কুইনের চতুর্থ সৈন্য

কুইনের চতুর্থ সৈন্য

P-Q4 দিয়ে অর্থাৎ কুইনের চতুর্থ সৈন্য দিয়ে খেলা শুরু করা মানে ক্লোজ ওপেনিং। এর অর্থ উভয় পক্ষের ট্যাক্টিক্যাল কন্ট্যাক্ট খুব ধীরগতিতে ত্বরান্বিত হবে। কৌশল খাটানোর জন্য প্রচুর সুযোগ আছে এখানে তবে শত্রুর সাথে হাতে হাতে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বেশ সময় লাগে…এখানে পজিশনাল দাবা হলো আসল কথা।

–কম্পিট বুক অব চেস ওপেনিং
ফ্রেড রিনফিল্ড

এক চাকর বাজারে গিয়ে লোকমুখে শুনতে পেলো যম তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাড়িতে ছুটে এসে তার মনিবকে বললো পাশের শহর সামারায় পালিয়ে যাবে সে যাতে করে যম তাকে খুঁজে না পায়।

সেই রাতে খাবারের পর পরই দরজায় কড়াঘাতের শব্দ হলো। মনিব দরজা খুলতেই দেখতে পেলো কালো রঙের আলখেল্লা পরিহিত যম দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। চাকরের খোঁজ করলো যম।

“সে খুবই অসুস্থ, বিছানায় শুয়ে আছে,” ঝটপট মিথ্যেটা বললো মনিব। “তার অবস্থা খুবই খারাপ, তাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না।”

“আজব কথা,” বললো যম। “তাহলে সে নিশ্চিত ভুলে গেছে। কারণ আজ মধ্যরাতে সামারাতে তার সাথে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে।”

–অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা’র কিংবদন্তী

.

নিউইয়র্ক,
ডিসেম্বর ১৯৭২

আমি সমস্যায় পড়ে গেছি। বিরাট সমস্যায়।

এটা শুরু হয়েছে নিউইয়ার্স ইভ, মানে ১৯৭২ সালের শেষ দিন আর নববর্ষের আগের দিন থেকে। এক গণকের সাথে আমার দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা’র সেই লোকটার মতো আমি আমার নিয়তি এড়ানোর জন্যে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমি চাই নি কেউ আমার হাত দেখে আমার ভবিষ্যত বলে দিক। ইতিমধ্যেই আমার জীবনে বিরাট সমস্যার আর্বিভাব ঘটে গেছে। ১৯৭২ সালের শেষ দিনটাতে আমি আমার জীবনটাকে নিয়ে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থায় পড়ে যাই। অথচ আমার বয়স তখন মাত্র তেইশ।

সামারার বদলে আমি ম্যানহাটনের প্যান অ্যাম ভবনের উপরতলার ডাটা সেন্টারে চলে আসি। এটা সামারার চেয়েও অনেক কাছের, নিউইয়ার্স ইভের দিন রাত দশটা বাজে পর্বতশীর্ষের মতোই বিচ্ছিন্ন আর নির্জন।

আমার মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি কোনো পাহাড়ের উপরেই আছি। যে জানালাটা দিয়ে পার্ক এভিনু দেখা যায় সেটাতে গড়িয়ে গড়িয়ে তুষার পড়ছিলো। প্যান অ্যাম-এর ডাটা সেন্টারে কয়েক একর জায়গা জুড়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ওগুলো থেকে বিপু করে শত শত বাতি জুলছিলো, নীচ ভলিউমে গুঞ্জনও হচ্ছিলো কারণ সারা বিশ্বের এয়ারপ্লেইন নিয়ন্ত্রণের রুটিন কাজ আর টিকেট বিক্রি হয় এইসব যন্ত্রের মাধ্যমে। পালিয়ে এসে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য উপযুক্ত জায়গা এটি।

আমাকে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তিন বছর আগে আমি নিউইয়র্কে চলে আসি এ পৃথিবীর অন্যতম বিশাল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান উপল-এম-এর হয়ে কাজ করার জন্য। সেই সময় থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্যান অ্যাম আমার ক্লায়েন্ট ছিলো। তারা এখনও তাদের ডাটা সেন্টারটা ব্যবহার করতে দেয় আমাকে।

কিন্তু তখন আমি আমার কাজ পাল্টে ফেলেছি, আর সেটা আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছিলো। ফুষ্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম নামের বিখ্যাত সিপিএ ফার্মের প্রথম নারী হিসেবে নিযুক্ত হবার একটা সম্মান অর্জন করেছিলাম আমি। অবশ্য তারা আমার কাজের স্টাইল পছন্দ করে নি।

‘সিপিএ’ শব্দটার মানে যারা জানে না তাদেরকে বলছি, এর মানে হলো

সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেড। ফুস্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম হলো এ বিশ্বের সবচাইতে বড় সিপিএ ফার্ম, এই ভ্রাতৃসংঘটাকে যথাযথভাবে ডাকা হয় দ্য বিগ এইট’ নামে।

 একজন ‘অডিটর’কে ‘পাবলিক একাউন্টেন্ট’ নামে ডাকাটা অনেক বেশি ভদ্রোচিত। বিগ এইট এই সেবাটি সব ধরণের বড় বড় কপোরেশনের জন্যে দিয়ে থাকে। খুবই সম্মানজনক একটি অবস্থান তাদের রয়েছে। সোজা কথায় বলতে গেলে, তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিচি নিজেদের কজায় রাখে। বিগ এইট যদি তাদের কোনো ক্লায়েন্টের অডিট করতে গিয়ে সাজেস্ট করে তাদের ফিনান্সিয়াল সিস্টেমের জন্যে আরো আধ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করতে হবে তাহলে সেই ক্লায়েন্ট এই সাজেশন মেনে না নিলে ধরে নিতে হবে তারা বোকার হদ্দ। অর্থনীতির উপরমহল এসব ব্যাপার-স্যাপার বেশ ভালোমতোই বোঝে। পাবলিক একাউন্টিংয়ে প্রচুর টাকা-পয়সা আছে। এমন কি জুনিয়র কোনো পার্টনারের আয়রোজগারও ছয় সংখ্যার ঘরে থাকে।

কিছু লোক হয়তো বুঝতে পারে না পাবলিক একাউন্টিং জগতটি কেবলমাত্র সার্টিফাইড পুরুষদের জন্যে, তবে ফুব্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম ঠিকই বোঝে আর সেজন্যেই আমাকে একটা কঠিণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত করে তারা। যেহেতু সেক্রেটারির পদ ছাড়া আমার মতো কোনো নারীকে এ পদে দেখে নি, সেজন্যেই তারা আমার সাথে এমন ব্যবহার করে যেনো আমি কোনো বিরল প্রজাতির ডুডু পাখি-সম্ভাব্য বিপজ্জনক কিছু, যা কিনা সাবধানে সামলাতে হয়।

কোনো কিছুতে প্রথম মহিলা হওয়াটা পিকনিকের মতো ব্যাপার নয় মোটেও। তুমি প্রথম নারী নভোযাত্রি হও কিংবা চায়নিজ লন্ড্রিতে কাজ করা প্রথম নারী শ্রমিকই হও না কেন তোমাকে কটুক্তি, মশকরা আর তীর্যক মন্তব্য মেনে নিতেই হবে। অন্য যে কারোর চেয়ে তোমাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করে পেতে হবে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিদান।

তারা যখন আমাকে ‘আমাদের জগতে একমাত্র মহিলা, মিস ভেলিস’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতো তখন আমি খুব মজা পেতাম। এরকম কথা শুনে লোজন হয়তো ভাবতো আমি হলাম একজন গায়নোকলজিস্ট।

সত্য হলো আমি একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, নিউইয়র্কের ট্রান্সপোর্টেশন ইন্ডাস্ট্রির সবচাইতে সেরা লোক। এজন্যেই তারা আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলো। ফুষ্প্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম-এর পার্টনারশিপ যখন আমার খোঁজ করছিলো তখন তাদের রক্তলাল চোখে ভেসে উঠেছিলো ডলারের প্রতীকটি। তারা শুধু একজন নারীকেই দেখে নি, দেখেছে একজন বু-চিপ একাউন্টের জ্বলজ্যান্ত পোর্টফোলিওকে। দৃষ্টিগ্রাহ্য করার মতো যথেষ্ট তারুণ্যময়, মুগ্ধ করার জন্যে যথেষ্ট আনাড়ি, আমার ক্লায়েন্টদের হাঙ্গর সদৃশ্য মুখ হা করার মতো যথেষ্ট নিষ্কলুস-একজন নারীর মধ্যে যা যা খুঁজছিলো তারা তার সবটাই আমার মধ্যে ছিলো। কিন্তু এই মধুচন্দ্রিমাটা একেবারেই সংক্ষিপ্ত হয়।

ক্রিসমাসের কয়েক দিন আগে আমার এক ক্লায়ে বিশাল একটি শিপিং কোম্পানির কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ক্রয়-পূর্বক ইকুইপমেন্ট খতিয়ে দেখার কাজ করছিলাম তখন আমাদের কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার জোক আপহাম আমার অফিসে এসে উপস্থিত হন।

জোকের বয়স ষাটেরও বেশি, লম্বা, হালকাঁপাতলা আর বেশ তারুণ্যময় একজন ব্যক্তি। প্রচুর টেনিস খেলে থাকেন, পরে থাকেন মাড় দেয়া ব্রুস ব্রাদার্স সুট, চুলে ডাই করেন সব সময়। তার হনহন করে হাটা দেখে মনে হতে পারে তিনি টেনিস খেলার শট মারতে যাচ্ছেন।

আমার অফিসে সেভাবেই এসে উপস্থিত হন জোক।

“ভেলিস, উচ্ছ্বাসের সাথে বলেছিলেন তিনি। “তুমি যে স্টাডিটা করছো সেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম। এ নিয়ে আমি নিজের সাথে অনেক তর্ক করেছি। অবশেষে বুঝতে পেরেছি কেন এ নিয়ে আমার মধ্যে খচখচানি হচ্ছে। এটা হলো জোকের কথা বলার একটি পরিচিত ভঙ্গি। এর মানে যতোই যুক্তি থাক, তার সাথে এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করা যাবে না।

“আমি প্রায় শেষ করে ফেলেছি, স্যার। আগামীকাল ক্লায়েন্টকে এটা দেবার কথা, সুতরাং আশা করবো আপনি আর কোনো পরিবর্তন করতে চাইবেন না।”

“তেমন কিছু না,” খুব দ্রভাবে বললেন তিনি। “আমি ঠিক করেছি আমাদের ক্লায়েন্টের জন্যে ডিস্ক-ড্রাইভের চেয়ে প্রিন্টারই বেশি উপযুক্ত হবে। আমি বলি কি, তুমি সিলেকশন ক্রাইটেরিয়াটা একটু চেঞ্জ করে দাও।”

কম্পিউটার বিজনেসে এটা হলো ‘নাম্বার ফিক্স’ করে দেবার আদেশ। আর এটা একেবারেই বে-আইনী কাজ। এক মাস আগে ছয়জন হার্ডওয়্যার সাপ্লায়ার তাদের সিল করা দরপত্র আমাদের ক্লায়েন্টের কাছে সাবমিট করেছে। এইসব দরপত্রগুলো নিরপেক্ষ অডিটর হিসেবে সিলেকশন ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করেছি আমরা। তাদেরকে বলেছি আমাদের ক্লায়েন্টের দরকার শক্তিশালী ডিস্ক-ড্রাইভ। একজন সাপ্লয়ার এরজন্যে সর্বনিম্ন দরদামও জমা দিয়েছে। দরপত্র আহ্বানের পর আমরা যদি এখন ঠিক করি ডিস্কড্রাইভের চেয়ে প্রিন্টারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অন্য একজন সাপ্লায়ারের পক্ষে পুরো ব্যাপারটা চলে যাবে। আর সেই সাপ্লয়ারটা কে সেটা আমি খুব সহজেই অনুমাণ করতে পারছিলাম : যে সাপ্লায়ার সেদিন দুপুরে জোককে লাঞ্চ করাতে নিয়ে গিয়েছিলো।

 আমি পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম টেবিলের নীচ দিয়ে মহামূল্যবান কিছু বিনিময় করা হয়েছে। সম্ভবত ভবিষ্যতে আমাদের ফার্মের জন্যে কাজ করা, কিংবা জোকের জন্যে দামি কোনো ইয়ট অথবা স্পোর্টসকার। ডিলটা যাই-ই হোক না কেন, আমি তার অংশ হতে চাই নি।

“আমি দুঃখিত, স্যার,” তাকে বলেছিলাম। “ক্লায়েন্টর অনুমতি ছাড়া এখন কোনো রকম পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সেই সময়ও আমাদের হাতে নেই। আমরা ফোন করে ক্লায়েন্টকে বলতে পারতাম, সাপ্লায়ারদেকে তাদের আসল দরপত্রের সাথে আরেকটি সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে কিন্তু সেটা করলে তারা নতুন বছরের আগে যন্ত্রপাতিগুলো অর্ডার দিতে পারবে না।”

“তার কোনো দরকার নেই, ভেলিস,” বললেন জোক। “আমি আমার ইনটুইশনকে অবজ্ঞা করে এই ফার্মের সিনিয়র পার্টনার হই নি। অনেকবারই আমি আমার ক্লায়েন্টদের না জানিয়ে তাদের হয়ে কাজ করেছি, চোখের পলকে বাঁচিয়ে দিয়েছি তাদের মিলিয়ন মিলয়ন ডলার। তারা কখনও ব্যাপারটা জানতেও পারে নি। এরকম দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার কারণেই আমাদের বিগ এইট ফার্ম বছরের পর বছর ধরে শীর্ষে অবস্থান করছে।” গালে টোল পড়া হাসি দিলেন তিনি।

পুরো কৃতিত্ব নেয়া ছাড়া জোক আপহাম একজন ক্লায়েন্টের জন্যে কিছু করবেন এটা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার, একটা সূচের ছিদ্রের ভেতর দিয়ে বিশাল আকৃতির উটকে ঢুকিয়ে দেয়ার মতোই অবাস্তব।

“স্যার, আমাদের ক্লায়েন্টের পক্ষ হয়ে সিল করা দরপত্র নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ণ করার দায়িত্বটা কিন্তু আমাদের। হাজার হলেও আমরা হলাম অডিট ফার্ম।”

জোকের গাল থেকে টোল পড়া হাসি উধাও হয়ে গেলো। “তুমি নিশ্চয় আমার সাজেশন অগ্রাহ্য করার কথা বলছো না?”

“এটা যদি আদেশ না হয়ে নিছক কোনো সাজেশন হয়ে থাকে তাহলে আমি সেটা গ্রহণ করবো না।”

“আর আমি যদি আদেশ করি তাহলে?” বাঁকাভাবে বললেন জোক। “এই ফার্মের একজন সিনিয়র পার্টনার হিসেবে আমি-”

 “তাহলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই প্রজেক্ট থেকে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে, স্যার। কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন। অবশ্য আমি আমার কাজের একটা কপি নিজের কাছে রাখবো, পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে আমি সেটা প্রমাণ হিসেবে দেখাতে পারবো।”

 জোক বুঝতে পারলেন এর মানেটা কি। সিপিএ ফার্ম নিজেরা নিজেদেরকে অডিট করে না। শুধুমাত্র আমেরিকান সরকারের উচ্চপদস্থ লোকজনই এসব ব্যাপারে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। আর সেটা কেবল তখনই ঘটে যখন তারা মনে করে বে-আইনী কিংবা অনিয়ম করা হয়েছে।

“বুঝতে পেরেছি,” বললেন জোক। “বেশ, আমি তাহলে তোমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে নেবো, ভেলিস। এটা পরিস্কার, এই সিদ্ধান্তটি আমি নিজেই নিচ্ছি।” ঝট করে ঘুরে হনহন করে চলে যান তিনি।

পরদিন সকালে আমার ম্যানেজার, ত্রিশোর্ধ বয়সের নাদুসনুদুস শরীর আর সোনালি চুলের লিসেল হোমগ্রেন আমার কাছে আসে। লিসেলকে ক্ষিপ্ত মনে হয় আমার। তার মাথার চুল এলোমেলো, গলার টাইটাও আলগা হয়ে ছিলো।

“ক্যাথারিন, আপনি জোকের সাথে কি করেছেন?” এসেই এ কথা বলে সে। “আরে উনি তো ভেজা মুরগির মতো ক্ষেপে আছেন। আজ ভোরবেলায় আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি শেভ করার সময়টাও পাই নি। আমাকে বললেন তিনি। আপনাকে কাজ থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কোনো ক্লায়েন্টের কাছে আপনাকে এক্সপোজ করতে চান না। আরো বলেছেন, আপনি নাকি বিগবয়দের সাথে খেলার জন্যে এখনও প্রস্তত হন নি।”

লিসেলের জীবন এই ফার্মকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তার এমন একটা বউ। আছে যার শখ আহ্লাদ মেটাতে গিয়ে তাকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। মহিলার আবার পার্টিপ্রীতি রয়েছে। সেটার ফি তাকেই বহন করতে হয়। ব্যাপারটা তার ভালো না লাগলেও সে খুবই নিরুপায়।

“আমার মনে হয় গতরাতে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছিলো, একটু ঠাট্টাচ্ছলে বলি। আমি একটা দরপত্র পাল্টে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। তাকে আমি বলেছি তিনি চাইলে কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।”

 আমার পাশের চেয়ারে হাত-পা ছেড়ে বসে পড়ে লিসেল। কয়েক মুহূর্ত সে কিছুই বলে নি।

“ক্যাথারিন, ব্যবসায়িক জগতে এমন অনেক বিষয় আছে যা আপনার মতো অল্পবয়সীদের কাছে অনৈতিক বলে মনে হতে পারে। তবে দেখতে যেমনটি মনে হয় আসলে সেগুলো ওরকম না।”

“কিন্তু এটা ওরকমই।”

“আমার কথাটা মন দিয়ে শুনুন, জোক আপহাম যদি কোনো কিছু করতে বলেন তাহলে ধরে নেবেন তার একটা কারণ নিশ্চয় আছে।”

“আমিও বাজি ধরে বলতে পারি কারণ একটা আছে। আমার ধারণা কারণটা আর কিছু না, ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার ডলার, তাকে কথাটা বলেই আমি আমার কাজে মনোযোগ দেই।

“আপনি যে নিজের পায়ে কুড়াল মারছেন সেটা কি বুঝতে পারছেন না?” আমাকে বলে সে। “জোক আপহামের মতো লোকজনের সাথে আপনি লাগতে পারেন না। তিনি ভদ্রছেলের মতো চুপচাপ মাথা নীচু করে এককোণে গিয়ে বসে থাকবেন না। আপনি যদি আমার উপদেশটা শোনেন তাহলে বলি, এক্ষুণি তার অফিসে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আসুন। তাকে বলবেন, এখন থেকে তিনি যা যা করতে বলবেন তাই করবেন। তার সাথে হাসিমুখে কথা বলে তাকে একটু পটিয়ে আসুন। আর যদি এটা না করেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ।”

 “বে-আইনী কোনো কিছু করতে চাই নি বলে তিনি আমাকে বরখাস্ত করতে পারেন না,” বলি আমি।

“আপনাকে তার বরখাস্ত করা লাগবে না। তিনি এমন একটা পজিশনে আছেন যে, আপনার জীবন এতোটাই বিষিয়ে তুলবে, আপনার কাছে মনে হবে এই জীবনে আর এই অফিসে না আসাই ভালো। আপনি খুব ভালো মেয়ে, ক্যাথারিন। আপনাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। আপনি আমার কথা শুনলেন, এখন নিজের এপিটাফ লিখবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার।”

.

এটা এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। আমি জোকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাই নি। আমাদের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছে সেটাও কাউকে বলি নি। ক্রিসমাসের আগের দিনই আমি আমার ক্লায়েন্টের কাছে দরপত্রের রিকমেন্ডশন পাঠিয়ে দেই যথাযথ নিয়ম মেনে। জোকের পছন্দের লোক সেই দরপত্রে টিকতে পারে নি। তখন থেকেই ফুব্রাইট, কোন, কেইন অ্যান্ড আপহাম ফার্মে সব কিছু কেমন জানি শান্ত হয়ে ছিলো। অবশ্য আজকের সকালের আগপর্যন্ত।

আমার উপর কি ধরণের অত্যাচার করা হবে সেটা ঠিক করতে তাদের সাত দিন লেগে গেছে। আজ সকালে লিসেল আমার অফিসে আসে।

“আপনি কিন্তু বলতে পারবেন না আমি আপনাকে সাবধান করে দেই নি,” বলেছিলো সে। “মহিলাদের একটা সমস্যা কি জানেন, তারা কোনো কথা শোনে বা। আমার অফিসের পাশের টয়লেটে কেউ ফ্লাশ করলো। শব্দটা মিইয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করলাম আমি।

“তার কাণটা কি জানেন?” বললাম আমি। “তার কারণ আমাদের যুক্তিবুদ্ধি।”

“আপনি এখন যেখানে যাচ্ছেন সেখানে গেলে প্রচুর সময় পাবেন যুক্তিবুদ্ধি খাটানোর জন্য,” বললো ম্যানেজার। “পার্টনাররা আজ সকালে মিটিংয়ে বসে কফি আর ডাগনাট খেতে খেতে আপনার ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কোলকাতা আর আলজিয়ার্সের মধ্যে একটা টস হয়েছে। আপনি জেনে খুশি হবেন, আলজিয়ার্স জয়যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার ভোটটা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আপনি সাধুবাদ দেবেন আমাকে।”

“আপনি এসব কি বলছেন?” আমার পেট গুলিয়ে একটা শীতল প্রবাহ বয়ে গেলো মেরুদণ্ড দিয়ে। “আলজিয়ার্স জায়গাটা আবার কোথায়? এর সাথে আমার কি সম্পর্ক?”

 “আলজিয়ার্স হলো আলজেরিয়ার রাজধানী, উত্তর-আফ্রিকার একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। যার গায়ে তৃতীয়-বিশ্বের তকমা লাগানো আছে। আমার মনে হয় এই বইটা পড়ে বাকি সব জেনে নেয়াই ভালো। বিশাল একটা বই আমার ডেস্কে আছাড় মেরে রেখে আবার বলতে লাগলো সে, “ভিসা যতোদিন না হয় ততোদিন এখানেই থাকবেন। আমার মনে হয় সেটা কমপক্ষে তিন মাসের ব্যাপার। ওখানে আপনাকে অনেক দিন থাকতে হতে পারে। এটাই হলো আপনার নতুন অ্যাসাইনমেন্ট।”

 “ওখানে আমার অ্যাসাইনমেন্টটা কি? মানে আমি করবোটা কি?” বললাম তাকে। “নাকি এটা কোনো নির্বাসন?”

“না, ওখানে আমাদের একটা প্রজেক্ট শুরু হয়েছে। দারুণ দারুণ সব জায়গায় আমরা কাজ পাচ্ছি আজকাল। এটা এক বছরের একটা কাজ, তৃতীয় বিশ্বের একটি সমাজতান্ত্রিক দেশের গ্যাসোলিনের মূল্য নির্ধারণের কাজকারবার আর কি। এটাকে বলে OTRAM, না…দাঁড়ান দেখি আসলে কি,” জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পড়ে দেখলো সে। “হ্যাঁ, এটাকে বলে। OPEC।”

“জীবনেও এ নাম শুনি নি,” আমি বললাম। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে এই। OPEC নামটা অবশ্য খুব বেশি সংখ্যক মানুষ শোনেও নি। যদিও এরপর দ্রুত নামটা পরিচিতি পেয়ে যায়।

“আরে আমিও তো শুনি নি,” লিসেল বললো। “এজন্যেই পার্টনাররা মনে করেছেন আপনার জন্য এটা পারফেক্ট অ্যাসাইনমেন্ট। মনে রাখবেন, তারা আপনাকে মাটি চাপা দিতে চায়, ভেলিস।” টয়লেটটা আবারো ফ্লাশ করে উঠলে আমার সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেলো।

“কয়েক সপ্তাহ আগে প্যারিস অফিস থেকে আমরা একটা বার্তা পাই, তারা জানতে চেয়েছিলো আমাদের কাছে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস আর পাওয়ার প্ল্যান্টের উপর কম্পিউটার এক্সপার্ট আছে কিনা-এরকম কেউ থাকলে তারা তাকে পেতে। চাচ্ছে কিছু দিনের জন্য, এতে করে আমরা মোটা অঙ্কের কমিশনও পাবো। আমাদের সিনিয়র কনসালটেন্টদের কেউই যেতে রাজি ছিলো না। এনার্জি সেক্টরটা এখন আর হাই-গ্রোথ ইন্ডাস্ট্রি নয়। এটাকে ডেড-এন্ড অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা যখন তাদেরকে জানাতে যাচ্ছিলাম এরকম কেউ আমাদের অফিসে নেই ঠিক তখনই আপনার নামটা সবার কাছে বেশ মনে ধরে গেলো।”

তারা আমাকে এ কাজটা নিতে বাধ্য করতে পারে না; দাসপ্রথা গৃহযুদ্ধের পর পরই শেষ হয়ে গেছে। তারা চাইছে আমি যেনো বাধ্য হয়ে ফার্ম থেকে পদত্যাগ করি। কিন্তু তাদের কাছে এতো সহজে নতি স্বীকার করার মেয়ে আমি নই।

“এইসব তৃতীয় বিশ্বের বুড়ো-ভদ্র ছেলেদের সাথে আমি কি করবো?” খুব মিষ্টি করে হেসে বললাম। “আমি তো তেলের ব্যাপারে কিছুই জানি না। আর প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাপারেও একই কথা খাটে। পাশের অফিস থেকে মাঝেমধ্যে তাদের আওয়াজ অবশ্য শুনতে পাই।” আমার অফিসের পাশে টয়লেটের দিকে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করলাম।

 “জিজ্ঞেস করেছেন বলে খুশি হলাম,” দরজার কাছে যেতে যেতে বললো লিসেল। “দেশ ছাড়ার আগপর্যন্ত আপনাকে কড এডিসনের কাছে অ্যাসাইন করা হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে আপনি এনার্জি কনভার্সনের উপর একজন এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন।”

লিসেল মুচকি হেসে চলে যেতে যেতে বললো, “আরে আপনার তো খুশি হবার কথা, ভেলিন। ভাগ্য ভালো কোলকাতায় পোস্টিং হয় নি।

ফলে আমি মাঝরাতে প্যান অ্যাম ডাটা সেন্টারে বসে আছি। এমন একটা দেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি যার নাম এর আগে কখনও শুনি নি। এমন কি সেই মহাদেশটা সম্পর্কেও খুব কমই জানি। এমন একটা ক্ষেত্রে এক্সপার্ট হতে চলেছি যার ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমাকে এখন এমন সব লোকজনের মাঝে গিয়ে থাকতে হবে যারা আমার ভাষায় কথা বলে না। সম্ভবত তারা নারীদেরকে হেরেমে থাকা ভোগের বস্তু ছাড়া অন্যকিছু ভাবেও না। তবে ফুলব্রাইট কোন ফার্মের সাথে অনেক দিক থেকেই তাদের মিল রয়েছে বলে আমার ধারণা।

 আমি নির্ভিক রইলাম। তিন বছর সময় লেগেছিলো ট্রান্সপোর্টেশন ফিল্ড সম্পর্কে জানতে। মনে হচ্ছে এনার্জি সম্পর্কে জানতে আরো কম সময় লাগবে। মাটি ফুটো করলেই আপনি দেখতে পাবেন তেল বেরিয়ে আসছে। এ আর এমন কি কঠিন? তবে এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা হবে, আমার সামনে থাকা একটা বইয়ের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটা বলতেই হয় :

১৯৫০ সালে মাত্র দুই ডলারে এক ব্যারেল আরবিয় কুডওয়েল বিক্রি হতো। ১৯৭২ সালেও ঐ একই দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মনে হতে পারে আরবীয় কুডওয়েল এই বিশ্বের সবচাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যার মূল্যস্ফীতি শূন্যের কোঠায়। কিন্তু আসল সত্য হলো বিশ্বমোড়লেরা এই মহামূল্যবান জিনিসটার দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

 দারুণ ব্যাপার। কিন্তু তারচেয়েও দারুণ যে ব্যাপারটা আমি খুঁজে পেলাম সেটা বইতে ব্যাখ্যা করা নেই। এটা এমন একটা বিষয় যা ঐ রাতে পড়া কোনো বইতেই আমি খুঁজে পাই নি।

আরবিয় কুডওয়েল আসলে এক ধরণের তেলই। সত্যি বলতে কি এটা এ বিশ্বের সবচাইতে কাঙ্খিত আর উচ্চমূল্যের পণ্য। সুদীর্ঘ বিশ বছরে এর দাম না বাড়ার কারণ, যারা এটা কেনে এবং যারা এটা মাটি থেকে উত্তোলন করে বিক্রি করে তারা কেউই এর দাম নিয়ন্ত্রণ করে না। এর দাম নিয়ন্ত্রণ করে ঐসব লোকজন যারা ডিস্ট্রিবিউট করে-কুখ্যাত মধ্যসত্ত্বভোগীর দল। ব্যাপারটা শুরু থেকেই হয়ে আসছে।

পৃথিবীতে আটটি বৃহৎ ওয়েল কোম্পানি আছে। তারমধ্যে পাঁচটিই আমেরিকান; বাকি তিনটি বৃটিশ, ডাচ আর ফরাসি মালিকানাধীন। পঞ্চাশ বছর আগে এইসব কোম্পানির লোকেরা স্কটল্যান্ডে এক বাকবিতণ্ডার পর একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সারা বিশ্বের তেল ডিস্ট্রিবিউশন ভাগাভাগি করে নেবে তারা। কেউ কারো সাথে লাগতে যাবে না। কয়েক মাস পর তারা ওন্টেড-এ আবার মিলিত হয় কালুস্টে গুলবেনকিয়ান নামের এক লোকের সাথে, পকেটে লাল রঙের একটি পেন্সিল নিয়ে এসেছিলো সে। সেই পেন্সিলটা বের করে ভদ্রলোক পুরনো অটোমান সাম্রাজ্যের উপর যা করলো সেটাকে পরবর্তীকালে ‘থিন রেড লাইন’ হিসেবে ডাকা শুরু হয়। ইরাক, তুরস্ক আর পারস্যসাগরের কিছুটা অংশ ছিলো এরমধ্যে। ভদ্রলোকেরা পুরো এলাকাটি ভাগ করে নেয় ড্রিল করার জন্য। কিন্তু বাহরাইনে বানের জলের মতো তেল বের হতে থাকলে প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়।

আপনি যদি এ পৃথিবীর সবচাইতে বড় ভোগ্যপণ্যের উৎপাদক এবং একই সাথে সরবরাহের নিয়ন্ত্রক হন তাহলে চাহিদা এবং সরবরাহের নিয়মটি কাগজে কলমের বিষয় হয়ে ওঠে। আমি যেসব চার্ট পড়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে আমেরিকা দীর্ঘদিন থেকেই সবচাইতে বড় তেলের গ্রাহক। আর এইসব তেল। কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমেরিকার কোম্পানিই যেহেতু বেশি এবং বৃহৎ সে। কারণে সরবরাহের ব্যাপারটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কাজটা তারা যেভাবে। করে সেটা খুব সহজ-সরল। তারা তেল উত্তোলনের জন্যে চুক্তি করে, তাতে বেশিরভাগ মালিকানা থাকে তাদেরই। সেই তেল শেষপর্যন্ত বিক্রি করার কাজটাও করে তারা।

প্যান অ্যাম-এর টেকনিক্যাল এবং বিজনেস লাইব্রেরি থেকে একগাদা। বইপত্র নিয়ে এসে একা বসে আছি আমি। নিউইয়কের এই লাইব্রেরিটা হলো আমেরিকার একমাত্র লাইব্রেরি যেটা নিউইয়ার্স ইভের দিনও সারা রাত খোলা থাকে। বসে বসে জানালা দিয়ে পার্ক এভিনুতে তুষার পড়া দেখছি আর ভাবছি।

একটা চিন্তাই আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, আর সেই চিন্তাটা হলো দেশের প্রধান কর্তাব্যক্তির দৌড়ঝাঁপের ফলে তেল কোম্পানির প্রধানদের আরো ধনী হয়ে ওঠা। এটি এমন একটি ভাবনা যা কিনা যুদ্ধ, রক্তপাত আর অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে আচমকা। এ পৃথিবীর বড় বড় শক্তিগুলোকে দাঁড় করাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সামনে। তবে এ মুহূর্তে আমার কাছে এটাকে ঠিক বৈপ্লবিক ধারণা বলে মনে হচ্ছে না।

ভাবনাটা ঠিক এরকম : আমরা যদি তেলের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে কি হবে? এই প্রশ্নের জবাব বাকি পৃথিবীর কাছে একেবারে পরিস্কার হয়ে উঠবে বারো মাসের মধ্যে, দেয়ালে হাতের লেখার আকাড়ে।

এটা হলো আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *