০৩. মানবের প্রথম অস্ত্র – প্রস্তরের যুগ – প্রত্ন-প্রস্তরের যুগ

মানবজাতির সর্ব্বপ্রাচীন অস্ত্র, ভূপৃষ্ঠে অন্বেষণলব্ধ, প্রস্তরখণ্ডের বর্ত্তমান নাম প্রাগায়ুধ (Eolith) (৫)। ইহাতে মানবের শিল্পের কোন নিদর্শন নাই, এই জন্য কোন কোন ভূতত্ত্ববিদ ইহা আদিম মানব কর্ত্তৃক ব্যবহৃত অস্ত্র নহে বলিয়া সন্দেহ করেন। আদিম মানবগণ প্রাগায়ুধ হস্তে ধারণ করিয়া মৃগয়ায় প্রবৃত্ত হইতেন এবং আমমাংস ভক্ষণ করিয়া জঠরজ্বালা নিবৃত্তি করিতেন। ক্রমশঃ জ্ঞানবৃদ্ধির সহিত ভল্ল বা বর্শার ব্যবহার আরম্ভ হয়। যুগবিপ্লবের বহুকাল পরে, আদিম মানবগণ ভূপৃষ্ঠলব্ধ প্রস্তরখণ্ডের অগ্রভাগ, দ্বিতীয় প্রস্তরের আঘাতে তীক্ষ্ণতর করিয়া, তাহা দণ্ডের অগ্রভাগে, বনজাত লতায় বন্ধনপূর্ব্বক ভল্ল বা বর্শার সৃষ্টি করিয়াছিলেন। কৃত্রিম উপায়ে অগ্ন্যুৎপাদন মানবজাতির দ্বিতীয় আবিষ্কার। নবাবিষ্কৃত অগ্নি ও ভল্লের সাহায্যে আদিম মানবগণ সেই প্রাচীনযুগের অতিকায় ভীষণ হিংস্রজন্তুসমূহের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, এবং ক্রমশঃ সমগ্র জীবজগতের উপরে স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। মানবজাতির শৈশবে, অগ্ন্যৎপাদনের উপায় আবিষ্কৃত হইলেও, আদিম মানবসমাজে বহুকালযাবৎ ধাতুর ব্যবহার ছিল। ধাতব অস্ত্রনির্ম্মাণপদ্ধতির আবিষ্কারকালপর্য্যন্ত, তীক্ষ্ণধার পাষাণখণ্ডই আদিম মানবের একমাত্র প্রহরণ ছিল। পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকগণ, ধাতবঅস্ত্রনির্ম্মাণকালপর্য্যন্ত সময়ের, প্রস্তরের যুগ (Stone Age) নাম দিয়াছেন।

জগদ্বিখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ লবক্‌ (Sir John Lubbock, Lord Avebury) প্রস্তরের যুগকে দুইভাগে বিভক্ত করিয়াছেন; প্রস্তরযুগের প্রথম ভাগের নাম প্রত্ন-প্রস্তরের যুগ (Paloeolithic Age) ও দ্বিতীয় ভাগের নাম নব্য প্রস্তরের যুগ (Neolithic Age)। আদিম মানবের যে সমস্ত প্রহরণ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহা সাধারণতঃ দুইভাবে বিভক্ত হইতে পারে; (ক) প্রত্ন-প্রস্তরযুগের অস্ত্র–ইহাতে মানবের শিল্পচাতুর্য্যের বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না। ইহা দেখিয়া এইমাত্র বুঝিতে পারা যা যে, ইহা ভূপৃষ্ঠে অন্বেষণলব্ধ প্রস্তরখণ্ড মাত্র নহে; (খ) নব্যপ্রস্তরযুগের অস্ত্র–নব্যপ্রস্তরের যুগে বর্ষাফলক, শরফলক, কুঠারফলক, ছুরিকা প্রভৃতি নানাবিধ সুদৃশ্য ও সযত্ননির্ম্মিত অস্ত্র দেখিতে পাওয়া যায়; এই যুগের অস্ত্র দেখিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, আদিম মানব সেই সময়ে শিলা খণ্ড হইতে অস্ত্রনির্ম্মাণে অভ্যস্ত হইয়াছিল।

——————-
(৫) “Eolith means an instrument not chipped into any intentional form, but only natural forms utilised at once. Nature, Aug. 31st. 1905.”