শ্রীরাম বলেন, শুন সৈন্য কলকলি।
সীতা লয়ে লক্ষ্মণ ত্যজহ রণস্থলী।।
থাকিয়া আমার কাছে হইতে দোসর।
কিন্তু হেথা থাকিলে পাবেক সীতা ডর।।
বিলম্ব না কর ভাই চলহ সত্বর।
সীতাকে রাখহ গিয়া গুহার ভিতর।।
এত যদি লক্ষ্মণেরে বলিলেন রামে।
দূরেতে লক্ষ্মণ সীতা গেলেন সম্ভ্রমে।।
দেব দৈত্য গন্ধর্ব্ব আইল সর্ব্বজন।
অন্তরীক্ষে থাকিয়া সকলে দেখে রণ।।
একা রাম চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষস।
কেমনে জিনিবে রাম বড়ই সাহস।।
ডাকিয়া রামেরে বলে তখন দূষণ।
মনুষ্য হইয়া তোর মোর সনে রণ।।
দূষণের বচন শুনিয়া খর হাসে।
রাক্ষস হাজার ছয় সহিত আইসে।।
ত্রিশিরার সঙ্গে দুই হাজার রাক্ষস।
খর-সৈন্য যত, তত দূষণের বশ।।
চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষস কলকলি।
রামেরে রুষিয়া যায় খর মহাবলী।।
বেষ্টিত রাক্ষসগণ মধ্যে রাম একা।
শৃগাল বেষ্টিত যেন সিংহ যায় দেখা।।
সারথি চালায় রথ, তাহে অষ্ট ঘোড়া।
রামেরে উপরে ফেলি মারিল ঝকড়া।।
সন্ধান পূরিয়া রাম ছাড়িলেন বাণ।
তার বাণ কাটিয়া করিলা খান খান।।
দুই জনে বাণ বর্ষে, দোঁহে ধনুর্দ্ধর।
দোঁহে দোঁহা বিন্ধি বাণে করিল জর্জ্জর।।
উভয়ের গা বহিয়া রক্ত পড়ে স্রোতে।
উভয় গায়ের রক্তে দুই বীর তিতে।।
যুড়িয়া সহস্র বাণ শ্রীরাম ধনুকে।
অতি ক্রোধে মারিলেন রাক্ষসের বুকে।।
নিশাচরগণের উঠিল কলকলি।
মরি মরি বলিয়া পলায় কতগুলি।।
সহস্র রাক্ষস পড়ে শ্রীরামের বাণে।
যোড়েন গন্ধর্ব্ব-অস্ত্র ধনুকের গুণে।।
সকল রাক্ষস হৈল যেন রক্তময়।
আপনা আপনি কারো নাহি পরিচয়।।
আপনা আপনি করে নির্ঘাত প্রহার।
খরের হাজার ছয় রাক্ষস সংহার।।
সকল পড়িল বীর, খর মাত্র আছে।
দূষণের সেনাপতি দেখে তার কাছে।।
আপনি নিকটে হয়ে প্রবেশে সংগ্রামে।
মহাশূল নিক্ষেপ সে করিল শ্রীরামে।।
যে বাণ ছাড়েন রাম শূল কাটিবারে।
শূলে ঠেকি পড়ে কিছু করিতে না পারে।।
পেয়েছে অক্ষয় শূল বিধাতার বরে।
ত্রিভুবনে সেই বর অন্যথা কে করে।।
রণেতে পণ্ডিত রাম নানা বুদ্ধি ঘটে।
শূল সহ দূষণের দুই হাত কাটে।।
দূষণের দুই হাত চন্দনে ভূষিত।
কাটা গেল, পঢ়িল সে হইয়া মূর্চ্ছিত।।
জ্বালায় দূষণ বীর ত্যজিল পরাণ।
দেবগণ শ্রীরামেরে করিছে বাখান।।