০৮. ট্যাক্সিতে বসে ইন্দ্রজিৎ

ট্যাক্সিতে বসে ইন্দ্রজিৎ জিজ্ঞেস করল, আমরা কোথায় যাচ্ছি স্যার?

মালাবার হিলসের দিকে। একটা বার কাম রেস্টুরেন্টে।

বোম্বাই প্রহিবিটেড শহর, স্যার। এখানে বার কাম রেস্টুরেন্ট নেই।

আছে। প্রাইভেটলি আছে। যেখানে যাচ্ছি সেটা খুবই প্রাইভেট জয়েন্ট। হয়তো আমাদের ঢুকতে দেবে না।

তা হলে কী করবেন?

তোমাকে প্লেন ভাড়া দিয়ে কলকাতা থেকে আনিয়েছি কেন হাঁদারাম? বুদ্ধি খাঁটিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করার জন্যই তো?

তা বটে। কিন্তু কাজের আগে ওরকম ফাঁসির খাওয়া খাওয়ালেন, এখন যে শরীর আইটাই করছে, ঘুমও পাচ্ছে।

খাওয়ালাম মানে? জোর করে খাইয়েছি নাকি? তুমিই তো এসে প্রথম কথাটাই বললে, স্যার, আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে। জাহাজ পর্যন্ত খেয়ে ফেলতে পারি। বলোনি?

বলেছি। খিদেও পেয়েছিল। তখন তো স্যার জানতাম না যে খাওয়ার পর আবার কপালে দুঃখ আছে।

বেশি খাও কেন ইন্দ্রজিৎ? বাঙালিরা বড্ড বেশি খায়, তাই কাজ করতে পারে না।

ইন্দ্রজিৎ অমায়িক গলায় বলল, গরিবের তো ওটাই দোষ স্যার, মাগনা খাবার পেলেই দেদার খায়। তবে ভাববেন না স্যার, পারব। ওখানে কি মারপিট হবে? তা হলে অবশ্য…

তোমার মারপিটের ধাত নয় ইন্দ্রজিৎ। আমি জানি। কিন্তু বিপদ ঘটলে অন্তত দৌড়ে পালাতে হতে পারে।

সেটা পেরে যাব। পালানোটা আমার ধাতে খুব সয়।

ববি রায় পিছনে হেলান দিয়ে বসলেন। অনেক রাত হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ ফাঁকা। হু হু করছে হাওয়া আর সমুদ্রের কল্লোল। গাড়ি অতি দ্রুত পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছিল।

কত দুরে-স্যার?

বেশি দূরে নয়। নার্ভাস লাগছে না তো ইন্দ্রজিৎ?

না স্যার। তবে আপনার মোডাস অপারেন্ডিটা বুঝতে পারছি না।

আগে থেকে বুঝবার দরকার কী?

আমার ভূমিকাটা কী হবে?

তোমার ভূমিকা খুব সাধারণ। যদি কিছু হয় তা হলে তুমি পালাবে এবং যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি পুলিশে একটা খবর দেবে। মিসেস ভট্টাচারিয়াকে টেলিফোনে জানিয়ে দেবে।

উনি মিসেস নয় স্যার, মিস।

অল দি সেম।

একটু ঝুঁকে ববি ড্রাইভারকে রাস্তার নির্দেশ দিলেন। গাড়ি বাঁক নিল। একটু বাদে যেখানে ববি গাড়িটা দাঁড় করালেন সে জায়গাটা রেস্টুরেন্টের সম্মুখ নয় বটে, কিন্তু সেখান থেকে রেস্টুঘ্নেন্টটার দরজা দেখা যায়। দিনের বেলায় যেমন ঝা-চকচকে লেগেছিল এখন সেরকম লাগছে না। বাইরে আলোর কোনও খেলা নেই, উজ্জ্বলতা নেই। বরং যেন একটু বেশি অন্ধকারই লাগছিল, একটিমাত্র বালকের আলোয়।

ড্রাইভারকে অপেক্ষা করতে বলে ববি রায় নামলেন।

এসো ইন্দ্রজিৎ।

দু’জনে দ্রুত পায়ে এগোল। কয়েকটা নিঝুম গাড়ি পার্ক করা রয়েছে রাস্তার দু’ধারে। গাড়ির চেয়ে সংখ্যায় দ্বিগুণ মোটরবাইক আর স্কুটার। রাস্তায় কোনও লোকই নেই।

রেস্টুরেন্টের দরজা আঁট করে বন্ধ। একজন গরিলার মতো চেহারার লোক দরজার পাশে অন্ধকারে গা মিশিয়ে দাঁড়ানো, পাথরের মূর্তির মতো।

শান্তভাবে, একটু ঝুঁকে উর্দিপরা একটা হাত বাড়িয়ে গরিলা তাদের বাধা দিল। খুবই নিম্ন, কিন্তু গম্ভীর গলায় বলল, ভিতরে যাওয়া বারণ। তোমরা কী চাও?

গরিলা ইংরিজি বলে, তবে ভাঙা ভাঙা এবং ভুলে ভরা। তবে ভঙ্গিটা বুঝিয়ে দেয় যে, ইংরেজির জন্য নয়, তাকে রাখা হয়েছে আরও গুরুতর কাজের জন্য।

ববি রায় ভারী অমায়িক হেসে বললেন, কাস্টমার। হোয়াট কাস্টমার? গো অ্যাওয়ে।

ববি রায় পকেটে হাত দিলেন। একখানা ভাঁজ করা পঞ্চাশ টাকার নোট প্রস্তুত ছিল। গরিলার হাতে সেটা চোখের পলকে চালান হয়ে গেল।

গরিলা ভ্রু কুঁচকে বলল, নো কিডিং।

দরজাটা সামান্য ফাঁক করে ধরল গরিলা। উদ্দণ্ড নাচ-গান চেঁচামেচির শব্দ তেড়ে এল ভিতর থেকে। কানের পরদায় ধাক্কা দিল উন্মত্ত ড্রামের আওয়াজ। দু’জনে টুক করে ঢুকে গেল ভিতরে।

ধোঁয়া, শব্দ, ক্যালেডিয়োস্কোপিক আলোর খেলায় যৌবনের প্রলাপ সমস্ত ঘরটাকে, যেন ভেঙেচুরে ফেলছে। পায়ের তলায় সুস্পষ্ট ভূমিকম্প। চোখ জ্বালা করে, মাথা পাগল-পাগল লাগে। অন্ধকার ও আলোর এমনই পাগলা সমন্বয় এবং দ্রুত অপস্রিয়মাণ নানা রং যে ভিতরটায় প্রকৃতই কী হচ্ছে তা বোঝা যায় না। তবে মেঝের অনেকটা পরিসর ফাঁকা করে তৈরি হয়েছে নাচের জায়গা। সেখানে ভুতুড়ে অবয়বের বহু মেয়ে আর পুরুষের শরীর বাজনার আদেশে সঞ্চালিত হচ্ছে বহু ভাঙ্গমায়।

ইন্দ্রজিৎ প্রথমটায় স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল।

কানে এল ববি রায়ের কঠিন স্বর, চলে এসো, সময় নেই।

কোথায় স্যার?

কাম অন। আই হ্যাভ টু ফাইন্ড দ্যাট গার্ল।

ইন্দ্রজিৎ আর শব্দ করল না। ববি রায়ের পিছু পিছু এগোতে লাগল। গাঁজা, চণ্ডু, চরস, মদ কী নেই এখানে? নেশার জগৎ যেন কোল পেতে বসে আছে।

ববি রায় নৃত্যপর নর-নারীর ভিতর দিয়ে অতিশয় দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সোজ কথায়, তাঁকেও মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে নেচে নিতে হচ্ছিল। ইন্দ্রজিৎ অতটা পেরে উঠছিল না। তার আর ববি রায়ের মাঝখানে দোল-খাওয়া স্কুল-খাওয়া নানা শরীর এসে পড়ছে। কখনও মেয়ে, কখনও পুরুষ, কখনও জোড়া।

হাঁফাতে হাঁফাতে ইন্দ্রজিৎ বলল, স্যার, আমি যে আপনার মতো নাচতে জানি না, এগোব কী

করে?

ববি রায় তার দিকে দৃকপাত না করে বললেন, সামটাইম উই ডোন্ট ড্যান্স ইন্দ্রজিৎ, বাট উই আর মেড টু ড্যান্স। তোমাকে নাচতে হবে না, ধাক্কা দিয়ে পথ পরিষ্কার করতে করতে চলে এসো। দে ওন্ট মাইন্ড।

নাচের ফ্লোরটা অনায়াসে পেরিয়ে গেলেন ববি। আর সঙ্গে সঙ্গেই একজন বিশাল চেহারার যুবক তড়িৎগতিতে এসে তার একটা হাত ধরে ফেলল শক্ত পাঞ্জায়, ওয়েট এ মোমেন্ট প্লিজ, আর ইউ এ মেম্বার? দিস প্লেস ইজ ওপেন ফর পাবলিক ওনলি আপ টু সেভেন পি এম। আফটার সেভেন ইটস এর মেম্বারস ওনলি।

ববি রায় চিন্তিত মুখে যুবকটির দিকে তাকিয়ে খুব ভদ্র গলায় বললেন, না, আমি মেম্বার নই। তবে আমার এক বন্ধু আমাকে এখানে নেমন্তন্ন করেছিল। তার নাম চিকা।

দৈত্যাকার যুবকটি কি একটু ধন্দে পড়ে গেল? সামান্য একটু দ্বিধা কাটিয়ে উঠে সে মাথা নেড়ে বলল, চিনি না। কে চিকা?

খুব সুন্দর একটি মেয়ে।

চিকা বলে কেউ এখানে নেই।

ববি রায় অত্যন্ত অসহায়ের মতো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, তার সঙ্গে যে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। রোম্যান্টিক অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

যুবকটি ববি রায়কে ক্রূর চোখে অপাঙ্গে দেখে জরিপ করে নিচ্ছিল। হঠাৎ বলল, এখানে তুমি ঢুকলে কী করে?

চিকা বলেছিল, ডোরম্যানকে ঘুষ দিলে ঢোকা যায়।

মাই গড, ইউ ব্রাইবড দা ডোরম্যান?

আই ডিড। ঠিক আছে, তুমি আমার সঙ্গে এসো।

কোথায়?

এদিক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার একটা চোরা পথ আছে। ডোন্ট স্পয়েল দা শশা। গেট আউট অফ হিয়ার।

ইন্দ্রজিৎ পিছন থেকে একটু কাঁপা গলায় বলল, তাই চলুন, স্যার।

ববি রায় ইন্দ্রজিতের দিকে ফিরে খুব শীতল গলায় ইংরেজিতে বললেন, যাও, আমাদের ফোর্সকে সিগনাল দাও। তারা এবার ঢুকে পড়ুক।

এ কথায় যুবকটি যেন হঠাৎ কুঁকড়ে ছোট হয়ে গেল। ববির হাতটা ছেড়ে দিয়ে বিবর্ণ মুখে বলল, তুমি পুলিশের লোক? কিন্তু… কিন্তু আমরা তো প্রাইভেট। পুলিশকে আমরা কখনও ফাকি দিই না…

ববি একটা ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, যাও ইন্দ্রজিৎ, ডেকে আনো।

যুবকটি টপ করে এগিয়ে এসে ইন্দ্রজিতের পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলল, জাস্ট এ মোমেন্ট। চিকাকে তোমাদের কী দরকার?

ববি রায় হিম-শীতল গলায় বললেন, দ্যাটস নান অফ ইয়োর বিজনেস, মিস্টার হাসলার। গিভ মি হার হোয়ার অ্যাবাউটস।

দেন হোট? উইল ইউ লিভ?

আই শ্যাল।

কাম উইথ মি।

যুবকটি ঘরের শেষ প্রান্তে একটি কাউন্টারের পিছনে একখানা কাচে ঢাকা ঘরে তাদের নিয়ে গেল। কাচের ঘর বলেই বাইরের শব্দ ভেতরে ঢোকে না।

যুবকটি দু’জনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ববির দিকে একখানা হাত বাড়িয়ে বলল, তোমার আইডেনটিটি কার্ড দেখাও।

ববি যুবকটির মুখের দিকে চেয়ে তাকে সম্মোহিত করার অক্ষম একটা চেষ্টা করতে করতে পকেটে হাত দিলেন।

ইন্দ্রজিৎ ভয়ে চোখ বুজে ফেলল। সে জানে, ববি রায়ের ডান পকেটে রিভলভার থাকে। সে আরও জানে, ববি রায় যখন-তখন যা-খুশি করে ফেলতে পারেন। লোকটার হার্ট বলে কিছু নেই।

কিন্তু চোখ খুলে ইন্দ্রজিৎ অবাক হয়ে দেখল, ববি রায় একটা আইডেনটিটি কার্ড যুবকটির নাকের ডগায় খুলে ধরে আছেন। তারপর সেটাকে পকেটে পুরে বললেন, ড্রাগ জয়েন্ট বাস্ট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। চিকার বিরুদ্ধেও অভিযোগ কিছু নেই। সে আমাকে একটা ব্যাপারে একটুখানি সাহায্য করবে। ব্যস।

যুবকটি অবিশ্বাসের চোখে ববি রায়ের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর টেবিল থেকে একটা প্যাড নিয়ে দ্রুত হাতে একটা ঠিকানা লিখে কাগজটা ছিঁড়ে ববি রায়ের হাতে দিয়ে বলল, নাউ গেট আউট। প্লিজ।

ববি রায় নির্লজ্জের মতো যুবকটির দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, আর ডোেরম্যানকে যে ঘুষটা দিতে হয়েছে সেটার কী হবে?

যুবকটি দ্বিরুক্তি করল না, পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকাটা দিয়ে দিল।

ববি রায় চলে আসতে গিয়েও ফিরে দাঁড়ালেন। যুবকটি তখনও সন্দেহকুটিল চোখে চেয়ে আছে তাঁর দিকে। ববি রায় অমায়িকভাবেই বললেন, আমি জানি, তুমি চিকাকে এখন টেলিফোন করে সাবধান করে দেবে। আমি হয়তো এই ঠিকানায় গিয়ে ওকে পাব না। কিন্তু মনে রেখো, আই ক্যান অলওয়েজ কাম ব্যাক। আই শ্যাল বি ব্যাক বিফোর লং।

এই হুমকিতে কতদূর কাজ হল কে জানে। তবে যুবকটি কোনও জবাব দিল না। যেমন চেয়ে ছিল তেমনই অপলক চেয়ে রইল। তার পাথুরে দৃষ্টিতে কোনও ভাবের প্রকাশ নেই। খুনিদের দৃষ্টিতে থাকেও না।

ট্যাক্সিওয়ালা ঘুমোচ্ছিল। ববি রায় তাকে মৃদু স্বরে ডেকে জাগালেন। মোটা টাকার চুক্তিতে ট্যাক্সিওয়ালা যদৃচ্ছ যাওয়ার করে রাজি হয়েছে।

ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল, অব কাঁহা সাব?

বান্দ্রা।

ট্যাক্সি চলল। ববি রায় পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন।

স্যার, আমিও কি আপনার মতো একটু ঘুমিয়ে নেব?

আমি ঘুমোচ্ছি না, ইন্দ্রজিৎ। সহজে আমার ঘুম আসে না।

আমার আসছে।

তুমি ঘুমোও।

ইন্দ্রজিৎ একটা হাই তুলে বলল, স্যার, আপনি কি একটু বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন না?

না। মনে রেখো, এখন আমার পালানোর পথ নেই। এয়ারপোর্টের রাস্তায় ওরা অ্যামবুশ করবে। হোটেলের ঘরে হানা দেবে। রাস্তায় আক্রমণ করবে। আমার এখন একটাই পথ খোলা। ওরা কিছু বুঝে উঠবার আগেই ওদেব ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া।

আপনি আমাকে বলছিলেন যে, এরা ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া গ্রুপ। এরা একা কাজ করে না। এদের অর্গানাইজেশন বিরাট। তা হলে আপনি একা কী করবেন, স্যার?

বোকা ছেলে! আমি যে কিছু করতে পারব তা তো বলিনি। কিন্তু কিছু একটা করতে হবে বলে করে যাচ্ছি। বাংলায় কী একটা কথা আছে না, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ!

আছে স্যার। কিন্তু আপনার কি বাঁচবার কোনও আশাই নেই?

মনে তো হচ্ছে না। ইন্ডিয়ান মাফিয়ারা ততটা এফিসিয়েন্ট নয়। অর্গানাইজেশনও দুর্বল। তাই আমি এখনও বেঁচেবর্তে আছি। আর শুধু মারলেই তো হবে না। আমার কাছ থেকে একটা ইনফরমেশনও যে ওদের বের করে নিতে হবে।

তা হলে আপনার কোনও আশাই নেই দেখছি।

ঠিকই দেখছ।

তা হলে এইবেলা রিভলভারটা আমার কাছে দিয়ে দিন না! দরকার হলে আমিই চালিয়ে দেব গুলি।

তোমাদের বাংলায় আরও একটা কথা আছে ইন্দ্রজিৎ, বাঁদরের হাতে খন্তা।

আছে স্যার।

তোমার হাতে রিভলভারও যা, বাঁদরের হাতে খন্তাও তাই।

তা হলে একটু ঘুমোই স্যার! শরীরটা ঢি ঢিস করছে। একটা কথা স্যার, আপনি লোকটাকে একটা আইডেনটিটি কার্ড দেখিয়েছিলেন। ওটা কিসের কার্ড?

ববি রায় প্রশ্নটার জবাব দিলেন না। ইন্দ্রজিৎ হতাশ হয়ে চোখ বুজল। ট্যাক্সি যখন বান্দ্রায় নির্দিষ্ট ঠিকানায় এসে দাঁড়াল তখন দেড়টা বেজে গেছে। পাড়া নিঃঝুম।

মস্ত একটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে ববি আর ইন্দ্রজিৎ একটু স্তব্ধ হয়ে রইল।

এবার স্যার?

শাট আপ। এসো।

ববি রায় কাগজটা খুলে আবার দেখলেন। চিকন মেহেতা। লালওয়ানি অ্যাপার্টমেন্টস। সাততলা।

লিফটে উঠে ববি রায় বললেন, চিকা রেডি আছে, বুঝলে ইন্দ্রজিৎ?

থাকবেই তো স্যার। আপনার সঙ্গে অত ভাব-ভালবাসা।

ইয়ারকি কোরো না ইন্দ্রজিৎ। বাঘের খাঁচায় ঢুকতে যাচ্ছ, এটা মনে রেখো। চিকাকে ওরা অ্যালার্ট করেছে। দারোয়ান যখন রাত দেড়টায় কাউকে ঢুকতে দেয় তখন বুঝতে হবে তাকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। ঘুমটা ঝেড়ে ফেলে অ্যালার্ট হও।

লিফট সাততলা উঠে এল নিঃশব্দে। ববি রায় এবং ইন্দ্রজিৎ নেমে এল। করিডোর নানা দিকে চলে গেছে। ববি রায় দাঁড়িয়ে দিক ঠিক করে নিলেন।

বাঁদিকে করিডোরটা গিয়ে দুটো দিকে মোড় নিয়েছে। ডান দিকে চিকা ওরফে চিকনের ফ্ল্যাট।

বোম্বেতে এখন এরকম ফ্ল্যাটের ভাড়া কত স্যার?

আকাশপ্রমাণ।

তা হলে মহিলা বেশ মালদার বলতে হবে।

তা বটে।

ববি ডোরবেল-এ আঙুল রাখলেন।

দু’বার বাজাবার পর ভিতর থেকে ঘুম-জড়ানো মেয়েলি গলা শোনা গেল, হু ইজ ইট?

এ ফ্রেন্ড। ববি।

হু ইজ ববি?

এ কাস্টমার, ম্যাডাম। ওয়েলদি কাস্টমার।

শীট! আই শ্যাল কল দা পলিস।

ডোন্ট বদার। দিস ইজ পলিস। ওপেন আপ।

ভিতরটা একটা চুপ মেরে রইল।

তারপর চিকা বলল, কী চাও? আমি তো কিছু করিনি।

তা হলে ভয় কী? দরজা খোলো। আমার কয়েকটা কথা আছে। ওয়েট, লেট মি ড্রেস।

একটু বাদে দরজা খুলে যখন চিকা দেখা দিল তখন তার চোখে ভয়, বিস্ময়, ঘুম তিনটেরই চিহ্ন রয়েছে।

ববি চাপা স্বরে ইন্দ্রজিৎকে বললেন, বিশ্বাস কোরো না। বোম্বে দিল্লি এখন অভিনয়ে কলকাতার চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। এ মেয়েটি দারুণ অভিনেত্রী।

মেয়েটি দারুণ সুন্দরীও স্যার।

চিকা ববির দিকে একটু চেয়ে থেকে বলল, উই মেট ইন দা ইভনিং, ইজনট ইট?

রাইট। কাম ইন। হোয়াই ইউ হ্যাভ এ ফ্রেন্ড!

আমার এই বন্ধু একেবারেই জলঘট। ভয় নেই।

চিকার ফ্ল্যাট অসাধারণ সুন্দর। নরম একটা ঘোমটা পরানো আলোতেও দামি আসবাবপত্র, গৃহসজ্জা যেটুকু দেখা যাচ্ছিল তা কোটিপতিদের ঘরে থাকে।

ববি রায় বসলেন। ইন্দ্রজিৎও।

তারপর ববি রায় বললেন, নাউ টক বিজনেস।