dear Ejaj Sir,
Dear Parveen Maam

Informal Salutation

Hi Shams,
Hey Zihan
Howdz Shamir

ক্লোজিংয়ের বেলায়-

Formal Closing

Sincerely
Yours truly
Best regards

Informal Closing

Thanks
Best
Cheers

আশা করি, এবার ধরতে পেরেছেন কোন ধরণের মেইল কীভাবে সম্বোধন আর শেষ করা উচিত।

*

সিগনেচার কেন প্রয়োজন?

প্রতিটা ইমেইলই শেষ হয় প্রেরকের নাম দিয়ে। এই নামটাকেই আরেকটু প্রফেশনালি দেওয়া যায় ইমেইল সিগনেচারের মাধ্যমে। এই সিগনেচার একটা সেট করে রাখা যায় ইমেইল বা জিমেইলের সেটিংসে গিয়ে। এতে করে সব ইমেইলের শেষে অটোমেটিক ঐ নির্ধারিত সিগনেচার চলে যাবে। এটা যেকোনো মেইলকে বেশ প্রফেশনাল দেখাতে সাহায্য করে।

*

Reply বনাম Reply all; কোনটা কখন এবং কেন?

To, Cc, Bcc এর পর আরেকটা গোলমেলে জায়গা হলো এই Reply আর Reply all. এই অপশন মূলত কোনো ইমেইল গ্রুপের ক্ষেত্রে আসে। এই দুটোর কোনটায় ক্লিক করলে কী হয় সেটা জেনে নেওয়া যাক আগে।

Reply : এখানে ক্লিক করা হলে কোনো ইমেইল লুপের সর্বশেষ যে প্রেরক মেসেজ করেছেন তার কাছে মেসেজের উত্তর যাবে।

Reply all : আর এখানে ক্লিক করা হলে পুরো ইমেইল লুপে যতজন। আছেন সবাই মেসেজের উত্তর পাবেন।

কোনো শুভেচ্ছা বার্তার উত্তর, বাজেট শিট বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠানোর সময় ভুলেও Reply all ক্লিক করতে যাবেন না।

*

কিছু Email Acronyms-এর পূর্ণরূপ!

ইমেইল লেখার সময় আমরা কখনও কোনো শর্ট ফর্ম ব্যবহার না করলেও হতেই পারে কেউ আমাদেরকে পাঠানো মেইলে কোনো শর্ট ফর্ম ব্যবহার করে বসলো। এখন আমরা যদি না জানি যে ঐ শর্ট ফর্ম দিয়ে প্রেরক কী বোঝাতে চেয়েছেন তাহলে একটু ঝামেলা। কয়েকটা বহুল ব্যবহৃত Email Acronyms বা শর্ট ফর্মের পূর্ণরূপ জেনে নেওয়া যাক—

Short FormMeaningকেন ব্যবহৃত হয়?
FYIFor your Informationপ্রাপককে কোনো তথ্য জানাতে
ASAPAs soon as possibleগুরুত্ব বোঝাতে
LMKLet me knowপ্রেরককে প্রয়োজনে জানাতে
OOOOut of Officeছুটিতে থাকলে
NRNNo reply necessaryউত্তর দেবার প্রয়োজন না থাকলে
EOMEnd of messageমেসেজ শেষ
PRBPlease reply byনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে
EODEnd of Dayনির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে
BTWBy the wayনিজের মতামত উপস্থাপনে
IMOIn my opinionপ্রসঙ্গক্রমে কিছু বলতে হলে

ইমোটিকনের ব্যবহার করা উচিত নাকি অনুচিত?

ইমোটিকন ব্যাপারটা বেশ আপেক্ষিক আর ইনফর্মালও বটে। একেক ইমোটিকনের মানে একেকজনের কাছে একেকরকম। তাই ইমেইলে ইমোটিকনের ব্যবহার না করাই ভালো।

Out of Office Replies কী?

আমাদেরকে নিজেদের প্রয়োজনে ছুটি নিতে হতেই পারে। কিন্তু আমরা ছুটিতে গেলে যে কাজকর্মও ছুটি নেবে ব্যাপারটা তো তাও না। আপনার এক্সটার্নাল স্টেকহোল্ডারদের মেইল তো আসবেই। এক্ষেত্রে করা কী যায়? এই সমস্যার সমাধানই হলো Out of Office Replies. এই রিপ্লাই আগে থেকে সেইভ করে রাখা যায়। আপনার ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে আপনার ঠিকানায় আসা সবগুলো মেইলের উত্তরে এই অটোমেটেড রিপ্লাইটা যাবে। কী কী থাকবে এই অটো রিপ্লাইতে? আপনি কতদিনের জন্যে ছুটিতে (একদিনের ছুটি হলে এই রিপ্লাই নিষ্প্রয়োজন), খুব জরুরি বিষয়ে কাকে জানাতে হবে, এবং অবশ্যই সাবজেক্ট লাইনে [OOO] যোগ করে দেবেন।

কতক্ষণের মধ্যে ইমেইলের রিপ্লাই দেওয়া উচিত?

একটা ইমেইল আসার কতক্ষণের মধ্যে রিপ্লাই করা উচিত এটা নিয়ে আমাদের অনেকেই কনফিউশনে ভোগেন। সহজ করে দেই একদম।

নিজের টিমের কারও অর্থাৎ সরাসরি আপনার কাজের সাথে যুক্ত এমন কারও মেইলের রিপ্লাই দেখামাত্র করুন। অফিসের অন্য সহকর্মীর পাঠানো মেইলের উত্তর দিন অফিসের ওয়ার্কিং আওয়ারের মধ্যে। আর চেষ্টা করুন বাকি অন্য প্রয়োজনীয় মেইলের উত্তর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে দিতে।

নিখুঁত ইমেইল পাঠানোর কয়েকটি ট্রিক!

ইমেইল যেহেতু ইংরেজিতে লেখা হয় তাই পাঠানোর আগে কয়েকবার প্রুফরিড করে নিন যাতে বানান আর গ্রামার সংক্রান্ত ভুল না থাকে। ডাবল। চেক করুন যা যা অ্যাটাচ করার করেছেন কি না, প্রাপকের ঠিকানা সবার। শেষে বসান। আর রিপ্লাই করার সময় আবার চেক করুন আসলে রিপ্লাই দেওয়া উচিত নাকি সবাইকে রিপ্লাই করা উচিত।

ইমেইলে আমাদের করা ২ টি সাধারণ ভুল!

আমরা যেহেতু এখনও ইমেইলে অতটা অভ্যস্ত নই তাই এই ইমেইল করার বেলায় কিছু সাধারণ ভুল আমরা সবাই করি। প্রথম ভুল হলো, একটা ঠিকঠাক ইমেইল অ্যাড্রেস না থাকা। উল্টাপাল্টা নাম দিয়ে ইমেইল আইডি খুলবেন না। ইমেইল অ্যাড্রেসে নিজের নামের সাথে একটা সংখ্যা থাকলেই যথেষ্ট।

দ্বিতীয় ভুল হলো, ইমোটিকন আর অনেকগুলো আশ্চর্যবোধক চিহ্ন একসাথে ব্যবহার করা। ইমেইলে আমরা প্রফেশনালি কমিউনিকেট করি। ইমোটিকন ব্যবহারের কোনো দরকার নেই এখানে। আর একের অধিক আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করলে প্রাপক আশ্চর্য হয়ে যেতে পারে আপনার বুদ্ধি নিয়ে।

বিরাম চিহ্ন আর ব্যাকরণ ঠিক রাখা যায় কীভাবে?

ইমেইল বাংলায় লেখার প্রচলন এখনও শুরু হয়নি। যতদিন ইংরেজিতে মেইল করা হবে ততদিনই গ্রামার আর বানান নিয়ে একটু বাড়তি সতর্ক থাকা আমাদের জন্যেই ভালো। চারটা সাধারণ ভুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। কেননা এই ভুলগুলোই ঘুরে ফিরে আমরা সবাই করি।

১. “…” এর বাইরে নয় ভেতরে বিরাম চিহ্ন বসে।

২. (…) এর ভেতরে নয় বাইরে বিরাম চিহ্ন বসে।

৩. ( 🙂 কোলন দুটো আলাদা স্বাধীন বাক্যের সংযোজক। কোলনের পরের বাক্যের প্রথম শব্দের শুরুর আদ্যক্ষর বড় হাতের।

৪. ( 😉 সেমিকোলন দুটো আলাদা স্বাধীন সম্পর্কযুক্ত বাক্যের সংযোজক। সেমি কোলনের পরের বাক্যের প্রথম শব্দের শুরুর আদ্যক্ষর ছোট হাতের।

এই আদব-কায়দাগুলো মেনে ইমেইল করা গেলে আপনার ইমেইল কমিউনেশন হবে আরও অনেক বেশি প্রফেশনাল।

আজকে থেকে এগুলো বদলে ফেলুন

একদম চোখ বন্ধ করে বদলে ফেলুন! এগুলো ব্যবহার করতে বেশি চিন্তা করে লাগবে না।

যা বলা বন্ধ করতে হবে / যা বলতে হবে

আপনার কী সমস্যা? / কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

আমি জিতেছি। / আমরা জিতেছি!

আমি পারবো না। / আমার সাহায্য লাগবে।

আমাকে দিয়ে হবে না। / আমার সময় লাগবে।

কষ্ট দিলাম! / বাসায় আসার জন্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ! / ধন্যবাদ + (ধন্যবাদের কারণ)

চুপ করো। / আমি একটু বলি?

কার দোষ? / এখন তাহলে কী করা যায়?

অসম্ভব! / কাজটা একটু কঠিন।

পারবা না। / হেল্প লাগবে?

এই বেসিক শব্দগুলো নিজের ভোকাবুলারিতে নিতে সক্ষম হলে এর পরবর্তী ধাপে আপনার মাথার ফিল্টার ঠিক করতে মনোযোগ দিন।

*

আর একটা জিনিস!

মনে করেন কেউ আপনার কথায় রাজি হয়ে কোনো একটা জিনিস কিনলো। যখন মানুষ আপনার সাথে কোনো চুক্তি করে মৌখিক, লিখিত কিংবা ব্যবসায়িক যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে তখন অনেকটা বিশ্বাস করে

এবং যারা আপনাকে অনেক বিশ্বাস করে, তাদের কাছে আপনি আরেকটু কিছু চাইতেই পারেন। যেমন : আপনি একজনের কাছে একটা ব্যাগ বিক্রি করলেন। ব্যাগ বিক্রি করার পর আল্লাহ্ হাফেজ বলার আগে তাকে বলুন, স্যার! আমাদের এই কার্ডটা নিন, আপনার কোনো বন্ধুর এমন সুন্দর ব্যাগ লাগলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন।

খুব ছোট একটা জিনিস, কিন্তু এর পেছনের সাইকোলজিটা ব্যাখ্যা করলে আসলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। মানুষ যখন কোনো জায়গায় শ্রম, সময় কিংবা অর্থ দেয়, তখন সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সে সবচেয়ে ভালো কাজটাই করেছে। আপনার কাছ থেকে ব্যাগ কিনলে সে নিজেকে বোঝাবে যে ব্যাগটা অনেক ভালো। ব্যাগটা যদি ভালো না হয় তাহলে তো সে বোকার মতো টাকা ব্যয় করেছে! তাই সে নিজেকে এবং অন্যদেরকেও বোঝাবে যে তার ব্যাগটা কত ভালো।

মানুষ যখন তাকে এসে জিজ্ঞেস করবে ব্যাগটা কোথা থেকে কিনেছিস, সে অনেক খুশি হবে এই ভেবে যে মানুষ চিন্তা করে যে তার ব্যাগের চয়েজ অনেক ভালো। আর তখন নিজের দক্ষ শপিং স্কিলের কথা বলতে এবং ফ্রি উপদেশ দিতে গেলে কার দোকানের কথা সে বলবে? হ্যাঁ! আপনারটাই! কারণ তাকে তার নিজের সিদ্ধান্তটা যে ঠিক, সেটা প্রমাণ করতে হবে না! সোজা আপনার দোকানের দিকে এগিয়ে দেবে।

*

অজুহাতে কুপোকাত

দোস্ত, কালকে মিরপুরে আমাদের ফুটবল ম্যাচ আছে। তোকে আমাদের টিমে কিন্তু লাগবেই!

-না দোস্ত! বাসা থেকে অনেক দূরে!

আরে আয় না দোস্ত!

-না রে! আমার বুটও নাই!

এই দুইটা কারণে কি আসতে পারবি না?

-হ্যাঁ রে দোস্ত!

আচ্ছা ঠিক আছে। আমার আর তোর বুট সাইজ তো একই। আমি কালকে ৪ টায় তোকে বাসা থেকে পিক করে নিয়ে যাবো। রেডি থাকিস!

তাদের কাছ থেকে তাদের শর্তগুলো খালি বের করে নিন। মানুষ কোনো কিছু না করতে অনেক তালবাহানা করে। যেই অজুহাত তারা দিচ্ছে এ অফার করে তাদেরকে কুপোকাত করে ফেলুন। এরই একটা উদাহরণ না আমাদের দেশেরই।

একটা প্রজেক্টের জন্য মানুষকে অ্যাপ ইন্সটল করাতে হত। কিন্তু, অনেকেই করতে চায় না এবং তাদের অজুহাত, নেট নাই!। খুব ভালো। এরপর থেকে আমাদের কথাবার্তা এমন হত :

ভাইয়া…আমাদের অ্যাপ এই এই কাজ করে। আপনার মোবাইলে। ডাউনলোড করে দেখবেন প্লিজ?

–না ভাই, আমার নেট নাই!

তাহলে কোনো অসুবিধা নাই! আমরা নেট দিচ্ছি। এই নিন হটস্পট। ডাউনলোড করে বলুন অ্যাপটা কেমন?

একবার যখন বলে ফেলে যে নেট থাকলে ডাউনলোড করতাম তখন হটস্পট দিলে আর ডাউনলোড না করে থাকতে পারবেন না!

*

অধিকাংশ মানুষ

বিজ্ঞাপনে নিশ্চয়ই এমন দেখেছেন যে, ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এই টুথপেস্ট ব্যবহার করতে বলেন। কিংবা শুনেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আস্থা, তমুক ব্র্যান্ডের উপর।

মানুষের একটা বেসিক সাইকোলজি হচ্ছে, সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। কিন্তু, যখন দেখে অন্যরাও এই কাজ করছে, কিংবা কোনো অভিজ্ঞ মানুষ একটা কাজ করতে বলছেন, তখন তারা সেটা নির্ভয়ে অনুসরণ করে। মূল কথা হচ্ছে, মানুষ নিজে খুব বড় ঝুঁকি নিতে চায় না। সে অন্য মানুষের উদাহরণ দেখতে চায়। ক্লাসে অনেক সময় হয়তোবা দেখেছেন এটা। কারও একটা প্রশ্ন আছে লেকচার নিয়ে। কিন্তু, সে চুপ করে বসে অপেক্ষা করবে কখন আরেকজন তার মনের প্রশ্নটা স্যারকে করবে। নিজে থেকে প্রশ্ন। করতে পারলেও, অনেকে সেটা কেন করে না ভেবে দেখেছেন কি?

এখন এই বেসিক সাইকোলজি কীভাবে অন্য জায়গায় প্রয়োগ করবেন? রেফারেন্স দেবেন! আমাদের পণ্য অমুক এবং তমুক ব্যবহার করে অনেকে খুশি হয়েছেন, আপনিও করে দেখুন আজই!

এটারই একদম প্র্যাক্টিকাল আরেকটা উদাহরণ দেই একদম চোখের সামনের। বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে, অ্যাপে কিংবা বই নিয়ে এখন রিভিউ দেওয়া যায় না? অনেক ফেসবুক পেইজ নিজ থেকেই বলে, আমাদের সার্ভিস ভালো লেগে থাকলে রিভিউ দিয়েন প্লিজ। কেন? কারণ অন্য মানষের রিভিউ দেখলে আমরা ভরসা পাই যে, এই পেইজ থেকে কোনো কিছু কিনলে আমি ঠকবো না।

*

২ মাস আগের পরিকল্পনা

আপনি যেদিন সব বন্ধুকে ডাকবেন, ওইদিনই সবার কোনো না কোনো কাজ। যখনই আপনি মানুষের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইবেন, কমন একটা উত্তর হচ্ছে, ওইদিন আমার আরেকটা মিটিং আছে। আপনি যেদিন মিটিং করতে চাইবেন ওইদিন আপনি বাদে দুনিয়ার অন্য সবার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে এমন একটা ভাব অনেকেই দেখাবে। এক্ষেত্রে একটু আগে থেকে পরিকল্পনা করলেই কিন্তু হয়ে যায়। বেসিকটা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষেরই ১ মাস তো দূরে থাক, ১ সপ্তাহের পরিকল্পনাটুকুও থাকে না। তাই, আপনি যদি অনেককে নিয়ে কিছু করতেই চান, ১০-১৫ দিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখেন। তখন তো আর বলতে পারবে না যে, ৪৩ দিন পর তোর ৪টার মিটিং-এর সময়ই আমার আরেকটা মিটিং আছে! হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এত সময় পাওয়া যায় না।

*

ইংলিশে বলসে! তার মানে ঠিক বলতেসে!

ব্যাপারটা অপ্রিয় হলেও সত্যি যে আমরা সাদা চামড়া কিংবা বিদেশীদের প্রতি কেন যেন একটা বাড়তি ভালোবাসা দেখাই। খালি সেখানেই না, বিদেশীরা যদি ইংরেজি বলে, তাহলে আমরা ভাবি যে দারুণ কিছু একটা বলেছে।

আমরা অনেক সময় খেয়াল করেছি যে, মানুষ যখন জটিল প্রশ্ন করে তখন অনেকে নিজের জ্ঞানের গভীরতা বোঝানোর জন্য ইংরেজিতে উত্তর দেন। এবং খালি তাই নয়, অনেকে মেনেও নেয়। তাদের ধারণা, ইংলিশে বলেছে, ভুল কীভাবে বলে! হাস্যকর যত চিন্তাভাবনা।

ময়লার গাড়িকে ট্র্যাশ ক্যান বললেই গন্ধ পাল্টে পারফিউমের মতো হয়ে যায় না। তাই, এখান থেকে আমরা দুটো জিনিসে খেয়াল রাখতে পারি।

১. স্যুট টাই পরে বলছে, সাদা চামড়ার কেউ বলছে কিংবা বিদেশী ভাষায় বললেই সব কথা সত্য হয়ে যায় না।

২. মানুষের সামনে একটু আধিপত্য কিংবা নিয়ন্ত্রণ দেখাতে হলে দুই-চারটা কঠিন শব্দ কাজে দেয়। ব্যাপারটা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন মানুষের সাইকোলজিতে এখনও জিনিসটা আছে। তাই, কোনো ভালো বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে এক দুইবার নিজেই ট্রিকটা ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু! অর্থাৎ, কিছু কিছু পরিবেশে নিজের আধিপত্য তৈরি করতে দুই-চারটা ইংলিশ বললে মানুষ আপনাকে সিরিয়াসলি নিতে পারে।

*

গত দশবার কথা কী দিয়ে শুরু হয়েছে?

কোনো মানুষের সাথে যদি আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়, তাহলে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন। গত ৫ কিংবা ১০ বার যখন ওই মানুষটির সাথে আপনার কথা হয়েছে, শুরুটা কেমন ছিল? সালাম দিয়ে শুরু হয়েছে।

নাকি টিটকারি দিয়ে শুরু হয়েছে নাকি কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে? সম্পর্ক নিয়ে আমাদের বলার অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি যদিও তবুও একটা পর্যবেক্ষণ আমাদের আছে। একটা সময়ের পর স্বামী-স্ত্রীর শেষ ১০টি আলোচনা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখবো যে শুরু হয়েছে; পটল লাগবে, বাজার শেষ, খাবার ভালো হয়নি, এত দেরি কেন হল, বিরক্ত করো না তো এসব দিয়ে। একটা মানুষের সাথে যদি দেখা হওয়ার আগেই আপনি জানেন যে কোনো একটা নেগেটিভ কথা আসবে, তাহলে তো আপনি আরও পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। পাশ কাটিয়ে কেন যাচ্ছেন, এটা নিয়ে তখন আবার শুরু হবে। দেখা হলেই যদি আপনি মানুষের কাছে আপনার দুঃখের কথা বলেন, কিংবা দেখা হলেই যদি টাকা চান, মানুষ তো আপনার সামনেই আসবে না।

তাই, যদি মনে হয় যে মানুষ আপনাকে এড়িয়ে চলছে, কিংবা আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না; তাহলে একটু খেয়াল করে দেখুন গত ১০টা কনভারসেশনের কয়টিতে অন্য মানুষটির জন্য আনন্দদায়ক কিছু ছিল?

*

কল কাটার জন্য ব্যতিব্যস্ত

টাকা বেশি খরচ হবে চিন্তা করে যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে ফোন কাটে তাহলে সেটা খারাপ চোখে দেখার মতো বড় কোনো ব্যাপার না। ব্যালেন্সের সামর্থ্যজনিত সমস্যা কারও থাকতেই পারে। এটা নিয়ে রেগে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিরক্তিকর এবং বেয়াদবিটা তখন হয় যখন কল দিলে আপনি, আর তাড়াহুড়ো করে কাটছে অন্যপ্রান্তের মানুষটি। আরেহ ভাই, টাকা কাটলে তো আমার কাটছে, আপনার এত কিসের তাড়া।

অনেকের এটা অভ্যাসের মতো হয়ে যায়, যে দ্রুত কল কাটতে হবে। সেটা নিজের খরচে করা ফোন হোক কিংবা অন্যের। সমস্যা হচ্ছে, এটা অনেকের কাছেই ব্যাপক বেয়াদবি মনে হতে পারে। কথা বলার মাঝখানে হুট করে উঠে যাওয়াটা যে কত বাজে সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু, হুট করে ফোন কাটার বেয়াদবিটা অনেকে বুঝে উঠতে পারে না কারণ হুট করে ফোন কাটার পর, অপর প্রান্তের মানুষটির বিরক্তি তো আর সরাসরি তারা দেখতে পায় না।

তাই, ৭০ পয়সা বাঁচাতে যদি কেউ একটা সম্পর্কে ঝুঁকিতে রাখতে পারে, তাহলে তার জীবনে কালো মেঘই আছে। এবং এটা খালি ৭০ পয়সা বাঁচানোর ব্যাপার না, এটা বেসিক ভদ্রতা। ভবিষ্যতে একটা নিয়ম মেনে চলতে পারেন; বিশেষ করে সিনিয়রদের সাথে ফোনে কথা বলার সময়ে কথা শেষ করার পর আপনি ফোন না কেটে অপর প্রান্তের ফোন কাটার জন্যে অপেক্ষা করুন। ২ সেকেন্ডের বেশি হয়ে গেলে এরপর ফোন কাটতে পারেন। তাহলে আর মাঝপথে কোনো কথা মিস করে যাবার ঝুঁকি থাকবে না।

*

সত্যিকারের সমালোচনা

ব্যক্তিগত সমালোচনা হলে সেটা আপনি বাদে তো আর কারও শোনার দরকার নেই, তাই না? এজন্যই সমালোচনা যাকে করবেন, তাকে একদম আলাদা করে তারপর ফিডব্যাক দিন যাতে করে তিনি অন্যদের সামনে বিব্রত না হন। অনেকে অন্যদের সামনে বিব্রত যেন না হতে হয়, সেজন্য অনেক গঠনমূলক সমালোচনারও বিরোধিতা করে বসেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তাই, সত্যিকার সমালোচনা করতে হলে :

  • পাবলিক পোস্টে কমেন্ট না করে ইনবক্সে জানান।
  • মিটিং রুমে সবার সামনে না বলে, একটা রুমে ডেকে একান্তভাবে জানান।

*

আমি, আমি, আমি

সেলেব্রেটিদের ইন্টারভিউ বাদে কোনো মানুষ যদি নিজের সম্পর্কে টানা ১০ মান ধরে কথা বলে, বিশেষ করে প্রথম সাক্ষাতেই; তাহলে কেমনটা লাগবে?

যিনি শুনছেন তিনি মনে মনে ভাববেন,

এ কি নিজেকে সেলেব্রিটি ভাবে?

তোর কাহিনী শুনে আমি কী করবো?

ভাই! আমি তো আপনার অটোবায়োগ্রাফি চাই নাই!

বিরক্তিকর না? আমি নিশ্চিত আপনার এমন হয়েছে যে আপনি খেলতে যাচ্ছেন কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন। এমন সময় কোনো এক আঙ্কেল এসে শুরু করলো, আরে বাবা, কেমন আছো! আচ্ছা তোমরা কখনও ফ্রেশ লাউ খাইসো? আমার গ্রামের বাড়িতে…।

আমরা কেউ ওই মানুষটি হতে চাই না যাকে দূর থেকে দেখলে মানুষ রাস্তা। পার হয়ে অন্য পাশে চলে যায়। তাই, নিজেকে সব সময় যেন একটা প্রশ্ন। করি, গত পাঁচ মিনিটে কয়বার আমি এবং আমার শব্দ দুটো বলেছি?

*

স্বার্থপর কমিউনিকেশন

একটা কথা আছে না? কাজ শেষ, খোদা হাফেজ! এমনই একটা অবস্থা প্রায়ই দেখি। হঠাৎ করে ফোন দিয়ে তুলকালাম! কী না কী প্রজেক্ট হবে। দুই-তিনদিন ধরে অনেক পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজি ইত্যাদি। এত কিছু পেরিয়ে যেই মাত্র কাজটা জমা দিবেন, সাথে সাথে কথা শেষ।

ফাইলটা পেয়েছে নাকি পায় নাই, কোনো খবর নাই। ধন্যবাদ তো আরও দূরের ব্যাপার। আর টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তো বললামই না। প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ে কথা বলবে, বউ-বাচ্চার কথা বলবে, দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের ভাতিজার খনার কথা বলবে; কিন্তু আপনার পেমেন্ট নিয়ে কোনো কথা বলবে না! কাজ শেষ হলে সব অফ! কাজ করার পরও যে হাই-হ্যালো। করতে হয়, এই সৌজন্যটুকুও অনেক সময়ই খুঁজে পাই না। এবং এটা খালি সৌজন্যবোধের ব্যাপারও নয়।

অনেকেই এমন দেখেছি যারা একবার কারও সাথে ব্যবসা করে, কিংবা কোনো জিনিস বিক্রি করে আর কথা বলে না। লেনদেন শেষ, তো অচেনা মানুষ একদম! আরে ভাই! যেই মানুষগুলো আপনার কাছ থেকে কোনো জিনিস কিনেছে, তারা তো আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত। আসল ভক্ত তারাই যারা আপনার কাজের জন্য খালি প্রশংসা নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থও দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ দিলে, এক মাস পর খোঁজ নিলে তারা আপনার আরও পণ্য কিনতে ফেরত আসতে পারে। এবং ব্যাপারটা খালি ব্যবসায়িকই না। আমাদের জীবনে আমাদের সম্পর্কগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের চেয়ে যারা কাজের চেককে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটা কোয়েশ্চেন মার্ক রয়েই যায়।

*

শব্দ করে ব্যাগ গোছানো

এটা একটা ছোটবেলার স্মৃতি চিন্তা করে দেখলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও এই কাজ করতাম! কাজটা হলো, ঘণ্টা দেয়ার পরও যখন টিচার ক্লাস চালিয়ে যেতেন তখন আমরা আমাদের ব্যাগ গুছানো শুরু করতাম। খালি চাতাম না, শব্দ করে ব্যাগ ঝাড়তাম, শব্দ করে খাতা-বই বন্ধ করতাম। মানে হলো, ক্লাসের টাইম শেষ!

কেন করতাম এমন? কারণ সরাসরি তো অনেকে বলতে ভয় পেতাম যে। ক্লাসের সময় শেষ। তাই, অন্যভাবে ইঙ্গিত দিতাম। ছাত্রজীবনে এর মজাটাই আলাদা ছিল!

কিন্তু, বাস্তব জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যেখান থেকে আপনি বের হতে চাচ্ছেন কিন্তু শব্দ করে ব্যাগ গোছানোর ট্রিকটা কাজে দিবে না। কীভাবে বলবেন যে আপনি এই আলোচনায় থাকতে চাচ্ছেন না?

ভাইয়া! খুবই দুঃখিত, আপনার কথার মাঝখানে কথা বলছি। কিন্তু আমার এখন একটা মিটিং-এ যেতে হবে। এখন রওনা না দিলে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু, পরের দিন কিন্তু আপনাকে গল্পটা শেষ করতে হবে! আসি তাহলে! 😀

এভাবে বলতে পারেন অথবা নিজের মত করে একটা সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) বানিয়ে নিন। এসব বলতে লজ্জা লাগলে একটা মানসিক হাতিয়ার আপনাকে দিয়ে দেই।

যেই মানুষটা আপনার সময়ের ও প্রাধান্যের তোয়াক্কা না করে নিজের গল্প বলে। যায়, সেই স্বার্থপর মানুষের জন্য কেন আপনি নিজের সময় নষ্ট করবেন?

–ভাই! অনেক সময় সিনিয়রদের বলা যায় না!

হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু, আপনি যদি কোনো সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) না। বের করেন, তাহলে তারা ধরে নেবে যে আপনি তাদের কথা শোনার জন্য নিয়মিত সাবস্ক্রাইবার। হয় উপায় বের করেন, নাহলে আপনার সাথে এসব চলতেই থাকবে।

*

কষ্টের প্রতিযোগিতা

দোস্ত, আর বলিস না। ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ফ্র্যাকচার করে ফেলসি

–আরেহ! এটা তো কিছুই না! আমি ফুটবল খেলতে যেয়ে ফ্র্যাকচার তো করসিই, তার উপর হাঁটুর বাটিও নড়ায় ফেলসি!

কিংবা,

রাস্তায় জ্যামে আটকেই দিনে ৩ ঘণ্টা চলে যায়।

-–আমাদের সময় আমরা ২৫ মাইল হেঁটে স্কুল যেতাম। যাওয়ার পথে পদ্মা নদী সাঁতরে পার হয়ে কেওক্রাডং-এর উপর দিয়ে পার হয়ে….

যখন কেউ কষ্টের কথা বলে, তখন আপনার কষ্ট কীভাবে বেশি সেটা বললে অন্য মানুষটির কষ্ট কমে যায় না বরং সে আরও বিরক্ত হয়ে যায়। তাই, কার কষ্ট বেশি এই প্রতিযোগিতাটা না করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও বুদ্ধিমানের কাজ হল এই ব্যাপারটা বোঝা যে, মানুষ অধিকাংশ সময় যখন কষ্টের কথা বলে, তখন তারা কেবল শেয়ার করতে চায়। তারা কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত কিংবা আপনার জীবন ব্রেকআপের পর কেন দুর্বিষহ– এসব মোটেও জানতে চায় না। তাই, মানুষ কষ্টের কথা বললে প্রতিযোগিতা আর দুঃখবিলাসের সুইচটা বন্ধ রাখাই সেরা পন্থা।

*

মন দিয়ে শোনার ট্রিক

এটা আমাদের আম্মুর কাছ থেকে শেখা। একদিন আম্মুকে দেখি বেশ ক্লান্ত। কথা বলে বুঝতে পারলাম যে মেহমান আপ্যায়ন করতে করতে আম্মুর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাও আবার কাছের আত্মীয় না, একবার দুবার কথা হলেই মানুষ আসা শুরু করছে, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেই যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাহিনী কী? তখন আম্মু বললো, আমি তো কিছুই বলি না। একদম চুপ করে থাকি। তবুও মানুষ কথা বলেই যায়!

তখন আমি বুঝিনি কিন্তু এখন জিনিসটা আন্দাজ করতে পারি। আম্মু কিছু বলতো না, তার মানে এই যে আম্মু সব কথা চুপ করে শুনতো। অনেক সময় এই আশায় যে, চুপ করে থাকলে মানুষ কথাবার্তা বেশি আগাবে না। কিন্তু মজার জিনিস হচ্ছে ঠিক এই কারণেই আন্টিরা আম্মুর সাথে বেশি কথা বলতো। কারণ, ঘণ্টার পর মনোযোগ দিয়ে চুপ করে কথা শুনবে, এমন মানুষই তো বাঁচালরা খুঁজছে!

এখান থেকে শিক্ষাটা কী?

আপনি যদি মানুষকে বোঝাতে চান যে আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছেন, তাহলে মিনিটে ১/২ বার হুম বলে বাকিটা সময় অফ থাকেন!

*

সবচেয়ে কম জানা মানুষ হলে

কোনো একটা রুমে যদি সবাই আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হয় তাহলে আপনি কী করবেন?

অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে হীনম্মন্যতার কারণে বেশি কথা বলে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, যারা আসলেই জানে, তারা সরাসরি কথার অসারতা বুঝে ফেলে। যত বেশি কথা বলবেন তখন, তত বেশি তারা আপনার জ্ঞানের অগভীরতা বুঝে ফেলবে। কিন্তু, একটু অন্যদিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করি যে একটা রুমে সবাই আমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হলে, আমি কেবল চুপচাপ কথা শুনলেই অনেক নতুন কিছু জানতে পারবো। কিন্তু এই জিনিসটাই অনেক ইয়াং মানুষজন ভুল করে। আমরাও করেছি। যারা অভিজ্ঞ, তাদেরকে আপনার বোঝানোর দরকার নেই। বরং যত বোঝাতে যাবেন তত বেশি নিজেকে হঁচড়ে পাকা সাব্যস্ত করে বসবেন।

*

অনলাইনে যে ৮টি ভুল আমরা প্রায়ই অজান্তে করে ফেলি!

১. কাজের কথা ঠিক হলে নিশ্চিত করে Acknowledgment না পাঠানো। আপনাকে কোনো কাজ দেওয়া হলে আপনি সেটা ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, করতে পারবেন কি না, কতক্ষণের মধ্যে পারবেন, কীভাবে করবেন সেটা জানিয়ে কাজ শুরু করুন।

২. মনে রাখবেন অনলাইনে একবার শেয়ার হওয়া যেকোনো কিছু আজীবন অনলাইনেই থেকে যাবে। তাই, বিব্রতকর কিছু পাঠানো অনুচিত।

৩. শব্দের শর্ট ফর্ম (gdn8, alr8, tnq, cu, nc, r8, pls) ব্যবহার করা। শব্দের শর্ট ফর্ম লিখে আপনি যে সময়টা বাঁচান ঐ সময়টায় কী করেন বলেন তো?

৪. Caps Lock দিয়ে কথা বলা। কারণ Caps Lock দিয়ে কথা বলা চিৎকার করে কথা বলা একই জিনিস।

৫. চলে যাবার আগে জানিয়ে না যাওয়া।

কথা বলার মাঝখানে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়া অপর প্রান্তের মানুষটির জন্যে বিব্রতকর। তাই কোনো কারণে কোথাও যেতে জানিয়ে যান।

৬. অহেতুক গ্রুপ চ্যাটে কাউকে যোগ দেয়া। এটা নতুন মানুষ এবং গ্রুপ চ্যাটের অন্য সবার জন্যেই বিব্রতকর।

৭. হাই/ হ্যালো বলার পর মূল উদ্দেশ্যটা জানিয়ে না রাখা।

এখনকার সময়ে খুব কাছের না হলে একটা মানুষকে কাজ ছাড়া নক করা। হয় না কারও। এই নক করতে গিয়ে যদি হাই/হ্যালোর চক্করে ঘুরপাক খেতে থাকেন তাহলে সেটা আসলে সময় নষ্ট। তাই হাই/হ্যালো বলে। ছোট করে যে কারণে নক করেছেন সেটা জানিয়ে রাখুন।

৮. ফোন করার আগে অনুমতি না নেওয়া।

অপরিচিত কাউকে অনলাইনে ফোন করার আগে একটা টেক্সট পাঠিয়ে অনুমতি নেওয়া ভদ্রতা।

*

না মানে কী?

আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছে। আর একেকটি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে তাদের দিনের পর দিন চলে যায়। একটা ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে আরেকটা ইন্টারভিউ বোর্ডে যেতে অনেক শ্রম, সময় এবং অর্থ চলে যায়। চাতক পাখির মত অনেকেই তাকিয়ে থাকে। কখন কোম্পানি থেকে ফোন আসবে। যাদের চাকরি হয়ে যায়, তাদের জন্য তো সেটা অনেক খুশির খবর। কিন্তু, এমন প্রায়ই হয় যে, যাদের চাকরি হয়নি, তাদের বলাও হয় না যে তারা বাদ পড়েছেন। তারা হয়তোবা অন্য চাকরির জন্য আবেদন না করে অপেক্ষা করছেন। এতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয় এবং এভাবে চুপ করে থাকাটাও খুবই খারাপ। যারা চাকরি পায়নি। তাদের সবাইকে বলতে সময় লাগলে, খালি একটা নোটিশ দিয়ে রাখা ভালো যে সিলেকশন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।

আমাদের মধ্যে এই জিনিসটা আছে যে, হ্যাঁ বললে হ্যাঁ বলি কিন্তু না বলার সময় চুপ থাকি। ভাবি যে অন্য মানুষটা নিজে থেকেই বুঝে নিবে।

চুপ থাকলেই কি অন্য মানুষটা না বুঝে নেয়? নাকি নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ ভেবে আসা নিয়ে থাকে? একটু পরিষ্কার করে বললেই বরং অনেক মানুষের অনেক সুবিধা হয়।

এবং ব্যাপারটা খালি অপেক্ষার না, অনেক জায়গাতেই আমরা না বলতে পারি না বলে অনেক বড় কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি করে ফেলি।

বস হয়তোবা মেসেজ করলে, ফাইলটা কি হয়েছে? ফাইল যে হয়নি, এটা বললে মহা-ঝাড়ি খেতে পারে এই ভয়ে চুপ করে কাজ করতে থাকে। আরে ভাই, খালি বলে দেন, স্যার ৫টার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

এসব না বলে চুপ করে থাকলে মানুষ আরও বেশি বিরক্ত হয়। তাই হ্যাঁ বা না যা হোক, পরিষ্কারভাবে সবাইকে বলে রাখুন সব সময়।

*

কমিউনিকেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র

আপনার হাসি। যত যাই বলেন না কেন, হাসি সংক্রামক, আপনি হেসে কথা বললে অপর প্রান্তের মানুষটিও না চাইতেও একটু একটু করে হাসার চেষ্টা করবে। আজ থেকেই আমরা চাইবো আপনি একটা জিনিস করা শুরু করেন। সেটা হলো : যার সাথেই কথা বলেন না কেন, যেই হোক না কেন; একটা হাসি দিয়ে কথা বলা শুরু করেন। দেখবেন অচেনা মানুষ হলেও আপনার সাথে একটু আনন্দিত হবার ভান করে কথা বলা শুরু করবে। এমন। অনেক মানুষ আছে যাদের সাথে আপনার মাত্র এক-দুই লাইন কথা হয়। গার্ড, ক্যাশিয়ার, রিক্সাওয়ালা– এসব মানুষের সাথে যেই এক–দুটো লাইনও বলবেন, একটু খালি হেসে বলবেন। বিশ্বাস করেন, এটা যতটা না পৃথিবীকে উজ্জ্বল করবে, তার চেয়ে বেশি আপনার মনকে খুশি করবে। আপনি খালি করেই দেখেন না!

*

কমিউনিকেশনের ইকোনমি

মানুষ খালি গাড়ির ইকোনমি খুঁজে। কোন গাড়িতে সবচেয়ে কম লিটারে বেশি মাইল চলবে। একই ইকোনমি মানুষ যদি তাদের কমিউনিকেশনেও খুঁজতো তাহলে কেমন হত?

অর্থাৎ, আমরা যদি প্রতিটা শব্দ মেপে বলতাম? মনে করেন, আপনার জীবনে আপনি আর মাত্র ১ লাখ শব্দ বলতে পারবেন। যেই মাত্র আপনি ১ লাখ তম শব্দটা বলবেন, সেই মুহূর্তে আপনি মারা যাবেন (আমাদের আধকাংশ মানুষের জীবনেই আসলে এমন একটা সময় আসে যখন আমরা আমাদের মৃত্যু থেকে ১ লাখ শব্দ দূরে থাকি, কিন্তু আমরা সেটা কখনই জানতে পারি না)। এমন অবস্থা হলে, আপনি খালি পাঁচ মিনিট চিন্তা করে দেখেন যে, আপনি কীভাবে কথা বলতেন।

আরেকবার বলা যাবে এই কারণে আমাদের কমিউনিকেশনে আমরা অনেক ক্রটি রেখে দেই। মানুষকে কিছু একটা বললেন। পরের দিন আবার একই জিনিস জিজ্ঞেস করলে আপনাকে আবার বলতে হচ্ছে। আর আপনিও ম্যানেজার হলে তো একশবার রিপিট করতে হচ্ছে। তাই, একই কথা যদি দশবার রিপিট করতে হয়, তাহলে সেটা একবার লিখে রাখুন এবং তারপর সারকুলেট করুন। একই কথা, একই প্রসেস প্রতিদিন রিপিট করার চেয়ে একবার ইস্ট্রাকশন বানালে আপনার হাজারো ঘণ্টা বেঁচে যাবে। আমরা যেই প্রশ্ন বারবার পাই, সেগুলো নিয়ে আমরা ভিডিও বানিয়ে ফেলি। আমরা ঘুমাই আর বাইরে ঘুরতে যাই, ভিডিওর মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন লাখ লাখ উত্তর দিয়ে যাচ্ছি অটোমেটিক। খালি ওখানেই নয়, স্টুডেন্ট লাইফ নিয়ে এত প্রশ্ন যে আমাদের আগের বই স্টুডেন্ট হ্যাকস পুরোটা ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই ছিল। বই যতজনকে উত্তর দিয়েছে, সবাইকে নিজে মুখে উত্তর করতে যেই সময় লাগতো, সেই সময় দিয়ে হয়তো আরও দশটা বই লেখা যেত!

আমাদের পয়েন্ট হচ্ছে, যেই কথাগুলো একবার ব্যবস্থা করলেই আমরা অন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারি, সেই কথাগুলো আমরা সিস্টেম করি না কেন? বিভিন্ন ব্যাংকে কিংবা অফিসে একই প্রশ্ন হাজারবার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উত্তর করছেন। প্রশ্ন-উত্তর (FAQ– Frequently Asked Question) করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখলেই কিন্তু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনেক কর্মঘণ্টা বেঁচে যায়।

কিন্তু, তবুও কেন জানি আমরা বারবার উত্তর করেই যাই। হয়তোবা আমরা মানুষকে সাহায্য করতে অনেক আনন্দ পাই। তাই, মানুষ প্রশ্ন করলেই হয়তোবা বেশি খুশি হই!

*

সেলেবদের সাথে কমিউনিকেশন

মনে করেন, বিখ্যাত কোনো গায়কের সাথে আপনার দেখা হয়ে গেল এবং স্বভাবতই অনেকেই বলবে, আপনার গান আমার অনেক ভালো লাগে! আর নাহলে, একটা সেলফি তুলি?

এখন একটু সেলেব্রিটি মানুষটার কথা চিন্তা করেন। তিনি মাসে ৩০ টা দিন মানুষের কাছ থেকে তার গানের প্রশংসা শুনেন এবং সেলফির আবদার পান।

আপনি যদি একই কথা বলেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে তার জন্য কথাটা কতটা বোরিং!

তাহলে কী করবেন? সেলফি নিতে চাইলে তাকিয়ে না থেকে সেলফি তোলার আবদার করতেই পারেন। কিন্তু যদি প্রশংসা করেন, তাহলে এমন কিছু নিয়ে প্রশংসা করেন যেটা নিয়ে হয়তোবা তিনি অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু হয়তোবা কেউ প্রশংসা করছে না। হয়তোবা তার বাচ্চার ভালো ফলাফল নিয়ে কিংবা তার কোনো চ্যারিটির কাজের কথা তাকে বলুন। তিনিও খুশি হবেন যে তার এসব কাজ মানুষ জানছে এবং সেই কথা আরও ছড়িয়ে দিতে হয়তোবা আপনার সাথে কিছুক্ষণ ওই বিষয়ে আলাপও করে বসবেন!

*

ফাঁপা ধন্যবাদ

আমাদের মধ্যে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রবণতা তেমন নেই। কিন্তু, আমরা এই বইতে খুবই চেষ্টা করছি এই ধনবাদ দেয়ার ব্যাপারটাকে প্রমোট করার জন্য। আপনার যদি ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তো খুবই ভালো। আপনি যদি আরেকটু ভালোভাবে ধন্যবাদ দিতে চান তাহলে, কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন, সেটা মেনশন করে ধন্যবাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন।

অপশন ১ : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

অপশন ২ : দ্রুত কল করে ব্লাড ডোনার খুঁজে দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

দ্বিতীয় অপশনের মতো একজন কাজের কথা মেনশন করে ধন্যবাদ দিলে মানুষ অনেক বেশি খুশি হয়। আপনার পণ্য ব্যবহার করে একজন বলল, পণ্যটির জন্য ধনবাদ। এবং অন্যজন বলল, পণ্যটি ব্যবহার করে আমার ফিটনেস লেভেল অনেক ভালো হয়েছে। পণ্যটির কথা আমাকে জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!

তাছাড়া, অনেক সময় মানুষ যদি না বুঝে যে সে ধন্যবাদ কেন পাচ্ছে, তাহলে সে হয়তোবা একটু কনফিউশনে থাকবে যে, হলোটা কী!

আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করেন ভিডিওর নিচে কমেন্ট করলাম, ভালো লেগেছে। যিনি ভিডিও বানিয়েছেন তার অবশ্যই কমেন্টটা পড়ে ভালো লাগবে। কিন্তু, তিনি সেখান থেকে কী বুঝছেন?

এর চেয়ে যদি আমি কমেন্ট করতাম, আপনার কন্টেন্টের রিসার্চের পেছনে শ্রম দেয়ার ব্যাপারটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। এক্ষেত্রে ভিডিও নির্মাতা প্রশংসা শুনে খুশিও হচ্ছেন আবার এটাও বুঝে যাচ্ছেন যে তার কোন বিষয়ে আরও বেশি উন্নতি করা দরকার।

*

ভাবিকে সালাম

মানুষের স্বভাব হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেয়া। কোনো সিনিয়র মানুষ আসলে তাকে মাখন দিতে দিতে সবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু, তারই কাছে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়তোবা তার পাশেই আছেন। হয়তোবা স্যারের আশপাশে সবাই ভিড় করেছে। আপনি গিয়ে ম্যাডামকে আপ্যায়ন করেন। সবাই যেখানে স্যারের কাছে ভিড় করেছে, সেখানে ম্যাডাম মনে রাখবেন যে আতিথেয়তা কে বেশি করেছে। হ্যাঁ, ভদ্রতা হিসেবে এটা অনেক ভালো। কিন্তু, নিজের কথা চিন্তা করলে দেখবেন, ম্যাডাম হয়তোবা আপনার কথা গিয়েই স্যারকে বলছেন যে আপনি কতটা অমায়িক ছিলেন! তখন আবার আপনি স্যারের সুনজরে পড়ে গেলেন। কিন্তু, এসব অফিস পলিটিক্স বাদ দেই!

অনেক সময় গ্রুপে একজন অনেক বেশি মেধাবী মানুষ থাকেন। তার সাথে কথা বলতে গিয়ে অন্যদের আমরা ইগনোর করে বসি। কিন্তু হয়তোবা ওই মানুষগুলোর মধ্যেও বেশ কাজের এবং মেধাবী কেউ আছেন। তাই, যেকোনো জায়গায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির পিছে না ছুটে মাঝে মাঝে কিছু নীরব মেধাবীদের সাথেও আড্ডা দিয়েন।

*

মানুষ কখন আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে?

একদম সহজ করে বললে চারটি অবস্থায় মানুষ আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে :

১. উচ্চপদ : বেশিরভাগ মানুষ পদবিটাকে সালাম করে, মানুষটাকে নয়।

২. ইমোশন : আপনি ব্র্যান্ড ম্যানেজার হলে কোনটি বিজ্ঞাপনে দিতেন?

অপশন ১ : বাচ্চাদের জন্য দারুণ জুতো পাওয়া যাচ্ছে।

অপশন ২ : আপনার আদরের লিটল চ্যাম্পকে দিন খেলাধুলার সেরা উপহার– অমুক ব্র্যান্ডের কেডস!

প্রথমটি বিজ্ঞাপন, দ্বিতীয়টা আবেগে টোকা দেওয়া। আপনি নিজেই খেয়াল করে দেখেন। আপনার প্রিয় ৫টি বিজ্ঞাপনের কথা চিন্তা করলে দেখবেন বেশিরভাগের অফারের চেয়ে ইমোশনাল গল্পটাই বেশি আপনার মনে আছে।

দক্ষতা : নেতা না হলেও, মানুষ যদি জানে যে আপনি আপনার ফিল্ডের এক্সপার্ট; তাহলে আপনাকে সম্মানের জায়গা থেকে হলেও মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনবে।

আড্ডা; অজানা মানুষের সাথেও কিন্তু আড্ডা দেয়া যায়। কিন্তু, খুব কম। মানুষই অচেনা মানুষের সাথে আড্ডা জমাতে পারে। আড্ডা দেয়ার মানে হল, একদম মন খুলে জাজমেন্ট ছাড়া কথা বলতে পারা। যারা এভাবে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের নিরাপদ অনুভব করাতে পারে, তাদের কথা মানুষ খুশি মনে শুনে।

এরপর থেকে কোনো জায়গায় কথা বলতে গেলে দেখবেন যে নিচের চারটির কোনটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

*

সংখ্যা দিয়ে মিথ্যা বলার কমিউনিকেশন

ভালো মানুষদের শুরুর দিকে একটা দুর্বলতা কী জানেন? তারা নিজেরা মিথ্যা বলতে পারে না, খারাপ কাজ করতে পারে না এবং এজন্য তারা ভাবে যে কেউই মিথ্যা বলবে না এবং খারাপ কাজ করবে না। আস্তে আস্তে ঠেকে ঠেকে তারা বাস্তবতা শিখে। তারা বুঝতে পারে যে তারা যেই সত্যের মানদণ্ডে নিজেদেরকে পরিচালনা করে, সেটা অন্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, আমরা সব সময়ই সত্য বলবো, কিন্তু আমাদের এটাই জানতে হবে যে মিথ্যা কীভাবে বলে যেন কেউ আমাদের সহজে ঠকাতে না পারে। একটা বিষয় হচ্ছে, মিথ্যা বলতে সব সময় মিথ্যা বলতে হয় না। সত্য বলেও মানুষকে নিজের মনমতো গল্প বলা যায়। যেমন :

এই পণ্যে ৫% ফ্যাট আছে।

এটা শুনলে পণ্যের একটা ত্রুটির কথা মনে হয়। ওই একই কথা এভাবেও বলা হয়,

এই পণ্যটি ৯৫% ফ্যাট ফ্রি!

একই কথা কিন্তু! কিন্তু, পরের কথাটিতে পণ্যের ত্রুটিটাকেই একটা হাতবাচক বেনেফিট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাতে আপনার অবচেতন মনে ইতিবাচক একটা ধারণা তৈরি হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *