অধ্যায় ৭২ – প্রথম সম্রাট, দ্বিতীয় রাজবংশ
খ্রিস্টপূর্ব ২৮৬ থেকে ২০২ সালের মাঝে প্রাচীন চীনে ঝৌ রাজত্বকে নির্মূল করে চি’ইন। তারাই অখণ্ড চীনের প্রথম শাসক হিসেবে আবির্ভূত হয়।
ইতিহাসের পাতায় এই সময়টুকুতে চীনের দিকে খানিকটা নজর দেওয়া যায়। ততদিনে সেখানে সব ডিউক নিজেদেরকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন- খানিকটা আলেকজান্ডারের সাতরাপদের মতো। চীন রাজ্যের দ্রুত উন্নয়ন হতে থাকে। শাং ইয়াংকে অঙ্গহীন করেছিলেন নতুন চি’ইন (চীন) রাজা—এসব আমরা আগেই জেনেছি। চীনের সেনাবাহিনী যুদ্ধ বন্ধ করেনি এবং বাকিরাও বসে ছিল না। কি’র হাতে ওয়েই পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের ফলে ওয়েই তার ক্ষমতা হারায়। চু অবশেষে উ ও উইয়েহ রাজত্ব অধিগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এ পর্যায়ে চিন, কি ও চু—এই তিন রাজত্বে চীন বিভাজিত হয়।
কয়েক বছরের মধ্যে এই তিন রাজত্বে শক্তিমত্তার তেমন কোনো তারতম্য ছিল না। তবে চীনদের বাহিনী সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন। ২৬০ সালে চীন, চাও নামে একটি নতুন রাজত্বকে পরাভূত করে। জিন রাজত্ব ভাঙার পর এই উচ্চাভিলাষী রাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল। চীনের সুবিশাল ভূখণ্ডে অসংখ্য সেনার মাঝে বড় বড় যুদ্ধ হতে লাগল, যা গ্রিস বা ইতালীয় উপদ্বীপে কল্পনাতীত ছিল। এসব যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা নিহত হতে লাগলেন।
চার বছর পর ঝৌ ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে চীন। সিমা কিয়ান বলেন, ‘চীন ঝৌকে ধ্বংস করেছিল’। চতুর্থ আলেকজান্ডারের মতো এর আগের বেশ কয়েক বছর ধরে ঝৌ রাজা একজন নামসর্বস্ব শাসক ছিলেন।
চীনে রাজাদের ক্ষমতার পরিচায়ক ‘নাইন ট্রাইপড’কে ঝৌ থেকে সরিয়ে চীনে নিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাইপড পানিতে পড়ে যায়, যা ছিল একটি অশুভ লক্ষণ ও রাজাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার চিহ্ন।
২৪৭ সালে চীনের নতুন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হলেন তরুণ চেং। তার পিতা চুয়াং হিয়াং অনেক আগেই নিহত হয়েছিলেন। দুই বছর মোটামুটি নির্বিঘ্নে শাসনকার্য চালানোর পর চেং-এর বয়স হল ১৩। তাকে রাজ্যশাসনে সহায়তা করতেন সেনাপতিরা, একজন প্রভাষক, একজন বিচারপতি ও একাধিক সেনাপ্রধান।
তবে অন্য অনেক রাজার মতো দুর্ভাগ্যবান ছিলেন না চেং। তার উপদেষ্টারা সৎ ছিল। তারা চিনকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসন থেকে সুরক্ষিত রেখেছিল।
২২ বছর বয়সে চিন দেশের পূর্ণ ক্ষমতা পেলেন। তার প্রথম চিন্তা ছিল পুরো চীনকে পরাভূত করা। ২৩১ সাল নাগাদ তিনি প্রাপ্তবয়স ও সক্ষম সব পুরুষকে সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করতে শুরু করেন। ইয়েন রাজ্যের রাজপুত্র চেংকে হত্যা করার জন্য আততায়ী পাঠালেন। তিনি চিনের অগ্রগতি থামানোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং পরের বছর চেং-এর বাহিনী ইয়েন রাজত্বে যেয়ে সেই রাজপুত্রকে আটক করে। পরবর্তীতে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।
চেং-এর শাসনামলের বাকি সময়টা তিনি এরকম নির্দয় কার্যক্রম চালিয়ে পার করেন। তিনি ক্ষমতা শিখরে পৌঁছে যান। তার হাতে ছিল নজিরবিহীন ক্ষমতা, যা এর আগে চীনের কোনো রাজার হাতে ছিল না।
২২৫ থেকে ২২১ সালের মাঝে একের পর এক রাজ্য অধিগ্রহণ করেন চীন ওয়েই, চু ও সবার শেষে কি। পিতার মৃত্যুর ২৫ বছর পর চেং সমগ্র চীনের অধিকর্তা হলেন। সিমা কিয়ান বলেন, ‘অভিষিক্ত হওয়ার ২৬ বছর পর চীনের রাজা চেং প্রথমবারের মতো সমগ্র বিশ্বকে (চীন) একীভূত করতে সক্ষম হন।’
চেং ততদিন রাজা থেকেও বেশি কিছু—তিনি এক সম্রাট। নিজের নাম বদলে রাখলেন শি হুয়াং তি বা ‘প্রথম সম্রাট’। এইদিন থেকেই আমরা বলতে পারি, চায়না বা চীনের জন্ম হল। স্পষ্টতই নামটি চি’ইন বা চীন থেকে এসেছে।
অন্য অনেক রাজার মতো চেং ও এই সমগ্র রাজত্বে একটি সাধারণ নীতিমালা প্রণয়নে সমস্যার মুখে পড়লেন। শি হুয়াং তি চাইলেও নতুন করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করতে পারতেন না—তাকে বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যমান নীতিমালা, ঐতিহ্য, আমলাতান্ত্রিক খুঁটিনাটিকে আমলে নিয়েই একটি সমন্বিত শাসনব্যবস্থা চালু করতে হয়েছিল।
তবে এ-কাজে অপরিসীম পারদর্শিতা দেখান শি হুয়াং তি। তিনি তার সাম্রাজ্যকে ৩৬টি জোনে (প্রশাসনিক অঞ্চল) বিভক্ত করলেন। প্রতিটি জোনকে একজোড়া জিয়ানে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের মতো) বিভক্ত করলেন। প্রতিটি জোন শাসনের দায়িত্ব চাপল একজন সামরিক কমান্ডার ও একজন বেসামরিক প্রশাসকের ওপর। অপর এক সরকারি পরিদর্শক (প্রকৃতপক্ষে একজন গুপ্তচর) এই দুইজনের ওপর নজর দেখতেন।
নাগরিক সুশাসন কায়েমের উদ্দেশ্যে কর্মকর্তাদের কোনো আত্মীয়স্বজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতো না। প্রথম সম্রাট তার সন্তানদেরও কোনো সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে দেননি। ফলে সেই পুরনো মতবাদ আবার ফিরে আসে : ‘দেশের ভবিষ্যতের জন্য বংশপরিক্রমার শাসনব্যবস্থা ভালো নয়।’ তিনি প্রতিটি রাজ্যের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রাজধানী শহরে নিয়ে এলেন এবং তাদের জন্য নতুন বাড়িঘর ও আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করলেন। এসব কর্মকর্তা- কর্মচারীরা সম্রাটের কঠোর নজরদারিতে থাকলেও খুবই আরামদায়ক জীবনযাপন করতে লাগলেন।
৭২.১ চি’ইন থেকে চীন
বিচ্ছিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে প্রাচীন চি’ইন রাজ্য আজকের চীন হওয়ার দিকে আগাতে লাগল।
শি হুয়াং তি নতুন সাম্রাজ্যকে সুসংহত করতে এক অদ্ভুত উদ্যোগ নিলেন। চি’ইন ছাড়া অন্য সব পুরনো রাজা ও রাজত্বের সবধরনের লিপিবদ্ধ ইতিহাস, আইন-কানুন ও নীতিমালা ধ্বংসের আদেশ দিলেন তিনি। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হলেও নতুন সম্রাটের জন্য এটা খুবই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি চেয়েছিলেন ‘কেউ যাতে অতীতের উদাহরণ দিয়ে’ নতুনের বিরোধিতা করতে না পারে। শি হুয়াং তি আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন দ্বিধাবিভক্ত প্রাক্তন চীনের ইতিহাস মুছে সমন্বিত নতুন চীনের ইতিহাস রচনা করতে।
এই পদক্ষেপের ভৌত উদাহরণ হল ‘চীনের প্রাচীর’ নির্মাণ। আদতে এটা নতুন কোনো উদ্যোগ ছিল না। যুগ যুগ ধরে চীনের বিভিন্ন রাজা (বা ডিউক) তাদের রাজত্বকে সুরক্ষিত রাখতে প্রাচীর নির্মাণ করিয়েছিলেন। তবে এক্ষেত্রে চীনের প্রথম সম্রাট অনন্য, কারণ তার সিদ্ধান্ত ছিল ছোট ছোট এসব প্রাচীরকে একত্রিত করে একটি সুবিশাল প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। তিনি এই প্রকল্পের দায়িত্ব দিলেন জেনারেল মেং তিয়েন নামে এক কর্মকর্তাকে।
পশ্চিমের বিভিন্ন রাজ্যের রাজারা বড় বড় প্রাচীর নির্মাণ করিয়েছেন, কিন্তু শি হুয়াং তি’র আগে কেউ পুরো দেশজুড়ে প্রাচীর নির্মাণ করার চেষ্টা চালাননি।
এই প্রাচীর নির্মাণে হাজারো চৈনিক নাগরিক প্রাণ দেন। দেয়ালগুলো নির্মাণে সবধরনের উপকরণের ব্যবহার দেখা যায়, যার মধ্যে ছিল পাথর, মাটি, বালু, নুড়িপাথর ইত্যাদি। নির্মাণশ্রমিকদের মধ্যে ছিল দরিদ্ররা, যুদ্ধের সময় আটক সেনা ও বেসামরিক মানুষ, চাষি ও সেনাবাহিনীর তালিকাভুক্ত কর্মীরা।
নিজের জীবদ্দশায় শি হুয়াং তি চীনের অপর বড় ও স্থায়ী প্রভাব রেখে গেছেন। পরকালেও তিনি একই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এমন এক সমাধি নির্মাণ করেন, যা মিশরের ফারাওদের পর আর কেউ চেষ্টা করেনি। সিমা কিয়ান এর বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোর পর এর নির্মাণকাজ শুরু করেন শি হুয়াং তি। ৭০০ জনেরও বেশি কয়েদিকে শ্রমিক হিসাবে সেখানে পাঠানো হয়। তারা খননকাজ চালিয়ে তিনটি ঝর্না তৈরি করেন। সেখানে তরল ব্রোঞ্জ ঢালা হয়। এর মাধ্যমে সারকোফ্যাগাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এরপর তিনি সেখানে এমনভাবে কিছু স্বয়ংক্রিয় ধনুক বসান যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢোকার চেষ্টা চালালেই তিরের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবেন। তারপর সেখানে পারদের মাধ্যমে কৃত্রিম নদী ও সমুদ্র তৈরি করা হল। ছাদে মহাজাগতিক বস্তু ও মাটিতে নানা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের চিত্ররূপ দেওয়া হল। মোমবাতিগুলো ডুগং-এর তেল দিয়ে তৈরি করা হল যাতে খুব সহজে এগুলো নিভে না যায়।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হল, তিনি তার কবরে মাটির তৈরি সৈন্য ও ঘোড়া যুক্ত করলেন, যেগুলো ‘লাইফ সাইজ’, অর্থাৎ সত্যিকারের মানুষ ও ঘোড়ার আকৃতিতে তৈরি। এরকম প্রায় সাত হাজার সেনা সেখানে রাখা হল। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল সত্যিকারের ব্রোঞ্জ -নির্মিত অস্ত্র এবং এই মূর্তিগুলো আসল মানুষের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। সাত হাজার সেনার (মাটির তৈরি হলেও) প্রত্যেকের চেহারা ভিন্ন ছিল।
মিশরের শেষ ফেরাউন/ফারাওদের মতো, চীনের প্রথম সম্রাটও বাধ্য হয়েছিলেন একই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও বিভাজিত দেশকে একীভূত করতে। তাদের মতোই, তাকেও প্রতিযোগিতামূলক রাজত্বের কাছ থেকে আনুগত্য আদায় করে নিতে হয়েছিল। কিন্তু ফারাওদের মতো জ্যান্ত মানুষকে কবরে ঠেলে দেওয়ার মতো প্রতাপ-প্রতিপত্তি ছিল না চীনের সম্রাটের কাছে। ফলে সেই অভাব তাকে মাটির তৈরি সেনা দিয়ে মেটাতে হল।
শি হুয়াং তি ৩৭ বছর চীনের রাজা ও ১১ বছর সম্রাট হিসাবে জীবন অতিবাহিত করার পর ২১০ সালে নিহত হন। তাকে খুবই যত্নের সঙ্গে তার নিজের বানানো সমাধিতে কবর দেওয়া হল। এর ওপর মাটি ফেলে এবং গাছ লাগিয়ে এর অবস্থান চিরতরে গোপন রাখার চেষ্টা চালানো হল। যেসব স্থপতি এই নির্মাণকাজে সহায়তা করেছিলেন, তাদেরকেও হত্যা করা হল যাতে তারা এই তথ্য ফাঁস না করেন।
তবে তার রাজবংশ খুব বেশিদিন টেকেনি। তার উত্তরাধিকারী ছিলেন ২১ বছর বয়সি পুত্র সন্তান হু-হাই। দ্বিতীয় সম্রাট ক্ষমতায় আরোহণ করলেও স্বস্তিতে ছিলেন না। তার অধীনে এত বেশি ছোট ছোট রাজ্য ছিল যে সবার কাছ থেকে আনুগত্য আদায় করা সহজ ছিল না।
তিনি তার উপদেষ্টাদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘সবাই আমার কর্তৃত্ব মেনে নিচ্ছে না। কর্মকর্তারা এখনও নিজ ক্ষমতায় বলীয়ান এবং অভিজাতরা নিঃসন্দেহে আমার বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
দ্বিতীয় সম্রাটের উপদেষ্টারা তাকে বললেন পেশিশক্তির প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেসব জুন কমান্ডার ও সাবেক কর্মকর্তারা তার কথা শুনবেন না বা তার কর্তৃত্ব মেনে নিতে চাইবেন না, তাদেরকে হত্যা করতে হবে। সম্রাট এই কৌশল মেনে নিলেন। যাকেই সন্দেহ হল, তাকেই ফাঁসি দিতে লাগলেন তিনি। ফলে খুব অল্প সময়ের মাঝে অসংখ্য পুরুষ ও নারী প্রাণ হারালেন। দেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়ল। প্রমাদ গুনলেন সম্রাট। নিজের নিরাপত্তায় রাজধানীর আশেপাশে ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করলেন তিনি।
৭ মাস পরেই সাবেক চু রাজত্বে মোতায়েন করা সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করে বসল। এই বিদ্রোহ এক জুন থেকে আরেক জুনে ছড়িয়ে পড়ল। দ্বিতীয় সম্রাটের বাহিনী এই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হল। পুরনো অভিজাত পরিবারগুলোর পুনর্জাগরণ হল। শুরুতে এক ব্যক্তি নিজেকে চাও-র রাজা হিসেবে ঘোষণা করলেন। এরপর একে একে ওয়েই ও কি রাজত্বেও নতুন রাজার আবির্ভাব হল।
এরপর তিনবছর টানা গৃহযুদ্ধ চলল। দ্বিতীয় সম্রাট আরও অনেক বেশি বুনো ও খ্যাপাটে আচরণ করতে লাগলেন। এক চ্যান্সেলর প্রাণ হারানোর ভয়ে রাজসভায় যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। তিনি অসুস্থতার ভান করে বাসায় বসে থাকতে লাগলেন। সেখানেই তিনি রাজপ্রাসাদে ক্যুর পরিকল্পনা আঁটলেন। সম্রাটের জামাতাকে সঙ্গে নিয়ে এই পরিকল্পনার মূল বিষয়টি ছিল দ্বিতীয় সম্রাটের অপসারণ ও তার ভাইপোকে ক্ষমতায় বসানো।
তবে পরবর্তী ঘটনা থেকে যা জানা যায়, তা হল, চ্যান্সেলর চেয়েছিলেন তার পছন্দের মানুষকে সিংহাসনে বসাবেন। সম্রাটের জামাতা ইয়েন লো-কে বাধ্য করলেন রাজপ্রাসাদে ক্যুর নেতৃত্ব দিতে। এ কাজের জন্য তাকে ইয়েন লো’র মাকে জিম্মি করে রাখার প্রয়োজন পড়ল। অপরদিকে চ্যান্সেলর রাজার প্রতি বিশ্বস্ততার নাটক চালিয়ে গেলেন।
এই পরিস্থিতিতে ইয়েন লো একদল সেনা নিয়ে রাজার দরবারকক্ষে ঢুকে পড়লেন। তিনি সম্রাটের মাথার ওপর থাকা পর্দায় তির ছুড়ে তার মনোযোগ কেড়ে নিলেন।
দ্বিতীয় সম্রাটের দেহরক্ষীরা ততক্ষণে পগার পার। তিনি চ্যান্সেলরের সঙ্গে দেখা করার দাবি জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করল ইয়েন লো।
তারপর সম্রাট ইয়েন লো’র সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করলেন। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে একটি জুনের কমান্ডার অথবা একটি সামান্য সামরিক কমান্ড পাওয়ার দাবি করলেন। এমনকি, সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবনযাপনেরও প্রস্তাব দিলেন।
ইয়েন লো এতে রাজি হলেন না। জানালেন, চ্যান্সেলর ইতোমধ্যে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। অল্প সময়ের মাঝে বিদ্রোহী সেনারা এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু তার আগেই আত্মহত্যা করলেন দ্বিতীয় সম্রাট।
এরপর দৃশ্যপটে আবারও আসলেন চ্যান্সেলর। ইয়েন লো নয়, বরং প্রয়াত সম্রাটের ভাইপো জু ইং এর অভিষেক হল। নতুন সম্রাট চ্যান্সেলরের ওপর বিশ্বাস রাখেননি। খুব শিগগির নিজহাতে তাকে হত্যা করলেন জু ইং।
জু ইং মোট ৪৬ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর চু জেনারেল হিয়াং ইউ এক মিত্রবাহিনী নিয়ে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন। তিনি তৃতীয় সম্রাট, তার সভাসদ ও চি’ইন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হত্যা করলেন। রাজপ্রাসাদ জ্বালিয়ে দেওয়া হল এবং কোষাগারের সব সম্পদ তিনি তার মিত্রদের মাঝে বণ্টন করলেন। তিন সেনা কর্মকর্তা চীনের তিন অংশের অধিপতি হলেন। এই নতুন তিন রাজত্বে তারা নিজেদের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
পাঁচ বছর আবারও চীনে প্রাচীন আমলের মতো গোলযোগ চলতে লাগল। এরপর লিউ প্যাং নামে নতুন এক নেতার আবির্ভাব হল। তিনি কৃষক-পরিবারের সন্তান হলেও সামরিক কৌশলের শীর্ষে পৌঁছালেন।
২০২ সাল নাগাদ চীনের পুরনো সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিলেন লিউ প্যাং। তার একমাত্র শত্রু ছিল হিয়াং ইউ। তবে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না। চি’ইনদের সব সভাসদকে হত্যার জন্য জাতি তাকে ক্ষমা করেনি।
শেষ যুদ্ধে তিনি সমর্থনের অভাবে পরাজিত হলেন। শত্রুর হাতে মারা পড়ার আগে আত্মহত্যা করলেন তিনি।
এবার লিউ প্যাং হলেন অবিভক্ত চীনের নতুন সম্রাট। তিনি নিজেকে ‘গাও জু’ নামকরণ করলেন এবং তার রাজত্বের নাম দিলেন ‘হান’। রাজধানীর নাম দিলেন চ্যাং’অ্যান। এই হান রাজবংশ প্রায় ৪০০ বছর অবিভক্ত চীন শাসন করে।