১৩. আটলান্টিক নগর

আটলান্টিক নগর। এমন বিস্ময়কর জায়গা এর আগে দ্যাখেনি অর্জুন। আসার পথে, নগর যখন এসে পড়েছে তখন রাস্তার দুপাশে ছোট-ছোট মোটেল অথবা হোটেলের বিজ্ঞাপনে যে আমন্ত্রণ, তা এমন কিছু আকর্ষক নয়। কিন্তু দূর থেকে সারি-সারি রঙিন উঁচু বাড়িগুলো পলকেই চোখ টেনে নেয়। মেজর বলছিলেন, সন্ধের পর এখানে আলোর খেলা শুরু হয়ে যায়। নানা রঙের আলোর ফোয়ারা আকাশে ছিটকে ছিটকে ওঠে হেকিন্তু জায়গাটা ভয়ঙ্কর।

সিম্বা গাড়ি চালাচ্ছিল। বাংলা ও বুঝতে পারছে না এবং মেজর তা নিয়ে একটুও মাথা না ঘামিয়ে মাতৃভাষায় বলে যাচ্ছিলেন।

ভয়ঙ্কর কেন? অর্জুন জানতে চাইল।

ওই যে বাড়িগুলো দেখছ, ওগুলো হল ক্যাসিনো। প্রতিটি ক্যাসিনোর বিভিন্ন তলায় জুয়ো খেলার ব্যবস্থা আছে। হরেকরকম জুয়ো। লোকে এখানে তাই আসে। যে কখনও জুয়ো খেলেনি সে-ও এখানে এলে লাক ট্রাই করে। কিন্তু দশ হাজারে একজন হয়তো হাজার ডলার জিতে ফিরে যায়। তা হলে বাকি নহাজার নিরানব্বই জনের পকেট খালি হয়ে যায় এখানে। বুঝতে পারছ? মেজর নড়েচড়ে বসলেন।

তাজমহলের কথা বলা হয়েছিল সিকে। সে পেছনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে এল যেখানে, সেখানেই পার্কিং লটে ঢোকার পথ। ওদের ওখানেই গাড়ি ছেড়ে দিতে হল। গেটের মুখের গুমটি থেকে সিম্বাকে একটা রসিদ দিয়ে ওদের লোক গাড়ি চালিয়ে নিয়ে চলে গেল। সিম্বা বলল, এখানে পার্কিং ফি লাগে না।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কেন?

ওরা ধরে নেয় যে গাড়ি রাখছে সে এখানেই গ্যাম্বলিং করবে। তাই এটুকু সুবিধে তাকে দেওয়া দরকার।  সিম্বা হাসল, কিন্তু আমরা আগে ক্যাসিনোতে ঢুকব, না সমুদ্র দেখব? সমুদ্র দেখতে আমার খুব ভাল লাগে।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, সমুদ্র এখান থেকে কতদূরে?

মেজর বললেন, দুপা হাঁটলেই দেখতে পাবে।

ওরা ক্যাসিনোর পাশ দিয়ে এগিয়ে আসতেই একটু উচু চওড়া রাস্তা দেখতে পেল। রাস্তাটা নির্জন। আর সেই রাস্তায় পা দিতেই অর্জুন বলে উঠল, বাঃ।

সামনেই সমুদ্র। রাস্তার ঠিক উলটোদিক থেকে বালি নেমে গিয়েছে জলে। স্থির সবুজ জল চুপচাপ নিঃসাড়ে পড়ে রয়েছে যেন। একটুও ঢেউ নেই, কোনও গর্জন নেই। তাই এত কাছে এসেও এই সমুদ্রের অস্তিত্ব টের পায়নি অর্জুন। সে জিজ্ঞেস করল, এই অতলান্তিক?

ইয়েস মাই বয়। মেজর গদগদ গলায় বললেন!

কিন্তু আমি পড়েছিলাম অতলান্তিক খুব ভয়ঙ্কর। প্রচণ্ড ঢেউ। এ তো দেখছি একেবারে দিঘির মতো শান্ত। অর্জুনের গলায় বিস্ময় চাপা ছিল না।

মেজর বললেন, এখন বোধ হয় ভাটার সময়। রাত্রে একবার দেখেছি প্রচণ্ড গর্জন করছে ঢেউগুলো। সমুদ্রের তো অনেক রূপ থাকে।

অর্জুন দেখল, রাস্তা থেকে কাঠের লম্বা একটা প্ল্যাটফর্ম চলে গিয়েছে সমুদ্রের গায়ে। সেখানে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নৌকোয় চড়ার ব্যবস্থা আছে। সিম্বা জিজ্ঞেস করল, আমি যদি একটু বোটিং করি তা হলে নিশ্চয়ই তোমরা আপত্তি করবে না?

অর্জুনেরও ইচ্ছে করছিল কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে মাথা নাড়ল, ঠিক আছে। তুমি যাও। আমরা পরে তোমাকে ডেকে নেব।

সঙ্গে সঙ্গে সিম্বা পাখির মতো পা ফেলে হাঁটতে শুরু করল প্ল্যাটফর্মের দিকে।

তাজমহল ক্যাসিনোর সঙ্গে সাজাহানের তাজমহলের কোনও মিল নেই। কিন্তু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে অর্জুনের মনে হল কুবেরের বাড়িতে চলে এসেছে। চারপাশে বৈভবের ছড়াছড়ি। নানা রঙের আলোয় ভেতরটায় হাজার দেওয়ালি একত্রিত। পরপর স্লট মেশিনগুলো লাইন দিয়ে সাজানো। তাদের সামনে টুলে বসে এইসময়েও টুরিস্টরা খেলে যাচ্ছেন। সে একটি মেশিনের সামনে দাড়িয়ে খেলা দেখল। মেশিনটির ওপর লেখা রয়েছে, পঁচিশ সেন্ট। যিনি খেলছিলেন তিনি একটা চাকতি গর্তে ফেলে হ্যান্ডেল ধরে টানছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সামনের কাচের নীচে নম্বরগুলো বাই বাই করে ঘুরতে-ঘুরতে স্থির হয়ে গেল। পাশের ফ্রেমে ছবি টাঙানো রয়েছে। কোনও-কোনও নম্বর অথবা ছবি যদি পাশাপাশি আসে তা হলে ওই এক চাকতির বিনিময়ে কত ডলার পাওয়া যাবে তা ওখান থেকে জানা যাচ্ছে। পঁচিশ সেন্টের মেশিন যখন, তখন এক ডলার দিলে চারটে চাকতি পাওয়া যাবে এদের কাউন্টার থেকে। অর্জুন দাড়িয়ে দেখল, লোকটা দশটা চাকতি ফেলল কিন্তু কোনও ডলার পেল না।

ওরা আর একটু পা ফেলতেই চারধার থেকে ঝনঝন শব্দ ভেসে এল। জলতরঙ্গের সুর বাজছে বিভিন্ন মেশিন থেকে। ঝনঝনিয়ে কয়েন পড়ছে মেশিন থেকে। কেউ এক ডলার, কেউ পঞ্চাশ। অর্জুন দেখল প্রাপ্তিতে উল্লসিত নয় অনেকেই। কী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কয়েন পড়া শেষ হলে সেগুলোকে একটা ছোট প্লাস্টিকের বাকেটে ঢেলে আবার নতুন করে খেলা শুরু করছে তারা। এদের বোধ হয় অল্পে খুশি হওয়ার দিন চলে গিয়েছে। লোকগুলোর জন্যে কীরকম মায়া হচ্ছিল অর্জুনের। পেয়েও যারা আনন্দ করতে ভুলে যায় তাঁরা কীজন্যে বেঁচে থাকে?

ক্যাসিনোর বিশাল হলঘরটিতে অনেক ধাপ। স্লট মেশিনে যেমন খেলা চলছে, তেমনই বসেছে তাসের আসর। সেখানে চড়া হারে জুয়ো খেলা হচ্ছে। সেদিকটায় গেল না অর্জুন। একটা বড় বোর্ডকে ঘিরে বেশ ভিড়। বোর্ডের ভেতর চাকা ঘুরছে। চাকার গায়ে একটা লম্বা হাতল। ঘুরতে ঘুরতে চাকাটা স্থির হলে হাতলটি যে নম্বরের ওপর পৌঁছবে সেই নম্বরে যারা বাজি ধরেছিল তারা ডলার পাবে। মেজর অর্জুনের হাত ধরে টেনে ইশারা করতে সে দেখল বিশাল লম্বা একটি লোক ময়লা পাজামা আর ঝুল পাঞ্জাবি ধরনের জামা পরে কোনওদিকে না তাকিয়ে হেঁটে আসছে। তার দুপাশে সুট পরা দুটো লোক এবং পেছনে ব্যাগ হাতে একটি মানুষ হেঁটে আসছে তাল রেখে। কোনওদিকে না তাকিয়ে লোকটা যে মেশিনের সামনে গিয়ে দাড়াল তার ওপর লেখা একশো ডলার। অর্থাৎ ওখানে এক-একটি একশো ডলারের চাকতি ফেলতে হবে। লোকটি হাত বাড়াতেই ব্যাগ হাতে সহকারী কয়েকটা চাকতি বের করে সেই হাতে রাখল। লোকটি সেই চাকতি মেশিনে ফেলে হ্যাণ্ডেল ঘোরাল। ভেতরের নাম্বারগুলো পাক খেল কিন্তু কোনও লাভ হল না। অর্জুন দেখল দশবার চাকতি দেওয়ার পরও যখন মেশিন থেকে কিছু বেরিয়ে এল না, তখন লোকটি অন্যদিকে এগিয়ে গেল। বাকিরা যে তার দেহরক্ষী এবং সেক্রেটারি তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। কয়েক মুহূর্তে হাজার ডলার চলে গেলেও লোকটির কোনও কিার হল না, অথচ ওর পোশাক মোটেই ধোপদুরস্ত নয়।

মেজরও ভদ্রলোককে দেখছিলেন। চলে যাওয়ার পর বললেন, সত্যিকারের ধনী মানুষেরা পোশক সম্পর্কে কীরকম উদাসীন হয়, দেখলে?

দেখলাম।

এইজন্যেই বলে শূন্য হাঁড়ি থেকে বেশি শব্দ হয়।

অর্জুন এসব কথায় কান দিচ্ছিল না। একশো ডলারের মেশিন আছে মানে সেখানে খেলার লোকও আছে। জলপাইগুড়িতে কালীপুজোর রাত্রে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কঁচা টাকা হাতে পেয়ে জুয়ো খেলে। বিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা খেলতে তাদের দ্বিধা হয় না। এই লোকটার কাছে একশো ডলারের মূল্য একশো টাকার বেশি নয়। তবে যারা কষ্ট করে রোজগার করে তারা অবহেলায় টাকা ওড়ায় না। এই লোকটার রোজগার নিশ্চয়ই সাদা পথে নয়। এটুকু ভেবেই হেসে ফেলল অর্জুন। অন্যের ব্যাপারে অযথা সে মাথা ঘামাচ্ছে। সে এই ক্যাসিনোতে এসেছে যে কাজে, সেটাই এখনও করা হয়নি।

মেজরকে সেকথা মনে করিয়ে দিতেই খোঁজা আরম্ভ হয়ে গেল। স্লট মেশিনের ভিড়ে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। শেষপর্যন্ত ওরা এক ডলারের মেশিনগুলোর সারিতে ভদ্রমহিলাকে টুলের ওপর বসে থাকতে দেখল। দূর থেকে তাদের দেখেই মহিলা উঠে দাঁড়ালেন। ওঁর মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে, উনি একটু ধন্দে আছেন।

অর্জুন এগিয়ে গিয়ে বলল, আমি অর্জুন, আপনি নিশ্চয়ই গ্যাব্রিয়েলা?

ভদ্রমহিলার মুখে হাসি ফুটল, হ্যাঁ। আপনাদের আমি খুব কষ্ট দিলাম। এই এতদূরে টেনে আনা খুব অন্যায়। কিন্তু আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আপনাদের নিশ্চয়ই খুব অসুবিধে হয়েছে।

মেজর বললেন, তা তো হয়েছেই। আপনি টেলিফোনে অর্জুনকে বললেন জ্যাকসন হাইটে যেতে, সেটা আমার বাড়ির কাছে। কিন্তু আটলান্টিক সিটি ইজ টু ফার।

অর্জুন বলল, না, না। এখানে না এলে এসব ব্যাপার অজানাই থেকে যেত। এখন গ্যাব্রিয়েলা, আপনি কী বলতে ডেকেছেন সেটা বলতে পারেন।

গ্যাব্রিয়েলা চারপাশে তাকালেন। তারপর বললেন, এখানে নয়। সমুদ্রের ধারে একটা রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলব, চলুন।

ভদ্রমহিলা আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। মেশিনগুলোর পাশ কাটিয়ে মূল দরজার দিকে এগোনোর সময় মেজর বললেন, আবার বাইরের রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি কেন? ক্যাসিনোর ভেতরের রেস্টুরেন্টে অর্ধেক দামে খাবার পাওয়া যায়।

অর্জুন বলল, সে কী!

শুধু তাই? এদের হোটেলে থাকলে একশো ডলারের ঘর চল্লিশ ডলারে পাওয়া যায়। এমনি এমনি এত শস্তা কেউ দেয়? দিচ্ছে তুমি এখানে জুয়ে খেলবে বলে।

কিন্তু জুয়ো খেলে কেউ যদি জিতে যায়?

এইসব মেশিন কম্পিউটারের নির্দেশে চলে। কম্পিউটার ঠিক করে রাখে কখন কত ডলার মেশিন থেকে বের হবে। ভাগ্যবানদের সংখ্যা ধরে নাও কুড়ি <জারে একজন, যে বড়জোর হাজার ডলার পেতে পারে। এখানে ঢুকলে জিতে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটা কী বলো তো? ভদ্রমহিলা বললেন আর আমরা এতদূরে চলে এলাম। ওঁর হাবভাবে কীরকম রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। মেজর নাক টানলেন।

উনি কী বলবেন তা না শুনলে ব্যাপারটা বুঝব কী করে?

ক্যাসিনো থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলেন গ্যাব্রিয়েলা। পাশের ক্যাসিনোর নাম সিজার। জুলিয়াস সিজারের বিরাট মার্বেল মূর্তি বসানো আছে ক্যাসিনোর সামনে। সেটার সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে সমুদ্রের দিকে চলে গেলেন মহিলা। ওঁকে অনুসরণ করার সময় অর্জুন লক্ষ করছিল, ভুলেও ভদ্রমহিলা একটিবারও পেছন ফিরে তাকাচ্ছিলেন না। ব্যবধানটা হাতদশেকের বলে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না ওদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে।

বালির ওপর বেশ উঁচুতে রেস্টুরেন্ট। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে জানলার পাশে বসল গ্যাব্রিয়েলা। ওরা উলটো দিকে বসতেই সমুদ্র দেখতে পেল। শান্ত সমুদ্রে প্রচুর নৌকো ভাসছে। সিম্বা নিশ্চয়ই ওর একটায় রয়েছে।

গ্যাব্রিয়েলা বললেন, জায়গাটা বেশ সুন্দর। তাই না?

মেজর বললেন, তা তো বটেই। কিন্তু আমি ভাবছি ওই নৌকোগুলোর কোনটায় আমাদের সিম্বা আছে! তুমি দেখতে পারছ অর্জুন?

অর্জুন হেসে ফেলল, না, সেই চেষ্টা করা বোকামি।

সিম্বা কে?

আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে যে মেয়েটি, তার নাম সিম্বা।

নাম শুনে মনে হচ্ছে আমেরিকান ময়।

না। ওর বাবা মেজরের প্রতিবেশী। আফ্রিকার মানুষ। বিশেষজ্ঞ।

সর্বনাশ।

সর্বনাশ কেন বলছেন?

মেয়েটি নিশ্চয়ই লকেটটার কথা জানে।

জানে।

আপনারা এখানে কেন এসেছেন তাও কি জানে?

বিস্তারিত কিছু ওকে বলা হয়নি।

কিছু মনে করবেন না, এই লকেটটার ব্যাপারে আমি কোনও কালো। মানুষকে বিশ্বাস করি না। গ্যাব্রিয়েলা কথা শেষ করতেই ওয়েটার এল অর্ডার নিতে।

মেনুকার্ড হাতে নিয়ে গ্যাব্রিয়েলা বললেন, আপনাদের নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়ে গিয়েছে। আমি লাঞ্চের অর্ডার দিচ্ছি।

মেজর কাঁধ ঝাঁকালেন। ভঙ্গি দেখে অর্জুন বুঝল মেজর খুব খুশি হলেন। অর্ডার নিয়ে লোকটি চলে গেলে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি ফোনে বললেন, আমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। আপনাকে খুন করা হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন। ব্যাপারটা কী?

গ্যাব্রিয়েলা বললেন, হ্যাঁ, কথাটা সত্যি। জিমের বান্ধবী হিসেবে আমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছি। ওরা জিমকে গুলি করামাত্র সে মারা যায়নি। মরার আগে আমাকে কিছু কথা বলেছিল। আর ওরা সেটা অনুমান করেছে। আজ সকালে আপনার টেলিফোনের পর আমার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসার একটু পরেই ওরা সেখানে হাজির হয়। আমাকে না পেয়ে খারাপ গালাগাল দেয়। আমি তখন জ্যাকসন হাইটে এক মাসির বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। আমার পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা সেখানে ফোন করে ওই ঘটনা জানানো মাত্র আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওখানে আপনার সঙ্গে দেখা করব না। ওরা ঠিক খুঁজে বের করবে আমি কোথায় আছি। যে কাগজের স্টল থেকে আপনারা আমার খবর পেয়েছেন সেটা আমার মাসতুতো বোন চালায়। সে আমাকে পরামর্শ দিল এই আটলান্টিক সিটিতে চলে আসতে।

কেন?

কারণ, এখানে পুলিশ থাকলেও শহরটাকে নিয়ন্ত্রণ করে মাফিয়া নেতারা। টুরিস্টরা যাতে বেশি আসে তাই কোনও গোলমাল ওরা এখানে বরদাস্ত করে না। এখানে কেউ কাউকে ছিনতাই করলে মাফিয়াদের জানালে সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নেয়। দোষীকে শাস্তি দেয়। এই জায়গায় তাই চট করে কেউ গুণ্ডামি করতে সাহস পায় না। আপনাদের এইজন্যেই এখানে ডেকেছি।

জিমের সঙ্গে আপনার কতদিনের আলাপ?

বেশিদিনের নয়। ও কালো হলেও খুব হাসিখুশি মানুষ ছিল। আমার ওকে সরল বলে মনে হত। কিন্তু সে স্মাগলার তা আমার জানা ছিল না। সেসব কথা আমাকে কখনও বলেনি। মাঝে-মাঝে সে উধাও হয়ে যেত। কখনও কখনও খুব মনমরা হয়ে থাকত। তখন ওর হাতে টাকা থাকত না। আমার সঙ্গে সে-সময় দেখা করত না ও। আমরা নেহাতই বন্ধু ছিলাম, তার বেশি কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এবারে বিদেশ থেকে ফিরে সে মাঝে-মাঝেই বলত সাপের দেবতার জন্যে এ-যাত্রায় বেঁচে গেছে। নাহলে সে এয়ারপোর্টে বিপদে পড়ত। রাত্রে প্রচুর ড্রিঙ্ক করে সে নিজের কথা বলতে আরম্ভ করে। আমি তখন জানতে পারলাম ওর ব্যবসা কী। প্রথমে ভেবেছিলাম, ছেড়ে চলে যাই। সেটা করলেই ভাল ছিল। কিন্তু আমি ওর উপকার করতে চেয়েছিলাম। ওকে ওই লাইন থেকে ফিরিয়ে আনতে সঙ্গে থেকে গেলাম। তারপর তোমার সঙ্গে আলাপ হল। উঃ। গ্যাব্রিয়েলা দুহাতে মুখ ঢাকল।

তারপর?

মরে যাওয়ার আগে জিম বলেছিল পুলিশকে বোলো ওর টেলিফোন নাম্বার হল টু ওয়ান টু ফাইভ জিরো ফাইভ টু।

কার নাম্বার এটা?

যে লোকটা তোমাকে খুন করতে চায়। যার সাপের লকেট দরকার। যে আমার কাছে জানতে চায় মরার আগে জিম কী বলেছিল। কথা বলতে বলতে জানলা দিয়ে বালির দিকে তাকিয়ে গ্যাব্রিয়েলার মুখ নীরক্ত হয়ে গেল।