৫১.
পরেরদিন মধ্যসকালের আগে তারা আর শহরে আসতে পারল না। ট্যুরিস্ট সেন্টারে এখন প্রচণ্ড ভিড়। তবে তারা একটা রেফারেন্স লাইব্রেরির ঠিকানা যোগাড় করতে পারল, সেখানে গিয়ে স্থানীয় ডাটা-গ্যাদারিং কম্পিউটার চালানো শিখল।
সতর্কতার সাথে দুজন জাদুঘর এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরছে, শুরু করেছে সবচেয়ে কাছেরগুলো দিয়ে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে এনথ্রপলজিস্ট, আর্কিওলজিস্ট, বা প্রাচীন ইতিহাসে বিশেষজ্ঞদের ব্যাপারে কিছু পাওয়া যায় কি না।
আহ্! পেলোরেট বলল।
আহ্? ট্র্যাভিজ একটু কঠিন সুরে বলল। আহ্ কি?
এই নামটা, কুইনটেসেটজ। পরিচিত মনে হচ্ছে।
তুমি চেন?
অবশ্যই না, তবে হয়তো তার লেখা পড়েছি। জাহাজে ফিরে হয়তো
এখন ফিরছিনা, জেনভ। নামটা পরিচিত মনে হলে এটাই হবে স্টার্টিং পয়েন্ট। সে আমাদের সাহায্য না করতে পারলেও পথ বাৎলে দিতে পারবে। ট্র্যাভিজ উঠে দাঁড়ালো। চল সেশেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথটা জেনে নেই। যেহেতু লাঞ্চ টাইম আগে খাওয়ার কাজটা সেরে নিতে হবে।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলো দুপুরের পরে। জটিল গোলকধাঁধা পেরিয়ে এন্টিরুমে বসে থাকা তরুণীকে তাদের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে এখন অপেক্ষা করছে।
ভাবছি, পেলোরেট অস্বস্তির সাথে বলল, কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ছুটির সময় হয়ে গেছে।
যেন পেলোরেটকে দুঃশ্চিন্তামুক্ত করার জন্যই আধঘণ্টা আগে দেখা মেয়েটিকে তাদের দিকে দ্রুতপায়ে আসতে দেখা গেল। পায়ের জুতোর রং লাল এবং বাদামী, হাঁটার সময় মাটিতে আঘাত লেগে বিভিন্ন মাত্রার তীক্ষ্ণ সুর বাজছে।
সংকুচিত হয়ে গেল পেলোরেট। তার ধারণা ছিল মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য প্রত্যেক গ্রহের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে, যেমন প্রত্যেকটারই নিজস্ব গন্ধ আছে। গন্ধটা সহ্য হয়ে গেছে দেখে সে অবাক। আশা করছে আধুনিক তরুণীদের বেসুরো শব্দগুলোও সে মেনে নিতে শিখবে।
মেয়েটা পেলোরেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। আপনার পুরো নাম, প্রফেসর?
জেনভ পেলোরেট, মিস।
কোনো গ্রহ থেকে এসেছেন?
ট্র্যাভিজ হাত তুলে চুপ করতে বলল, কিন্তু পেলোরেট সেটা হয়তো দেখল না বা পাত্তা দিল না। বলল, টার্মিনাস।
দুকানে গিয়ে ঠেকল তরুণীর হাসি। প্রফেসর কুইনটেসেটজকে যখন বলেছিলাম প্রফেসর পেলোরেট নামে একজন আপনার সাথে দেখা করতে চায়, তিনি বলেছিলেন এই লোক যদি টার্মিনাসের প্রফেসর পেলোরেট হয় তাহলেই দেখা করব নইলে করব না।
পেলোরেটের মুখের রং দ্রুত কয়েকবার বদল হলো। তুমি বলছ, তিনি আমাকে চেনেন?
তাইতো মনে হচ্ছে।
ট্র্যাভিজের দিকে ঘুরে পেলোরেট বোকার মতো হাসল। আমাকে চেনে। ভাবতেই পারছি না–আসলে আমি মাত্র কয়েকটা আর্টিকেল লিখেছি, ভাবিনি কেউ- সে মাথা নাড়ল। সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।
ট্র্যাভিজ একটু হেসে বলল, নিজেকে অখ্যাত প্রমাণ করা বাদ দিয়ে চল এগুনো যাক। তারপর তরুণীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তার কাছে পৌঁছানোর জন্য নিশ্চয়ই কোনো বাহনের ব্যবস্থা আছে?
হাঁটা দূরত্ব। বিল্ডিং এর বাইরে যেতে হবে না। দুজনেই কি টার্মিনাস থেকে এসেছেন? বলেই তরুণী হাঁটা শুরু করল।
পুরুষ দুজন তাকে অনুসরণ করছে। ট্র্যাভিজ বিরক্ত হয়ে বলল, হ্যাঁ, কোনো সমস্যা?
আরে না, কোনো সমস্যা নেই। সেশেলের অনেকেই ফাউণ্ডেশনারদের পছন্দ করেনা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অনেক বেশি আধুনিক। আমি প্রায়ই বলি, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও। অর্থাৎ ফাউণ্ডেশনাররাও তো মানুষ। কি বলছি বুঝতে পারছেন?
বুঝতে পারছি। আমাদের এখানেও অনেকেই বলে সেশেলিয়ানরাও মানুষ।
সেরকমই হওয়া উচিত। আমি কখনো টার্মিনাসে যাইনি। নিশ্চয়ই অনেক বড় শহর?
আসলে না, ট্র্যাভিজ নিরাসক্ত গলায় বলল। আমার মনে হয় সেশেল শহরের চেয়েও ছোট।
আপনি ঠাট্টা করছেন। এটা ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের রাজধানী তাই না? আরেকটা টার্মিনাস নিশ্চয়ই নেই?
না, যতদূর জানি, টার্মিনাস একটাই, সেখান থেকেই আমরা এসেছি–ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের রাজধানী।
নিশ্চয়ই সেটা একটা বিশাল শহর।–আর আপনারা এতদূর এসেছেন প্রফেসরের সাথে দেখা করতে। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। গ্যালাক্সির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করি আমরা তাকে।
সত্যিই? ট্র্যাভিজ বলল। কিসের জন্য?
আপনি সত্যিই রসিক। তিনি প্রাচীন ইতিহাস খুব ভালো জানেন। আমি আমি যতটুকু আমার পরিবারকে জানি, তার চেয়েও বেশি জানেন।
মেয়েটা খুব সহজেই তাকে ফাজিল হিসেবে ধরে নিয়েছে। ট্র্যাভিজ হাসল, প্রফেসর নিশ্চয়ই পৃথিবীর ব্যাপারে সব জানেন?
পৃথিবী? একটা অফিসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে শূন্য দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালো।
সেই গ্রহ যেখান থেকে মানব জাতি যাত্রা শুরু করেছিল।
ও, আপনি প্রথম গ্রহের কথা বলছেন। মনে হয়। মনে হয় তিনি এ ব্যাপারে সব জানেন। কারণ, গ্রহটা সেশেল সেক্টরে অবস্থিত। সবাই জানে!–এটাই তার অফিস। আমি খবর দিচ্ছি।
না, একমিনিট দাঁড়ান, ট্র্যাভিজ বাধা দিল। আমাকে পৃথিবীর কথা বলুন।
আসলে আমি এটাকে কখনো পৃথিবী নামে ডাকতে শুনিনি। বোধহয় ফাউণ্ডেশনের তৈরি শব্দ। এখানে আমরা এটাকে বলি গায়া।
ট্র্যাভিজ দ্রুত আড়চোখে একবার পেলোরেটের দিকে চাইল। আচ্ছা? সেটার অবস্থান?
কোথাও না। হাইপারস্পেসে হারিয়ে গেছে, কেউ সেখানে যেতে পারে না। ছোটবেলায় দাদীর কাছে শুনেছি, গায়া একসময় সত্যিকার মহাকাশে ছিল, কিন্তু রাগে অভিমানে
মানুষের অন্যায়, অবিচার, বোকামী দেখে, পেলোরেট ফিসফিস করে বলল, সে মহাকাশ থেকে চলে যায় এবং মানুষ হিসেবে যে সন্তানদের সে গ্যালাক্সিতে পাঠিয়েছিল তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে।
আপনি গল্পটা জানেন?–আমার বান্ধবী বলেছিল এগুলো সব কুসংস্কার। এখন তাকে বলতে পারব। ফাউণ্ডেশনের একজন প্রফেসর।
দরজার উপরে ঝাপসা কাঁচে কর্কশ সেশেলিয়ান বর্ণমালায় লেখা রয়েছে: স্টয়্যান কুনটেসেটজ, এ,বি,টি, তার নিচে লেখা প্রাচীন ইতিহাস বিভাগ।
মেয়েটা একটা ধাতব চাকতির উপর আঙ্গুল রাখল। কোনো শব্দ হলোনা, কিন্তু কাঁচের ঝাপসা ভাব কেটে গিয়ে দুধ সাদা রং ধারণ করল। অন্যমনস্ক গলায় কেউ বলল, দয়া করে পরিচয় দিন।
জেনভ পেলোরেট, টার্মিনাস থেকে, পেলোরেট বলল, সাথে রয়েছে একই গ্রহের গোলান ট্র্যাভিজ। সাথে সাথে দরজা খুলে গেল।
.
৫২.
মধ্যবয়সী মানুষ। গায়ের চামড়া হালকা বাদামী। মরিচা রঙের কোঁকড়ানো চুল। ডেস্ক ঘুরে তাদের দিকে এগিয়ে এল। এক হাত বাড়িয়ে বলল, আমি এস, কিউ। আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে খুশী হলাম, প্রফেসর বৃন্দ।
আমার কোনো একাডেমিক টাইটেল নেই, ট্র্যাভিজ বলল। প্রফেসর পেলোরেটের সঙ্গী মাত্র। শুধু ট্র্যাভিজ ডাকলেই চলবে, প্রফেসর এবিটি।
কুইনটেসেটজ বিব্রত হয়ে একটা হাত তুলল। না, না। এবিটি শুধু একটা উপাধি, সেশেলের বাইরে এর কোনো গুরুত্ব নেই। শুধু এস. কিউ বলে ডাকবেন। সেশেলে আমরা সামাজিক যোগাযোগের জন্য শুধু নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করি। দুজনের সাথে পরিচিত হয়ে খুশী হয়েছি, যদিও একজনকে আশা করেছিলাম।
একটু দ্বিধা করে ট্রাউজারে ডান হাত মুছে সে বাড়িয়ে দিল। ট্র্যাভিজ সেটা ধরে ভাবছে সেশেলিয়ানদের অভ্যর্থনার রীতিটা বড় অদ্ভুত।
বসুন, কুইনটেসেটজ বলল। আমার চেয়ারগুলো প্রাণহীন, আঁকড়ে ধরবে না, কারণ চাইনা কোনো চেয়ার আমাকে জড়িয়ে ধরুক।
ট্র্যাভিজ হাসল। কে চায় বলুন? আপনার এস. কিউ, মনে হচ্ছে সীমান্তবর্তী কোনো গ্রহের নাম। সেশেলিয়ান মনে হচ্ছে না? মাফ চাইছি, অবান্তর প্রশ্ন করে ফেললাম।
কিছু মনে করিনি। ঠিকই ধরেছেন। পাঁচ প্রজন্ম আগে আমার পূর্বপুরুষরা ছিলেন এসকন-এর বাসিন্দা। ফাউণ্ডেশন-এর সীমানা বাড়ানোর সময় তারা সেখান থেকে চলে আসেন।
পেলোরেট বলল, ফাউণ্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমা চাইছি।
আন্তরিকভাবে হাত নাড়ল কুইনটেসেটজ। পাঁচ পুরুষ আগে কি ঘটেছে সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আপনারা কিছু খাবেন? পান করবেন? কোনো মিউজিক শুনবেন?
যদি কিছু মনে না করেন, পেলোরেট বলল, সরাসরি কাজের কথায় আসা যাক, অবশ্য সেশেলিয়ান রীতিনীতি যদি বাধা না দেয়।
কোনো ব্যাপার না। আসলে কতখানি খুশী হয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না, ড. পেলোরেট। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আর্কিওলজিকেল রিভিওতে আপনার অরিজিন মিথ নিয়ে লেখা আর্টিক্যাল পড়লাম। সংক্ষেপে চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
পেলোরেট লজ্জা পেল। আপনি পড়েছেন সেজন্য আমি খুব আনন্দিত। সংক্ষেপ করতে হয়েছে কারণ রিভিও পুরোটা ছাপতে চায়নি।
লেখাটা পড়েই আপনার সাথে দেখা করার জন্য আমি অস্থির হয়ে পড়ি। এমনকি টার্মিনাসে যাওয়ারও চিন্তাভাবনা শুরু করি, অবশ্য সেটা সহজে হতো না।
কেন? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
আসলে, ফাউণ্ডেশন টেরিটোরিতে যোগ দেয়ার কোনো ইচ্ছা সেশেল-এর নেই এবং তাদের সাথে যে কোন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ নিরুৎসাহিত করা হয়। আমরা নিরপেক্ষ থাকতেই পছন্দ করি। এমনকি মিউলও আমাদের ঘাটায়নি। সে কারণেই ফাউণ্ডেশন টেরিটোরী–বিশেষ করে টার্মিনাস–ভ্রমণের যে কোনো আবেদন সন্দেহের চোখে দেখা হয়। গবেষক হিসেবে আমি হয়তো শেষ পর্যন্ত অনুমতি পেতাম কিন্তু এখন আর প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই চলে এসেছেন। খুব অবাক হয়েছি। আমি যেমন পড়েছি, আপনিও কি আমার কোনো লেখা পড়েছেন?
আমি আপনার লেখা পড়েছি। আপনার কাজের ব্যাপারে জানি এস. কিউ। সেজন্যই এসেছি। আমি আসলে দুটো ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি, পৃথিবী–মানবজাতির সর্বস্বীকৃত মূল গ্রহ এবং গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপনের প্রথম যুগ। আর নির্দিষ্ট করে এখানেই এসেছি সেশেল গ্রহে কিভাবে বসতি স্থাপন শুরু হয়, সেটা জানতে।
আর্টিক্যাল পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনি বিশেষ করে পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তীর ব্যাপারে আগ্রহী।
তার চেয়েও বেশি আগ্রহী ইতিহাস–সত্য ঘটনা-যদি থাকে, সেগুলো নিয়ে। অন্যথায় পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তী হলেও চলবে।
কুইনটেসেটজ ছোট অফিস ঘরে পায়চারী শুরু করল। থামছে, পেলোরেটের দিকে তাকাচ্ছে, আবার পায়চারী করছে।
তো, স্যার। অধৈর্য গলায় বলল ট্র্যাভিজ।
অদ্ভুত! সত্যিই অদ্ভুত। মাত্র গতকালকেই
গতকালকে কি? পেলোরেট জিজ্ঞেস করল।
আমি বলেছি, ড. পেলোরেট–আপনাকে জে.পি.বলতে পারি? পুরো নাম ডাকার অভ্যাস নেই।
নিশ্চয়ই।
আমি বলেছি জে.পি. আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কারণ গ্রহগুলোতে বসতি স্থাপন নিয়ে কিংবদন্তীর এক বিশাল সংগ্রহ রয়েছে আপনার, অথচ আমাদের গ্রহেরটা নেই। সেটাই আপনাকে দেখাতে চেয়েছিলাম।
এর সাথে গতকালকের সম্পর্ক কি, এস. কিউ? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
আমাদের একটা কিংবদন্তী আছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের সমাজের সবচেয়ে পবিত্র বিষয় মনে করা হয়।
পবিত্র? ট্র্যাভিজ বলল।
আমি ধাঁধা বা এই ধরনের কোনো কিছুর কথা বলছিনা। গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এরকমই একটা অর্থ হয়। কিন্তু এখানে শব্দটার একটা বিশেষ অর্থ রয়েছে। এর অর্থ অত্যন্ত গোপন, এই গোপন যে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই এর পূর্ণ অর্থ জানে; এতই গোপন যে বাইরের কাউকে সেটা বলা যাবে না। এবং গতকালকেই ছিল সেই দিন।
কিসের দিন, এস. কিউ.?
গতকাল ছিল ডে অফ ফ্লাইট।
আচ্ছা, মেডিটেশনের দিন। লোকজন চুপচাপ ঘরে বসে থাকবে।
সেরকমই, বড় শহরগুলো বাদ দিয়ে। গ্রাম্য এলাকায় কিছু উৎসব পালন করা হয়। কিন্তু আপনারা ব্যাপারটা জানেন দেখছি।
ট্র্যাভিজের বিরক্ত ভাব দেখে পেলোরেট এতক্ষণ অস্বস্তি বোধ করছিল। এবার দ্রুত বাধা দিল। গতকাল এখানে এসে কিছু কিছু শুনেছি।
সারাদিনই শুনেছি, মুখ বাঁকা করে বলল ট্র্যাভিজ। শুনুন এস. কিউ, আমি পণ্ডিত লোক না, কিন্তু একটা প্রশ্ন করছি। আপনি একটা পবিত্র ব্যাপারের কথা বলছেন, যা বাইরের কারো কাছে বলা যাবে না। তাহলে আমাদের বলছেন কেন? আমরা তো বাইরের লোক।
ঠিক, কিন্তু আমার কোনো কুসংস্কার নেই। জে. পির লেখা আমার দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসকে আরো মজবুত করেছে। পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তী এমনিই তৈরি হয়না। সময়ের সাথে যতই বিকৃত হোক, তার পেছনে কিছু না কিছু থাকেই। আর ডে অফ ফ্লাইটের পিছনে যে সত্যটা আছে, সেটা নিয়েই আমার আগ্রহ।
সেটা নিয়ে কথা বলা নিরাপদ? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
কুইনটেসেটজ কাঁধ ঝাঁকালো। পুরোপুরি নিরাপদ না। সমাজের রক্ষণশীলরা আঁতকে উঠবে। তাদের হাতে অবশ্য কোনো ক্ষমতা নেই। তাছাড়া আমি প্রাচীন ইতিহাস গবেষণার প্রয়োজনেই এত কথা বলছি। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় বিজ্ঞানীদের সমিতি আমার পেছনে দাঁড়াবে।
সে ক্ষেত্রে, পেলোরেট বলল, আপনাদের গোপন বিষয়টা আমাদের জানাবেন, এস. কিউ?
হা, কিন্তু তার আগে নিশ্চিত হতে হবে কেউ আমাদের বিরক্ত করবে না। টেবিলের উপর একটা যন্ত্র বন্ধ করল সে। এখন আর কেউ যোগাযোগ করতে পারবে না।
এখানে কোনো ছাড়পোকা নেই তো? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
ছাড়পোকা?
একটা যন্ত্র। যা দিয়ে দূরে বসেই কেউ আমাদের দেখতে পারবে, কথা শুনতে পারবে বা দুটোই করতে পারবে।
সেশেলে এমন কিছু ঘটে না। কুইনটেসেটজ বলল আহত স্বরে।
ট্র্যাভিজ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আপনি যা বলেন।
বলে যান, এস. কিউ। পেলোরেট বলল।
কুইনটেসেটজ হাঁটু ভাঁজ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। হাতের আঙ্গুলের মাথাগুলো এক করে চিন্তা করছে কি বলবে। তারপর জিজ্ঞেস করল, রোবট কি, আপনি জানেন?
রোবট? পেলোলারেট বলল, না। ট্র্যাভিজও মাথা নেড়ে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করল।
কম্পিউটার কি সেটাতো জানেন?
নিশ্চয়ই, ট্র্যাভিজ অধৈর্য স্বরে বলল।
বেশ, একটা মোবাইল কম্পিউটারাইজড যন্ত্র
যন্ত্র তো যন্ত্রই। ট্র্যাভিজ এখনো অধৈর্য। বিভিন্ন ধরনের হয় এবং এগুলোর অন্য কোনো নাম আছে কিনা আমি জানি না।
যেগুলো দেখতে ঠিক মানুষের মতো সেগুলোই হচ্ছে রোবট। কুইনটেসেটজ একই সুরে তার কথা শেষ করল। যন্ত্রের সাথে পার্থক্য হচ্ছে রোবট দেখতে ঠিক মানুষের মতো।
কেন মানুষের মতো? পেলোরেট নিখাদ বিস্ময়ে প্রশ্ন করল।
জানি না। খুব একটা কার্যকরী কিছু ছিলনা, নিশ্চয়ই। রোবট অজানা কোনো ভাষার খুব প্রাচীন একটা শব্দ, আমাদের বিজ্ঞানীদের মতে কাজ শব্দটার সাথে এর একটা যোগসূত্র রয়েছে।
আমি এমন কোনো শব্দ কখনো শুনিনি, ট্র্যাভিজ বলল সন্দেহের গলায়, যা শুনতে প্রায় রোবট এর মতো এবং কাজ এর সাথে কোনো সম্পর্ক আছে।
পেলোরেট বলল, হয়তো বিপরীত কোনো শব্দ। যন্ত্রগুলো সম্ভবত বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হতো, তাই কাজ শব্দের পরিবর্তে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।–যাই হোক, আমাদেরকে এগুলো বলছেন কেন?
কারণ, যখন পৃথিবী ছিল একক গ্রহ, গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপন শুরু করারও আগে, ঠিক সেই সময় রোবট আবিষ্কার হয়। তারপর মানবজাতি বিভক্ত হলো দুইভাগে স্বাভাবিক, কৃত্রিম, জৈবিক, যান্ত্রিক, জটিল, সরল-
একটু দম নিয়ে কুইনটেসেটজ আবার শুরু করল, দুঃখিত। বুক অফ ফ্লাইট থেকে উদ্ধৃতি না দিয়ে রোবট এর ব্যাপার ব্যাখ্য করা সম্ভব নয়। সোজা কথা হচ্ছে। পৃথিবীর মানুষ রোবট তৈরি করল।
কেন তৈরি করেছিল? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
এতদিন পর কে বলতে পারে। হয়তো মানুষের সংখ্যা কম ছিল বলে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপনের মতো বিশাল কাজটা সম্পন্ন করার জন্য।
এই কথার পিছনে যুক্তি আছে। গ্যালাক্সিতে কলোনী স্থাপন করার পরপরই রোবটের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল। এজন্যই এখন আর হিউম্যানয়েড যন্ত্র দেখা যায় না।
সে যাই হোক, সহজ সরল ভাষায় আমি আপনাদের গল্পটা বলছি। পৃথিবীর চারপাশে প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোকে প্রদক্ষিণরত বিভিন্ন গ্রহে মানুষ কলোনী গড়ে তুলল। নতুন কলোনীগুলোর হাতে পৃথিবীর চেয়ে বেশি রোবট ছিল। অন্যদিকে পৃথিবী রোবটের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে বিদ্রোহ করল।
তারপর কি ঘটল? পেলোরেটের প্রশ্ন।
কলোনীগুলো ছিল শক্তিশালী। নিজেদের রোবটের সাহায্যে শিশু গ্রহগুলো পৃথিবী-মাদার প্ল্যানেটকে পরাজিত করল। কিন্তু কিছু লোক সক্ষম হলো পৃথিবী থেকে পালিয়ে যেতে। তাদের কাছে ছিল আরো উন্নত মহাকাশযান এবং আধুনিক হাইপারস্পেসাল ট্রাভেল। তারা যাত্রা করল আরো দূরের নক্ষত্র এবং সৌরজগতের দিকে, প্রথম যুগে স্থাপিত কলোনীগুলো থেকে সীমাহীন দূরত্বে এসে তারা তৈরি করল রোবটহীন নতুন কলোনী-যেখানে মানুষ বাস করতে পারবে ইচ্ছামতো। সেটাই হচ্ছে তথাকথিত টাইমস অফ ফ্লাইট এবং ঠিক যেদিন সেশেল সেক্টরে–মূলত সেশেল গ্রহের মাটিতে পৃথিবী থেকে আসা প্রথম মানুষ পা ফেলে, প্রতি বৎসর সেই দিনটিকেই ডে অফ ফ্লাইট হিসেবে পালন করা হয়। এই নিয়ম চলে আসছে হাজার বছর ধরে।
মাই ডিয়ার চ্যাপ, পেলোরেট বলল, আপনি বলতে চান সেশেলের গোড়াপত্তন হয়েছিল সরাসরি পৃথিবীর মানুষের দ্বারা।
কুইনটেসেটজ দ্বিধা করছি, একটু চিন্তা করে বলল, অফিসিয়ালী সেটাই বিশ্বাস করা হয়।
কিন্তু আপনি মানতে পারবে না। ভিজ বলে।
আমার মনে হয় –গ্রেট স্টারস, আমি মানি না! একেবারেই অবাস্তব। কিন্তু সরকারকে না খেপানোর জন্য মুখে স্বীকার করতেঁই হয়। জেপি, আপনার আর্টিক্যাল পড়ে মনে হয়েছে, গল্পটা আপনি জানেন না–রোবট এবং কলোনাইজেশনের দুটো স্রোত। একটা স্রোত রোবটসহ কিন্তু ছোঁট, অন্যটা রোবটবিহীন কিন্তু বিশাল।
না জানতাম না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম, সেজন্য কৃতজ্ঞ। অবাক হচ্ছি এই জিনিসগুলো কোথাও পাইনি।
বুঝতেই পারছেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কত শক্তিশালী। এটা সেশেলের গোপন ব্যাপার–পবিত্র বিষয়।
হয়তো, ট্র্যাভিজ শুকনো গলায় বলল। কিন্তু কলোনাইজেশন-এর দ্বিতীয় স্রোত-রোবটবিহীন স্রোত নিশ্চয়ই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পডুেলি। কেন এটা শুধু সেশেলেরই গোপন ব্যাপার হবে?
অন্য জায়গাতেও নিশ্চয়ই আছে, তারা গোপন রেখেছে। রক্ষণশীলদের ধারণা পৃথিবীর মানুষ প্রথম পা রাখে সেশেলে। এখান থেকেই তারা গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এটা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। পেলোরেট বলল। আমি আবার শুরুতে ফিরে যাই। যে প্রশ্নটা করব সেটার উত্তর পেলে অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে
ট্র্যাভিজ বাধা দিল। একটু জেনভ, ভালোমানুষ এস. কিউ. তার গল্প এখনো শেষ করেননি। পুরনো কলোনী এবং তাদের রোবটের কি হলো? গল্পে কিছু বলা নেই?
খুব সামান্যই। স্বভাবতই মানুষ এবং হিউম্যানয়েড বেশিদিন একসাথে টিকতে পারেনি। রোবটসহ গ্রহগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
আর পৃথিবী?
মানুষ সেই গ্রহ ত্যাগ করে এখানে বসতি স্থাপন করে এবং হয়তো (রক্ষণশীলরা বিশ্বাস করে না) অন্যান্য গ্রহে।
নিশ্চয়ই সব মানুষ পৃথিবী ত্যাগ করেনি। সেটাকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেনি।
বোধহয়, আমি জানি না।
পৃথিবী কি রেডিও এক্টিভ ছিল?
কুইনটেসেটজকে অবাক দেখালো। রেডিও এক্টিভ?
সেটাই জিজ্ঞেস করছি।
আমার জানা নেই। কখনো শুনিনি।
একটু চিন্তা করে ট্র্যাভিজ বলল এস. কিউ. আপনার সময় নষ্ট করলাম। (পেলোরেট চেষ্টা করল বাধা দেয়ার, কিন্তু ট্র্যাভিজ হাঁটুতে চাপ দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল।)।
কুইনটেসেটজ বলল, সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি।
বিনিময়ে আপনার যদি কিছু প্রয়োজন হয়, শুধু নামটা বলুন।
কুইনটেসেটজ আন্তরিকভাবে হাসল। যদি জে. পি. আজকের আলোচনা নিয়ে তার কোনো লেখায় আমার নামটা না বলেন, তাহলেই যথেষ্ট প্রতিদান দেয়া হবে।
আপনাকে পুরস্কৃত করা উচিত। যদি টার্মিনাসে আসতে পারেন তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। সেশেল হয়তো ফাউণ্ডেশনকে পছন্দ করে না, কিন্তু টার্মিনাসে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে কোনো সেমিনারে অংশগ্রহণ করার সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।
সেশেলিয়ান অর্ধেক উঠে দাঁড়ালো। আপনারা সেই ব্যবস্থা করতে পারবেন?
জে.পি. ঠিকই বলেছে। এবং আমাদের যত খুশী করবেন, চেষ্টাও হবে তত জোরালো।
ভুরু কুঁচকালো কুইনটেসেটজ। কি বলতে চান, স্যার?
গায়া সম্পর্কে আমাদের সব কিছু বলুন। ট্র্যাভিজ বলল।
কুইনটেসেটজ এর মুখের সব আলো নিভে গেল দপ্ করে।
.
৫৩.
মাথা নিচু করে বসে আছে কুইনটেসেটজ। অন্যমনস্কভাবে আঙ্গুল চালাচ্ছে ছোট করে ছাটা কোঁকড়ানো চুলে। মুখের ভাব দেখে মনে হয় প্রতিজ্ঞা করেছে কথা না বলার।
ট্র্যাভিজ ভুরু উপরে তুলে অপেক্ষা করছে। শেষ পর্যন্ত কুইনটেসেটজ চাপা গলায় বলল, দেরী হয়ে গেছে বেশ অন্ধকার।
একটু আগেও সে চমৎকার গ্যালাকটিক ভাষায় কথা বলছিল, এখন বলছে। সেশেলের অদ্ভুত ভাষায়।
অন্ধকার, এস. কিউ?
পুরোপুরি রাত হয়ে গেছে।
ট্র্যাভিজ মাথা নাড়ল। আর ভাবতে পারছি না। ক্ষিদা পেয়েছে। চলুন এস. কিউ, আমাদের সাথে খাবেন। তারপর গায়া নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
কুইনটেসেটজ দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। বাকী দুজনের থেকে সে লম্বা, কিন্তু বয়স্ক আর দুর্বল। এখন আরো দুর্বল মনে হচ্ছে। লজ্জা পেয়ে বলল, আতিথেয়তার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনারা অতিথি। আমাকে খাওয়াবেন, সেটা শোভা পায় না। আমার বাড়িতে চলুন, খুব বেশি দূরে না। বাড়িতেই আলোচনা ভালো হবে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে বেশি কিছু খাওয়াতে পারবনা। আমি আর আমার স্ত্রী নিরামিষভোজী।
আমি আর জে. পি, একটা খাবারেই তৃপ্ত থাকব। আলোচনা দিয়ে বাকীটা পুষিয়ে নেয়া যাবে-আশা করি।
আলোচনা যাই হোক, চমৎকার খাবারের প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। যদি সেশেলিয়ান মসলা আপনারা হজম করতে পারেন।
আমি আপনার চমকের জন্য অপেক্ষা করছি, এস. কিউ। ট্র্যাভিজ ঠাণ্ডা গলায় বলল।
তিনজন একসাথে হাঁটছে। করিডোরের যেন কোনো শেষ নেই। পথ দেখাচ্ছে কুইনটেসেটজ। সহকর্মীরা এবং সেশেলিয়ান ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে সম্ভাষণ জানাচ্ছে, কিন্তু সঙ্গী দুজনের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছেনা। অনেকেই অবাক হয়ে
ট্র্যাভিজের স্যাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
শেষ পর্যন্ত তারা বেরিয়ে এল খোলা জায়গায়। আসলেই রাত হয়েছে, সামান্য ঠাণ্ডাও পড়েছে। গাছপালাগুলো বেশ দূরে দূরে। ফুটপাতের দুপাশে প্রচুর ঘাস।
পেলোরেট থমকে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় ভবন থেকে ছিটকে আসা সামান্য আলো এবং ক্যাম্পাসের ফুটপাতের সারিবদ্ধ অনুজ্জ্বল শিখায় পিছন দিকটা উজ্জ্বল হয়ে আছে।
তাকিয়ে আছে সোজা উপরের দিকে।
চমৎকার! সে বলল। ফিসফিস করে এক জনপ্রিয় কবির কবিতা আওড়ালো।
ট্র্যাভিজও মুগ্ধ হয়ে গেল, তারপর নিচু স্বরে বলল, আমরা এসেছি টার্মিনাস থেকে। আমার বন্ধু এর আগে অন্য কোনো গ্রহের আকাশ দেখেনি। টার্মিনাসে আমরা শুধু গ্যালাক্সির ঝাপসা কুয়াশা এবং অল্প কয়েকটা তারা দেখতে পারি। আমাদের সাথে বাস করলে নিজেদের আকাশকে আরো বেশি করে মূল্যায়ন করতে পারতেন।
গম্ভীর গলায় কুইনটেসেটজ বলল, আমরা এটাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করি। গ্যালাক্সির এই অংশ বেশ জনবহুল, কিন্তু নক্ষত্রের বণ্টন যথাযথ। গ্যালাক্সির এমন কোনো জায়গার কথা বলতে পারবেন না যেখানে সমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের যথাযথ বণ্টন হয়েছে অথচ সংখ্যা খুব কম। এমন অনেক আকাশ দেখেছি, উল্টানো বাটির মতো, ভিতরে শয়ে শয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। এতে অন্ধকার রাতের আকাশের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
আমি একমত। ট্র্যাভিজ বলল।
প্রায় সমান উজ্জ্বল নক্ষত্র নিয়ে তৈরি সূক্ষ্ম পঞ্চভূজটা দেখেছেন। পাঁচ বোন, আমরা বলি। ওদিকে, গাছগুলোর ঠিক উপরে। দেখেছেন?
দেখেছি। বেশ আকর্ষণীয়।
হ্যাঁ। এগুলোকে প্রেমের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। প্রতিটা প্রেমপত্রই এই পঞ্চভূজের কোনো না কোনো ডট দিয়ে শেষ হয়। পাঁচটা নক্ষত্র প্রেমের বিভিন্ন পর্যায় প্রকাশ করে। এই নিয়ে প্রচুর রসালো এবং আবেগঘন কবিতা লেখা হয়েছে।
তরুণ বয়সে আমিও অনেক কবিতা লিখেছি এবং জানিনা কখন থেকে পাঁচ নক্ষত্রেরই প্রেমে পড়ে গেছি–সবার বেলায়ই তাই ঘটে অবশ্য। পাঁচ বোনের মাঝখানে অনুজ্জ্বল নক্ষত্রটা দেখেছেন?
হ্যাঁ।
ওটা, কুইনটেসেটজ বলল, ব্যর্থ প্রেমের প্রতিনিধি। প্রচলিত আছে যে এই নক্ষত্রও একসময় বাকীগুলোর মতো উজ্জ্বল ছিল, কিন্তু লোভের কারণে দীপ্তিহীন হয়ে যায়, বলেই দ্রুত হাঁটতে লাগল।
.
৫৪.
খাবার, ট্র্যাভিজ স্বীকার করতে বাধ্য হলো, চমৎকার হয়েছে। বেশ কয়েক রকমের পদ। নানা রকম মসলা ব্যবহৃত হয়েছে।
এই শাকসজীগুলোর মধ্যে, ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল, নিশ্চয়ই দুএকটা স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে, এস. কিউ?
হ্যাঁ, অবশ্যই। যখন প্রথম বসতকারী এখানে পা রাখে তার আগে থেকেই সেশেল অক্সিজেন সমৃদ্ধ গ্রহ। ফলে নিজস্ব প্রাণের উদ্ভব হয়েছে। কিছু কিছু স্থানীয়। প্রজাতি আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমাদের প্রাকৃতিক উদ্যানে গেলে এখনো প্রাচীন সেশেলের উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল দেখতে পারবেন।
পেলোরেট দুঃখিত স্বরে বলল, এখানেই আপনারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন, এস. কিউ। টার্মিনাসে যখন মানুষ বাস করতে শুরু করে, তখন স্থলচর জীবন বলতে কিছুই ছিলনা। সামুদ্রিক জীবন বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই নেয়া হয়নি, অথচ এই সাগরই অক্সিজেন তৈরি করে টার্মিনাসকে বাসযোগ্য করে তুলেছে। টার্মিনাসের এখনকার ইকোলজী পুরোপুরি গ্যালাকটিক।
সেশেল,কুইনটেসেটজ অহংকারী হাসি দিয়ে বলল, প্রাণ সংরক্ষণে সচেষ্ট।
ট্র্যাভিজ ঠিক এই মুহূর্তটাই বেছে নিল। আমার মনে হয় এস. কিউ, অফিস থেকে বেরুনোর সময় কথা দিয়েছিলেন, আমাদের ডিনার খাওয়াবেন এবং গায়ার ব্যাপারে কথা বলবেন।
কুইনটেসেটজের স্ত্রী বেশ অমায়িক-একটু মোটাসোটা। খাওয়ার সময় বেশি কথা বলেননি–এইবারে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আমার স্ত্রী, অস্বস্তির সাথে কুইনটেসেটজ বলল, অনেক বেশি রক্ষণশীল। গ্রহটার নাম শুনে তিনি অস্বস্তি বোধ করছেন। কিছু মনে করবেন না। কিন্তু এগুলো জিজ্ঞেস করছেন কেন?
কারণ, এগুলো জেপির গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আমাকেই জিজ্ঞেস করছেন কেন? আমরা কথা বলছিলাম, পৃথিবী, রোবট, সেশেলে বসতি স্থাপন নিয়ে। সবগুলোর সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়?
হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই, তারপরও ব্যাপারটার মধ্যে অনেক অস্বাভাবিকতা রয়েছে। কেন গায়ার নাম শুনে আপনার স্ত্রী অস্বস্তি বোধ করছেন? কেন আপনি অস্বস্তিবোধ করছেন। কিছু তথ্য আপনি সহজেই আমাদের দিতে পারেন। আজকেই আমরা জানতে পেরেছি যে আসলে গায়াই হচ্ছে পৃথিবী এবং মানুষের অন্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে হাইপারস্পেসে হারিয়ে গেছে।
এসব আজেবাজে কথা কে বলেছে আপনাকে?
বিবিদ্যালয়ের একজন বলেছে।
কুসংস্কার।
আপনি যে গল্পটা বলেছেন তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই?
না, অবশ্যই না। সাধারণ অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে প্রচলিত রূপকথা ছাড়া আর কিছুই না এটা।
আপনি নিশ্চিত ট্র্যাভিজ ঠাণ্ডা গলায় বলল।
কুইনটেসেটজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে উচ্ছিষ্ট খাবারের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, চলুন, লিভিংরুমে গিয়ে বসি। এখানে বসে এসব আলোচনা করলে আমার স্ত্রী আর রুমটা পরিষ্কার করতে পারবে না।
এগুলো আসলেই রূপকথা? পাশের ঘরে বসতে বসতে ট্র্যাভিজ আবার প্রশ্নটা করল। আকাশের চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘর অন্ধকার, কুইনটেসেটজ এর অবয়ব ছায়ার মতো দেখাচ্ছে।
কি মনে হয় আপনার? কুইনটেসেটজ বলল। কোনো গ্রহ সত্যিসত্যিই হাইপারস্পেসে হারিয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন সাধারণ মানুষের সামান্যতম ধারণাও নেই হাইপারস্পেস আসলে কি?
সত্যিকথা বলতে কি, ট্র্যাভিজ বলল, আমি নিজে অনেকবার হাইপারস্পেসে গেছি। অথচ আমারই কোনো ধারণা নেই সেটা কি।
আসল কথা হচ্ছে, পৃথিবী আর যেখানেই হোক, সেশেল ইউনিয়নের ধারে কাছেও নেই, যে গ্রহের কথা বলছেন সেটা পৃথিবী না।
পৃথিবী কোথায় সেটা যদি নাও জানেন, এস. কিউ. যে গ্রহের নাম বললাম সেটা কোথায় রয়েছে নিশ্চয়ই বলতে পারবেন। এটা সেশেল ইউনিয়নের সীমানার ভেতরেই রয়েছে। আমরা জানি, তাই না পেলোরেট?
পেলোরেট অন্যমনস্কভাবে বসেছিল, নিজের নাম শুনে চমকে উঠল, আমি জানি, গোলান, গায়া কোথায়।
কখন জানলে, জেনভ?
আজকে সন্ধ্যায়। এখানে আসার পথে আপনি পাঁচ বোনকে দেখিয়েছেন, এস, কিউ। পঞ্চভূতের মাঝখানে একটা অনুজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছে। আমার মনে হয় সেটাই গায়া।
কুইনটেসেটজ আমতা আমতা করছে, অন্ধকারে মুখের ভাব বোঝা গেলনা। বেশ, আমাদের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাই মনে করেন। গ্রহটা ওই নক্ষত্রকেই প্রদক্ষিণ করে।
বেশ, ওটার সম্বন্ধে বলুন। কো-অর্ডিনেটস জানেন?
আমি? না। কুইনটেসেটজ প্রায় মারমুখো হয়ে উঠল। সৌরজগতের কো অর্ডিনেটস পাবেন আপনি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে, তবে সহজে পাবেন না। ওই নক্ষত্রে যাওয়ার কোনো অনুমতি দেয়া হয় না।
কেন? আপনাদের টেরিটোরীর ভিতরেই রয়েছে ওটা।
মহাকাশের মানচিত্র অনুযায়ী, হা, রাজনৈতিকভাবে না?
আরো কিছু শোনার জন্য ট্র্যাভিজ অপেক্ষা করছে। কেউ কিছু না বলায় সে উঠে দাঁড়ালো। প্রফেসর কুইনটেসেটজ, এই তথ্যগুলো আমার জন্য না, দরকার ফাউণ্ডেশনের জন্য। জোর করে আমি কিছু জানতে পারব না। আপনি যেছায় না জানালে আমি বাধ্য হব আমাদের অ্যাম্বাসেডরের কাছে যেতে। চাইনা ব্যাপারটা আন্তমহাজাগতিক কোনো ঘটনার জন্ম দেয়। সেশেল ইউনিয়নও নিশ্চয়ই চাইবে না।
ফাউণ্ডেশনের কেন দরকার?
সেটা আপনাকে আমি বলতে পারব না। ঘটনা সরকারী পর্যায়ে চলে গেলে সেশেলের জন্য খারাপ হবে, আমার জন্যও। কারণ আমাকে কঠিন নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তথ্যগুলো সরকারকে বিব্রত না করে সংগ্রহ করি। বলুন তাহলে, কেন আপনারা গায়ার কথা আলোচনা করেন না। কথা বললে আপনাকে গ্রেফতার করা হরে, নাকি অন্য কোনো শাস্তি দেয়া হবে? সরাসরি বলুন আমাকে কি উপর মহলে যেতে হবে?
না, না, কুইনটেসেটজ বলল, পুরোপুরি দ্বিধাগ্রস্ত। সরকারী ব্যাপারে কিছু বলতে পারবনা। আমরা শুধু ঐ গ্রহ নিয়ে কথা বলি না।
কুসংস্কার?
হা,তাই! কুসংস্কার!–সেশেলের কসম, আমিও ওদের মতোই বোকা, যারা আপনাকে বলেছে গায়া হাইপারস্পেসে চলে গেছে বা আমার স্ত্রীর মতো, যে নামটা শোনামাত্রই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, এমনকি হয়তো বাড়ি থেকেও
বজ্রপাতের ভয়ে?
অনেকটা। এমনকি নামটা উচ্চারণ করতে আমারও শুরু হয়। গায়া! গায়া! শব্দটা আমার কোনো ক্ষতি করেনি। তারপরও অস্বস্তি হয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন গায়ার সূর্যের কো-অর্ডিনেটস আমি জানিনা, তবে পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। ইউনিয়নের কেউ এই গ্রহ নিয়ে কথা বলি না। নামটা মুছে ফেলেছি মন থেকে। সামান্য যতটুকু জানি প্রকৃত ঘটনা, কোনো অনুমান না–সেটা আপনাকে বলতে পারি। মনে হয় না এর বেশি কিছু কেউ বলতে পারবে।
আমরা জানি গায়া বেশ প্রাচীন গ্রহ। কেউ কেউ মনে করেন এটা গ্যালাক্সির এই অংশের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রহ, তবে আমরা নিশ্চিত না। দেশপ্রেম বলে সেশেল সবচেয়ে প্রাচীন; ভয় বলে গায়া সবচেয়ে প্রাচীন। দুটোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের একমাত্র উপায়, যদি ধরে নেয়া হয় গায়াই হচ্ছে পৃথিবী, কারণ সবাই জানে সেশেলে বসতি শুরু করেছিল সরাসরি পৃথিবীর মানুষ।
অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা –গায়া গ্রহের গোড়াপত্তন হয়েছিল স্বাধীনভাবে। এটা আমাদের ইউনিয়নের কোনো কলোনী না বা আমাদের ইউনিয়নও গায়া স্থাপন করেনি। বয়স গুনে বলা যাবে না গায়াতে বসতি স্থাপন, সেশেলে বসতি স্থাপনের আগে না পরে হয়েছিল।
বোঝা যাচ্ছে, আপনি নিজে কিছু জানেন না। যা বলছেন সবই অন্যের ধারণা আর বিশ্বাস।
কুইনটেসেটজ বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ল। ঠিক তাই। আসলে গায়ার অস্তিত্বের ব্যাপারে আমরা অনেক পরে সচেতন হয়ে উঠি। প্রথমে আমরা ব্যস্ত ছিলাম ইউনিয়ন গঠন করা নিয়ে, গ্যালাকটিক এম্পায়ারের সাথে যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে, তারপর সাম্রাজ্যের প্রদেশ হিসেবে নিজেদের ভূমিকা এবং ভাইসরয়দের ক্ষমতা সীমিতকরণ নিয়ে।
ইমপেরিয়াল শাসন যখন অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেই সময়ের এক ভাইসরয় হঠাৎ গায়ার অস্তিত্ব ধরতে পারেন। বুঝতে পারেন দীর্ঘদিন থেকেই গায়া। সেশেল প্রদেশ এবং এমনকি সাম্রাজ্যের কাছ থেকেও স্বাধীন হয়ে আছে। গ্রহটা নিপুণভাবে নিজেকে নিঃসঙ্গ এবং গোপন করে রেখেছিল, ফলে আজ পর্যন্ত খুব
বেশি কিছু জানা যায়নি। তিনি এটা দখল করার সিদ্ধান্ত নেন। বিস্তারিত কিছু জানা। যায়নি। তবে তার অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। যুদ্ধযানগুলো ফিরে এসেছিল বিধ্বস্ত অবস্থায়।
ভাইসরয়কে ধরা হতো সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি। কাজেই তার পরাজয়ে আমরা। খুশী হয়েছিলাম। কারণ এর ফলেই আমরা পাই স্বাধীনতা, মুক্ত হই ইম্পেরিয়াল বাঁধন থেকে। এখনো সেই দিনটাকে ইউনিয়ন ডে হিসেবে পালন করা হয়। কৃতজ্ঞতাবশতই প্রায় এক শতাব্দী আমরা গায়াকে ঘাটাইনি। একসময় আমরাও। সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা শুরু করি। গায়া দখল করার সিদ্ধান্ত নেই। একটা ফ্লীট পাঠানো হয়। ধ্বংস হয়ে যায় সেটা।
এরপর, কয়েকবার বাণিজ্য করার চেষ্টা করি সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যায়। গায়া পুরোপুরি তার একাকীত্ব বজায় রেখেছিল এবং জানামতে অন্য কোনো গ্রহের। সাথে কখনই বাণিজ্য বা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। কারো বিরুদ্ধে কখনো সামান্যতম ব্যবস্থা নেয়নি। তারপর
চেয়ারের হাতলে একটা বোতাম টিপে কুইনটেসেটজ আলো জ্বালল। মুখে ব্যঙ্গাত্মক ভাব। আপনারা যেহেতু ফাউণ্ডেশনের নাগরিক, মিউলের কথা, নিশ্চয়ই মনে আছে?
ট্র্যাভিজের চোখ মুখ গরম হয়ে উঠল। পাঁচ শতাব্দীর ইতিহাসে একমাত্র মিউলই ফাউণ্ডেশনকে পরাজিত করতে পেরেছিল। যারা ফাউণ্ডেশনকে পছন্দ করেনা, তারা খোঁচা দেয়ার জন্য মিউলের নামটা বলে। কুইনটেসেটজ আলো জ্বেলেছে বাকী দুজনের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
হ্যাঁ, মিউলের কথা মনে আছে। ট্র্যাভিজ বলল।
মিউল, কুইনসেন্টেজ বলল, প্রার ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের মতো একটা বিশাল সাম্রাজ্য চালাতো। কিন্তু আমাদেরকে কখনো শাসন করেনি। এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় তার সাথে আমরা নিরপেক্ষ ও শান্তি চুক্তি করি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে আমাদের কাছ থেকে আর বেশি কিছু চায়নি। সে অত্যাচারী ছিলনা, ছিল মানবিক।
তারপরেও সে যুদ্ধবাজ দখলদার, ট্র্যাভিজ তিরস্কারের সুরে বলল।
ফাউণ্ডেশনের মতো? কুইনটেসেটজ এর ত্বরিৎ জবাব।
ট্র্যাভিজ কোনো তাৎক্ষণিক জবাব দিতে না পেরে বিরক্ত সুরে বলল, গায়ার ব্যাপারে আর কিছু বলার আছে?
মিউলের একটা মন্তব্য। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, মিউল এবং ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যালোর মধ্যে ঐতিহাসিক সম্মেলনে, চুক্তিতে সই করার সময় কাগজে কলম ঠেকিয়ে মিউল বলেছিল, এই চুক্তির ফলে তোমরা গায়ার প্রতিও নিরপেক্ষ থাকবে। ভালো হবে তোমাদের জন্য। এমনকি আমিও গায়ার দিকে এগোব না।
ট্র্যাভিজ মাথা নাড়ল। কেন এগুবে। সেশেল নিরপেক্ষ থাকতে আগ্রহী, গায়া কখনো কারো সাথে লড়াই করেনি। মিউল চেয়েছিল পুরো গ্যালাক্সি দখল করতে, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়।
হয়তো, হয়তো, কুইনটেসেটজ বলল, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী লোকটা আমাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার মতে, মিউল বলেছিল, এমনকি আমিও গায়ার দিকে এগোব না। তারপর শোনা যায়না এমন নিচু স্বরে বলেছিল, আবার।
শোনা যায় না এমনভাবে বললে, সে শুনল কিভাবে?
কারণ, সেই সময় মিউলের কলম নিচে পড়ে গিয়েছিল। ঝুঁকে সেটা তুলে দেয়ার সময় সেশেলিয়ানের কান চলে গিয়েছিল তার মুখের কাছে। তখনই শুনেছে। আবার মিউলের মৃত্যুর আগে সে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।
তার বানানো গল্প হতে পারে।
না লোকটাকে আমরা বিশ্বাস করি। যদি বানানো হয়?
চুক্তিতে সই করার সময় ছাড়া, মিউল কখনই সেশেল সেক্টরের ভেতরে বা কাছাকাছি আসেনি, অন্তত গ্যালাকটিক নাটকে তার আবির্ভাবের পর। তার আগে হয়তো, এসেছিল।
তো?
তো, কোথায় জন্মেছিল মিউল?
বোধহয় কেউ জানে না। ট্র্যাভিজ বলল।
সেশেলে আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি, মিউল জন্মেছিল গায়ায়।
একটা শব্দ শুনেই এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
আংশিক। মিউলকে কখনো পরাজিত করা যায়নি, কারণ তার ছিল অদ্ভুত মেন্টাল পাওয়ার। গায়াও কখনো পরাজিত হয়নি।
গায়া পরাজিত হয়নি, তার মানে এই না যে পরাজিত করা যাবে না।
এমনকি মিউলও সেদিকে এগোর্লি। ক্লের্ড ঘেটে দেখতে পাব্রেন সেশেল ছাড়া আর কোনো সেক্টর এত স্বাধীন ছিল কি না। আর আপনি জানেন, বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যারা গায়ায় গিয়েছিল, তারা ফিরে এসেছিল কি না? আমরা এত কম জানি কেন?
মনে হচ্ছে আপনিও কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন? ট্র্যাভিজ বলল।
যা ইচ্ছা হয় তাই বলেন। মিউলের পর থেকেই আমরা গায়ার কথা চিন্তা করাও বন্ধ করে দিয়েছি। যদি ভৰি যে মহাকাশে ওটা নেই, তাহলে নিরাপদ বোধ কর। গায়া ইপারস্পেসে চলে গেছে এই গল্প হয়ত সরকারই গোপনে চালু করেছে যেন মানুষ ভুলে যায় এই নামে সত্যিই একটা নক্ষত্র আছে।
আপনি মনে করে পায়া হলে অনেক মিউলের গ্রহ?
হতে পারে। ভালোর জন্য, এক পরামর্শ দিচ্ছি। যাবেন না ওখানে, তাহলে আর ফিরতে পারবেন না। ফাউণ্ডেশন গায়াকে ঘাটালে মিউলের চেয়েও বড় বোকামী করবে। আপনাদের অ্যাম্বাসেডরকে কথাটা বলতে পারে।
আমাকে গায়ার কো-অর্ডিনেটস এনে দিন, এখনি আপনাদের গ্রহ থেকে চলে যাবো। আমি গায়ায় যাবো, গিয়ে ফিরেও আসব।
দেব। অ্যাস্ট্রোনমী ডিপার্টমেন্ট রাতেও কাজ করে। পারলে এখনি এনে দেব। কিন্তু আরো বলছি গায়াতে পৌঁছার চেষ্টা করবেন না।
আমি চেষ্টা করতে চাই।
কুইনটেসেটজ স্নান গলায় বলল, আপনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন।
.
ফরওয়ার্ড
৫৫.
জেনভ পেলোরেটের মন খারাপ। অনিশ্চিত বোধ করছে। তাকিয়ে আছে ধূসর ল্যান্ডস্কেপের দিকে।
বেশিদিন থাকা হলোনা, গোলান। চমৎকার আকর্ষণীয় গ্রহ। আরো অনেক কিছু জানার ইচ্ছা ছিল।
কম্পিউটার থেকে চোখ তুলে ট্র্যাভিজ হতাশ আবে হাসল। ইচ্ছা কি আমারো ছিলনা? কি চমৎকার স্বাদের খাবার। আরো অনেক কিছু দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, কি করা যাবে।
পেলোরেট নাক কুঁচকালো। ওহ মাই ডিয়ার চাপ। গরুর ঘর মতো জুতা আর রং-বেরং-এর পোশাকের কথা ভাবলেই ভয় হয়। আর আইল্যাশ। খেয়াল করেছ?
সব খেয়াল করেছি, জেনভ। পুরো ব্যাপারটাই বাহ্যিক। মুখ ধুয়ে নিলেই চলে যাবে। কাপড় আর জুতোর ব্যাপারেও একই কথা।
তোমার কথা মেনে নিচ্ছি। যাই হোক আমি পৃথিবীর ব্যাপারে আরো অনুসন্ধানের কথা ভাবছিলাম। যদুর জেনেছি সেটা অসম্পূর্ণ এবং পরস্পর বিরোধী–একজন বলছে রেডিয়েশনের কথা অন্যজন বলছে রোবটের কথা।
আর নয়তো মৃত্যু।
ঠিক, পেলোরেট বিমুখ গলায় বলল। কিন্তু হতে পারে একটা ঠিক, একটা ভুল বা দুটোই কিছু পরিমাণ ঠিক বা দুটোই ভুল। আসলেই গোলান, যখনই কোনো বিষয়ে রহস্যের ঘন কুয়াশা তৈরি হবে, সেটা অনুসন্ধান করার আগ্রহ তোমার হবেই, খুঁজে দেখবেই তুমি।
দেখব, গোলান বলল, গ্যালাক্সির প্রতিটি নক্ষত্র খুঁজে দেখব। কিন্তু বর্তমান সমস্যা হচ্ছে গায়া। এটার সমাধান করেই আমরা যাবো পৃথিবীতে বা ফিরে আসব সেশেলে, বেশি সময় নিয়ে। কিন্তু প্রথমে গায়া।
মাথা নাড়ল পেলোরেট। প্রথম কাজ প্রথমে। কুইনটেসেটজ এর কথা মেনে নিলে গায়াতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে মরণ। যাওয়া উচিত হবে?
প্রশ্নটা আমারো। তুমি ভয় পাচ্ছ?
পেলোরেট নিজের অনুভূতি যাচাই করে নিল। তারপর সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল হ্যাঁ। ভীষণ।
ট্র্যাভিজ চেয়ার ঘুরিয়ে অন্যজনের মুখোমুখী হলো। শান্ত নিরাসক্ত গলায় বলল, জেনভ, তোমার ঝুঁকি নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বললেই ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আর অর্ধেক ক্রেডিট দিয়ে তোমাকে এখানে নামিয়ে দেব। ফিরে এসে, তুমি চাইলে তোমাকে নিয়ে সিরিয়াস সেক্টরে যাবো। ফিরতে না পারলে সেশেলের ফাউণ্ডেশন কর্তৃপক্ষ তোমার টার্মিনাসে ফেরার ব্যবস্থা করবে। থেকে গেলে আমি কিছু মনে করব না, ওল্ড ফ্র্যান্ড।
পেলোরেট কয়েকবার মিটমিট করল চোখ, ঠোঁট দুটি পরস্পরের সাথে চেপে বসেছে। তারপর কর্কশ গলায় বলল, ওল্ড ফ্র্যান্ড। কতদিন হলো আমরা দুজনকে চিনি? এক সপ্তাহ? তারপরেও অদ্ভুত না যে আমি জাহাজ ত্যাগ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি? ভয় পেয়েছি, কিন্তু তোমার সাথেই থাকব।
ট্র্যাভিজ অনিশ্চিত ভঙ্গিতে হাত নাড়ল। কিন্তু কেন?
জানি না কেন, নিজেকে অনেকবার প্রশ্ন করেছি। মনে হয় মনে হয়–গোলান আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমার সবসময় মনে হয় তুমি কি করছ সেটা তুমি জানো। আমি ট্রানটরে যেতে চেয়েছিলাম–এখন জানি, সেখানে গিয়ে কিছুই হতো না। নিয়ে আসলে এখানে। দেখা যাচ্ছে তুমিই ঠিক। কি চমৎকার ধাপ্পা দিয়ে কুইনটেসেটজ-এর কাছ থেকে গায়ার খবর বের করে নিলে। প্রশংসা করার মতো।
তুমি তাহলে আমাকে বিশ্বাস করো।
হা, করি।
পেলোরেটের বাহুতে হাত রেখে মনে মনে কথা গুছিয়ে নিল ট্র্যাভিজ। জেনভ, যদি আমার হিসাবে কোনো ভুল হয় এবং তার জন্য কোনো বিপদ হয়–তুমি আমাকে ক্ষমা করবে?
ওহ মাই ডিয়ার ফেলল, কেন জিজ্ঞেস করছ? সিদ্ধান্তটা আমি নিজের জন্য নিয়েছি, তোমার জন্য না। এখন দয়া করে তাড়াতাড়ি কর। নিজেকে নিয়ে আমার কোনো বিশ্বাস নেই। বাকী জীবন লজ্জায় কাটাতে চাই না।
তুমি যা বলো, জেনভ। কম্পিউটার অনুমতি দিলে যত দ্রুত সম্ভব রওনা দেব। এখন গ্র্যাভিটিক্যালি সোজা উপরে উঠছি–যখন বোঝা যাবে উপরে অন্য কোনো মহাকাশযান নেই এবং চারপাশের অ্যাটমোস্ফিয়ার ক্রমেই পাতলা হচ্ছে–তখন আরো দ্রুত ছুটব। একঘণ্টার মধ্যে আমরা পৌঁছব ভোলা মহাকাশে।
চমৎকার, বলল পেলোরেট। তারপর একটা প্লাস্টিক কফি কন্টেইনার ফুটো করল। গরম ধোয়া উঠছে। নিপল মুখে ঢুকিয়ে পেলোরেট কফি টানছে, সেই সাথে যথেষ্ট বাতাস টানছে, যেন কফি ঠাণ্ডা হয়।
ট্র্যাভিজ দেতো হাসল। জিনিসগুলি চমৎকার ব্যবহার করতে শিখেছ। আসলেই তুমি জন্ম-মহাকাশচারী।
কন্টেইনারের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে পেলোরেট বলল, এই মহাকাশযান তো গ্র্যাভিটিক্যালি চলতে পারে। তাহলে আমরা সাধারণ কন্টেইনার ব্যবহার করতে পারি না?
অবশ্যই। কিন্তু যারা মহাকাশে চলাচল করে তাদের কাছ থেকে জিনিসগুলো আলাদা করতে পারবেনা। তাহলে আর সাধারণ ভূ-বাসীর সাথে তার পার্থক্য থাকল কোথায়। দেয়াল আর সিলিং-এ ঝুলন্ত রিংগুলো দেখেছ। বিশহাজার বছর ধরে এগুলো মহাকাশযানে বসানো হচ্ছে, অথচ গ্র্যাভিটিকযানে এর কোনো প্রয়োজন নেই। আসলে সবকিছুরই একটা সামাজিক পিছুটান থাকে, কারিগরি উন্নয়নও এর ব্যতিক্রম না।
পেলোরেট চিন্তিতভাবে মাথা নেড়ে কফি খেতে লাগল। তারপর বলল, আমরা কখন টেক অফ করব?
ট্র্যাভিজের হাসি হলো আন্তরিক। ধরা খেয়েছ। যখন দেয়ালের রিং-এর কথা বলছিলাম ঠিক তখনই টেক অফ করেছি। প্রায় আধমাইল উপরে চলে এসেছি।
সত্যিই!
বাইরে দেখ।
পেলোরেট দেখল। আমি বুঝতেই পারিনি।
বোঝার কথা না।
আমরা নিয়ম ভাঙছিনা? উপরে ওঠার সময় রেডিও বীকন অনুসরণ করা উচিত ছিল নিশ্চয়ই। ল্যান্ড করার সময় যেমন করেছি।
দরকার নেই, জেনভ। কেউ আমাদের থামাবে না। কেউ না।
নামার সময় তুমি বলেছিলে-
সেটা ছিল ভিন্ন। ওরা আমাদের আসার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল। যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই।
এভাবে বলছ কেন, গোলান? একমাত্র কুইনটেসেটজ আমাদের সাহায্য করেছে তথ্য দিয়ে। আর সে থাকার জন্য প্রায় হাতে পায়ে ধরেছে।
বিশ্বাস করো না জেনভ। এটা একটা কায়দা। সে নিশ্চিত হয়েছে আমরা যেন গায়াতে যাই।–কুইনটেসেটজ এর কাছ থেকে বুদ্ধি করে খবর বের করার জন্য তুমি প্রশংসা করেছ আমার। দুঃখিত, প্রশংসা নিতে পারছি না। আমি কিছু না করলেও সে জানাতো। কানে তুলো দিয়ে রাখলে চিৎকার করে বলত।
পাগলামী।
ভয়ানক? আমি জানি। তারপর কম্পিউটারের দিকে ঘুরে অনুভূতি আরো প্রখর করে তুলল। আমাদের থামানো হবে না। কাছাকাছি দূরত্বে কোনো মহাকাশযান নেই। কোনো সতর্ক সংকেত নেই।
তারপর চেয়ারটা আবার পেলোরেটের দিকে ঘুরিয়ে বলল, বল, জেনভ, গায়ার ব্যাপারে কিভাবে জানলে। টার্মিনাসে থাকতেই জানতে। জানতে এটা সেশেল সেক্টরে। জানতে নামটা পৃথিবীর সমার্থক। এতকিছু কিভাবে জানলে?
পেলোরেট একটু শক্ত হয়ে গেল। টার্মিনাসে থাকলে ফাইল দেখে বলতে পারতাম। সব সাথে আনিনি বিশেষ করে এই নির্দিষ্ট তথ্যগুলো কবে কোন তারিখে পেয়েছি সেগুলো।
বেশ, চেষ্টা করো। মনে করো সেশেলিয়ানরা কিছুই বলেনি। তারা ইচ্ছা করেই একটা কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিচ্ছে যেন সাধারণ মানুষ ভুলে যায় মহাকাশে এমন একটা গ্রহ আছে। তোমাকে আমি একটা জিনিস দেখাচ্ছি।
ট্র্যাভিজ কম্পিউটারের হ্যান্ড-রেস্টের উপর হাত রাখল। সেগুলোর উষ্ণ স্পর্শ আর আলিঙ্গন তাকে আমোদিত করে তোলে। বুঝতে পারে তার ইচ্ছা শক্তি বেড়ে যায় বহুগুণ।
কম্পিউটারে তৈরি গ্যালাকটিক ম্যাপ, সেশেলে ল্যান্ড করার আগে মেমরী ব্যাংকে এটাই ছিল। তোমাকে এখন সেশেলের গতকাল রাতের আকাশের দৃশ্য দেখাচ্ছি।
ঘর অন্ধকার হয়ে গেছে। রাতের আকাশের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ল স্ক্রীনে।
চমৎকার, ঠিক সেশেলে যেমন দেখেছি। পেলোরেট নিচু গলায় বলল।
তারচেয়েও সুন্দর, ট্র্যাভিজের গলায় অধৈর্য। এখন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক বাধা নেই, মেঘ নেই, নেই দিগন্তের বাধা। একটু দাঁড়াও ঠিক করে নেই।
দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে সামনের দৃশ্য। দুজনেই অস্বস্তি বোধ করছে। মনে হচ্ছে যেন তারাই নড়ছে, আর সবকিছু স্থির। পেলোরেট অজান্তেই নিজেকে স্থির রাখার জন্য চেয়ারের হাতল চেপে ধরল।
এই যে! ট্র্যাভিজ বলল। চিনতে পারছ?
নিশ্চয়ই। পাঁচ বোন পাঁচ নক্ষত্রের পঞ্চভূজ। না চেনার কোনো কারণ নেই।
হ্যাঁ। কিন্তু গায়া কোথায়?
পেলোরেট চমকে উঠল। মাঝখানে কোনো অনুজ্জ্বল নক্ষত্র নেই। নেই।
না, নেই। কারণ এর অবস্থান কম্পিউটারের ডাটা ব্যাংকে নেই। হয়তো ইচ্ছা করেই ডাটা ব্যাংকটা রাখা হয়েছে অসম্পূর্ণ বা ফাউণ্ডেশনের গ্যালাকন্ট্রোগ্রাফার যারা এটা তৈরি করেছে এবং যাদের হাতে প্রচুর ডাটা রয়েছে তারাও গায়ার খবর জানে না।
তোমার কি মনে হয় ব্র্যানটরে গেলে- পেলোরেট শুরু করল।
ওখানে গেলেও গায়ার ব্যাপারে কিছু জানতে পারতাম না। এর অস্তিত্ব সেশেলিয়ানরা গোপন রেখেছে এবং এমনকি গায়ানরা নিজেরাও। কিছুদিন আগে তুমি বলেছিলে ট্যাক্স এড়ানোর জন্য অনেক গ্রহ নিজেদের আড়াল করে রাখত।
স্বাভাবিক, পেলোরেট বলল, মানচিত্র প্রস্তুতকারী বা পরিসংখ্যানবিদরা এসে দেখত যে এই গ্রহগুলো গ্যালাক্সির জনমানবহীন অঞ্চলে অবস্থিত। এই নিঃসঙ্গতাই নিজেদের গোপন রাখতে সাহায্য করত। কিন্তু গায়াতে নিঃসঙ্গ না।
ঠিক। এটা আরেকটা অস্বাভাবিকতা। ঠিক আছে, এই ম্যাপ বাদ দিয়ে চল দুজনে চেষ্টা করে দেখি গ্যালাকন্ট্রোগ্রাফারদের অজ্ঞতা দূর করা যায় কিনা। আবার জিজ্ঞেস করছি, যেখানে সবচেয়ে জ্ঞানী লোকগুলোই কিছু জানে না, সেখানে তুমি কিভাবে গায়ার কথা জানলে?
আমি ত্রিশ বছর ধরে পৃথিবীর পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তী, ইতিহাস সংগ্রহ করছি। সম্পূর্ণ রেকর্ড ছাড়া আমি সম্ভবত।
আমরা কোনো এক জায়গা থেকে শুরু করতে পারি, জেনভ। ব্যাপারটা কখন তোমার নজরে আসে, গবেষণার প্রথম পনের বছরে না শেষ পনের বছরে?
সম্ভবত পরের দিকে।
আরেকটু পরিষ্কার করে বলতে পারবে। ধরো আমি বলে দিচ্ছি গায়ার ব্যাপারে। তুমি জানতে পেরেছ গত দু-এক বছরের মধ্যে।
ট্র্যাভিজ পেলোরেটের দিকে ঘুরল। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আলো বাড়ালো, সেই সাথে স্ক্রীনে ম্লান হয়ে গেল রাতের আকাশের দৃশ্য। পেলোরেটের মুখে কোনো ভাব নেই।
বেশ? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
চিন্তা করছি। হালকা গলায় বলল পেলোরেট। হয়তো তোমার কথাই ঠিক। জোর দিয়ে বলতে পারব না। লিডবেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিমবর এর কাছে যখন চিঠি লেখি তখন গায়ার কথা বলিনি, অথচ বলা উচিত ছিল। সেটা ছিল–৯৫। তিনবছর আগের কথা। মনে হয় ঠিকই বলেছ, গোলান।
কিভাবে জেনেছিলে? কোনো যোগাযোগ? বই? বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র?–প্রাচীন কোনো সঙ্গীত? কিভাবে–বল।
পেলোরেট বুকে হাত বেঁধে হেলান দিয়ে বসল। গভীর চিন্তায় মগ্ন। ট্র্যাভিজ অপেক্ষা করছে ধৈর্য ধরে।
শেষপর্যন্ত পেলোরেট বলল, ব্যক্তিগত যোগাযোগ। কিন্তু নাম জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ হবে না, মনে নেই।
মনে করার চেষ্টা করো।
লাভ নেই। একাডেমিক সার্কেল ছাড়াও বাইরের দুএকজন আমার কাছে। মাঝেমধ্যে তথ্য পাঠাতো, সেখানে অনেক সময় কারো নাম থাকত না। এখন বলতেও পারছি না এই তথ্যটা আমি নামহীন কারো কাছ থেকে পেয়েছিলাম কি না।
বুঝলাম। কিন্তু এটা একটা সম্ভাবনা, তাইনা?
হতে পারে। এত কিছু জানতে চাইছ কেন?
আমার কথা শেষ হয়নি। তথ্যগুলো তুমি কোনো গ্রহ থেকে পেয়েছিলে–কোন গ্রহ থেকে?
পেলোরেট কাঁধ ঝাঁকালো। আমার কোনো ধারণাই নেই।
হয়তো সেশেল থেকে পেয়েছিলে?
বললাম তো, জানিনা।
আমার মনে হয় সেশেল থেকেই পেয়েছিলে।
তোমার মনে হলেই তো হবে না।
না? কুইনটেসেটজ যখন পাঁচ বোনের কেন্দ্রের অনুজ্জ্বল নক্ষত্রের কথা বলল, তখনই তুমি ধরে ফেললে ওটাই গায়া। মনে আছে? কিভাবে ধরলে?
কারণ গায়ার ব্যাপারে যত ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে, তার কোনোটাতেই নামটা বেশিবার উল্লেখ করা হয়নি। আলঙ্কারিক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে বেশি। যেমন একটা হচ্ছে পাঁচ বোনের ছোট ভাই। আরেকটা হচ্ছে পঞ্চভূজের কেন্দ্র। কুইনটেসেটজ পাঁচ বোনের কেন্দ্রের অনুজ্জ্বল নক্ষত্র দেখানোর সাথে সাথে আমার মাথায় ধারণাটি তৈরি হয়।
কিন্তু তুমি আমাকে এগুলো কিছুই বলনি।
আমি নিজেই ভালোভাবে বুঝতে পারিনি। তাছাড়া মনে হয়নি তোমার সাথে আলোচনা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু, যেখানে তুমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না।
আশা করি বুঝতে পেরেছ যে পাঁচ বোনের পঞ্চভূজ পুরোপুরি আপেক্ষিক।
মানে?
ট্র্যাভিজ আন্তরিকভাবে হাসল। তুমি একটা ভূ-পৃষ্ঠের কেচো। তোমার ধারণা মহাকাশের নির্দিষ্ট বাস্তব আকার আছে? নক্ষত্রগুলো নির্দিষ্টস্থানে ঝুলে থাকে? পঞ্চভূজের মতো আকৃতি দেখবে তুমি সেশেল গ্রহ যে প্ল্যানেটারী সিস্টেমের অন্তর্গত সেই গ্রহগুলোর সারফেস থেকে। অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত কোনো গ্রহের সারফেস থেকে দেখবে ভিন্নরকম দৃশ্য, কারণ তখন পাঁচ বোনকে দেখবে তুমি ভিন্ন অবস্থান থেকে। তাছাড়া সেশেল থেকে পাঁচ নক্ষত্রের অবস্থান বিভিন্ন দূরত্বে। কাজেই আরেক অবস্থান থেকে দেখলে সবগুলোর মধ্যে কোনো যোগাযোগ দেখতে পাবে না। একটা বা দুইটা নক্ষত্র থাকবে আকাশের একদিকে বাকীগুলো থাকবে অন্যদিকে। দেখ-
ঘর অন্ধকার করে ট্র্যাভিজ কম্পিউটারের দিকে ঝুঁকল। ছিয়াশিটা প্ল্যানেটারী সিস্টেম মিলে সেশেল ইউনিয়ন গঠিত। গায়া–বা সেটা যেখানে থাকার কথা সেই জায়গাটা স্থির রাখি (বলার সাথে পাঁচ বোনের পঞ্চভূজের মাঝখানে একটা লাল বৃত্ত তৈরি হল।) আর একাধারে ছিয়াশিটা গ্রহের আকাশের দৃশ্য তৈরি করতে থাকি।
আকাশের দৃশ্যের সাথে সাথে পেলোরেটের মুখের রংও বদলাচ্ছে। ছোট লাল বৃত্তটা রয়েছে স্ক্রীনের ঠিক মাঝখানে, কিন্তু পাঁচ বোন অদৃশ্য হয়ে গেছে। অনেকগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্র থাকলেও কোনো পঞ্চভূজ তৈরি হয়নি। বারবার আকাশের দৃশ্য বদলাচ্ছে, লাল বৃত্তটা ঠিক মাঝখানে রয়েছে, কিন্তু একবারের জন্যও সমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের কোনো পঞ্চভূজ তৈরি হতে দেখা গেল না।
যথেষ্ট হয়েছে? ট্র্যাভিজ বলল। পাঁচ বোনকে আমরা যেমন দেখেছি, সেশেল প্ল্যানেটরী সিস্টেমের গ্রহগুলো ছাড়া অন্য কোনো গ্রহ থেকে তেমন দেখা যাবে না।
হয়তো সেশেলিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য গ্রহেও ছড়ানো হয়েছে। ইমপেরিয়াল যুগের অনেক প্রবাদ আমাদের এখানেও প্রচলিত–কিন্তু সেগুলো তৈরি হয়েছে ট্র্যানটরে।
গায়ার ব্যাপারে, সেশেল এত বেশি গোপনীয়তা বজায় রাখার পরও? আর সেশেল ইউনিয়নের বাইরের গ্রহগুলো আগ্রহী হবে কেন? কেন তারা পাঁচ বোনের ছোট ভাইকে নিয়ে মাথা ঘামাবে, যদি সেটা তাদের আকাশে না থাকে।
হয়তো, তোমার কথাই ঠিক।
তাহলে কেন বুঝতে পারছনা, আসল তথ্য পেয়েছিলে তুমি সেশেল থেকে। অন্য কোনো গ্রহ থেকে না, ঠিক ইউনিয়নের রাজধানী থেকে।
পেলোরেট মাথা নাড়ল, যেভাবে বলছ হয়তো সেভাবেই ঘটেছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না।
যাই হোক, আমার কথার পেছনে শক্ত যুক্তি আছে তো?
হ্যাঁ, আছে।
এবার বলো, ঠিক কখন কিংবদন্তীগুলো তৈরি হয়েছিল বলে মনে করো?
যে কোনো সময়। আমার ধারণা প্রাচীন ইম্পেরিয়াল যুগে।
ভুল, জেনভ। পাঁচ বোন সেশেল গ্রহের অনেক কাছে, সে কারণেই এত উজ্জ্বল দেখায়। তার মধ্যে চারটার ঘূর্ণন গতি অত্যন্ত বেশি এবং অন্তত দুটো এক পরিবারের সদস্য না। তাই এদের গতি ভিন্ন দিকে। দেখ মানচিত্রটাকে সময়ের পিছনে নিয়ে গেলে কি হয়।
আবারো গায়ার অবস্থান নির্দেশক লাল বিন্দু এক জায়গায় স্থির হয়েছে। পঞ্চভূজ ধীরে ধীরে ভেঙ্গে গেল। কারণ চারটা নক্ষত্র অনেকটা ভেসে চারদিকে সরে গেছে, আর পঞ্চমটা একপাশে সরে গেছে সামান্য।
দেখ, জেনভ, তুমি এটাকে পঞ্চভূজ বলবে?
পরিষ্কার ভারসাম্যহীনতা।
আর গায়া ঠিক কেন্দ্রে আছে?
না, একপাশে সরে গেছে।
বেশ, একশ পঞ্চাশ বছর আগে এই ছিল অবস্থা। পঞ্চভূজের কেন্দ্র এ ব্যাপারে যত তথ্য পেয়েছ, সেগুলো এই শতাব্দীর আগে কোনো গুরুত্ব পায়নি, এমনকি সেশেলেও না। যে মেটেরিয়ালগুলো পেয়েছ সেগুলো তৈরি হয়েছে সেশেলে, এবং এই দশ বছরে সম্ভবত গত শতাব্দীতে। অথচ তুমি তথ্যগুলো পেয়েছ, যেখানে গায়ার ব্যাপারে তারা মুখ বন্ধ রাখে।
ট্র্যাভিজ আলো জ্বেলে কঠিন চোখে পেলোরেটের দিকে তাকালো। পেলোরেট বলল, আমি বুঝতে পারছি না। কেন এত কিছু ঘটছে।
তুমিই বল। শোন। কোনো না কোনো ভাবে আমার মাথায় ঢুকে পড়ে যে, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন এখনো টিকে আছে। ইলেকশনে জেতার জন্য আমি এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি। তারপরই প্রশ্ন জাগে যদি আসলেই ওরা টিকে থাকে? ইতিহাসের বইপত্র পড়া শুরু করি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আমার ধারণা বদ্ধমূল হয়। যদিও শক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না, কিন্তু সবসময়ই অনুভব করতাম যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে।
তারপর কতকিছু ঘটল। কম্পরকে বিশ্বাস করলাম, সে বেঈমানী করল। মেয়র ব্র্যান্নো আমাকে বন্দী না রেখে গ্রহ থেকে বের করে দিলেন। কেন? কেনই বা তিনি অতি উন্নত একটা মহাকাশযান আমার হাতে ছেড়ে দিলেন? জুটিয়ে দিলেন তোমাকে, যেন পৃথিবী খোঁজার ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
আর আমিইবা কিভাবে ট্রানটরে না যাওয়ার ব্যাপারে এত নিশ্চিত হলাম? যখনই বোঝালাম যে অন্যদিকে গেলে বেশি তথ্য পাওয়া যাবে, তুমি রহস্যময় গ্রহ গায়ার কথা বললে।
গেলাম সেশেল–আমাদের প্রথম গন্তব্য গিয়েই দেখা হলো কম্পরের সাথে। পৃথিবী নিয়ে বিশাল গল্প ফেঁদে বসল সে। বোঝালো আমরা যেন সিরিয়াস সেক্টরে চলে যাই।
এখানে একটা কথা বলি। তুমি বোধহয় বোঝাতে চাইছ, সব ঘটনা ঘটছে আমাদের গায়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এইমাত্র বললে, কম্পর আমাদের। সরাতে চাইছিল।
অন্যদিকে, লোকটাকে চূড়ান্ত অবিশ্বাস করার কারণে আমি নিজের মতো অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মনে হয়না আসলে সে ঠিক এটাই চাইছিল? চাইছিল আমরা যা করছি, যেন তাই করি
অনেক বেশি কষ্ট কল্পনা, পেলোরেট ফিসফিস করে বলল।
তাই? যাই হোক, কুইনটেসেটজ এর সাথে যোগাযোগ হলো, কারণ সেই ছিল হাতের
মোটেই না, আমি তাকে চিনতে পারি।
তোমার পরিচিত মনে হয়েছে কিন্তু মনে করতে পারছনা, তার কোনো লেখা পড়েছ কি না। বরং দেখা গেল তোমার লেখা পড়েই সে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সেটা কি স্বাভাবিক? নিজেই স্বীকার করেছ যে তোমার কাজের ব্যাপারে খুব কম লোকই জানে।
আরো কি ঘটল, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক তরুণী আমাদের মাথার ভেতর ঢুকিয়ে দিল গায়া হাইপারস্পেসে হারিয়ে গেছে। কুইনটেসেটজকে জিজ্ঞেস করায় এমন ভাব দেখালো যেন সে এ ব্যাপারে কথা বলতে চায়না। অথচ আমার রুঢ় আচরণ সত্ত্বেও তাড়িয়ে দেয়নি আমাদেরকে। ডেকে নিয়ে গেল বাড়িতে। যাওয়ার পথে পাঁচ বোনের অবস্থান দেখালো, নিশ্চিত হয়ে নিল কেন্দ্রের অনুজ্জ্বল নক্ষত্র আমাদের চোখে পড়েছে। কেন? সবগুলোই অস্বাভাবিক দৈব ঘটনার সংযোগ বলে মনে হয় না?
এভাবে তালিকা তৈরি করতে থাকলে
যে ভাবে খুশী তালিকা বানাও। আমি একসাথে অনেকগুলো অস্বাভাবিক দৈব ঘটনায় বিশ্বাস করি না।
তাহলে এই ঘটনাগুলোর অর্থ কি? আমাদেরকে গায়ার দিকে চালানো হয়েছে?
হ্যাঁ।
কে চালিয়েছে?
এটা নিয়েতো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত না। মাইন্ড এডজাস্ট করার ক্ষমতা কার আছে, কে পারে এখানে ওখানে মৃদু ধাক্কা দিতে, চলমান স্রোতকে এদিক থেকে সেদিকে সরাতে?
তুমি বলতে চাও দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।
বেশ, গায়ার ব্যাপারে আমরা কি জানি? তাকে পরাজিত করা যায় না। যত ফ্লীট পাঠানো হয়েছিল সব ধ্বংস হয়ে গেছে। ওখানে যারা গেছে তারা আর ফিরে আসেনি। এমনকি মিউলও এর বিরুদ্ধে যায়নি–হয়তো ওখানেই মিউলের জন্ম হয়েছে এবং সেটা খুঁজে বের করাই হচ্ছে আমার লক্ষ্য।
পেলোরেট মাথা নাড়ল। কিন্তু ইতিহাসবিদদের মতে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন মিউলকে থামিয়েছিল। সে তাদেরই একজন হয় কি করে?
আমার মনে হয় সে ছিল দলত্যাগী।
কিন্তু কেন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কৌশলে আমাদেরকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে?
ট্র্যাভিজ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখ কোঁচকানো। দেখা যাক এর পেছনে কোনো যুক্তি দাঁড় করানো যায় কি না। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারে একটা কথা আমরা খুব ভালোভাবে জানি, তারা নিজেদের অস্তিত্ব সবসময় গোপন রাখতে সচেষ্ট। একশ বিশ বছরের মধ্যে তারা নিশ্চয়ই গ্যালাক্সিতে ভালোভাবেই গেড়ে বসেছে। অথচ আমি যখন সন্দেহ করতে শুরু করি, আমাকে থামানোর কোনো পদক্ষেপ তারা নেয়নি।
তোমাকে গ্রেফতারের জন্য দোষ দিতে পারো তাদেরকে। এর ফলে টার্মিনাসের মানুষ তোমার কথা জানতে পারেনি। কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই। তারা সফল হয়েছে, হয়তো তারা সেলভর হার্ডিনের কথার প্রতি নিবেদিত প্রাণ, সহিংসতা অযোগ্য লোকের শেষ আশ্রয়স্থল।
মানুষের কাছে গোপন করে কিছু হবে না। মেয়র ব্র্যান্নো জানেন এবং কিছুটা হলেও সন্দেহ করেন আমার কথাই ঠিক। তবে এখন আর তারা কিছু করতে পারবে না। অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রথমেই যদি আমাকে চুপ করিয়ে দিত বা টার্মিনাসে উন্মাদ পাগল বলে প্রমাণ করতে পারত, নিজেরা থাকত পরিষ্কার।
কিন্তু মেয়র যথেষ্ট সন্দেহপ্রবণ। তিনি জানেন আমরা রয়েছি সেশেলে। এবং গতকাল আমাদের অ্যাম্বাসেডর এর কাছে মেসেজ পাঠিয়েছি যে আমরা গায়াতে যাচ্ছি, যদি এখন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আমাদের কোনো ক্ষতি করে, আমি নিশ্চিত মেয়র ব্র্যান্নো ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখবেন এবং অবশ্যই তারা চায়না ফাউণ্ডেশনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে।
যদি তারা এতই ক্ষমতাশালী হয় তাহলে ফাউণ্ডেশনকে ভয় পাওয়ার কি আছে?
ঠিক, ট্র্যাভিজ বলল জোর গলায়। নিজেদের গোপন রেখেছে, হয়তো তারা কিছুটা দুর্বল, কারণ ফাউণ্ডেশন কারিগরি দিক থেকে এত বেশি অগ্রসর হয়েছে যে হয়তো সেলডন নিজেও সেটা কল্পনা করেন নি। যে কৌশলে তারা আমাদেরকে নিজেদের গ্রহের দিকে টেনে নিচ্ছে, তাতে মনে হয় কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছে না। যদি তাই হয় তবে তারা হেরে গেছে, অন্তত আংশিক–কারণ। এরই মধ্যে যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়ে গেছে এবং আমার সন্দেহ পরিস্থিতি আর অনুকূলে আনা যাবে না।
কিন্তু কেন তারা এতকিছু করছে? নিজেদের ধ্বংস করে ফেলছে? আমাদের কাছে কি চায়?
পেলোরেটের দিকে তাকিয়ে ট্র্যাভিজ গর্বিত সুরে বলল, জেনভ, এ ব্যাপারে আমার একটা ধারণা আছে। শূন্য থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার একটা সহজাত গুণ রয়েছে আমার। একটা নিশ্চয়তাবোধ কাজ করে আমার ভেতরে।
সেটাই বলে দেয় কখন আমি ঠিক–এবং এখন আমি নিশ্চিত। কিছু একটা চায় তারা আমার কাছে–যার জন্য নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিপন্ন করে ফেলেছে। সেটা কি আমি জানি না, তবে খুঁজে বের করতে হবে। হালকাভাবে কাঁধ নাড়ল, তুমি এখনো আমার সাথে থাকতে চাও, ওল্ড ফ্র্যান্ড? বুঝতেই পারছ আমি কতখানি। পাগল।
বলেছিইতো, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমি থাকব। পেলোরেট বলল।
আর ট্র্যাভিজ সীমাহীন স্বস্তির হাসি দিয়ে বলল, মার্ভেলাস! কারণ আরেকটা অনুভূতি বলছে পুরো ঘটনাতে তোমারো একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাহলে জেনভ, আমরা গায়ার দিকে এগোচ্ছি, ফুল স্পীড, ফরওয়ার্ড!
.
৫৬.
মেয়র হারলা ব্র্যান্নোর বয়স বাষট্টি, চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ কখনো পড়েনি। অথচ এখন মনে হচ্ছে বৃদ্ধ। আয়নার দিকে কখনো তাকান না, কিন্তু ম্যাপ রুমে যাওয়ার পথে কাঁচে প্রতিফলন দেখে নিজের বিধ্বস্ত চেহারার ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠলেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। জীবনে কোনো রসকষ নেই। পাঁচ বছরের মেয়রশীপ, বারোবছর দুজন ফিগারহেডের পেছনে আসল শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন। সবই ছিল শান্ত নিরুপদ্রব, কিন্তু শুষ্ক। উত্তেজনা-ভয়-বিপদ থাকলে কেমন হতো।
তার জন্য কোনো সমস্যা হতো না, জীবনের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পেতেন। স্রোতে ভাসতে ভাসতে তিনি ক্লান্ত।
একমাত্র সেলডন প্ল্যান সফল হবে এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন সেটা নিশ্চিত করবে। তিনি শুধু শক্ত হাতে ফাউণ্ডেশনের (আসলে প্রথম ফাউণ্ডেশন, কিন্তু টার্মিনাসে কেউ বিশেষণটা যোগ করে না) হাল ধরে রেখেছেন। তিনি এমন এক মহাকাশযানের চালক, যা চালক ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।
ইতিহাসে তার কোনো নাম থাকবে না। এমনকি তৃতীয় ইন্ডবার, মিউলের পরে যে ফাউণ্ডেশন শাসন করেছিল তারও কিছু কৃতিত্ব আছে।
মেয়র ব্র্যান্নোর জন্য কিছু নেই।
যদি না গোলান ট্র্যাভিজ, বুদ্ধিহীন কাউন্সিলম্যান, লাইটনিং রড, সেটা সম্ভব করে তোলে। ম্যাপ এর দিকে তাকালেন তিনি। জিনিসটা আধুনিক কম্পিউটারে তৈরি হয়নি। ত্রিমাত্রিক কাঠামোর মাঝে অনেকগুলো আলোর বিন্দু, ঠিক মাঝখানে গ্যালাক্সির হলোগ্রাফিক প্রতিচ্ছবি। এটাকে নড়ানো যাবে না, ঘোরানো যাবে না, বড় করা যাবে না, বরং এর চারপাশে ঘুরে ঘুরে ম্যাপ দেখতে হবে।
একটা সংযোগ স্পর্শ করতেই, গ্যালাক্সির কিছু অংশ, প্রায় এক তৃতীয়াংশ। (কোর, যাকে ধরা হয় নো-লাইফ অঞ্চল–সেটা বাদ দিয়ে লাল হয়ে গেল। এটাই ফাউণ্ডেশন ফেডারেশন, সাত মিলিয়নেরও বেশি বসগ্রহ, কাউন্সিল এবং তার শাসনাধীন–সাত মিলিয়ন বসতগ্রহ হাউজ অফ ওয়ার্ল্ডের প্রতিনিধি যারা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, এবং কখনোই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাথা ঘামায় না।
আরেকটা সংযোগ স্পর্শ করতেই ফেডারেশনের বাইরের সীমানায় হালকা গোলাপী আভা তৈরি হল। প্রভাব বলয়। এই অঞ্চলগুলো ফাউণ্ডেশন টেরিটোরীর অন্তর্ভুক্ত না, কিন্তু মৌখিকভাবে স্বাধীন হলেও কখনো ফাউণ্ডেশনের সিদ্ধান্তের বাইরে যায় না।
তার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে গ্যালাক্সির কোনো শক্তিই ফাউণ্ডেশনের বিরোধিতা করতে পারবে না, এমনকি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনও না। ইচ্ছা করলেই তারা এখন আধুনিক যুদ্ধযানের সাহায্যে গড়ে তুলতে পারে দ্বিতীয় এম্পায়ার।
কিন্তু মাত্র পাঁচ শতাব্দী পার হয়েছে। পরিকল্পনায় সময় ধরা হয়েছে দশ শতাব্দী। মাথা নাড়লেন মেয়র। ফাউণ্ডেশন এখন কোনো পদক্ষেপ নিলে সেটা ব্যর্থ হতে বাধ্য, যদিও তাদের যুদ্ধযানগুলো অপ্রতিরোধ্য।
যদি না ট্র্যাভিজ, লাইটনিং রড, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের চোখে আলো ফেলতে পারে–সেই আলো তাদেরকে নিয়ে যাবে উৎসের কাছে।
তিনি চারপাশে তাকালেন। কোডেল কোথায়? নষ্ট করার মতো সময় নেই।
যেন তার ভাবনার ডাকে সাড়া দিয়েই লোকটা ভেতরে ঢুকল। হাসছে। কাঁচাপাকা গোফ, ধূসর চামড়া, যেন বুড়ো দাদু। বুড়ো দাদু, কিন্তু বৃদ্ধ না। তার চেয়ে আট বছরের ছোেট।
এমন নিরাসক্ত থাকে কি করে? পনের বছর নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন কোনোই ছাপ ফেলেনি?
.
৫৭.
কোডেল আস্তে মাথা নাড়ল। মেয়রের সাথে কোনো আলোচনা শুরু করার আগে এটুকু অন্তত করতে হয়। প্রথা, অনেক কিছু বদল হলেও কিছু কিছু প্রথা এখনো টিকে আছে।
দুঃখিত, দেরি হয়ে গেছে, মেয়র। ট্র্যাভিজের গ্রেফতারের বিষয়টা এখন কাউন্সিলের অসাড় চামড়ায় হুল ফোঁটানো শুরু করেছে।
ওহ! মেয়র উদাসীন গলায় বললেন। বিদ্রোহ করবে?
কোনো সম্ভাবনা নেই। সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ওরা গোলমাল করছে।
করতে দাও। ওদেরই ভালো হবে, আর আমি আমি দূরে থাকব। সাধারণ মানুষের উপর ভরসা করতে পারি।
পারেন। বিশেষ করে টার্মিনাস থেকে দূরে গিয়ে। একজন খ্যাপাটে কাউন্সিলম্যানের কি হল, সেটা নিয়ে টার্মিনাসের বাইরের কেউ চিন্তা করে না।
আমি করি।
আহ্? কোনো সংবাদ?
লিয়নো, মেয়র বললেন, আমি সেশেলের ব্যাপারে সব জানতে চাই।
আমি দুপেয়ে ইতিহাসের বই না, লিয়নো কোডেল হাসতে হাসতে বলল।
ইতিহাস জানতে চাই না আমি। সত্য ঘটনা জানতে চাই। কেন সেশেল স্বাধীন?–দেখ। গ্যালাকটিক ম্যাপে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত ফাউণ্ডেশনের সীমানার দিকে দেখালেন, প্যাচানো অংশের ঠিক মাঝখানে একটু সাদা রং।
আমরা ওদেরকে প্রায় চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছি, তারপরেও সাদা। ম্যাপে ওদেরকে আমাদের মিত্র হিসেবেও দেখানো হচ্ছে না।
কোডেল কাঁধ ঝাঁকালো। অফিসিয়ালী ওরা আমাদের মিত্র না। কিন্তু আমাদের ঘাটায় না। ওরা নিরপেক্ষ।
ঠিক আছে। এটা দেখ। আরেকটা সংযোগ স্পর্শ করতেই লাল রং আরো ছড়িয়ে পড়ল, এবার গ্যালাক্সির অর্ধেক অংশ জুড়ে। এটা হচ্ছে মিউলের সাম্রাজ্য। দেখ লাল রং ওদেরকে চারপাশ থেকে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে, অথচ সাদা। শুধু এই একটা অঞ্চলকেই মিউল ছেড়ে দিয়েছিল।
তখনো ওরা ছিল নিরপেক্ষ।
নিরপেক্ষতার প্রতি মিউলের কোনো শ্রদ্ধা ছিল না।
হয়তো এক্ষেত্রে হয়েছিল।
হয়তো। কি আছে সেশেলে?
কিছুই না। বিশ্বাস করুন, মেয়র, চাইলেই ওরা আমাদের হাতে চলে আসবে।
তাই? অথচ কোনো কারণে এখনো আমাদের হাতে আসেনি।
চাওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি।
মেয়র চেয়ারে হেলান দিয়ে হলোগ্রাফ বন্ধ করে দিলেন। আমার মনে হয় এখন আমরা ওদেরকে চাই।
পার্ডন, মেয়র?
লিয়নো, ওই বোকা কাউন্সিলম্যানকে আমি একটা লাইটনিং রড হিসেবে মহাকাশে পাঠিয়েছি। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আমার মতে ফাউণ্ডেশনের থেকেও ওকে বড় বিপদ মনে করবে। ওকে থামাতে গিয়ে নিজেদের তারা প্রকাশ করে ফেলবে।
হা, মেয়র!
আমার ইচ্ছা ছিল সে যাবে ট্র্যানটরে। সেখানে গিয়ে লাইব্রেরি খুঁজে দেখবে এবং অনুসন্ধান করবে পৃথিবী। সেই গ্রহ, বিজ্ঞানীরা যাকে মানুষের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচনা করে। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন হয়তো এগুলো বিশ্বাস করত না, এবং আসল ঘটনা জানার জন্য পিছু নিত তার।
কিন্তু ট্র্যানটরে যায়নি সে।
না, অপ্রত্যাশিতভাবে চলে গেছে সেশেল-এ। কেন?
আমি জানি না। দয়া করে আমার মতো এক বৃদ্ধ ব্লাডহাউন্ড–যার কাজ হচ্ছে সবকিছু সন্দেহ করা তাকে ক্ষমা করবেন এবং বলুন কিভাবে আপনি জানেন সে এবং পেলোরেট সেশেল-এ গেছে। আমি জানি কম্পর রিপোর্ট পাঠিয়েছে, কিন্তু কম্পরকে কতখানি বিশ্বাস করা যায়?
হাইপার রিলে থাকায় আমি জানি কম্পরও সেশেল গ্রহে ল্যান্ড করেছে।
নিঃসন্দেহে, কিন্তু আপনি কিভাবে জানেন ট্র্যাভিজ এবং পেলোরেটও ল্যান্ড করেছে। কম্পর হয়তো নিজের প্রয়োজনে সেশেল গেছে এবং অন্যরা কোথায় সেটা হয়তো জানেনা বা পরোয়া করে না।
আসলে সেশেল-এ আমাদের অ্যাম্বাসেডর ট্র্যাভিজ এবং পেলোরেটের মহাকাশযান পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছে। বিশ্বাস করিনা যানটা ওদেরকে ছাড়াই পৌঁছেছে। কম্পর রিপোর্ট পাঠিয়েছে সে কথা বলেছে ওদের সাথে, তাকে বিশ্বাস করা না গেলে, আরেকটা রিপোর্ট অনুযায়ী সেশেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের একজন অধ্যাপকের সাথে কথা বলেছে ওরা দুজন ওরা দুজন।
এর কোনোকিছুই, কোডেল হালকা সুরে বলল, আমি জানি না।
ব্র্যান্নো শক্ত হয়ে গেলেন। ভেবোনা তোমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। ব্যাপারটা আমি ব্যক্তিগতভাবে সামলাচ্ছি। তুমি জানলে এখন খুব বেশি দেরী না করেই। অ্যাম্বাসেডরের কাছ থেকে লেটেস্ট নিউজ এইমাত্র পেলাম। আমাদের লাইটনিং রড আবার নড়াচড়া শুরু করেছে। দুদিন সেশেল গ্রহে থেকেই বেরিয়ে পড়েছে সে। দশ পারসেক দূরের আরেকটা প্ল্যানেটারি সিস্টেমের দিকে এগুচ্ছে। গ্যালাকটিক কো অর্ডিনেটস সে অ্যাম্বাসেডরকে জানিয়েছে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।
কম্পরের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা?
অ্যাম্বাসেডরের আগেই পৌঁছেছে। কম্পর অবশ্য জানে না ট্র্যাভিজ কোথায় যাচ্ছে। হয়তো অনুসরণ করবে।
অনেকগুলো কেনর উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কোডেল বলল। একটা সুগন্ধী বড়ি মুখে দিয়ে গভীর মনযোগে চুষতে লাগল। কেন ট্র্যাভিজ সেশেল গিয়েছিল? কেন সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছে?
আমাকে যে প্রশ্নটা বেশি খোঁচাচ্ছে: কোথায়? ট্র্যাভিজ কোথায় যাচ্ছে?
আপনি তো বললেনই, কো-অর্ডিনেটস সে জানিয়েছে। আপনার ধারণা অ্যাম্বাসেডরের কাছে সে মিথ্যে কথা বলেছে? অথবা অ্যাম্বাসেডরই মিথ্যে কথা বলছে?
সবাই সত্যি কথা বলছে ধরে নিলেও একটা নাম আমার কৌতূহলের কারণ। ট্র্যাভিজ অ্যাম্বাসেডরকে বলেছে সে যাচ্ছে গায়াতে। গা-য়া। নামটা উচ্চারণ করার সময় খুব সতর্ক ছিল।
গায়া? কখনো নাম শুনিনি।
অবশ্যই? আশ্চর্যের কিছুনা। ব্র্যান্নো বাতাসে হাত নেড়ে যেখানে ম্যাপ ছিল সে জায়গাটা দেখালেন। এই ম্যাপে আমি মুহূর্তের মধ্যে প্রতিটা নক্ষত্রের সেটআপ তৈরি করতে পারব–যে নক্ষত্রগুলোকে বসগ্রিহগুলো প্রদক্ষিণ করছে এবং বসতিহীন সিস্টেমসহ অনেক উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র। প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন নক্ষত্রকে মার্ক করা যাবে–এককভাবে, জোড়ায় জোড়ায় বা সবগুলো একসাথে। চাইলেই পাঁচটা রং-এর যে কোনো একটা দিয়ে বা সব রং একসাথে দিয়ে চিহ্নিত করতে পারব। যা পারছি না ম্যাপ-এ সেটা হচ্ছে–গায়াকে লোকেট করতে পারছি না। এই ম্যাপ অনুযায়ী গায়ার কোনো অস্তিত্ব নেই।
সব নক্ষত্র থাকলেও কমপক্ষে দশহাজার নক্ষত্রের অবস্থান ম্যাপে দেখানো হয়নি।
মেনে নিলাম, কিন্তু যে নক্ষত্রগুলোর অবস্থান দেখানো হয়নি সেগুলোর কোনো বসতিগ্রহ নেই। ট্র্যাভিজ কেন একটা বসতিহীন গ্রহে যেতে চাইছে?
সেন্ট্রাল কম্পিউটারে চেষ্টা করেছেন? সেখানে তিনশ মিলিয়ন গ্যালাকটিক নক্ষত্রের সবগুলোর তালিকা আছে।
আমাকেও তাই বলা হয়েছে, কিন্তু আসলেই কি আছে? তুমি আমি ভালোভাবেই জানি যে বেশ কয়েক হাজার বসতিগ্রহের অবস্থান মানচিত্র থেকে বাদ পড়ে গেছে–শুধু এই ঘরেরটাই না, সেন্ট্রাল কম্পিউটারের মানচিত্র থেকেও। গায়া সম্ভবত সেগুলোরই একটা।
কোডেলের কণ্ঠস্বর শান্ত থাকল, মেয়র হয়তো ভাবনার কিছু নেই। ট্র্যাভিজ হয়তো ছুটছে সোনার হরিণের পিছনে অথবা সে মিথ্যে কথা বলেছে। গায়া নামে হয়তো কোনো নক্ষত্র নেই এবং যে কো-অর্ডিনেটস দিয়েছে সেখানে হয়তো আদৌ কোনো নক্ষত্র নেই। আসলে সে আমাদেরকে পিছন থেকে খসাতে চাইছে।
কিভাবে খসাবে? কম্পর এখনো অনুসরণ করবে। না লিয়নো, আমার মাথায় অন্য সম্ভাবনা আছে। সম্ভবত আরো বড় বিপদ। শোন
একটু থামলেন। এই ঘর নিরাপদ। কেউ আমাদের কথা আড়ি পেতে শুনতে পারবেনা। কাজেই খোলাখুলি কথা বলতে পারব।।
প্রাপ্ত তথ্য মেনে নিলে গায়ার অবস্থান সেশেল গ্রহ থেকে দশ পারসেক দূরে এবং সেটা সেশেল ইউনিয়নের অংশ। এই সেশেল ইউনিয়ন গ্যালাক্সির এক বিস্তৃত অংশ। এর প্রতিটা স্টার সিস্টেম এর বাসযোগ্য বা বাস অযোগ্য রেকর্ড রয়েছে। গায়া ব্যতিক্রম। বাসযোগ্য হোক বা না হোক কেউ এর নাম শুনেনি; মানচিত্রে এটা নেই। তাছাড়া ফাউণ্ডেশনের কাছ থেকে সেশেল ইউনিয়ন অদ্ভুত রকম স্বাধীনতা বজায় রেখেছে। গ্যালাকটিক এম্পায়ারের পতনের পর থেকেই সে স্বাধীন।
তাতে কি হয়েছে? কোডেল সতর্ক গলায় জিজ্ঞেস করল।
যে কথা দুটো বললাম, সেগুলোর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো যোগসূত্র আছে। সেশেল এ এমন একটা প্ল্যানেটরী সিস্টেম আছে যার কথা কেউ জানে না এবং সেশেল স্বাধীন। দুটো আলাদা হতে পারে না। গায়া যাই হোক, সে নিজেকে রক্ষা করছে। সতর্ক থাকছে যেন প্রতিবেশীরাও তার খবর না জানে। আবার নিজের স্বার্থেই সে প্রতিবেশীদের রক্ষা করছে যেন বাইরের কেউ তাদেরকে দখল করতে না পারে।
আপনি বলতে চান, মেয়র, গায়াতেই আছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন?
আমি বলতে চাই গায়ার ব্যাপারটা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।
একটা অদ্ভুত ব্যাপার আপনাকে ধরিয়ে দিতে পারি?
বল।
যদি গায়াই হয় দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন, কয়েক শতক বাইরের শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেছে, ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে সেশেল ইউনিয়নকে, এমনকি পুরোপুরি গোপন রাখতে পেরেছে নিজেদেরকে তাহলে এখন কেন সমস্ত গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ছে? ট্র্যাভিজ আর পেলোরেট ট্র্যানটরে না গিয়ে প্রথম সেশেল,তারপর যাচ্ছে গায়া। এখন আপনিও যেতে চাচ্ছেন। কেন আপনাকে থামানো হচ্ছে না?
মেয়র ব্র্যানো অনেকক্ষণ কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে বসে আছেন, ধূসর চুল চকচক করছে। তারপর বললেন, কারণ আমার মনে হচ্ছে কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজ সব ঘোলাটে করে ফেলেছে। সে এমনকিছু করেছে বা করছে–যার ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেলডন প্ল্যান।
একেবারেই অসম্ভব, মেয়র।
আমার মতে কোনো কিছুই নিখুঁত না। এমনকি হ্যারি সেলডনও নিখুঁত ছিলেন, সেলডন প্ল্যানের কোথাও একটা গলদ রয়েছে, ট্র্যাভিজ হয়তো না জেনেই সেটা ধরে ফেলেছে। কি ঘটছে আমাদের জানতে হবে এবং সেখানে যেতে হবে।
কোডেল এতক্ষণে গম্ভীর হলো, নিজেই কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না, মেয়র। অনেক চিন্তা ভাবনা করে এগোতে হবে।
আমাকে বোকা মনে করোনা, কোডেল। যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছি না আমি। গায়াতে কোনো পর্যবেক্ষক দল নামাতে চাইছি না। শুধু সেখানে যেতে চাইছি–যত কাছাকাছি সম্ভব। লিয়নো একশ বিশ বছরের শান্তি আমি নষ্ট করতে চাইনা। তুমি খোঁজ নিয়ে দেখ সেশেল ইউনিয়নের কাছাকাছি আমাদের কতগুলো যুদ্ধযান আছে। এমনভাবে সেগুলোকে মুভ করাও যেন মনে হয় রুটিন টহল।
এসময়ে কাছাকাছি দূরত্বে খুব বেশি যান থাকার কথা না, আমি নিশ্চিত। তবে ব্যবস্থা করা যাবে।
দুইটা বা তিনটা হলেই চলবে, যদি তার একটা হয় সুপারনোভা ক্লাস-এর।
সেগুলো দিয়ে কি করতে চান?
আমি চাই কোনো ঘটনার জন্ম না দিয়েই সেগুলো যেন সেশেলের যত কাছাকাছি সম্ভব পৌঁছে যায় নিজেরাও যেন পরস্পরের কাছাকাছি থাকে।
আপনার উদ্দেশ্য কি?
যদি হামলা করতেই হয় তাহলে যেন কোনো সমস্যা না হয়।
দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের বিরুদ্ধে? যদি গায়া এতদিন নিজেদের গোপন রাখতে পারে এবং মিউলের হাত থেকেও বাঁচতে পারে, কয়েকটা যুদ্ধযান ধ্বংস করা কোনো ব্যাপারই হবে না তাদের জন্য।
ব্র্যান্নো চোখ চকচক করে বললেন, মাই ফ্রেন্ড, কোনোকিছুই নিখুঁত হয়না। এমনকি হ্যারি সেলডনও না। তিনি সীমাহীন কারিগরি উন্নয়নের জন্য তার পরিকল্পনায় কোনো সুযোগ রাখেননি। যেমন গ্র্যাভিটিক্স-এর কথা তিনি চিন্তাও করেন নি হয়তো। এছাড়াও আরো অনেক অগ্রগতি রয়েছে।
গায়াও হয়তো অনেক এগিয়েছে।
নিজেদের গোপন রাখার ব্যাপারে? ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের জনসংখ্যা দশ কোয়াড্রিলিয়ন। কারা বেশি উন্নতি করবে। একটা একক নিঃসঙ্গ গ্রহ সেই তুলনায় কিছুই করতে পারবে না। যুদ্ধযানগুলো তৈরি কর, আমিও সাথে যাবো।
পার্ডন মি, মেয়র। সেটা আবার কি?
সেশেল সীমান্তে যতগুলো যুদ্ধযান যাবে সেগুলোর সাথে আমিও থাকব।
কোডেল-এর মুখ হা হয়ে গেছে। একটা ঢোক গিলে অদ্ভুত স্বরে বলল, সেটা ঠিক হবে না মেয়র।
হোক বা না হোক, মেয়র হিংস্র গলায় বললেন, আমি যাবই। টার্মিনাসের নোংরা রাজনীতি, বিরোধীদল, বেঈমানী দেখে আমি ক্লান্ত। সতের বছর ধরে এগুলোর মাঝখানে বসে আছি। এখন আমি অন্য কিছু করতে চাই, যে কোনো কিছু গ্যালাক্সির পুরো ইতিহাস হয়তো পালটে যাবে–তাতে আমিও চাই অংশ নিতে।
এসব ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেন না, মেয়র।
কে জানে লিয়নো? তিনি দৃঢ় পায়ে উঠে দাঁড়ালেন–সব ব্যবস্থা করে আমাকে জানাও। আর লিয়নো, আমাকে থামানোর কোনো চেষ্টা করো না। ফল ভালো হবে না।
কোডেল দীর্ঘশ্বাস ফেলল, বেশ, তাহলে আমি আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবো।
চমৎকার। কথাটা মনে রেখ। এই কথাটা মাথায় রেখেই গায়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ফরওয়ার্ড!
.
গায়া–স
৫৮.
স্টর জেনডিবল এর মহাকাশযান পুরনো ধরনের। সেটাই তাদেরকে এত পারসেক দূরে বহন করে নিয়ে এসেছে।
ছোট কন্ট্রোল রুমে এসে ঢুকল সুরা নোভী। ক্লিনিং রুমে তেল, গরম বাতাস এবং সামান্য পানি দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করছিল। গায়ে একটা রোব প্যাঁচানো, শক্ত করে দুহাতে ধরে রেখেছে। চুল শুকনো কিন্তু এলোমেলো। মাস্টার। নিচু স্বরে ডাকল সে।
জেনডিবল কম্পিউটার এবং চার্ট থেকে চোখ তুলল, হ্যাঁ, নোভী?
আমি দুঃখিত থেমে গিয়ে আবার ধীরে ধীরে বলল, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত, মাস্টার। কিন্তু আমার কাপড়গুলো পাচ্ছি না।
তোমার কাপড়? জেনডিবলের দৃষ্টি ফাঁকা। তারপর বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো। নোভী, ভুলেই গিয়েছিলাম। ওগুলো পরিষ্কার করার দরকার ছিল। ডিটারজ্যান্ট হ্যাঁম্পারে আছে, ধুয়ে ইস্ত্রী করা। বের করে রাখা উচিত ছিল, কিন্তু মনে ছিল না।
আমি বিরক্তিকর হতে চাইনা।
তুমি বিরক্তিকর না জেনডিবল আমুদে গলায় বলল। শোন, এই ব্যাপারটা শেষ হলে আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে অনেক পোশাকের ব্যবস্থা করে দেব–নতুন এবং লেটেস্ট ফ্যাশনের। খুব তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে হয়েছে, তাই বেশি সাপ্লাই নিতে পারিনি। তবে আমরা দুজন বেশ কিছু সময় একসাথে কাটাচ্ছি। এসব নিয়ে ভাবার খুব বেশি-বেশি- মেয়েটার চোখে আতঙ্কিত দৃষ্টি দেখে সে থেমে গেল, তারপর ভাবল, গ্রাম্য মেয়ে। অন্য কিছু নিয়ে মাথা না ঘামালেও–পোশাকের ব্যাপারে।
একটু লজ্জা পেল এবং খুশী হলো সে। কারণ মেয়েটা স্কলার না। হলে তার সব চিন্তা ধরে ফেলত। কাপড় গুলো আমাকে বের করে দিতে হবে?
না, মাস্টার। লাগবে না–আমি বুঝেছি ওগুলো কোথায় আছে।
এরপর তাকে সে দেখল, পোশাক পরে আসার পর। চুল আচড়ানো। মুখে সামান্য লাজুক ভাব। আমার আচরণের জন্য আমি লজ্জিত, মাস্টার। নিজেরই খুঁজে পাওয়া উচিত ছিল।
কোনো ব্যাপার না, নোভী, জেনডিবল বলল। খুব ভালো গ্যালাকটিক বলতে পারছ। দ্রুত স্পিকারদের ভাষা তোমার আয়ত্তে চলে আসছে।
নোভী হঠাৎ করেই হেসে ফেলল। দাঁতগুলো অসমান হলেও মুখের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। বাড়ি ফেরার পর হ্যামিশরা আমাকে বেশি পাত্তা দেবে না। সে বলল। আমাকে বলবে বাঁচাল, কারণ যারা বেশি অদ্ভুত কথা বলে তাদেরকে ওরা ওই নামে ডাকে।
সন্দেহ আছে, তুমি আর হ্যামিশদের মাঝে ফিরতে পারবে কি না, নোভী? আমি নিশ্চিত যে স্কলারদের সাথেই তোমার থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
খুব ভালো হবে, মাস্টার।
মনে হয়না তুমি আমাকে কখনো স্পিকার জেনডিবল বলে ডাকবে বা না, বলবে-না। নোভীর চোখে জোরালো আপত্তি দেখে সে থেমে গেল। বেশ।
সেটা ঠিক হবে না মাস্টার।–এই সমস্যাটা কখন শেষ হবে।
জেনডিবল মাথা নাড়ল। জানি না। ঠিক এই মুহূর্তে একটা নির্দিষ্ট স্থানে যত দ্রুত সম্ভব পৌঁছতে হবে। এই মহাকাশযান ভালো হলেও ধীর গতির। দ্রুত এগুতে পারছি না। কম্পিউটারের ক্ষমতা সীমিত, চালক হিসেবেও আমি দক্ষ না।
ওখানে নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হবে, সেজন্যই আপনাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে, তাই না মাস্টার?
কেন ভাবলে ওখানে বিপদ হবে, নোভী?
কারণ, কয়েকবারই আমি খেয়াল করেছি আপনি তাকিয়ে আছেন, অথচ আমাকে দেখছেন না আর আপনাকে মনে হয়–শব্দটা আমি জানি না। ভীতু না, অন্য কিছু।
উৎকণ্ঠা, জেনডিবল ফিসফিস করে বলল।
আপনাকে মনে হয়–সচেতন। এই শব্দটা হবে?
নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। সচেতন বলতে কি বোঝাচ্ছ, নোভী?
বলতে চাই যে আপনার চেহারা দেখে মনে হয় যেন নিজেই নিজেকে বলছেন, এই মহাসমস্যা দূর করার জন্য এরপরে আমি কি করব?
জেনডিবল অবাক হয়ে গেল। এটা সচেতনতা কিন্তু, তুমি কি এটা আমার মুখে ধরতে পেরেছ, নোভী? ফিরে গিয়ে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে যেন মুখ দেখে কেউ কিছু ধরতে না পারে। কিন্তু এখানে, এই মহাকাশে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই একটু রিল্যাক্স অবস্থায় ছিলাম। তোমার উপলব্ধি ক্ষমতা খুব বেশি, আমাকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
নোভীর দৃষ্টি ফাঁকা। আমি বুঝতে পারছি না, মাস্টার।
নিজে নিজেই কথা বলছিলাম, নোভী। ভয় পেয়োনা।
কিন্তু ওখানে বিপদ হবে?
একটা সমস্যা, নোভী। জানিনা সেশেলে গিয়ে কি পাবো–ওখানেই আমরা যাচ্ছি। হয়তো গিয়ে একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ব।
তার অর্থ বিপদ না?
না, কারণ আমি সেটা সামলাতে পারব।
কিভাবে বললেন?
কারণ আমি একজন স্কলার। সবার সেরা। গ্যালাক্সিতে এমন কিছু নেই যা আমি সামলাতে পারি না।
মাস্টার, নোভীর মুখে একটু কষ্টের ছাপ পড়ল,আমি আপনার মনে দুঃখ দিতে চাইনা আপনাকে রাগাতে চাইনা। কিন্তু গেয়ো রাফির্যান্ট এর সাথে যখন আপনাকে দেখি তখন আপনি বিপদে ছিলেন। জানিনা অপেক্ষা করছিলেন কেন আপনি কিছু করেন নি।
জেনডিবল হতাশ বোধ করল, তুমি ভয় পেয়েছিলে, নোভী?
নিজের জন্য না, মাস্টার। আমার ভয়–আমি ভয় পেয়েছিলাম আপনার জন্য।
কয়েক মুহূর্ত সে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। তারপর সুরা নোভীর কর্কশ হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, নোভী, আমি চাইনা তুমি ভয় পাও। বুঝিয়ে দিচ্ছি। কিভাবে আমার মুখ দেখে বলে দিলে যে বিপদ হতে পারে প্রায় যেন তুমি আমার। চিন্তা পড়তে পারছ।
হ্যাঁ।
আমি তোমার চেয়েও ভালোভাবে মানুষের ভাবনা চিন্তা পড়তে পারি। স্কলাররা এই কাজটাই শিখে এবং আমি খুব ভালো স্কলার।
নোভীর চোখ বড় হয়ে গেছে, হাত দুটো দুপাশে ঝুলে পড়ল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি আমার চিন্তা পড়তে পারেন?
জেনডিবল দ্রুত একটা আঙ্গুল তুলল। না, নোভী। আমি তোমার চিন্তা পড়িনি। প্রয়োজন না হলে।
(মিথ্যা কথা বলা হয়ে যাচ্ছে। চিন্তার সাধারণ ধারা না বুঝে সুরা নোভীর সাথে বাস করা অসম্ভব। এজন্য দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার হওয়ার প্রয়োজন নেই।)
আমি মানুষের চিন্তার পথ পরিবর্তন করে দিতে পারি। সে বলল। মানুষকে ব্যথা অনুভব করাতে পারি। আমি-.
কিন্তু, নোভী মাথা নাড়ছে। আপনি এত কিছু করতে পারেন, মাস্টার? রাফির্যান্ট।
বাদ দাও রাফির্যান্ট এর কথা, জেনডিবল বিরক্ত সুরে বলল। আমি তাকে প্রথমেই থামাতে পারতাম। মাটিতে গড়াগড়ি দেয়াতে পারতাম। সব হ্যামিশকে হঠাৎ করেই সে থেমে গেল, বুঝতে পারছে আত্মম্ভরিতা হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করছে এই গ্রাম্য মেয়েটাকে সে খুশী করতে।
মাস্টার, নিজের জন্য আমার কোনো ভয় নেই। ভয় আপনার জন্য। আমি জানি আপনি খুব ভালো স্কলার। এই যানটাকে ঠিকই জায়গামতো নিয়ে যাবেন যেখানে অন্য কেউ হলে পথ হারিয়ে ফেলত। এই যন্ত্রপাতিগুলো হ্যামিশরা স্বপ্নেও দেখেনি। তবে মাইন্ড পাওয়ারের কথা বলবেন না, আপনার ওরকম কিছু নেই। রাফির্যান্টকে এত কিছু করবেন বললেন, কই কিছুইতো করেননি। অথচ তখন আপনার ছিল খুব বিপদ।
জেনডিবলের ঠোঁটদুটো শক্ত হয়ে চেপে বসল। থাকুক এভাবেই, ভাবল সে। মেয়েটা যদি মনে করে নিজের কোনো ভয় নেই, মনে করুক। অথচ সে চায় না কেউ তাকে দুর্বল আর অহংকারী মনে করে। আসলেই চায় না।
রাফির্যান্টকে আমি কিছু করিনি, কারণ করতে চাইনি। আমরা স্কলাররা হ্যামিশদের কোনো ক্ষতি করতে চাইনা। তোমাদের গ্রহে আমরা অতিথি। বুঝতে পেরেছ?
আপনারা আমাদের মাস্টার। সবসময় সেটাই মনে করি।
মুহূর্তের জন্য জেনডিবলের চিন্তা অন্য খাতে চলে গেল। তাহলে কেন সে আমাকে হামলা করতে গেল।
আমি জানি না, নোভী সহজ গলায় বলল। মনে হয় না সে জানত। হয়তো সে পাগল হয়ে গিয়েছিল।
মেনে নিল জেনডিবল। যাই হোক, আমরা হ্যামিশদের কোনো ক্ষতি করি না। যদি রাফির্যান্টকে থামাতে গিয়ে কোনোরকম আঘাত করতাম, তখন অন্য স্পিকাররা আমাকে খারাপ চোখে দেখত, দল থেকে বের করে দিত আমাকে। তবে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হয়তো একটু সামাল দিতাম খুবই সামান্য।
আমার তাহলে বোকার মতো মাঝখানে বাধা দেয়া উচিত হয়নি।
তুমি ঠিক কাজটাই করেছ। আমি কিছু করলে ক্ষতি হতো আমারই। তোমার কারণেই আমি বেঁচে গেলাম। সেজন্য কৃতজ্ঞ।
নোভী সুন্দর করে হাসল। বুঝতে পারছি এজন্যই আমার সাথে এত নরম আচরণ করেন।
আমি অবশ্যই তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ, জেনডিবল কিছুটা আরক্তিম হয়ে বলল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তোমাকে বুঝতে হবে সামনে কোনো বিপদ নেই। সাধারণ মানুষের একটা সেনাবাহিনী আমি সামলাতে পারব। যে কোনো স্পিকারই পারবে–বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ একজন আর আমি হচ্ছি সবার সেরা। গ্যালাক্সিতে এমন কেউ নেই যে আমার সামনে দাঁড়াতে পারবে।
আপনি যা বলবেন, মাস্টার, আমি সব বিশ্বাস করব।
আমি ঠিকই বলছি। এখনো তুমি আমার জন্য ভয় পাচ্ছ?
না, মাস্টার, শুধু মাস্টার, শুধু আমাদের স্কলাররাই মাইন্ড পড়তে পারে এবং অন্য কোথাও আর কোনো স্কলার নেই?
জেনডিবল হতবুদ্ধি হয়ে গেল। একেবারে আসল জায়গায় টোকা মারার একটা অস্বাভাবিক গুণ রয়েছে মেয়েটার। সত্যি কথা অবশ্যই বলা যাবে না, না নেই।
কিন্তু অনেকগুলো নক্ষত্র আছে। একবার গোনার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। যদি যতগুলো নক্ষত্র আছে ততগুলো গ্রহে মানুষ বাস করে, সেগুলোর কোনো কোনোটাতে নিশ্চয়ই স্কলার আছে। আমাদের নিজেদের গ্রহ বাদ দিয়ে অবশ্যই।
না।
যদি থাকে, তাহলে কি হবে? তারা আমার মতো শক্তিশালী হবে না।
কিছু বোঝার আগেই ওরা যদি আপনার উপর চেপে বসে?
পারবে না। যদি কোনো অচেনা স্কলার আসতে থাকে আমি সেটা বুঝতে পারব। কোনো ক্ষতি করার অনেক আগেই জানতে পারব।
আপনি পালাতে পারবেন?
পালাতে হবে না। কিন্তু যদি পালাতে হয়ই, শিগগিরই আমরা গ্যালাক্সির সবচেয়ে ভালো মহাকাশযানে চড়ব। কেউ আমাদের ধরতে পারবে না।
ওরা আপনার চিন্তা পরিবর্তন করে আপনাকে আটকে দিতে পারে?
না।
ওরা অনেক হতে পারে। কিন্তু আপনি একা।
ওরা আমার কাছাকাছি আসার অনেক আগেই জানতে পারব। তখন দূরে সরে যাবো। তারপর আমাদের স্কলারদের পুরো গ্রহ তাদের বিরুদ্ধে লাগবে। ওরা টিকতে পারবে না, সেটা জানে বলেই আমার কোনো ক্ষতি করবে না।
কারণ আপনি ওদের চেয়ে শক্তিশালী। নোভী বলল, চেহারায় গর্ব।
মেয়েটা সাথে থাকা বেশ আনন্দের ব্যাপার, জেনডিবলের মনে হলো। সহজ সরল বুদ্ধিমত্তা, সবকিছু সহজে বুঝে নেয়ার ক্ষমতা-চমৎকার। এই হ্যামিশ ফার্মওম্যানকে তার কাঁধে চাপিয়ে স্পিকার ডেলোরা ডেলারমি উপকারই করেছে বলতে হবে।
না, নোভী, সে বলল, আসল কারণ আমার সাথে রয়েছ তুমি।
আমি?
ঠিক, নোভী। বুঝতে পারনি?
না, মাস্টার, অবাক সুরে বলল। আমি কি করতে পারব?
তোমার মাইন্ড। সাথে সাথে দুহাত তুলে জেনডিবল আবার বলল, আমি তোমার চিন্তা পড়িনি। আমি শুধু তোমার মাইন্ডের আউটলাইন দেখেছি। একেবারে মসৃণ আউটলাইন।
কপালে একটা হাত রাখল নোভী। কারণ আমি অশিক্ষিত? কারণ আমি বোকা?
না ডিয়ার। নিজের অজান্তেই সম্বোধন পালটে গেছে। কারণ তুমি সৎ, নিষ্পাপ; তুমি সত্যবাদী; তুমি আন্তরিক। যদি অন্য কোনো স্কলার আমাদের মাইন্ড তোমার এবং আমার মাইন্ড–ছোঁয়ার জন্য কিছু পাঠায়–তোমার মাইন্ডের মসৃণ পৃষ্ঠে সেই স্পর্শ খুব জোরালোভাবে ধরা পড়বে। নিজের মাইন্ডে কোনো স্পর্শ অনুভব করার আগেই আমি সেটা ধরতে পারব। তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব।।
তারপর দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ। নোভীর চোখে জেনডিবল আনন্দ ও অহংকারের ছোঁয়া দেখতে পারছে। মৃদু সুরে বলল, সেজন্যই আপনি আমাকে সাথে নিয়ে এসেছেন?
জেনডিবল মাথা নাড়ল। একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, হ্যাঁ।
নোভী ফিসফিস করে বলল, আমি কিভাবে এত সাহায্য করব, মাস্টার।
শান্ত থাক। ভয় পেয়োনা। এবং ঠিক ঠিক যেমন আছ, তেমনই থাক।
আমি যেমন আছি তেমনই থাকব। এবং বিপদ আর আপনার মাঝখানে দাঁড়াব। বলেই নোভী বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, জেনডিবল পিছন থেকে তাকিয়ে আছে।
অদ্ভুত মেয়ে। সহজ সরল অথচ কত জটিল। মাইন্ড এর মসৃণ কাঠামোর নিচে রয়েছে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর সাহস। সুরা নোভীকে সে মানসচোখে দেখতে পারল–স্পিকার না, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার না, এমনকি শিক্ষিতও না–অথচ যে নাটক অভিনীত হতে যাচ্ছে তাতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সে জানে না সামনে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।
.
৫৯.
একটা সিঙ্গেল জাম্প, ফিসফিস করে বলল ট্র্যাভিজ। তারপর পৌঁছে যাবো।
গায়া? পেলোরেট জিজ্ঞেস করল, ট্র্যাভিজের কাঁধের উপর দিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
গায়ার সূর্য, যাতে গুলিয়ে না যায় এটাকে ডাকতে পারো গায়া-স। গ্যালাকন্ট্রোগ্রাফাররা মাঝে মাঝে এমন করে।
গায়া কই, তাহলে? নাকি বলব গায়া-পি। পি ফর প্ল্যানেট।
শুধু গায়া বললেই চলবে। এখনো দৃষ্টিসীমার মধ্যে আসেনি। নক্ষত্র যত সহজে দেখা যায়, গ্রহ তত সহজে দেখা যায় না। আমরা গায়া-স থেকে এখনো একশ মাইক্রোপারসেক দূরে। মনে রাখবে এটা শুধুই একটা নক্ষত্র, যদিও বেশ উজ্জ্বল। যথেষ্ট কাছে পৌঁছাইনি–তারপরেও রেটিনার ক্ষতি করতে পারে। কাজেই সরাসরি তাকাবে না। ফিল্টার নামানোর পর তাকাবে।
একশ মাইক্রোপারসেক-এ কতটুকু দূরত্ব হয়, গোলান। একজন মিথলজিষ্ট এর বোঝার মতো করে বল।
তিন বিলিয়ন কিলোমিটার। আমাদের নিজস্ব সূর্য থেকে টার্মিনাসের দূরত্বের বিশগুণ বেশি। চলবে?
চমৎকার। কিন্তু আমরা আর কাছে যাবো না?
না! ট্র্যাভিজ অবাক হয়ে চোখ তুলল। এখনই না। গায়া সম্বন্ধে এত কিছু শোনার পর, তাড়াহুড়ো করার কোনো মানে হয়? সেজন্য যথেষ্ট সাহস আর পাগলামী দরকার। বরং একটু দেখে নেই।
কি দেখবে, গোলান? তুমি বলেছ গায়া এখনো দেখা যাচ্ছে না।
খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না বটে। কিন্তু আমাদের টেলিস্কোপিক ভিউয়ারস এবং চমৎকার একটা কম্পিউটার আছে। এখানে বসেই সূর্য এবং আরো অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করা যাবে।-রিল্যাক্স, জেনভ। সাহস দেয়ার ভঙ্গিতে পেলোরেটের কাঁধ চাপড়ে দিল সে।
একটু থেমে ট্র্যাভিজ আবার বলল, গায়া একা, কোনো সঙ্গী থাকলেও সেটা অনেক দূরে। সম্ভবত একটা বামন তারা, মাথা না ঘামালেও চলবে। গায়া জি-ফোর নক্ষত্র। তার মানে অবশ্যই বাসযোগ্য গ্রহ আছে। এটা এ বা এম শ্রেণীর হলে এখনি আমাদের পালাতে হতো।
আমরা তো সেশেল থেকেই জেনে এসেছিলাম যে গায়া স্পেকট্রাল শ্রেণীর।
জেনেছিলাম, জেনভ। চোখে দেখে নিশ্চিত হতে কোনো দোষ নেই। গায়া-স এর একটা প্ল্যানেটারি সিস্টেম আছে, অবাক হওয়ার কিছু নেই এতে। দুটো গ্যাস জায়ান্ট দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে একটা বিশাল। নক্ষত্রের অপর পাশে আরেকটা থাকতে পারে, দেখা যাচ্ছে না। কক্ষপথের আরো কাছে যেতে হবে। ইনার রিজিওনেও কিছু নেই।
সেটা কি খুব খারাপ?
না, আশা করেছিলাম। বাসযোগ্য গ্রহতে অবশ্যই পাথর এবং ধাতু থাকবে। গ্যাস জায়ান্টগুলো থেকে অনেক ছোট হবে এবং অবশ্যই সূর্যের অনেক কাছে। থাকবে। এখান থেকে কোনোভাবেই দেখা যাবে না। সূর্যের আরো কাছে যেতে হবে, প্রায় চার মাইক্রোপারসেক এর মধ্যে পৌঁছতে হবে।
আমি তৈরি।
আমি তৈরি না। জাম্প করব আগামীকাল।
কেন?
কেন নয়? ওদেরকে একটা দিন দিতে চাই আমাদের কাছে এগিয়ে আসার জন্য–এবং আমরাও যাতে সরে পড়ার একটা সুযোগ পাই, যদি ওদের এগুনোর ভঙ্গি আমার পছন্দ না হয়।
.
৬০.
ধীর এবং সতর্ক একটা প্রক্রিয়া। সারাদিন ধরে ট্র্যাভিজ বিভিন্ন হিসাব নিকাশের মাধ্যমে একটা পথ বের করার চেষ্টা করল। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে সে অনুমানের উপর নির্ভর করছে। লাভ হচ্ছে না। ভেতরের নিশ্চয়তাবোধটা আর কাজ করছে না এখন।
সবচেয়ে বড় গ্যাস জায়ান্ট গায়া-স এর যত কাছে তারা এখন ঠিক তত কাছে। পৌঁছে গেছে, প্রায় আধা বিলিয়ন কিলোমিটার এর মধ্যে। ট্র্যাভিজ ম্যাগনিফাই করে রেখেছে যেন পেলোরেটের সুবিধা হয়। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বলয়গুলো বাদ দিলে দৃশ্যটা খুব চমৎকার।
স্বাভাবিক গ্রহ বিন্যাস, ট্র্যাভিজ বলল, কিন্তু এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোনোটাই বাসযোগ্য না। গ্লাসডোম বা অন্য কোনো কৃত্রিম উপায়ে মানুষ এখানে বসতি স্থাপন করে নি।
কিভাবে বললে?
এমন কোনো বেতার তরঙ্গ পাচ্ছিনা যাতে বোঝা যায় ওখানে বুদ্ধিমান প্রাণী আছে। অবশ্য, নিজের বক্তব্য একটু সংশোধন করে বলল, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রগুলো বেতার সংকেত লুকানোর জন্য ব্যবস্থা করে। আর আমি যা চাই তা ঐ গ্যাস জায়ান্টের কারণে ধরা পরবে না। তবে আমাদের বেতার গ্রাহক যন্ত্র আর কম্পিউটার খুব উন্নতমানের। আমি শুধু বলব ঐ দুটো গ্রহে মানুষ বাসের সম্ভাবনা খুবই কম।
তার মানে গায়া নেই ওখানে?
না, তবে বোঝা যাচ্ছে, যদি গায়া থাকে, সে এই গ্রহগুলোতে বসতি স্থাপন করেনি। হয়তো তার পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই বা আগ্রহ নেই।
বেশ, গায়া আছে তো?
ধৈর্য জেনভ, ধৈর্য ধরো।
ট্র্যাভিজ সীমাহীন ধৈর্যের সাথে আকাশ দেখতে লাগল। এক পর্যায়ে বলল, সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের ধরার জন্য ওরা এগিয়ে না আসায় আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। ওদের ব্যাপারে এত কিছু শুনেছি তাতে আশা করেছিলাম দ্রুত কিছু একটা ঘটবে।
বোধহয় পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা, পেলোরেট বিষণ্ণ সুরে বলল।
বরং বল পৌরাণিক কাহিনী, জেনভ, ট্র্যাভিজ হতাশ হেসে বলল, একটা কানাগলি। যাই হোক ইকোস্ফেয়ারে আরেকটা গ্রহ ধরা পড়েছে, বাসযোগ্য হতে পারে। আমি অন্তত একদিন সেটাকে পর্যবেক্ষণ করতে চাই।
কেন?
নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে ওটা বাসযোগ্য।
তুমি এই মাত্র বলেছ ইকোস্ফেয়ারে ধরা পড়েছে, গোলান।
হ্যাঁ, এই মুহূর্তে ঠিক তাই। কিন্তু এর কক্ষপথ গোলমেলে হতে পারে। হয়র্তো নক্ষত্রের খুব কাছ দিয়ে বা দূর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। দুরকমও হতে পারে। গায়া-স থেকে এই গ্রহের দূরত্ব, ঘূর্ণন গতি দুটোই হিসাব করে তুলনা করতে হবে।