শ্ৰীকৃষ্ণ-দর্শনের জন্য কৃষ্ণ-বিরহিণী রাধিকার বন-গমন-আয়োজন
দিবসে বিবশা রাধে শুনি বংশিধ্বনি ।
চিত্রে সখী প্রতি খেদ-চিত্তে কয় ধনী ॥ ১
শুন গো চিত্রে ! স্থিরচিত্তে শ্যামের মুরলী ।
চিত্তে প্রবেশিলে, ছবি চিত্রের পুতলী ॥ ২
পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে চিত্ত-দুঃখ দূর ।
কি মধুর স্বর শুনে ক্ষিপ্ত সুরাসুর ॥৩
অসময় রসময় বাজায় বাঁশরী।
কিরূপে সে রূপ হেরি, বাঁচে গো কিশোরী ॥ ৪
আমি বলি, শ্যাম ! আমারে কর বনবাসী ।
সে বলে, রাই ! গুপ্ত প্রেম আমি ভালবাসি ॥ ৫
শুনি এ মোহন বাঁশী, তনু মন হরে ।
মনে হয় মনোমধ্যে বাঁধি মনোহরে ৷ ৬
মনান্তর করিতে মনের না হয় মনন ।
মনোমত না হয় সে মন্মথ-মোহন ॥ ৭
মন্ত্রণ বিফলে যায়, মরি মনে মনে ।
মনে মনে ঐক্য নাই মাধবের সনে ॥ ৮
মজায় মুনির মন মোর চিন্তামণি ।
এখন, সে মনে কেমনে সখী মজায় রমণী ॥ ৯
তবু মন বোঝে না, মন বুঝাতে, করি মন ভারি।
সে তো মন দিয়ে তোষে না মন, মনস্তাপে মরি ॥ ১০
মন দিয়ে মন পাবো ব’লে, মন সঁপিলাম আগে ।
এখন মনহারা হয়েছি, মরি মনের অনুরাগে ॥১১
মন যা করে, মনের কথা, মন বিনে কে জানে ।
বল্লে পরে মনের কথা, যন দিয়ে কে শুনে ॥ ১৮
সে করে না মনোযোগ, মন করে তার আশা ।
এখন মন্দিরে বসিয়ে কাঁদি, দেখে মনের দশা ॥১৩
মনে মনে মান ক’রে, সই! থাকি মনের দুখে ।
বলি, হেরব না আর মনোন্তরে, থাক্ব মনের সুখে ॥১৪
সিন্ধু-ভৈরবী—পোস্তা।
যা মনে করি মনে, মন কি মানে বাঁশী শুনে ।
বাঁশীতে মন উদাসী, হই গো দাসী শ্ৰীচরণে॥
মনে হয় মানে বসি, হেরব না আর কালো-শশী,
কালু হলে মোহন বাঁশী, না হেরিলে মরি প্রাণে ॥
পারিস কেহ সহচরি ! রাখ্তে মোর মনকে ধরি,
কালাচাঁদ,—প্রেম-ডুরি, বেঁধে মনে বনে টানে ॥ (ক)
শুনিয়া বাঁশরী, অধৈর্য্যা কিশোরী,
বলে বৃন্দের হস্ত ধরি ।
চল সখি ! যাই, জীবন জুড়াই,
ব্রজের জীবন হেরি ॥ ১৫
যদি না কর শ্রবণ, না যাও সে বন,
না দেখাও বনমালী ।
তবে, কি কাজ ভবনে, কি কাজ জীবনে
জীবনে জীবন ঢালি ॥ ১৬
করি, জীবন ছলনা, চল না চল না,
তবে, গো জীবন থাকে ।
চল গো সে বন, সে পদ-সেবন,
করি গে মনের সুখে ॥ ১৭
বৃন্দে সখী বলে, যাব কার বলে,
বেষ্টিত বিপক্ষমাল। ।
শুন গো শ্ৰীমতি ! এ তোর কি মতি,
অসময় এত উতলা ॥ ১৮
সময়ানুযোগ হইলে—সংযোগ
করিব বঁধুর সনে ।
যাও ফিরে যাও, কি জন্যে মজাও,
দুখিনী গোপিনীগণে। ১৯
ঐ ভয় রাধে ! তবে অপরাধে,
আমরা হব হতমানী ।
কৃষ্ণপ্রেম-সাধে, সদা বাদ সাধে,
তোর পাপ ননদিনী ॥ ২০