• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

২১. কোনো পুরুষের সঙ্গেই বিশেষ ঘনিষ্ট

লাইব্রেরি » নিমাই ভট্টাচার্য » প্রিয়বরেষু » ২১. কোনো পুরুষের সঙ্গেই বিশেষ ঘনিষ্ট

সত্যি বলছি, আমি কোনো পুরুষের সঙ্গেই বিশেষ ঘনিষ্ট হতে চাই না কিন্তু এমনই অদৃষ্ট যে বার বার বহু পুরুষেরই সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হতে হয়েছে আমাকে। তোমার মতো দু চারজনের কথা আলাদা। তোমার মতো একজনকে কাছে পেলে তো আমি ধন্য হয়ে যেতাম কিন্তু তা কী আমার কপালে সম্ভব?

যাই হোক নবেন্দুবাবু চলে যাবার পর সত্যি মন খারাপ হয়ে গেল। এই সংসারে শুধু পুরুষরাই মেয়েদের ক্ষতি করে না। মেয়েরাও বহু পুরুষের সর্বনাশ করে। নবেন্দুবাবুর প্রতি সমবেদনা অনুভব করলাম মনে মনে। শুক্রবার বিকেলবেলায় মনে হতো, আরো কটা দিন ওকে আটকে রাখলে বেশ ভালো হতো।

নবেন্দুবাবুর চিঠি এলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলাম। আবার ওর চিঠি এলো, আবার আমি জবাব দিলাম। প্রতি সপ্তাহে আমি ওর চিঠি পাই, আমি ওকে চিঠি দিই! এইভাবেই বেশ কটা মাস কেটে গেল।

সেদিন শনিবার। ঘুম ভেঙে গেলেও বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল। হ্যালো! নমস্কার! এক ভদ্রলোকের গলায় বাংলা শুনেই আমি চমকে উঠে বসলাম।

আমি প্রতি নমস্কার জানাবার আগেই উনি বললেন, আমি মিঃ ব্যানার্জি। একদিনের জন্য প্যারিস এসেছি; কালই নিউইয়র্ক চলে যাব… আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারছি না।

না, আপনি আমাকে চিনবেন না। নবেন্দুবাবু আমার দাদার বন্ধু। উনি আপনার জন্য একটা প্যাকেট পাঠিয়েছেন।…

কিন্তু উনি তো আমাকে কিছু জানাননি।

মনে হয় আমি হঠাৎ চলে এলাম বলে কিছু জানাবার সময় পাননি।

সেদিন আমার কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না। তাই একটু গল্প গুজব করার লোভে আমি নিজেই ওকে লাঞ্চে নেমন্তন্ন করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি একা একা আসতে পারবেন

তো? আপত্তি না থাকলে আমি আপনাকে নিয়ে আসতে পারি।

না, না, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই পৌঁছে যাব।

ঠিক সময়েই মিঃ ব্যানার্জি এলেন। সুদর্শন ও সুপুরুষ। বয়স আমারই মতো হবে। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স থেকে বি. এ. পাশ করার পর কলকাতা থেকে কনটেমপোরারি হিস্ট্রির এম. এ.। তারপর পরীক্ষা দিয়ে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে প্রবেশ করেছেন। সিঙ্গাপুর থেকে বদলি হয়ে নিউইয়র্কে আমাদের ইউ. এন. মিশনে যাচ্ছেন।

মিঃ ব্যানার্জি নবেন্দুবাবুর প্যাকেট দেবার পর কোটের পকেট থেকে একটা ক্যাসেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, আমার প্রিয় শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের গান আছে; শুনবেন।

নিশ্চয়ই শুনব। উনি আমারও প্রিয় শিল্পী।

উনি হেসে বললেন, আমি পঙ্কজ মল্লিক আর দেবব্রত বিশ্বাসের গানের ক্যাসেট ছাড়া আর কিছু কাউকে প্রেজেন্ট করি না।

তাই নাকি?

হ্যাঁ।

খুব ভালো।

লাঞ্চের আগে মিঃ ব্যানার্জিকে জিজ্ঞাসা করলাম, মে আই অফার ইউ এ ড্রিঙ্ক?

ধন্যবাদ! ড্রিঙ্কের কোনো প্রয়োজন নেই।

আপনি ড্রিঙ্ক করেন তো?

ডিপ্লোম্যাটিক পার্টিতে এক-আধ পেগ খেতেই হয়; তাছাড়া খাই না।

হঠাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, কেন?

আমার স্ত্রী ঋতু পছন্দ করে না। মিঃ ব্যানার্জি হেসে বললেন, ওর অমতে একদিন ড্রিঙ্ক করলে ও এক মাস আমাকে পাশে শুতে দেবে না।

ওর কথায় আমি হেসে উঠি।

আমার হাসি থামলে উনি বলেন, বিয়ের পর মেয়েদের জীবনে স্বামী ছাড়া আর কী আছে বলুন? আর সেই স্বামীই যদি তাকে দুঃখ দেয়, তাহলে সে বাঁচবে কেমন করে?

ওর কথায় আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। প্রথমে মনে মনে; তারপর বলেই ফেললাম, আপনার মতো পুরুষের সংখ্যা আরো কিছু বেশি হতো তাহলে এই পৃথিবীটা সত্যি অনেক সুন্দর, শান্তির হতো।

কথাবার্তা খাওয়া-দাওয়া করতে করতেই আবিষ্কার করলাম, আমরা দুজনে দুজনের বন্ধু। হয়ে গেছি।

জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতু কবে তোমার ওখানে যাবে?

মাস খানেকের মধ্যেই আসবে।

ঋতু যদি কদিন আমার এখানে না থেকে সোজা নিউইয়র্ক যায় তাহলে তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

ঋতু নিশ্চয়ই তোমার কাছে কদিন থাকবে কিন্তু তোমাকেও একটা কথা দিতে হবে।

তুমি কী ব্যবসাদার যে এক হাতে দেবে, আরেক হাতে নেবে?

তা নয় তবে…

আগে কথা দাও ঋতুও আসছে; তারপর তোমার কথা শুনছি।

নিশ্চয়ই ঋতু আসবে।

এবার বলল, তোমার কী দাবি?

তোমাকেও নিউইয়র্ক আসতে হবে।

সত্যি?

তবে কী তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি?

কথা দিচ্ছি, তোমরা নিউইয়র্ক থাকতে থাকতেই আমি একবার ঘুরে আসব।

.

ভাই রিপোর্টার, মানুষের জীবন পথ যে কখন কোথায় মোড় ঘুরবে, তা কেউ জানতে পারে না। নবেন্দুবাবুর পাঠানো একটা প্যাকেট দিতে এসে বাদল আমার বন্ধু হলো, ভাই হলো। নিউইয়র্ক যাবার পথে ঋতু এসেছিল। কথা ছিল, তিনদিন থাকবে কিন্তু সাতদিন পরে ওরলি এয়ারপোর্টে বলেছিল, এখন মনে হচ্ছে আরো কদিন থাকলেই ভালো হতো।

আমি একটু মন হাসি হেসে বললাম, আমার তো মনে হচ্ছে, তুমি না এলেই ভালো হতো।

ঋতু জোর করেই একটু হাসল। তারপর বিদায় নেবার ঠিক আগে দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে বললো, বেশি দেরি করো না; তাড়াতাড়ি এসো।

সত্যি বলছি ভাই, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমি আমেরিকা যাব। তুমি তো জানো লন্ডন-প্যারিসের রাস্তার মোড়ে মোড়ে সস্তায় আমেরিকা ঘুরে আসার বিজ্ঞাপন। আমি কোনোদিন ভুল করেও ওসব বিজ্ঞাপন দেখতাম না। প্রয়োজন মনে করিনি। মনে হতো আদার ব্যাপারির জাহাজের খবরের দরকার কী?

বাদল আর ঋতুর সঙ্গে আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হবার পর থেকে রাস্তাঘাটে পত্রপত্রিকায় শুধু ওই বিজ্ঞাপনগুলোই আমার চোখে পড়তে শুরু করল। তারপর ওদের দুজনের কয়েকটা চিঠি আসার পর আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সত্যি সত্যি ওরলি এয়ারপোর্ট থেকে এয়ার ফ্রান্সের প্লেনে নিউইয়র্ক রওনা হলাম।

বিধাতা পুরুষ সত্যি বিচিত্র। ডক্টর সরকারের চিঠি দিয়ে এলেন নবেন্দু; নবেন্দুবাবুর পাঠানো কিছু জিনিসপত্র দেবার জন্য এলো বাদল-মিঃ এস কে ব্যানার্জি আই-এফ-এস। রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দপ্তরে স্থায়ী ভারতীয় মিশনের সেকেন্ডে সেক্রেটারি। এলো ঋতু। জন এফ. কেনেডি এয়ারপোর্টে ওরা যেভাবে আমাকে অভ্যর্থনা করল, তাতে মনে হলো ওরা যেন কত কালের পরিচিত, কত আপন, কত ঘনিষ্ঠ।

সেই প্রথম দিন রাত্রেই ডিনার খেতে খেতে বাদল বললো, কবিতা, শনিবারই আমরা বেরিয়ে পড়ব।

কোথায়? কোথায় আবার? ঘুরতে।

না, না, আমি কোথাও যাচ্ছি না।

কেন?

আমি তো আমেরিকা দেখতে আসিনি; এসেছি তোমাদের দেখতে। কটা দিন তোমাদের সঙ্গে গল্পগুজব করেই বেশ কেটে যাবে।

বাদল আবার আমাকে প্রশ্ন করল, সত্যি কোথাও যেতে চাও না?

আমি হেসে বললাম, ছেলেবেলায় ভেবেছিলাম, ঢাকার সদর ঘাট আর রমনা দেখেই বেশ জীবনটা কেটে যাবে। যখন কলকাতায় এলাম, তখন মনে হয়েছিল, ওখানেই সারা জীবন থাকব।…

বাদল আমার মুখের কথা কেড়ে বললো, তারপর কলকাতা থেকে এলে লন্ডন, লন্ডন ছেড়ে এলে প্যারিস। তাই আর দেশ দেখার শখ নেই, তাই তো?

বললাম, জানি না, ভগবান আমাকে আরো কত ঘোরাবেন। তাই নিজের উদ্যোগে আর ঘুরতে চাই না। কটা দিন তোমাদের দুজনকে বিরক্ত করেই কাটিয়ে দিতে দাও।

ঋতু একটু চাপা হাসি হেসে বাদলকে বললো, ও কদিন আমাদের বিরক্ত করুক। তুমি আর আপত্তি করো না।

বাদল দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো, তবে তাই হোক।

জানো ভাই রিপোর্টার, বেশ কাটছিল দিনগুলো। গল্পগুজব, হাসি ঠাট্টা, মাঝ রাত্তিরে টাইমস স্কোয়ার-ব্রডওয়েতে ঘুরে বেড়িয়ে প্রথম সপ্তাহটা বেশ কাটল। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হলো নেমন্তন্নর পালা।

সেদিন পাকিস্তান মিশনের মিঃ আলমের বাড়িতে আমাদের ডিনারের নেমন্তন্ন। বাদল যখন সিঙ্গাপুরে, মিঃ আলমও তখন ওখানে ছিলেন। বাদলের মতো উনিও বিশুদ্ধ বাঙালি। ওদের বন্ধুত্বের আরো একটি কারণ ছিল। আলম সাহেবের মতো ঋতুদেরও দেশ ছিল বরিশালে। সুতরাং আলম সাহেব আর ওর স্ত্রী পারুল এসে আমাকে নেমন্তন্ন করলে আমি সানন্দে তা গ্রহণ করলাম।

ওই আলম সাহেবের ডিনারেই ইউনাইডেট নেশনস-এ কর্মরত কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে আলাপ হলো! তাদেরই একজন মিঃ মুখোপাধ্যায়। বয়স পঞ্চাশের ঘরে। রঙটা একটু ময়লা হলেও সুপুরুষ। চিরকুমার। উনি বলেন, স্কচ, হুইস্কির প্রেমে পড়ার পর জীবনের সব অভাব মিটে যায়। তাই আবার বিয়ে করে শুধু শুধু ঝামেলা বাড়াই কেন?

ঋতু আমার পাশে এসে হাসতে হাসতে ওকে দেখিয়ে বললো, জানো কবিতা, মুখোদার হাতের চিকেন কারি খেলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে।

আমি বললাম, তাই নাকি?

ঋতু বললো, শনিবার তো মুখোদার ওখানে যাচ্ছি। তখন দেখো।

শনিবার মিঃ মুখোপাধ্যায়ের আস্তানায় ডিনার খেতে গিয়েই কথায় কথায় হঠাৎ বাদল ওকে বলল, আচ্ছা মুখোদা, কবিতা তো ইউনেস্কোতে কাজ করছে; ওকে ইউ এন হেড কোয়ার্টাসে আনা যায় না?

মিঃ মুখোপাধ্যায় হাসতে হাসতে বললেন, স্কচ খেলে ও খাওয়ালে সব অসম্ভবই সম্ভব

ঋতু বললো, ক বোতল চাই?

মিঃ মুখোপাধ্যায় হেসে বললেন, আগে থেকে কী বলা যায়? আগে আমি খবর করি; তারপর তুমি আমার সেলার ভরে নিও।

আমি বললাম, না, না, আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি প্যারিসেই বেশ আছি।

বাদল আর ঋতু প্রায় একসঙ্গে বললো, তুমি চুপ করো।

জীবনে যা কোনোদিন ভাবিনি, আশা করিনি, তা আবার ঘটল। ওই বাদল আর ঋতুর আগ্রহে এবং মিঃ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে ছমাস পরে আমি প্যারিস ছেড়ে নিউইয়র্কে চলে এলাম।

.

তারপর?

কটা মাস সত্যি আনন্দে কাটালাম। কর্মক্ষেত্র ইউনাইটেড নেশনস্ হেড কোয়ার্টার্স। সারাটা দিন সারা পৃথিবীর সমস্ত দেশের মানুষের মিলন তীর্থে বেশ আনন্দে ও উত্তেজনার মধ্যে কেটে যায়। কখনও কাছ থেকে, কখনও দূর থেকে দেখি বিশ্বের বরেণ্য নেতাদের। চোখের সামনে ঘটতে দেখি এমন অনেক ঘটনা যা পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এর উপর আছে বাদল আর ঋতু।

সত্যি বলছি ভাই, নিউইয়র্কে আসার পর প্রথম কিছুকাল কি নিদারুণ আনন্দে দিন কাটিয়েছি তা তোমাকে লিখে বোঝাতে পারব না। ইতিমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই মিঃ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে। বন্ধুত্ব হয়েছে আরো কয়েকজনের সঙ্গে; আর আলাপ পরিচয় হয়েছে বহুজনের সঙ্গে।

তারপর হঠাৎ একদিন বাদল ফার্স্ট সেক্রেটারি হয়ে চলে গেল রাওয়ালপিণ্ডি। যে জন, এফ. কেনেডি এয়ারপোর্টে ওরা আমাকে অভ্যর্থনা করেছে, সেই এয়ারপোর্টেই আমি চোখের জলে বিদায় জানিয়ে এলাম।

এয়ারপোর্ট থেকে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কঁদছিলাম আর ভাবছিলাম, ভগবান কী আমাকে নিঃসঙ্গ না রাখলে শান্তি পান না। আরো কত কী ভাবছিলাম আর কাদছিলাম; কাদছিলাম আর ভাবছিলাম।

হঠাৎ মিঃ মুখোপাধ্যায় এসে হাজির।

অবাক হয়ে আমি বললাম, আপনি? এ সময়?

মিঃ মুখোপাধ্যায় একটু হেসে বললেন, আজ আপনার মনের অবস্থা চিন্তা করেই চলে এলাম।

ভালোই করেছেন।

কেন বলুন তো?

আজ একলা একলা থাকলে আমি পাগল হয়ে যেতাম।

উনি আর কোনো ভূমিকা না করেই বলেন, নাউ গেট আপ। চলুন বেরিয়ে পড়ি।

কোথায়?

আমার ওখানে।

আমি স্বেচ্ছায় সানন্দে ওর ওখানে চলে গেলাম। তারপর উনি আমাকে হুইস্কি অফার করতেই বললাম, আমি তো বিশেষ খাই না।

উনি বললেন, আজ আর আপত্তি করবেন না। দেখবেন, ভালোই লাগছে।

আমি একটু হাসি।

উনি গেলাস তুলে বললেন, ফর ইওর হ্যাপিনেস।

আমিও সঙ্গে সঙ্গে গেলাস তুলে বললাম, ফর ইওর হ্যাপিনেস অ্যাজ ওয়েল।

সত্যি বলছি ভাই, বেশ কেটে গেল সময়টা। দুতিন পেগ হুইস্কি খেলাম; ডিনারও খেলাম। মিঃ মুখোপাধ্যায়ই আমাকে আমার অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে দিলেন। উনি নীচে থেকেই বিদায় নিচ্ছিলেন কিন্তু আমিই ওকে যেতে দিলাম না। বললাম, না, না, মিঃ মুখোপাধ্যায়, তা হয় না। ইউ মাস্ট হ্যাভ এ ড্রিঙ্ক।

ড্রিঙ্ক!

ইয়েস। ওয়ান ফর দ্য রোড।

গাড়ি থেকে নামতে গিয়েই দুটো পা টলমল করে উঠল। মিঃ মুখোপাধ্যায় তাড়াতাড়ি আমার একটা হাত ধরতেই সামলে নিলাম। এলিভেটরে উপরে উঠে আমার অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার সময়ও উনি আমাকে আলতো করে ধরে নিয়ে গেলেন।

তারপর মিঃ মুখোপাধ্যায়কে ড্রিঙ্ক অফার করতেই উনি বললেন, আপনাকেও সঙ্গ দিতে হবে।

না, না, আমাকে আর অনুরোধ করবেন না। আর এক পেগ খেলেই আমি বেসামাল হয়ে পড়ব।

এখন আর ভয় কী? এখন তো নিজের অ্যাপার্টমেন্টে এসে গেছেন।

তা ঠিক কিন্তু…

কোনো কিন্তু নয়। আমি একা একা ড্রিঙ্ক করব না। জাস্ট এ পেগ ওনলি। আপনি শুয়ে পড়বেন; আমিও চলে যাব।

কী আর করব? এ পেগ খেতেই হলো। মিঃ মুখোপাধ্যায় কোনো অশালীন ব্যবহার করলেন। বিদায় নেবার পূর্ব মুহূর্তে শুধু আমার চিবুকে একটা চুমু খেলেন। আমি সকৃতজ্ঞ চিত্তে ওকে ধন্যবাদ জানালাম।

.

বাদল-ঋতু না থাকায় উনিই আমার একমাত্র বন্ধু হয়ে উঠলেন। দুজনেই ইউনাইটেড নেশনসএ কাজ করি। রোজ না হলেও প্রায়ই ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা হয়। একসঙ্গে কফি খাই, গল্পগুজব করি। ওর সাহায্যে আমার ছোটখাটো সমস্যার সমাধান হয়। উইক-এন্ডে উনি আমার অ্যাপার্টমেন্টে আসেন; খাওয়া-দাওয়া করেন। আমিও ওর ওখানে সারাদিন কাটিয়ে আসি।

বেশ কেটে গেল ছ সাত মাস। তারপর ওরই উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় আমি ইউ. এন. স্পেশ্যাল কমিটিতে আসি। মাইনেও বেড়ে গেল অনেক। সেই সঙ্গে সম্মান ও সুযোগ। বয়সের ব্যবধান ভুলে আমরা সত্যি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠলাম।

তারপরের ইতিহাস শুনতে চাও? হাজার হোক তুমি আমার আদরের ভাই; আমি তোমার দিদি। সব কথা বলতে পারব না। বোধহয় প্রয়োজনও নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, মিঃ মুখোপাধ্যায় তিলে তিলে আমাকে গ্রাস করলেন। উনি ওর কামনা-বাসনার আগুনে আমাকে জ্বালিয়ে প্রায় সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিয়ে আমার জীবন থেকে হঠাৎ বিদায় নিলেন। আমি রাগে-দুঃখে প্রায় হতবাক হয়ে গেলাম। আত্মহত্যা করতে গিয়েও পিছিয়ে এলাম। মনে হলো, ওই একটা পশুর উপর অভিমান করে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার কোনো যুক্তি নেই, কোনো সার্থকতা নেই।

পুরুষদের উপর তীব্র বিদ্বেষ আর ঘৃণা নিয়ে আমি আবার নতুন করে বাঁচতে চাইলাম। কিন্তু ভাই, এই পুরুষশাসিত সমাজে তো বেশি দিন পুরুষদের থেকে দূরে থাকা যায় না। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, পুরুষদের কাছে মেয়েদের যেতেই হবে। না যেয়ে কোনো উপায় নেই। আমার মতো নিঃসঙ্গ ও চাকুরিজীবি মেয়ের পক্ষে তো পুরুষদের এড়িয়ে চলা নিতান্তই অসম্ভব।

ভাই রিপোর্টার, তোমার কাছে মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করব, আমার জীবনে আরো অনেকে এসেছেন। দু, একজন প্রথিতযশা ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কুটনীতিবিদ আমার রূপ যৌবনের কাছে এমন নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন যে ভাবতে গেলেও আমি নিজেই বিস্মিত হয়ে উঠি। শুধু তোমার কাছেই বলেছি, স্বীকার করছি, কখনও কখনও আমার দেহ ও মন এমন বিদ্রোহ করে উঠেছে যে আমি স্বেচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি সদ্য পরিচিত বন্ধুদের কাছে।

.

একটা পুরনো কথা মনে পড়ছে। অনেকদিন আগে মার এক দূর সম্পর্কের মাসি আমাকে আপাদ-মস্তক দেখার পর বলেছিলেন, হারামজাদী, তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।

আমি সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন দিদি, তুমি একথা বলছ?

ওরে হারামজাদী, তোর যা রূপ, তোর যা শরীর, তাতে কী পুরুষরা তোকে শান্তিতে থাকতে দেবে?

বাজে কথা বলল না।

ওরে হতাভাগী, মেয়েদের এমন সর্বনাশা রূপ, এমন ডাগর-ডোগর দেহ থাকা যে কী অভিশাপ, তা পরে বুঝবি।

আমার সেই দিদিমার কথাটা আমি সেদিন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীকালে আমি মর্মে মর্মে বুঝেছি, মনে মনে স্বীকার করেছি, মেয়েদের রূপ-সৌন্দর্য সত্যি মহা অভিশাপ।

সেই বেশ কবছর আগে কাকাবাবু থেকে শুরু করে অনেক পুরুষের সঙ্গেই অনেক খেলাই খেলতে হলো। অনেকে আমাকে শিকার করলেন; আমিও কাউকে কাউকে শিকার করে মনের জ্বালা, দেহের দাবি মিটিয়েছি। সত্যি বলছি ভাই, আর ভালো লাগছে না। এখন আমার দেহে মনে নতুন জ্বালা, নতুন স্বপ্ন, নতুন দাবি; এখন আর আমার এই দেহ কোনো কামনা-জর্জরিত। হিংস্র পশুর কাছে বিলিয়ে দিতে পারি না, পারব না কিন্তু এই এত বড় পৃথিবীতে এমন একজন পুরুষও কী নেই যে আমাকে আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে নিয়ে আমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিতে পারে? আমাকে সমস্ত অকল্যাণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে? রাতের অন্ধকারে আমাকে তার বলিষ্ঠ দুটো হাতের মধ্যে, বুকের কাছে নিশ্চিন্ত আশ্রয় দিতে পারে?

তুমিই বলো ভাই, এই পৃথিবীতে কী এমন একজনও উদার মহৎ পুরুষ নেই যিনি আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারেন? আমাকে অন্তত একটা সন্তানের জননী হবার গৌরব দান করতে পারেন?

মনে হয়, এই মাটির পৃথিবীতে এমন উদার, মহৎ পুরুষ নেই। এই সংসারের চরম ব্যাভিচারি পুরুষও সতী-সাবিত্রীর মতো স্ত্রী আশা করেন। তাই তো আমি জানি, আমার সিথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেবেন না কেউ; আমাকে উপভোগ করার মতো পুরুষের অভাব নেই কিন্তু আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, সন্তানের মা হবার গৌরব দান করতে সবারই কুণ্ঠা, সবারই দ্বিধা।

মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানো? মনে হয়, চিৎকার করে সবকিছু বলে দিই। যারা আমাকে। উপভোগ করার পরও সুখে শান্তিতে সংসার করছেন, তাঁদের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দিই। যেসব গুণী, জ্ঞানী, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা আমার কাছে এসে বার বার ভিক্ষাপ্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের। মুখোশ খুলে দিই। একবার তো একজন শ্রদ্ধেয় ভারতীয় নেতা ভোরবেলায় আমার বেডরুম স্নিপার পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে চড়ে দেশে রওনা হয়েছিলেন। তোমাকে কী বলেছি, আমার কাছে বহু গুণী-জ্ঞানী ও যশস্বী নেতার অসংখ্য অশ্লীল প্রেম-পত্র আছে?

এসব কথা বাইরে কাউকে বলিনি, বলব না। বলে কী লাভ? আমি সুখী হলাম না বলে পাঁচজন সুখী মেয়ের সংসারে আগুন লাগাব কেন? নিজের বুকের জ্বালা নিজের বুকের মধ্যেই চেপে রেখে দিনগুলো কাটিয়ে দিচ্ছি।

ভাই রিপোর্টার, তোমার ওই তন্বী শ্যামা শিখরদশনার সন্তান হলে তারা যেন আমার স্তনপান করে আমাকে মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ দেয়; ওরা যেন আমাকে এই গৌরব থেকে বঞ্চিত না করে।

তোমরা দুজনে আমার প্রাণভরা ভালোবাসা নিও।

-তোমাদের দিদি

Category: প্রিয়বরেষু
পূর্ববর্তী:
« ২০. নবেন্দুবাবু প্যারিস থেকে প্রায়

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑