১৪. চোর

১৪. চোর

হ্যারি চোখ খুলে তাকালো এবং সে বিস্মিত; তার কোনো ধারণাই নেই কী ঘটেছে। শুধু বুঝলো কোথাও সে গাছের পাতা এবং ডালের উপর লম্বা হয়ে পড়ে আছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হ্যারি চোখ পিটপিট করে দেখল অনেক দূরে একটি গাছের উপরের দিকে সূর্যের তীর্যক আলো পড়ে ঝিকমিক করছে। তারপর কিছু একটা হ্যারির মুখের কাছে নড়ল। মনে হলো পোকা-মাকড়। সে হাতে এবং হাটুতে ভর করে উঠতে চেষ্টা করল। ছোট ছোট ভয়ানক পোকা মাকড়গুলো তাড়াতে হবে। কিন্তু খেয়াল করতেই দেখল, ওই কিছু একটা হল বনের পা। চারদিকে তাকিয়ে হ্যারি আবিষ্কার করল যে ওরা দুজন এবং যারমিয়নও একটি বাগানে পড়ে আছে। দৃশ্যত আর কেউ সেখানে নেই।

হ্যারি প্রথম চিন্তা করল এটি হয়তো একটি নিষিদ্ধ বাগান। একটু পরেই ইচ্ছা হল গাছের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে হ্যাগ্রিডের ঘরটিতে চলে যেতে। যদিও সে জানে এটা কতটা বোকামি হবে এবং হোগার্ট এলাকা কতটা বিপদজনক। একটু পরই রন নিচ শব্দে গোঙাতে থাকল। হ্যারি বুকের উপর ভর করে তার দিকে যেতে থাকল। সে বুঝতে পারল যে এটি কোনো নিষিদ্ধ বন নয়। গাছগুলো যথেষ্ট সবুজ। অনেক জায়গা নিয়ে একেকটি গাছ, নিচের মাটি বেশ পরিস্কার।

হ্যারি হারমিয়নের দিকে তাকালো। সে হাঁটু ঠেকিয়ে এবং হাত দিয়ে রেখেছে হ্যারির মাথায়। রনের দিকে চোখ দিতেই হ্যারির ভেতর থেকে অন্য সব চিন্তা দূর হয়ে গেল। রনের বাঁ পাশ রক্তে ভিজে গেছে। মুখটা পড়ে আছে মাটিতে ছড়িয়ে থাকা পাতার উপর। পলিজিউস পোশনের ক্রিয়া ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করেছে। রন এখন অর্ধেক ক্যটারমোল এবং অর্ধেক নিজের চেহারা পেয়েছে। চুলগুলো লাল থেকে আরো লাল হচ্ছে। মুখের রঙ বদলে যেতে শুরু করেছে।

কী হয়েছে ওর?

স্পি-নচিং, হারমিয়ন বলল। সে আঙুল দিয়ে রনের জামার যে জায়গায় রক্ত ঝরছে এবং কালো দেখা যাচ্ছে সে জায়গা খুলতে ব্যস্ত।

হারমিয়ন রনের শার্ট ছিঁড়ে গায়ের থেকে সরাতেই হ্যারি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। তার এর আগে ধারণা ছিল স্পিনচিং হল একটা হাসি তামাশার মত যাদু, কিন্তু এবার রনেরটা–হারমিয়ন যখন রনের হাতের উপরের দিকে জামার হাতা খুলে ফেলল তা দেখে হ্যারির ভেতরটা রীতিমতো শিরশির করতে থাকল। বেশ খানিকটা মাংস উঠে গেছে। মনে হয় যেন চামুচের মত করে চাকু দিয়ে সুন্দর করে কেটে নেয়া হয়েছে।

হ্যারি, তাড়াতাড়ি আমার ব্যাগের ভেতর দেখ একটা বোতল আছে, গায়ে লেখা এসেন্স অব ডিটানি

ব্যাগ-ঠিকাছে-

হ্যারি দৌড়ে হারমিয়ন যে জায়গাটায় ল্যান্ড করেছে সেখানে গেল। ছোট ব্যাগটি সেখান থেকে তুলে নিয়ে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিল। তার হাতের ছোঁয়ায় একটির পর একটি জিনিস ধরা দিতে থাকল। হ্যারি অনুভব করল চামড়ার ব্যাগ, উলের জাম্পার, জুতার হিল

তাড়াতাড়ি!

হ্যারি মাটি থেকে ওর যাদুদণ্ডটি তুলে নিল এবং ব্যাগের ভেতরের দিকে তাক করল

অ্যাকসিও ডিটানি!

একটি ছোট বাদামী রঙের বোতল বড় হতে হতে ব্যাগ থেকে বের হল। সে বোতলটি নিয়ে দৌড়ে হারমিয়ন এবং রনের কাছে গেল। রনের চোখ দুটো আধবোজা হয়ে আছে। চোখের পর্দার নিচে শুধু সাদা অংশ দেখা যাচ্ছে।

সে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, হারমিয়ন বলল। হারমিয়ন নিজেও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে এখন আর মাফালডার মত নয়। যদিও তার চুলের কিছু কিছু অংশ এখনো ধুসর দেখা যাচ্ছে। আমি ঠিকভাবে খুলতে পারছি না। আমার হাত কাঁপছে।

হ্যারি ছোট বোতলের মুখটি প্যাঁচ দিয়ে খুলল, হারমিয়ন সেটা ওর হাত থেকে নিয়ে রনের রক্ত ঝরতে থাকা ক্ষত জায়গায় তিন ফোঁটা পোশন ঢেলে দিল। ক্ষত জায়গা থেকে সবুজ ঘোয়া পাক খেয়ে উপরে উঠল এবং হ্যারি দেখল ক্ষত থেকে রক্ত ঝরা বন্ধ হয়ে গেল। ক্ষতটি এখন মনে হচ্ছে কয়েকদিনের পুরোনো। ক্ষতের উপরে নতুন চামড়ার প্রলেপ পড়তে দেখা গেল।

হ্যারি বলে উঠল, ওহ!।

হারমিয়ন বলল, এটাই আমার কাছে নিরাপদ ব্যবস্থা বলে মনে হয়েছে। আরো কিছু স্পেল আছে যা হয়তো পুরোপুরি ভালো করে দিতে পারতো। কিন্তু আমার সাহস হলো না। যদি আমি কোথাও ভুল করে ফেলি তাহলে হয়তো আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে–এরমধ্যেই রনের অনেক রক্ত ঝরেছে–

হ্যারি মাথা ঝাঁকিয়ে পরিস্কার করে বুঝতে চেষ্টা করল ঘটনাটা কী ঘটেছে। বলল, ওর ক্ষতটা হল কী করে, বা আমরা এখানে কেন? আমি ভেবেছিলাম আমরা গ্রিমোল্ড প্লেসে ফিরে যাচ্ছি?

হারমিয়ন গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিল। চোখ দিয়ে প্রায় পানি বের হয়ে এল। বলল, হ্যারি, আমার মনে হয় না য়ে আর আমরা সেখানে ফিরে যেতে পারবো।

তুমি কী বলছো-

আমরা যখন অদৃশ্য হচ্ছিলাম, ইয়াক্সলি তখন আমাকে ধরে ফেলে। এবং আমি ওর কাছ থেকে ছুটতে পারিনি। সে প্রচণ্ড শক্তিশালী। আমরা যখন গ্রিমোল্ড প্লেসে গিয়ে নামছি তখনো সে আমাকে জাপটে ধরে রেখেছিল। তারপর আমার ধারণা সে অবশ্যই গ্রিগোল্ড প্লেসের দরোজাটি দেখেছে ও ভেবেছে আমরা সেখানেই নামতে যাচ্ছি। তাই সে তার মুঠিটা একটু ঢিলে করেছে–অমনি আমি ঝাড়া দিয়ে ছুটে গেছি। এবং আমরা এখানে চলে এসেছি!

কিন্তু সে কোথায়? বল–সে কি গ্রিমোল্ড প্লেসেই রয়ে গেছে মনে কর? সে তো ওখানে ঢুকতে পারবে না?

হারমিয়নের চোখ চিকচিক করে উঠল। ছলছল চোখে মাথা দোলালো।

 হ্যারি, আমার ধারণা সে পারবে। আমি…আমি তাকে বাধ্য করেছি রিভালশন জিঙ্ক ব্যবহার করতে। কিন্তু আমি তাকে ইতিমধ্যে ফিডেলিউস চার্ম প্রোটেকশনের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছি। ডাম্বলডোরের মৃত্যুর পরে আমরাই হলাম সিক্রেট কিপার। অথচ আর আমিই তাকে সিক্রেটটা দিয়ে দিলাম। তাই না?

সান্ত্বনা দেয়ার কিছু নেই। হ্যারি নিশ্চিত যে হারমিয়নের কথাই ঠিক। এটি এদের উপর একটা চরম বিপর্যয়। যদি ইয়াক্সলি ভেতরে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে সেখানে ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। এমনকি এতক্ষণে অ্যাপারিশনের মাধ্যমে সে হয়তো ডেথ-ইটারদেরও নিয়ে এসেছে। অনেক ঝামেলাপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বাড়িটি ছিল ওদেরও একটি নিরাপদ আশ্রয়। এখানে ক্রিচারও ছিল বেশ সুখী এবং আন্তরিক। বাড়িটি নিজেদের বাড়ির মতই মনে হতো। হ্যারি অনুমান করল ক্রিচার হয়তো এখন খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। সে স্টেক এবং কিডনী পাই খাওয়াতে চেয়েছিল। খাবারের সেই মজার মেনুটি আর হ্যারি রন এবং হারমিয়নের খাওয়া হবে না।

হ্যারি, আই অ্যাম সরি! আই অ্যাম সরি!

এমন বোকার মত কথা বলো না, এটার জন্য তুমি দায়ি নও। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেজন্য আমি দায়ি।

হ্যারি পকেটে হাত ঢুকালো। এবং পকেট থেকে ম্যাড-আইর চোখ তুলে আনল। হারমিয়ন চট করে ঘুরে তাকালো এবং তাকে ভয়ানক বিস্মিত দেখা গেল।

আমব্রিজ তার অফিসের দরোজা লাগিয়ে কাজ করছিল লোকজনের ব্যাপারে গোপনে খোজ নেয়ার সেজন্য আমি এটা ওখানে ফেলে আসতে পারিনি–সে কারণেই ওরা বুঝতে পেরেছে যে কেউ ঢুকে পড়েছে।

হারমিয়ন কিছু বলার আগেই রন শব্দ করল এবং চোখ খুলল তখনো সে ঘোরের ভেতরে আছে এবং তার মুখটা ঘামে চিকচিক করছে।

এখন তোমার কেমন লাগছে? হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল।

অস্বস্তি লাগছে, রন ককিয়ে বলল। হাতের ক্ষত জায়গাটিতে ব্যাথা অনুভব করায় মুখ বিকৃত করল। আমরা কোথায়?

হারমিয়ন বলল, সেই গাছ-গাছালির ভেতর যেখানে আমরা কিডিচ ওয়ার্লড কাপের আয়োজন করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম চারদিক ঘেরা, অন্তত ঢাকা আছে এমন একটি জায়গা এবং এই জায়গাটি

যেমন ভেবেছিলে ঠিক তেমনি প্রথমেই পেয়ে গেছ, হ্যারি তার বাকী কথাটুকু নিজে শেষ করল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল বাহ্যত জায়গাটি শুষ্ক এবং ঝোপঝাড়ুবিহীন। হ্যারি স্মরণ করতে পারল না শেষবার কী ঘটেছিল যখন হার মিয়ন অ্যাপারেট করার কথা চিন্তা করেছিল; কয়েক মিনিটের মধ্যে ডেথ-ইটাররা তাদেরকে দেখল কী করে। সেটা কী রেজিমিলেন্সি ছিল? ভোল্ডেমর্ট বা তার সমর্থকরা কী জানতো বা এখনো জানে যে হারমিয়ন তাদেরকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল।

তোমার কী মনে হয় যে আমাদের এখন যাওয়া উচিত? রন জানতে চাইল হ্যারির কাছে। হ্যারি রনের দিকে চেয়ে বুঝতে পারল সে নিজেও এরকমটি ভাবছে।

আমি জানি না।

রনকে এখনো বিমর্ষ এবং নিস্তেজ দেখা যাচ্ছে। সে উঠে বসতে কোনো চেষ্টা করল না, মনে হল সে উঠে বসতে পারছে না। তাকে ধরে নাড়াতেও এখন ভয় করছে।

আপাতত আমরা এখানেই থাকি, হ্যারি বলল।

হারমিয়ন যেন স্বস্তি পেল। সে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

রন বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছ?

যদি আমরা এখানে থাকি, তাহলে এই জায়গাটিতে কিছু নিরাপত্তা এনচানমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। হারমিয়ন উত্তর দিল। সে তার যাদুদণ্ডটি উঁচু করল। সে হ্যারি এবং রনকে ঘিরে বেশ বড় একটি জায়গা নিয়ে ঘুরল। হাঁটতে হাঁটতে যাদুর কিছু শব্দ উচ্চারণ করল। হ্যারি দেখল ওদের ঘিরে চারদিকের বাতাসে একটি অস্বাভাবিক আবহ তৈরী হল। মনে হল যেন হারমিয়ন তাদের ঘিরে গরম একটি অংশ তৈরি করেছে।

স্যালভিও হেক্সিয়া–প্রোটেগো টোটালাম–রিপেলো ম্যাগলেটাম–মাফ লিয়াটো–তোমরা এখন তাবুটা বের করতে পারো হ্যারি…

তাবু?

ব্যাগের ভেতর!

ব্যাগে–অবশ্যই, হ্যারি বলল।

এবার আর সে ব্যাগে হাতাহাতি করতে গেল না। অন্য একটি সামনিং চার্ম ব্যবহার করল। একটি বড় মোটা ক্যানভাস কাপড়ের স্তৃপ, দড়ি, খুটি দেখা দিতে থাকল। হ্যারি এই তাবু চিনে ফেলল। চিনে ফেলার একটা কারণ হল এর সঙ্গে বিড়ালের গন্ধ আছে। এই তাবুটিতেই কিডিচ ওয়ার্লড কাপ খেলার সময় রাতে ওরা ঘুমিয়েছিল।

তাবুর ভাঁজ খুলতে খুলতে সে বলল, আমি ভেবেছিলাম এই তাবুটি পারকিন্স নামের লোকটির ছিল।

আসলে সে তাবুটি ফেরত নিতে চায়নি। তার পিঠের ব্যাথাটি তীব্র, হার মিয়ন বলল। সে তার যাদুদণ্ড দিয়ে আটকোনা করে এলাকা নির্দিষ্ট করছে। তাই রনের ড্যাড বলল আমি এটা ধার নিতে পারি। এরেকটো! হ্যারির সঙ্গে কথা বলতে বলতে হারমিয়ন তাবুর আকার ঠিক করার জন্য যাদুদণ্ড তুলে বলল। এলোমেলো হয়ে থাকা মোটা ক্যানভাস তরল পদার্থের মত একেবেঁকে উপরে উঠে গিয়ে স্থির হল। হ্যারির সামনে আচমকা তাবুর খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে গেল।

কেভ ইনিমিকাম! হারমিয়ন শূন্যের দিকে যাদুদণ্ড তুলে ফিনিশ করল। এর চেয়ে বেশি আর কিছু করতে পারি না। অন্তত পক্ষে আমরা জানতে পারব যে ওরা আসছে। তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারছি না যে এই ব্যবস্থা নিরাপদ

এই নামটি মুখে নিও না! রন নামটি উচ্চারণের ঠিক মাঝখানে তাকে থামিয়ে দিল।

হারমিয়ন এবং হ্যারি দুজন দুজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল।

আমি দুঃখিত, রন গুনগুন করে বলল। একটুখানি মাথা তুলে হ্যারি এবং হারমিয়নের দিকে তাকালো। নামটা শুনতে কেমন অমঙ্গলের মত শোনায়। আমরা তাকে ইউ-নো-হু বলতে পারি না, প্লিজ?

হ্যারি বলল, ডাম্বলডোর বলতেন নাম নিতে ভয় পেলে-

রন ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, তোমরা যদি লক্ষ করে থাকো শেষের দিকে ইউ-নো-হু কে নাম ধরে কথা বলে ডাম্বলডোরের খুব একটা ভাল হয়নি। ইউ-নো-হুকে একটু একটু রেসপেক্ট দেখাও।

রেসপেক্ট? হ্যারি রিপিট করল। কিন্তু হারমিয়ন তার দিকে সতর্ক করার একটি চাহনি দিল। হ্যারির উচিত হবে না রনের সঙ্গে এখন তর্কে জড়িয়ে পড়া। কারণ রন শারীরিকভাবে এখন যথেষ্ট দুর্বল।

হ্যারি এবং হারমিয়ন কিছুটা তুলে ধরে কিছুটা টেনে রনকে তাবুর ভেতর নিয়ে গেল। তাবুর ভেতরে ঠিক আগের মতই আছে, ঠিক হ্যারি যেমন দেখেছিল। মনে হয় যেন ছোট একটি ফ্লাট। বাথরুম আছে, ভেতরে ছোট একটি কিচেন আছে। হ্যারি এক পাশে একটি হাতলঅলা চেয়ার সরালো এবং সতর্কতার সঙ্গে রনকে নিচু একটি বেডের উপর বসালো। রনকে যখন ম্যাট্রেসের উপর শুইয়ে দিল তখন রন চোখ বুজল এবং কিছু সময়ের জন্য নিরব হয়ে রইল।

আমি চা বানিয়ে আনছি, হারমিয়ন বলল। সে ব্যাগের গভীর থেকে একটি কেতলি আর কয়েকটি মগ টেনে বের করে নিয়ে কিচেনের দিকে গেল।

হ্যারি হট ড্রিঙ্কস এবং ফায়ার হুইস্কি দেখতে পেল, ম্যাড-আই মারা যাবার রাতে এগুলো ছিল। তার বুকের ভেতর একটু পুড়ে উঠল যেন। এক বা দুই মিনিট পর রন কথা বলে উঠল।

ক্যাটারমোলদের কী হয়েছে বলে তোমার মনে হয়?

ভাগ্য ভাল হলে ওরা সরে পড়তে পেরেছে, হারমিয়ন বলল। সে গরম মগটিকে চেপে ধরে আছে একটু হাতের আরামের জন্য। মিস্টার ক্যাটারমোলের যখন সব জানা আছে, তিনি মিসেস ক্যাটারমোলকে অ্যাপারেশনের মাধ্যমে সরিয়ে নেবেন এবং বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে অন্য কোথাও সরে যাবেন। সেটা করতেই তো হ্যারি মিসেস ক্যাটারমোলকে বলেছেন।

আহা, আমি চাই ওরা যাতে পালিয়ে যেতে পারে, রন বলল। সে পেছনে বালিশে হেলান দিল। চা পান করার ফলে মনে হয় একটু সতেজ হয়ে উঠেছে। নিজের রঙও অনেকটা ফিরে পেয়েছে। আমি রেগ ক্যাটারমোলের রুপ ধরে থাকার সময় সবাই আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছে তাতে আমার মনে হয় না

যে সে খুব বুদ্ধিমান কেউ। ঈশ্বর, আমি চাই ওরা যেন সরে যেতে পারে–ওরা যদি আমাদের কারণে আজকাবান থেকে

হ্যারি মুখ তুলে হারমিয়নের দিকে তাকালো এবং জিজ্ঞেস করতে চাইলো মিসেস ক্যাটারমোলের যাদুদণ্ড না থাকায় সে তার স্বামীর সঙ্গে অ্যাপারিশন করতে পারবে কি না–কিন্তু হ্যারি আর জিজ্ঞেস করতে পারল না। থমকে গেল। ক্যাটারমোলদের ভাগ্য নিয়ে রন যে উদ্বিগ্ন সেটা লক্ষ করছিল হারমিয়ন। তার চোখ মুখে এমন একটা ভাব দেখতে পেল যে হ্যারির মনে হল হারমিয়ন তাকে চুমো দেয়ায় হ্যারি বিস্মিত হয়েছে।

তাহলে তুমি ওটা পেয়েছ? হ্যারি হারমিয়নকে জিজ্ঞেস করলো। অনেকটা হারমিয়নকে মনে করিয়ে দিতে যে, সে ওখানে উপস্থিত আছে।

পেয়েছি মানে! কী পেয়েছি, হারমিয়ন জিজ্ঞেস করলো।

আমরা যে জিনিসের জন্য এত কিছু করছি, লকেটটি! লকেটটি কোথায়?

তুমি সেটা পেয়েছ? রন এতই উত্তেজিত হয়ে পড়ল যে সে বালিশ থেকে মাথা তুলে ফেলল। আমাকে তো তোমরা কেউ কিছু বলনি! কেমন কথা! তোমরা আমাকে বলতে পারতে!

হারমিয়ন বলল, বলব কখন, আমরা ডেথ-ইটারদের হাত থেকে জীবন রক্ষার জন্য ব্যস্ত ছিলাম, তাই না? এই যে সেটা।

সে তার গাউনের পকেট থেকে লকেটটি বের করে রনের হাতে দিল।

লকেটটি বড়জোর একটি মুরগির ডিমের সমান। সবুজ ঘোট ঘোট পাথরের মাঝে একটি বড় এস অক্ষর লেখা। তাবুর ক্যানভাসের ছাদে আলোর আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

রন বলল, ক্রিচারের কাছে যখন এটি ছিল তখন কেউ যে এটি ধ্বংস করেনি, মানে আমি বলতে চাচ্ছি, এটিতে যে এখনো হরক্রুক্স আছে সে ব্যাপারে কি আমরা নিশ্চিত?

হারমিয়ন তার হাত থেকে লকেটটি নিয়ে আরো কাছে থেকে দেখতে দেখতে বলল, আমার, তাই মনে হয়। যদি কেউ এটা ম্যাজিকের মাধ্যমে ধ্বংস করে থাকতো তাহলে তার চিহ্ন থাকতো।

হারমিয়ন লকেটটি হ্যারির হাতে দিল। হ্যারি আঙুল দিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল। জিনিসটিকে একেবারে চকচকে দেখা যাচ্ছে। কোনো রকম নষ্ট হয়নি। তার মনে পড়ল ডায়েরির কথা, এবং ডাম্বলডোর যখন হরক্রুক্স ভেঙেছিলেন তখন কীভাবে হরক্রুক্সের রিং ক্র্যাক শব্দ করে খুলেছিল।

হ্যারি বলল, আমার মনে হয় ক্রিচারের কথাই ঠিক। আমরা এটি ধ্বংসের জন্য কী করে খোলা যায় সেটা চেষ্টা করে দেখতে পারি।

হাতের জিনিসটির ব্যাপারে হ্যারি হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠল। লকেটের সোনালী রঙের ছোট খাপটির ভেতরে কী আছে জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। তাদের বারবার চেষ্টা সত্বেও খুলতে না পেরে হ্যারির মনে হল ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে

সে আবার আঙুল দিয়ে খুলতে চেষ্টা করল। হ্যারি তারপর রেগুলাসের বেডরুমের তালা খুলতে হারমিয়ন যে চার্ম ব্যবহার করেছিল সেটা দিয়ে চেষ্টা করল। কোনোটাই কাজ হল না। সে লকেটটি হারমিয়ন এবং রনের কাছে ফিরিয়ে দিল। ওরা দুজন খুব করে চেষ্টা করল। কিন্তু কোনো কিছুতেই এটি খোলা গেল না।

রন হাতের তালু দিয়ে আটকে ধরে রেখে হিসহিস করে বলল, তুমি কী কিছু একটা অনুভব করতে পেরেছ?

তার মানে কী?

রন হরক্রুক্সটি হ্যারির হাতে দিল। একটু পরেই হ্যারি বুঝতে পারল রন কী বলতে চাইছে। সে যা অনুভব করছে তাকি নিজের শরীরে শিরা উপশিরা দিয়ে প্রবাহিত রক্ত, নাকি লকেটের ভেতরই কিছু একটা ধাতব হৃৎপিণ্ডের মত আঘাত করছে?

হারমিয়ন বলল, এখন আমরা এটা নিয়ে কী করবো?

হ্যারি উত্তরে বলল, এটা কীভাবে ভাঙা যায় সে পথ বের করা না পর্যন্ত নিরাপদে রেখে দিতে হবে। হ্যারি না চাইলেও সে চেইনটি গলায় ঝুলিয়ে রেখে লকেটটি আলখাল্লার ভেতরে পাচার করে দিল। লকেটটি হ্যাগ্রিডের দেয়া ছোট ব্যাগটির পাশে তার বুকের উপর রইল।

হ্যারি উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙল। হারময়িনের উদ্দেশে বলল, আমার মনে হয় এটা রেখে বরং আমরা তাবুর বাইরে একটু নজর রাখতে পারি। এবং আমাদের কিছু খাবারের ব্যবস্থাও করতে হবে। রন বিছানায় উঠে বসতে চেষ্টা করল। হ্যারির মুখে না না আশঙ্কার ছায়া দেখা গেল। সে রনের উদ্দেশে বলল, তুমি এখানেই থাকো।

হারমিয়ন হ্যারির বার্থ ডে তে যে ক্লিকোস্কোপ দিয়েছিল সেটি যত্নের সঙ্গে টেবিলের উপর রাখল। হ্যারি এবং হারময়িন সারাটা দিন সেটার দিকে নজর রেখে কাটালো। কিন্তু ক্লিকোস্কোপ সারাদিন নিরব হয়েই রইল। সারাদিন পয়েন্টের কাটাটি স্থির হয়ে রইল। হয়তো হারমিয়নের মাগল রিপেলিং চার্ম দিয়ে রাখার কারণে কাটাটি মাগলদের চলাচল দেখতে পারছেনা অথবা এ পথ দিয়ে হয়তো দুএকটি পাখি এবং কাঠবিড়ালী চলাচল করা ছাড়া অন্য কেউ চলা-ফেরা করেনি। সন্ধ্য বেলাও কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। হারমিয়নের সঙ্গে পালাবদল করে হ্যারি রাত দশটার সময় নিজের যাদুদণ্ডটির আলো জ্বেলে বাইরের নিস্তব্ধ জায়গাটা পরিক্ষা করল। প্রটেক্ট করা এলাকার বেশ উপরে বিক্ষিপ্তভাবে বাদুর ওড়াউড়ি করতে দেখা গেল।

হ্যারির ক্ষুধা অনুভব হল। এরপর হ্যারি দেখল একটি ছোট আলো এগিয়ে আসছে। হারমিয়ন তার যাদুর ব্যাগটিতে কোনো খাবার আনেনি। ওই রাতে সে ভেবেছিল আমরা তো গ্রিমোল্ড প্লেসে ফিরেই যাচ্ছি। ফলে বন্য মাশরুম ছাড়া আজ আর ওদের কিছুই খাওয়া হয়নি। হারমিয়ন ওগুলো কাছের গাছ থেকে তুলে এনে সেদ্ধ করেছে। এক দুবার মুখে দিয়ে রন সেগুলো ওয়াক করে ফেলে দিয়েছে। বমির ভাব হওয়ায় মুখ কুচকে ফেলেছে। হ্যারি সেগুলো ফেলে দেয়নি যাতে হারমিয়ন কিছু মনে না করে।

চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে একটা ঘরঘর শব্দ হল। গাছের ডাল ভেঙে গেলে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দ হল। হ্যারি মনে হল কোনো মানুষ না, কোনো জীব জানোয়ার হবে। তারপরও সে যাদুদণ্ডটি শক্ত করে ধরে প্রস্তুত থাকল। ভেতরটা অস্বস্তি লাগছে।

হ্যারি ভাবল ওরা হরক্রুক্সটা ভাঙতে পারলে খুবই আনন্দের বিষয় হতো। কিন্তু যে কারণেই হোক এখনো তা হয়নি। হ্যারির যাদুদণ্ড থেকে আলো গিয়ে বাইরের একটি অংশে পড়ছে। হ্যারি অন্ধকারে বসে অনুভব করল এবং উদ্বিগ্ন হল যে এর পর কী হবে। সে এর পর কী হবে সে বিষয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর চিন্তা করেছে। কিন্তু এখন সে হঠাৎ করে একটি জায়গায় থমকে গেছে। সামনে যেন আর পথ নেই।

এখন কোথায় অন্য সকল হরক্রুক্স। কিন্তু হ্যারির ন্যূনতম ধারণা নেই সেগুলো কোথায় থাকতে পারে। এমনকি তার জানা নেই কী ধরনের হরক্রুক্স সেগুলো। অন্যদিকে সে প্রায় ভুলে বসে আছে যে, তারা ইতিমধ্যে যে হরক্রুক্সটি পেয়েছে তা কীভাবে ধ্বংস করবে। হরক্রুক্সটি এখনো তার বুকের সঙ্গে ঝুলে আছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, এই হরক্রুক্সটি তার গায়ের থেকে উত্তাপ গ্রহণ করছে না। বরং এতটাই ঠাণ্ডা হয়ে আছে যে মনে হচ্ছে সদ্য বরফ থেকে তোলা হয়েছে। হ্যারির মাঝে মাঝে মনে হয়, অথবা কল্পনাই হয়তো করে যে বুকের কাছে সে একটি ছোট ধুকধুক শব্দ পায়।

অন্ধকারে বসে থেকে হ্যারির ভেতরে নানা ধরণের অশুভ চিন্তা কিলবিল করে ঢুকছে। হ্যারি চেষ্টা করল বাধা দিতে। এসব চিন্তা সরিয়ে দিতে। তারপরও একের পর এক অশুভ চিন্তা তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকল। একজন বেঁচে থাকলে আর একজন বেঁচে থাকতে পারে না। হারমিয়ন ও রন ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারে। কিন্তু সে তা পারে না।

.

একসময় তার মনে হল বুকের সঙ্গে লেগে থাকা হরক্রুক্সটি ঘড়ির কাঁটার মত তার সময়কে টিক টিক করে পার করে দিচ্ছে। সে নিজেকে নিজে বলল, স্টুপিড আইডিয়া! এভাবে চিন্তা করা যাবে না

তার স্কারটিতে আবার জ্বালা করতে শুরু করেছে। হ্যারির মনে হল যে, সে সঠিক চিন্তা না করতে পারে এবং ভুল পথে সরিয়ে দেয়ার জন্যই এই জ্বালাতনটি সৃষ্টি করছে। সে হতভাগা ক্রিচারের কথা চিন্তা করল। ক্রিচার আশা করছে হ্যারিদেরকে, কিন্তু তাকে গ্রহণ করতে হয়েছে হয়তো ইয়াক্সলিকে। ক্রিচার কি গোপন রাখবে নাকি যা জানে সব ইয়াক্সলিকে বলে দেবে? হ্যারি বিশ্বাস করতে চায় যে গত কয়েক মাসে হ্যারি সম্পর্কে ক্রিচারের ধারণা পাল্টে গেছে। তার এখন হ্যারির প্রতি বিস্বস্ত থাকার কথা। কিন্তু কে জানে কি ঘটবে? ডেথ-ইটাররা যদি ক্রিচারের উপর নির্যাতন চালায়? অসুস্থ সব দৃশ্য হ্যারির মাথার ভেতর কিলবিল করছে। কিন্তু সে ওগুলো ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করল। কারণ সে তো এখন চাইলেও ক্রিচারের জন্য কিছুই করতে পারবে না। হারমিয়নের সঙ্গে একত্রে হ্যারি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ক্রিচারকে নিয়ে আসার জন্য কোনো সামন চার্ম ব্যবহার করবে না। কারণ সেই সঙ্গে যদি মিনিস্ট্রির কেউ চলে আসে? ভুতের অ্যাপারিশন যে একক হবে সে কথা ওরা ভাবতে পারে না। কারণ একই অ্যাপারিশনের যাত্রায় হারমিয়নের জামার হাত ধরে ইয়াক্সলি গ্রিমোল্ড প্লেসে চলে এসেছে।

হ্যারির স্কারটি জ্বালাপোড়া করতে শুরু করেছে। সে ভাবল তারা অনেক কিছুই জানে না। লুপিনের কথাই ঠিক। তারা এখনো অনেক যাদুর মুখোমুখি হয়নি এবং অনেক যাদুর কথা কল্পনা করেনি। ডাম্বলডোর কেন আরো অনেক চার্যের কথা ব্যাখ্যা করেননি? তিনি কি ভেবেছিলেন যে সামনে আরো অনেক সময় আছে? ভেবেছিলেন আরো অনেক বছর, হয়তো তার বন্ধু নিকোলাস ফ্লামেলের মত শতাধিক বছর বেঁচে থাকবেন? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তিনি ভুল করেছেন……স্নেইপকে সেখানে দেখা গিয়েছিল…….স্নেইপ, ঘুমন্ত সাপ। সেই টাওয়ারের উপর থেকে আঘাতটি করেছিল…

এবং ডাম্বলডোর পড়তে থাকলেন, পড়তে…
গ্রেগোরোভিচ, আমাকে এটা দাও।

হ্যারির কণ্ঠের আওয়াজ উঁচু, পরিস্কার এবং শীতল। সে দেখতে পাচ্ছে তার যাদুদণ্ডটি ধরা একজন লম্বা লম্বা আঙ্গুলের সাদা লোকের হাতে। যে লোকটির দিকে সে যাদুদণ্ডটি ধরে রেখেছে সে কোনো দড়ি বা কিছুর সাহায্য ছাড়াই শূন্যে ঝুলছে। দুলছে অদৃশ্য এবং ভৌতিকভাবে। তার হাত-পা প্রায় হ্যারিকে ছুঁয়ে ফেলেছে। হ্যারির সমান্তরালে তার ভয়াবহ মুখটি। মাথার রক্ত বেয়ে লাল হয়ে আছে। মাথায় ঘন সাদা চুল। মুখে ঘন দাড়ি ফাদার ক্রিস্টমাস-এর আদল।

আমার কাছে নেই। আমার কাছে এখন আর নেই! অনেক বছর আগে এটা আমার কাছ থেকে চুরি হয়ে গেছে!

লর্ড ভোল্ডেমর্টের কাছে মিথ্যা কথা বোলো না গ্রেগোরোভিচ! তিনি জানেন…তিনি সব সময় জানেন।

ঝুলন্ত মানুষটির শিষ্যরা ছড়িয়ে পড়ছে। তারাও দুলছে। তাদের ছায়াগুলো আরো বড় হতে হতে হ্যারিকে পুরোপুরি তাদের ভেতরে নিয়ে নিল…

এবার হ্যারি একটি অন্ধকার করিডোরে গ্রেগোরোভিচকে দেখল। সে হাতে লণ্ঠন উঁচু করে দৃঢ় পায়ে হাঁটছে। করিডোরের মাথার একটি রুমে গ্রেগোরোভিচ ঢুকে পড়ল। তার হাতের লণ্ঠনটার আলো ছড়িয়ে পড়ল এবং ঘরটিকে মনে হল একটি ওয়ার্কশপ। আলোর প্রতিফলনে কাঠের অংশ সোনালী আলোর মাঝে চকচক করছে। জানালার কাছে একটি পাখির মত সোনালী চুলের একটি অল্প বয়সের ছেলের মুখ দেখা গেল। হ্যারি তার চোখে মুখে আনন্দের ভাব দেখতে পেল। তারপর ছেলেটি যাদুদণ্ড থেকে একটি স্পেল ছুঁড়ে দিল এবং হিহি করে হাসি দিয়ে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নেমে গেল।

হ্যারি দ্রুত গাঢ় অন্ধকারের মত ডেথ-ইটারদের কাছ থেকে সরে এল। গ্রেগোরোভিচের মুখটি ভয়ঙ্কর দেখা যাচ্ছে।

 চোরটি কে ছিল গ্রেগোরোভিচ? উঁচু শান্ত গলার স্বরটি বলল।

আমি জানি না, আমি কখনো জানতে পারিনি, একজন অল্প বয়সের ছেলে না প্লিজ-প্লিজ না! প্লিজ!

চিৎকারের শব্দ শোনা যেতে থাকল এবং তার পরপরই সবুজ আলোর ঝলক দেখা গেল

হ্যারি!

হ্যারি চোখ খুলে তাকালো। হাপাচ্ছে। কপালের জায়গাটি টনটন করছে। সে তাবুর পাশে নিস্তেজ হয়ে হেলান দিল। ক্যানভাসের সঙ্গে পিছলে পাশ ফিরে মাটিতে পড়ে গেল। হ্যারি চোখ তুলে হারমিয়নের দিকে তাকাল। সে হারমিয়নের কোঁকড়ানো চুলের পাশ দিয়ে আকাশে যে জায়গাটুকু আলোকিত হয়ে আছে তার ভেতর গাছের শাখা দেখতে পেল।

স্বপ্ন, হ্যারি বলল। তাড়াতাড়ি উঠে বসে হারমিয়নের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাব করতে চেষ্টা করল। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সরি।

আমি জানি স্বপ্ন না, তোমার স্কার! আমি তোমার মুখ দেখেই বলতে পারি। তুমি ভল্ডে

তার নাম মুখে নিও না! তাবুর ভেতর থেকে রন বলল।

ঠিকাছে, উত্তর দিল হারমিয়ন। ইউ-নো-হুর মনের ভেতর প্রবেশ করেছিলে।

হ্যারি বলল, আমি সেটা হোক তা চাইনি। এটা ছিল স্বপ্নের মত! তুমি কী স্বপ্নে দেখছ সেটাকে ঠেকাতে পারো, হারমিয়ন? তুমি যদি শুধু অকলুপেনসিটা ব্যবহার করা শিখতে-

হ্যারি কোনো তীক্ততায় যেতে চায় না। সে শুধু আলোচনা করতে চায় যা দেখেছে সেটা নিয়ে।

সে গ্রেগোরোভিচকে খুঁজে পেয়েছে হারমিয়ন। আমার মনে হয় সে তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যা করার আগে সে গ্রেগোরোভিচের মনের ভেতর ঢুকেছে এবং যেটা আমি দেখেছি-

হারমিয়ন বলল, তুমি খুব পরিশ্রান্ত, তাই ঘুমিয়ে যেতে পার, আমি বরং পাহারা দেয়ার কাজটি করি।

 না, আমি পাহারা দেয়ার কাজটি শেষ করি।

না, তুমি সত্যিই খুব দুর্বল হয়ে পড়েছ। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়।

হারমিয়ন তাবুর মুখে বসে পড়ল। তাকে কঠিন দেখা গেল। রাগান্বিত কিন্তু ঝামেলা এড়ানোর জন্য হ্যারি ঘরে ঢুকে পড়ল। রন নিচের বেড থেকে ফ্যাকাশে মুখটি বের করে রেখেছে। হ্যারি ঠিক তার উপরের বেডটিতে উঠে গেল। শুয়ে পড়ে তাবুর উপরের কালো সিলিংটির দিকে তাকিয়ে থাকল। কয়েক মুহূর্ত পর রন খুব আস্তে কথা বলে উঠল যাতে দরোজায় বসা হারমিয়ন শুনতে না পায়।

ইউ-নো-হু কী করছিল?

হ্যারি চোখ বুজে সব স্মরণ করতে চেষ্টা করল এবং অন্ধকারের ভেতর ফিস ফিস করে বলল।

সে গ্রেগোরোভিচকে খুঁজে পেয়েছে। সে তাকে আটক করেছে এবং নির্যাতন চালিয়েছে।

গ্রেগোরোভিচকে আটকে রাখলে সে তার জন্য নতুন যাদুদণ্ড বানাবে কীভাবে?

আমি জানি না…সত্যিই এটা বিস্ময়কর..তাই না?

হ্যারি চোখ বুজে যা দেখেছে এবং শুনেছে তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকল। যা সে স্মরণ করতে পারল সবকিছুই যেন ঘোলা মনে হল…ভোল্ডেমর্ট হ্যারির যাদুদণ্ডটি নিয়ে কোনো কথা বলেনি, জোড়া যাদুদণ্ড নিয়ে বা গ্রেগোরোভিচের নতুন যাদুদণ্ড বানানো নিয়ে কোনো কথা বলেনি যে যাদুদণ্ডটি হ্যারিরটাকে পরাস্থ করতে পারে….

হ্যারি চোখ শক্ত করে বুজে থেকেই বলল, সে গ্রেগোরোভিচের কাছ থেকে কিছু একটা চাচ্ছিল। সে তাকে জিনিসটি তার হাতে দিতে বলছিল। কিন্তু গ্রেগোরোভিচ বারবার বলছিল জিনিসটি তার কাছ থেকে চুরি হয়ে গেছে…এবং তারপর…তারপর..।

হ্যারির মনে পড়ল সে, প্রকারান্তরে ভোল্ডেমর্ট কীভাবে গ্রেগোরোভিচের চোখের মধ্যদিয়ে তার ভেতরটা দেখছিল, গ্রেগোরোভিচের স্মৃতিগুলো…।

সে গ্রেগোরোভিচের মনের ভেতর দেখছিল, আমিও সেই সঙ্গে দেখলাম অল্প বয়সী একটি ছেলে জানালার উপর বসে আছে এবং সে গ্রেগোরোভিচের দিকে কার্স ছুঁড়ে দিল এবং জানালা থেকে লাফ দিয়ে চোখের আড়ালে চলে গেল। সেই চুরিটা করেছে, সে ওই জিনিসটাই নিয়েছে যেটি ইউ-নো-হু গ্রেগোরোভিচের কাছে চাচ্ছিল। ওই অল্প বয়সের চোরটিকে চেনা চেনা মনে হল কেন?

চারপাশে গাছের শব্দ তাবুর ভেতরেও মৃদুভাবে শোনা যায়। এর ভেতরে হ্যারি রনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। একটু পরই রন ফিসফিস করে বলল, তুমি দেখতে পাওনি চোরের হাতে কী ছিল?

না…তবে নিশ্চয়ই ছোট কোনো জিনিস।

 হ্যারি?

রন নড়ে চড়ে শুতেই কাঠের পাটাতনে ক্যাচক্যাচ করে শব্দ হল।

হ্যারি, তোমার কী মনে হয় না যে ইউ-নো-হু যে জিনিসটা খুজছিল সেটা হয়তো একটি হরক্রুক্স তৈরির জন্য কোনো সঠিক বস্তুর?

হ্যারি ধীরে ধীরে বলল, আমি ঠিক জানি না। হতে পারে। কিন্তু আরো একটি নেয়া তার জন্য কি বিপদজনক হতে পারে না? হারমিয়ন বলেছিল না যে, সে ইতিমধ্যেই তার আত্মার হরক্রুক্স তৈরির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে?

কিন্তু সে হয়তো তা জানে না।

হ্যারি বলল, হতে পারে।

হ্যারি নিশ্চিত যে ভোল্ডেমর্ট কিছু একটা খুঁজছে যাদুদণ্ডের সমাধান করার জন্য। নিশ্চিত যে ভোল্ডেমর্ট পুরোনো যাদুদণ্ড নির্মাতার কাছে সমস্যা সমাধানের দাবী করেছে….কিন্তু তারপরও সে তাকে হত্যা করল। দৃশ্যত সে যাদুদণ্ড নিয়ে একটি প্রশ্নও করেনি।

ভোল্ডেমর্ট কি খুঁজছে? যেখানে পুরো মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক তার পায়ের নিচে সেখানে সে কী এমন খুঁজছে যা এক সময়ে গ্রেগোরাভিচের ছিল, এবং যে জিনিসটি একজন অজানা চোর চুরি করে নিয়ে গেল?

হ্যারির কেনো সেই ব্লন্ডি চুলের ছেলেটির মুখটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মুখটি প্রানবন্ত এবং বন্য। জর্জ এবং ফ্রেডের চেহারার মাঝামাঝি চেহারাটি তালগোল পাকিয়ে দিয়েছে। জানালার উপর থেকে সে একটি পাখির মত উড়ে গেছে। হ্যারি তাকে আগে কোথাও দেখেছে। কিন্তু কোথায় মনে করতে পারছে না…।

গ্রেগোরোভিচের মৃত্যুর পর এখন সেই প্রানবন্ত মুখের ছেলেটি বিপদের মধ্যে আছে। হ্যারির চিন্তা মন্থর হয়ে আসছে। নিচের বিছানা থেকে রনের ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ আরো ঘণ হয়ে আসছে। হ্যারি ধীরে ধীরে আবার ঘুমের আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

1 Comment
Collapse Comments

আমার কাছে harry potter cursed child বাংলা doc করা আছে, আপলোড দিতে পারবেন?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *