জগতে, সর্ব্বপ্রথমে, কোন্ যুগে কত কাল পূর্ব্বে, মানবের সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা এখনও অজ্ঞাত রহিয়াছে। প্রাণিতত্ত্ববিদ্গণ স্থির করিয়াছেন যে, বর্ত্তমান সময়ের সকল জীবের পরে মানবের আবির্ভাব হইয়াছিল। ভূতত্ত্ববিদ্গণ বলিয়া থাকেন যে, নব্যজীবক যুগের শেষভাবে মানবের অস্তিত্বের চিহ্ন লক্ষিত হয় (১)। অত্যাধুনিক উপযুগ হইতে ভূপৃষ্ঠে মানবের অস্তিত্বের নিদর্শন পাওয়া যায়, কিন্তু ইহার পূর্ব্ববর্ত্তী দুইটি উপযুগে মানবের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ভূতত্ত্ববিদগণের মধ্যে মতভেদ আছে। কেহ কেহ বলেন যে, মধ্যাধুনিক ও বহ্বাধুনিক উপযুগে মানবের অস্তিত্বের নিদর্শন পাওয়া যায়; কিন্তু কেহ কেহ এই সকল নিদর্শনের সহিত মানবের সম্পর্ক স্বীকার করে না (২)। কেহ কেহ বলেন যে বহ্বাধুনিক উপযুগে মানবের অস্তিত্বের নিদর্শন আবিষ্কৃত হইবে ইহা আশা করা যাইতে পারে, কিন্তু মধ্যাধুনিক যুগে মানবের অস্তিত্ব প্রমাণ করিবার কোন আশাই নাই। মাদ্রাজ প্রদেশে কর্ণুল নামক স্থানে একটি পর্ব্বতগুহায় জীবাশ্মের (Fossil) সহিত আদিম মানুষের অস্তিত্বের নিদর্শন আবিষ্কৃত হইয়াছে। ভূতত্ত্ববিদগণ অনুমান করেন যে, এই সকল জীবাশ্ম বহ্বাধুনিকযুগের স্তন্যপায়ী জীবের অস্থি (৩)। ব্রহ্মদেশে বহ্বাধুনিকযুগের লুপ্ত স্তন্যপায়ী জীবের অস্থির সহিত আদিম মানব কর্ত্তৃক ব্যবহৃত প্রস্তরনির্ম্মিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে (৪)। অন্ত্যাধুনিক ও উপাধুনিক যুগে মানবের অস্তিত্ব সম্বন্ধে মনীষিগণের মতদ্বৈধ নাই।
——————-
(১) ভূতত্ত্ববিদগণ পৃথিবীর বয়সকে প্রথমতঃ প্রত্নজীবক, মধ্যজীবক ও নব্যজীবক এই তিন যুগে বিভক্ত করিয়াছেন। প্রত্যেক যুগ তিন বা ততোধিক উপযুগে বিভক্ত হইয়াছেঃ–
(ক) প্রত্নজীবক (Paleozoic)
– আদিম (Archaean)
– কাম্ব্রিক (Cambrian)
– অর্দোভিসীয় (Ordovician)
– সিলিউরিক (Silurian)
– ডিভোনিক (Devonian)
– অঙ্গারবহ (Carboniferous)
– পার্মিক (Permian)
(খ) মধ্যজীবক (Mesozoic)
– ত্রায়াসিক (Triassic)
– জুরাসিক (Jurassic)
– খটিক (Cretaceous)
(গ) নব্যজীবক (Cainozoic)
– প্রাগাধুনিক (Eocene)
– অল্পাধুনিক (Oligocene)
– মধ্যাধুনিক (Miocene)
– বহ্বাধুনিক (Pliocene)
– অন্ত্যাধুনিক (Pleistocene)
– উপাধুনিক (Sub-holocene)
– আধুনিক (Holocene)
(২) That man esisted in Western Europe during the period of the Mamoth and the Rhinoceros, Tichorhinus, no longer, I thing admits of a doubt; but when we come to Pliocene and still more to Micocene times, the evidence is less conslusive :- Pre-historic Times, p.399
(৩) Records of the Geological Survey of India, Vol. XVII. p.201,203,205
(৪) Neotling–Memories of the Geological Survey of India, Vol. XXVIII. 1884. Pre-historic Times, p.402
হায়দরাবাদে নিজামের রাজ্যে গোদাবরী নদীর উপত্যকায় অধুনা লুপ্ত অতিকার জীবের অস্থির সহিত একখানি বহুমূল্য এগেট (agate) প্রস্তর নির্ম্মিত ছুরিকা (Flake) আবিষ্কৃত হইয়াছিল–Memories of the Geological Survey of India, Vol. I. p.65. প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক শ্রীযুক্ত হেমচন্দ্র দাশগুপ্ত মহাশয় এই সংবাদ সংগ্রহ করিয়া দিয়াছেন।