১০. অবনীবাবু অবাক হয়ে তাকালেন

অবনীবাবু অবাক হয়ে তাকালেন, আরে! এখন এ সময়ে?

অর্জুন বলল, প্রশ্নটা তো আমারই করার কথা। আপনি তো জানেন আমরা ভূত দেখতে গিয়েছিলাম। সারারাত ধরে সেটা দেখে এলাম। আপনি মনে হচ্ছে রাত্রে ঘুমোননি!

আমার কথা বলছি। আগে বলুন, সত্যি সেসব দেখলেন নাকি? অবনীবাবু কৌতূহলী।

দুটো ডেডবডি দেখেছি। সমস্ত শরীরে এক ফোঁটাও রক্ত নেই। কেউ মেরে রক্ত চুষে নিয়ে মাঝরাত্রে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে গেল।

সে কী? ফেলে দিয়ে গেল মানে আপনাদের চোখের সামনে কাজটা করল?

চোখের সামনে ঠিক নয়। গভীর জঙ্গলের একপাশে কাণ্ডটা করল। ছুটে গিয়ে ধরার কোনও সুযোগ ছিল না। সঙ্গে একজন অফিসার ছিলেন। তিনি ডেডবডি দুটোকে থানায় নিয়ে গেছেন। পোস্টমর্টেম করতে পাঠাবেন। এবার যদি লোক দুটোর আত্মা ভূত হয়ে ওই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তো বেড়াতে পারে।

কোন অফিসার ছিল আপনাদের সঙ্গে? শ্রীযুক্ত উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়।

ওঃ ওয়ার্থলেস। কোনও কর্মের নয়, লোকটা।

যে কর্মের নয় তার পুলিশে চাকরি থাকে কী করে?

এ-প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না।

আপনি জেগে আছেন কেন?

চলুন, রাস্তার ওপারের চায়ের দোকানটা খুলছে, চা খেতে খেতে কথা বলি। অবনীবাবু এগোলেন। অর্জুন নেমে আসার পর মেজরদের গাড়ি আর দাঁড়ায়নি। এখনও রাস্তা সুনসান। জলপাইগুড়ির ঘুম ভাঙতে একটু দেরি। রিকশাগুলো পথে নামেনি।

চায়ের দোকানদার থানার বড়বাবুকে দেখে তৎপর হল। চায়ে চুমুক দিয়ে অর্জুন বলল, আঃ।

প্রথম চা বেশ ভাল করে। অবনীবাবু চুমুক দিয়ে বললেন, কাল মাঝরাত পর্যন্ত সন্দীপ এবং ওর বন্ধুদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছি। কিন্তু কোনও প্রমাণ পাইনি। এস. পি. সাহেবের অনুমতি নিয়েছিলাম। কিছু না পাওয়ার পর ভদ্রলোক আমাকে এমন ভাষায় তিরস্কার করলেন যে, লজ্জায় মরে যাচ্ছি। সন্দেহ হওয়ায় আমরা যে-কোনও বাড়িতে তল্লাশি করতে পারি কিন্তু—I অবনীবাবুর মন যে ভাল নেই তা বোঝা গেল।

আপনি কী খুঁজতে গিয়েছিলেন?

এতদিন ধরে যেসব টাকা ওরা লুঠ করছিল তা নিশ্চয়ই ওদের হেফাজতে পাওয়া যাবে বলে ভেবেছিলাম। অল্পবয়সী ছেলেরা অত টাকা কোত্থেকে পেল এই কৈফিয়ত দিতে পারত না। থানায় এনে চাপ দিলে ভেঙে পড়ত। কিন্তু হিসেবে কিছু মিলল না।

ওরা কিছু বলেছে?

হ্যাঁ। আজ ওরা কোর্টে যেতে পারে। অবনীবাবু নিশ্বাস ফেললেন, হয়তো এর জন্যে খুব বাজে জায়গায় ট্রান্সফার করে দেবে ওপরওয়ালা। কী করা যাবে?

চায়ের দোকানদার দাম নিচ্ছিল না। অবনীবাবু জোর করে দিতে সে নমস্কার করল।

অর্জুন বলল, আমার মনে হচ্ছে একটা রাস্তা আছে।

রাস্তা?

হ্যাঁ। অবশ্য একটা ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, কিন্তু সেটা না নিয়ে কোনও উপায় নেই। আপনার থানায় এখন কজন সেপাই আছে?

কেন?

একটু আদরপাড়ায় চলুন।

আদরপাড়া? খোলসা করে বলুন মশাই। আমার মাথা কাজ করছে না।

থানার দিকে যেতে যেতে অর্জুন অবনীবাবুকে ব্যাপারটা বলতে লাগল।

 

দুজন লাঠিধারী সেপাই পেছনে বসে ছিল, অবনীবাবু জিপ চালাচ্ছিলেন। পাশে অর্জুন। জিপটা চলে এল আদরপাড়ায়। এখন দু-একজন রাস্তায়। এই ভোরে পুলিশের জিপ দেখে তারা অবাক হয়ে তাকাল। অবনীবাবু বললেন, জিজ্ঞেস না করলে বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অর্জুন বলল, জিজ্ঞেস করলেই ভিড় বাড়বে। দাঁড়ান।

জিপটা দাড়াল। এক ভদ্রলোক মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছিলেন। অর্জুন জিপ থেকে নেমে বলল, শুনুন, আপনি এ-পাড়ায় থাকেন?

হ্যাঁ। ভদ্রলোক পুলিশের জিপ দেখে থমকে গেলেন।

আমরা একটু সমস্যায় পড়েছি। একজন ডাক্তারের কলকাতা থেকে এ পাড়ায় আসার কথা। ওঁর আত্মীয় বামাচরণ দত্তের বাড়িতে উঠবেন। বাড়িটা কোথায় বলবেন?

বামাচরণ দত্ত! ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন, না তো।

ওপাশে দুজন দাড়িয়ে গিয়েছিল। তারা এগিয়ে এল বামাচরণ দত্ত? কী করেন?

ব্যবসা।

না। চিনতে পারছি না। আর কিছু বলেছে?

অর্জুন মনে করার ভান করল, হ্যাঁ। উনি কয়েকটি অর্থোপেডিক পেশেন্টকে দেখবেন। তার মধ্যে বামাচরণবাবুর পাশের বাড়ির একটি ছেলে আছে। কী নাম যেন, কাবুল, হাঁ কাবুল।

তিনজনে একটু আলোচনা করে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, কাবুল নামের একটি ছেলে আছে। প্রতিবন্ধী। সে থাকে সোজা গিয়ে বাঁ দিকের মোড়ে লাল বাড়িতে। কিন্তু তার আশপাশে বামাচরণ দত্ত বলে কেউ থাকে বলে মনে হয় না। আনারা একটু বেলায় আসুন। পাড়ার মুদির দোকানে খোঁজ করলে জানতে পারবেন।

অশেষ ধন্যবাদ। অর্জুন গাড়িতে ওঠায় ওঁরা যে-যার মতন চলে গেলেন।

অবনীবাবু অবাক হয়ে বললেন, আশ্চর্য অভিনয় করলেন তো!

অর্জুন বলল, সোজা চলুন। বাঁ দিকের মোড়ে লাল বাড়ি কাবুলদের। বাড়ির সামনে গাড়ি রাখার দরকার নেই। আগে কোথাও পার্ক করুন। হেঁটেই যাওয়া যাবে।

বাড়িটা চিনতে অসুবিধে হল না৷ বেল বাজালেন অবনীবাবু। দ্বিতীয়বারের পর একটি কাজের লোক দরজা খুলল। অবনীবাবু বললেন, কাবুল আছে?

হ্যাঁ। ঘুমোচ্ছ।

ওঁর বাবা বাড়িতে থাকলে ডেকে দাও।

কাবুলের বাবা মধ্যবয়সী মানুষ। লুঙ্গি পরে গেঞ্জি গ্রায়েই বিছানা থেকে উঠে এলেন, কী ব্যাপার? কী চাই?

অবনীবাবু বললেন, আমি থানার অফিসার-ইন-চার্জ।

ভদ্রলোক ঘাবড়ে গেলেন, ও। কী ব্যাপার? মানে!

আমরা আপনার ছেলে কাবুলের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

কেন বলুন তো?

ওর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে।

অভিযোগ? সে কী? আপনি কি জানেন দুবছর আগে একটা অ্যাক্সিডেন্ট করায় ওর দুটো পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে?

আমরা জানি। আপনার উত্তেজিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা রুটিন কিছু প্রশ্ন করে চলে যাব। ওকে ঘুম থেকে তুলুন।

কিন্তু ওর পক্ষে তো নীচে নামা সম্ভব নয়।

তা হলে আমরাই ওর কাছে যাচ্ছি। বুঝতেই পারছি আপনাদের খুব অসুবিধায় ফেলছি কিন্তু ওর সঙ্গে কথা না বলে চলে যেতে পারছি না। অবনীবাবু হাসলেন, চলুন।

ভদ্রলোককে অনুসরণ করে দোতলায় এল ওরা। ঘরের দরজা খোলা। পরদা ঝুলছে। বাইরে থেকে ভদ্রলোক ডাকলেন, কাবুল!

বলো। সঙ্গে-সঙ্গে সাড়া এল।

তোমার মুখ ধোয়া হয়ে গিয়েছে?

হ্যাঁ।

দুজন ভদ্রলোক তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন?

কে? কারা?

কাবুলের বাবা জবাব দেওয়ার আগে অবনীবাবু পরদা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। বছর বাইশের এক যুবক হুইল চেয়ারে বসে আছে। সামনে খোলা জানলা। ভোরের রোদ পড়ছে ঘরে। কাবুল অবাক হয়ে তাকাল, কী চাই?

অবনীবাবু বললেন, তোমার নাম তো কাবুল। আমি থানা থেকে আসছি।

কাবুল অবনীবাবুকে দেখল। তারপর অর্জুনের দিকে তাকাল। হঠাৎ তার মুখের চেহারা বদলাল। বলল, আপনি তো অৰ্জুন।

অর্জুন কোনও কথা বলল না। অবনীবাবু বললেন, তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা আছে। তোমার কোন-কোন বন্ধুর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রয়েছে?

সবার সঙ্গেই আছে। ওরা আসে। ফোন করে।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তুমি এখন খুব বই পড়ো?

ওর বাবা জবাবটা দিলেন, চিরদিনই পড়ে। ফার্স্ট ডিভিশন ওর বাঁধা ছিল। ওই মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে—। ভদ্রলোক কথা শেষ করতে পারল না।

অনীবাবু বললেন, এখন তো কত আধুনিক সরঞ্জাম বেরিয়েছে, প্রতিবন্ধীরা প্রায় স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারে।

কাবুলের বাবা বলল, সেগুলোর সাহায্য ও নিতে চায় না। আমেরিকায় একটা অপারেশন করে মূল হাড়ের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে দেয় যে, কোনও পার্থক্য বোঝা যায় না। কিন্তু আমার পক্ষে তা ওখানে নিয়ে গিয়ে এই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। প্রচুর খরচ।

কাবুলের মুখ শক্ত হয়ে গেল, বাবা। আমি কি তোমাকে খরচটা করতে বলেছি?

না বলিসনি। কিন্তু সেই আশায় তো আছিস।

সেটা আমি বুঝে নেব। কাবুল মুখ ফেরাল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, সন্দীপ তো তোমার বেস্ট বন্ধু।

কেন?

ও তোমার কাছে শেষ কবে এসেছিল?

পরশু সন্ধের পর। কাবুলের বাবা বলল, খুব ভালবাসে ওকে।

অবনীবাবু অর্জুনের দিকে তাকালেন। তারপর কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে কাবুলের পাশে দাঁড়ালেন, তোমার বন্ধুরা কি তোমাকে সাহায্য করবে বলেছে?

কাবুল চটপট বলল, নিশ্চয়ই। ওরা আমার জেনুইন বন্ধু।

খুব ভাল কথা।অর্জুন বলল, ওদের তুমি নিশ্চয়ই প্রশ্ন করেছ কীভাবে ওরা টাকা রোজগার করছে? অত টাকা ওরা কোথায় পাচ্ছে?

আমি জানতে চেয়েছিলাম, ওরা উত্তর দেয়নি।

তোমার মনে কোনও সন্দেহ হয়নি? অবনীবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

না। ওরা সবাই বড়লোক। ব্যবসা শুরু করেছে বলেছে। হঠাৎ কাবুলের যেন খেয়াল হল, এসব কথা আপনারা কী করে জানলেন?

কেন? অবনীবাবু হাসলেন।

ওরা কাউকে বলতে নিষেধ করেছিল।

কিন্তু কাবুল, টাকাটা যদি সৎপথে ওরা উপার্জন করে এবং তোমার উপকারের জন্যে খরচ করে, তা হলে খবরটা চেপে যাবে কেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

আমি জানি না।

টাকাগুলো কোথায়?

একটু ইতস্তত করে কাবুল জবাব দিল, আমার কাছেই আছে।

অবনীবাবু বললেন, তুমি বললে কেন ওরা গোপন করেছে তা জানো না। আমি তোমার কথা বিশ্বাস করছি। কিন্তু তোমার উচিত কারণটা জানা।

বেশ। জিজ্ঞেস করব।

অবনীবাবু কাবুলের বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ঘরে ফোন আছে?

উত্তরটা দিল কাবুলই। হাত দিয়ে হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে সেলফ থেকে কর্ডলেস রিসিভার টেনে বের করল। অর্জুন চটপট এগিয়ে গেল। টেলিফোনে বেশি কথা বলার দরকার নেই। তুমি শুধু বলবে ও যেন এখনই এখানে আসে। কথা আছে। জরুরি। ব্যস। সন্দীপকে ফোন করছ ভো?

কাবুল মাথা নাড়ল। ডায়াল করে সন্দীপকে চাইল। তারপর বলল, অ্যাই সন্দীপ, তোর সঙ্গে খুব জরুরি কথা আছে। একটু আসতে পারবি? হ্যাঁ, এখনই। আচ্ছা। যন্ত্রটাকে বন্ধ করে বলল, ও আসছে।

অবনীবাবু পাশের দরজাটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ ঘরে কে থাকে?

কেউ না। খালি। কাবুলের বাবার গলার স্বর পালটে গিয়েছে, এসব কথা আমি জানিই না। তুই তো কখনও আমাকে বলিসনি যে তোর বন্ধুরা তোকে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কত টাকা দিয়েছে এ পর্যন্ত।

ওরা নিষেধ করেছিল।

কত টাকা দিয়েছে?

একটু ভাবল কাবুল। তারপর সেলফ থেকে একটা ডায়েরি বের করে পাতা ওলটাল, তিন লক্ষ সত্তর হাজার।

অ্যাঁ! অ্যাত্ত টাকা! চিৎকার করে বললেন কাবুলের বাবা, এই ঘরে তুই এত টাকা রেখেছিস জানতে পারলে যে কোনওদিন ডাকাতি হয়ে যাবে।

কেউ জানত না, তোমরা না বললে কেউ জানবে না। কাবুল বলল, আর দু লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা জমলেই আমি আমেরিকায় যেতে পারব। মোট ছলক্ষ টাকা লাগবে ওই অপারেশনটা করাতে। চোখ বন্ধ করে বলছিল কাবুল। যেন স্বপ্নটা সত্যি হতে যাচ্ছে, এমন আলো ওর মুখে।

মিনিট পনেরো যেতে-না-যেতেই সন্দীপ পৌঁছে গেল। সঙ্গে আর একটি ছেলে। অর্জুনরা তখন পাশের ঘরে বসে রয়েছে। মাঝখানে পরদাটার আড়াল।

কী ব্যাপার? কী হল? সন্দীপের গলা।

বোস। কাবুল বলল।

তাড়াতাড়ি বল। আর-একটি গলা শোনা গেল, কাল রাত্রে পুলিশ খুব ঝামেলা করেছে। আজ উকিলের সঙ্গে কথা বলে কোর্টে যেতে হবে। যা বলার তাড়াতাড়ি বল।

পুলিশ তোদের সঙ্গে ঝামেলা করেছে?

হ্যাঁ।

কেন?

ও অন্য ব্যাপার। সন্দীপ বলল, চটপট বল কাবুল।

তোরা আমাকে যে টাকা দিয়েছিস তা কোথায় পেয়েছিস?

হঠাৎ একথা? সন্দীপের গলায় সন্দেহ।

তোরা আমাকে বলেছিস কাউকে না বলতে। কেন?

কেন আবার। সবাই জানলে নানান কথা বলবে, তাই।

তাতে কী এসে যায়। তারা আমার উপকার করছিস এটা তো ভাল কথা। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। এখনই আমেরিকায় যেতে চাই।

দুর। এখনও অনেক টাকা জোগাড় করতে হবে।

বাবাকে বললে ধার করেও কিছু জোগাড় করতে পারবে।

না। এখনই তোর কোথাও যাওয়া চলবে না। সন্দীপের গলা। কেন?

বলছি যা, তা তোকে শুনতে হবে।

তোদের কথা আমার ভাল লাগছে না।

দ্যাখ, টাকাটা আমাদের, তোকে রাখতে দিয়েছি, এটা ভুলে যাস না।

কিন্তু টাকাটা তোরা কীভাবে পাচ্ছিস?

সেটা জেনে তোর কী লাভ? আমরা চুরি করি আর ডাকাতি করি, তোর তো টাকাটা পেলেই হল। ফালতু ডেকে আনলি।

না। যদি অন্যায় করে টাকাটা নিয়ে আসিস, তা হলে আমার দরকার নেই। অন্যায়ের টাকায় আমার পা সারালে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকব।

সন্দীপ বলল, মনে হচ্ছে কেউ তোর ব্রেন ওয়াশ করেছে।

কাবুল জবাব দিল না। সন্দীপ জিজ্ঞেস করল, আজকালের মধ্যে তুই বাইরের কার সঙ্গে কথা বলেছিস। কাবুল, জবাব দে।

আমার কিছু বলার নেই। তুই শুধু বল, এটা ব্যবসা করে সৎপথে উপার্জনের টাকা। বল।

দ্বিতীয় গলা বলল, টাকাটা নিয়ে চল সন্দীপ।

হ্যাঁ। সেটাই উচিত। কাবু, টাকাগুলো দে।

কেন?

তোর কাছে রাখা আর ঠিক নয়। যখন ছলক্ষ হবে তখন তোর কাছে আসব। দিয়ে দে। ওই সুটকেসে আছে, তাই তো?

তোরা টাকাগুলো নিয়ে যাচ্ছিস? চিৎকার করে উঠল কাবুল।

অর্জুন ইশারা করতেই অবনীবাবু দ্রুত পরদা সরালেন। সুটকেস থেকে বড়বড় খাম বের করছে সন্দীপ। তার পাশে একটি ছেলে।

অবনীবাবু কথা বললেন, সন্দীপ।

সন্দীপ যেন ভূত দেখল। ওর হাত থেকে খামগুলো পড়ে গেল।

অবনীবাবু বললেন, আশা করি তুমি সুবোধ বালকের মতো থানায় যাবে। সন্দীপ ঘুরে দাড়াল কাবুলের দিকে। তারপর হিংস্র বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল ওর ওপর। অর্জুন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাকে আটকে দিতেই সে চিৎকার করে উঠল, তুই তা হলে বেইমানি করলি কাবুল। তুই যাতে হাঁটতে পারিস তাই এত টাকা এনে দিয়েছি আর তুই পুলিশকে লুকিয়ে রেখে আমাদের ডেকে আনলি। বেইমান, বিশ্বাসঘাতক।

 

অর্জুন থানায় ঢুকল না। অবনীবাবু এখন উত্তেজিত। খুশিও। সন্দীপ এবং তার বন্ধু ছাড়াও কাবুলকেও হুইলচেয়ারে বসিয়ে থানায় এনেছেন তিনি। গাড়ি বেরিয়ে গেল সন্দীপদের অন্য বন্ধুদের তুলে আনতে। অর্জুনের খারাপ লাগছিল কাবুলের জন্যে। বেচারার স্বপ্ন আর সত্যি হবে না। কিন্তু সত্যি কি সন্দীপরা ওর উপকারের জন্যে ডাকাতি করছিল? বন্ধুকে ভাল করার জন্যে? এর উত্তর এখনই পাওয়া যাবে না। এখন বাড়িতে গিয়ে ঘুমোতে হবে। লম্বা ঘুম। দুপুরেই মেজরদের সঙ্গে যেতে হবে ড়ুয়ার্সে। গোরানসাহেব এখনও বিশ্বাস করেন ওই অঞ্চলে ড্রাকুলা আছে। দেখা যাক!