০৪. দুটো মোটরবাইককে তীব্র গতিতে

দুটো মোটরবাইককে তীব্র গতিতে ছুটে যেতে দেখল অর্জন। হেডলাইটের আলোর পেছনে থাকায় চালকের মুখ দেখা যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রতিটি মোটরবাইকে দুজন বসে ছিল। অর্জুন অবনীবাবুর দিকে তাকাল।

অবনীবাবু মিলিয়ে যাওয়া মোটরবাইকের আলোর দিকে তাকিয়ে বললেন, এত জোরে চালালে তো অ্যাক্সিডেন্ট হবেই।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি তখন বললেন, যারা ছিনতাই করছে তারা মুখে মুখোশ পরে থাকে। তাই তো?

অবনীবাবু বললেন, হ্যাঁ। কেন বলুন তো?

আপনার ঠিক মনে আছে?

তাই তো বলেছিল। মুখ দেখতে পায়নি, ঢাকা ছিল।

মুখ তো কাপড় দিয়ে ঢাকা যেতে পারে, হেলমেটেও ঢাকা পড়ে।

হেলমেটে? অবনীবাবু যেন নিজেকেই প্রশ্ন করলেন।

জায়গাটা সুনসান। ওপাশে কিছু জোনাকি এলোমেলো উড়ছে। মানুষজনের চিহ্ন নেই এদিকে। কিন্তু মশা আছে। তারা সক্রিয় হয়ে উঠতেই সেপাইরা চড় মারতে লাগল নিজেদের শরীরে। অবনীবাবু বললেন, হ্যাঁ, হতে পারে। আমার ঠিক পরিষ্কার মনে পড়ছে না। তা হেলমেট পরা থাকলে ওরা এসেছিল মোটরবাইকে চেপে। একটু আগে দুটো মোটরবাইককে চলে যেতে দেখলে? আমরা কি ওদের চেজ করব?

প্রথমত, এত পরে ধরতে পারা যাবে না। দ্বিতীয়ত, ওরাই যে ছিনতাই করছে। তা প্রমাণ করবেন কী করে? চলুন, এখানে আর কতক্ষণ থাকা যায়?

অবনীবাবু একমত হলেন। গাড়িটা রাস্তার ওপর উঠে আসার পর বললেন, কয়েকবার এই তিনমাইল রাস্তাটা টহল দিয়ে যাই। অন্তত ওপরওয়ালাকে বলা যাবে।

আধমাইলটাক যাওয়ার পর ওরা একটা মারুতি কারকে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এর আগে যখন এই পথে এসেছে তখন মারুতিটা ছিল না। অবনীবাবু গাড়ি দাঁড় করাতে বললেন। হেডলাইট ঘোরাতেই দেখা গেল একটা লোক স্টিয়ারিং-এর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। পেছনেও একজন রয়েছে।

তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে ওরা ছুটে গেল। যে গাড়ি চালাচ্ছিল তার জ্ঞান নেই। টর্চের আলোয় দেখা গেল কপালের একপাশ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। পেছনের সিটে যিনি বসে আছেন তাঁর মুখে টেপ লাগানো। হাত দুটো পেছনে বাঁধা। টর্চের আলোয় তাঁর বিস্ফারিত চোখ দেখা গেল। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ভদ্রলোককে বন্ধনমুক্ত করতেই তিনি হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলেন।

অবনীবাবু বললেন, আরে আপনি? কী হয়েছে?

কী আর হবে? সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম মশাই। ডাকাতি। ডাকাতি হয়ে গেছে।

ভদ্রলোকের নাম নবগোপাল ঘোষ। শহরের নামকরা কন্ট্রাক্টর। তাঁকে শান্ত হতে বলে অবনীবাবু ড্রাইভারকে নিজের গাড়িতে তুলে তখনই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন। পুলিশরাও ওই গাড়িতে ফিরে গেল।

নবগোপালবাবু হঠাৎই ঝিমিয়ে গেলেন। দু হাতে মুখ ঢেকে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং সেই অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, ও মরে গেছে?

না। মাথায় আঘাত লেগেছে। কী হয়েছিল বলুন তো?

আমার সব নিয়ে গিয়েছে ওরা। দু-দুলক্ষ টাকা ব্রিফকেসে ছিল।

কী করে নিল?

এই হতচ্ছাড়া কেশব, আমার ড্রাইভার, এত জোরে গাড়ি চালায় যে নাড়িভুড়ি পেট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বার্নিশের মোড়ে ওকে ধমকাতে এমন আস্তে চালাতে লাগল যে, গোরুর গাড়িকেও হার মানায়। ও যদি আর একটু জোরে চালাতো তা হলে এই জায়গা আমরা অনেক আগেই পেরিয়ে যেতাম।

তারপর? অবনীবাবু একটু অধৈর্য গলায় প্রশ্ন করলেন।

ঠিক ওখানে আসামাত্র দেখলাম একটা কালো বেড়াল রাস্তা কেটে দিয়ে ওপাশে চলে গেল। চোখে আলো পড়ায় ওর চোখ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। কেশব সঙ্গেসঙ্গে গাড়ি থামিয়ে দিল। বেড়াল রাস্তা কাটলে গাড়ি না থামালে নাকি অ্যাক্সিডেন্ট হয়। তার ওপর কালো বেড়াল! আরে, তুই যদি আর একটু জোরে চালাতিস তা হলে জায়গাটা পেরিয়ে যাওয়ার পর তো বেড়ালটা রাস্তা পার হত। গাড়ি থামাতেই ওরা ছুটে এল দুপাশ থেকে। কেশব বাধা দিতেই ওরা ওকে মারল।নবগোপালবাবু বড় শ্বাস নিলেন।

কী দিয়ে মারল?

দেখিনি। অন্ধকারে আমি তখন ব্রিফকেস আঁকড়ে বসে আছি। নবগোপালবাবুর নাক দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের হল, তারপর আমাকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে ওই অবস্থা করে ব্রিফকেস নিয়ে ওরা চলে গেল। এ কী ভয়ঙ্কর অরাজকতা। উঃ।

অবনীবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ঠিক কত টাকা ছিল ওর মধ্যে?

দু লক্ষ, টু লাখস! গোপালবাবু মাথা নাড়লেন। ওদের কারও মুখ দেখেছেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল। মুখ? ইয়েস। না, না। দেখিনি। ঢাকা ছিল।

বাঙালি?

কী জানি? ইংরেজিতে কথা বলছিল। আমার কী হবে এখন?

আমি জলপাইগুড়ি থানার ওসি। চলুন, আপনার গাড়িতে আপনাকে এখন একটু থানায় নিয়ে যাচ্ছি। একটা ডায়েরি করতে হবে আপনাকে।

পুলিশ? আমার পুলিশের ওপর কোনও আস্থা নেই।

ঠিক আছে, কিন্তু যা নিয়ম তা তো পালন করতে হবে। আর ইনি হচ্ছেন অর্জুন। পুলিশ নন। প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটার। অবনীবাবু অর্জুনকে দেখালেন।

হঠাৎ অর্জুনের হাত চেপে ধরলেন নবগোপালবাবু, আমি ভাই তোমার কথা শুনেছি। তুমি টাকাটা উদ্ধার করে দাও, আমি তোমাকে টেন পার্সেন্ট কমিশন দেব। আমি এককথার মানুষ। হ্যাঁ।

আপনি বলছেন ডাকাতদের মুখ দেখতে পাননি। ওরা কারা তাই তো খুঁজে বের করা মুশকিল হবে। কীরকম বয়স বলে মনে হয়েছে? অর্জুন জিজ্ঞেস করল। নবগোপালবাবু তখনও ওর হাত ধরে রেখেছিলেন। প্রশ্ন শুনে মাথা নাড়লেন প্রবলভাবে, তখন ওসব মাথায় ছিল না ভাই।

ওদের মাথায় হেলমেট ছিল? মনে করে দেখুন?

হেলমেট? ইয়েস। ছিল। হেলমেটে মুখ ঢাকা ছিল বলে চিনতে পারিনি। একজন টর্চ জ্বেলেছিল, তার আলো হেলমেটে পড়ায় চকচক করছিল সেটা। তিনি বেশ জোরেই বললেন, তাই মাথাগুলো গোল-গোল দেখাচ্ছিল।

নবগোপালবাবুর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে এলেন অবনীবাবু। ভদ্রলোক পেছনের আসনে বসে ক্রমাগত নাক দিয়ে শব্দ করে চলেছেন। থানায় পৌঁছে ওঁর বিবৃতি লিপিবদ্ধ করার পর ওঁকে যখন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হল তখন রাত প্রায় বারোটা।

দুজনে একা হওয়ার পর অবনীবাবু বললেন, কী দুর্ভাগ্য বলুন। নাকের ডগার ওপর দিয়ে ডাকাতি করে গেল, অথচ কিছুই করতে পারলাম না।

এখন পর্যন্ত পারেননি, পারবেন না তা তো নয়।

দুর! একটাও ক্ল পাওয়া যাচ্ছে না।

না, যাচ্ছে। প্রথমত, একটা কালো বেড়াল, যে খুব ট্রেইন্ড। এই শহরে নিশ্চয়ই বেশি লোকের কাছে ট্রেইন্ড কালো বেড়াল নেই।

কালো বেড়াল? অবনীবাবু হতভম্ব।

হ্যাঁ। ওটা ঠিক সময়ে রাস্তা পার হয় বলে গাড়ি থেমে যায়।

আপনি বলছেন যারা ডাকাতি করছে তারাই বেড়ালটাকে ব্যবহার করছে?

তাই তো স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত, মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল। তার মানে ওরা এসেছিল বাইকে চেপে। বাইকে চাপতে প্রৌঢ়রা তেমন পছন্দ করে না। তৃতীয়ত, ওরা কথা বলেছে ইংরেজিতে। সে ইংরেজি কতটা ঠিকঠাক তা নবগোপালবাবুর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ধরে নিতে পারি একেবারে অশিক্ষিত ডাকাত ইংরেজিতে কথা বলবে না। বলতে বলতে অর্জুন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল, একটা টেলিফোন করতে পারি?

নিশ্চয়ই।

যন্ত্রটাকে টেনে নিয়ে নম্বর ঘোরালো অর্জুন। এত রাত্রে জেগে থাকার কথা নয়, রিঙ হয়েই যাচ্ছে। তারপর ঘুম-ঘুম গলা কানে এল, হ্যালো!

অর্জুন বলছি।

ও। এত রাত্রে? কী ব্যাপার?

বাধ্য হয়েই বিরক্ত করছি। আপনি যদিও বলেছেন কোনও অন্যায় করলে সমর্থন করবেন না, তবু মনে হল আপনাকে জানানো উচিত।

তুমি কোত্থেকে কথা বলছ?

থানা থেকে।

ও বুঝতে পারছি। আইন আইনের পথে চলুক, এ বাপারে আমার কিছু বলার নেই। এ পি সাহেব টেলিফোন রেখে দিতেই অর্জুন একটা বাইকের আওয়াজ শুনতে পেল। বাইরে সেপাইয়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, তারপর প্রায় জোর করে যে দরজায় এসে দাঁড়াল তাকে এই সময়ে এখানে দেখার কথা চিন্তাই করেনি অর্জুন।

অবনীবাবু অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? কী চাই আপনার?

উত্তেজনা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। সন্দীপ উত্তেজিত কিন্তু তাই বলে অর্জুনকে চিনতে পারছে না এখন? একবার তার দিকে চোখ বুলিয়ে অবনীবাবুর সামনে এগিয়ে গেল, আপনি তো ও.সি, আপনার সাহায্য চাই।

কী ব্যাপারে?

আমার বেড়ালটাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

কী? অবনীবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, এত রাত্রে ইয়ার্কি মারতে এসেছেন?

মোটেই না। আপনার সঙ্গে ইয়ার্কি মারার কী দরকার আমার? আমি থানায় এসেছি অভিযোগ জানাতে। এই বেড়ালটা সাধারণ বেড়াল নয়। অত্যন্ত বুদ্ধিমান, আমার প্রিয়। ওকে কেউ চুরি করেছে আমাদের বাড়ি থেকে। সন্দীপ বলল।

অবনীবাবু হতাশায় কাঁধ নাচালেন, দেখুন, এত রাত্রে আমি কোনও বেড়াল নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নই। আপনি প্রয়োজন মনে করলে ডায়েরি করে যেতে পারেন। বেড়ালের খোঁজ পেলে জানিয়ে দেওয়া হবে। কথা শেষ করেই বেল বিপলেন তিনি। একজন সেপাই এগিয়ে আসতে তাকে বললেন, এঁকে এস. আই. সাহেবের কাছে নিয়ে যাও, ডায়েরি করবেন।

অর্জুন এগিয়ে গেল, নমস্কার সন্দীপবাবু, আমাকে চিনতে পারছেন?

সন্দীপ চোখ ছোট করল, আপনি? এখানে?

ও.সি সাহেবের সঙ্গে একটু গল্প করছিলাম। আপনার সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি। বেড়ালটাকে কখন থেকে দেখতে পাচ্ছেন না? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

অবনীবাবু বাধা দিলেন, আমি তো ওঁকে বললাম ডায়েরি করে যেতে।

সেটা নিশ্চয়ই উনি করবেন। কিন্তু ওঁর বেড়াল সাধারণ বেড়াল নয়। নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু বিশেষত্ব আছে। উনি তো বললেন, বুদ্ধিমান বেড়াল। তাই আপনার উচিত ওঁর কথা একটু মন দিয়ে শোনা। সরি, উচিত শব্দটা ব্যবহার করা ঠিক হল না। কিন্তু ভেবে দেখুন, বাড়ির বেড়ালকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমরা কি কেউ রাতদুপুরে থানায় ছুটে আসতাম? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

সন্দীপ মাথা নাড়ল, ঠিক। এটাই আমি ওঁকে বোঝাতে চাইছিলাম।

অবনীবাবু অর্জুনের দিকে তাকালেন, বেশ।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, বেড়ালটাকে শেষবার কখন দেখা গেছে?

সন্ধেবেলায়। ও নিয়ম করে দিনে দুবার বাগানে যায়। আজ পর্যন্ত ঘর নোংরা করেনি। আমিই নিয়ে যাই। কিন্তু আজ একটু তাড়া থাকায় মাকে বলেছিলাম বাগানে নিয়ে যেতে। বলে বেরিয়ে গিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। একটু আগে ওর খোঁজ করতে দেখলাম ও নেই।

আপনার মা কী বলছেন?

মা বলছেন বেড়ালটা নাকি বাগান থেকে সোজা সিড়ি দিয়ে উঠে আমার ঘরে চলে গিয়েছিল। ও আমার ঘরেই থাকে।

তারপর?

অথচ ও যায়নি। মা ভুল দেখেছে অথবা ভেবে নিয়েছে।

অবনীবাবু হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, বেড়ালটা আপনার কাছে দামি?

হ্যাঁ নিশ্চয়ই। পোষা প্রাণী তো, দামি হবেই। সন্দীপ জবাব দিল।

আপনি বলেছেন ও খুব বুদ্ধিমান ছিল। কীরকম? অবনীবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

আমি যা বলতাম, ও বুঝতে পারত। এমনকী যদি বলতাম সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আয়, ও মুখে করে নিয়ে আসত। কখনও বাগান ছাড়া বাড়ির বাইরে যেত না। আমি ওকে ফেরত চাই অফিসার।

কীরকম দেখতে ছিল?

কালো। একটু বেশি কালো। আমি ওকে চারদিন বয়সে একটা ভুটিয়ার কাছ থেকে এনেছিলাম। মনে হয় ও ভুটিয়া বেড়াল। গায়ের লোমগুলো ঘন আর সাধারণ বেড়ালের চেয়ে বড়।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, অন্ধকারে ওর চোখ জ্বলে?

ঝট করে ঘাড় ঘোরালো সন্দীপ, ওই ধরনের যে-কোনও প্রাণীর চোখ অন্ধকারে জ্বলে। কিন্তু তাই বলে আমার বেড়াল মোটেই হিংস্র নয়।

অবনীবাবুর নির্দেশে খাতা এল। সেখানে সন্দীপ তার নাম-ঠিকানা এবং অভিযোগ লিখল। খাতাটা এস, আইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ডায়েরির জন্য পাঠিয়ে দিলেন তিনি।

হঠাৎ অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন?

সন্দেহ? বেড়াল চুরি কেউ করবে বলে ভাবিনি। তবে একটা লোক দিনকয়েক আগে এসেছিল। আমার বেড়ালটাকে দেখতে চাইছিল। লোকটার ভাবভঙ্গি ভাল লাগেনি বলে আমি তাকে পাত্তা দিইনি।

কোথায় থাকে সে?

আমি জানি না।

আচ্ছা সন্দীপবাবু, আজ সন্ধেবেলায় বাড়ি থেকে বেরোবার পর আপনি কোথায় গিয়েছিলেন, কাদের সঙ্গে ছিলেন? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

তার সঙ্গে বেড়াল চুরির কী সম্পর্ক?

আপনার বলতে আপত্তি আছে?

হ্যাঁ, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

অবনীবাবু বোধ হয় আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। বললেন, আরে ভাই জলপাইগুড়ি শহরে তোমার বয়সী ছেলে সন্ধেবেলা এমন কী করতে পারো, যা বলতে অসুবিধে হচ্ছে?

সন্দীপ এক মুহূর্ত ভাবল, আমরা আড্ডা মারছিলাম।

কোথায়? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

এটাও বলতে হবে?

আমি বুঝতে পারছি না, আপনি যদি কোনও অন্যায় না করে থাকেন তা হলে বলতে অসুবিধে হচ্ছে কেন?

আমি অন্যায় করেছি বলে মনে হচ্ছে আপনার? সন্দীপ হঠাৎ রেগে গেল, আপনি আমাকে অপমান করছেন।

অবনীবাবু বললেন, দেখুন ভাই, আমরা খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছি। আজ সন্ধের পর তিস্তা ব্রিজের ওপাশে ডাকাতি হয়েছে। ড্রাইভার খুব ইনজিওরড। এর আগেও হচ্ছিল কিন্তু কেউ আহত হয়নি।

তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কোথায়?

আমি একবারও বলিনি সম্পর্ক আছে। যারা ডাকাতি করেছে তারা মোটরবাইকে চেপে গিয়েছিল। এই শহরেরই ছেলে।

কী করে বুঝলেন এই শহরের ছেলে?

অনুমান। আপনিও তো মোটরবাইকে এসেছেন।

সন্দীপ হঠাৎ শব্দ করে হাসল, আমি কোন পরিবারের ছেলে তা আপনি জানেন না। তা ছাড়া যদি ডাকাতি করে থাকি তা হলে ভুলেও থানায় আসতাম না।

সেটা ঠিক। আবার বেঠিকও হতে পারে। যাক গে, আপনি যেতে পারেন, যদি খবর পাই তা হলে বেড়ালটাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করব।

অবনীবাবুর কথা শেষ হলে সন্দীপ সুবোধ বালকের মতো উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অর্জুন বলল, আজ রাত্রে ঘুমের বারোটা বেজে গেল।

কেন?

ডাকাতরা একটা বেড়াল ব্যবহার করেছে গাড়ি থামাতে। সন্দীপের বেড়াল যদি ওরা চুরি করে নিয়ে যায়, তা হলে সন্দীপ নির্দোষ। আবার ডাকাতির পর যদি বেড়াল চুরি যায়, তা হলে ও এখানে আসবে কেন?

আপনি কী করে মনে করছেন দুটো বেড়াল একই।

হয়তো ভুল হচ্ছে। কিন্তু এমনও তো হতে পারে বেড়ালটা আদৌ চুরি যায়নি। সন্দীপ একটা বাহানা করে গেল। অর্জুন বলল।

উঠুন, বাড়ি যান। কাল সকালে ভাবা যাবে।

দাঁড়ান। অর্জুন টেলিফোনের কাছে গেল। নাম্বার ঘুরিয়ে সাড়া পেতেই বলল, মাসিমা, বেড়ালটাকে পাওয়া গিয়েছে?

পাওয়া যাবে কেন? খোকা যে বলল ওটাকে কোন তান্ত্রিকের কাছে রেখে এসেছে। কে বলছ বাবা? সন্দীপের মা জিজ্ঞেস করল।