০১. ১৮৮৪-র ১৯ এপ্রিল

১৮৮৪-র ১৯ এপ্রিল। আত্মহত্যার চেষ্টায় আফিম খেলেন কাদম্বরীদেবী—জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী, রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠান। মারা গেলেন দু’দিন পরে, ২১ এপ্রিল।

এই দুদিন মৃত্যুর সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ করেছিলেন কাদম্বরীদেবী? তাঁর শেষ চিকিৎসার জন্যে প্রথম দিনেই এসেছিলেন সাহেব ডাক্তার ডি. বি. স্মিথ। ৪০০ টাকা খরচ করে আনা হয়েছিল তাঁকে, চেকে টাকা দেওয়া হল। এরপর ওষুধ এল ২৫ টাকার। বাড়িতে তো আর সাহেব ডাক্তারকে। রাখা যায় না। কিন্তু কাদম্বরীদেবীর অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। তাঁর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। আরও গভীর হচ্ছে তাঁর আচ্ছন্নতা। বিশেষ ভয় রাত্রের দিকে। তখন হাতের কাছে ডাক্তার পাওয়া সহজ নয়। তাই সাহেব ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চললেও রাত্রে বাড়িতে রাখা হল একজোড়া বাঙালি ডাক্তার–নীলমাধব হালদার, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তেতলার ঘরে রাখা হয়েছে। কাদম্বরীদেবীকে। এ-ঘরে কেউ থাকেন না। সুতরাং ঘরে আলো নেই। সেই ঘরের জন্যে দেড়টাকা খরচ করে বাতি এল। বাতির আলোয় নিঃসাড় পড়ে আছে কাদম্বরী, তাঁর শরীর থেকে প্রাণের আলো ক্রমে চলে যাচ্ছে। অবস্থা খারাপ হতে এলেন আরও একজন দামি ডাক্তার ভগবৎচন্দ্র রুদ্র। ইনিও থাকলেন রাত্রিবেলা। এতগুলি ডাক্তারের জন্যে দুবেলার মহাভোজ আসতে লাগল উইলসন হোটেল থেকে। কিন্তু এদের সমবেত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২১ এপ্রিল সোমবার সকালে মারা গেলেন কাদম্বরী দেবী। জ্যোতিরিন্দ্র-রবীন্দ্রের প্রবল পিতৃদেব গৃহকর্তা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কঠোর আদেশে লোপাট করা হল আত্মহত্যার সকল প্রমাণ। ঘুষ দিয়ে বন্ধ করা হল সংবাদপত্রের মুখ। কোনও সংবাদপত্রে ছাপা হল না কাদম্বরীদেবীর মৃত্যুসংবাদ। তাঁর দেহ মর্গে পাঠানো হল না, পাছে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথেরই হুকুমে গোপনে বসেছিল করোনার কোর্ট। ওই পরাক্রমী পুরুষটির নেপথ্য প্ররোচনায় ‘হারিয়ে গেল করোনার রিপোর্ট।

কাদম্বরীদেবীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অবিশ্যি ‘কাঠ খাট ঘৃত চন্দন ধূনা’ প্রভৃতি সহযোগে হয়েছিল নিমতলা শ্মশানে পণ্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নের তত্বাবধানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। অনুপস্থিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।

কাদম্বরীর আত্মহত্যার পরেই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী মেজবউঠাকরুণ জ্ঞানদানন্দিনীদেবী আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বেড়াতে গেলেন জাহাজে করে। তাঁরা রবীন্দ্রনাথকেও সঙ্গে নেন।

কেন আত্মহত্যা করলেন কাদম্বরীদেবী? কী তাঁরে দহিত? সেকথাকি তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর সুইসাইড নোটে? সেই সুইসাইড নোট লুপ্ত ছিল একশো সাতাশ বছর। সেটি পাওয়া গিয়েছে সম্প্রতি!

ঠিক সুইসাইড নোট’ নয়। এক সুদীর্ঘ চিঠি। চিঠিটার সর্বাঙ্গ ঝলসে গেছে আগুনে। সব চিঠিটা ঠিক পড়াও যায় না।

ঝলসানো চিঠিটিকে কে বাঁচিয়েছিলেন আগুন থেকে?

রবীন্দ্রনাথ?

পিতৃ-আদেশ অমান্য করে?

অনেক কষ্টে সেই ঝলসানো চিঠির করুণ অক্ষরগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হল শেষপর্যন্ত।

1 Comment
Collapse Comments

few days ago I requested you to upload this book.I’m so happy that you upload this book.thank you very much

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *