১৮. অর্জুন পা টিপে টিপে এগোল

অর্জুন পা টিপে টিপে এগোল। টেবিলের ওপর শুয়ে থাকা লোকটার ঘাড়ের ওপর নলের মুখটা ঢুকিয়ে দিয়ে প্রৌঢ় ঘড়ি দেখল। নলের চেহারাটা পালটে গেল। প্রৌঢ় পাশে দাঁড়ানো তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল, যে চারজনকে আটকে রেখেছ তাদের শরীরে এই ইনজেকশনটা পুশ করে দাও এখনই। তা হলে চমৎকার ঘুমিয়ে থাকবে।

একজন লোক ইনজেকশনের সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে পাশের বন্ধ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই বাইরে থেকে চিৎকার ভেসে এল, সাপ, সাপ!

সঙ্গে সঙ্গে প্রৌঢ়র পাশে দাঁড়ানো লোকদুটো বাইরে ছুটল। কিন্তু ফিরে এল তৎক্ষণাৎ, ওদের দুজনকেই একটা বিশাল সাপ ছোবল মেরেছে।

ওদের হাতে বন্দুক ছিল না?

ছিল কিন্তু ওরা মাটিতে পড়ে গিয়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে প্রৌঢ় পকেট থেকে রিভলভার বের করে বাইরে ছুটল। ওই দুজন তার সঙ্গী হল। এই সময় পাশের ঘরের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল লোকটা। ওর হাতমুখ বাঁধা। কয়েক পা হেঁটে কাটা কলাগাছের মতো মেঝের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে স্থির হয়ে গেল।

অর্জুন ডাকল, মেজর!

ইয়েস মাই বয়। এটা কিছুই নয়। একবার চিনে…!

প্লিজ মেজর, গল্পটা পরে শুনব। এরা ভয়ঙ্কর লোক! অর্জুন কথাগুলো বলতে বলতে দেখল গোরানসাহেব প্রায় দৌড়ে টেবিলের কাছে পৌঁছে শায়িত লোকটির গলা থেকে সিরিঞ্জ লাগানো নল খুলে ফেললেন। মোমবাতির আলোয় দেখা গেল ওর গলা থেকে রক্ত বের হচ্ছে গলগল করে। দ্রুত পকেট থেকে রুমাল বের করে সেখানে চেপে ধরে তিনি বলে উঠলেন, আমাদের ফার্স্ট এড বক্সটা নিয়ে এসো মেজর, কুইক। নইলে একে বাঁচানো যাবে না।

তখনই বাইরে গুলির আওয়াজ হল। পরপর দুবার। অর্জুন দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দৃশ্যটা দেখতে পেল। লনের ওপর সাপটার মৃতদেহ পড়ে আছে। সেই বিশাল লম্বা সাপটা। প্রৌঢ় এবং তার দুজন সঙ্গী বাংলোর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছেন।

ওদের দ্যাখো, বেঁচে আছে কিনা। প্রৌঢ় নির্দেশ দিল।

লোকদুটো এগিয়ে গেল লনের পাশে পড়ে থাকা দুটো শরীরের দিকে ঝুঁকে পরীক্ষা করতে লাগল। অর্জুন বুঝতে পারল এবার ওরা ফিরে আসবে। সে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দেখল ফাস্ট এড বক্স থেকে তুলো ব্যান্ডেজ বের করে গোরানসাহেব লোকটির ক্ষত বাঁধছেন।

সে বলল, ঝটপট আড়ালে চলুন। ওরা ফিরে আসছে আর ওদের সঙ্গে অস্ত্র আছে।

ওরা আড়ালে আসামাত্র প্রৌঢ় ঘরে ঢুকল, এ কী? নল খুলল কে? ব্যান্ডেজ করেছে দেখছি। কে করল? তোমরা সাবধান হও, এখানে অন্য লোক আছে। প্রৌঢ় চিৎকার করে উঠল।

সার দেখুন, পেছনে আসা লোকদুজনের একজন চেঁচিয়ে উঠল। ওরা মেঝের ওপর পড়ে থাকা ইনজেকশন দিতে যাওয়া লোকটিকে দেখে ছুটে গেল। পরীক্ষা করে প্রৌঢ় বলল, না, মারা যায়নি। অজ্ঞান হয়ে আছে। তোমরা ওই চারটে লোককে ভাল করে বাঁধোনি?

হ্যাঁ সারা শক্ত করে বেঁধেছিলাম।

তা হলে ওরা এর এই দশা করল কী করে? ওই ঘরে গিয়ে দ্যাখো তো?

লোকদুটো একটু ইতস্তত করল। তারপর এগিয়ে গেল দরজার দিকে। উঁকিঝুঁকি মেরে বলল, ভেতরে কেউ নেই সার।

ঠিক দেখেছ?

অন্ধকারে ভাল করে দেখা যাচ্ছে না।

টর্চ কোথায়?

সবকটা টর্চ তো ওরা নিয়ে গিয়েছিল।

আঃ। সেগুলো তো মাটিতে পড়ে আছে। যাও, নিয়ে এসো।

প্রথমজন দ্বিতীয়জনের দিকে তাকাল, এই, চল আমার সঙ্গে।

তুই যা না!

আমি একা যাব না। চল।

ওরা পা বাড়াতে প্রৌঢ় বলল, দুজনের যাওয়ার দরকার নেই। টর্চ আনতে দুটো মানুষ যাচ্ছে! সাহসী বীরপুরুষ! একজন এখানে থাকো। তুমি যাও।

প্রথম লোকটি অনিচ্ছা সত্ত্বেও পা বাড়াল। সঙ্গে সঙ্গে অর্জুন রান্নাঘরে চলে এল। জানলা দিয়ে লাফিয়ে নীচে নামল। লনে কোনও টর্চ জ্বলছে না। যে দুটো লোক সাপের ছোবল খেয়ে মরেছে তারা বোধহয় শেষ মুহূর্তে আলো নিভিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলোর পেছনে রাজুভাই-এর হাত থেকে ছিটকে পড়া টর্চটা এখনও জ্বলছে। অর্জুন লোকটিকে সতর্ক পায়ে এদিকে আসতে দেখল। হঠাৎ হাওয়া বইল। জঙ্গলের গাছগুলো নড়তেই জমে থাকা বৃষ্টির জল ডালপাতা থেকে শব্দ করে ঝরতে লাগল। লোকটা হঠাৎ দৌড়তে লাগল। সম্ভবত ভয় পেয়ে গিয়েছিল আচমকা শব্দ হতে। যেই সে নিচু হল টর্চ তুলতে, অর্জুন ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওরে বাবা রে মা রে বলে চেঁচিয়ে উঠেই স্থির হয়ে গেল লোকটা। মুখ থেকে গোঁ গোঁ শব্দ বের হতে লাগল। অর্জুন টর্চটা তুলে নিল। নিয়ে চারপাশে আলো ফেলতেই স্টিভেনসনের কবরের কাছে কিছু একটার নড়াচড়া অনুভব করল। ও টর্চের আলো হাতে আর একটু এগোতেই দেখতে পেল কবরের নীচ থেকে একটা সাপ একটু একটু করে ওপরে উঠে আসছে। এটা কোন সাপ? যেটা বাইরের লনে পড়ে আছে সেটা কি আলাদা? তা হলে কি ওই কবরে দুটো সাপ থাকত? গোরানসাহেব অবশ্য এইরকম সন্দেহ করেছিলেন। অর্জুন দৌড়ল। জানলা দিয়ে ভেতরে গেলে অনেক কসরত করতে হবে। সে বারান্দায় উঠে এল। এখন ওরা দুজন। বাকি দুজন অজ্ঞান হয়ে আছে। দুজনের সঙ্গে পাঁচজন সহজেই মোকাবিলা করতে পারে।

হ্যান্ডস আপ!

হুকুম শুনে হাত তুলতে তুলতে অর্জুন দেখল প্রৌঢ় দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

তা হলে তুমিই এইসব করছ?

আপনি কে? অর্জুন হাত তোলা অবস্থায় জিজ্ঞেস করল।

আমি যেই হই তোমাদের কাউকে আমি জ্যান্ত ফিরে যেতে দেব না। এখন ভাল ছেলের মতো মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। চটপট। সাপ মেরেছি, তোমাকে মারতে একটুও অসুবিধে হবে না। প্রৌঢ় চমকাল।

অর্জুন বাধ্য হল শুয়ে পড়তে। তৎক্ষণাৎ প্রৌঢ়র সঙ্গী এসে ওর হাত বেঁধে ফেলল। প্রৌঢ় নির্দেশ দিল, ওকে গাড়িতে তোলো।

কেন ঝামেলা করছেন সার। জিপে এখনও অনেক লোক পড়ে আছে। আর একটাকে তোলার কী দরকার? লোকটি যেন প্রার্থনা করল। ওটা এখনও আসছে না কেন? প্রৌঢ় জানতে চাইল।

কী করে আসবে? ও যে টর্চ আনতে গিয়েছিল সেটা এ নিয়ে এসেছে। সার, যদি বাঁচতে চান তো এখান থেকে পালান।

শাট আপ। প্রৌঢ় ঘুরে বাংলোর দরজা টেনে বন্ধ করে দিলেন। লম্বা ছিটকিনি টেনে দিয়ে বললেন, ভেতরে যারা আছে তারা ভেতরেই থাক।

সার, যে টর্চ আনতে গিয়েছিল সে আমার মাসতুতো ভাই। ওর কী হয়েছে না দেখে যেতে পারব না। একবার চলুন।

প্রৌঢ় মাথা নাড়ল, ওকে দরকার। তিনটে গাড়ি নিয়ে এসেছি। আমরা এখন দুজন। চলে গেলে একটা গাড়িকে এখানে ফেলে যেতে হবে। নো। আমি চাই না কোনও প্রমাণ রেখে যেতে। চলো। অর্জুনের আনা টর্চ তুলে নিল প্রৌঢ়।

ওরা এগোতেই অর্জুন উঠে বসল। ওর হাত পেছন মুড়ে বাঁধা কিন্তু পা বাঁধার কথা ভাবেনি ওরা। ও সেই অবস্থায় লনে নামল। কী করে অন্তত একটা গাড়িকে খারাপ করে দেওয়া যায়!

হঠাৎ শুনল প্রৌঢ় চেঁচিয়ে উঠেছে, ওটা কী?

সার, মনে হচ্ছে মানুষ। লম্বা রোগা মানুষ।

অত রোগা মানুষ হতে পারে না।

পারে সার। ওখানে একটা কবর আছে।

আমি বিশ্বাস করি না। তুমি টর্চের আলো ওটার ওপর ফ্যালো তো। হ্যাঁ। প্রৌঢ় গুলি চালালেন। পরপর কয়েকটা।

লোকটা চেঁচিয়ে উঠল, পড়ে গেল সার, পড়ে গেছে।

এসো। প্রৌঢ় এগিয়ে গেল লোকটিকে নিয়ে। তখনও গোঁ গোঁ করছে মাটিতে পড়ে থাকা লোকটা। কয়েকবার ডাকার পর সেটা বন্ধ হল। প্রৌঢ় বলল, মুখে জল দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ওকে তুলে নিয়ে এসো।

লোকটা তার মাসতুতো ভাইকে বগলের তলায় হাত ঢুকিয়ে তুলল। প্রৌঢ় ফিরে আসছিল দ্রুত। অর্জুনকে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠল, আচ্ছা! এই ব্যাপার। তা হলে তুমি মরো।

রিভলভার উঁচিয়ে গুলি করল প্রৌঢ়। কিন্তু খট করে শব্দ হল, গুলির আওয়াজ হল না। প্রৌঢ় বলল, মাই গড! তারপর দৌড়ে গেল লনের ওপর পড়ে থাকা মৃতদেহের পাশ থেকে বন্দুক তুলে আনতে। সেটাকে তুলে এদিকে ফিরতেই অর্জুন মাটিতে বসে পড়ল। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাড়িতে লাগল। কাচ ভাঙল। কোনওরকমে গুঁড়ি মেরে অর্জুন গাড়ির পেছনে চলে আসতেই আবার গুলির আওয়াজ হল। আর তখনই একটা আর্তনাদ প্রবলভাবে বেরিয়ে এল প্রৌঢ়ের গলা থেকে। অর্জুন উঁকি মেরে দেখল প্রৌঢ় দুহাতে তার মুখ থেকে কোনও কালো ছায়া সরাবার চেষ্টা করতে করতে মাটিতে পড়ে গেল। সমানে চিৎকার করে যাচ্ছিল প্রৌঢ়। মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে দিতেও সেটা থামছিল না। অর্জুন উঠে দাঁড়িয়েছিল। ভাইকে বয়ে নিয়ে আসা লোকটা তখন ওই দৃশ্য দেখে থরথর করে কাঁপছে। অর্জুন তাকে ডাকল, বাঁধন খুলে দাও।

 

ভোর হয়ে এল। মৃতদেহগুলোকে পাশাপাশি শুইয়ে রাখা হয়েছে। যারা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে। জিপের ভেতর থেকে আরও পাঁচজন মানুষকে এনে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আর প্রৌঢ়র সমস্ত মুখে গোরানসাহেব বান্ডেজ বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বটাকে পাঠানো হয়েছে হাসিমারা পুলিশ স্টেশনে খবর দিতে। প্রৌঢ় সমানে যন্ত্রণায় ককিয়ে যাচ্ছে।

অর্জুন বলল, মিস্টার গোরান, এই হল আমার ড্রাকুলা। ড়ুয়ার্সের সরল মানুষদের তুলে নিয়ে এসে এই লোকটা শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বের করে জঙ্গলে ফেলে দিত। সিরিঞ্জ ফোটাত ঘাড়ের পাশে রক্ত বের করে সংরক্ষণ করার কায়দা ও জানে। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না এই রক্ত ও ব্ল্যাকে বিক্রি করত না অন্য কিছুতে লাগাত।

মেজর বললেন, তবু আমি গোরানকে ধন্যবাদ দেব। ও যদি এই অভিযানে না আসত তা হলে ওই রক্তচোষা ড্রাকুলাটা আরও কত মানুষের সর্বনাশ করত। ভৌতিক ড্রাকুলা নিশ্চয়ই নেই, কিন্তু মানুষই তো ড্রাকুলা হয়ে গেছে।

গোরানসাহেব গম্ভীর হয়ে বসে ছিলেন। এবার বললেন, ভৌতিক ড্রাকুলা নেই একথা আমি এখনও বিশ্বাস করি না।

আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আর্নল্ড স্টিভেনসনের কবরে দুটো বড় সাপ বাসা করে থাকত। কোনও ড্রাকুলা নয়। অর্জুন বলল।

ঠিকই। কিন্তু ওরা মারা যাওয়ার পর তুমি ওই লোকটার মুখে একটা কালো ছায়া দেখতে পেয়েছ। এই লোকটাও বলছে, সে দেখেছে ওদের নেতার মুখে ছায়াটা ঝাঁপিয়ে পড়েছে আর ওটা এসেছে ওই কবর থেকে। ওই ছায়াই যে ওর চোখ তুলে নিয়েছে, মুখ ক্ষতবিক্ষত করেছে তা তোমরা জানো। অথচ আমরা বেরিয়ে এসে কেউ ওই ছায়াটাকে দেখতে পাইনি। তুমি এর ব্যাখ্যা করবে কীভাবে? গোরানসাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

মেজর বললেন, তা হলে স্বীকার করতে হয় স্টিভেনসনের ড্রাকুলা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া জন লিঙ্কন চিঠি লিখেছিল প্রায় ৬০ বছর আগে। সেই চিঠিতেও রক্ত চুষে নিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার কথা ছিল অর্জুন। এই বুড়োটা নিশ্চয়ই তখন থেকে কারবার চালাচ্ছে না।

অর্জুন কথা বলল না। লিঙ্কন সাহেব ভুল করতে পারেন, কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু এই কালো ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

পুলিশ এল। সব কিছু লিখে নিয়ে অফিসার অর্জুনের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন। এই প্রৌঢ় একজন ডাক্তার। থাকেন ধুপগুড়ির কাছে। বিনা পয়সায় মানুষের চিকিৎসা করেন। ইনিই যে এই বীভৎস ঘটনার নায়ক তা পুলিশ কল্পনা করতে পারেনি। অর্জুনরা না এলে ব্যাপারটা আবিষ্কার করতে কতদিন সময় লাগত কে জানে! সবকটা গাড়ি এবং মানুষদের তুলে নিয়ে পুলিশ যখন চলে গেল তখন মেজর বললেন, গোরান, আমরাও তা হলে ফিরে যেতে পারি, কী বলো?

গোরানসাহেব বললেন, আমি আর একটা রাত এখানে থাকতে চাই।

আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সবাই রাজি হল। সাপদুটোকে পুড়িয়ে ফেলল বটা আর গোরক্ষনাথ গোরক্ষনাথের মন খুব খারাপ। অর্জুন কেন তার খোঁড়া শকুনের বাঁধন খুলে দিল। বাংলোর কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

বিকেলবেলায় অর্জুন একাই বাংলোর সামনের রাস্তায় হাঁটছিল। এরকম জায়গায় অত বছর আগে স্টিভেনসন সাহেব বাংলো করেছিলেন। ভদ্রলোক সত্যি শৌখিন মানুষ ছিলেন। শৌখিন মানুষ কি ড্রাকুলা হতে পারে?

হঠাৎ অর্জুনের নজরে পড়ল পাশের গাছের নিচু ডালে একটা শকুন বসে আছে। অর্জুন দাঁড়াল। এটাগোরক্ষনাথের শকুন নয় তো? সে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শকুনটা নড়ল না। দ্রুত গেটের কাছে ফিরে এসে সে চেঁচিয়ে গোরক্ষনাথকে ডাকতেই গোরক্ষনাথ বেরিয়ে এল। অর্জুনের কাছে খবরটা শুনে ছুটে গেল গোরক্ষনাথ। অর্জুন দেখল গোরক্ষনাথ হাত বাড়িয়ে শকুনটাকে সহজেই ধরে ফেলল। পালাবার কোনও চেষ্টাই করল না পাখিটা।

ওটাকে নিয়ে আসতে আসতে দাঁড়িয়ে পড়ল গোরক্ষনাথ। পাখিটাকে মুখের সামনে ধরে বিড়বিড় করতে লাগল। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

এত রক্ত লাগল কী করে এর মুখে, দুপায়ের নখে। ইস। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই কিছু শিকার করেছিল।

কাল রাত্রে দেখা কালো ছায়ার রহস্যটা পরিষ্কার হয়ে গেল অর্জুনের কাছে।