০৯. জায়গাটা যে ভয়ঙ্কর

জায়গাটা যে ভয়ঙ্কর এবং দিনের বেলাতেই যখন সেটা টের পাওয়া যায় তখন রাত্রে তার চেহারা কীরকম হবে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল অর্জুন। কিন্তু উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায় ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন। গাড়ি থামলে ওঁর গলা পাওয়া গেল, আপনারা কিছু শুনতে পাচ্ছেন সার?

শোনা যাচ্ছিল। দূরে কোথাও কোনও প্রাণী যেন আর্তনাদ করছে। মেজর গোরানসাহেবকে ব্যাপারটা বললে তিনি ইন্টারেস্টিং বলে মাথা দোলালেন।

উত্তমকুমার বললেন, সার, আমার কথা শুনুন। দূর থেকে এমন ইন্টারেস্টিং বলা সহজ। কিন্তু আমি পুলিশ অফিসার হিসেবে যেখানে যেতে সাহস পাচ্ছি না, সেখানে আপনারা কেন ঝুঁকি নিচ্ছেন?

ঠিক আছে। আপনি হুতুমপুরে চলুন। সেখানেই থেকে যাবেন। আমরা তেঁতুলতলা থেকে ঘুরে আসছি। আপনি ওরকম একটা নামের মালিক হয়েও এত ভয় পান? মেজর বেশ ধমকে উঠলেন।

গাড়িটা যত এগোচ্ছিল তত শব্দটা বাড়ছিল। অন্ধকার হলেও দূরের আকাশের একটা দিক যে কালো হয়ে আছে তা বোঝা যাচ্ছিল। পুলিশ অফিসার উত্তমকুমার বললেন, সোজা গেলে কমিনিটের মধ্যেই হুতুমপুর গ্রাম। দেখুন, একটাও আলো জ্বলছে না। সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে। আর বাঁ দিকে এগোলেই তেঁতুলবন।

গোরানসাহেব ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন, কাঁদছে কে?

স্পিরিট সার। ভিলেজ পিপল টোল্ড মি সার।

মেজর জিজ্ঞেস করলেন, আপনি দেখেছেন?

না সার। আমি দেখতে চাই না। দেখুন কান্নাটা এখন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। উত্তমকুমার অর্জুনের শরীরের ঘনিষ্ঠ হলেন। মেজরের নির্দেশে তেঁতুলবনের দিকে গাড়ি ঘুরল। মিনিট পাঁচেক যাওয়ার পর ড্রাইভার জানাল যে, সামনে কোনও রাস্তা নেই, জমিও বেশ উঁচু-নিচু, গাড়ি এগোবে না।

মেজর এবং গোরানসাহেব নেমে দাঁড়াতে অর্জুন বলল, নামুন মশাই।

উত্তমকুমার অদ্ভুত একটা শব্দ করে বললেন, বেশ চলুন। আমি সঙ্গে না গেলে তো পরে কৈফিয়ত দিতে দিতে প্রাণ বেরিয়ে যাবেই, তা হলে সেটা আগেই যাক।

মেজর এবং গোরানসাহেব তৈরি হয়ে এসেছেন। ব্যাগ থেকে লম্বা এবং শক্তিশালী টর্চ বের করে ওঁরা এগোলেন, এবড়োখেবড়ো জমি ডিঙিয়ে শেষ পর্যন্ত ওঁরা জঙ্গলের ধারে পৌঁছে গেলেন। সামনে লম্বা লম্বা তেঁতুলগাছ গায়ে গা লাগিয়ে রয়েছে। এতখানি জায়গা জুড়ে কী করে শুধুই তেঁতুলগাছের জঙ্গল জন্মালো, তা নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা করা যায়। গাছগুলোর নীচে লম্বা লম্বা ঘাস আর লতাপাতার জঙ্গল।

মেজর উত্তমকুমারকে জিজ্ঞেস করলেন, এই জঙ্গলের জিওগ্রাফি সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার কোনও আইডিয়া নেই?

না সার। অনেক লম্বা, দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকে। ওই শুনুন।

অর্জুন খেয়াল করেনি ওরা জঙ্গলের কাছে আসামাত্র ওই কান্না থেমে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে হঠাৎ সেই কান্না যেন জঙ্গলময় ছড়িয়ে পড়ল।

মেজর বললেন, এই জঙ্গলে শকুন ছাড়া অন্য কোনও পাখি থাকে বলে মনে হয় না। এগুলো শকুনের বাচ্চার চিৎকার। পাশ দিয়ে হাঁটা যাক, পথ একটা না একটা থাকবেই। চলুন।

প্রথমে গোরানসাহেব হাঁটছিলেন। তাঁর টর্চের লম্বা লম্বা আলো জঙ্গলের শরীরে পথ খুঁজছিল। ওঁর পেছনেই মেজর। উত্তমকুমার দ্রুত অর্জুনের সামনে চলে এলেন। নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, এঁরা এই জঙ্গলে কী খুঁজছেন?

প্রেতাত্মা। ড্রাকুলা হলে খুব ভাল হয়।

সর্বনাশা

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এঁরা এব্যাপারে খুব এক্সপার্ট।

কী বলছেন আপনি? বড় বড় ওঝারাও এখানে ঢুকতে চায় না। বছরখানেক আগে দুটো দাগি আসামি এই জঙ্গলে এসে লুকিয়ে ছিল। তিনদিন বাদে খুব শকুন উড়ছে দেখে গ্রামের লোক আমাদের খবর দেয়। দিনদুপুরে দুজন ওঝাকে সঙ্গে নিয়ে দশজনের ফোর্স এসে পচা ডেডবডি উদ্ধার করে। তার অর্ধেকটাই শকুনের পেটে চলে গিয়েছিল বলে পোস্টমর্টেম করতে পাঠানো যায়নি। লোকে বলে ওই দুটো দাগির আত্মাই নাকি এখানে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদে, উত্তমকুমার বললেন।

অসম্ভব নয়। এখানকার ওরিজিন্যাল আত্মারা বোধ হয় ওদের থাকতে দিচ্ছে না।

হতে পারে। গ্রামের লোকরা এই কথাই বলে।

দেখা গেল গোরানসাহেব দাঁড়িয়ে আলোর ইশারা করছেন। তাঁর সামনেই একটা পায়েচলা পথ। ওঁরা সেই পথে ঢুকলেন। পথটা হাঁটার পক্ষে মোটেই আরামের নয়। তেঁতুলগাছের যেসব ডাল নীচে নেমে এসেছে তার ছোঁয়া লাগামাত্র কাঁটা ফুটছিল। ওই কাঁটা এত শক্ত এবং ধারালো যে, উত্তমকুমার বারংবার উঃ আঃ করছিলেন। দেখা গেল, শুধু তেঁতুল নয়, কুলগাছও সঙ্গে মিশে আছে।

বাইরে থেকে যতটা ঘন দেখাচ্ছিল, খানিকটা ভেতরে আসার পর তেমন মনে হল না। মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়েই বোধ হয় শকুনের বাচ্চাগুলো তাদের কান্না থামিয়েছে। অর্জুন মেজরের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কোনদিকে যাবেন?

সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

গোরানসাহেব ইংরেজিতে বললেন, ওই জায়গাটা বেশ পরিষ্কার। চলো, ওখানে গিয়ে আমরা অপেক্ষা করি। শকুনের বাচ্চাগুলো যখন আমাদের কথা টের পেয়ে গেছে তখন তাঁরা কেউ থাকলে জানতেই পারবেন। বলতে বলতে তিনি শক্ত হয়ে গেলেন। তাঁর চোখ ঘুরতে লাগল। অর্জুন অবাক হয়ে ওঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে মুখ ফেরাতে দেখতে পেল অন্ধকারে একটা কিছু নড়ছে। মেজরও সেটা বুঝতে পেরে টর্চ জ্বালতেই সাপটাকে দেখা গেল। অন্তত হাতপাঁচেক লম্বা, মোটা, কালো হলুদ রঙের সাপটা মাটি থেকে সোজা হয়ে ফণা তুলে দাঁড়াবার সময় চকিতে ঘটনাটা ঘটে গেল। ওরকম বিদ্যুতের মতো বৃদ্ধ গোরানসাহেব যে ছুটে গিয়ে ওর গলা টিপে ধরতে পারেন, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। বাঁ হাতে টর্চ আর ডান হাতে ভারী সাপটাকে তুলে মাটিতে আছাড় মারছিলেন গোরানসাহেব। তারপর টর্চ এগিয়ে দিলেন অর্জুনের দিকে। অর্জুন সেটাকে ঘুরিয়ে ওঁর ওপর আলো ফেলতেই বাঁ হাতে একটা ছুরি বের করলেন ব্যাগ থেকে। ডান হাতের মুঠোয় ধরা সাপটার মাথার নীচে ছুরি চালাতেই শরীরটা দুটুকরো হয়ে গেল। শরীরটা মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগল। একটা চওড়া ঘাস ছিঁড়ে নিয়ে মাথাটাকে ভাল করে মুড়ে ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন গোরানসাহেব। এই কর্মটি অবাক হয়ে দেখছিলেন উত্তমকুমার। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, উনি কে?

অর্জুন বলল, একজন গবেষক।

আঁ! সাপের মাথা নিয়ে গবেষণা করেন নাকি?

বোধ হয়।

সাঙ্ঘাতিক। ওরকম বিষাক্ত সাপকে কীভাবে ধরলেন!

অর্জুন গোরানসাহেবের ওপর থেকে টর্চের আলো সরায়নি। ওঁর মুখে যে বিকৃতি এসেছিল, ঠোঁটে যে বীভৎস হাসিটা ফুটেছিল তা একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে যেতে সে আলো নেভাল।

গোরানসাহেব মেজরের পাশে এসে দাঁড়ালেন, আমার মনে হয় এবার ফিরে গেলেই ভাল হবে। এখানে থাকা মানে সময় নষ্ট করা।

হঠাৎ?

যেখানে এই সাপ থাকে সেখানে ড্রাকুলা থাকতে পারে না।

গোরান, তোমাকে অনেকবার বলেছি এদেশের কেউ ড্রাকুলার নাম বইয়ের বাইরে শোনেনি। ড্রাকুলার কথা অশিক্ষিত মানুষেরাও জানে না। এরা বিশ্বাস করে ভূত, প্রেত, আত্মায়।

ওঃ নো। এরা মনে করে বাজে আত্মা মানুষের শরীরে ঢুকে তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করায়। আমি কি ভুল বলছি? গোরানসাহেব প্রতিবাদ করলেন।

হ্যাঁ। তা করে। কিন্তু সেই মানুষ দিনেও জেগে থাকে, ঘুমোয় না। আর সাপের সঙ্গে প্রেতাত্মার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু সাপ আছে বলে তারা এই বন থেকে চলে যাবে কেন? বিরক্ত হলেন মেজর।

দুটো সমান শক্তিশালী শত্রু সাধারণত এক জায়গায় থাকে না।

মেজর হাসলেন, শুনেছি সাপ শয়তানের বন্ধু, তুমি শত্রু বলছ কেন?

শয়তান ড্রাকুলা নয়। প্রেতাত্মা নয়। সে ঈশ্বরের শত্রু।

তর্কটা থেমে গেল, কারণ দূরে গাড়ির এঞ্জিনের আওয়াজ শোনা গেল। ওরা নেমে আসার পরে ড্রাইভার গাড়িতেই থেকে গিয়েছিল। ভয় পেয়ে সে গাড়ি নিয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছে না তো?

উত্তমকুমার কান পেতে শুনে বললেন, না সার। এটা আপনাদের গাড়ির আওয়াজ নয়।

তা হলে আপনার জিপটা চলে এসেছে। আমাদের ড্রাইভার মোটা টাকা ভাড়া হিসেবে পাবে, সে না বলে চলে যাবে না। অর্জুন বলল।

না সার। আমার জিপ নয়। এটা একটা ম্যাটাডোরের আওয়াজ। এত রাত্রে হুতুমপুরে ম্যাটাডোর এল কেন?

আওয়াজটা ওদের বাঁ দিকের কোথাও থেমে গেল। অর্জুন মনে করার চেষ্টা করল। ওরা এখানে এসেছে ডান দিক থেকে। অর্থাৎ ওদের গাড়ি রয়েছে ডান দিকে। যদি কেউ এখন গাড়ি নিয়ে আসে তা হলে সে আগের গাড়িটাকে দেখতে পায়নি।

মেজর বললেন, গাড়ির আওয়াজ যখন, তখন মানুষ আসছে। এই যে অফিসার, আপনি বলেছিলেন দিনের বেলাতেই এখানে কেউ আসে না, ভূতপ্রেত নিশ্চয়ই গাড়ি নিয়ে এখানে আসবে না!

হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। অফিসার ধন্দে পড়লেন।

অর্জুন বলল, এখন কেউ কথা না বললে ভাল হয়।

আলো নিভিয়ে ওরা চারজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। ক্রমশ জঙ্গলের শব্দগুলো জোরালো হতে লাগল। এতক্ষণ আলো এবং কথাবার্তার কারণে এই শব্দগুলো যেন মিইয়ে গিয়েছিল। একটু পরে রাতের জঙ্গলের শব্দমালা এত প্রবল হয়ে উঠল যে, কোনটা পাখির ডাক কোনটা ডালপাতা নড়ার শব্দ, তা অৰ্জুন আলাদা করতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল এখন যে-কোনও মুহূর্তে যে-কোনও গাছ থেকেই কেউ একজন নেমে আসবে। যে নামবে সে প্রেতাত্মা ছাড়া অন্য কিছু হলে মানানসই হবে না।

হঠাৎ অন্যরকমের শব্দ কানে এল। কিছু যেন পড়ে গেল। পরপর দুটো। এবং তখনই জঙ্গলের শব্দ আচমকা থেমে গেল। একটু পরে গাড়ির আওয়াজ উঠল। সেটা যে দূরে চলে যাচ্ছে তা বুঝতে পেরে অর্জুন বলল, ওদিকটায় চলুন।

মেজর জিজ্ঞেস করলেন, কেন?

শব্দটা কেন হল দেখতে হবে।

গোরানসাহেবই উদ্যোগী হলেন। বেশ কিছুক্ষণ কুলগাছের ডাল থাকলে এগনোনা যাচ্ছে না। তেঁতুলগাছ আর কুলগাছের অবস্থান এত ঘনিষ্ঠ কী করে হল, তা কে জানে! ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরির পর গোরানসাহেব চিৎকার করে উঠলেন। ওরা কোনওরকমে তাঁর কাছে পৌঁছে চমকে উঠল। দুটো পূর্ণ বয়সের মানুষের শরীর চিত হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। দুজনের উধ্বাঙ্গে কিছু নেই।

মেজর বসে পড়লেন পাশে। পরীক্ষা করে বললেন, ডেড।

অর্জুন বলল, দেখুন তো, কোথাও ক্ষতচিহ্ন আছে কিনা। এটা মার্ডার কেস।

উত্তমকুমার বললেন, কী করে বুঝলেন? এই জঙ্গলে।

দুর মশাই। অর্জুন রেগে গেল, শুনলেন গাড়ির আওয়াজ, কিছু ফেলার শব্দ। যারা ওদের খুন করেছে তারা ডেডবডি দুটোকে এখানে ফেলে গেল, কারণ ওরা জানে এখানে পাওয়া গেলে লোকে বা আপনারা বিশ্বাস করবেন ভূতে মেরেছে। আর যখন পাবেন তখন শকুন অর্ধেক খেয়ে ফেলবে।

উত্তমকুমার যেন ঝাঁকুনি খেলেন। দ্রুত গিয়ে মানুষদুটোর শরীর টর্চের আলোয় পরীক্ষা করতে আরম্ভ করলেন। তারপর দুজনেরই ডান হাতের কবজির ওপরে সামান্য ক্ষতচিহ্ন আবিষ্কার করলেন। গোরানসাহেব বললেন, এই দুজনের শরীরে একফোঁটা রক্ত নেই।

মেজর চমকে উঠলেন, তার মানে?

মনে হয় সমস্ত রক্ত শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে।

কেন? উত্তমকুমার জিজ্ঞেস করলেন?

জানি না। তবে পোস্টমর্টেম করলে আপনারা জানতে পারবেন।

উত্তমকুমার উঠে দাঁড়ালেন, কিন্তু এদের এখান থেকে নিয়ে যাব কী করে? এই জঙ্গলে কেউ সহজে ঢুকতে চায় না।

আমরা এখানে অপেক্ষা করছি। আপনি আমাদের গাড়ি নিয়ে ফিরে গিয়ে আপনার জিপ আর সেপাইদের নিয়ে আসুন।

আপনারা এখানে একা থাকবেন? উত্তমকুমার ইতস্তত করলেন।

অর্জুন হেসে ফেলল, চলুন, আপনার সঙ্গে আমি যাচ্ছি।

গাড়িতে উঠে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আমরা যে পথ দিয়ে এখানে এসেছি সেই পথ ছাড়া এই হুতুমপুরে পৌঁছবার অন্য কোনও পথ আছে?

হ্যাঁ। ধুপগুড়ি দিয়ে একটা পথ আছে।

তা হলে ওই পথ দিয়ে গাড়ি নিয়ে এলে আপনার জিপের লোকজন দেখতে পাবে না। তাই তো?

হ্যাঁ।

আপনার সঙ্গে অয়্যারলেস বা ওয়াকিটকি নেই?

না।

অর্জুন বুঝল, যে গাড়িটা মৃতদেহ ফেলে গেছে তাকে ধরবার কোনও সুযোগ নেই। শরীর থেকে রক্ত বের করে নিয়ে যাদের মেরে ফেলা হয়েছে তাদের অপরাধ কী? সেই রক্ত নিয়ে কী করছে ওরা? চোখের সামনে যদি ঘটনাটা ঘটত, তা হলে গ্রামের লোক বিশ্বাস করত কোনও প্রেতাত্মা এই লোকদুটোর রক্ত চুষে নিয়েছে। এইভাবেই বোধ হয় ড্রাকুলার জন্ম হয়েছিল।

পুলিশের জিপে মৃতদেহ তুলে দিয়ে ওরা হখন শহরের দিকে ফিরে আসছিল তখন মেজর বললেন, ভোর হচ্ছে, এখন কি আর ঘুম আসবে?

অর্জুন হাসল, গেলেন আত্মা খুঁজতে, পেলেন মৃতদেহ।

মেজর বললেন, ভাগ্যিস গিয়েছিলাম। নইলে এই দুটো মৃতদেহ পচে গলে জঙ্গলে পড়ে থাকত শকুনের খাদ্য হয়ে।

ওরা যখন শহরে পৌঁছল তখন আলো ফুটেছে। অর্জুন বলল, থানার সামনে আমাকে নামিয়ে দিন। খবরটা দিয়ে যাই। অবশ্য এখন অবনীবাবু নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছেন। তবু—।

অবনীবাবু কে? মেজর জানতে চাইলেন।

থানার বড়বাবু।

থানার সামনে পৌঁছে অর্জুন অবাক! এই ভোরে অবনীবাবু চিন্তিত মুখে থানার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।