১৪. কার্যসাধন প্রণালী

কার্যসাধন প্রণালী

মনকে নিয়েই আমাদের কারবার। মনই মানুষ। মন যদি বলে পারবো, তবে পারা যাবে। মন যদি বলে পিরবো না, পারা যাবে না।

মনের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন আপনি। অতএব মনকে বশ করুন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবেন। মনকে রাজি করান সুখী হতে। মনকে রাজি করান সাফল্য অর্জন করতে। মনই আপনার পুঁজি, আপনার মূলধন, আপনার ভাগ্য-নিয়ন্তা।

এই যে মন, একে আমরা কতোটুকু চিনি?

মনকে চেনাটা জরুরী। মনকে চিনতে পারলে মনের কাছ থেকে লক্ষ-কোটি মণি-মুক্তো আদায় করে নেয়া সম্ভব হবে আপনার পক্ষে।

মনকে বশ করার উপর আপনার জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। মনকে মনের মতো করে গড়ে তুলতে হলে কি করতে হবে ইতিমধ্যে জেনেছেন আপনি।

মনের ভিতর আরো ভালোভাবে দেখতে হলে সমোহন বিদ্যায়, অটোসাজেশন এবং আত্মসম্মোহন সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা দরকার। সম্মোহন, অটোসাজেশন এবং আত্মসমোহন, এগুলোর সাহায্যে মনের ভিতরটা দেখতে পাবার সুযোগ তো পাবেনই আপনি, তার ওপর, এই বিদ্যা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সাফল্য অর্জনে কামিয়াব হবার সুযোগও পাবেন।

.

অবচেতন মন

অবচেতন মনের অনেক নাম। কেউ বলে সাবজেকটিভ, কেউ বলে সাবলিমিনাল, কেউ বলে অচেতন।

আমরা অবচেতনই বলবো, এটাই বহুল প্রচলিত। অবচেতন মন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা না থাকলে সম্মোহন কি এবং কেন, ঠিক বোঝা যাবে না। তবে, কি জানেন, অবচেতন মন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও বেশি কিছু একটা জানতে পারেনি। অবচেতন মন এখনও একটা প্রায় অপরিচিত রহস্য। তবে জানা গেছে, এই মনের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো সম্মোহন।

শরীরের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে অবচেতন মন। এই মন শরীরে ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গ্ল্যাণ্ডের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে নার্ভাস সিস্টেমের সাহায্যে।

আমাদের চেতন মনের সাথে অবচেতন মনের পার্থক্য অনেক। যেমন, চেতন মন বহু কথা, বহু ঘটনা ভুলে যায় কিন্তু অবচেতন মন কিছুই ভোলে না।

অবচেতন মন কর্তব্যপরায়ণ এবং দায়িত্বশীল। এর প্রধান কাজের অন্যতমটি হলো আপনাকে রক্ষা করা। আপনি জেগে, ঘুমিয়ে বা অজ্ঞান অবস্থায় থাকুন, আপনার অবচেতন মন সজাগ থাকছে সবসময়, বিপদ-আপদের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করার জন্যে।

এই মনটির সাহায্য নিতে পারলে আপনি আপনার বদভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারবেন খুব সহজে। এই মনের সাহায্য পেলে আপনার চেতন মনকে আপনি বশে আনতে পারবেন, গড়ে তুলতে পারবেন সু-অভ্যাস, সাফল্য অর্জনে প্রত্যক্ষ সাহায্য আদায় করে নিতে পারবেন।

সাহায্য পাবেন কিভাবে? সম্মোহনের মাধ্যমে।

.

সম্মোহিত হবার যোগ্যতা

শতকরা পঁচানব্বই জন মানুষ সামান্য চেষ্টাতেই হালকা, মাঝারি বা গভীর সম্মোহনের স্তরে পৌঁছে যেতে পারে একটু চেষ্টা করলেই। অথচ অধিকাংশ লোকের ধারণা, তার সম্মোহিত হবার মতো যোগ্যতা নেই। যে সব লোক দাবি করে তাদের মনটা পাথরের মতো শক্ত, তাদেরকে সম্মোহিত করা সম্ভব নয়–এরাই। আসলে চট করে সম্মোহিত হয় এবং গভীর স্তরে চলে যায়।

সন্দেহপ্রবণ, মিনমিনে স্বভাবের লোক যারা তাদেরকে সম্মোহিত করা সত্যিই কঠিন।

সুস্থ, সবল মনের অধিকারী সমোহিত হয় সহজে। বুদ্ধিমানেরাও সম্মোহিত হয় তাড়াতাড়ি। বোকা এবং পলায়নী মনোবৃত্তির লোকেরা সম্মোহিত হয় না, হলেও বড্ড দেরিতে হয়। তবে ব্যতিক্রম আছে। সম্মোহিত হওয়া না হওয়া আরো বহু কিছুর উপর নির্ভর করে।

.

কি কি কাজে লাগে

শারীরিক ব্যথা-বেদনা দূর করা যায় সম্মোহনের সাহায্যে। আজকাল সম্মোহনের সাহায্যে অচৈতন্য বা শরীরের অংশবিশেষকে অসাড় করে দিয়ে কঠিন কঠিন সার্জিক্যাল অপারেশন হচ্ছে। বুক চিরে হৃৎপিণ্ডের উপর অস্ত্রোপচার হচ্ছে, একটা ফুসফুস অপারেশন করে বের করে আনা হচ্ছে–এতোটুকু ব্যথা পাচ্ছে না রোগী।

মানুষ তার অতীতে ফিরে যেতে পারে সম্মাহনের সাহায্যে। আপনার জীবনে। আজ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে যা কিছু দেখেছেন, শুনেছেন বা অনুভব করেছেন সব জমা আছে আপনার স্মৃতিতে। সচেতনভাবে মনে করবার চেষ্টা করলে সব মনে আসে না। সামান্য কিছু মনে আসে। কিন্তু সম্মোহিত অবস্থায় প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি শুধু স্মরণ করতে পারা নয়, সেই অতীতের ঘটনায় ফিরে যেতে পারেন আপনি।

সম্মোহনকে ব্যবহার করে মনো-বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় বিস্ময়কর সব ফল পাওয়া গেছে। চারিত্রিক দুর্বলতা, বদভ্যাস, এবং হালকা স্নায়বিক বৈকল্য সারিয়ে তোলা সম্ভব আত্মসমর্মাহনের সাহায্যে।

শিক্ষার ব্যাপারেও আশ্চর্য অবদান রাখছে সম্মোহন। অনেকে অভিযোগ করেন, ‘কাজে মন বসাতে পারি না, গভীর আগ্রহবোধের অভাব রয়েছে আমার মধ্যে,’ কিংবা, ‘স্মরণশক্তি নই আমার।’–আত্মসম্মোহন এদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে, এরা গভীর আগ্রহবোধের অধিকারী হবেন, স্মরণশক্তি প্রচুর বেড়ে যাবে।

.

অটোসাজেশন

ইংরেজি সাজেশন শব্দটির উপযুক্ত প্রতিশব্দ না পাওয়ায় আমরা সাজেশন শব্দটিকেই ব্যবহার করছি।

সাজেশনের সাহায্যে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই কম বেশি সাজেশনের দ্বারা প্রভাবিত হই-এ আপনি আগেই জেনেছেন। এই সাজেশন জিনিসটাই ব্যবহার করবেন আপনি নেতিবাচক মনোভাবের বদলে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হবার জন্যে।

অটো-সাজেশনের চেয়ে হিটারো-সাজেশন অনেক বেশি শক্তিশালী। সম্মোহিত অবস্থায় আপনি নিজেকে যা বলবেন অবচেতন মন সেটাকে যতো তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে তার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে যদি সেই একই কথা আর কেউ বলে।

সাজেশন জিনিসটা অনেক রকম করে বলা যায়। আদেশের সুরে বলতে পারেন, সাদামাঠা বক্তব্য পেশের কায়দাতেও বলতে পারেন। সরাসরি কিংবা ঘুরিয়েও বলা যেতে পারে। তবে না-সূচক বাক্য ব্যবহার করবেন না। ‘নিজেকে আমি অযোগ্য মনে করবো না।’-এই না-সূচক বাক্যটিকে হ্যাঁ-সূচক করা যায় এইভাবে, ‘নিজেকে আমি যোগ্য মনে করবো।’

আদেশ কেউ পছন্দ করে না, আপনার অবচেতন মনও না। সাদামাঠা ভাবে বক্তব্য রাখলে সাধারণত ফল বেশি পাওয়া যায়।

যে-কোনো সাজেশন মনের মধ্যে গেঁথে দেবার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেকটি সাজেশন দশবার, বিশবার, কিংবা আরো বেশিবার পুনরাবৃত্তি করা দরকার।

কোনো একটি সাজেশনের পিছনে যদি অন্তরের তাগিদ বা অনুপ্রেরণা থাকে তাহলে অবচেতন মন সেটা চট করে মেনে নেয়। সাফল্য লাভ করার ইচ্ছাটা আপনার যতো জোরালো হবে ততোই সহজ হবে লাভ করা।

যে-কোনো সাজেশন কার্যকরী করার ব্যাপারে কাল্পনিক ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাজেশনের কথাগুলোর সাথে যদি কল্পনা যুক্ত হয়। তাহলে দুয়ে মিলে গভীর ছাপ ফেলতে পারে আপনার অবচেতন মনের উপর। ঘনঘন কোনো ছবি মানসচক্ষে দেখলে অবচেতন মন সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে সচেষ্ট হয়। কেন হয় জানা যায়নি, কিন্তু হয়। মানসপটে চাহিদার ছবিটি যে যতো পরিষ্কার, স্পষ্ট দেখতে পাবে, তার চাহিদাটা ঠিক ততোই তাড়াতাড়ি পূরণ হবে। এই-ই নিয়ম।

একসাথে অনেক বেশি সাজেশন দিয়ে আপনার অবচেতন মনকে দিশেহারা করে তুলবেন না। যে-কোনো একটি ব্যাপারে সাজেশন দেয়া ভালো। বদভ্যাস ছাড়তে চান, নিজের প্রতি আস্থা আনতে চান, সুখী হতে চান, কাজে গভীর আগ্রহ আনতে চান–সব যদি একসাথে এক সিটিংয়ে চান তাহলে সব গুলিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না। প্রতিদিন পুনরাবৃত্তির জন্যে প্রতি সপ্তাহে একটি মাত্র সাজেশন নিন, পরের সপ্তাহে আর একটাকে ধরুন।

ডক্টর জেম্স এম. হিক্সন বলেছেন, অবচেতন মনকে যে বক্তব্যটা গ্রহণ করাতে চান সেটাকে বিস্তারিতভাবে লিখে ফেলুন আগে। তারপর লিখিত বক্তব্যের সারমর্ম লিখুন। সারমর্মটাকে আরো সংক্ষিপ্ত করে একটা বা দুটো লাইনে দাঁড় করান। বাড়তি কথা সব বাদ দিন, যেটা চান Cটাই শুধু থাকুক।

আপনি যা চাইছেন সেটাকে হ্যাঁ-সূচক একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে ধরতে হবে। কিভাবে কাজটা করতে হবে তা জানা আছে আপনার অবচেতন মনের; সুতরাং আপনি যে ফলাফলটা চান বেশি কথা না বাড়িয়ে শুধু সেটারই উল্লেখ করুন। সংক্ষেপে। এই একটি বাক্যে আপনি ঠিক কি কি বোঝাতে চাইছেন ভেবে নিন ভালো করে।

ধরা যাক, আপনি একটা বাক্য তৈরি করলেন: আমি বড় হবো। আমি বড় হবো-এই কথাটি দিয়ে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চান–শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক বা সামাজিক কোন্ দিক থেকে কোন্ বিষয়ে কতো বড় হতে চান সে সব ভালো করে বুঝে নিন একবার। তারপর সব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে তোতাপাখির মতো শুধু আউড়ে যান: আমি বড় হবো, আমি বড় হবো, আমি বড় হবো…।

.

আত্মসম্মোহন

প্রথমে আর কারো দ্বারা সম্মোহিত হওয়া আত্মসম্মোহন শেখার সবচেয়ে সহজ নিয়ম। সাধারণত এই নিয়ম এক বৈঠকেই শিখে নেয়া যায়।

এ সম্মোহনকারী আপনাকে সম্মোহিত করে পোস্ট-হিপনোটিক সাজেশন দিয়ে দেবেন। বাতলে দেবেন সংক্ষিপ্ত একটি নিয়ম। কি করে সম্মাহিত হতে হবে এবং গভীরতর স্তরে কিভাবে পৌঁছুতে হবে সে ব্যাপারে দু’চার কথা তিনি বলে দেবেন, হয়তো দুটো একটা শব্দ গেঁথে দেবেন আপনার মনে-ব্যস, শেখা হয়ে গেল।

যখনই সম্মোহিত হতে চাইবেন, প্রাথমিক নিয়মগুলো পালন করবার পর (যেমন, ঢিলে জামাকাপড় পরে নরম বিছানায় শোয়া, বা ইজি চেয়ারে আরাম করে বসা ইত্যাদি) আপনি বারকয়েক শুধু সেই বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করলেই আত্মসম্মোহিত হয়ে পড়বেন। নিজে নিজে কয়েক দিন প্র্যাকটিস করলেই গভীর স্তরে পৌঁছে যেতে পারবেন।

আর একটি উপায় হচ্ছে কোনো বন্ধু বা টেপ রেকর্ডারের সাহায্য গ্রহণ করা। আমরা এই উপায়টি যোগ করছি এই পরিচ্ছেদে। কোনো কিছুর সাহায্য না নিয়ে একা একাও আত্মসম্মাহন শেখা যায়–সেই পদ্ধতি জানা যাবে ‘আত্মসম্মোহন শীর্ষক গ্রন্থে (শিগগিরই সেটি পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে প্রজাপতি প্রকাশন থেকে)।

.

আত্মসম্মোহন শিক্ষা

আত্মসম্মোহন শিক্ষার জন্যে যে কথাগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলো রেকর্ড করবার আগে স্পষ্ট উচ্চারণে অন্তত বারতিনেক জোরে জোরে পড়ুন। এর ফলে রেকর্ডিংটা ভালো হবে। কণ্ঠস্বরটা যেন বেশি ওঠানামা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন-মোটামুটি একঘেয়ে একটানা একটা ভাব বজায় রাখলে সম্মোহনের জন্যে সুবিধা হবে। ধীর একটা ছন্দ পেয়ে যাবেন বার দুয়েক অভ্যাসের পরই। ছন্দটা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নিজে যদি রেকর্ড করতে খুব অসুবিধে বোধ করেন, কোনো বন্ধুকে ডেকে পড়িয়ে নিন ওকে দিয়ে।

রেকর্ড প্লেয়ার থাকলে কথাগুলোর সাথে সাথে ধীর লয়ের কোনো ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিকও ব্যবহার করতে পারেন, তবে লক্ষ্য রাখবেন বাজনাটা যেন খুব আস্তে বাজে, মুখ্য কথাগুলোই, বাজনাটা গৌণ।

রেকর্ডটা শোনবার জন্যে এমন একটা স্থান ও কাল বাছাই করুন যে সময়ে বা যেখানে কোনো ধরনের বাধা পড় না। আরাম করে আরাম কেদারায় বসুন বা শুয়ে পড়ুন বিছানায়। জামা কাপড় ঢিল করে দিন। এবার স্থির দৃষ্টিতে তাকান। কোনো নির্বাচিত বিন্দুর দিকে। স্বাভাবিকভাবে চাইলে চোখটা যেখানে পড়ে তার চেয়ে খানিক উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত। এইবার টেপ রেকর্ড চালু করে দিন, কিংবা আঙুলের ইশারায় বন্ধুকে বলুন পড়া শুরু করতে। আপনার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন পাঠরত কণ্ঠস্বরের উপর। যা যা করতে বলা হচ্ছে করুন নির্দ্বিধায়।

.

রেকর্ডের বিষয়বস্তু

কিছুক্ষণের মধ্যেই আশ্চর্য শিথিল এক আরামের আবেশ আসবে তোমার মধ্যে। জীবনে এত আরামের বিশ্রাম উপলব্ধি খুব কমই হয়েছে তোমার। শরীর মন যতোই চিল করে দেবে, যতোই শিথিল করে দেবে, ততোই বেশি হবে আরাম। যেখানটায় তাকিয়ে আছে আরো কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে সেদিকেই, লম্বা করে দম। নাও একটা। তারপর ধীরে ধীরে বাতাস বের করে দাও ফুসফুস থেকে। সব বাতাস বের করে দাও। এবার আরেকটা লম্বা শ্বাস টানো। আবার খালি করো ফুসফুস। হ্যাঁ, এই রকম। সব বাতাস বের করে দিয়ে আবার একটা দম নাও আগের মতো। এবার স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকুক শ্বাস-প্রশ্বাস। প্রতিশ্বাসের সাথে সাথে আরো শিথিল হচ্ছে তোমার শরীরের সমস্ত পেশী। যা বলা হচ্ছে মন দিয়ে শোনো, অন্য কোনো দিকে চিত্তবিক্ষেপ না করে একমনে শুনে যাও কথাগুলো। শরীর মন শিথিল করে দাও আরো, আর শোনো। তোমার ভালোর জন্যেই বলা হচ্ছে কথাগুলো।

চোখের পাতা দুটো একটু কাঁপছে হয়তো তোমার। চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে করলে ফেলতে পারো, তবে দৃষ্টিটা যেদিকে স্থির হয়ে আছে সেই দিকেই থাকুক আরো কিছুক্ষণ। হয়তো লক্ষ্য করছো, চোখের পাতাগুলো একটু ভারি হয়ে আসতে শুরু করেছে। ক্রমে আরো ভারি মনে হবে ওগুলো, খুলে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠবে ক্রমে। বেশ ভারি লাগছে এখন। খানিক বাদেই বুজে আসতে চাইবে পাতা দুটো। বুজে আসতে চাইলে যে-কোনো সময় চোখ বুজতে পারো। একটু পর। ওগুলো এতোই ভারি মনে হবে যে খুলে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে, এবং আপনিই। বুজে যাবে। এবার বুক ভরে আর একটা লম্বা দম নিয়ে ছেড়ে দাও, ঢিল করে দাও শরীর-মন।

আরামের আবেশ আসবে তোমার মধ্যে একটু পরেই। চমৎকার একটা ঘুমঘুম মোহের আবেশ। হয়তো ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছো, আসতে শুরু করেছে স্বপ্নিল একটা আচ্ছন্ন ভাব। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা সব দূর হ স যাচ্ছে তোমার মন। থেকে। কোনো কিছুরই তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না, এমনি একটা ভাব আসছে তোমার মধ্যে। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব। চোখের পাতা দুটো হয়তো আরো বেশি কাঁপছে তোমার। যদি এখনও বুজে গিয়ে না। থাকে, বুজে যাক ও-দুটো। চোখ বন্ধ করো। পাতাগুলো খুব ভারি লাগছে, খু-উ-ব। ভারি। চোখ বুজে মন দিয়ে শোনো কথাগুলো। খানিক পরেই আমার কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কোনো শব্দই ঢুকবে না তোমার কানে।

হয়তো অনুভব করতে পারছো হাত-পাগুলোও ভারি হয়ে এসেছে তোমার। স্বপ্নিল আচ্ছন্ন ভাবটা বাড়ছে আরো। অদ্ভুত আরামের আবেশ আসছে। শরীরের সমস্ত পেশীগুলোকে আরো ঢিল করে দিতে হবে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতিটি পেশী শিথিল করে দিতে হবে। একে একে ঢিল করে দাও সব।

প্রথম ডান পা থেকে শুরু করা যাক। ডান পায়ের সমস্ত পেশী শক্ত করে ফেললো। খুব শক্ত। এইবার হঠাৎ ঢিল দাও। হ্যাঁ, পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত সমস্ত পেশী শিথিল হয়ে গেল। ডান পাটা ঢিল হয়ে গেল কোমর পর্যন্ত।

এবার বাম পা শক্ত করে ফেলল। আরো শক্ত। হঠাৎ ঢিল দাও। হ্যাঁ। শরীরের নিচের অংশ সম্পূর্ণ শিথিল হয়ে গেল। এবার তোমার তলপেটের পেশীগুলোও শিথিল করো। তারপর বুক। আবার একবার বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলো। এর ফলে সারা শরীর আরো শিথিল হয়ে আসবে। ভেরিগুড। এবার পিঠের পেশীগুলো ঢিল দাও। কাঁধ আর ঘাড়ে কি একটু আড়ষ্টতা রয়ে গেছে? মাথা ও পায়ে ভর দিয়ে শরীরটা সামান্য ওপরে তোলো-হাঁটু সোজা। রেখে। এবার টিল দাও, শিথিল করে দাও। এবার হাত দুটো। ডান হাতের সমস্ত পেশী শক্ত করো, হঠাৎ ঢিল দাও। এবার বাম হাত। শক্ত করে ঢিল দাও। দুই কাঁধ সামান্য একটু ওপরে তোলো, দুই সেকেণ্ড ধরে রাখো, এবার ঢিল করে দাও। কাঁধ থেকে নিয়ে আঙুলের ডগা পর্যন্ত শিথিল হয়ে গেছে হাত দুটো। আহ! আরাম! চমৎকার লাগছে।

সারা মুখে অসংখ্য ছোটো ছোটো পেশী আছে, সেগুলোও ঢিল করে দাও এবার। এতে দাঁত চেপে ধ্রুকুটি করো, আরো জোরে, এবার ঢিল দাও। গাল, চোয়াল, চোখ, কপাল–সব ঢিল হয়ে গেল। পরিপূর্ণ বিশ্রাম। সারা শরীর ঢিল হয়ে গেছে। উদ্বেগহীন, স্বপ্নিল বিশ্রামের রাজ্যে চলে গেছো তুমি। ঝিরঝির ঝিরঝির শান্তির পরশ লাগছে তোমার গায়ে। আরো গভীর আরামের মধ্যে চলে যাচ্ছো তুমি ক্রমে। দিবা স্বপ্নে বহুবার যেমন কল্পনায় ভর করে অন্য এক জগতে চলে গেছে, ইচ্ছে করলেই তেমনি এক জগতে চলে যাওয়া শিখছো তুমি এখন। শিখে একে অনেক কাজে ব্যবহার করবে তুমি, উপকৃত হবে।

শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হয়েছো তুমি।

সন্মোহন আর কিছুই নয়, তুমি এখন যে অবস্থায় আছো একেই বলে সম্মোহন! এবার খানিকটা কল্পনার সাহায্য নিতে হবে তোমাকে। কল্পনা করে নাও, এক লম্বা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছো তুমি। সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছো সি র ধাপগুলো–নেমে গেছে নিচে। রেলিংটা দেখতে পাচ্ছো স্পষ্ট। আমি দশ থেকে শূন্য পর্যন্ত গুণবো এখন। আমি গুণতে শুরু করলেই তুমি কল্পনায় ধাপের পর ধপ নামতে শুরু করবে সিঁড়ি বেয়ে। আমি যখন শূন্য গুণবো তখন তুমি নেমে গেছো নিচে নেমে যাওয়ার ছবিটা স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলবে তুমি কল্পনায়। আমার প্রত্যেকটি গণনা তোমাকে আরো গভীর স্তরে নিয়ে যাবে। প্রত্যেকটা সংখ্যা উচ্চারণের সাথে সাথে গভীর থেকে গভীরতর স্তরে চলে যাবে তুমি। প্রতিটি ধাপ নামার সাথে সাথে আরো..আরো গভীরে তলিয়ে যাবে।

দশ।

নামতে শুরু করেছো তুমি। প্রত্যেকটি সংখ্যা উচ্চারণের সাথে সাথে আরো গভীরে চলে যাবে। নয়…আট…সাত…ছয়। অনেক গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি। আরো…আরো গভীরে। পাঁচ…চার…তিন…দুই। আরো গভীরে। এক…শূন্য। নিচে নেমে গেছো তুমি, পৌঁছে গেছে অনেক গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে চলে যাচ্ছো আরো গভীরে।

শ্বাস-প্রশ্বাসটা হয়তো লক্ষ্য করেছে। বেশ অনেক ধীরে ধীরে বইছে এখন। আগের চেয়ে বেশ অনেক গভীরভাবে বইছে শ্বাস-অনেকটা ঘুমন্ত মানুষের মতো। শান্ত একটা আরাম, একটা আয়েসের ভাব এসে গেছে তোমার মধ্যে। দেহমনের। সব বাঁধন আরো আলগা করে দাও-ডুবে যাও আরো গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে গভীর থেকে আরো গভীরে।

তুমি এখন সম্মোহিত বিশ্রাম উপভোগ করছে। শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হয়েছে মোহন্দ্রায়।

তোমার হাত দুটোর প্রতি লক্ষ্য দাও। খুব সম্ভব বেশ ভারি ঠেকছে ওগুলো তোমার কাছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়ে যাবে তোমার ডান হাতটা। পুরোটা হাত হালকা হতে শুরু করবে। অনুভব করতে পারবে ওজন চলে যাচ্ছে ওটার। কল্পনায় নিজের ডান হাতটা দেখো। আঙুলের নখ দিয়ে যেন বেরিয়ে যাচ্ছে সব ওজন। অনুভব করতে পারছো, ক্রমে হালকা হয়ে আসছে। হাতটা। একটু পরেই পুরোটা হাত ওজন শূন্য হয়ে যাবে। পালকের মতো হালকা হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে শূন্যে ভেসে উঠতে শুরু করবে হাতটা। হাওয়ায় ভেসে। উপরে উঠতে থাকবে তোমার ডান হাত। এগিয়ে আসবে মুখের দিকে। আরো হাল্কা হয়ে আসছে হাতটা। উপরে উঠতে চাইছে। গ্যাস বেলুনের মতো হালকা হয়ে গেছে ডান হাতট। এক্ষুণি অনুভব করতে পারবে শূন্যে ভেসে উঠছে হাতটা। হয়তো ইতোমধ্যেই ভেসে উঠতে শুরু করেছে। আরো…আরো উপরে উঠবে। হাতটা, আরো। কল্পনার চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছো, ভেসে উঠছে, ক্রমে এগিয়ে। আসছে হাতটা তোমার মুখের কাছে। স্পর্শ না করা পর্যন্ত চলতে থাকবে হাতটা মুখের দিকে।

কনুইয়ের কাছে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে হাতটা। আরো উপরে উঠছে। যদি এখনও হাতটা শূন্যে ভেসে উঠতে আরম্ভ না করে থাকে, কয়েক ইঞ্চি শূন্যে ভোলা ওটাকে, সামান্য একটু ভাজ করো কনুই। বাধা না দিয়ে ওটাকে মুখের কাছে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছেড়ে দাও তোমার অবচেতন মনের উপর। আপনিই উঠে আসবে হাতটা। তোমার মুখের কোনো অংশ স্পর্শ করে ফিরে যাবে নিজের জায়গায়। প্রথম দিকে একটু ঝাঁকি অনুভব করবে, তারপর সহজ ভঙ্গিতে উঠে এসে স্পর্শ করবে মুখের কোথাও আরো একটু উঠুক হাতটা।

হাওয়ায় ভেসে উপরে উঠে আসছে তোমার হাত। উপরে উঠছে। আরো উপরে। এইভাবে উঠতে উঠতে মুখের কোনো একটা জায়গায় স্পর্শ করবে হাতটা। আরো উঠে আসছে হাত। আরো। আরো, আরো। এবার আগের চেয়ে

একটু দ্রুত উঠছে। এগিয়ে আসছে। কল্পনায় দেখতে পাচ্ছো তুমি, এগিয়ে আসছে। হাতটা আরো। যতোক্ষণ না মখ স্পর্শ করছে ততোক্ষণ উঠতেই থাকবে? হাতটা যতো উপরে উঠছে, ততোই গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি। যতোই গভীরে চলে যাচ্ছো ততোই উপরে উঠছে হাত। মুখ স্পর্শ করবার সাথে সাথে আরো অনেক গভীরে চলে যাবে তুমি। গভীর আরামের আবেশে আচ্ছন্ন হবে।

মুখ স্পর্শ না করা পর্যন্ত হাতটা উপরে উঠবে। স্পর্শ করার পর ফিরে যাবে নিজের জায়গায়। আরো গভীর স্তরে চলে যাচ্ছো তুমি। যেতে থাকো। এই আরামের বিশ্রাম উপভোগ করছো তুমি। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে চলে যাচ্ছো গভীর থেকে গভীরতর স্তরে। এক্ষুণি হাতের স্পর্শ পাবে তুমি তোমার মুখের। কোনো অংশে। তখন ডান হাতটা নামিয়ে ফেলতে পারো।

প্রত্যেকটা কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি। সব কিছু সম্পর্কেই সজাগ আছে। আরো খানিকটা ঢিল দাও, আরো খানিক গভীরে চলে যাও। যতোই গভীরে যাবে। ততোই বেশি আরাম লাগবে। কেমন একটা ঘুম ঘুম আচ্ছন্নভাব অনুভব করছো। তুমি এখন নিজের ভিতর। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না। সমস্ত ভাবনা, চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সরে গেছে বহুদূরে। কোনো কিছুতেই কিছুই এসে যায় না এখন তোমার। পরিপূর্ণ বিশ্রামের আরাম ঘিরে রেখেছে তোমাকে।

এই কথাগুলো যখনই শুনবে তখনই এমনি চমৎকার আরামের গভীরে চলে। যাবে তুমি। কিন্তু তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ তোমাকে সম্মোহিত করতে পারবে না। যতোই অভিজ্ঞতা বাড়বে ততোই দ্রুত গভীরে চলে যেতে পারবে তুমি। তোমার মধ্যে থেকে সমস্ত মানসিক চাপ দূর হয়ে গেছে, পরিপূর্ণ বিশ্রামের কোলে নিজেকে ঢেলে দিয়েছো তুমি। আরো ডুবে যাও, আরো গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে আরো গভীরতর স্তরে। ক্রমে আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি।

সব ধরনের সম্মোহনই আসলে আত্মসম্মোহন। এতোক্ষণ পর্যন্ত যা যা বলা হয়েছে সেই সাজেশনকে মেনে নিয়ে তুমি নিজেকে সম্মোহিত করেছে। অন্যের সাজেশনে তুমি যেভাবে সাড়া দিয়েছে, নিজের সাজেশনেও ঠিক তেমনি ভাবেই সাড়া দেবে। নিজের উপকারের জন্যে তুমি নিজেকে যে সাজেশন দেবে সেটাই

মেনে নিয়ে তাতে সাড়া দেবে তোমার অবচেতন মন।

যখন খুশি নিজেকে সম্মোহিত করবার বিদ্যা শিখছো তুমি এখন। আত্মসম্মোহনে কোনোরকম বিপদের সম্ভাবনা নেই–শুধু একটি ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কোনো গাড়ি বা যন্ত্র চালাতে গিয়ে যেন আত্ম-সম্মোহিত হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নইলে বিপদ ঘটতে পারে। কারণ সম্মোহিত অবস্থায় সচেতন অবস্থার মতো অতটা সাবধান সপ্রতিভ থাকা অসম্ভব। তাই এখানে তোমাকে সাজেশন দিয়ে রাখছিঃ গাড়ি বা কোনো যন্ত্র চালনার সময়

ময়ে পড়া বা সম্মোহিত হয়ে পড়া তোমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। যখন। গাড়ি বা যন্ত্র চালাচ্ছো তখন শুধু যে সম্মোহিত হয়ে পড়বে না তা নয়, যতোক্ষণ ঐ কাজে আছো পরিপূর্ণ সজাগ, সচেতন ও সতর্ক থাকবে তুমি।

এখন যা যা করেছে প্রায় সেই সবই করতে হবে তোমাকে আত্মসম্মোহন করবার সময়। এখন যে অভিজ্ঞতা হলো, এই রকমই অভিজ্ঞতা হবে। তোমাকে সহজ একটা নিয়ম বলে দেবো, সেটা মনে রাখবে, ঠিক যা যা বলছি তাই করবে তাহলে খুব সহজেই সম্মোহিত করতে পারবে নিজেকে।

এখন যেমন আরাম করে শুয়ে বা বসে আছে, তেমনি আরামে বসবে বা শোবে। দৃষ্টিটা কোনোকিছুর উপর দু’তিন মিনিট স্থির রেখে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব তোমার সাজেশনের উপর। কতোক্ষণ সম্মোহিত থাকতে চাও সে সময় নিং রণ করে নিয়ে তোতাপাখির মতো বারবার উচ্চারণ করবে তোমার সাজেশন। চোর পাতা দুটো ভারি হয়ে এলেই তিনবার বলবে: চোখ বুজে আসছে। চোখ বুজে আসছে। চোখ বুজে গেল। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যাবে আপনিই।

সাজেশনগুলো জোরে বলবার হয়তো তোমার দরকার পড়বে না, নিজেকে যা বলতে চাও সেগুলো মনে মনে ভাবলেই চলবে। কিন্তু কেউ কেউ আবার মুখে উচ্চারণ করলে বেশি ভালো ফল পায়। ইচ্ছে করলে জোরে বলে দেখতে পারো। হোন্নতি হলো কিনা। চোখ বুজে যাওয়ার পর শরীরটাকে আরো ঢিল, আরো শিথিল করে নেবে তুমি আজ যেভাবে করেছে, ঠিক সেই ভাবে। প্রথমে পা থেকে শুরু করবে, একে একে শরীরের সমস্ত পেশী ঢিল করে দেবে। শরীরটাকে যতো শিথিল করবে, ততোই আরাম বোধ করবে, ততোই চলে যাবে গভীরে। শরীরটা ঢিল হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তিনবার বলবে: ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’। এই কথাটা তিনবার বলবার সাথে সাথেই সম্মোহিত হয়ে পড়বে তুমি। যখন নিজের ইচ্ছেয় আত্মসম্মোহিত হতে যাচ্ছো, কেবলমাত্র তখনই এই কথাটা তোমাকে সম্মোহিত করবে। অন্য সময় এই কথাটার কোনো প্রভাব পড়বে না। তোমার উপর। ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’–কথাটা হাজারবার বললে বা শুনলেও প্রভাবিত হবে না তুমি, যদি না নিজের ইচ্ছায় আত্মসম্মোহিত হওয়ার উদ্দেশ্যে কথাটা বলো।

ধীরে ধীরে তিনবার নিজেকে বলবে: ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’। কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সম্মোহিত হয়ে পড়বে তুমি। এবার ডান হাতটা শূন্যে ভেসে উঠে আপনাআপনি স্পর্শ করুক তোমার মুখ। সাজেশন দাও, কল্পনায় দেখো হাতটাকে উপরে উঠে আসতে, স্পর্শ করুক মুখের কোথাও। তারপর হাতটা নামিয়ে রাখো। ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’ বলবার পর ডান হাতটা উপরে উঠে তোমার মুখ স্পর্শ করা হয়ে গেলেই তলিয়ে যেতে শুরু করবে তুমি সম্মোহনের আরো গভীরে।

তোমার পক্ষে যতোটা সম্ভব ততোটা গভীর স্তরে পৌঁছুতে হলে নিজেকে। বলো–’আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি!’ এই কথাটি ধীরে ধীরে তিনবার বলো, সেই সাথে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার কাল্পনিক ছবি দেখো। এবার আর সংখ্যা গণনার দরকার নেই। খুব ধীরে ধীরে তিনবার নিজেকে বলো: ‘আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি,’ সেই সাথে ধাপের পর ধাপ নেমে গভীর স্তরে চলে যাও। মনের চোখে দেখো ঘটনাটা, সিঁড়িটা দেখো, রেলিং দেখো। সিঁড়িটা কাঠের না কংক্রিটের, মোজাইক করা না সাধারণ সিমেন্ট, কয়েক ধাপ নামার পর বাক আছে। কিনা, উপরের ল্যান্ডিং থেকে কি একটা বালব ঝুলছে?-এইসব খুঁটিনাটি আগেই ভেবে নাও, সিঁড়িটা স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলো মনের পর্দায়। প্রত্যেকটা ধাপ নামার সাথে সাথেই সম্মোহনের আরো গভীরে চলে যাবে তুমি। প্রথম দিকে অভ্যাসের সময় অন্তত বারতিনেক এই সিঁড়ি বেয়ে নামা ভানে। সেক্ষেত্রে কল্পনা করে নিতে পারো চারতলা থেকে নামছো তুমি, একেকবার একেক তলা। প্রত্যেক তলা নামার সাথে সাথে ক্রমে গভীরতর স্তরে চলে যাবে তুমি। বারদশেক অভ্যাসের পর একবার নামলেই যথেষ্ট হবে–একবারেই তোমার গভীরতম স্তরে পৌঁছে যাবে। তুমি। সেখানে পৌঁছে একমনে পুনরাবৃত্তি করতে থাকো তোমার সাজেশনের সারসংক্ষেপ।

মনে রাখবে শরীরটাকে যতো শিথিল করে দেবে, ততোই আরামবোধ করবে, ততোই চলে যাবে গভীরে। যতো গভীরে যাবে, ততোই শিথিল হবে শরীর-মন, ততোই আরামবোধ করবে। মাঝে মাঝে গভীর শ্বাস নেবে, এর ফলে আরো গভীরে চলে যাবে। এখন একবার গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারো, এর ফলে আরো গভীরে চলে যাবে তুমি।

যখন আত্মসম্মাহিত অবস্থায় রয়েছে, তখন যদি এমন কিছু ঘটে যেজন্যে তোমার জেগে ওঠা দরকার-ফোন বাজছে, কেউ দরজার কড়া নাড়ছে, কিংবা আগুন ধরে যাওয়া বা ঐ জাতীয় কোনো বিপদ উপস্থিত হয়েছে-তৎক্ষণাৎ জেগে উঠবে তুমি। পূর্ণ সজাগ, পূর্ণ সচেতন অবস্থায় ফিরে আসবে তুমি মুহূর্তে।

কিন্তু সেরকম কোনো জরুরী অবস্থার সৃষ্টি না হলে যখন জেগে উঠতে চাও তখন শুধু নিজেকে একবার বলবে, এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণলেই জেগে উঠবে। তুমি’। তারপর এক, দুই, তিন করে পাঁচ পর্যন্ত গুণে যাও। পাঁচ বলবার সাথে সাথেই চোখ দুটো খুলে যাবে তোমার। জেগে উঠে খুব ভালো লাগবে তোমার কাছে, মনে হবে গভীর বিশ্রাম নিয়ে উঠলে। সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়ে মনে হবে সজীব, প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

আত্মসম্মোহনকে অনেক কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হবে তুমি। তুমি যখন যে কাজের জন্যেই সাজেশন দাও না কেন, তোমার অবচেতন মন গ্রহণ করবে সে সাজেশন এবং সেই মতো কাজ করবে।

সম্মোহিত অবস্থায় অনেক সময় সময়ের হিসাব রাখা যায় না, কখনো চট্ট করে অনেক সময় পার হয়ে যায়। কখনো আবার খুব বেশি ক্লান্ত থাকলে সম্মোহিত অবস্থা থেকেই স্বাভাবিক ঘুমে ঢলে পড়ে কেউ কেউ। এটা বন্ধ করতে হলে প্রথমেই একটা সময়সীমা স্থির করে নেয়া উচিত। ঠিক সময় মতো তোমাকে জাগিয়ে দেবার ভার অবচেতন মনের উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারো। সময় হলেই সম্মোহনের যতো গভীর স্তরেই থাক না কেন তোমার অবচেতন মন জাগিয়ে দেবে তোমাকে।

আত্মসম্মোহন একবার শেখা হয়ে গেলে চিরকাল রয়ে যাবে ক্ষমতাটা তোমার। মধ্যে। নিয়মগুলো ভুলবে না তুমি কিছুতেই, যখনই প্রয়োজন তখনই সম্মোহিত করতে পারবে তুমি নিজেকে। তবে চর্চা একেবারে ছেড়ে না দিয়ে মাঝে মাঝে আত্মসম্মোহনের অভ্যাস রাখবে তুমি সারা জীবন। বিদ্যাটার চর্চা রাখলে শরীর-মন ভালো থাকবে তোমার।

এবার জেগে উঠবে তুমি। আমি যখন পাঁচ পর্যন্ত গুণবো তখন জেগে উঠবে সম্মোহন থেকে। জেগে উঠে চমৎকার লাগবে তোমার কাছে। সজীব বোধ করবে, পরিপূর্ণ বিশ্রামের পর যে তাজা একটা খুশি খুশি ভাব হয় সেটা অনুভব করবে তুমি। পাঁচ বলবার সাথে সাথেই সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় চোখ মেলবে তুমি। এক সম্মোহনের গভীর থেকে উঠে আসছো তুমি। দুই-জেগে উঠছে ক্রমে। তিন আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গিয়ে সজাগ হয়ে উঠছে। চার-চোখের পাতা খুলবার আগের মুহূর্তে চলে এসেছো তুমি। এরপর পূর্ণ বিশ্রামের ভাব নিয়ে পর্ণ সজাগ হয়ে চোখ মেলবে তুমি। পাঁচ।

.

যখন খুশি

সম্মোহিত অবস্থায় নিজেকে সাজেশন দেবেন আপনি, সাজেশনগুলো হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। শুধু সম্মোহিত অবস্থায় নয়, দৈনন্দিন জীবনে আপনি নিজেকে সাজেশন দিতে পারেন যখন খুশি, তাতেও ফল পাবেন।

যে অবজেকটিভের উপর বর্তমানে কাজ করছেন আপনি তার সারমর্ম লিখুন কাগজে, তারপর সারমর্মটাকে সংক্ষিপ্ত করুন দুটো কি একটি লাইনে। আপনার সারমর্মের সংক্ষিপ্ত লাইনটি প্রতিজ্ঞা-সূচক হলে ভালো হয়।

লাইনটি যখনই সময় পাবেন, উচ্চারণ করুন মনে মনে। সারাদিন যখন ইচ্ছা, যখনই মনে পড়বে, আওড়ান। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক নম্বর কাজ হোক লাইনটি বারবার আওড়ানো। সারাদিন কাজের ফাঁকেও পুনরাবৃত্তি করুন। ঘুমুতে যাবার আগে বিশেষ করে বেশিবার আওড়ান, পুনরাবৃত্তি করুন। পঞ্চাশ কিংবা একশোবার মুখস্থ বলুন লাইনটা। তোতাপাখির মতো।

নির্দিষ্ট অবজেকটিভের জন্যে নির্দিষ্ট প্রতিজ্ঞা-সূচক লাইন বেছে নেবেন আপনি। একই ধরনের প্রতীকধর্মী বুলি সব অবজেকটিভের বেলায় ব্যবহার করবেন না।

আপনার সুবিধার্থে আপনার সম্ভাব্য অবজেকটিভের জন্যে কিছু সাজেশনের নমুনা দিচ্ছি আমি। আপনি এগুলো সচেতন অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবেন। কাঠামোটা মোটামুটি এই রকম রেখে নিজের ইচ্ছেমতো শব্দ যোগ বা বিয়োগ করতে পারেন।

আপনার সম্ভাব্য অবজেকটিভ:

গাড়ি

গাড়ির মালিক হতে চান আপনি। কিন্তু হাতে যথেষ্ট টাকা নেই, ইচ্ছা থাকলেও আজই শো-রূমে গিয়ে একটা গাড়ি কেনা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। টাকা নেই, তাই বলে কি গাড়ি কেনা হবে না?

হবে না নয়, হবে।

প্রথমে ঠিক করুন, কি ধরনের গাড়ি চান আপনি। শো-রূমে যান, দেখে শুনে একটা গাড়ি পছন্দ করুন। গাড়ি পছন্দ করার সময় ভাববেন না যেন ওই গাড়িটা আমার হলে ভালো হতো, ভাববেন ওই গাড়িটা আমার হবে, ওটার মালিক হবো আমি। যে-জিনিস আপনি জানেন আপনার হবে, আপনি সংগ্রহ করতে পারেন সে। জিনিসের জন্যে আপনি আশা করেন না, কেউ তা করে না। আশা করার মধ্যে সন্দেহের বীজ রয়েছে।

গাড়িটা পছন্দ করা হয়ে গেলে আপনি আপনার বিশ্বস্ত, সাহায্যকারী অবচেতন মনকে কাজে নামিয়ে দেবেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত যতোবার সময়। এবং সুযোগ পান, মনে মনে নিচের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করুন:

‘একটা…গাড়ি কিনবো আমি-আমার অবচেতন মনের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমি এমন একটা পথ খুঁজে পাবো যে পথ ধরে এগোলে গাড়িটি পাবো আমি, কোনো ধরনের আর্থিক চাপের সম্মুখীন না হয়েও।’

.

নিজের একটি ব্যবসা

নিজস্ব একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া আপনার বহু দিনের মনের ইচ্ছা। এই ইচ্ছাকে ইচ্ছা মনে করবেন না এখন থেকে। ওটা আপনার একটা বৃহত্তর অবজেকটিভ।

সাজেশনগুলোর একমাত্র কাজ, আপনার অবচেতন মনকে আপনার অবজেকটিভের প্রতি সদয়, সহানুভূতিশীল হতে বাধ্য করা, তাকে আপনার অবজেকটিভের প্রেমে পড়তে বাধ্য করা। অবচেতন মন যদি আপনার। অবজেকটিভের প্রেমে পড়ে, পথ দেখাবে সে, উপায় বাতলে দেবে আপনাকে। কিভাবে কি করলে সেটি অর্জনে সফল হতে পারেন। যাবতীয় করণীয় করতে হবে আপনাকেই, অবচেতন মনের কাছ থেকে আপনি শুধু পথের হদিস পাবেন। কিভাবে কি করলে ফল ফলবে, তাও আপনি জানেন, কিন্তু ভুলে যান, তাই অবচেতন মন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবার দায়িত্ব নেবে।

নিম্নোক্ত সাজেশন দিন আপনার অবচেতন মনকে, আপনার অবজেকটিভের ধরন বা একৃতি অনুযায়ী এই সাজেশন একটু এদিক-ওদিক বা যোগ-বিয়োগ করতে পারেন আপনি।

‘আমার চিন্তা-ভাবনা এবং কাজের দ্বারা আমি পরিচালিত হচ্ছি নিজস্ব একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবার দিকে। নিজস্ব একটি ব্যবসা দেখাশোনা করার মতো যোগ্যতা এবং উপযুক্ততা আমার মধ্যে আছে। আমার সাফল্য আমাকে সুযোগ দেবে মানুষকে সুখী করতে।’

.

উত্তম স্বাস্থ্য

আগেই সাবধান করে দিচ্ছি, নিজেই নিজের ডাক্তার হতে যাবেন না। নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেকেরই উচিত শরীরটাকে চেক-আপ করানো। কোনো রকম ত্রুটি বা গোলযোগ যদি ধরা পড়ে, চিকিৎসার ভার দেয়া উচিত তাঁকেই যিনি তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন অপরের জীবন বাঁচাবার কাজে-অর্থাৎ আদর্শ একজন ডাক্তারকে।

অধিকাংশ অসুস্থতা মনের ব্যাপার। অসুস্থ হয়ে পড়বো, এই ভয় থেকেই। বেশিরভাগ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

নিজের সাজেশনটা ব্যবহার করবেন আপনি স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যে:

‘আমার স্বাস্থ্য দিনে দিনে ভালো হচ্ছে। ভালো খাচ্ছি, ব্যায়াম করছি, কাজ করছি, যথাসময়ে বিশ্রাম নিচ্ছি, খেলাধুলা করছি, ভালো আছি, সুস্থ আছি–থাকবোও।’

.

পারিবারিক শান্তি

বাড়িতে যদি শান্তি না থাকে কারো, পৃথিবীর কোথাও শান্তি নেই তার জন্যে।

পারিবারিক অশান্তির অনেক কারণের মধ্যে প্রধান হচ্ছে একঘেয়েমি। স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় থাকতে ব্যর্থ হয়, আকর্ষণ না থাকায় কেউ কারো মধ্যে বৈচিত্র্য খুঁজে পায় না এবং বৈচিত্র্যহীনতাই একঘেয়েমির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরস্পরকে নিয়ে করার কিছু পায় না তারা, তাই ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’-এর মতো তারা ঝগড়া করে, একজন আর একজনকে ব্যঙ্গ করে, স্বামী ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, স্ত্রী বেছে নেয় ডাইনীর ভূমিকা।

স্বামীর উচিত, উচিত নয়, কর্তব্য, তার চিন্তায়, কাজে, সাফল্যে, আনন্দে স্ত্রীকে সাথী করে নেয়া। গঠনমূলক কাজে দু’জন মিলিতভাবে মন দিলে সবরকম ঝগড়াফ্যাসাদ পালাতে দিশে পাবে না।

স্বামী বা স্ত্রী, একজন অপরজনকে ভুলের জন্যে দোষারোপ করবেন না। দোষ দিন নিজেকে। নিজেকে বলুন আমাদের বিবাহিত জীবনটাকে সুখের করার জন্যে আরো অনেক কিছু করবো আমি।

সাজেশন নিন:

‘ওকে ভালবাসতে কার্পণ্য করবো না। মুখের ভালবাসা নয়, কাজে প্রমাণ করবো আমি, ওকে অন্তর দিয়ে ভালবাসি।

আমি সুখ চাই, তাই ওকে সুখী করা সবচেয়ে আগে দরকার আমার। ওর সুখই আমার সুখ।

.

অভ্যাস পরিত্যাগ

নিজেকে জানবার চেষ্টা করুন। জানুন আপনার মধ্যে ভালো গুণ কি আছে, খারাপ। গুণ কি কি আছে। নিজেকে আপনি ভাবুন দেহসহ একটি মন নয়, মনসহ একটি দেহ। মনই সব। মনই আপনি। আপনার মনের বাসগৃহ দেহ। সুতরাং দেহকে অবাধ স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেবেন না। দেহ যেন আপনাকে শাসন না করে বা নির্দেশ না দেয়, এটা করো ওটা করো।

এমন কোনো অভ্যাস যদি আপনার থাকে যা অত্যন্ত ব্যয়-সাপেক্ষ ব্যয়সাপেক্ষ শুধু অর্থনৈতিক অর্থে নয়, মানসিক এবং দৈহিক ক্ষতিসাধনের অর্থে-সে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে আপনাকে। আপনি নিজেই নিজের কর্তা, আর কেউ নয়-এই সত্য জানুন, তাহলেই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন। নিজেই নিজের কর্তা মানে আপনার পরিচালক আপনিই, কিভাবে জীবন যাপন করবেন তা শুধুমাত্র আপনিই ঠিক করবেন। আপনার বদভ্যাসগুলোকে সে অধিকার কেন দেবেন? দেবেন না।

আপনার মধ্যে কি অভ্যাস থাকবে কি অভ্যাস থাকবে না তা নির্ধারণ করবে কে? অবশ্যই আপনিই।

বদভ্যাসগুলোর ক্রীতদাস নন আপনি এই সত্যবোধ নিজের মধ্যে আমদানী করতে হলে নিমোক্ত সাজেশন দিতে হবে নিজেকে:

নিজের রুচি এবং ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে আমার। সেইসব কাজই আমি করবো যা আমার শরীর, মন এবং মেজাজের জন্যে সুফলদায়ক। জীবনটা আমার, আমিই তার পরিচালক। জীবনের জন্যে ক্ষতিকর যে অভ্যাস তা আমি পরিত্যাগ করবো।’

.

নিজের একটা বাড়ি

পৃথিবীর বুকে এক খণ্ড জমি, আরামে বসবাস করার জন্যে তার উপর সুদৃশ্য একটা বাঁড়ি-এটা প্রায় সবলোকেরই একটা কাম্যবস্তু।

জীবনের মান আপনার উন্নত হবে, সেই সাথে আপনার দরকার হবে একটা নতুন, আরো আধুনিক বাড়ির। এই বিশেষ বাড়িটি স্থান পাবে আপনার কাম্যবস্তুর তালিকায়। কাম্যবস্তুর তালিকায় এই বাড়িটির স্থান দিলেই হবে, পদ্ধতি অনুযায়ী এগোতে হবে,-ব্যস, মালিক হবেন বাড়িটির। তালিকায় স্থান দেয়া মানেই নেচারের সাহায্য কামনা করা, এবং নেচার বা প্রকৃতি আপনাকে সাহায্য করার জন্যে অপেক্ষা করছে, আপনি তার সাহায্য চাইলেই সাহায্য করবে সে।

এর আগে আপনি জেনেছেন, আপনার কাম্যবস্তুটি সম্পর্কে পরিষ্কার এবং বিশদ জ্ঞান থাকতে হবে আপনার মধ্যে। শুধু বাড়িটি দরকার মনে করলেই হবে না, আপনাকে বাড়িটির আকার, আয়তন, অবস্থান, ধরন, আনুষঙ্গিক সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ হতে হবে।

নতুন একটা বাড়ির মালিক হতে যাচ্ছি আমি–এই বিশ্বাস নিজের মধ্যে আমদানী করুণ। নিজেকে সাজেশন দিন:

‘আমি আমার কর্ম এবং চিন্তা দ্বারা নতুন একটি বাড়ির মালিক হওয়ার পথে এগোব। ঠিক যেখানে চাই, যে-ধরনের চাই, যে-মূল্যে চাই সেই ধরনের একটি বাড়ির মালিক হতে যাচ্ছি আমি। ঘুমে জাগরণে স্বপ্নে আমি বাড়িটার মালিক হবার। জন্যে উৎসাহিত করবো নিজেকে।’

.

আরো ভালো একটা চাকরি

অধিকাংশ মানুষ এমন জিনিসের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় যা তাদের পাওয়া হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। অনেকে আরো ভালো, পেশা খুঁজে বেড়ায় কিন্তু সে জানে না তার বর্তমান পেশাটাই সবচেয়ে সবদিক থেকে ভালো।

পেশাতে নৈপুণ্য অর্জন করার চেষ্টা করুন। যে পেশায় নিযুক্ত আছেন সেই পেশার দ্বারা আরো লভ্যাংশ বের করার কৌশল আবিষ্কার করুন। নতুন চাকরি বা ব্যবসা খোঁজার আগে তলিয়ে দেখে নিন বর্তমান চাকরি বা ব্যবসা থেকে আরো বেশি কিছু আদায় করা সম্ভব কিনা। চাকরি ক্ষেত্রে আন্তরিক হোন, সততা বজায় রাখুন, অল্প সময়ে বেশি সার্ভিস দিন, কাজ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের সুনজর আকর্ষণ করুন। নিজেকে কাজের লোক, মূল্যবান কর্মী প্রতিপন্ন করুন। মনে রাখবেন, কর্তৃপক্ষকে কাজ দ্বারা খুশি করলে কর্তৃপক্ষ আপনার সুবিধা-অসুবিধার প্রতি আন্তরিক হবেন, আপনাকে তারা খুশি করার চেষ্টায় ত্রুটি করবেন না।

পেশাগতভাবে উন্নতি চাইলে নিজেকে এই সাজেশন দিন:

‘আমার চিন্তা এবং কর্ম আমাকে পথ দেখাবে পেশাগত জীবনে আরো সৎ হতে, আরো আন্তরিক হতে এবং আমি কর্তৃপক্ষের কাছে কাজের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাবো। পদোন্নতির জন্যে কাজ করবো আমি, আরো খাটবো-মূল্যবান। একজন মানুষ হিসেবে যাতে সবাই আমাকে দাম দেয়।’

.

সমস্যা এবং সমাধান

যথোপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে কোনো সমস্যাই আসলে সমস্যা নয়। সমস্যাকে বিপদ মনে করাটা নেতিবাচক মনোভাবের লক্ষণ, যা আপনার জন্যে অভিশাপ বিশেষ। সমস্যা কখনোই বিপদ নয়। সমস্যাকে ধাঁধা বলা যেতে পারে, যে ধাঁধার উত্তর আপনারও জানা আছে, চিন্তা করলেই মনে পড়ে যাবে। ধাঁধা নিয়ে মাথা ঘামানো কি ক্লান্তিকর বা কষ্টকর? মোটেই নয়। এ কাজটা মজার, আনন্দদায়ক।

সমস্যাকে সমস্যা বা বিপদ বলে মনে করবেন না। তা মনে না করতে হলে নিজেকে এই রকম সাজেশন দেবেন:

জীবনের হাজারো ধরনের সমস্যাগুলো আসলে কৌতুকপ্রদ ধাঁধা ছাড়া আর কিছু নয়। কোনো সমস্যাই বিপদ নয়। নিজের বুদ্ধির উপর দৃঢ় আস্থা আছে আমার। সেই বুদ্ধি ব্যবহার করে আমি সমস্যা নামক ধাঁধার উত্তর পাবো।

.

.

কথা দিয়ে মন জয়

সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলতে ভয় পায় অনেকে। অথচ কয়েক শত বা কয়েক হাজার মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলা যা একজন মানুষের সাথে কথা বলাও তাই, দুটোর মধ্যে এতোটুকু পার্থক্য নেই।

একজন মানুষের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা যতোটুকু, এক হাজার বা আরো বেশি লোকের বুদ্ধি এবং বিচারক্ষমতা তার চেয়ে কোনো অংশেই বেশি নয়। সুতরাং সংখ্যাধিক্য দেখে ঘাবড়াবার সঙ্গত কোনো কারণ নেই।

কথা বলবার সময় আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি যাদের উদ্দেশ্যে কথা বলছেন তারা আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান নয়, কিংবা আপনার শত্রু নয়। আপনি হয়তো জানেন না, কিন্তু একটা সত্য ব্যাপার হলো এই যে শ্রোতারা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করার জন্যে মানসিক দিক থেকে সম্মত হয়ে বসে আছে।

সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে কথা বলতে অভ্যস্ত হবার জন্যে নিজেকে এই রকম সাজেশন দিন: সত্যিই আমি ভালবাসি মানুষকে এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলবার কথা আমার প্রচুর পরিমাণে আছে। আমি জানি শ্রোতারাও আমাকে ভালবাসে, আমার প্রতি তাদের আস্থা, বিশ্বাস এবং সহানুভূতি আছে। আমি কথা বলবো মুক্ত মন নিয়ে, প্রাঞ্জল ভাষায়, শ্রুতিমধুর কণ্ঠে। শ্রোতারাই আমাকে কথা বলতে প্রেরণা যোগাবে।

.

সেলসম্যানশিপ

যারা দোকানে বসে বা ঘুরে ফিরে জিনিসপত্র বিক্রি করে সাধারণত তাদেরকেই সেলসম্যান বলা হয়। কিছু বিক্রি করতে হলে, যুক্তি দিয়ে জিনিসটির গুণাগুণ বোঝাতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে প্রতিপক্ষ বা বিরুদ্ধপক্ষ মনে না করে, তারা আপনার সাথে কি রকম প্রতিকূল ব্যবহার করবে তা ভেবে ভেবে কাহিল না হয়ে অটো-সাজেশনের উপর নির্ভর করুন, অটো-সাজেশনের নিয়ম কানুন মেনে চলুন। দৃঢ় মনোবল গ্রহণ করুন, বুক চিতিয়ে দাঁড়ান, ঘোষণা করুন। নিজের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো: ‘আমি একজন অভিজ্ঞ সেলসম্যান। যখন কোনো নির্দিষ্ট বস্তু কারো কাছে বিক্রি করতে চাই তখন বস্তুটির ভালো দিকগুলো সম্পর্কে জানা থাকে আমার, কিভাবে কথা বললে সুফল ফলবে বুঝতে পারি আমি।’

.

ভীরুতা বা সঙ্কোচবোধ থেকে নিষ্কৃতি

ভীরুতা বা সঙ্কোচবোধ নামক রোগ থেকে মুক্তি পাবার সহজতম উপায় হলো এই রোগটাকে হালকাভাবে গ্রহণ করা। বক্তব্যটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে নাও হতে পারে; কারণ, ভয় বা সঙ্কোচবোধ বহু মানুষকে সারা জীবন ধরে অকথ্য কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা দিয়ে ভোগায়। কিন্তু, সত্য হলো, এই রোগের কবল থেকে নিষ্কৃতি লাভের সহজ উপায় সত্যি আছে।

মনকে বদলাবার উপর নির্ভর করছে সবকিছু। নিজেকে ভীরু বলে মনে না করে আত্মবিশ্বাসী, সাহসী বলে মনে করুন, সুফল পাবেনই।

নিজেকে ভীরু করে রেখেছেন, নিজেকে ভাবছেন ভীরু,-ফলে আরো খারাপ হচ্ছে আপনার অবস্থা, আপনি অধিকতর ভীরু হয়ে উঠছেন।

ভীরুতা কাটিয়ে উঠতে চাইলে একটা কাজই করতে হবে আপনাকে, বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নিন।

ভীরুতা আপনাকে দমন করে রেখেছে। ভীরুতার জন্যেই আপনি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না। ভীরুতা আপনার জীবনকে করে তুলেছে অভিশপ্ত। এই রোগ থেকে মুক্তি চান আপনি।

উপায়, নিজেকে ভীরু বলে মনে না করা। এই রোগের এই একটাই চিকিৎসা, নিজেকে কোনোক্রমেই সঙ্কুচিত হতে দেবেন না, ভয় পাবেন না কাউকে কিছু বলতে, কারো সামনে কিংবা কোথাও যেতে, কোনো কিছু পেতে বা পাবার আশা

সকালে এবং রাতে ঘুমাবার আগে নিজেকে এই সাজেশন দিন: ভালবাসি এই পৃথিবীকে। এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আর সকলের যেমন আছে, আমারও তেমনি আছে। মানুষের মধ্যে বেঁচে আছি আমি। একজন সচেতন এবং আত্মবিশ্বাসী মানুষের মতো আর সব মানুষের মতো। অন্যকে সুখী করা মানুষের কর্তব্য, আমারও কর্তব্য অন্যকে সুখী করা। অন্যকে সুখী করে আমিও সুখী হবে। আগ্রহ এবং উৎসাহ সৃষ্টি করার মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমি, সুতরাং যে বিষয়েই বলতে চাই না কেন, সবাই আমার কথা শুনবে এবং বিশ্বাস করবে এবং আমার সাথে একমত হয়ে একটা চুক্তিতে উপনীত হবেই।’

.

আত্মশাসক

এই বই লেখাই হয়েছে আপনার মতো একজন পাঠককে আত্মশাসক হওয়া শেখাবার জন্যে। আপনি আত্মশাসক, তার মানে এই নয় যে আপনি আপনার দেহের শাসক। আত্মশাসক বলতে আমি বোঝাচ্ছি, মনের শাসক। মনকে যে সৎ পথে, সুপথে, অনুকূল পথে চালাতে পারে সেই প্রকৃতপক্ষে আত্মশাসক। কারণ, মন ছাড়া যে দেহ তাকে মাংসপিণ্ড ছাড়া আর কিছু বলা যায় না-মানুষ সেই যার দেহের ভিতর একটা সজীব মন আছে।

ইতিমধ্যে আমরা শিখেছি যে সাফল্য এবং সুখ ব্যাপার দুটো সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা ছাড়া আর কিছু নয়। সাফল্য লাভ করার আগে নিজেকে সফল বলে মনে করতে হবে-এটা অন্যরকম জরুরী শর্ত।

এ থেকে প্রমাণ হয় নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদেরকে আগে পরিবর্তন করতে হবে মনোভঙ্গি।

নিজের শিক্ষক বা আত্মশাসক হতে চাইলে নিজেকে এই সাজেশন দিন, কাজ হবে: আমার অস্তিত্বের বাহক আমার মন। আমার মনের অভিভাবক আমি নিজে। আমার মন যা চিন্তা করে সেই চিন্তার নিয়ন্ত্রক আমি, স্রষ্টা আমি। যা চিন্তা করি এবং যে কাজ করবো বলে ভাবি এবং করি তা আমার দ্বারা নির্ধারিত, অনুমতিপ্রাপ্ত এবং প্রশংসিত হয়। নিজেকে শাসন করে, নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে আমি প্রতিদিন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’

.

দুশ্চিন্তা মুক্তি

যে অবস্থায় পড়তে চান না সেই অবস্থায় পড়ে গেছেন–এই বিশ্বাসই দুশ্চিন্তার মূল কারণ, বলছেন বেন সুইটল্যাণ্ড।

এই বইয়ের সর্বত্র আপনাকে জানানো হয়েছে, আপনি যে অবস্থায় পড়তে চান, যে অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে চান সেই অবস্থায় পৌঁছে গেছেন এই বিশ্বাস নিজের মধ্যে কিভাবে গড়ে তুলবেন।

কোনো একটা সমস্যায় পড়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন-এইরকম অবস্থায় আপনাকে বলা উচিত হবে না সমস্যাটার কথা ভুলে যান। আমার পরামর্শ হলো, সমস্যাটাকে নয়, দুশ্চিন্তাটাকে বিদায় করুন। দুশ্চিন্তাকে গলাধাক্কা দিয়ে মন থেকে বের করে দেবার সবেত্তম উপায় হলো, সমস্যাটাকে সমাধানের যযাগ্য বলে মনে করা।

যে-কেউ জানে, সকল সমস্যারই সমাধান আছেই আছে। সমাধানটা বের করার জন্যে চিন্তা করুন, বেরিয়ে যাবে সমাধান। মিটে যাবে সমস্যা।

সমস্যা যতো বড়ই হোক, সে যেন আপনাকে দিশেহারা করে না তুলতে পারে। সমস্যায় পড়ে যে লোক ঘাবড়ে যায় তার আসলে নিজের উপর বিশ্বাস এবং আস্থা নেই। সে নিজের যোগ্যতার উপর সন্ধিহান-প্রমাণ হয় এ থেকে।

কিন্তু আপনি তো অযোগ্য নন। আপনার মধ্যে নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস এবং আস্থার কোনো অভাব নেই। আপনি কেন কোনো সমস্যাকে সমাধানযোগ্য বলে মনে করবেন না?

যে-কোনো সমস্যাই আপনার বুদ্ধির দ্বারা, চিন্তার দ্বারা, মেধার দ্বারা, আন্তরিক ইচ্ছার দ্বারা সমাধানযোগ্য, এই বিশ্বাস নিজের মধ্যে আনুন। সমস্যার সমাধান পেতে হলে কি করতে হবে আপনাকে? গঠনমূলক চিন্তা-পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে আপনাকে। সব চিন্তাই ফলপ্রসূ নয়। ফল প্রসব করে যে চিন্তা তাকে বলা যেতে পারে গঠনমূলক চিন্তাধারা।

গঠনমূলক চিন্তাধারার অধিকারী হবার জন্যে ক্ষুদ্রতর-বৃহত্তর পদ্ধতি প্রয়োগ। করলে কাজ হবে। নিমোক্ত সাজেশন ব্যবহার করলে আপনার মন দুশ্চিন্তামুক্ত তো হবেই, গঠনমূলক চিন্তা করার পথও পরিষ্কার হয়ে যাবে:

‘আমি যোগ্য এবং উপযুক্ত, কোনো সমস্যাই আমাকে হাস্যকর অবস্থায় ফেলতে পারবে না। আমার মন দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখবো কারণ, বুদ্ধিমান, যোগ্য, উপযুক্ত লোকেরা দুশ্চিন্তায় কক্ষনো ভোগে না। আমার অচেতন মন চিন্তা এবং সক্রিয়তার দ্বারা আমাকে দুশ্চিন্তার কবল থেকে মুক্ত রাখতে সরাসরি সাহায্য করবে।’

.

লেখক হবেন কিভাবে

‘লেখক হবার ইচ্ছা আছে আমার, কিন্তু আমি জানি লেখক আমি হতে পারবো না।’–এক যুবক বললো আমাকে।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন পারবে না? লিখতে কখন চেষ্টা করেছো?’

‘লাভ কি চেষ্টা করে! এ লাইনে আমার মেধা নেই।’ ঘোষণার ভঙ্গিতে জানালো সে।

পুরো এক ঘণ্টা ধরে যুবকটিকে আমি বোঝালাম যে তার লেখক হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা সে নিজেই।

লেখক হতে পারবো না, মেধা নেই-এই নেতিবাচক চিন্তা যার মধ্যে আছে সে লেখক হতে পারবে কি করে?

লেখক হতে চান? বেশ, ভালো কথা। আমার শুভেচ্ছা রইলো আপনার প্রতি। এবং সেই সাথে ভবিষ্যদ্বাণী করছি, লেখক আপনি হবেন। কিন্তু শর্ত হলো, নিয়ম। মানতে হবে। এবং পরিশ্রম করতে হবে। রাজি?

– গুড।

নিয়ম একটিই, প্রথমে বিশ্বাস করুন আপনি লেখক হতে পারবেন। লেখক হবার জন্যে যে সব গুণ দরকার তার সবগুলোই প্রচুর পরিমাণে আপনার মধ্যে আছে।

ব্যস! এই নিয়মটি পালন করুন, ফল পাবেনই। সেই সাথে এই সাজেশনটিকে ব্যবহার করুন:

‘লিখতে আমি ভালবাসি এবং লিখতে আমি পারিও। পারি, তার কারণ আমার মধ্যে কল্পনাশক্তি রয়েছে। সেই সাথে লেখার মাধ্যমে নিজেকে আমি সুন্দরভাবে, ঠিক যেমনভাবে চাই, প্রকাশ করতে পারি। আমি লিখতে পারি সহজ এবং কৌতূহলোদ্দীপক ভঙ্গিতে। আমার লিখতে ভালো লাগে, তাই লিখি। লিখে আমি নিজেকে প্রকাশ করি এবং নিজেকে প্রকাশ করার মধ্যে প্রচুর আনন্দ পাই। আমি একজন ভালো লেখক।’

সুখ:

মনের বিশেষ একটা অবস্থার নাম: সুখ। আমাদের সুখ ব্যক্তি বা বস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়, ব্যক্তি এবং বস্তুর প্রতি আমাদের মনোভাবের উপর নির্ভরশীল।

সাজেশন:

‘আমি সুখী। আমার ভালো স্বাস্থ্যের জন্যে আমি সুখী। আমি দিনে দিনে সামনের দিকে এগুচ্ছি এবং উন্নতি করছি-তাই আমি সুখী। দুনিয়াতে কিছুকাল উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছি বলে আমি সুখী। আমি মানুষ, তাই আমি সুখী। আমি সুখী বলে মনে করি নিজেকে, তাই আমি সুখী! আমি সুখী!’

পরিশেষ

কিভাবে কি করলে কি হবে এখন তা আপনি জানেন। নতুন করে বলবার মতো কিছু নেই আর। দরকারও নেই। যা শিখেছেন, যে-কোনো ধরনের সাফল্য অর্জনের জন্যে সেটা যথেষ্ট। এই নিয়ম বাস্তবে প্রয়োগ করে ইচ্ছে করলেই এখন আপনি হতে পারেন দেশবরেণ্য নেতা, প্রখ্যাত শিল্পী, মস্ত লেখক, বিরাট বড়লোক-মোট কথা, যা খুশি। হতে পারেন সার্থক, সমৃদ্ধ, আনন্দোজ্জ্বল জীবনের অধিকারী; সুখী একজন মানুষ।

কিন্তু হবেন কি?

যদি হন, আপনার সাথে সাথে সুখী হবো আমিও।

আপনি খ্যাতিমান হোন, অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী হোন, সুখী হোন আপনার সুখে সুখী হবো আমিও।

বইটি লিখেছি আপনার জন্যে। এ বইয়ের মাধ্যমে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছি আমি আপনার দিকে। এই বাড়িয়ে দেয়া হাত যদি আপনি গ্রহণ করেন, কৃতার্থ হবো আমি। আপনার উন্নততর নতুন জীবনের প্রতি পদক্ষেপে, আপনার হাসি-খুশি-সুখ-সমৃদ্ধি ভরপুর আগামী জীবনের প্রতিটি আনন্দঘন মুহূর্তে জানবেন, আমার শুভেচ্ছা রয়েছে আপনার সাথে। ধন্যবাদ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *