একটা চিঠি লিখি তোমার কাছে ব্যাথার কাজলে
আশা করি পরান বন্ধু আছো কুশলে
আগে নিও ভালোবাসা অবলার না বলা ভাষা
আমার যত গোপন আশা ভিজাইয়া দেই নয়ন জলে
প্রথম যেদিন এসে তুমি মিলাইলে হাত
ফুটিল মনের বনে প্রেম পারিজাত
সেই বাসরে শুণ্যহিয়া আমি থাকি তবু পথ চাহিয়া
কান্দে আমার মন পাপিয়া গুঞ্জরিয়া বুকের তলে
যে বকুলের তলায় বসে শুনেছিলাম বাঁশী
সেই বকুলের মুকুলেতে গন্ধে অলি হাসে
ছিঁড়ে গেছে গাঁথা মালা বুকে জ্বলে দারুন জ্বালা
কুলবধু হইলা একলা কান্দি বসে নিরালে
ভুলে যাওয়া পথটি ধরে ভুল করে এসে
পার যদি দেখে যেও দিনের শেষে
(আমি) কেমন আছি পরের ঘরে দেখে যেও নয়ন ভরে
বনবিহঙ্গী থাকে যেমন বাঁধা শিকলে
কি যে লিখি কি বা বাকি পাইনা খুঁজিয়া
অভাগিনীর মনের বেদন (তুমি) লও বুঝিয়া
চিঠি লিখি করি ইতি নিও আমার প্রেম পিরীতি
(অধম) রসিক বলে শেষ মিনতি চরণ কমলে
(প্রুফরীড দরকার)
[গানটি বিজয় সরকারের শিষ্য রসিক সরকারের]
এই গানটি রসিক সরকারের লেখা, আমি ১০০% নিশ্চিত। নামের ভনিতাতেই আছে, তারপরেও আমি রসিক সরকারের একটা কবি গানের ক্যাসেট কিনেছিলাম, সেটাতে রসিক সরকার নিজে এই গানটি করার সময় উল্লেখ করেছিলেন এটা তার লেখা গান। তারপরের কথা হল আমার বাবা নিজে রসিক সরকারের গান শুনেছেন সরাসরি। আমার বাবা (আমিও)কবি গানের খুব ভক্ত। বিজয় সরকারের শিষ্য রসিক সরকার, তার শিষ্য অসীম সরকার এখন ভারতের নাম্বার ওয়ান কবিয়াল। এই অসীম সরকার নিজে বেশকিছুদিন বিজয় সরকারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। বিজয় সরকার, রসিক সরকার, অনাদী সরকার, মনোহর সরকার এরা কবিগানের ধারার বাহক। এদের সম্পর্কে আরো ভালভাবে জানতে হলে অসীম সরকারের মতো প্রত্তক্ষদর্শীদের সাহঅ্যায় নেওয়াই সবথেকে ভালো উপায়। বাংলাদেশের বিখ্যাত গায়ক নকুল বিস্বাসের সাথে ভারতের অসীম সরকারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে বলে শুনেছি। নকুল বিশ্বাস যে এত দ্রুত গান লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন তার কারন তিনিও কবিগানের প্রশিক্ষন নিয়েছিলেন। কবিয়ালরা খুব সুন্দর কাব্যিক ভাবে মুখস্থ না করেই যখন-তখন ছন্দ তৈরী করতে পারেন। আমি অনেক কিছু জানি কবি গানের ব্যাপারে।
হ্যাঁ, আপনি ঠিক ধরেছেন। গানের নিচেই অবশ্য লেখা আছে- [গানটি বিজয় সরকারের শিষ্য রসিক সরকারের]। গানটায় ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে।
শ্রী বিজয়কৃষ্ণ অধিকারীর শিশ্য রসিক লাল সরকার এটা কি ঠিক ?
হ্যাঁ, বিজয়কৃষ্ণ অধিকারী/বিজয় সরকারের শিষ্য।
গানটিতে প্রচুর পরিমাণে ভুল আছে । আপনার কাছে বিশেষ অনুরোধ এমন ভাবে গানটির মর্মাহত করবেন না
আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে বা কারো গান শুনে শুনে লিরিক সংগ্রহ করে থাকি। সঠিকটা দিলে আমরা সংশোধন করে দিতে পারি।
আমার মনে হয় গানটার কিছু জায়গায় ভুল আছে।
হ্যাঁ
গানে কি ভুল আছে তা আমি জানি না। তবে আমি বিজয় সরকার এবং রসিক সরকারকে স্বচক্ষে দেখেছি। ১৯৭৮ সনে বিজয় সরকার এবং রসিক সরকার পাখানজোড়ে ( মধ্য প্রদেশ বর্তমান ছত্তিসগড় ) কবি গান করতে আসেন। খবর পেয়ে আমরা মানা উদ্ভাস্তু কেম্পের বাসিন্দারা তাদের কবি গান মানা কেম্পে হউক এই ইচ্ছা নিয়ে আমরা কয়েকজন পখানজোড়ে যাই এবং বিজয় সরকার ও রসিক সরকারের সঙ্গে পয়সার লেন দেন নিয়ে কথা বলি। বিজয় সরকার যে বায়নার দাবি করেন তা দেবার মত শক্তি আমাদের মত উদ্ভাস্তুদের ছিল না । আমরা চান্দা করে যে কয়টা টাকা একত্র করেছি তা দিয়ে বিজয় সরকারের বায়নার দাবী পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা আনুনয় বিনয় করে বলি আমরা রিফুজি পরিবার এত টাকা দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই । ভারতের সর্ব বৃহদ রিফুজি কেম্প – যার নাম মানা কেম্প- যেখানে ৭০ হাজার রিফুজি পরিবার নিবাস করে – ,আপনি সেই রিফুজি পরিবারদের এই কবি গানের উপলক্ষে একবার দর্শন দিয়ে আসুন। আমাদের আনুনয় বিনয় শুনে বিজয় সরকার রাজী না হলেও আমদের প্রদত্ত টাকায় রসিক সরকার রাজী হলেন । কবি গানে দুই জন কবির প্রয়োজন হয় । বিজয় সরকার রাজী না থাকায় প্রতিপক্ষ কবি হিসাবে রসিক সরকারের শিশ্য শ্রীনিবাস সরকারকে ঠিক করা হল । দিন তারিখ ঠিক করে আমরা মানা কেম্পে ফিরে এলাম। কথা ছিল বাসে করে একই সাথে বিজয় সরকার এবং রসিক সরকার দল বল নিয়ে রায়পুর রেল স্টেসনে যাবেন পথে রায়পুর বাঙ্গালী কালীবাড়ি বাস স্টপে রসিক সরকার তার দল বল নিয়ে কালি বাড়িতে নেমে যাবেন আর বিজয় সরকার তার দল বল নিয়ে রেল স্টেসনে চলে যাবেন। বাস কালীবাড়িতে পৌঁছোবার আগে ট্রাক নিয়ে আমরা কালিবাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকি । বাস এলে রসিক সরকার তার দল বল নিয়ে নেমে পড়েন । আমার চক্ষে পড়ে বিজয় সরকার জানলার কাছে বসে আছেন। আমি এবং আমার সাথে দু চার জন বাসে উঠে তার হাত ধরে তাকে বাস থেকে নামাবার চেষ্টা করি এবং বলি আপনাকে গান গাইতে হবে না শুধু দেখে যান মানা কেম্পে আমরা রিফুজিরা কি রকম আছি । তিনি ( বিজয় সরকার ) দুই হাত দিয়ে জানলার সিক ধরে রইলেন তাকে ছাড়াতে পারলাম না । বাসটা চলে গেল, রসিক সরকারকে আমরা মানা কেম্পে এলাম। আজ ৪০ বছর পড়েও সেই ঘটনাটা ভুলতে পাড়ি না । বার বার একটা প্রশ্ন আমার মনকে বিচিলিত করিয়া তোলে – মানবতার চেয়ে তার কাছে মাত্র কয়েকটি টাকাই বড় ছিল ?
— নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল
নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল মহাশয়ের বর্ণনায় ঘটনাটি জেনে ব্যাথিত হলাম। যাইহোক নেজেটিভ বিষয় গুলি সামনে না আনাই ভাল। রসিক সরকার সম্মন্ধে আরো তথ্য ও রেকর্ড থাকলে সেগুলি প্রকাশ করলে ভাল হয়। ধন্যবাদ।
এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। সব সময় টাকার প্রাধান্য দেওয়া ঠিক নয়। যেখানে আমাদের অস্তিত্বের সংকট সেখানে অনেক ত্যাগ স্বীকার করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তবু তার জন্য আমার শ্রদ্ধা জানাই।