গল্পগ্রন্থ

হলদে মুখের কাহিনি

হলদে মুখের কাহিনি
[ দি ইয়েলো ফেস ]

শার্লক হোমসের সফল কীর্তির মধ্যে তার বুদ্ধিবৃত্তি যতটা প্রকাশ পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছে তার বিফল কীর্তির মধ্যে। যে-কেস সে সমাধান করতে পারেনি, তা শেষ পর্যন্ত অমীমাংসিতই থেকে গেছে–কারো বুদ্ধিতে কুলোয়নি মীমাংসা করার।

হলদে মুখের কাহিনি সেই জাতীয় কাহিনি যার মধ্যে ওর আশ্চর্য বিশ্লেষণী ক্ষমতা সম্যকরূপে প্রকাশ পেয়েছে–অথচ হালে পানি পায়নি।

অহেতুক শক্তিক্ষয় করা হোমসের ধাতে ছিল না। দেহে শক্তি ছিল যথেষ্ট। বক্সিংয়ে প্রথম শ্রেণির বক্সারদের মধ্যে ওর স্থান। কিন্তু কাজের সময় ছাড়া বাজে শক্তিক্ষয়ে ছিল ভীষণ অরুচি কোকেন নিয়ে পড়ে থাকত মামলা হাতে না-থাকলে। কিন্তু কর্মক্ষমতা মরে যেত না–নিয়মিত ব্যায়াম ছাড়াই কীভাবে যে নিজেকে কর্মপটু রাখত ভেবে পাইনি। খেত খুব সামান্য। কিন্তু হাতে কাজ এলে শক্তি যেন বিস্ফোরিত হত হাতে পায়ে। প্রচণ্ড পরিশ্রমেও ক্লান্ত হত না। বসন্তকাল। জোর করে ওকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম বাগানে। বাসায় ফিরলাম পাঁচটায়। আসতেই চাকরের মুখে শুনলাম, বসে থেকে থেকে একজন দর্শনার্থী চলে গেছে।

খুবই বিরক্ত হল হোমস। এমনিতে হাতে কাজ নেই। যাও-বা একজন মক্কেল এল, দেখাও হল না। বিকেলে বেড়াতে না-গেলেই হত। গজগজ করতে লাগল সমানে। এমন সময়ে টেবিলে দেখা গেল একটা পাইপ পড়ে রয়েছে।

লাফিয়ে উঠল হোমস, আরে! আরে! ওয়াটসন, এ তো তোমার পাইপ নয়। ভদ্রলোক ফেলে গেছেন নিশ্চয়। চমৎকার সেকেলে ব্রায়ার পাইপ–তামাকওয়ালা এ ধরনের তৈল-স্ফটিকের নলকে বলে অম্বর। লন্ডনে এমন নল খুব একটা পাওয়া যায় না। এ-রকম একটা জিনিস ভদ্রলোকের অত্যন্ত আদরের কাছছাড়া করতে চান না। তবুও যখন ফেলে গেছেন, বুঝতে হবে তার মানসিক উদবেগ নিশ্চয় চরমে পৌঁছেছে–পাইপ নিতেও ভুলে গেছেন।

আদরের জিনিস–কাছছাড়া করতে চান না, তুমি বুঝলে কী করে?

ভায়া, পাইপটার দামই তো সাত শিলিং। দু-বার মেরামত করা হয়েছে রুপোর পটি মেরে, মানে, পাইপের যা দাম, তার চাইতেও বেশি খরচ করে। নতুন একটা কিনলেও পারতেন। কেনেননি, অত্যন্ত আদরের এই পাইপ কাছছাড়া করতে চান না বলে।

আর কী চোখে পড়ছে?

হাড় ঠুকে প্রফেসর যেভাবে বক্তৃতা দেয়, তর্জনী দিয়ে পাইপ ঠুকে হোমস সেইভাবে বললে, পাইপ জিনিসটা চিরকালই কৌতূহলোদ্দীপক। ঘড়ি আর জুতোর মতো বৈশিষ্ট্যেরও দাবি রাখে। পাইপটার মালিক ল্যাটা, স্বাস্থ্যবান, ছন্নছাড়া। ভদ্রলোকের দাঁত বেশ সাজানো এবং পয়সাকড়ির ব্যাপারে হিসেব করে খরচ না-করলেও চলে যায়।

তার মানে বড়োলোক?

পাইপ থেকে তামাকটা হাতের চেটোয় ঢেলে হোমস বললে, তামাকটা দেখছ? এ হল গ্রসভেনর মিক্সচার। বিলক্ষণ দামি। ব্যয়সংকোচে যে আগ্রহী, সে অনায়াসেই এর আধাদামের তামাক কিনে নেশা চরিতার্থ করতে পারত।

আর কী দেখছ?

ভদ্রলোক ল্যাম্প আর গ্যাসের শিখায় পাইপ জ্বালান বলে কাঠ পুড়েছে। দেশলাইয়ের আগুনে এভাবে কাঠ পোড়ে না। পুড়েছে কেবল ডান দিকটা, ল্যাটা বলে। তুমি ল্যাটা নও। তুমি ডান হাতে পাইপ ধরে ল্যাম্প বা গ্যাসের শিখায় পাইপ ধরালে দেখবে পুড়ছে বাঁ-দিকটা। অম্বর নলে দাঁতের দাগ যেভাবে বসেছে, তাতে মনে হয় ভদ্রলোকের দন্তশোভা দেখবার মতোই। দাঁত সাজানো জোরালো না-হলে এভাবে পাইপ কামড়ানো যায় না। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। ভদ্রলোক স্বয়ং আসছেন মনে হচ্ছে।

বলতে-না-বলতেই ঘরে ঢুকলেন বছর তিরিশ বছরের এক যুবক; হাতে টুপি, পরনে ধূসর পোশাক।

আমতা আমতা করে বললেন, কিছু মনে করবেন না, আমার মাথার ঠিক নেই। দরজায় নক করে ঢোকা উচিত ছিল। বলেই ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে উদ্রান্তের মতো হাত বুলাতে লাগলেন কপালে।

আপন করে নেওয়া সুরে হোমস বললে, দৈহিক মেহনত সওয়া যায়, রাত্রিজাগরণ সহ্য হয় না। আপনার দেখছি কয়েক রাত ঘুমই হয়নি।

হ্যাঁ, হ্যাঁ জীবনটা ব্যর্থ হয়ে যেতে বসেছে আমার। আতীক্ষ্ণ ভাঙা ভাঙা গলায় যেন স্রেফ মনের জোরে আবেগরুদ্ধ ভঙ্গিমায় কথা বলে গেলেন যুবক। ঘরের ব্যাপার নিয়ে পরের কাছে আলোচনা করার মতো কুৎসিত ব্যাপার আর নেই, বিশেষ করে ব্যাপারটা যদি নিজের ঘরণীকে নিয়ে হয়।

মি. গ্রান্ট মুনরো…

তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন যুবক, আমার নামও জানেন দেখছি।

হাসল হোমস। বলল, নামটা আপনার টুপির ভেতর লিখে রেখে আমার দিকেই ফিরিয়ে রেখেছেন। আপনি স্বচ্ছন্দে আপনার কাহিনি বলুন। এ-ঘরে এর আগে অনেক গোপন রহস্য আমরা এই দুই বন্ধু শুনেছি, সমাধানও করেছি, অনেকের হৃদয়ের জ্বালা জুড়োতে পেরেছি। বলুন।

আবার ললাটে হস্তচালনা করলেন গ্রান্ট মুনরো। হাবভাব দেখে বেশ বোঝা গেল কথা তিনি কম বলেন, মনের কথা মনে চেপে রাখতে পারেন, নিজেকে নিয়েই তন্ময় থাকেন, কিন্তু সেই অভ্যেসের অন্যথা হতে যাচ্ছে বলে নিজেকে আর সামলাতে পারছেন না।

মি. হোমস, আমার বিয়ে হয়েছে তিন বছর আগে। তিন-তিনটে বছর আমরা পরম সুখে কাটিয়েছি। কেউ কাউকে ভুল বুঝিনি, কখনো মতান্তর হয়নি। কিন্তু গত সোমবার থেকে মনে হচ্ছে স্ত্রী অনেক দূরে সরে গেছে। কারণটা আমি জানতে চাই।

এফি কিন্তু আমাকে ভালোবাসে, তাতে একটুও চিড় ধরেনি। সেটা বোঝা যায়। কিন্তু একটা গুপ্ত রহস্য অদৃশ্য প্রাচীরের মতো দুজনের মাঝে হঠাৎ মাথা তুলেছে।

এফিকে বিয়ে করেছিলাম বিধবা অবস্থায়। নাম ছিল মিসেস হেব্রন। আলাপ যখন হয়, তখন তার বয়স পঁচিশ। অল্প বয়সে আমেরিকায় গিয়েছিল। আটলান্টায় থাকত। বিয়ে হয়েছিল উকিল হেব্রনের সঙ্গে। একটি বাচ্চাও হয়েছিল। তারপরে পীতজ্বরে স্বামী আর সন্তানের মৃত্যু হওয়ায় ও দেশে ফিরে আসে। মি. হেব্রন ওর জন্যে যে-টাকা রেখে গেছিলেন তার সুদ পাওয়া যেত ভালোই। দেশে ফেরার ছ-মাস পরে আলাপ হয় আমাদের–তারপর বিয়ে।

হেব্রন ভদ্রলোকের ডেথ সার্টিফিকেট আমি দেখেছি।

আমার নিজের কারবার আছে। বিয়ের পর নবুরিতে একটা বাড়ি ভাড়া করলাম। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। পল্লিশ্রী আছে। আমাদের বাড়ির সামনে একটা ফাঁকা মাঠ। মাঠের ওপারে একটা কটেজ। আর কোনো বাড়ি নেই। কটেজটার সদর দরজা আমাদের বাড়ির দিকে।

আগেই একটা কথা বলে রাখি। বিয়ের পরেই স্ত্রী ওর সব টাকা আমাকে লিখে-পড়ে দিয়েছিল। আমার বারণ শোনেনি। ব্যাবসা করি, যদি টাকাটা জলে যায়, এই ভয় ছিল।

যাই হোক, দেড় মাস আগে এফি হঠাৎ আমার কাছে এক-শো পাউন্ড চাইল। আমি তো অবাক। এত টাকা হঠাৎ কী দরকার পড়তে পারে, ভেবে পেলাম না। জিজ্ঞেস করলাম। ও এড়িয়ে গেল। চপলভাবে শুধু বলল, তুমি তো আমার ব্যাঙ্কার। ব্যাঙ্কার আবার অত কথা জিজ্ঞেস করে নাকি? তবে কী জন্যে টাকাটা নিচ্ছি, পরে বলব–এখন নয়।

চেক লিখে দিলাম এক-শো পাউন্ডের। কিন্তু সেই প্রথম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলাখুলি সম্পর্কে

একটু ফাটল ধরল–কী যেন লুকিয়ে রাখা হল আমার কাছে।

বাড়ির উলটোদিকে মাঠের ওপারে দোতলা কটেজটার পাশে আমি প্রায় বেড়াতে যেতাম স্করফার গাছের কুঞ্জে। গত সোমবার বেড়িয়ে ফেরবার সময়ে দেখলাম, বাড়িতে নিশ্চয় ভাড়াটে এসেছে। এতদিন খালি পড়ে ছিল। এখন একটা খালি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মালপত্র সদর দরজার সামনে নামানো হচ্ছে।

কৌতূহল হল। কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি কে এল বাড়িতে, এমন সময়ে চমকে উঠলাম দোতলার জানলায় একটা মুখ দেখে। মি. হোমস, সে-মুখ দেখে বুকের রক্ত আমার ছলাৎ করে উঠল। কাঁটা দিয়ে উঠল গায়ে।

মুখটা পুরুষের, কি নারীর দূর থেকে ঠাহর করতে পারলাম না। শুধু দেখলাম একটা বিষম বিকট হলদেটে রঙের মৃতবৎ মুখ স্থির চোখে দেখছে আমাকে। চোখাচোখি হতেই সাঁৎ করে পেছনে সরে গেল মুখটা যেন জোর করে টেনে নেওয়া হল ঘরের ভেতর থেকে।

কৌতূহল আর বাগ মানল না। দেখতেই হবে কে এল আমার প্রতিবেশী হয়ে। এগিয়ে গেলাম সদর দরজার সামনে। কিন্তু ঢোকবার আগেই তালঢ্যাঙা একটা মেয়েছেলে বেরিয়ে এসে কড়া কড়া কথা বলে তাড়িয়ে দিলে আমাকে।

বাড়ি ফিরে এলাম। মন থেকে কিন্তু হলদেটে মুখটার স্মৃতি মুছতে পারলাম না। স্ত্রীকেও কিছু বলব না ঠিক করলাম। যা ভীতু স্বভাবের, ভেবে ভেবে হয়তো আধখানা হয়ে যাবে। শোবার আগে কেবল বললাম, সামনের বাড়িতে নতুন প্রতিবেশী এসেছে।

আমি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোই। এই নিয়ে আমাকে রাগানোও হয়। কিন্তু সেদিন ওই বীভৎস হলদে মুখটা দেখার পর ঘুম তেমন গাঢ় হল না। চমকে চমকে উঠতে লাগলাম। সেই কারণেই গভীর রাতে টের পেলাম চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে উঠে পোশাক পরে এফি বেরিয়ে গেল ঠিক চোরের মতো ভয়ে ভয়ে। ঘড়ি দেখলাম। রাত তিনটে। এত রাতে বাড়ির বউ বাইরে বেরোয় কেন? বাইরে বেরোনোর সময়ে ওর মুখের চেহারাও দেখেছি। মড়ার মতো ফ্যাকাশে। নিশ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন। ব্যাপার কী?

কুড়ি মিনিট পর ফের সদর দরজা খোলা আর বন্ধ করার আওয়াজ পেলাম। চুপি চুপি ঘরে ঢুকল এফি। তৎক্ষণাৎ উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় গেছিলে?

আঁতকে উঠল এফি। মুখ থেকে সমস্ত রক্ত নেমে গেল। কাঁপতে লাগল ঠক-ঠক করে। চিরকালই একটু নার্ভাস। তারপরেই ড়ুকরে কেঁদে বললে, তুমি জেগে আছ?

কোথায় গেছিলে? একটু হাওয়া খেতে। দম আটকে আসছিল বন্ধ ঘরে, দেখলাম আঙুল কাপছে এফির। নির্ঘাত মিথ্যে বলছে। আমার দিকেও তাকাচ্ছে না।

মনটা বিষিয়ে গেল। নিশীথ রাত্রে চোরের মতো বাইরে ঘুরে এসে যে-স্ত্রী কঁচা মিথ্যে বলে স্বামীকে, তাকে আর জেরা না-করাই ভালো। পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুমোতে পারলাম না।

পরের দিন শহরে যাওয়ার কথা ছিল। বেরোলামও বাড়ি থেকে। কিন্তু মনমেজাজ ভালো–থাকায় এদিক-ওদিক ঘুরে দুপুর একটা নাগাদ ফিরে এলাম। কটেজটার পাশ দিয়ে যখন আসছি, দেখলাম ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে আমার স্ত্রী।

আমাকে দেখেই যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল এফি। ভাব দেখে মনে হল এখুনি পেছন ফিরে কটেজের মধ্যে ফের ঢুকে পড়বে। নিঃসীম আতঙ্ক ফুটে উঠল চোখে-মুখে।

কাঁদো-কাঁদো মুখে বললে, জ্যাক, নতুন প্রতিবেশী দেখতে এসেছিলাম।

কাল রাতেও এসেছিলে?

না, না। কী বলতে চাও?

ফের মিথ্যে? দেখি তো কার কাছে গেছিলে।

দু-হাতে আমার পথ আটকাল এফি। মিনতি করে বললে, ভেতরে যেন না-ঢুকি। এখন সে কিছু বলতে পারছে না শুধু আমার ভালোর জন্যেই। কিন্তু একদিন সব বলবে। কিন্তু এখন জোর করে ভেতরে ঢুকলে আমাদের সম্পর্কের ইতি ঘটবে ওইখানেই।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। কথা আদায় করলাম–আর যেন এসব না হয়। ও কথা দিল।

চলে আসার সময়ে লক্ষ করলাম, ওপরের ঘরের জানলা থেকে বিকট সেই হলদে মুখটা নির্নিমেষে চেয়ে আছে আমার দিকে। চোখাচোখি হতেই সাঁৎ করে সরে গেল ভেতরে। কিছুতেই মাথায় এল না এ-রকম একটা বিচিত্র জীবের সঙ্গে আমার স্ত্রী-র এমন কী সম্পর্ক থাকতে পারে যে রাতবিরেতে অথবা দিনদুপুরে আমাকে লুকিয়ে তাকে আসতে হচ্ছে বার বার? ওই কর্কশ স্বভাবের মেয়েছেলেটাই-বা কে? এ কী রহস্য গড়ে উঠেছে সামনের বাড়িতে?

দু-দিন ভালোই কাটল। তৃতীয় দিন শহরে কাজ পড়ল। যে-ট্রেনে ফেরবার কথা ফিরলাম তার আগের ট্রেনে। বাড়ি ঢুকতেই আমার ঝি চমকে উঠল আমাকে দেখে। গিন্নিমা কোথায় গেছে। জিজ্ঞেস করতে আমতা আমতা করে বললে, এই গেছে একটু বাইরে।

ঘোর সন্দেহ হল। ওপরে উঠলাম। এফিকে দেখতে পেলাম না। জানলা দিয়ে দেখলাম, মাঠের ওপর ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োচ্ছে ঝি। বুঝলাম সব। আমার অবর্তমানে ফের সামনের বাড়ি গিয়েছে এফি। ঝি যাচ্ছে আমার ফিরে আসার খবর দিতে।

মাথায় রক্ত চড়ে গেল। ঠিক করলাম, এর একটা হেস্তনেস্ত আজকেই করব। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝড়ের মতো দৌড়োলাম কুটিরের দিকে। মাঝপথে দেখা হল এফি আর ঝিয়ের সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে ফিরছে।

আমি কিন্তু ওদের ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ঢুকলাম কুটিরের মধ্যে। নীচের তলায় দেখলাম জল ফুটছে কেটলিতে। ওপরতলায় হলদে মুখ যে-ঘরে দেখেছিলাম, সেই ঘরটা কেবল সুন্দর ভাবে সাজানো ম্যান্টলপিসে রাখা আমার স্ত্রী-র ফটো–তিন মাস আগে তুলেছিলাম। এ ছাড়া বাড়ি একদম ফাঁকা।

নীচের হল ঘরে দেখা হয়ে গেল স্ত্রীর সঙ্গে। ফটো কাকে দিয়েছে এবং কার কাছে সে এত লুকিয়ে চুরিয়ে আসে–এ-প্রশ্নের জবাব সে দিল না। করুণ স্বরে শুধু বললে, বলতে পারব নাজ্যাক। কিন্তু যেদিন সব জানবে ক্ষমাও করতে পারবে।

আমি বললাম, তোমার আমার মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক কিন্তু আর রইল না।

মি. হোমস, সেই থেকে আমি পাগলের মতো হয়ে গিয়েছি। এ-ঘটনা ঘটেছে কালকে। আপনার কাছে ছুটে এসেছি পরামর্শ নিতে। এ-উৎকণ্ঠা আর সইতে পারছি না। বলুন এখন কী করি।

তন্ময় হয়ে সব শুনল হোমস। গালে হাত দিয়ে বসে রইল অনেকক্ষণ।

তারপরে বললে, হলদে মুখটা পুরুষের কি?

বলা মুশকিল!

দেখে গা ঘিন ঘিন করেছে?

বিকট রং, আড়ষ্ট ভাব দেখে সমস্ত শরীর শিউরে উঠেছে। দু-বারই চোখাচোখি হতেই লাফিয়ে পেছিয়ে গেছে।

আপনার কাছে স্ত্রী টাকা নেওয়ার কদ্দিন পরের ঘটনা এটা?

মাস দুই।

ওঁর প্রথম স্বামীর ফটো দেখেছেন?

না। আটলান্টায় থাকার সময়ে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়।

কিন্তু ডেথ-সার্টিফিকেটটা দেখতে পেয়েছেন?

সেটাও পুড়ে গিয়েছিল। আমি দেখেছি একটা কপি।

আমেরিকায় আপনার স্ত্রীকে চিনত, এমন কাউকে জানেন?

না।

ওঁর নামে চিঠি আসে আমেরিকা থেকে?

মনে তো হয় না।

তাহলে এক কাজ করুন। বাড়ি ফিরে যান। কুটির থেকে যদি ওরা চম্পট দিয়ে থাকে এর মধ্যে, তাহলে কিছু করার নেই। আর যদি এর মধ্যে আবার ফিরে আসে–আপনি আড়াল থেকে তা দেখতে পেলেই আমাকে টেলিগ্রাম করে দেবেন–নিজে ঢুকতে যাবেন না। এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাব আপনার কাছে।

বিদেয় হলেন গ্রান্ট মুনরো।

ওয়াটসন,বলল হোমস, ব্যাপারটা খুব সুবিধেরমনে হচ্ছেনা। ব্ল্যাকমেলিং চলছে মনে হচ্ছে।

ব্ল্যাকমেলারটি কে?

সাজানো ঘরে যে থাকে, মিসেস মুনরোর ছবি যে ম্যান্টলপিসে সাজিয়ে রাখে, যার মুখ হলদে।

সে কে?

মিসেস মুনরোর প্রথম স্বামী বলেই আমার বিশ্বাস। সেইজন্যেই দ্বিতীয় স্বামীকে ঢুকতে দিতে চান না। আমেরিকায় যাকে বিয়ে করেছিলেন, নিশ্চয় সে মারা যায়নি। অত্যন্ত কুৎসিত কুষ্ঠ জাতীয় কোনো রোগে এমন কদাকার হয়ে যায় যে ইংলন্ডে পালিয়ে আসেন ভদ্রমহিলা। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ের খবর নিশ্চয় এমন কেউ পেয়েছে, যে প্রথম বিয়ের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় হুমকি দেখিয়ে টাকা দোহন করছে ভদ্রমহিলার কাছ থেকে। নীচু ক্লাসের ছেলে-মেয়ের কীর্তি নিশ্চয়। প্রথম কিস্তির টাকা সে নিয়েছে, কদাকার অকর্মণ্য হেব্রনকে কটেজে এনে তুলেছে, ভয় দেখিয়ে মিসেস মুনরোর ছবি পর্যন্ত আদায় করেছে। গভীর রাতে মিসেস মুনরো গিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, দু-দিন পরে ফের গিয়েছিলেন ওই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু মি. মুনরো হঠাৎ ফিরে আসায় ঝিয়ের মুখে খবর পেয়ে প্রথম স্বামীকে সেই বদ চরিত্রের মেয়েছেলেটির সঙ্গে পাচার করে দেন পেছনের দরজা দিয়ে।

সবই তো আন্দাজে বলে গেলে।

এ ছাড়া আপাতত আর কিছু দরকার নেই।

বিকেলে টেলিগ্রাম এল গ্রান্ট মুনরোর কাছ থেকে। বাড়িতে লোক দেখা গেছে। সাতটার গাড়িতে যেন হোমস রওনা হয়।

যথাসময়ে পৌঁছোলাম নবুরিতে। স্টেশনে দেখা হল গ্রান্ট মুনরোর সঙ্গে। উত্তেজনায় কাঁপছেন ভদ্রলোক। ফ্যাকাশে হয়ে গেছেন।

পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে হোমস বললে, আপনার পাছে অমঙ্গল হয় তাই আপনার স্ত্রী আপনাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দিতে নারাজ। তা সত্ত্বেও কি ঢুকবেন?

হ্যাঁ। এসপার কি ওসপার হয়ে যাক আজকে।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে পৌঁছোলাম কটেজটার সামনে। দোতলার একটা জানলায় আলো জ্বলছে। একটা ছায়ামূর্তি সরে গেল জানলার সামনে দিয়ে।

ওই… ওই… ওই সেই হলদে মুখ! যেন ককিয়ে উঠলেন গ্রান্ট মুনরো।

আমরা সবেগে ধেয়ে গেলাম সদর দরজার সামনে। আচমকা খুলে গেল পাল্লা। পথ আটকে দাঁড়ালেন এক ভদ্রমহিলা।

জ্যাক… জ্যাক… দোহাই তোমার… আমাকে বিশ্বাস করো… ভেতরে যেয়ো না।

না, এফি, বড় বেশি বিশ্বাস করে ফেলেছি তোমাকে। পাশ দিয়ে তেড়ে গেলাম তিন মূর্তি ভেতরে। একজন প্রৌঢ়া বেরিয়ে এসে পথ আটকাতে গিয়েও পারল না। ঝড়ের মতো উঠে গেলাম দোতলায়, সেই ঘরটিতে ঢুকে থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।

ঘরটা সত্যিই সুন্দরভাবে সাজানো। টেবিলে মোমবাতি জ্বলছে। ঝুঁকে রয়েছে একটা ছোট্ট মেয়ে। পরনে লাল ফ্রক। হাতে লম্বা সাদা দস্তানা। মুখটা আমাদের দিকে ফেরাতেই ভয়ে বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলাম আমি। সে-মুখে প্রাণের কোনো সাড়া নেই, স্পন্দন নেই, রং নেই, অদ্ভুত হলদে। আড়ষ্টতা মুখের পরতে পরতে। ভাবলেশহীন বিষম বিকট।

পরমুহূর্তেই অবসান ঘটল রহস্যের। একলাফে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার মুখ থেকে একটানে একটা মুখোশ খুলে আনল হোমস, মিশমিশে কালো একটা নিগ্রো মেয়ে ঝকঝকে সাদা দাঁত বার করে পরম কৌতুকে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আমাদের ভ্যাবাচ্যাকা মুখচ্ছবি দেখে।

হেসে উঠলাম আমিও মেয়েটির কৌতুক-উজ্জ্বল সরল হাসি দেখে। আর গ্রান্ট মুনরো? চেয়ে রইলেন ফ্যালফ্যাল করে।

এ আবার কী?

বলছি আমি, ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলেন নীচতলার সেই মহিলা। আমার প্রথম স্বামী আটলান্টায় মারা গেছে ঠিকই কিন্তু মেয়েটি এখনও বেঁচে আছে!

তোমার মেয়ে!

গলায় ঝোলানো রুপোর লকেটটা হাতে নিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, এর মধ্যে কী আছে এই তিন বছরে তুমি দেখনি।

আমি তো জানি ওটা খোলা যায় না।

খুট করে একটা আওয়াজ হল। স্প্রিংয়ে চাপ পড়তেই ডালা খুলে গেল লকেটের। ভেতরে দেখা গেল বুদ্ধি-উজ্জ্বল সুদর্শন এক পুরুষের প্রতিমূর্তি–আফ্রিকার কৃষ্ণকায় পুরুষ।

জ্যাক, এই আমার প্রথম স্বামী–জন হেব্রন। এর চাইতে উদার মহৎ মানুষ পৃথিবীতে আর নেই। বে-জাতে বিয়ে করেও তাই কখনো পস্তাতে হয়নি। মেয়েটা কিন্তু দেখতে হল ওর মতো। বরং ওর চাইতেও কালো। তাহলেও সে আমার সোনা মেয়ে।

এই পর্যন্ত শুনেই মেয়েটা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল মায়ের বুকে।

মেয়েটাকে আমেরিকায় রেখে এসেছিলাম শরীর খারাপ ছিল বলে–হঠাৎ জায়গা পালটানোর ধকল সইতে পারত না। একজন আয়া ঠিক করে এসেছিলাম–সে-ই ওকে দেখাশুনা করত। সংকোচবশত তোমাকে ওর কথা বলতে পারিনি, সেটাই ভুল করেছি। চিঠিপত্র নিয়মিত পেয়েছি। জানতাম ও ভালোই আছে। বিয়ের তিন বছর পরে কিন্তু বড্ড মন কেমন করতে লাগল মেয়েটার জন্যে। এক-শো পাউন্ড পাঠালাম ওকে নিয়ে এখানে আসবার জন্যে। তখনও যদি তোমার কাছে লুকোছাপা না-করতাম, এত কাণ্ড আর ঘটত না। ভেবেছিলাম, কয়েক সপ্তাহ কাছে এনে রাখব। কটেজ ভাড়া করা হল। আয়াকে বলে দিয়েছিলাম দিনের আলোয় যেন কখনো মেয়েকে রাস্তায় বার না-করে। মুখ আর হাত মুখোশ আর দস্তানা দিয়ে ঢেকে রাখে, যাতে জানলায় যদি কেউ দেখেও ফেলে, পাড়ায় কালো মেয়ে এসেছে বলে প্রতিবেশীরা কানাকানি না আরম্ভ করে। এতটা আটঘাট না-বাঁধলেই দেখছি মঙ্গল হত। আমার মাথার ঠিক ছিল না পাছে তুমি সব জেনে ফেলো, এই ভয়ে।

তোমার মুখেই শুনলাম, ওরা এসে গেছে। মায়ের মন তো, তাই তর সইল না। তোমার ঘুম খুব গাঢ় বলে ঠিক করলাম রাতেই মেয়েটাকে গিয়ে কোলে নিই। কিন্তু তুমি দেখে ফেললে। তিনদিন পর যখন জোর করে কটেজে ঢুকেছিলে, ঠিক তার আগেই ওরা পেছনের দরজা দিয়ে। বেরিয়ে গিয়েছিল বাইরে। জ্যাক, এই হল আমার গোপন কাহিনি। এখন বল কী করবে হতভাগিনী মা আর মেয়েকে নিয়ে।

মিনিট দুই ঘর স্তব্ধ। তারপর গ্রান্ট মুনরো যা করে বসলেন, তাতে প্রাণ জুড়িয়ে গেল উপস্থিত প্রত্যেকের।

মেয়েটাকে সস্নেহে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন। আর এক হাত বাড়িয়ে বউকে নিয়ে দরজার দিকে এগোতে এগোতে বললেন, আমি লোকটা ততটা ভালো না-হলেও খুব একটা খারাপ নই, এফি। চলো, বাড়ি গিয়ে কথা হবে।

বাইরে এল হোমস। বোজা গলায় বললে, ওয়াটসন, চলো লন্ডন ফিরি।

সারাদিন গুম হয়ে রইল বন্ধুবর। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে বললে, যখন দেখবে অহংকারে মট মট করছি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কেসে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি না, মন্ত্র পড়ার মতো নবুরি নামটা কানে কানে শুনিয়ে দেবে।

———-

টীকা

হলদে মুখের কাহিনি : দ্য ইয়েলো ফেস স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৮৯৩ সংখ্যায়। নিউইয়র্কের হার্পার্স উইকলি পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৩ তারিখের সংখ্যায়।

প্রথম শ্রেণির বক্সারদের মধ্যে ওর স্থান : দ্য সাইন অব ফোর উপন্যাসের চরিত্র ম্যাকমুর্দোকেও এ-কথা বলতে শোনা গিয়েছে। ইংলন্ডে আধুনিক বক্সিং চালু হয় ১৮৬৭ সালে। কুইন্সবেরির অষ্টম মাকুইস জন শোল্টো ডগলাস এবং জন গ্রাহাম চেম্বার্স প্রণীত কুইন্সবেরি রুলস মোতাবেক ইংলন্ডে বক্সিং পরিচালিত হত। স্যার আর্থার কন্যান ডয়ালের যে বক্সিং-এ বিশেষ উৎসাহ ছিল, তা বোঝা যায় তাঁর রডনে স্টোন (১৮৯৬) উপন্যাস থেকে।

বাগানে : কোন বাগানে? বেকার স্ট্রিটের বাড়িতে বাগান ছিল না। তবে কাছাকাছি অবস্থিত রিজেন্ট পার্ক হওয়া সম্ভব।

অম্বর : Amber। কোটি-কোটি বছর আগে জমাট হয়ে যাওয়া গাছের আঠা। অনেক সময়ে এর ভেতরে ফুল, পাতা, পোকামাকড়ের জীবাশ্ম পাওয়া যায়।

গ্যাসের শিখায় পাইপ জ্বালেন : শার্লক হোমসকেও কখনো এভাবে পাইপে অগ্নিসংযোগ করতে দেখা গিয়েছে। দ্রষ্টব্য : দি অ্যাডভেঞ্চার অব চার্লস অগাস্টাস মিলভারটন।

আটলান্টায় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের অন্তর্গত একটি শহর।

পীতজ্বর :ঊনবিংশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে, প্রায় প্রত্যেক গ্রীষ্মেই পীতজ্বর বা ইয়েলো ফিভার মহামারির আকার ধারণ করত। ১৮৫৩-তে নিউ অর্লিয়েন্স শহরে পীতজ্বরের প্রকোপে প্রায় ন-হাজার মানুষ মারা যান। তবে ১৮৬০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে আটলান্টায় কোনো পীতজ্বরের মহামারি ঘটে বলে জানা যায় না। হাভানায় আমেরিকান সৈনিকদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিলে বা ওয়ার রীড সেখানে নানাবিধ পরীক্ষা চালিয়ে আবিষ্কার করেন এই রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টা নামে এক জাতের মশা। ১৯৩৭ সালে এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়।

ডেথ সার্টিফিকেট : আটলান্টা শহরে বা সমগ্র জর্জিয়া রাজ্যে ডেথ সার্টিফিকেটের প্রচলন হয় ১৯১৪ সালে। সেক্ষেত্রে হেব্রনের ডেথ সার্টিফিকেট কীভাবে দেখলেন হোমসের মক্কেল? সেটি কি জাল? নাকি লেখক ভুল করেছেন?

জ্যাক : জ্যাক আবার কোথা থেকে এল? হোমসের মক্কেলের প্রথম নাম তো গ্রান্ট!

ছবি যে ম্যান্টলপিসে সাজিয়ে রাখে : যে এফি মুনরোকে ব্ল্যাকমেল করবে, তার পক্ষে ম্যান্টলপিসে এফির ছবি সাজিয়ে রাখা একটু কষ্টকল্পিত।

বে-জাতে বিয়ে করেও : জর্জিয়া রাজ্যের তৎকালীন আইনে কোনো শ্বেতাঙ্গের সঙ্গে নিগ্রোর বিবাহ আইনবহির্ভূত কাজ হিসেবে গণ্য হত। বিয়ে যদি অন্য রাজ্যেও হয়ে থাকে, জর্জিয়ায় আসামাত্র হেব্রন এবং এফির বিয়ে বেআইনি ঘোষিত হওয়ার কথা।

বরং ওর চাইতেও কালো : নৃতত্ত্ববিদদের মতে নিগ্রো এবং শ্বেতাঙ্গের সন্তানের পক্ষে এমন হওয়া সম্ভব নয়। এফি-র মেয়ের গায়ের রং হওয়ার কথা সাদা এবং কালোর মাঝামাঝি। নৃতত্ত্বের ভাষায় এদের বলা হয় মুল্যাটো (Mulatto)।