০৮. বিয়ের অনুষ্ঠান

০৮. বিয়ের অনুষ্ঠান

পরদিন দুপুরের পর, বেলা তিনটা থেকেই হ্যারি, রন, ফ্রেড এবং জর্জ ফলের বাগানে বিয়ের অনুষ্ঠানের বিশাল সামিয়ানার বাইরে দাঁড়িয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। হ্যারি বড় এক ডোজ পলিজিউস পোশন খেয়ে এখন সে স্থানীয় গ্রাম ওটারি সেন্ট ক্যাচপোলের মাল পরিবারের লাল চুলের একটি ছেলের রূপ ধারণ করেছে। ফ্রেড ছেলেটির চুল সামোনিং চার্ম করে চুরি করে এনেছিল পলিজিউস পোশনের জন্য। পরিকল্পনাটা এরকম, ওদের চাচাতো ভাই বার্নি হিসাবে সবার কাছে হ্যারিকে পরিচয় দেয়া হবে। এবং এভাবে উইসলি পরিবারের আত্মীয়দের কাছ থেকে হ্যারির পরিচয় গোপন রাখা হবে।

ওরা চারজনই অতিথিদের বসার ব্যবস্থার পরিকল্পনা করল, যাতে সকলকে বসার সঠিক জায়গাটি দেখিয়ে দিতে পারে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সাদা গাউন পরা একদল আপ্যায়নকারী এক ঘণ্টা আগেই এসে পৌঁছেছে। সঙ্গে সোনালি ছাউনি দেয়া ব্যান্ড। তারা একটু দূরে গাছের নিচে বসে আছে। হ্যারি একটি বাজনার পাইপ থেকে অস্পষ্ট ধোয়া বের হতে দেখল।

হ্যারির ঠিক পিছনে সামিয়ানার ভেতর লম্বা রক্তিম বর্ণের কার্পেটের দুপাশেই সারি সারি সোনালি রঙের হালকা চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সামিয়ানার দু পাশের খুঁটিগুলোকে সাদা এবং সোনালী ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিল ও ফ্লয়ারের যেখানে বিয়ে হবে সেখানে ফ্রেড এবং জর্জ সোনালি বেলুনের বিশাল গুচ্ছ বেঁধে দিল। বাইরে ঘাস এবং ছোট ঝোপঝাড়ের ওপর দিয়ে মন্থর গতিতে মৌমাছি আর প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু হ্যারি ঠিক স্বস্তি পাচ্ছে না। যে মাগল ছেলেটির আদল সে পেয়েছে সেই ছেলেটি ওর চেয়ে কিছুটা মোটা। গ্রীষ্মকালের এই দিনে তার পরা বিয়ের অনুষ্ঠানের গাউনটা বেশ গরম এবং তা ছাড়া আটোসাটো, এই কারণে যে সে এখন ওই ছেলেটির মতো মোটা।

আমার বিয়ে যখন হবে, নিজের পোশাকের কলারে টান দিয়ে ঠিক করে ফ্রেড বলল, এতসব আজেবাজে ঝামেলার মধ্যেই যাব না। এতসব ফরমালিটিসের মধ্যে আমি একেবারেই না, যার যা খুশি সে তাই পড়বে। আর সব কিছুতে যেন নাক গলাতে না পারেন, সে কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত মার শরীর আটকে রাখার একটি কার্স ব্যবহার করব। যাতে তিনি নড়াচড়া করতে পারেন।

আজ সকালে কিন্তু তিনি তুলনামূলকভাবে অতটা শোরগোল করেননি, জর্জ বলল। পারসি এখানে না থাকায় একটু চেঁচামেচি করেছেন। কিন্তু তাকে চায় কে? হায় হায়! রেডি হও, ওই যে ওরা আসছে, ঐ দ্যাখো!

উজ্জ্বল বর্ণের একটির পর একটি শরীর শুন্য থেকে উঠোনের বাইরে নামতে থাকল। কয়েক মিনিটের মধ্যে লম্বা অতিথিদের লাইন হয়ে গেল এবং সাপের মত আকাবাঁকা হয়ে লাইনটি সামিয়ানার দিকে আসতে থাকল। আকর্ষণীয় ফুল এবং যাদুর পাখি মেয়ে যাদুকরদের মাথার হ্যাটের ওপর নড়ছে। আর পুরুষ যাদুকরদের গলায় মুল্যবান পাথরখচিত রুমাল ঝকমক করছে। তাদের আনন্দঘন কথা বলার গুনগুন শব্দ স্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হতে থাকল। ওরা সামিয়ানার কাছে যত আসছে তত মৌমাছির শব্দ চাপা পড়ে গেল।

চমৎকার, আমার মনে হচ্ছে ভিলা কাজিনদের দেখা যাচ্ছে, জর্জ বলল। সে ভালো করে দেখার জন্য মাথা উঁচু করল। আমাদের ইংলিশ প্রথা বোঝার জন্য ওদের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। আমি ওদের দেখাশোনার জন্য যাচ্ছি….

এত দ্রুত যেও না, লাগলেস, ফ্রেড বলল। রাজহংসীর মতো মধ্যবয়স্ক একদল মেয়ে যাদুকর দ্রুত পাশ দিয়ে চলে গেল। সে একদল সুন্দরি ফরাসি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলল, পারমেটেজ মই টু এসিসটা ঊ(আমি কী তোমাদের সাহায্য করতে পারি?)। ওরা হাসল এবং পথ দেখিয়ে ওদের ভিতরে নিয়ে যেতে দিল। জর্জের দায়িত্ব পড়ল মধ্য বয়স্ক মেয়ে যাদুকরদের দেখাশোনা করার, রন দায়িত্ব নিল মি.উইসলির পুরাতন মন্ত্রণালয়ের কলিগদের, আর হ্যারির ভাগে পড়ল কানে শোনেন না এমন এক বৃদ্ধ দম্পতির।

ভোচার, হ্যারি সামিয়ানা থেকে বের হয়ে আসতেই একটি পরিচিত কণ্ঠ বলল। এবং দেখল টঙ্কস এবং লুপিন ভেতরে ঢোকার লাইনে দাঁড়ানো। টঙ্কসের চুলগুলো এখন ব্লভ রঙ করা। হ্যারি ওদেরকে চেয়ারের লাইনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় টঙ্কস ফিসফিস করে বলল, আসার সময় আর্থার বলল তুমিই সে, যার মাথায় কোকড়ানো চুল। গত রাতের ব্যাপারে দুঃখিত। মন্ত্রণালয় এখন খুবই ওয়ারওলফ বিরোধী হয়েছে। এবং আমরা ভেবেছিলাম আমাদের উপস্থিতি তোমাদের জন্য খুব একটা কাজে আসবে না।

না না, এটা কোনো বিষয় না, আমি বুঝতে পেরেছি, হ্যারি বলল। টঙ্কসের চেয়ে সে লুপিনের সঙ্গেই বেশি কথা বলল। লুপিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন তার নতুন রূপ দেখে। কিন্তু তারা যখন ওকে ছেড়ে এগিয়ে গেল হ্যারি দেখল সুপিনের মুখটা আবার উদ্বেগে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। সে এর কারণ বুঝতে পারল না। কিন্তু হ্যারি এ নিয়ে ভাবার সময় পেল না। হ্যাগ্রিডের কারণে তার চিন্তা বাধাগ্রস্ত হলো। হ্যাগ্রিড কোথায় বসবে, ফ্রেডের দেখিয়ে দেওয়া জায়গাটি সে বুঝতে পারেনি। তার জন্য রাখা পেছনের সারিতে যাদুর মাধ্যমে বড় করা বিশেষ আসনটিতে না বসে, যে পাঁচটি চেয়ারে সে বসে পড়েছিল তা এখন। সোনালি ম্যাচের কাঠির তূপের মতো পড়ে আছে।

মি. উইসলি সে চেয়ারগুলো আবার ঠিক করলেন। হ্যাগ্রিড সকলের উদ্দেশ্যে দুঃখ প্রকাশ করল। হ্যারি দ্রুত প্রবেশ পথে এলো রনকে খুঁজতে। রন একজন অদ্ভুত দর্শন যাদুকরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। যাদুকরের চোখ দুটো সামান্য ট্যারা, কাঁধ পর্যন্ত সাদা চুল, দেখতে অনেকটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো। মাথার হ্যাটটি থেকে সুতো এসে নাকের সামনে ঝুলছে। তার পরা ডিমের কুসুমের মতো হলুদ গাউনে চোখের জলের ছায়া। গলায় ত্রিকোণ চোখের চিহ্নযুক্ত সোনার চেইন চকচক করছে।

জেনেফিলিউস লাভগুড, সে বলল। হ্যারির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আমার মেয়ে, আর আমি ওই পাহাড়ের ওপরে থাকি। উইসলি পরিবার আমাদের দাওয়াত করেছেন এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি আমার লুনাকে চেন? সে রনকে উদ্দেশ্য করে বলল।

হ্যাঁ, রন বলল। সে আপনার সঙ্গে আসেনি?

না, সে দেরি করছে ওই চমৎকার বাগানে বামন ভুতদের (নমস) হ্যালো বলার জন্য। কী সুন্দর ওরা ওখানে থাকে! খুব কম যাদুকরই জানে যে এই বুদ্ধিমান বামন ভূতগুলোর থেকে কত কিছু শেখার আছে! অথবা খুব কম সংখ্যক লোক ওদের প্রকৃত নামে ডাকতে পারে জারনুমবি–গার্ডেনসি।

আমাদেরগুলো চমৎকার সব গালি শিখেছে, রন বলল। আমার ধারণা ফ্রেড এবং জর্জ ওদেরকে গালিগুলো শিখিয়েছে।

লুনা চলে আসতেই সে ওদেরকে যাদুকরদের সামিয়ানায় নিয়ে গেল।

হ্যালো হ্যারি! লুনা বলল।

এহ, আমার নাম বার্নি, হ্যারি বলল। সে হতভম্ব হয়ে গেল।

ওহ্ বাবা, তুমি তাহলে ওটাও পরিবর্তন করেছ? সে উৎসাহের সঙ্গে বলল।

তুমি আমাকে জানলে কী করে-

ও আর তেমন কী, তোমার চালচলন থেকেই- সে বলল।

বাবার মতোই লুনার পরণেও উজ্জ্বল হলুদ পোশাক। সে শোভা বর্ধন করেছে তার চুলে মস্তবড় একটি সুর্যমুখী ফুল গেঁথে দিয়ে। একবার যদি সবদিক দিয়ে উজ্জ্বলতা উপচে পড়ে তাহলে তার সাধারণ প্রভাব খুবই আনন্দদায়ক। অন্তত পক্ষে তার কানে কোনো মুলা ঝুলানো নেই।

জেনোফিলিউস একজন পরিচিতের সঙ্গে গভীরভাবে আলোচনায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। ফলে তিনি হ্যারি এবং লুনার কথোপকথন মিস করেছেন। সেই উইজার্ডকে বিদায় দিয়ে তিনি মেয়ের দিকে ফিরলেন। লুনা হাতের আঙুলগুলো তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ড্যাডি দ্যাখো, একটা বামন ভুত আমাকে কামড়ে দিয়েছে!

বাহ কি চমৎকার! বামন ভুতের লালা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার! মিলাভগুড বললেন। তিনি লুনার বাড়িয়ে দেয়া আঙুলগুলো ধরলেন এবং রক্ত বের হওয়া জায়গাটা পরীক্ষা করলেন। লুনা, লক্ষ্মী মেয়ে, যদি তুমি প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাও–ধর যদি অপ্রত্যাশিতভাবে তোমাকে অপেরা গাইতে বলা হয় বা আবৃতি করতে বলা হয়, তাহলে না করো না, কিন্তু। হয়তো তুমি জারনুমবি-দের কাছ থেকে কোনো বর পেতে পার।

রন ওদের পাশ দিয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছিল। কথা শুনে সে জোরে হাসল।

রন হয়তো বিষয়টি নিয়ে হাসতে পারে, লুনা এবং জেনেফিলিয়াসকে তাদের নির্দিষ্ট আসনে বসানোর জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় লুনা শান্ত-স্বাভাবিকভাবে বলল। কিন্তু আমার বাবা জারনুমবি–যাদু নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন।

তাই নাকি? হ্যারি বলল। সে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লুনা বা তার বাবার অদ্ভুত সব ধারণার ব্যাপারে কোনো রকম বিতর্কে যাবে না। তুমি কী নিশ্চিত যে ওই কামড়ে দেয়া জায়গাটিতে কিছু লাগবে না?

নাহ্, এটা ঠিক আছে, তেমন কিছু নয়, সে একটা স্বপ্নময় ভঙ্গিতে হাতের নখ চুষল এবং আপাদমস্তক হ্যারির দিকে তাকাল। তুমি দেখতে বেশ স্মার্ট। আমি ড্যাডিকে বলেছি, অধিকাংশ লোকই অনুষ্ঠানিক পোশাক পড়বে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন বিয়ের অনুষ্ঠানে সৌভাগ্যের জন্য সূর্য রঙের পোশাক পড়া ঠিক।

লুনা বাবার পেছনে পেছনে হেঁটে চলে যেতেই রনকে দেখা গেল একজন বৃদ্ধা যাদুকরের বাহু ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে আসছে। তার লম্বা নাক, চোখের চারপাশ লাল এবং তার গোলাপি পালকের হ্যাট সব মিলিয়ে তাকে ক্রুদ্ধ একটি ফ্লেমিঙ্গো পাখির মতো দেখাচ্ছে।

…আর তোমার চুল অনেক বড় রোনাল্ড, আমার হঠাৎ মনে হয়েছিল তুমি বুঝি জিনেভ্রা। মেরলিনের দাড়ি, জেনোফিলিয়াস লাভগুড কী পড়েছে? ওকে তো একটা ওমলেটের মতো দেখাচ্ছে। আর তুমি কে! তিনি খেইখেই করে উঠলেন হ্যারির দিকে চেয়ে।

ওর কথা বলছ–আন্টি মুরিয়েল, এ হচ্ছে আমাদের চাচাতো ভাই বার্নি।

আরো একজন উইসলি? তোমরা তো দেখছি বামন ভুতের মতো গজাতে থাক। হ্যারি পটার আসেনি? তার সঙ্গে দেখা হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। আমি ভেবেছিলাম ও তোমাদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, নাকি তোমরা ওর নামে কেবল দম্ভ করে বেড়াও রোনাল্ড?

না….সে আসতে পারেনি…

হুম, বাহানা দিচ্ছ, তাই না? সংবাদপত্রের ছবিতে যেমন ওকে বোকা বোকা মনে হয়, সে তাহলে আসলে তা না। আমি কিছুক্ষণ আগেই হবু বৌকে বোঝাচ্ছিলাম আমার উপহার দেয়া টায়রাটা পরলে কত ভালো দেখাবে। তিনি উঁচুস্বরে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন। গবলিনের তৈরি বুঝলে, এবং এটা আমার পরিবারের কাছে শতশত বছর ধরে ছিল। হবু-বৌ মেয়েটা দেখতে সুন্দর, কিন্তু এখনো ফরাসিই রয়ে গেছে! আচ্ছা, ঠিক আছে, আমাকে একটা ভালো আসনে বসিয়ে দাও রোনাল্ড, আমার এখন এক শ সাত বছর বয়স, বেশি সময় আর পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না।

পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রন হ্যারির দিকে তাকিয়ে অর্থপূর্ণ চাহনি দিল। এবং বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে আর দেখা গেল না। এরপর যখন সামিয়ানার প্রবেশমুখে আবার ওদের দেখা হলো, তখন হ্যারি দেখল বেশ কয়েক ডজন অতিথি এসেছে। সামিয়ানার ভেতরটা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বাইরে আর কোনো ভেতরে ঢোকার লাইন দেখা গেল না

মুরিয়েল একটা দুঃস্বপ্ন, রন জামার হাতা দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বলল। প্রতি বছর তিনি ক্রিসমাসের সময় আমাদের বাড়িতে আসতেন, তারপর একবার তিনি রাতে খেতে বসলে তার চেয়ারের নিচে জর্জ এবং ফ্রেড ডাঙবোমা সেট করেছিল। থ্যাঙ্কস গড, এরপর থেকে তিনি আর আসেন না। ড্যাড সবসময় বলেন, মুরিয়েল তার উইল থেকে জর্জ এবং ফ্রেডের নাম বাদ দেবেন–আর তা না হলে ওরা পরিবারের সবচেয়ে ধনী হয়ে উঠত। অন্তত যে হারে বেড়ে চলেছে…বাবা! রন বলল। এরপর চোখ পিটপিট করে হারমিয়নকে দ্রুত আসতে দেখে তার উদ্দেশ্যে বলল, তোমাকে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে।

সব সময় গলায় অভিভূত হওয়ার সুর, হারমিয়ন মুচকি হেসে বলল। সে হাইহিলের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা রঙের একটা পোশাক পড়েছে। চুলগুলো মোলায়েম এবং চিকচিকে দেখাচ্ছে। কিন্তু তোমার ওই গ্রেট আন্ট মুরিয়েল তো ভিন্ন কথা বলছে। কিছুক্ষণ আগেই তার সঙ্গে উপরের তলায় দেখা, তিনি যখন ফ্লয়ারকে একটি টায়রা দিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন, ওহ ডিয়ার, এও কি মাগল সন্তান? তারপর বললেন, ভঙ্গি খারাপ, পায়ের গোড়ালি চিকন।

ওনার কথা তুমি ধর্তব্যে এনো না, তিনি সবার ব্যাপারেই এমন রুঢ়, রন বলল।

কী, মুরিয়েলের কথা বলছ?, জর্জ জিজ্ঞেস করল। ফ্রেডকে নিয়ে সে সামিয়ানা থেকে বের হয়েছে। হ্যাঁ, তিনি এই মাত্র আমাকে বলেছেন, আমার কান দুটো বড়। বুড়ো বাদুর! আজ বিলিউস আঙ্কেল যদি আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান একেবারে জমিয়ে ফেলতেন।

তিনি একটা গ্রিম দেখে ২৪ ঘণ্টা পর মারা গিয়েছেন না? হারমিয়ন জানতে চাইল।

হ্যাঁ, শেষ দিকে তিনি একটু কেমন যেন মনমরা হয়ে গিয়েছিলেন, জর্জ বলল।

কিন্তু তিনি অমন হয়ে যাওয়ার আগে ছিলেন যে কোনো পার্টির প্রাণকেন্দ্র। ফ্রেড বলল। তিনি পুরো বোতল ফায়ারহুইস্কি গলায় ঢেলে ড্যান্স ফ্লোরের ওপর দিয়ে দৌড়াতেন। গাউন উপরে তুলে ধরে ফুলের তোড়া বের করতে শুরু করতেন তার

হ্যাঁ, কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি একজন প্রকৃত আমুদে লোক ছিলেন, হারমিয়ন বলল। হ্যারি হো-হো করে হেসে ফেলল।

কখনো বিয়ে করেননি, কিছু কারণ ছিল অবশ্য, রন বলল।

তুমি আমাকে অবাক করলে, হারমিয়ন বলল।

ওরা এসব নিয়ে হাসাহাসি করতে থাকল। কেউ লক্ষ্যই করেইনি যে বিলম্বে একজন অতিথি এসেছে। অতিথি ঘনকালো চুলের এক যুবক। বাঁকানো চোখা নাক, কালো মোটা দ্রু। রনের দিকে তার দাওয়াতপত্র বের করে হারমিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এবার সবাই তাকে লক্ষ্য করল।

ভিক্টর! চিৎকার করে হারমিয়ন বলল। তার হাত থেকে কারুকাজ করা ছোট ব্যাগটি মাটিতে পড়ে গেল। ব্যাগটি আকারের তুলনায় থপ করে একটু জোরেই শব্দ হলো। সে বিব্রত অবস্থায় হাতিয়ে ব্যাগটি তুলতে তুলতে বলল, আমি জানতাম না যে তুমি… দেখো তো… তোমাকে দেখে কী আনন্দ হচ্ছে…কেমন আছো তুমি?

রনের কান আবার লাল হয়ে গেল। ক্রুমের ইনভাইটেশন কার্ডের দিকে তাকিয়েও যেন ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। বিস্ময়ের স্বরে বলল, তুমি এখানে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে?

ফ্লয়ার আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, ক্রুম ভ্রু দুটো উপরে তুলে বলল।

হ্যারি অবশ্য ক্রুমকে দেখে মনক্ষুন্ন নয়। সে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল। তখনই ওর মনে হলো রনের কাছ থেকে ক্রুমকে দ্রুত সরিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাকে এখনই বসার জায়গা দেখিয়ে দেয়াটাই ভালো।

মনে হয়, তোমার বন্ধু আমাকে দেখে খুব একটা খুশি হয়নি, লোকে পরিপূর্ণ সামিয়ানায় ঢুকে ক্রুম বলল। বন্ধু না আত্মীয়? সে হ্যারির লাল কোঁকড়ানো চুলের দিকে তাকিয়ে আবার বলল।

কাজিন, হ্যারি বিড়বিড় করে বলল। কিন্তু ক্রুম তার উত্তরে মনযোগ দিল না। ক্রুম প্রবেশ করার পর সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। বিশেষ করে ভিলা কাজিনরা। শত হলেও সে ছিল একজন বিখ্যাত কিডিচ খেলোয়াড়। সবাই যখন মুখ বাড়িয়ে তাকে দেখছে তখন রন, হারমিয়ন ফ্রেড এবং জর্জ দ্রুত চেয়ারের লাইনের ভেতর ঢুকে গেল।

এখন বসে পড়ার সময় হয়েছে, ফ্রেড হ্যারিকে বলল। হবু বধু চলে এলে আমাদের আর বসার জায়গা থাকবে না।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন দ্বিতীয় সারিতে ঠিক ফ্রেড এবং জর্জের পেছনে বসল। হারমিয়নকে গোলাপি দেখা যাচ্ছে, আর রনের কান এখনো লাল হয়ে আছে। কয়েক মুহূর্ত পর সে হ্যারিকে বিড়বিড় করে বলল, তুমি ওর মুখে গজিয়ে ওঠা স্টুপিড ছোট দাড়ি দেখেছ?

হ্যারি মন্তব্যহীন একটি শব্দ করল।

উষ্ণ সামিয়ানার ভেতরে একটি চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে রইল। মাঝে মাঝেই উচ্চস্বরে কথা ও হাসি নিস্তব্ধতা ভেঙে দিল। মি.এবং মিসেস উইসলি আসনের প্রতিটি সারির ভেতরে ঢুকলেন। হাসিমুখে আত্মীয়-স্বজনদের দিকে হাত নাড়লেন ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। মিসেস উইসলি একেবারে নতুন রঙিন গাউন পরেছেন। তার সঙ্গে মাথায় মানানসই হ্যাট।

কিছুক্ষণ পরই বিল এবং চার্লি সামিয়ানার সামনে এসে দাঁড়াল। দুজনের পরনেই গাউন। গাউনের বোতামের ঘরে বড় সাদা গোলাপ ফুল। ফ্রেড তারঃস্বরে নেকড়ের ডাক দিল। ভিলা কাজিনদের মধ্যে একটা হাসির রোল উঠল। তারপরই একটি সুর বেজে উঠতেই সবাই থেমে গেল। মনে হলো এই সুর সোনালি বেলুনগুলো থেকে বেজে উঠেছে।

উউউহ! একই জায়গায় বসে প্রবেশ পথের দিকে ঘুরে হারমিয়ন বলল।

ফ্লয়ারকে দু হাত উড়াল দেওয়ার মতো করে প্রশস্ত করে আর সিয়ো ডেলাকুরকে বিগলিত হেসে লাফ দেওয়ার ভঙ্গিতে চেয়ারের সারির দিকে আসতে দেখে উপস্থিত যাদুকররা পলকহীনভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকল। ফ্লয়ার একেবারে সাধারণ একটি সাদা পোষাক পড়েছে। তারপরও মনে হচ্ছে একটি দৃঢ় প্রত্যয়ের রুপালী আলোর ছটা বের হচ্ছে ফ্লয়ার থেকে। আজ প্রত্যেককেই যেন। ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। তারপরও ফ্লয়ারের আলোর ছটা অন্যদেরকে তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ করে দিল। জিনি এবং গ্যাব্রিয়েলে দুজনই হলদে পোক পড়েছে। তাদেরকে অন্য সময়ের চেয়ে ভালো লাগছে। ফ্লয়ার যখন বিলের কাছে গেল তখন বিলকে এতই বিমুগ্ধ ও সুখি লাগল যেন তার কখনই ফেনরির গ্রেব্যাকের মুখোমুখি হওয়ার দুঃস্বপ্নের মতো কোনো ঘটনা তার জীবনে ঘটেনি।

লেডিস এন্ড জেন্টলমেন, একটি সুরেলা কণ্ঠ বলল। হ্যারি অবাক হয়ে দেখল সেই ছোটখাটো, মাথায় ঝুটিওয়ালা যাদুকর, যিনি ডাম্বলডোরের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বিল এবং ফ্লয়ারের সামনে। আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি দুটি বিশ্বস্ত আত্মার মিলনের অনুষ্ঠানে….

হ্যাঁ, আমার টায়রা অনুষ্ঠানকে সুন্দর করে তুলেছে, আন্টি মুরিয়েল ফিসফিস করে বললেন। কিন্তু আমাকে বলতেই হবে, জিনোর দেয়া পোশাকটা একেবারেই ছোট…

জিনি চারদিকে তাকাল, হ্যারির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ছোট করে চোখ টিপল। তারপর সঙ্গে সঙ্গে আবার সামনের দিকে মুখ ফেরালো। হ্যারির মন তখন সামিয়ানা থেকে অনেক দূরে, স্কুলের মাঠে জিনির সঙ্গে একাকি দুপুরের সময় কাটানোর কথা মনে পড়ল। সে কতদিন আগের কথা! তার সব সময় মনে হয় যে সেই মূহুর্তটা যদি সত্যি হয়ে ধরা দিত! সে একজন সাধারণ মানুষের জীবনের আলোকিত সময়টার কথা ভাবছে–যে মানুষটির কপালে কোনো জ্বলজ্বল দাগ নেই…

তুমি, উইসলিয়াম আর্থার, ফ্লয়ার ইসাবেলকে….

সামনে সারিতে মিসেস উইসলি এবং ম্যাডাম ডেলাকুর লেস দিয়ে চোখ মুছছেন। তাঁবুর পিছন থেকে ট্রাম্পেটের মতো কান্নার শব্দ ভেসে এসে সবাইকে বলে দিচ্ছে যে হ্যাগ্রিড তার টেবিলক্লোথ সাইজের রুমাল বের করে নিয়েছে। হার মিয়ন হ্যারির দিকে ফিরে হাসল; তার চোখ দুটো জলে ভিজে আছে।

..আমি ঘোষণা করছি তোমরা চিরজীবনের জন্য বন্ধনে আবদ্ধ।

ঝুটিচুলের যাদুকর তার যাদুদণ্ডটি ফ্লয়ার এবং বিলের মাথার ওপর তুলে ধরলেন। ওদের মাথার ওপর এক ঝাক রুপালি তারার বর্ষণ হলো। চক্রাকারে তাদেরকে ঘিরে ঘুরতে ঘুরতে সেগুলো জোড়া জোড়া আকার ধারণ করল। ফ্রেড এবং জর্জ একবার করে হাতে তালি দিতেই মাথার উপরের বেলুনগুলো ফেটে গেল। বেলুনের ভেতর থেকে স্বর্গীয় পাখি এবং ছোট ছোট সোনালী রঙের বাঁশি বের হয়ে সুর করে গাইতে থাকল এবং বাজতে থাকল।

লেডিস এন্ড জেন্টলমেন! ঝুটিওলা যাদুকর বললেন। দয়া করে আপনারা যদি একটু উঠে দাঁড়ান।

সবাই তাই করল। আন্টি মুরিয়েল শব্দ করেই গজগজ করতে থাকলেন; যাদুকর তার দণ্ডটি তুলে ধরলেন। ক্যানভাসের দেয়াল উধাও হয়ে গেল এবং যে চেয়ারগুলোতে সবাই বসেছিল সেগুলো সব পরিপাটিভাবে শূন্যে উঠে গেল। ফলে সবাই দাঁড়িয়ে রইল এক সোনালি রঙের খুঁটির ওপর ভরকরা এক অপূর্ব সুন্দর চাঁদোয়ার নিচে। চারদিকে সুর্যালোকিত ফুল-ফলের গাছ, গ্রামের পরিবেশ। এরপর চাঁদোয়ার মাঝখান থেকে ভারী উলের তৈরি সোনালি কাপড়ের পুল বেরিয়ে এসে একটি আলোকিত নাচের ফ্লোরের আকার তৈরি করল। শুন্যে ঝুলে থাকা চেয়ারগুলো ছোট সাদা কাপড়ের টেবিলগুলোর চারপাশে জড়ো হলো। সুন্দর আকার করে ভাসতে থাকা এই টেবিল চেয়ার মাটিতে নেমে এলো। এরপর

সোনালি জ্যাকেট পরা ব্যান্ড দলবেঁধে একটি বেদিতে উঠে এলো।

স্মুথ, রন আনন্দের সঙ্গে বলল। হঠাৎ করে ওয়েটাররা আবির্ভূত হলো এবং তাদের কেউ কেউ পাম্পকিন জুস, বাটারবিয়ার অথবা ফায়ার হুইস্কি নিয়ে আর কেউ টার্ট এবং স্যান্ডউইচ হাতে হাতে করে ঘুরতে লাগল।

আমাদের এগিয়ে গিয়ে ওদের অভিনন্দন জানানো উচিত, হারমিয়ন পায়ের পাতার ওপর দাঁড়িয়ে উঁচু হয়ে বিল এবং ফ্লয়ারকে দেখতে চেষ্টা করল। শুভাকাক্ষিরা ঘিরে রেখেছে,যার ফলে ওদের দেখা যাচ্ছে না।

আমরা পরে সময় পাব, রন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল। পাশ দিয়ে বাটারবিয়ারের ট্রে যাওয়ার সময় ছোঁ মেরে তিনটি তুলে নিল। একটি হ্যারির হাতে দিল। হারমিয়ন, ধর, চলো একটি টেবিল বেছে নিই,…ওখানে না! মুরিয়েলের কাছাকাছি কোথাও না-

রন পথ দেখিয়ে ফাঁকা ড্যান্স ফ্লোরের দিকে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে দেখল। হ্যারি বুঝতে পারল সে ক্রুমের দিকে চোখ রাখছে। এরই মধ্যে ওরা সামিয়ানার অন্য প্রান্তে চলে এলো। সেখানে অধিকাংশ টেবিলই দখল হয়ে আছে। একমাত্র টেবিল ফাঁকা আছে যেখানে লুনা একা বসে আছে।

আমরা তোমার সঙ্গে বসতে পারি তো? রন বলল।

ও হ্যাঁ, সে আনন্দের সঙ্গে বলল। ড্যাডি এইমাত্র বিল এবং ফ্লয়ারকে আমাদের উপহার পৌঁছে দিতে গেলেন।

সেটা কি, সারাজীবনের সরবরাহ করা গার্ডিরুটগুলো? রন জিজ্ঞেস করল।

হারমিয়ন টেবিলের নিচ দিয়ে তাকে পা দিয়ে খোচা দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার পরিবর্তে হ্যারি খোচা খেলো। ব্যাথায় ওর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসল। হ্যারির কিছু সময় আলোচনায় অংশ নেয়া বন্ধ হয়ে গেল।

ব্যান্ড সঙ্গিত শুরু হলো। তুমুল করতালির মধ্যে বিল এবং ফ্লয়ার প্রথম ড্যান্স ফ্লোরে গেল। একটু পরই মি.উইসলি ম্যাডাম ডেলাকুরকে নিয়ে ফ্লোরে উঠে এলেন। তার পেছন পেছন এলেন মিসেস উইসলি এবং ফ্লয়ারের বাবা।

এই গানটি আমার ভারি পছন্দ, লুনা বলল। গানের সুরের সঙ্গে সে একটু একটু দুলতে থাকল। একটু পর সে উঠে দাঁড়ালো এবং ধীর পায়ে ড্যান্স ফ্লোরে গিয়ে উঠল। পুরো একা চোখ বুজে, হাত দুটো প্রসারিত করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গানের তালে ঘুরতে থাকল।

সে একটা ব্যতিক্রম মেয়ে, তাই না? রন হাসিমুখে বলল। তার সবসময় একটা ভাব আছে।

কিন্তু এক মুহূর্ত পরই রনের মুখ থেকে হাসি উবে গেল। লুনা যে চেয়ার থেকে উঠে গেছে সেখানে ভিক্টর জুম এসে ধপাস করে বসল। হারমিয়নকে হাসিমুখ, কিন্তু বিব্রত দেখা গেল। এবার কিন্তু ক্রুম তাকে প্রশংসা করতে আসেনি। মুখে গম্ভীর ভাব এনে ক্রুম বলল, ওই হলদে পোশাক পরা লোকটি কে?

উনি হলেন জেনোফিলিয়ুস লাভগুড, আমাদের এক বন্ধুর বাবা। রন সংক্ষেপে বলল এবং তার ভাব গম্ভীর ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল যে সে ক্রুমের সাথে জেনোফিলিয়ুসকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে রাজি না। ক্রুমের কথাকে পাত্তা না দিয়ে রন হারমিয়নকে বলল চলো নাচের ফ্লোরে যাই।

হারমিয়ন একবার ইতস্তত করল, তারপরই খুশি হয়ে উঠে দাঁড়াল। ক্রমে বেড়ে ওঠা ট্র্যান্স ফ্লোরের ভিড়ের মধ্যে ওরা হারিয়ে গেল।

আহ! ওরা এখন জুটি, ক্ষণিকের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে ক্রম জানতে চাইল।

হ্যাঁ,এক রকম, হ্যারি বলল।

তুমি কে? ক্রুম হ্যারির দিকে ফিরে জানতে চাইল।

বার্নি উইসলি।

ওরা দুজন হাত মেলাল।

তুমি বার্নি–তুমি এই লাভগুড লোকটিকে ভালো করে চেনো?

না, আজই তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কেন?

ক্রুম তার হাতের ড্রিঙ্কসের ওপর দিয়ে জেনোফিলিউয়ুসের দিকে বড় বড় চোখে তাকাচ্ছে। জেনোফিলিউয়ুস ড্যান্স ফ্লোরের এক পাশে দাঁড়িয়ে অন্যান্য যাদুকরদের সঙ্গে কথা বলছেন।

কারণ, ক্ৰম বলল। সে যদি ফ্লয়ারদের অতিথি না হতো তাহলে এখনই ওকে আমি বুকের ওপর ওই নোংরা চিহ্নটি লাগানোর জন্য দেখে নিতাম।

চিহ্ন? হ্যারি বলল। সেও জেনোফিলিউসের দিকে তাকাল। একটা অদ্ভুত ত্রিকোণ চোখ তার বুকের ওপর। কেন? ওটা থাকায় সমস্যা কি?

গ্রিন্ডেলভাল্ড। ওটা গ্রিন্ডেলভাল্ডের চিহ্ন।

গ্রিন্ডেলভাল্ড… যে ডার্ক উইজার্ডকে ডাম্বলডোর পরাজিত করেছিলেন?

ঠিক।

ক্রুমের চোয়াল শক্ত হলো, যেন সে কিছু একটা চিবুচ্ছে। বলল গ্রিন্ডেলভাল্ড বহু লোককে হত্যা করেছে। যেমন সে আমার পিতামহকে হত্যা করেছে। সে কখনোই এ দেশে শক্তিশালী ছিল না। সবাই বলে সে ডম্বলডোরকে ভয় পেত। সে শেষ হয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু এই- সে আঙুল দিয়ে জোনোফিলিউসের কি দেখাল। কিন্তু এই চিহ্নটি সহজেই চিনতে পারি : ডার্মস্ট্রাঙে ছাত্র থাকা অবস্থায় গ্রিন্ডেলভাল্ড ওটা কেটে বানিয়েছিল। কিছু ইডিয়ট সেটা কপি করে তাদের বইতে বা পোশাকে লাগিয়ে থাকে। মনে করে নিজেদের একটা আবেদন সৃষ্টি করছে আমরা যারা গ্রিন্ডেলভান্ডের হাতে পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি তারা তাদের উচিৎ শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত ওরা তাই মনে করতে থাকবে।

ক্রুম হাতের আঙুলগুলো আক্রমনাত্মকভাবে মটকালো এবং বড় বড় চোখ করে জেনোফিলিউসের দিকে তাকালো। হ্যারি বিব্রত বোধ করল। লুনার বাবাকে দেখে কোনো ক্রমেই মনে হয় না যে একজন ডার্ক আর্টের সমর্থক। এবং এই সামিয়ানায় উপস্থিত কাউকেই মনে হয় না যে এই ত্রিকোণ চিহ্নটিকে সেভাবে মূল্যায়ন করছে।

তুমি কী নিশ্চিত যে ওটি গ্রিন্ডেলভান্ডের চিহ্ন?

আমি ভুল করিনি, ক্রুম ঠাণ্ডাভাবে বলল। আমি কয়েক বছর ধরে ওই চিহ্নের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছি। আমি এ চিহ্ন ভালো চিনি।

কিন্তু এটা তো হতে পারে, হ্যারি বলল। হয়তো জেনোফিলিউস আসলে জানে না যে এই চিহ্নের অর্থ কী। লাভগুডরা এমনিতে শান্ত…তাদের জন্য এটা অস্বাভাবিক। সে হয়তো কোথাও পেয়ে চিহ্নটি তুলে নিয়েছে। ভেবেছে কোনো স্নোরক্যাকের মাথার ভাঙা অংশ।

কীসের ভাঙা অংশ?

আমি ঠিক জানি না বস্তুটি কি, কিন্তু মনে হয় তিনি এবং তার মেয়ে ছুটির সময় ওগুলো খুঁজতে যান।

হ্যারি বুঝতে পারল লুনা এবং তার বাবাকে খুবই নিন্দিতভাবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে ক্রুম।

ওই যে ও, লুনার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে ও বলল। লুনা এখনো একা, মাথার উপরে হাত তুলে নেচে যাচ্ছে। এমন ভঙ্গিতে যেন সে ছোট ছোট মাছি তাড়াচ্ছে।

সে অমন করছে কেন? ক্রুম জানতে চাইল।

সম্ভবত র‍্যাম্পুর্ট সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। হ্যারি বলল। সে এই লক্ষণ সম্পর্কে জানে।

ক্রুম ঠিক ধরতে পারল না হ্যারি তামাশা করছে কি-না। সে তার গাউনের ভেতর থেকে নিজের যাদুদণ্ডটি বের করল এবং নিজের উরুতে সতর্কতার সঙ্গে আটকে দিল। বের হয়ে থাকা শেষ প্রান্ত স্পার্ক করছে।

গ্রেগোরোভিচ! হ্যারি উচ্চস্বরে বলে উঠল। ক্রুম কথা শুরু করল কিন্তু হ্যারি এত উত্তেজিত যে তা কানে গেল না। ক্রুমের দণ্ড দেখে তার স্মরণশক্তি ফিরে এসেছে। এই যাদুদণ্ড অলিভ্যাভার ট্রাইউইজার্ড টুনামেন্টের সময় নিয়ে যেতেন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করতেন।

গ্রেগোরোভিচ-এর ব্যাপারটা কী? ক্রুম সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল।

তিনি যাদুদণ্ড প্রস্তুতকারক!

আমি সেটা জানি, জুম বলল।

তিনিই তো তোমার দণ্ডটি বানিয়েছেন। সে কারণে আমি চিন্তা করেছিলাম…কিডিচ..।

ক্রুমকে আরো বেশি সন্দেহপ্রবণ মনে হলো।

তুমি কী করে জানলে যে আমার যাদুদণ্ডটি গ্রেগোরাভিচের তৈরি?

আমি….আমি কোথাও পড়েছি, আমার মনে হয়, হ্যারি বলল। হয়তো একটি ফান ম্যাগাজিনে। হ্যারি তাৎক্ষণিকভাবে বলল। ক্রুম শান্ত হলো উত্তর শুনে।

আমার তো মনে পড়ে না আমি কখনো ফান ম্যাগাজিনের সঙ্গে আমার যাদুদণ্ড নিয়ে কথা বলেছি। সে বলল।

আচ্ছা…হা.. গ্রেগোরোভিচ এখন কোথায়?

ক্রুমকে বিস্মিত দেখালো প্রশ্নটি শুনে। তিনি কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। আমি সর্বশেষদের একজন তার কাছ থেকে যাদুদণ্ড কিনেছি। সবচেয়ে ভালো যাদুদণ্ড ওগুলো। যদিও আমি জানি তোমরা ব্রিটেনের লোকরা অলিভ্যান্ডারের কাছ থেকে অনেক যাদুদণ্ড সংরক্ষণ করেছ।

হ্যারি কোনো উত্তর দিল না। সে এমন ভাব করল যেন ক্রুমের মতোই সেও নাচ দেখছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে গভীরভাবে ভাবতে থাকল। ভোল্ডেমর্ট একজন বিখ্যাত যাদুদণ্ড প্রস্তুতকারীকে খুঁজছিল। কিন্তু একটি কারণে হ্যারির সেটি খোজার প্রয়োজন নাই : কারণ হলো ভোল্ডেমর্ট যেদিন সারা আকাশে তাকে ধাওয়া করেছিল সেদিন হ্যারির দণ্ডটি অনেক কাজে এসেছিল। তার চিরশ্যামল লতা এবং ফিনিক্সের পালকের দণ্ড ডোন্ডেমটের ধার করা দণ্ডকে পরাজিত করেছে। ওলিভ্যান্ডার হয়তো তা ধারণাও করতে পারেননি বা বুঝতে পারেননি। গ্রেগোরোভিচ কী ভালো যাদুদণ্ড তৈরি করা জানতেন, সত্যিই কী তিনি অলিভ্যান্ডারের চেয়ে দক্ষ? তিনি কী যাদুদণ্ডের গোপন কথা জানতেন যা অলিভ্যাভার জানেন না?

এই মেয়েটি ভারি সুন্দর দেখতে, জুম বলল। সাথে সাথে হ্যারি ভাবনা জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো। ক্রুম আঙুল তুলে জিনিকে দেখাচ্ছে। জিনি এই মাত্রই লুনার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সেও কি তোমাদের একজন আত্মীয়?

হ্যাঁ, হ্যারি বলল। হঠাৎ করে ওর বিরক্ত লাগল। এবং সে অন্য একজনের প্রতি দুর্বল। আর সে লোকটি ইর্ষাকাতর ধরনের, আবার উঁচুস্তরের মানুষ। তোমার উচিত হবে না তার সঙ্গে টক্কর দেওয়া।

ক্রুম ঘোঁতঘোঁত করে উঠল।

কী, সে বলল। তার মগটি চুমুক দিয়ে শেষ করল এবং উঠে দাঁড়াল। ইন্টারন্যাশনাল কিডিচ খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও সকল ভালো চেহারার মেয়েদেরকে অন্যরা নিয়ে যাবে এটা কোনো কথা হলো?

সে হ্যারিকে রেখে পা বাড়াল। সামনে দিয়ে যাওয়া ওয়েটারের কাছ থেকে একটি স্যান্ডউইচ তুলে নিতে। তারপর ভিড় হয়ে থাকা ড্যান্স ফ্লোরের পাশ দিয়ে চলে গেল। হ্যারি রন কোথায় সেটা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করল। তাকে গ্রেগোরোভিচ সম্পর্কে বলা দরকার। কিন্তু রন হারমিয়নকে নিয়ে ড্যান্স ফ্লোরের একেবারে মাঝখানটায় নাচছে। হ্যারি একটি সোনালি খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে জিনিকে দেখতে থাকল। সে এখন ফ্রেড এবং জর্জের বন্ধু লি জর্ডানের সঙ্গে নাচছে। হ্যারি মনে করল রনকে দেয়া প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে।

হ্যারি কখনোই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখেনি। তাই উইজার্ডদের অনুষ্ঠান এবং মাগলদের অনুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পারল না। যদিও সে ভাল করে জানে। যে মাগলরা নিশ্চই এমন ব্যবস্থা রাখে না যে দুটি ফিনিক্সের মতো তৈরি কেক, কাটার সময় সত্যিকারের ফিনিক্সের মতো উড়ে যায়, অথবা ভিড়ের মধ্যে দিয়ে কোনো কিছুর ওপর ভর না করে শ্যাম্পেনের বোতল শূন্যে উড়তে থাকে। সন্ধ্যা নেমে আসতেই সোনালি লণ্ঠনগুলো থেকে আলো বিচ্ছুরিত হতে থাকল, উপরের আচ্ছাদনের নিচে পোকামাকড় উড়তে থাকল। শব্দ ক্রমে বাড়তে থাকল। ফ্রেড এবং জর্জ দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে; চার্লি হ্যাগ্রিড এবং রঙিন পর্ক-পাই হ্যাট মাথায় কুঁজো মতো একজন যাদুকর এক কোণায় বসে গান গাইছে,ওডো দ্য হিরো…।

হ্যারি রনের এক মদ্যপ চাচার কাছ থেকে সরে সরে থাকছে, তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে হ্যারি তার ছেলে কি-না সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন না। হ্যারি দেখল একজন বৃদ্ধ উইজার্ড একা বসে আছেন। তার মেঘের মতো সাদা চুলের কারণে মনে হচ্ছে যেন তিনি বহুদিনের পুরনো বাতিল ঘড়ি। মাথায় পোকামাকড় আটকে দেয়া টুপি। তাকে খুব অস্পষ্টভাবে পরিচিত মনে হচ্ছে। মাথাটাকে একটু ঝেরে ফেলতেই হ্যারি হঠাৎ অনুধাবন করতে পারল, ইনি হলেন এলফিয়াস ডোজ। তিনি ফিনিক্সের সদস্য এবং ডাম্বলডোরের মৃত্যুর শোক সংবাদের লেখক।

হ্যারি তার কাছে গেল।

আমি কী বসতে পারি?

 অবশ্যই, অবশ্যই, ডোজ বললেন। তার কণ্ঠ বেশ খসখসে।

হ্যারি তার দিকে ঝুকল।

মি. ডোজ, আমি হ্যারি পটার।

ডোজ একটি নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

মাই ডিয়ার বয়, আর্থার আমাকে বলেছে তুমি এখানে আছ…. ছদ্মবেশে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, খুবই সম্মান বোধ করছি!

আনন্দে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ডোজ এক গ্লাস শ্যাম্পেন ঢেলে হ্যারির দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

আমি তোমাকে চিঠি লেখার কথা চিন্তা করেছিলাম, তিনি ফিসফিস করে বললেন। ডাম্বলডোরের মৃত্যুর পর….এই আঘাত…..তোমার জন্য, আমি নিশ্চিত…

ডোজের ছোট ছোট চোখ আকস্মিক জলে ভরে উঠল।

আমি দেখেছি ডেইলি ফেটে আপনি ডাম্বলডোরের স্মরণে এক সুন্দর লেখা লিখেছিলেন, হ্যারি বলল। আমি ভাবতে পারিনি যে প্রফেসর ডাম্বলডোর সম্পর্কে আপনি এতোকিছু জানেন।

অন্য যে কারো মতে, ডোজ বললেন। একটি রুমাল দিয়ে আলতো করে চোখ মুছলেন। অবশ্যই আমি তাকে দীর্ঘতম সময় ধরে জানতাম। তবে যদি তুমি আবারফোর্থ-এর কথা না ধর–অবশ্য জনগণ কখনো আবারফোর্থ-এর কথা মনে করেনি।

ডেইলি প্রফেটের আলোচনায়… আমি জানি না আপনি দেখেছেন কি-না, মি. ডোজ..?

ওহ, প্লিজ আমাকে এলফিয়াস ডাকো ডিয়ার বয়।

এলফিয়াস, আমি জানি না ডাম্বলডোরের ব্যাপারে রিটা স্কিটারের দেওয়া সাক্ষাতকারটি দেখেছেন কি না।

ডোজের মুখটি রাগে রক্তিম হয়ে উঠল।

ওহ, হ্যারি, আমি সেটা দেখেছি। ওই মহিলা–তাকে আসলে শকুনী ডাকাই ভালো। তার সঙ্গে কথা বলাটাই আমার কাছে বিরক্তিকর। আমার বলতে লজ্জা করে যে আমি আসলে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। তাকে বলেছি নাক গলানো মাছ। যার ফলে, তুমি হয়তো দেখেছ, সে আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছে।

দেখুন, ওই ইন্টারভিউতে, হ্যারি বলল। রিটা স্কিটার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অল্প বয়সে ডাম্বলডোর ডার্ক আর্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এমন কথা কখনো বিশ্বাস করো না! সঙ্গে সঙ্গে ডোজ বললেন। একটা কথাও না হ্যারি! ডাম্বলডোর সম্পর্কে তোমার সুন্দর স্মৃতিগুলোকে ফিকে হতে দিও না!

 হ্যারি ডোজের আন্তরিক, ব্যথিত মুখটির দিকে তাকালো। তাঁর কথায় পরিপূর্ণ আস্বস্ত হতে পারল না, বরং হতাশা বোধ করল এত হালকাভাবে বিষয়টি নেওয়ায়। ডোজ কি সত্যিই এমন করে চিন্তা করছেন যে এত সহজভাবে হ্যারি তার কথাগুলো বিশ্বাস করবে? ডোজ কি বুঝতে পারছেন না যে হ্যারির ডাম্বলডোর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, তার সব কিছু জানা প্রয়োজন?

হয়তো ডোজ হ্যারির অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরেছেন। তাই তাকে উদ্বিগ্ন দেখালো এবং দ্রুত বললেন, হ্যারি, রিটা স্কিটার একজন ভয়ানক-

কিন্তু তার কথাগুলো বাধাগ্রস্ত হলো একটি তীক্ষ্ণ হাসির কারণে।

 রিটা স্কিটার? ওহ, আমি তাকে খুব পছন্দ করি। তার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ি।

হ্যারি এবং ডোজ মুখ তুলে দেখল আন্টি মুরিয়েল দাঁড়িয়ে আছেন। তার হ্যাটের পালকগুলো নাচছে এবং তিনি হাতে শ্যাম্পেনের একটি মগ ধরে আছেন। তিনি ডাম্বলডোরকে নিয়ে একটি বই লিখেছেন, জানো!

হ্যালো মুরিয়েল, ডোজ বললেন। হ্যাঁ, আমরা তাই নিয়েই আলোচনা করছিলাম-

তুমি এখানে! তোমার চেয়ারটা আমাকে দাও, এখন আমার একশ সাত বছর চলছে!

একজন লাল মাথা মি.উইসলির জ্ঞাতি ভাই নিজের চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তাকে সতর্ক দেখা গেল। আন্টি মুরিয়েল অবিশ্বাস্য শক্তিতে সেটি ঘুরিয়ে নিলেন এবং হ্যারি ও ডোজের মাঝখানে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লেন।

হ্যালো, আবার ব্যারি না কি যেন তোমার নাম, তিনি হ্যারিকে বললেন। এখন বলো, তোমরা রিটা স্কিটার সম্পর্কে কি বলছিলে এলফিয়াস? তুমি জানো

সে ডাম্বলডোরের একটি জীবনী লিখেছে? এটা পড়তে দেরি করা যাবে না, ফরিশ এন্ড ব্লটকে এক কপির জন্য অর্ডার দিতে হবে।

ডোজকে কঠিন এবং ক্রুদ্ধ দেখা গেল। কিন্তু আন্টি মুরিয়েল তার মগের শ্যাম্পেনটুকু মুখে দিলেন। পাশ দিয়ে একজন ওয়েটার যাওয়ার সময় তার হাড্ডিসার হাত দিয়ে আরেকটি ভরা গ্লাস পাল্টে নিলেন। তিনি আবার মুখ ভরে, শ্যাম্পেন নিয়ে গিললেন এবং ঢেকুর তুললেন। বললেন, ভরা পেটের এক জোড়া ব্যাঙের মতো তাকিয়ে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি এতটা সম্মানিত হওয়ার আগে অ্যালবাসকে নিয়ে কিছু বদনাম চালু ছিল!

ভুল তথ্য দ্বারা তাকে বিচার, ডোজ বললেন। তিনি আবার লাল হয়ে গেছেন।

তুমি সেটা বলতে পার এলফিয়াস, তীক্ষ্ণভাবে আন্টি মুরিয়েল বললেন। আমি লক্ষ্য করেছি তোমার লেখা মৃত্যু সংবাদে তুমি কতটা সুক্ষ্মভাবে সবকিছু লুকিয়ে গেছ।

আপনি এভাবে চিন্তা করেন দেখে আমি দুঃখিত, ডোজ আরো ভাবে বলল। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আমি সেটা অন্তর দিয়েই লিখেছি।

ওহ, আমরা সবাই জানি তুমি ডাম্বলডোরকে পূজা করতে; আমি বলতে পারি তুমি এখনো তাকে একজন সাধু মনে কর, যদিও এটা প্রকাশ হয়ে গেছে যে সে তার স্কুইব বোনকে লুকিয়ে রেখেছে….

মুরিয়েল! ডোজ চিৎকার করে উঠলেন।

অলক্ষ্যে একফোঁটা বরফ ঠাণ্ডা শ্যাম্পেন এসে হ্যারির বুকে ছিটকে পড়ল।

তুমি কী বলছ! ডোজ মুরিয়েলকে জিজ্ঞেস করলেন। কে বলেছে তার বোন। স্কুইব ছিলেন? আমি তো জানি তিনি অসুস্থ ছিলেন?

তাহলে ভুল জানতে। তুমি জানোনা ব্যারি! আন্টি মুরিয়েল বললেন। যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তা নিয়ে তাকে আনন্দিত মনে হলো। যা হোক, তুমি এ ব্যাপারে কীভাবে সব কিছু জানার কথা আশা কর? এসব ঘটেছে বহু বহু বছর আগে। তুমি তখনকার কথা চিন্তাও করতে পারবে না মাই ডিয়ার। এবং আরো বড় সত্য হলো আমাদের যারা জীবিত ছিল তারাও জানতে পারেনি প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল। সে কারণেই স্কিটার যা আবিষ্কার করেছেন তা জানার এত আগ্রহ। ডাম্বলডোর তার বোনকে দীর্ঘদিন ধরে গোপন করে রেখেছিলেন।

অসত্য!, ডোজ বললেন। পুরোপুরি অসত্য!

তিনি কখনোই আমাকে বলেননি যে তার বোন স্কুইব, হ্যারি কোনো কিছু না ভেবেই উত্তেজিতভাবে বলল।

তিনি তোমাকে এসব কথা বলতে যাবেন কেন? মুরিয়েল তীব্র কণ্ঠে বললেন। তিনি সিটে বসে একটু একটু দুলছেন এবং বিস্মিত হয়ে হ্যারির দিকে ভালকরে তাকালেন।

অ্যালবাস যে কারণে অরিয়ানার ব্যাপারে কথা বলেননি, এলফিয়াস বলতে শুরু করলেন। অন্তত আমার এভাবেই চিন্তা করা উচিত, তার বোনের মৃত্যুতে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন-

তাকে কেন কেউ কখনো দেখেনি, এলফিয়াস? মুরিয়েল উচ্চস্বরে বললেন। বাড়ির বাইরে কফিন বয়ে কবর দেয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের অনেকেই, অর্ধেক পরিমাণ লোকও তার অস্তিত্বের কথা জানত না। অরিয়ানা যখন বছরের পর বছর সেলারে তালাবদ্ধ ছিল তখন কোথায় ছিলেন অ্যালবাস? হগোয়ার্টের একজন মেধাবী হয়েও তিনি চিন্তা করেননি তার নিজের বাড়িতে কী হচ্ছে!

আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, সেলারে তালাবদ্ধ? হ্যারি জানতে চাইল। এই বিষয়টি কী?

ডোজকে বিরক্ত মনে হলো। আন্টি মুরিয়েল আবার উঁচুস্বরে শুরু করলেন এবং হ্যারির কথার উত্তর দিলেন।

ডাম্বলডোরের মা ছিলেন একজন ভয়ানক মহিলা, শুধু ভয়ানক বললে কম বলা হবে। মাগল ঘরে জন্ম, কিন্তু আমি শুনেছি যে তিনি নিজে অন্য রকম ভাব দেখাতেন

তিনি কখনোই অমন কোনো ভাব ধরেননি! কেন্দ্রা একজন চমৎকার মহিলা ছিলেন, শান্তকণ্ঠে ডোজ ভারাক্রান্ত মনে বললেন। কিন্তু আন্টি মুরিয়েল তার কথা কানে তুললেন না।

অত্যন্ত গর্বিত এবং দাম্ভিক প্রকৃতির। এমন একজন মানুষের একজন স্কুইব জন্ম দেয়ার জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত ছিল।

অরিয়ানা স্কুইব ছিল না! হিসহিস করে ডোজ বললেন।

তুমি কি তাই মনে কর এলফিয়াস, তাহলে বলো–ব্যখ্যা দাও, কেন সে তাহলে হগোয়ার্টে কখনো আসেনি! আন্টি মুরিয়েল বললেন। তিনি হ্যারির দিকে ফিরলেন। আমাদের সময়ে স্কুইবরা ছিল সাধারণত নীরব প্রকৃতির। তারপরও একটি ছোট মেয়েকে প্রকারান্তরে কারাগারে রাখা এবং এমন ব্যবস্থা করা যেন তার কোনো অস্তিত্ব নেই

আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলছি, প্রকৃতপক্ষে এ রকম কিছু ঘটেনি! ডোজ বললেন। কিন্তু আন্টি মুরিয়েল তার কথা ধর্তব্যে না এনে হ্যারির দিকে তাকিয়ে কথা বলে যেতে থাকলেন।

স্কুইবদের সাধারণত মাগল স্কুলে পাঠানো হতো, এবং মাগল কমিউনিটিকে সুসংহত করতে উদ্বুদ্ধ করা হতো…. উইজার্ড জগতে একটু স্থান করে নিতে পারলেই মাগলরা খুশি। সেখানে ওরা সবসময় দ্বিতীয় শ্রেণীর। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া কেন্দ্রা তার মেয়েকে মাগল স্কুলে দেওয়ার কথা নয়।

অরিয়ানা ছিলেন খুবই নাজুক! ডোজ হতাশ হয়ে বললেন। তার শরীর এত খারাপ ছিল যে তিনি স্বাভাবিক, চলতে-ফিরতে অক্ষম ছিলেন-।

বলো কি, তিনি বাড়ি থেকে বের হতে অক্ষম ছিলেন? খ্যাকখ্যাক করে মুরিয়েল বললেন। তারপরও তাকে কেন সেন্ট মুঙ্গোতে নেয়া হয়নি চিকিৎসা করতে, বা তাকে সারিয়ে তোলার জন্য কাউকে ডাকা হয়নি!

প্রকৃতপক্ষে মুরিয়েল, আপনি কী করে জানবেন যে-

তোমাকে একটা কথা বলি এলফিয়াস, আমার চাচাতো ভাই ল্যানসেলট তখন সেন্ট মুঙ্গোর একজন হিলার ছিল। সে আমাদের স্পষ্ট করেই জানিয়েছে যে অরিয়ানাকে কখনোই সেখানে নেওয়া হয়নি। ল্যানসেলটের ধারণা অরিয়ানার বিষয়টা সন্দেহজনক।

ডোজকে দেখে মনে হল কেঁদে ফেলার উপক্রম। আন্টি মুরিয়েলকে মনে হলো যেন খুবই উপভোগ করছেন এসব কথা বলে। তিনি আরো শ্যাম্পেইনের জন্য আঙুল নাড়লেন। অভিব্যক্তিহীন হ্যারি চিন্তা করল ডারসলি পরিবার তাকে একবার। কীভাবে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। তাকে সকলের চোখের আড়াল করে রেখেছিল। শুধুমাত্র উইজার্ড হওয়ার অপরাধে। ডাম্বলডোরের বোনের কি ঠিক উল্টো কারণে একই রকম ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে; যাদু না জানার কারণে তালাবদ্ধ? এবং সত্যিই কি ডাম্বলডোর তাকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে হগোয়ার্টে চলে যেতেন, নিজেকে মেধাবী এবং গুণী হিসাবে প্রমাণ করতে?

এখন কথা হল, যদি কেন্দ্রা আগে না মারা যেতেন, মুরিয়েল আবার শুরু করলেন। আমি বলতাম যে তিনিই অরিয়ানাকে শেষ করেছেন।

কী করে বলেন এসব কথা, মুরিয়েল? ডোজ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন। একজন মা তার নিজের মেয়েকে শেষ করবেন? চিন্তা করে দেখুন আপনি কী বলছেন!

যদি একজন মা তার মেয়েকে বছরের পর বছর আটকে রাখতে পারেন, তাহলে একে কী বলব? মুরিয়েল ঝাঁকিয়ে বললেন। কিন্তু আমি বলছি, এটা সঠিক অর্থে হয়তো নয়। কারণ কেন্দ্রাই অরিয়ানার আগে মারা গেছেন—যে ব্যাপারটাতে কেউ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তা হলো, কী ভাবে

ওহ, কোনো সন্দেহ নেই যে অরিয়ানাই তাকে হত্যা করেছে, প্রতিবাদের সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে ডোজ বললেন। কেন নয়?

হ্যাঁ, অরিয়ানা হয়তো মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে কেন্দ্রাকে হত্যা করেছে। আন্টি মুরিয়েল গভীর চিন্তার সঙ্গে বললেন তুমি যেভাবে খুশি মাথা নাড়তে পার এলফিয়াস! তুমি তো অরিয়ানার শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে ছিলে তাই না?

হ্যাঁ, আমি ছিলাম, কম্পিত ঠোঁটে ডোজ বললেন। এবং এর চেয়ে বেদনাদায়ক কোনো শেষকৃত্যানুষ্ঠান আমি স্মরণ করতে পারি না। অ্যালবাসের হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল

তার হৃদয় একমাত্র বিষয় ছিল না। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সার্ভিসের অর্ধেক পথে আবারফোর্থ অ্যালবাসের নাক ভেঙে দিয়েছিল না?

আগে যদি ডোজকে ভয়ানক ক্রুদ্ধ বলে মনে হয়ে থাকে তাহলে সেটা এখন যেমন দেখা যাচ্ছে তার তুলনায় কিছুই না। মুরিয়েল মনে হয় তাকে ছুরি মেরেছেন। তিনি আরো এক ঢোক শ্যাম্পেইন মুখে নিলেন। তার গাল বেয়ে খানিকটা গড়িয়ে পড়ল। উচ্চস্বরে কথা বললেন

আপনি কী করে- তারঃস্বরে ডোজ বললেন।

আমার মা ছিলেন বৃদ্ধা বাথিলডা বাগশটের সঙ্গে অন্তরঙ্গ। আন্টি মুরিয়েল পরিতৃপ্তির সঙ্গে বললেন। বাথিলডা আমার মায়ের কাছে সব বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং আমি দরোজায় দাঁড়িয়ে শুনেছি। বাথিলডা যেভাবে বর্ণনা করেছেন কফিনের পাশে শোরগোল, আবারফোর্থ হৈচৈ করে বলছেন যে অরিয়ানার মৃত্যুর জন্য অ্যালবাসই দায়ী এবং এ কথা বলেই সে তার মুখে ঘুষি মারে। বাথিলডার কথা অনুসারে, অ্যালবাস এমনকি আত্মরক্ষারও চেষ্টা করেননি। এবং এটি একটি বিরল ঘটনা, আবারফোর্থের সঙ্গে মারামারি হলে দু-হাত বাঁধা অবস্থায়ও অ্যালবাস। তাকে ধ্বংস করে দিতে পারত।

মুরিয়েল আরো বড় করে শ্যাম্পেইন মুখে নিয়ে ঢোক গিললেন। পুরনো দিনের এসব কেলেঙ্কারির কথায় তিনি যতই মজা পাচ্ছেন, ডোজ ততই শঙ্কিত হচ্ছেন। হ্যারি বুঝতে পারছে না কোনটা সে বিশ্বাস করবে। সে তো শুধু সত্যটা জানতে চায়। কিন্তু ডোজ নীরব এবং যেটুকু বললেন, তাও দুর্বলভাবে ঘ্যানর গ্যানর করে যে অরিয়ানা অসুস্থ ছিলেন। হ্যারি এ কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। যে ডাম্বলডোরের বাড়িতে এমন নিষ্ঠুর একটি ঘটনা ঘটলে তিনি তা রোধ করবেন না। এমনটা হতে পারে না। তারপরও এর মধ্যে কিছু একটা রয়েছে।

আর একটি বিষয়, মুরিয়েল খুকখুক করে কাশলেন। তার হাতের শ্যাম্পেইনের গ্লাসটি নামিয়ে রাখলেন। আমার ধারণা বাধিলডা কথাগুলো রিটা স্কিটারের কাছে ঢেলে দিয়েছে। স্কিটারের ইন্টারভিউর সবগুলো ইঙ্গিতই ডাম্বলডোরের গুরুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সুত্রের। কে জানে হয়তো অরিয়ানার সেই ঘটনার সময় বাথিলডা সব কিছুই জানত, সেটাই যুক্তিযুক্ত!

বাথিলডা কখনোই রিটা স্কিটারের সঙ্গে কথা বলবে না! ফিসফিস করে ডোজ বললেন।

বাথিলডা ব্যাগশট? হ্যারি বলল! দ্য হিস্ট্রি অব ম্যাজিকের লেখক, তার কথা বলছেন?

হ্যারির পাঠ্য বইয়ের ওপর নামটি ছাপার অক্ষরে ছিল। যদিও নামটি বিশেষ কোনো নাম হিসাবে মনোযোগ দিয়ে সে পড়েনি।

হ্যাঁ, ডোজ বললেন। যেন ডুবে যেতে থাকা একজন লোক হাতের কাছে লাইফবোট পেয়েছেন। তিনি একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং ডাম্বলডোরের পুরনো বন্ধু ছিলেন।

শুনেছি এখন অথর্ব হয়ে গেছেন। আন্টি মুরিয়েল আনন্দের সঙ্গে বললেন।

যদি সেটাই হয়ে থাকে তাহলে তার কাছ থেকে সুযোগ নেওয়াটা স্কিটারের জন্য অসম্মানজনক, ডোজ বললেন। এবং বাধিলডা যদি কিছু বলেও থাকেন সে কথার ওপর ভরসা রাখা যায় না।

ওহ, অতীতের কথা স্মৃতিতে নিয়ে আসার কিছু কায়দা আছে, এবং আমি নিশ্চিত যে রিটা স্কিটার সেগুলো জানেন। মুরিয়েল বললেন। এবং এমনকি বাথিলডার যদি পুরো মতিভ্রমও হয়ে থাকে, আমি নিশ্চিত তার কাছে তখনো পুরানো ছবি ছিল, হয়তো কিছু চিঠিও। তিনি ডাম্বলডোর পরিবারকে বেশ কয়েক বছর ধরে জানতেন…. আমার যতদূর মনে পড়ে গোড্রিচ হলোতে তাদের একত্রে মূল্যবান সময় কেটেছে।

হ্যারি বাটার বিয়ার থেকে এক চুমুক পান করতে যাচ্ছিল, কিন্তু স্থির হয়ে গেল। হ্যারি হাঁচি দিয়ে উঠতেই ডোজ তার পিঠের উপর ধুপ করে আঘাত করলেন। তীক্ষ্ণ চোখে ঘুরিয়েলের দিকে তাকালেন। এক সময় গলার স্বর নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিকভাবে বললেন, বাথিলডা ব্যাগশট গোড্রিচ হলোতে বাস করতেন?

ওহ্, হ্যাঁ, তিনি সেখানে সারাজীবন কাটিয়েছেন! পার্সিভালের জেল হওয়ার পর ডাম্বলডোর পরিবার সেখানে চলে আসেন। এবং তিনি ছিলেন ওদের প্রতিবেশী।

ডাম্বলডোর পরিবার গোড্রিচ হলোতে বাস করতেন?

হ্যাঁ বেরি, সে কথাটাই আমি বলছিলাম। মুরিয়েল আগ্রহের সঙ্গে বললেন।

হ্যারির সবকিছু ফাঁকা, শূন্য মনে হলো। অবিশ্বাস্য যে ছয় বছরের মধ্যে একবারও ডাম্বলডোর হ্যারিকে বলেননি যে তারা দুজনই গোড্রিচ হলোতে বাস করেছেন এবং তারা দুজনই নিকটজনকে সেখানে হারিয়েছেন। কেন বলেননি?

হ্যারির মা-বাবা লিলি এবং জেমসকেও কি ডাম্বলডোরের মা এবং বোনের কাছাকাছি কবর দেয়া হয়েছে? ডাম্বলডোর কি তাদের কবর দেখতে গিয়েছিলেন? লিলি এবং জেমসের কবরের পাশ দিয়ে হেঁটেছেন? এবং তিনি কখনো হ্যারিকে একবারের জন্যও বলেননি…. কখনো বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি…….

বিষয়টা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হ্যারি নিজেই বুঝতে পারছে না। কিন্তু তারপরও তার মনে হচ্ছে, তারা যে সেখানে ছিল সে বিষয়টি হ্যারিকে না বলাটা মিথ্যারই নামান্তর। সে সোজা সামনের দিকে তাকাল। ওর চারপাশে কী হচ্ছে সেদিকে খুব একটা লক্ষ্য নেই। মাথা তার ঝিম ঝিম করছে। হারমিয়ন তার পাশে একটি চেয়ার টেনে বসার আগে হ্যারি টেরও পায়নি যে হারমিয়ন ওই ভিড়ের ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছে।

আমি আর নাচতে পারছি না, সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল। পা থেকে জুতা খুলে সে পায়ের তলা ঘষতে থাকল। রন আরো বাটার বিয়ার আনতে গেছে। দেখলাম ভিক্টর লুনার বাবার কাছ থেকে দ্রুত সরে গেল। বিষয়টা একটু অস্বাভাবিক মনে হলো। মনে হলো ওরা তর্ক করছিল- হারমিয়ন হঠাৎ হ্যারির দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। হ্যারি, কি হয়েছে তোমার, ভালো আছো তো?

হ্যারি বুঝতে পারল না কীভাবে কথাটা শুরু করবে, যদিও সেটা তখনকার জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। ঠিক তখনই উপরের আচ্ছাদন থেকে বড় রুপালি রঙের কিছু একটা ড্যান্স ফ্লোরে এসে পড়ল। ড্যান্স ফ্লোরে নাচতে থাকা বিস্মিত এবং হতবাক লোকদের মাঝে উজ্জ্বল, চোখ ধাঁধানো বিড়াল এসে নামল। বিড়ালটি মাথা উঁচু করল। উপস্থিত সকলে স্থির হয়ে গেছে। প্যাট্রোনাসের মুখ বিস্তৃত হলো এবং তার ভেতর থেকে কিংসলে শ্যাকেলবোল্টের গভীর, দরাজ গলায় ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল।

মন্ত্রণালয়ের পতন হয়েছে। স্ক্রিমগিয়র নিহত হয়েছেন। ওরা আসছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *