০২. জ্যৈষ্ঠ

জ্যৈষ্ঠ

বৈশাখ পার হয়ে এসে যায় জ্যৈষ্ঠ মাস। নমশূদ্রদের মধুমাস।

গাছে গাছে পাকা আম, জাম, ফল-ফলাদি। কিন্তু নমশূদ্রদের ঘরে এই সময় থাকত চাল বাড়ন্ত। অভাব নত্য করত ঘরে ঘরে। ফল-ফলাদি খেয়ে পেট ভরাতে তারা। তাতে খিদে কিছুটা মিটত, দূর হতো পুষ্টির অভাব।

জ্যৈষ্ঠ মাসে খরার তাপদাহ। বিদায় নিয়েছে কালবৈশাখী। থমকে আছে বাতাস। সুনসান প্রকৃতি। থমথমে সেই খরায় গরমের কষ্ট যতই থাক, নমশূদ্র কৃষকরা খুশি হতো। তাদের মুখে মুখে ফিরত–

জ্যৈষ্ঠে খরা
ধানের ভরা।

গোটা বিলের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের ভিতর দিকে হাঁটু জল, কোমর জল। জলের মধ্যেই সবুজ ধানের সমারোহ। নৌকা নামত তখন বিলে। গোটা ডাঙ্গা এলাকাজুড়ে নজরে পড়ত নৌকা তৈরি, মেরামতের কাজ। তৈরি নৌকায় আলকাতরা দেয়া। বসত নৌকার হাট। সব গেরস্থেরই থাকত নৌকা। অবস্থাভেদে এক বা একাধিক।

ডাঙ্গার গাছগাছালি ছেয়ে থাকত হলুদ, বেগুনি, গোলাপি নানা রঙের ফুলে। গাছে গাছে ঝুলত পাকা ফল। ডালে ডালে ওড়াউড়ি করত পাখি। পাকা ফল খেত ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে।

বিকেলে ডাঙ্গার দিকে চওড়া হালটের উপরে চলত হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্ধা খেলা। হতো প্রতিযোগিতা। এপাড়া-ওপাড়া, এগ্রাম-ওগ্রাম। হা-ডু-ডু খেলায় ছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ধরে আটকে ফেলা এবং তাদের কোর্ট থেকে ডুগ দিয়ে একদমে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসা। শক্তির প্রয়োজন তো ছিলই, কিন্তু শক্তির সাথে যে খেলোয়াড়ের ছিল কৌশলজ্ঞান, এলাকাজুড়ে তার ছিল খুব সম্মান।

বাতাসবিহীন গুমোট গরম থম ধরে বসে থাকে জ্যৈষ্ঠের দুপুরে। ধানগাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না। রোদের সেই প্রচণ্ড দহনের ভিতরে কোচ হাতে ধান খেতের মধ্যে মাথাল মাথায় নৌকার গলুইতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কিশোর-যুবকরা। পরিষ্কার স্বচ্ছ জলে মাছের চলাচল যেমন দেখা যায়, তেমনি অনুভব করা যায় ধান গাছের মাথা নড়া দেখে নিচে গোড়ার দিকে গাছের শেওলা খাচ্ছে কোনো মাছ। অনুমান করে শিকারিরা ছুঁড়ে দিত কোচ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমান হতো নির্ভুল। ছোট নলা, কাতল, মৃগেল, বোয়াল কোচে বিধে উঠে আসত।

ধান খেতের ভিতর থেকে ভেসে আসত কোড়া পাখির ডাক। মোহনীয় সেই ডাক-টুব-টুব, টুব-টুব। ডেকে যেত একটানা। ধান খেতেই বাসা বাঁধত তারা। ডিম পাড়ত। পোষা কোড়া পাখি খাঁচার মধ্যে রেখে বুনো কোড়া পাখি শিকারের চল ছিল তখন। কোড়ার মাংস আয়েশ করেই খেত নমশূদ্র কৃষকরা। বিকেলে বা সন্ধ্যায় খেতের উপর দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ বয়ে যেত ঝিরঝিরি বাতাস। সেই বাতাসে কৃষকের রোদতপ্ত শরীর জুড়াত।

জ্যৈষ্ঠের শেষেরদিকে বিলে দেখা যেত নতুন শাপলা। নৌকায় চেপে বিলের জলে ঘুরে ঘুরে শাপলা ফুল তোলার আনন্দে মেতে উঠত ছেলেমেয়েরা। তৈরি হতো শাপলার মালা। কচি শাপলার ডগা দিয়ে রান্না হতো পুঁটি মাছের চচ্চড়ি। সে ছিল বড় সুস্বাদু খাবার নমশুদ্র কৃষক পরিবারের কাছে। শাপলার ফল পরিপক্ব হতে আশ্বিন-কার্তিকে। সেটা থেকে হতো খই। নমশূদ্র কৃষকদের কাছে ‘ঢ্যাপের খই’। শাপলা গাছের গোড়ায় মাটির নিচে হতো শালুক। সেই শালুক পুড়িয়ে মজা করে খেত গ্রামের মানুষ।

বিলজুড়ে থাকত কলমিদাম। তার নিচে পানকৌড়ি ডুব-সাঁতার কেটে বেড়াত। স্যাঁতসেঁতে মাটি বা গোবরের টিবিতে জন্মাত মাশরুম। মাশরুমের উপরটা গোল ছাউনির মতো। তার নিচে আশ্রয় নিত ব্যাঙ। এ কারণে তারা একে বলত ‘ব্যাঙের ছাতা’। নানা রকমের জলজ উদ্ভিদ দেখা যেত বিলের জলে। বেশিরভাগই সেগুলো পরগাছা। বিলে থাকত সাপ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, পোকা-মাকড়। সব মিলিয়ে থাকত প্রকৃতির এক নীরব আয়োজন। রাতে শোনা যেত এসব পোকা মাকড়ের সম্মিলিত ডাকের ঐকতান। বেজে যেত একটানা।

বিলের উপরের দিকে ডাঙ্গায় বোনা হতে পাট আর আউশ। জ্যৈষ্ঠমাসজুড়ে চলত জমির আগাছা পরিষ্কার। মাথাল মাথায় মাঠে মাঠে কাস্তে চালাত তারা। সাথে চলত গানের পাল্লা

মাঠের এক প্রান্ত থেকে কেউ একজন গেয়ে উঠত–

ওগো ননীচোরা কৃষ্ণধন
বসনচোরা গোপীমোহন
তুমি মামির সাথে নিত্য করো যোগ মিলন
তুমি রাধারে করে কলঙ্কিনী করলে লীলা বৃন্দাবন ॥

ওরে পরের নারী হরণ করে
কুল মজালে মধুসূদন
তুমি নন্দ ঘোষের কালো বিড়াল গো
তোমায় চেনে সর্বজন ॥

বাঁশি বাজাও যমুনার কুলে গোষ্ঠলীলা বটমূলে
ব্রজলীলা করো গোপীকুলে
তুমি রাধা নামের বাজাও বাঁশি
নাম জানো না আর কারো
এত নারী থুয়ে কেন মামির সাথে প্রেম করো
তুমি হরি গোসাইর ভেক ধরে
ঘোষপাড়া ননীর কাম সারো ॥

শেষ হতে না হতেই পাশের খেত থেকে আরেকজন গেয়ে উঠত–

বিন্দে দূতি শোন সমাচার
বিশাই নামের কর্মকার
মোহন বাঁশি বানাইল আমার
দেবগুরুর যজ্ঞ হতে পঁচিশ পর্বের বাশ দিয়ে।
ও বাঁশের শেষ পর্বে বাঁশরী হল
বলি সংক্ষেপে আমার মোহনচূড়া
বিশাই বানাল ওরে প্রেমকাষ্ঠ দিয়ে ॥

মোহনবাঁশি সাতনড়ে (সাতনড়ি) গঠন
পেত্থম (প্রথম) নড়ে সুর পবন
যমুনার জল তাই তো বয় উজান
দুই নড়ে সুরে সুরে
গোষ্ঠে চড়ে ধেনুগণ।
ও রে চার নড়ে ব্ৰজপুরে
পাগল করে গোপীগণ
বাঁশির সপ্তম নড়ে রাধার নাম জপে
সেই ভেদ জানে পরম ভক্তজন ॥

রাধা আমার আমি রাধার
দুইজনেতে এক একাকার
ভক্তগুরু জগতে প্রচার
রাধা আমার প্রেমেরই মাল
বাশির জ্বালা ওই নামে
রাধার মতো কৃষ্ণ পাগল কে আছে এই ধরাধামে
প্রেম ভক্তিগুণে বাঁশি বাজে রাধা নামে ॥

দক্ষিণের খেত থেকে আর একজন গেয়ে ওঠে–

নন্দের পোলা তুমি বড় নচ্ছার
নাম তোমার কৃষ্ণ নটবর
তুমি যমুনার ঘাটে বাঁশি বাজাও
মন ভুলাও ওই শ্রীরাধার
তুমি মামির বসন চুরি করো গো
বেহায়া লজ্জা নাই তোমার ॥

ব্রজে ছিলে গেলে মথুরায়
ধরলে কুঞ্জ দাসীর পায়
কংস রাজা নিধন করে
রাজা হলে মথুরায়।
ওরে কুঞ্জ দাসীর কুঁজ টিপে টিপে
তোমার দিন ফুরোয়ে যায়।

কংস তোমার মামা নিশ্চয়
সে কথা মিথ্যে কিছু নয়
তুমি হয়ে দয়াময় করলে যে অন্যায়
এখন আমি ছাড়ব না তোমায় ॥

উত্তরের খেত থেকে এবার গেয়ে ওঠে আর একজন–

বিন্দে আমায় নিন্দে কোরো না
দিয়ো না গো গঞ্জনা,
তুমি কেমন, তাও আমার জানা
তুমি নিজের ভালো কেবল বোঝ
পরের ভালো বোঝে না।

ওরে একটু রতি কম পড়িলে অভিমানে বাঁচো না
তুমি সতী হলে পতি কেন গো
তোমারে করল বঞ্চনা ॥

বিন্দে বলো তোমার পরিচয়, তোমার জন্ম কনে হয়
কোন কুলে জন্ম পেলে, নাম পেলে কোন তপস্যায়
তোমার ডান হাতেতে শঙ্খ শাখা
বাম হাতে ক্যান শূন্য রয়
বলো এ কথা শুনতে বাঞ্ছ হয় ॥

বিন্দাবনে করো নটিগিরি
প্যাঁচে প্যাঁচে দেখাও বাহাদুরি
নাগর খোঁজা ব্যবসা তোমারই
তুমি কুঞ্জে কুঞ্জে রজনী কাটাও
এসব জানা আছে সকল আমারই।
তুমি বাইরে দেখাও সতীপনা
গোপনে তোমার খোলা কাচারি ॥

এসব গান বাতাসে বাতাসে ঘুরে বেড়াত গোটা প্রান্তরজুড়ে। নমশূদ্র বৌ ঝিরা গাছের ছায়ায় বসে সেলাই করত নকশিকাঁথা। সুই ফুড়ত রঙিন রুমালে। কান খাড়া করে শুনত মাঠ থেকে ভেসে আসা সুরেলা গীত। খেতে খেতে তখন সবুজ বরন শস্য। কৃষাণীদের নকশিকাঁথায়ও ফুটে উঠত সেইসব দৃশ্য। মনের মধ্যে রস করত টলোমলো। চোখে-মুখে ফুটে উঠত বিচিত্র হাসি। কথায় কথায় চলত রঙ্গ-রসিকতা।

দেখতে দেখতে এসে পড়ত জামাইষষ্ঠী বা আমষষ্ঠী। জামাইষষ্ঠী একটি লৌকিক অনুষ্ঠান। জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে হতো এ অনুষ্ঠান। গ্রামের মেয়ে-জামাইরা আসত শ্বশুরবাড়ি। সাথে নিয়ে আসত ধামাভরা আম আর কলস ভরা দুধ। কোটা হতো আতপ চাল। দুধ জ্বাল দিয়ে তৈরি হতো পিঠা-পায়েস। কাঁঠাল কাঠের বড় পিঁড়িতে বসিয়ে শাশুড়ি অতি যত্নে জামাইকে খাবার পরিবেশন করত। লাজুক ভঙ্গীতে জামাই খাবার তুলত মুখে। বধূ আঙুলে আঁচল পেঁচিয়ে দরোজায় দাঁড়িয়ে দেখত সেই দৃশ্য। লক্ষ রাখত, স্বামীর আপ্যায়নে মায়ের কোনো ত্রুটি হয়ে যাচ্ছে কি না!

নমশূদ্রদের জীবনের সাথে বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে মা ষষ্ঠী। সন্তান জন্মের পর পুত্র-কন্যাভেদে একুশ দিন বা ত্রিশ দিনের মাথায় তারা করে ষষ্ঠী পুজো। এছাড়াও সারা বছর ধরে বিভিন্ন নামে করা হয় মা ষষ্ঠীর পুজো। এক এক মাসে এক এক নামে। অরণ্যষষ্ঠী, আমষষ্ঠী, জামাইষষ্ঠী, ঝিঙ্গেষষ্ঠী, মুলোষষ্ঠী ইত্যাদি।

বাৎসল্যময়ী, মাতৃময়ী দেবী ষষ্ঠী। দেবী ষষ্ঠী নিত্যা। তিনি সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে, আধি-ব্যাধিতে, জীবনে-মরণে মমতা আর করুণা দিয়ে আগলে রাখেন মর্ত্যধামের সকল সন্তানকে। ষষ্ঠী সমষ্টি মাতৃত্বের প্রতীক। বামক্রোড়ে সন্তান ধারণ করে তিনি হন দেবী জগদ্বাত্রী। অন্নদানে হন মা অন্নপূর্ণা। সার্বিক কল্যাণ দিয়ে হন মা ভগবতী। এজন্য তিনি শুধু দেবী নন, মহাদেবী।

মা ষষ্ঠীর বাহন বিড়াল। বিড়াল বহু প্রসবিণী। বছরে দুইবার সন্তান ধারণে সক্ষম। প্রতিবারে ৩/৪টি করে বাচ্চা প্রসব করে। সন্তানদায়িনী এবং রক্ষাকারী হিসাবে প্রাণিকুলের ভিতরে বিড়াল তুলনীয় মা ষষ্ঠীর সাথে। মনুষ্য শিশু জননীর উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। শিশু অবস্থায় বিড়ালছানাও সেরকম। মা বিড়াল তার বাচ্চাদের মুখে করে উনুনের পাশে, ছাইয়ের গাদা, খড়ের পালা ইত্যাদি গোপনীয় স্থানে লুকিয়ে রাখে, নিরাপত্তা দেয়। একটু বড় হলে লাঙল আন্দোলিত করে শাবককে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়। শিকার ধরার কৌশল শিক্ষা দেয়। মানুষের মতোই বিড়াল-মাতা তার শাবককে পর্যায়ক্রমে হাঁটা, চলা, খাওয়া প্রভৃতি ট্রেনিং দেবার মতো করে শেখায়।

সারা বছর ধরে নমশূদ্ররা বিভিন্ন নামে, বিভিন্নভাবে তাই মা ষষ্ঠীর পুজো করত।

পুজো শেষে সবাই গোল হয়ে বসততা। ভক্তিভরে শুনত ব্রতকথা–

এক ছিল গৃহস্থ। সে তার পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে সুখে সংসার করছিল। এমত সময়ে সেই বাড়ির ছোটবউয়ের ভীষণ লোভ হলো মাছ ও দুধ খাওয়ার। যৌথ পরিবারে আলাদা করে খাওয়া মুস্কিল। ছোট বউ তাই সবাইকে লুকিয়ে মাছ আর দুধ খেয়ে ফেলল। দোষ দিল বিড়ালের উপর। সবাই ভাবল, বিড়ালেই খেয়ে গেছে। ছোটবউয়ের লোভ বেড়ে যায় ক্রমান্বয়ে। প্রতিদিন সে দুধ-মাছ চুরি করে খায় আর দোষ দেয় বিড়ালের। এই শুনে বিড়াল খুব রেগে গেল। ভাবল, ছোট বউকে শাস্তি দিতে হবে।

এর মধ্যে ছোট বউ সন্তান প্রসব করল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে বিড়াল সেই সন্তানকে চুরি করে ষষ্ঠীদেবীর থান বটতলায় রেখে এলো। এভাবে পরপর ছোট বউয়ের ছয় সন্তানকে চুরি করে বিড়াল মা ষষ্ঠীর থান জঙ্গলে রেখে এলো। সন্তান হয় আর সাথেসাথেই তা চুরি হয়ে যায়। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। কিন্তু কেউ সেই রহস্য ভেদ করতে পারে না। শেষমেশ ভগবানের উপরে দোষ চাপিয়ে দিয়ে তারা সান্ত্বনা লাভের চেষ্টা করে।

এইবার ছোট বউয়ের কোলে এল সপ্তম সন্তান। বিড়াল সেই সন্তানকেও চুরি করল। কিন্তু পালাবার সময় হঠাৎ ছোট বউ জেগে গেল। দেখল, তার সন্তান চুরি করে নিয়ে বিড়াল পালাচ্ছে। অমনি সে হাতের বালা খুলে বিড়ালকে ছুঁড়ে মারল। বালার আঘাতে বিড়ালের গা কেটে রক্ত ঝরতে লাগল। সেই রক্তের দাগ ধরে ধরে ছোট বউ গিয়ে পৌঁছাল ষষ্ঠী দেবীর থানে। কিন্তু সন্তানকে খুঁজে পায় না। তখন ছোট বউ মা ষষ্ঠীর আরাধনা শুরু করে।

সেই আরাধনায় তুষ্ট হয় ষষ্ঠীদেবী। ছোট বউকে বলে–বিড়ালকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তুমি অপরাধ করেছ। সেজন্যই বিড়াল তোমার সন্তানদের চুরি করেছে। বিড়াল যদি তোমাকে ক্ষমা করে, তাহলে তুমি সব সন্তান ফেরত পাবে।

ছোট বউ অনুতপ্ত হয়ে বিড়ালের পা ধরে ক্ষমা চাইল। দেবীর কৃপায় তখন ছোট বউ তার সবকটি সন্তানকে ফিরে পেল।

জঙ্গল থেকে সন্তানদের নিয়ে সে যখন বাড়ি ফিরল, সবাই তখন অবাক হয়ে জানতে চাইল–কীভাবে ফেরত পেলে সন্তানদের? ছোট বউ খুলে বলে সব। দেবী ষষ্ঠীর করুণার কথা, বিড়ালের সন্তান চুরি করার কথা। সব শুনে সন্তান ধারণ, রক্ষা ও দেবী ষষ্ঠীর করুণা লাভের জন্য দেবীর পূজা ও বিড়ালের যত্ন করা শুরু করল সবাই।

ছোট বউ যে তারিখ ও তিথিতে বিড়ালের পিছু পিছু অরণ্যে গিয়ে দেবী ষষ্ঠীর কৃপায় সন্তান লাভ করেছিল, সেই তিথিই অরণ্য ষষ্ঠী দেবীর পূজার দিন। যা জামাইষষ্ঠী নামে পরিচিত।

সকাল থেকেই পাড়ায় পাড়ায় বাচ্চাদের ছুটোছুটি। গৃহবধূরা আম, খেজুর, বেলপাতা, বট-পাকুরের পাতা, তুলসীপাতা, ধান, দূর্বা সংগ্রহ করত। কাঁচা হলুদ ঘষে রঙিন করত সুতো। ছেলেমেয়েরা পুকুরে নেমে হৈ-হল্লা করে স্নান সারত।

গৃহবধূরা দলবেঁধে ঘাটে আসত। জলে ডুব দিয়ে উঠে এসে ভেজা কাপড়ে ঘাটের ভেজা কাদায় সবাই বসত গোল হয়ে। ষষ্ঠীপুজো শেষে শুরু হতো শুভচণ্ডীর পুজো। নমশূদ্রদের ভাষায় শুভচিনি। সমস্বরে গাইত পূজারম্ভের বন্দনা সংগীত–

সকালবেলা দিলাম আসন শুভচিনির নামে
আমার আসন যেন না ওড়ে বাতাসে।
সকালবেলা দিলাম ঘট শুভচিনির নামে
আমার ঘাট যেন না টলে বাতাসে।
সকালবেলা দিলাম আম শুভচিনির নামে
আমার আম যেন না খায় বাদুরে।
সকালবেলা দিলাম দুধ-চিনি শুভচিনির নামে
আমার দুধ-চিনি যেন না খায় পিঁপড়েতে।
সকালবেলা দিলাম পান-সুপারি শুভচিনির নামে
আমার পান-সুপারি যেন না ওড়ে বাতাসে।
সকালবেলা দিলাম ত্যাল-সিঁদুর তেল) শুভচিনির নামে
আমার ত্যাল-সিঁদুর যেন ধুলোয় না মেশে ॥

তারপর শুরু হতো পুজোর গীত–

সকালবেলা তুলছি শাক, সন্ধ্যাবেলা বাছি
ভাশুর ঠাকুর চাইছে জল, বড় নজ্জায় (লজ্জায়) আছি।
রূপ ছিল, যৈবন (যৌবন) ছিল, গয়না ছিল গায়
কত কত সিকি আধলি (আধুলি) পড়ছে কত পায়।
রূপ নাই, যৈবন নাই, গয়না নাই গায়
এ্যাহোন (এখন) সব রূপ কাঙালী, চ্যাপটা মুহি (মুখে) চায়।
ও মা শুভচিনি, শুভ করো, মঙ্গল করো
ডোল ডালি দ্যাও ভরে
তোমার পায়ে বিলি (বিল্বপত্র) দেব, যত্ন আদর করে।

ওঠো ওঠো মা জননী, ওঠো রে সকালে
আমরা সবাই সেবা দেব, তোমারি চরণে
শুভচিনি মা আমার বড়ই দয়াময়
যে বাড়িতে যায় মা তার খেতে ফলে ফসল
বংশে বাড়ে জন।
মা শুভচিনি…

শুভচিনি রাধে বাড়ে শুভচিনি খায়
এই শুভচিনির যে করবে হেলা
কাড়ে নিবি (কেড়ে নিবে) তার কোলের নিধি
দেকপি (দেখবি) কেমন জ্বালা।
মা শুভচিনি..

শুভচিনির নাম লইয়া যে জন বনে যায়
সাপে তারে কামড়ায় না রে বাঘে না খায়
শুভচিনি মা আমার বড়ই দয়াময়
ঘরে এসে সগলেরে (সকলকে) দিয়ো গো অভয়
মা শুভচিনি…

এরপর শুরু হতো শুভচিনি ব্রতকথা। সব নারী গোল হয়ে বসত। ভালো বক্তা যে, সে বলত। বাকিরা সবাই পরম ভক্তিতে গভীর মনোযোগে চুপচাপ শুনত। ব্রতকথার শুরুতেই আবার বন্দনা গীত–

বন্দী মাতা শুভচিনি
পুরাণে মহিমা শুনি
পতিত পাবন দ্রাক্ষায়ন
কহি আমি করপুটে
অধিষ্ঠিত হও ঘটে
কাতরে মা তোমারে আহ্বানি।

শুনো শুনে ব্রতীগণ শুভচিনি পূজার্চণ
সার কহি ব্রতেরও কাহিনি।
পুজো করে যেই জন, তারে মাতা বর দেন
প্রণামি দেবগুরু বিপ্রের চরণে
শুভচিনি মাতা বন্দি আনন্দিত বদনে ॥

তারপর শুরু হতো ব্রতকথা–

প্রজাগণ লয়ে কলিঙ্গ ঈশ্বর রাজ্য করে। সেখানে বসত করে এক দ্বিজবর। দ্বিজবরের কোনো পুত্র নাই, কন্যা নাই। ঘরে একমাত্র ব্রাহ্মণী তার। কালক্রমে ব্রাহ্মণের হয় স্বর্গবাস। ব্রাহ্মণী পাঁচ মাসের পোয়াতি তখন। পতিহারা ব্রাহ্মণী কাতরে কাতরে ভূমিতে পড়ে কাঁদে। প্রতিবেশী নারীগণ এসে সান্তনা দেয়–এভাবে কাঁদে না ব্রাহ্মণী। কাঁদলে কি ফিরে আসবে ব্রাহ্মণ? এভাবে কাঁদলে হবে গর্ভের অমঙ্গল। এই বলে পাড়া-পড়শিরা ব্রাহ্মণীকে সান্তনা দেয়। আর সকাল-সন্ধ্যা ব্রাহ্মণীর আহার যোগায়।

দিন গড়ে গড়ে ব্রাহ্মণীর গর্ভকাল দশ মাস হয়। জন্ম হয় ফুটফুটে সুন্দর এক ছেলের। ছেলের বয়স হয় পাঁচ সন। এক শুভ দিন দেখে তারে পাঠশালে পাঠায় ব্রাহ্মণী। ছেলের লেখাপড়ায় খুবই মন। দুঃখিনী ব্রাহ্মণীর ছেলের বয়স হলে একদিন পাঠশালা থেকে ফিরে মা’র আঁচল ধরে কয়-মাগো পাঠশালের সবাই কত কী খায়, আর আমি…

মা কয়–আমরা দুঃখী। মার কথা শুনে ছেলে মনে কষ্ট নিয়ে বসে থাকে।

এমত একদিন দ্বিজপুত্র ভোর ভোর সকালে উঠে ভ্রমণে বের হয়ে দেখে রাজার হংসশালে অনেক হংস। হংসরা সব সারাদিন এখানে-সেখানে চড়ে বেড়ায়, সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে। এর মধ্যে একটা হাঁস খোঁড়া। দ্বিজপুত্র একদিন সেই খোঁড়া হাঁসটি গোপনে ধরে আছড়ে মেরে মার কাছে এনে দেয়। মা রান্না করে সেই মাংস ছেলেকে খেতে দেয়।

পরদিন রাজা খোঁড়া হাঁসটি না দেখে তার পাইক-পেয়াদাদের আদেশ করে–হাঁস খুঁজে বের করো। আজই।

পাইক-পেয়াদা বেরিয়ে পড়ে। রাজ্যের সব হংসশালে খোঁজে। কিন্তু খোঁড়া হাঁসটাকে কোথাও খুঁজে পায় না। শেষে তারা দেখে এই ব্রাহ্মণীর বাড়ির ধারে পড়ে আছে হাঁসের পালক। আর যায় কোথায়! দ্বিজপুত্রকে ধরে দণ্ড মারতে মারতে পেয়াদারা ধরে নিয়ে যায় রাজার কাছে। রাজা ক্রোধে উচ্চৈঃস্বরে কয়–ওরে ব্যাটা, তুই নিয়েছিস হাঁস! এত বড় সাহস তোর? একে বন্দি করে রাখো বন্দিশালে। বুকের উপর দাও পাথরচাপা।

পাইক-পেয়াদারা তাই করে।–

এ কথা শুনে ব্রাহ্মণী কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়।

একটা একটা করে দিন পার হতে থাকে। ব্রাহ্মণীর কানে একদিন ভেসে আসে উলুধ্বনি। ঘরের বাইরে এসে দেখে, দলে দলে নারীরা যাচ্ছে আর উলুধ্বনি দিচ্ছে।

ব্রাহ্মণী জিজ্ঞেস করে–তোমরা কোথায় যাও?

মেয়েরা কয়–আমরা শুভচিনি ঠাকরাণীর কাছে যাই। ওই ঠাকরাণী কাউরে কৃপা করলে তার ভয়-ডর আর কোনো অমঙ্গল থাকে না। মরা পতি, সতী, ছেলেমেয়ে সব তাজা হয়।

এ শুনে ব্রাহ্মণীও ওদের পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে। আর মনে মনে কয়–মা শুভচিনি, আমার ছেলেটার সব অপরাধ ক্ষ্যামা করে দাও। আমি তোমার পায়ে ফুলজল দেব।

দিন গত হয়। রাতে মা শুভচিনি স্বপ্নে বাজারে দেখা দেয়। মুখোমুখি হয়ে কয়-শোনো রাজা, আমি তোমারে শুভ কথা শুনাই। যে মেরেছে তোমার হাঁস, সে আমার ব্রতদাস। তারে তুমি বন্দি করেছ তোমার বন্দিশালে। পাথরচাপা দিয়ে তারে কষ্টে রেখেছ। রাত প্রভাতে নিজ হস্তে তুমি তারে মুক্ত করে দেবে। তার অপরাধ মাফ করে, ধনরত্নসহকারে তোমার মেয়ে শকুন্তলার সাথে তারে বিয়ে দেবে। নইলে, সমূলে তোমার হবে বংশনাশ। রাজ্যপাট ধ্বংস হবে, হবে ছাড়খার। কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

তোমার খোঁড়া হাঁস, এক বালক করেছে নাশ। তার জন্য এত সাজা কেন? ভোর সকালে হংসশালায় গিয়ে দেখো, কত শত খোঁড়া হাঁস সৃষ্টি করেছি আমি। এ জগতে যা কিছু ঘটে সব আমারই কীর্তি। এই বলে মা শুভচিনি রাজার সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

রাজা ধড়মড় করে জেগে ওঠে। রানিকে জাগায়। স্বপ্নের কথা শোনায় রানিকে। রানি সব শুনে খুব চিন্তিত হয়ে। শেষে রাজা-রানি দুই হাত জোর করে শুভচিনি ঠাকুরানিকে প্রণাম করে।

কাতর হয়ে বলে–মা দয়াময়ী, কল্যাণময়ী, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো। তোমার আদেশ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।

রাত পোহালে রাজা হংসশালে যায়। গিয়ে দেখে সেই খোঁড়া হাঁস নৃত্য করে। এ দেখে রাজা সব পাত্রমিত্ররে ডেকে কয়–এখনি ব্রাহ্মণপুত্রকে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে আনো। তার সাথে আমি আমার কন্যা শকুন্তলার বিয়ে দেব। সাথে দেব অর্ধেক রাজ্য।

রাজার আদেশ পাওয়ামাত্র ব্রাহ্মণ-পুত্রকে সবাই মুক্ত করে নিয়ে আসে। স্নান করায়। তারে নতুন বস্ত্র পরায়। এরপর রাজার সামনে হাজির করে। রাজা জোড় হাত করে ব্রাহ্মণপুত্র’র বিবিধ স্তুতি গায়। আর কয়–তুমি আমার মানিক রতন। তুমি আমার ধন, মান। বংশ রক্ষার কবজ। আমি তোমারে চিনতে পারি নাই। তোমারে আমি আমার কন্যা দেব, অর্ধেক রাজত্ব দেব। এই বলে রাজা পাত্র-মিত্র ডেকে ঘোষণা করে–সামনের মাসে ব্রাহ্মণ-পুত্র’র সাথে রাজকন্যার বিয়ে দেব ধুমধামের সাথে। আয়োজন করো তোমরা।

এরপর রাজবাড়িতে রাজকন্যার বিয়ের ধুম লেগে যায়। বাদ্য বাজে, উলুধ্বনি বাজে। রাজ নর্তকীরা নাচ শুরু করে। বাজিকরেরা বাজি পোড়ায়। হাতিশালে হাতি নাচে, ঘোড়াশালে ঘোড়া। ভেতর বাড়ি যার যা খাবার ইচ্ছে, সে তাই খায়। মহা ধুমধামের ভিতর দিয়ে ব্রাহ্মণ পুত্রের সাথে রাজকন্যার বিয়ে হয়ে যায়। রাজা-রানি খুশি। উপযুক্ত সোয়ামী পেয়ে রাজকন্যাও সুখী।

আগে-পিছে বাদ্যি-বাজন, হাতি-ঘোড়া, লোক-লস্কর নিয়ে ব্রাহ্মণপুত্র যাত্রা করে তার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ব্রাহ্মণীর বাড়িঘর পূর্ণ হলো ধন-ধান, হাতি-ঘোড়া, মণি-মুক্তো সবকিছুতে। আনন্দে ব্রাহ্মণী প্রায় জ্ঞানহারা হয়। শেষে ব্রাহ্মণী স্বপ্নে জানতে পায়, যা কিছু হল, সব তার মা শুভচিনির দয়ায়। ব্রাহ্মণী খুশিতে হাবুডুবু খায়। আর প্রচার করতে থাকে মা শুভচিনির মহিমার কথা। সেই থেকে মা শুভচিনি সকলের দয়াবতী মা।

ব্রতকথা শেষে সবাই নামে স্নানে। প্রত্যেকেই তার সন্তানের গায়ে-মাথায় শুভচিনি ঠাকুরানির নামে জল ছিটায়। স্নান সেরে সকল মা-বোন তাদের সন্তান আর ভাইয়ের হাতে মা শুভচিনির নামে হলুদমাখা মঙ্গল সুতো বেঁধে দেয়। সেই সুতো হাতে পরে ছেলেরা মনের খুশিতে নেচে বেড়ায়।

ফলের মাস জ্যৈষ্ঠমাস। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুলসহ বিবিধ ফলের গন্ধে ভরে থাকত বিল এলাকার এইসব নমশূদ্র পল্লি। ফলের রসে ঠোঁট ভিজে থাকত ছেলেমেয়েদের। জামের রসে রঙিন থাকত তাদের মুখ। কাঁঠাল নমশূদ্রদের অতি পছন্দের ফল। সম্ভবত দাম কম এবং পেটে বেশিক্ষণ থাকে বলে ক্ষুধা নিবারণকারী ফল হিসেবে কাঁঠালের কদর বেশি দরিদ্র নমশূদ্র গেরস্থদের কাছে। কাঠালের কোনোকিছুই ফেলতে হয় না। কাঁঠালের বিচি পুড়িয়ে বা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। কোয়া বের করে নেবার পরে যা পড়ে থাকে তাকে এরা বলে ভোতরা বা চাবরা। সেটা গরু খুব পছন্দ করে খায়।

পান্তাভাতের সাথে কাঁঠাল অতি পছন্দের খাবার নমশূদ্র কৃষকদের। আর খায় দুধে চটকে। কখনও বা মুড়ির সাথে মেখে। এমনি এমনিও খায় তারা কাঁঠাল সমানতালে। পাকা কাঁঠালের গন্ধে বাড়িঘর ভরে যেত নীল বর্ণের বড় বড় মাছিতে। উড়ে বেড়াত ভনভন করে। তারা বলত কাঠালে মাছি।

ভোররাতে আম কুড়ানোর ধুম পড়ে যেত। প্রতিযোগিতায় মেতে উঠত ছেলেমেয়েরা।

দুপুর বেলায় পাটি পেতে শুয়ে থাকত গাছের নিচে। হাঁসফাঁস গরমের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা। বাতাসে পাকা আম টুপ করে ঝরে পড়লেই ছুটে গিয়ে সেটার দখল নিত। আমের খোসা ছাড়িয়ে চেটেপুটে খেত সবাই। আঁটি চুষে খেতে খেতে হাতের কনুই বেয়ে রস গড়িয়ে পড়ত। আঁটি ফেলে দেয়া হতো ঘরের পেছনে, উঠোনের নিচে, আদারে-বাদারে। দিন কয়েকের ভিতরেই মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসত চারাগাছ। তুলতুলে লালচে রঙের পাতা। আমের চারা তুলে গোড়ার আঁটি দিয়ে বাচ্চারা বানাত ভেঁপু বাঁশি। আঁটির ছাল ছাড়িয়ে ভিতরের সাদা বীজপত্র শক্ত কোনোকিছুতে ঘষে ঘষে এক পাশ ক্ষয় করে তৈরি হতো বাঁশি। সেই বাঁশির পোঁ পোঁ শব্দে পাড়া মেতে উঠত।

এভাবেই দেখতে দেখতে পার হয়ে যেত নমশূদ্রদের জীবন থেকে আরও একটি জ্যৈষ্ঠ মাস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *