মানুষ রতন

মানুষ রতন

রতন ধুতি পরে। ধুতিই পরে। ধুতি পরেই অফিসে যায়। রতনের সহকর্মীরা কেউ আজকাল আর ধুতি পরে না। রতনের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বিয়ে, বিজয়া ছাড়া ধুতি পরে না কেউ, শুধু সাহিত্যের অধ্যাপক তারাশংকর ছাড়া। রতন ধুতির সঙ্গে ফুলশার্ট পরে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেমন পরতেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এখনও এরকম পরেন। পাড়ায় যে-সমস্ত নতুন টেলারিং শপ হয়েছে, যেমন টিপটপ, লাভলি লুক এসব জায়গার চ্যাংড়া টেলাররা রতনের শার্ট বানাতে পারে না। ফলে প্রিয় টেলারিং-এর বাহান্ন বছর বয়সি প্রিয়নাথ সাহার কাছেই যেতে হয়। প্রিয়নাথও ধুতি পরে।

কাপড়টা কেমন প্রিয়নাথবাবু? গরমে আরাম হবে তো?

ফাস ক্লাস কাপড় স্যার। কত করে নিয়েছে?

জানি না। গিন্নি কিনেছে। ভিতরে পকেট বানাবেন।

সমস্ত জামায় ভিতরের পকেট বানায় রতন। ভিতরের পকেটে রাখা হয় না কিছুই। ভিতরের পকেটটা এমনি এমনি তৈরি করায়, অভ্যাসবশত।

হাফ শার্ট, না ফুল শার্ট স্যার?

ফুল। না কি হাফ করে দেবেন? পুরুলিয়া যাব তো, খুব গরম ওখানে।

পুরুলিয়া স্যার? খুব গরম। জল পায় না। হাহাকার। ওখানে কোনও ইনসপেকশন বুঝি?

না, ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে। রামকৃষ্ণ মিশনের ইন্টারভিউ। রিটিন পরীক্ষায় পাশ করেছে ছেলে। ন’হাজার পরীক্ষা দিয়েছিল, দুশো ছেলেকে ইন্টারভিউতে ডেকেছে। এই বাক্যটা বলতে বেশ ভাল লাগে রতনের।

পুরুলিয়ায় দেবেন? একমাত্র ছেলেকে আপনার। থাকতে পারবেন?

এই কথাটা শুনতেই হয়। শুনলেই মন খারাপ হয়ে যায়। তা ছাড়া প্রিয়নাথ এইমাত্র আর একটা কথা বলেছে। জল পায় না, হাহাকার। হাহাকার শব্দটা মনের ভিতরে কেমন যেন একটা দুঃখ তৈরি করে দেয়। হাহাকার মানে ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা নিশ্ৰুপ ব্যাট, আঠা খুলে ঝুলে থাকা কপিলদেবের পোস্টারটা, ভাঁজ করা ছোট্ট টেবিলটা, বাঁটুল দি গ্রেট আর হাঁদাভোদার পাতা উলটে দিচ্ছে শুধু হাওয়া।

স্যার, একটু ঘুরে দাঁড়ান, ছাতিটা নি।

আজ বড্ড স্যার স্যার করছে প্রিয়নাথ। মাস ছয় আগে প্রিয়নাথের ছেলে রেলে ক্যাজুয়ালে চান্স পেয়েছে। রতনও রেলে কাজ করে। ক্লাস টু গেজেটেড অফিসার। প্রিয়নাথ বলেছিল, আমার ছেলেটা রেলে ঢোকার জন্য লাইন করেছে, ওই প্রদীপ মিত্তির-টিত্তিরদের ধরেছে আর কী, আপনিও তো বড় অফিসার, একটু দেখবেন, ওর নাম হল…

রতন বলেছিল, ওঁদের ধরলেই হবে।

চাকরিটা হয়েছে। এর পর থেকেই প্রিয়নাথ রতনকে বেশি করে স্যার বলা শুরু করেছে।

একটু লুজ ফিটিংস করি স্যার? গরমে আরাম হবে।

করুন।

বলি কী, একটা প্যান্ট করুন স্যার। প্যান্ট ছাড়া হয়?

আপনার হচ্ছে কী করে?

আমরা স্যার দর্জি-ফর্জি লোক, ধুতি পরেই চালিয়ে দিলাম। আপনাদের মতো লোকের কি প্যান্ট ছাড়া…

রতন বলল, আমিও চালিয়ে দেব।

রতন কেন যে ধুতি পরে এ নিয়ে তার বন্ধু ও আত্মীয়মহলে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। রতন কঞ্জুস তাই ধুতি পরে—এ সিদ্ধান্ত টেকে না। কারণ, ধুতির চেয়ে প্যান্ট ইকনমিক। রতন একজন খুব কনজারভেটিভ, গোঁড়া লোক, —একেবারে ভুল। রতন ব্রাহ্মণ সন্তান, কিন্তু পৈতে পরে না। অখাদ্য কুখাদ্যও খায় না, এমন নয়। প্যান্ট পরলে মানাবে না—বাজে কথা। রতন বেশ ছিপছিপে, একচল্লিশ বছর বয়সেও ভুড়ি হয়নি তেমন। লম্বা ধরনের গড়ন। তবে ও সর্বদা ধুতি পরে কেন? এ নিয়ে রতনকে প্রশ্ন করা হলেও এক কথায় ও কিছুই বলতে পারবে না। আসলে, ছোটবেলায় রতনরা খুব গরিব ছিল। রতনের এক পিসতুতো দাদার ছোট হয়ে যাওয়া জামা-প্যান্ট পরেই স্কুলে যেত রতন। তারপর রতন সহসা ঢ্যাঙা হতে লাগল। ওর পিসতুতো দাদার পুরনো ফুলপ্যান্ট রতনের গোড়ালির এক বিঘত উপরে এসে থেমে থাকত। রতনের সেই পিসিমা রতনকে একটা নতুন ফুলপ্যান্ট কিনবার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু রতন ফুলপ্যান্ট না কিনে সোভিয়েট সংস্করণের গোর্কীর মা এবং চেখভের কয়েকটি বাংলা অনুবাদ কিনে ফেলে। বাকি টাকায় একটা মোটা ধুতি কিনে নেয়। এখানেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। ওর পিসিমা যা টাকা দিয়েছিলেন, তা খুব একটা খারাপ ছিল না। ওইসব বইপত্তর কিনেও ও একটা সুতির সস্তা ফুলপ্যান্ট কিনতে পারত। তা হলে হাতে কাঁচা টাকা পেয়ে একটা ধুতি কিনে নিল কেন? এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে কুশারীবাবুর ইমেজ!

কুশারীবাবু স্যার ভূগোল পড়তেন। জলবায়ু ও প্রকৃতি পড়াতে পড়াতে বইতে না থাকা মানুষদের কথা বলতেন। মানুষের সমাজ গড়ার ইতিবৃত্ত বলতেন। ডারউইন আর এঙ্গেলস-এর কথা শুনল রতন। আখ চাষের পড়া হতে হতে কুশারীবাবু চলে যেতেন কিউবার আখের খেতে, তারপরই ফিদেল কাস্ত্রোর গল্প। নীলনদ-হোয়াংহো-ইয়াংসিকিয়াং-এর বন্যার সঙ্গে মানুষের যুদ্ধের কথা বলতে বলতে কমিউন গড়ার গল্পে চলে আসতেন তিনি। দেওয়ালের পেরেকে ঝোলানো পৃথিবীর মানচিত্রের হলুদ-সবুজ-লাল-গোলাপি দেশগুলোর রং মুছে যেত কীরকম, সীমারেখা মুছে যেত। এ ভাবেই ক্লাস শেষের ঘণ্টা বড় অসময়ে বেজে যেত।

কুশারীবাবু স্যার ধুতি পরতেন। ধুতির সঙ্গে থাকত হালকা রঙের ফুল শার্ট। মুখটা সবসময় হাসি হাসি থাকত তাঁর। কেউ কোনও প্রশ্ন নিয়ে টিসার্চ রুমে গেলে খুব খুশি হতেন তিনি। ওঁর বাড়ি গেলেও। কুশারীবাবু টিউশনি করতেন না। গরিব ছেলেপুলেদের এমনিতেই পড়াতেন। আর অদ্ভুত রকমের সৎ লোক ছিলেন তিনি। এর বহু উদাহরণ রতনের কাছে আছে।

তো রতন ভেবেছিল বড় হয়ে কুশারীবাবুর মতো হবে। রতনের মানসিকতা বোঝা যাবে সে সময়ের ওর রাফ পাতার একটি পৃষ্ঠায়। একটি গাড়ি তিন ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার যায়। ১৮ কিলোমিটার চলিবার পর দেখা গেল… যোগ বিয়োগ গুণ ভাগের মধ্যে হঠাৎ সম্পর্কহীন দুটো লাইন—

গাড়ি চাই না বাড়ি

বড় হয়ে যেন হই

হরিপদ কুশারী।

রতনের বাড়ি-গাড়ি হয়নি ঠিকই। হরিপদ কুশারীও হতে পারেনি। হরিপদ কুশারীর যে আরও অনেক দিক ছিল, সে কথা রতন জেনেছিল হরিপদ কুশারীর মৃত্যুর পর। একদিন রেডিয়োতে মহাশ্বেতা দেবীর একটি সাক্ষাৎকার শুনছিল রতন। মহাশ্বেতা দেবী দুটো গান গাইলেন। গাওয়া শেষ করে বললেন, গান দুটি হরিপদ কুশারীর রচনা। উনি আই পি টি এ-তে ছিলেন। তারপর কিছুদিন আগে হঠাৎই বন্ধুর বাড়ি পুরনো প্রবাসী পত্রিকা কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই এমনি এমনি ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ আবিষ্কার করল কুশারীবাবুর একটি লেখা…। কথায় আর কাজে এক, জীবনে আর ব্যবহারে এক, এরকম মানুষ বলতে রতনের জীবনে একজনই। হরিপদ কুশারী। রতনের ঘরের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ আর মনের দেওয়ালে হরিপদ কুশারী।

রতন তো কুশারীবাবুর মতন হবে ভাবল। ওর ধুতিও হয়েছে, চশমাও। সততা?

রতনের প্রথম চাকরি কানুনগো। ভূমিরাজস্ব দপ্তরে চাকরি। কিছু ক্ষমতা-টমতাও আছে গেজেটেড পোস্ট। ট্রেনিং চলাকালে একজন আই এ এস অফিসার ট্রেনিং-বক্তৃতায় ইংরেজিতে যা বলেছিলেন তার মোদ্দা কথাটা হল, আপনারা শুধু চাকরি করতেই আসেননি। আপনারা হচ্ছেন ভলান্টিয়ার। ভূমিহীনরা জমি পাবে কি না, বর্গাদারদের বর্গাস্বত্ব থাকবে কি না, গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে কি না, নির্ভর করছে আপনাদেরই উপর। রতন ওই চাকরিতে ঢুকে ভেবেছিল একটা সমাজসেবার চাকরি করতে পারছে। ছাত্রজীবনে বহু বন্ধুর শির ফুলে ওঠা গলায় যে কথা শুনেছে, মিছিলের পায়ে যে কথার ঘুঙুর বেজেছে, লাঠি আর বন্দুক যে কথাগুলি টুটি চেপে ধরতে চেয়েছে এতদিন, সেই কথাগুলিকে শরীর দেবে বলে সে জি টি রোডের ধারে বর্ধমান জেলার এক গ্রামে বাস থেকে নামল। ফাস্ট পোস্টিং।

অফিস ঘরটা হল এক জোতদারের বৈঠকখানা। পায়খানাটি জোতদারের। পাতকুয়াটি জোতদারের। শহরে যাবার জন্য সাইকেলরিকশাটি জোতদারের। স্নানের পুকুরটি, বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়াটিও জোতদারের। অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াল জোতদারের ঘরে খেয়ে, জোতদারের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। রতন ভেবেছিল, দেখা যাক। সত্য যে কঠিন বড়, কঠিনেরে ভালবাসিলাম।

সত্যবাবু হলেন পেশকার। সত্য বিশ্বাস। একদিন বললেন , টি এ বিলটা করেননি স্যার, করে দিন। রতন বলল, আপনি করে দিন। সত্যবাবুর বিশ বছর চাকরি হয়ে গেছে। উনি অনেকগুলি কাগজপত্র নিয়ে এলেন। কোনও কাগজের তলায় উনি সই করলেন জনার্দন মাঝি, কোনও কাগজের তলায় রাধেশ্যাম মণ্ডল। পিওনকে ডেকে বললেন, অ্যাই ছ্যামড়া, এখানে একটা টিপসই লাগা। তারপর রতনকে বললেন , বাঁ হাতে একটা সই করুন স্যার, ধনা হাড়ি। রতন বলল, এগুলো কী হচ্ছে? সত্যবাবু বললেন, কেন? আপনার টি এ বিল? ভাউচার দিতে হবেনা? কুলির ভাউচার, গোরুর গাড়ির ভাউচার, মালপত্র লোড করার, আনলোড করার…রতন বলল, আমি তো শুধু একটা সুটকেস নিয়ে এসেছি। সত্যবাবু বললেন, যা-চ্চলে। আপনি তা বলে সাবমিট করবেন না? পাওনা টাকা ছেড়ে দেবেন? আপনি এনটাইটেলড। কিন্তু রতন ছেড়ে দিল। ও না হয় ছেড়ে দিল, কারণ ওর চেতনায় কুশারীবাবুর ধুতি। কিন্তু সত্যবাবু? সত্য যে কঠিন বড়, ওর টি এ বিল? অন্যান্য স্টাফদের টি এ বিল? এই অফিসটা নতুন। সবাই বদলি হয়ে অন্য জায়গা থেকে এসেছে। ধনা হাড়ি, গোবর্ধন মাঝির নামে অথবা বিভিন্ন হাতের আঙুলের টিপছাপওলা ভাউচার সমন্বিত নিখুঁত টি এ বিল ফরোয়ার্ড করতে হয়েছিল রতনকেই। এর পর নানা সময় কনটিনজেনসির নামে, টি এ-র নামে বহু পেটি ভাউচার রতনের হাত দিয়ে পাশ হয়েছে। রতন ভেবেছে কী করা যাবে, এটা সিসটেম। সিসটেমের বিরুদ্ধে একা একা যুদ্ধ হয় না। তবে চাঁদনি রাতে একা একা দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের পাশ দিয়ে বহে যাওয়া কাঁকর ছড়ানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছে ও তো সিসটেমেরই একটা নাটবল্টু। নিজের ব্যাপারে তবু ঠিক থাকবে। থাকবেই।

একদিন বর্ধমানে গেল রতন। অফিসের কাজে। স্টেশন থেকে রিকশায়। কিন্তু কেউ কি আর সঙ্গে করে কাগজ নিয়ে যায়?—যাতে লেখা থাকে রিসিভড রুপিজ এত ফ্রম শ্রী অমুক? ফিরে এসে টি এ বিল করার সময় সমস্যায় পড়ল রতন। রিকশা ভাড়াটা কী করবে? ছেড়ে দেবে? এভাবে কত ছেড়ে দেবে? অফিসের কাজেই না খরচ হয়েছে। করতে হল। বাঁহাতে লিখতে হল ধনঞ্জয় জানা। এই জালিয়াতিগুলি সরকারই করতে বলছে, রতন কী করবে। টি এ বিলটা পাঠানোর সময় সত্যবাবু বলল, কী স্যার, এবার? পরের সপ্তাহে আবার যেতে হয়েছিল বর্ধমান। শীতকাল চনমনে রোদ্র। বেশ হাঁটতে হাঁটতেই চলে গেল অফিস। টি এ বিল-এ রিকশা দেখাল না। ভীষণ পুলক অনুভব করতে লাগল মনে মনে। পাঁচটা টাকার বদলে এতটাই আনন্দ। সত্যবাবুকে বলল রতন। সত্যবাবু বিড়ির ধোঁয়ায় হাসি মিশিয়ে বলল, আপনি স্যার যুধিষ্ঠির।

একবার হল কী, জরিপের কাজ করতে গিয়ে কম্পাস আর দু-একটা যন্ত্রপাতি মাঠে ফেলে রেখে চলে এল রতনরা। খোঁজ হবার পর স্পটে গিয়ে খুঁজে পেল না। গ্রামের ছেলেপুলেদের কাছে খোঁজ করেও পাওয়া গেল না। দোষটা রতনের নয়। আমিনবাবুর হেফাজতেই এইসব যন্ত্রপাতিগুলো থাকে। কিন্তু অফিসার হিসেবে দায়িত্বটা রতনেরই। চাঁদা করে নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হল। রতনকেই বেশি টাকা-পয়সা দিতে হল। এবার এই টাকা উশুল করার জন্য কিছু ফলস কনটিনজেনসি এবং ফলস টি এ বিল তৈরি করলেন সত্য বিশ্বাস। রতন সই করল। সত্যবাবু বললেন, লাইনে এসে গেছেন স্যার। রতনের ব্লাড প্রেশার ফল করল। ঘুম নেই। রতন ছুটি নিল।

ছুটি নিয়ে ক’দিন থাকবে বাড়িতে। ফিরতে হল। বাস থেকে নেমে কাঁচা রাস্তাটা মাঠ খামচে হাওয়া। ধুতিটা পতাকার মতো উড়ছে। একটা চা খেতে ইচ্ছে হল। পিচ রাস্তা আর কাঁচা রাস্তার মোড়েই চায়ের দোকান। বলল, একটা চা।

একটা কেক দিই স্যার?

কেক-টেক খেতে হবে না। মাসের শেষ।

আপনাদের আবার পরথম আর শেষ।

কথাটার মধ্যে যেন ‘আদার মিনিং আছে,—মনে হল রতনের। কথাটার ব্যঞ্জনার্থ ধরার চেষ্টা করতে থাকল রতন। চায়ের দোকানের পাশেই গমকল। গমকলের মালিক বিরূপাক্ষ সাঁতরা রতনের কানের কাছে মুখ নিয়ে এল। বলল, কাজটা করে দিয়েছেন তো স্যার?

কোন কাজটা?

ওই আমবাগানটা।

ওটা তো ডাঙা জমিতে কনভার্ট হয়ে গেছে।

তা তো হয়েছে, কিন্তু কাগজে আমবাগানই রাখবেন তো।

কেন?

পাঁচ হাজার টাকা দিলুম যে।

মানে?

সত্যবাবুর কাছে দিলুম নি, আমনার কতামতো?

হঠাৎই রতনের মাথার মধ্যে বাঁশবনের শিরশির। ঘুরিয়ে উঠল মাথা। বেঞ্চিতে মিনিটখানেক চুপচাপ বসে রইল রতন। তারপর হাঁটতে লাগল অফিসের দিকে। উড়তে পারলে ভাল হত।

বিরূপাক্ষ বলল, কিছু যে বললেন না স্যার…

বিরূপাক্ষ সাঁতরার অনেক জমি। একটা মৌজার এক পাশে ওর একটা বড় আমবাগান ছিল, দু’বিঘে পরিমাণ। জরিপ করতে গিয়ে রতন দেখেছিল ওই দাগে আমবাগান নেই, পুরোটাই ডাঙা জমি। চাষ হচ্ছে। অথচ রেকর্ডে লেখা ‘বাগান’। ‘বাগান’ সিলিংয়ের আওতার বাইরে। জমি হলে সিলিংয়ের মধ্যে পড়বে। বাগান কী হল জিজ্ঞাসা করাতে বিরূপাক্ষ বলেছিল, গাছগুলি বুড়া হয়ে গিয়েছিল স্যার, ফল দিত না, মিছামিছি রেখে লাভ কী, কেটে দিইছি। রতন তখন ‘বাগান’ কেটে ‘ডাঙা’ লিখে দিয়েছিল। বিরূপাক্ষর এমনিতেই সিলিংয়ের বেশি চাষ জমি। এই দু’বিঘে যোগ হলে জমিটা ভেস্ট হবে, এবং কিছু ভূমিহীন জমিটা পাবে। রতন মনে মনে পুলকিত হয়েছিল। এ জন্যই তো এই চাকরিতে আসা।

রতন বুঝল সিলিং বাঁচাবার জন্য ওই ডাঙা জমিটাকে আগের রেকর্ড অনুযায়ী আমবাগান রাখার জন্য সত্য পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে।

অফিসে পৌঁছেই সোজা সত্যবাবুকে জিজ্ঞাসা করল রতন—বিরূপাক্ষ সাঁতরার কাছ থেকে পাঁচ হাজার নিয়েছেন?

নিয়েছি।

আমি তো জানি না।

এখন জানলেন তো।

মানে?

ওর কাজ করে দিয়েছি। আপনার এ-বাবদ আড়াই হাজার পাওনা। আমার মধ্যে কোনওরকম তঞ্চকতা নেই। আরও টুকটাক কিছু কাজ হয়েছে। আপনার মোট চার হাজার পাওনা হয়েছে এখন নেবেন?

কী যা-তা বলছেন। ওকে টাকা ফিরিয়ে দিন।

যা-তা আমি বলছি, না আপনি? আমরা এতগুলো তোক না খেয়ে মরব নাকি? সরকার কত মাইনে দেয়, অ্যাঁ? আমাদের ফেমিলি নেই?

বাজে কথা রাখুন। রেকর্ডে ডাঙা জমিই থাকবে। আমার অফিসে দুর্নীতি চলবে না।

দুর্নীতি চলবে না? আপনি ফলস কনটিনজেনসিতে সই করেননি? ফলস টি-এ বিল করেননি?

আবার ছুটি নিয়েছিল রতন। লো ব্লাডপ্রেশার। এর অল্পদিন পরেই রেলে ক্লার্ক-এর চাকরি পেয়ে কানুনগো পদ ছেড়ে দিয়েছিল।

এখান থেকে কী সিদ্ধান্ত হয়? রতন পালায়? পালিয়ে বাঁচল? কাপুরুষতা?

এ বিষয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল। আসলে কোনটা যে কাপুরুষতা আর কোন ব্যাপারটা নয়, তা ছাই রতন কি সবসময় বোঝে? যেমন ধরা যাক রতনের পূর্বপ্রেমিকার সঙ্গে রতনের সম্পর্ক বিষয়ে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মন্তব্য। হ্যাঁ, রতনের জীবনে একবার প্রেম এসেছিল। লাইব্রেরিতে আলাপ। স্মার্ট, তুখোড়, মেধাবি একটি মেয়ের ধুতিপরা রতনকে কেন যে ভাল লেগেছিল রতনের কাছে তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই। রতন যখন এম এ ক্লাসে পড়ে, মেয়েটি বি এ অনার্স পড়ত। ওরা তিন বছর গল্প-টল্প করেছে, দু-তিনটে নাটক দেখেছে। ডায়মন্ডহারবারের গঙ্গার ধারে চার ঘণ্টা বসে থেকেছে। এর পর রতনের অন্তরঙ্গ কোনও বন্ধুর সঙ্গে এরকম কথাবার্তা।

বন্ধু। ওর সঙ্গে এতক্ষণ কী করলি?

রতন। গল্প।

কী গল্প?

কত কিছু। ও ছোটবেলায় ঝাড়গ্রামে ছিল। শালগাছ, লালমাটি…

তারপর?

আরও সব সুন্দর সুন্দর দৃশ্যের গল্প, তাই থেকে সৌন্দর্য কী, সৌন্দর্যের কোনও ডেফিনেশন আছে কি না…

ডেফিনেশন বেরুল?

না।

চুমু-ফুমু খেলি?

না।

তুই একটা ভেড়ুয়া। কাপুরুষ।

পাঠক, আখ্যানটি এতক্ষণ নীরস চলছিল। এবার একটু মশলা এল বোধহয়। কিন্তু বেশিক্ষণ ধরে রাখা গেল না। কারণ, রতনের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি। বন্ধুদের মতে ওটা রতনের কাপুরুষতা।

মেয়েটি রতনকে লিখেছিল: আমি একজন একুশ বছরের মেয়ে। তোমাকে জানাচ্ছি, তোমাকে ভালবাসি। আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়ে গেছে। তুমি আমাকে রেজিষ্ট্রি করে নাও।

রতন লিখল, আমি তোমার যোগ্য নই। তা ছাড়া আমার অনেক বার্ডেন। এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়।

রতন তখন চাকরি করছে। ওর বাবা-মা-ভাইবোন আঁকশি বাড়িয়ে ধরেছে ওকে। দুটো বোনের বিয়ে বাকি, ভাইরা পড়ছে। রতন পালাল।

রতন বিয়ে করেছিল বত্রিশ বছর বয়সে। ওর বাবার পছন্দ করা বউ। রতন দেখতেও যায়নি। কেন যায়নি, তারও কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই। রতন ওর বউয়ের সঙ্গে দশ বছর ঘর করছে। একটি ছেলেরও জন্ম দিয়েছে এবং ভালবাসাহীন সঙ্গমও করে যাচ্ছে, সঙ্গে কনট্রাসেপটিভ। রতনের সঙ্গে ওর বউয়ের সম্পর্ক কেমন তা ব্যাখ্যা করা খুবই মুশকিল। ওদের স্বামী-স্ত্রীর কয়েক মুহূর্তের সংলাপ তুলে দেওয়া যাক:

যাচ্ছি।

এসো। টিফিনটা খেয়ো।

ফলটল দাওনি তো?

একটু ছানা।

ডায়েরিটা১ এনো মনে করে।

ঠিক আছে।

আসার সময় কলেজ স্ট্রিট২ হয়ে এসো কষ্ট করে।

ও, হ্যাঁ। আনব।

আর ইয়ে, দেরি করিয়ে দিচ্ছি। ওটার কথাটা মনে আছে তো?

কোনটা?

ওই যে, ইয়ে, সার্টিফিকেটটা, পঞ্চায়েতের৩।

হ্যাঁ-হ্যাঁ।

আচ্ছা। দুর্গা দুর্গা। তাড়াতাড়ি৪ ফিরো।

কথা দিতে পারব না।

কেন কী কাজ?

কৈফিয়ৎ দেব না।

নিশ্চয়ই দেবে।

না।

ঠিক আছে। দিতে হবে না। টুটুলের জন্য আগে এসো।

ও।

তুমি একটু না পড়ালে হয়?

হুঁ।

তাড়াতাড়ি চলে এসো। দুর্গা দুর্গা৫।

এই সংক্ষিপ্ত সংলাপের মধ্যে কতকগুলো ব্যঞ্জনাময় শব্দ আছে, পাঠকের সুবিধার জন্য সামান্য ব্যাখ্যা করা দরকার।

১। ডায়েরিটা হচ্ছে রতনের স্ত্রী সুতপার বাবার। সুতপার বাবা বিয়ের সময় ডায়েরিটা উপহার দিয়েছিলেন মেয়েকে। ওই ডায়েরিতে অনেক কোটেশন আছে। স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, অরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, রুশো, লিংকন, টলস্টয় ইত্যাদি। ওর বাবা স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। সুতপার বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। সেই ডায়েরিটা বাঁধাতে দেওয়া হয়েছে।

২। কলেজ স্ট্রিট যাবার দরকার হচ্ছে ‘ছোটদের বিবেকানন্দ’ বইটা আনবার জন্য। আর ক’দিন পর টুটুলের জন্মদিন। টুটুল ওদের ছেলে। জন্মদিনের উপহার দেবার আর একটা উদ্দেশ্য হল বইটা পড়া থাকলে রামকৃষ্ণ মিশনের ভরতি পরীক্ষায় কাজে লাগে।

এই বয়স কমানো, স্কুলের সার্টিফিকেট ইত্যাদির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন রতনেরই এক সহকর্মী। পঞ্চায়েত মেম্বার, এবং নবমঞ্জরী নামে একটি ওরকম স্কুলের সেক্রেটারি। ওর স্ত্রী ওই স্কুলের হেডমিস্ট্রেস। অর্থৎ ওরাই মালিক। উনি বললেন, রতনদা, আপনার মতো লোকের জন্য এটুকু করতে পারব না? আপনার মতো মানুষকে উপকার করার স্কোপই তো পাওয়া যায় না। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব, ডোন্ট ওরি।

৪। আজকাল বাড়ি ফিরতে দেরি হয় রতনের। জনচেতনা মঞ্চ নামে একটা সংস্থার সঙ্গে বড্ড জড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞান ক্লাব, বয়স্কশিক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ ধরনের কাজ হয় ওখানে। এসব কাজ করে তৃপ্তি পায় রতন। ভাবে, কুশারীবাবুর প্রতিনিধিত্ব করছে।

৫। রতনের বউ ওষুধ খাবার বা খাওয়াবার সময় বিষ্ণু বিষ্ণু, ঘুম থেকে উঠে নারায়ণ নারায়ণ, এবং ঘর থেকে কেউ বেরুলে দুর্গা দুর্গা বলে থাকে। প্রথম প্রথম রতন এসব একদম বরদাস্ত করতে পারত না। দুর্গা দুর্গা শুনেই আবার ঘরে ফিরে আসত। রতন কর্কশ স্বরে বলেছে যাবার সময় এসব বলবে না। সুতপা নিচু স্বরে তবু বলেছে। তারপর আস্তে আস্তে এসব মেনে নিয়েছে রতন, যেভাবে বাঁ হাতের ধনঞ্জয় জানা মেনে নিয়েছিল। ঠাকুর দেবতা নিয়ে সুতপার সঙ্গে কোনওদিন গুছিয়ে তর্ক করেনি রতন, যা দু-একবার কথা হয়েছে, তাতে সুতপা বলেছে ঈশ্বর হল ঘন হয়ে থাকা শুভবোধ। ঈশ্বরে বিশ্বাস থাকলে মানুষ খারাপ কাজ করে না। রতন তখন নাস্তিক ও আস্তিকের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের ওই কবিতাটার কথা বলেছে, যেখানে আছে—শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো/শাস্ত্র মানে না, মানে মানুষের ভাল।।

তা যাক। নাস্তিক বাপ আর আস্তিক মায়ের আদরের ধন টুটুল। এই টুটুলকে ভাল করে মানুষ করতে চায় রতন ও সুতপা। ভাল করে মানুষ করা বলতে আজকাল যা বোঝা যায়, তা হল ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভরতি করানো, পিঠে ঝুলবে ছবি লাগানো ব্যাগ, কাঁধে একটু বেশি দামের ওয়াটার-বোটল, ব্যাগের টিফিন-বাক্সে ব্রেড-বাটার সন্দেশ, আধা খাওয়া। বইয়ে ক্যাডবেরির গন্ধ, আঁকার স্কুল-টিনটিন-হিম্যান। আইসক্রিম খেয়ে টনসিল…।

কিন্তু রতন দেখেছে, একবার এক রাত্রের ট্রেনে, এক বস্ত্রহীন, শীতে কাঁপা একটি বালকের শরীরে নিজের চাদরটা পেঁচিয়ে দিল একজন মানুষ। রতন দেখল কুশারীবাবু আছেন এখনও। রতন দেখেছে একজন বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার সুন্দরবনের এক গ্রামে পড়ে থাকা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন, শেখাচ্ছেন, রতন দেখল কুশারীবাবু আছেন। ওর জনচেতনা মঞ্চের একজন অধ্যাপক, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, ছোট ছোট কাগজে লিখে চলেছেন মানুষের কাজে লাগে এমন সব বিষয়, রতন বোঝে কুশারীবাবু থাকেন, থেকে যান। বালির ভিতরের জলের মতো, হাওয়ার ভিতরের গন্ধের মতো। আসলে কুশারীবাবুরা একটা ধারা। ঠিকই বহে চলে ভিতরে ভিতরে। রতনের ভাবতে ভাল লাগে ওর ছেলের মধ্যেও কুশারীবাবু বইবে। সুতপাও কি ওর হেডমাস্টার বাবাকে ওর ছেলের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়?

এবারে পাঠক, আপনারা দেখুন, দুই ভিন্ন মেরুর ভিন্ন মানুষ কীভাবে ওদের ছেলেকে নিয়ে সুস্বপ্ন দেখে। এখনও দেখে এবং চায়, ওদের ছেলেটি সৎ এবং আদর্শবান হয়ে উঠুক। ছেলের ভালর জন্য রতন বাড়িতে সিগারেট খায় না। সুতপা টিভি খোলে না। রতন ছেলের হাত দিয়ে ভিখারিকে পয়সা দেওয়ায়, সুতপা মন্দিরে পয়সা দেওয়ায় এবং রতন নিজের সততার গল্প বলে থাকে।

এখন ওদের ধারণা টুটুল রামকৃষ্ণ মিশনে ভরতি হতে পারলে ছেলে সৎ এবং আদর্শবান হিসেবে গড়ে উঠবে এবং ছেলেকে সৎ বানাবার জন্য ফলস সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হচ্ছে ওদের।

এবারে আমরা মূল গল্পটিতে এসে গেছি। এতক্ষণ ধরে যা বলা হল, তা আসল গল্পটির ভূমিকা মাত্র। আসল গল্পটি খুবই ছোট।

টুটুল বড় বাড়িটার ভিতরে। ইন্টারভিউ দিচ্ছে। রতন ও সুতপা বাড়ির বাইরে গাছের ছায়ায়। অপেক্ষা করছে। মাঠ আঁচড়ানো গরম হাওয়ায় নড়ছে রতনের ধুতি, সুতপার শাড়ি। ওরা কেউ কোনও কথা বলছে না। গত ক’দিন ধরে অনেক কিছু শেখানো হয়েছে টুটুলকে। টুটুল পারছে তো? এবারও না পারলে কী হবে?

টুটুল আসছে। টুটুল হাসছে। মাঠের সবুজের ভিতরে টুটুলের নীল কেডস বৃষ্টির মতো। টুটুল এল। দু’জোড়া চোখ টুটুলের দিকে স্থির। টুটুল বলল, সব পেরেছি বাবা, স-ব।

সব?

হ্যাঁ। সব।

ইস্কুল?

মিথ্যে কথাটা ঠিক ঠিক বলে দিয়েছি বাবা। স-অ-ত্যি। কিচ্ছু ভুল হয়নি। কচি সংসদ বলিনি। বলেছি নবমঞ্জরী। ক্লাস ফোর।

রতন তখন কিছু চেপে ধরতে চাইছিল। গাছের ছায়া ছাড়া তখন কিছু ছিল না। সুতপা এবং টুটুল দু’জনই তখন ছায়ামাত্র ছিল এবং রতন নিজে, নিজের ছায়াকে টেনে টেনে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত এনে ট্যাক্সিকে সঁপে দিয়েছিল। ট্যাক্সিটা জ্যাম-ভিড় জেব্রা-ক্রসিং ঠেলে ঠেলে কলকাতার ভিতরে ঢুকছিল। তারপর আস্তে আস্তে ওদের পাড়ার দিকে এগুতে লাগল। সামনেই প্রিয় টেলারিং। দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়নাথ সাহা। রতন ট্যাক্সিকে থামতে বলল। আচমকা নেমে গেল ট্যাক্সি থেকে। প্রিয়নাথ সাহার দিকে এগুতে থাকল। টেবিলে পড়ে থাকা মাপের ফিতেটা দু’হাতে চেপে ধরল। তারপর বলল—আমাকে হাওয়াই শার্ট বানিয়ে দিন প্রিয়নাথবাবু, আর ফুলপ্যান্ট। বলেই টেবিলে নামিয়ে নিল মুখ। লোহার কাচিতে লোনাজল পড়ল। সুতপা আর টুটুল বেরিয়ে এল ট্যাক্সি থেকে। রতনের কান্নার মধ্য দলা পাকানো শব্দ—আমাকে মাপুন প্রিয়বাবু, মাপুন। সুতপা একবার অস্ফুটে বলল, ‘কী হচ্ছে কী’। তারপর চুপ করে গেল। মানুষের কান্না। মানুষ কাঁদছে। মানুষ রতন।

টুটুল দেখছে। কী করবে ও এখন?

যুবমানস, ১৯৯৬

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *