৩. পৃথিবী

পৃথিবী

২১.

ট্র্যাভিজ রেগে আছে আর প্রচণ্ড বিরক্ত। সে আর পেলোরেট বসে আছে, ডাইনিং রুমে। কিছুক্ষণ আগে দুপুরের খাবার খেয়েছে।

পেলোরেট বলল, দুদিন ধরে আমরা মহাকাশে রয়েছি, কিন্তু আমার সমস্যা হচ্ছে না, যদিও বিশুদ্ধ বায়ু, প্রকৃতি ইত্যাদির অভাব রয়েছে। আশ্চর্য! এই জিনিসগুলো যখন আমার চারপাশে ছিল তখন খুব একটা খেয়াল করিনি। আমার ওয়েফার আর তোমার চমৎকার কম্পিউটারের কারণে পুরো লাইব্রেরি নিয়ে আসতে পেরেছি এখানে। এবং মহাকাশ সম্বন্ধে আমার ভয় কেটে গেছে। সত্যিই অদ্ভুত।

ট্র্যাভিজ কোনো কথা না বলে শুধু মৃদু শব্দ করল। ভিতরের দিকে তাকিয়ে আছে।

পেলোরেট মৃদু গলায় বলল, তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনা, গোলান, কিন্তু মনে হচ্ছে আমার কথা শুনছনা তুমি। যদিও আমি খুব একটা আকর্ষণীয় না, সব সময়ই বিরক্তিকর। তবে আমার মনে হচ্ছে তুমি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত।-কোনো বিপদে পড়েছি? আমাকে বলতে ভয় পেয়ো না। কিছু করতে পারব না হয়তো। কিন্তু আতঙ্কে উন্মাদও হয়ে যাবনা।

বিপদ? ট্র্যাভিজ মনে হলো ফিরে আসছে অন্য এক জগৎ থেকে, ভুরু সামান্য কুঁচকে আছে।

আমি মহাকাশযানের কথা বলছি। নতুন মডেল, তাই আমার মনে হচ্ছে। কোথাও কোনো ভুল হয়েছে। অনিশ্চিতভাবে হাসল পেলোরেট।

ট্র্যাভিজ জোরে জোরে মাথা নাড়ল। বোকার মতো আমি তোমাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলে রেখেছি, জেনভ। মহাকাশযানে সমস্যা নেই। ভালভাবেই চলছে। আসলে আমি খুঁজছি একটা হাইপার রিলে।

আচ্ছা,–হাইপার রিলেটা কি?

বেশ, বুঝিয়ে দিচ্ছি, জেনভ। টার্মিনাসের সাথে আমরা যখন প্রয়োজন হবে তখনই যোগাযোগ করতে পারব এবং টার্মিনাসও আমাদের সাথে যখন তখন যোগাযোগ করতে পারবে। তারা মহাকাশযানের অবস্থান জানে, গতিপথ চিহ্নিত করতে পারবে। এই যদি নাও করে, তারা কাছাকাছি মহাকাশ স্ক্যান করে আমাদেরকে খুঁজে নিতে পারবে, স্ক্যানিং তাদেরকে সতর্ক করে দেবে মহাকাশযান বা মেটিওরাইট-এর ব্যাপারে। তাছাড়া তারা এনার্জি প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে পারে, সেটা মহাকাশযানকে শুধু মেটিওরাইট থেকেই আলাদা করে না, বরং প্রত্যেকটি যান আলাদাভাবে চিহ্নিত করে, কারণ দুইটা যানের এনার্জির ব্যবহার কখনো এক হয় না। যেভাবেই হোক আমাদের প্যাটার্নও কিছুটা আলাদা হবে, কোন সুইচ চালু করলাম, কোনটা বন্ধ করলাম সেটা কোনো ব্যাপার না। আমাদের যান হতে পারে নতুন মডেলের, কিন্তু এর এনার্জি প্যাটার্ন অবশ্যই টার্মিনাসে রেকর্ড করা আছে।–তাই আমাদের খুঁজে বের করে ফেলবে সহজেই।

আমার মনে হয়, গোলান, সভ্যতা যতই উন্নত হচ্ছে মানুষের প্রাইভেসি ততই নষ্ট হচ্ছে।

তুমি হয়তো ঠিকই বলেছ। যাই হোক, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা হাইপার স্পেসে চলে যাব। হাইপার স্পেস দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা আসলে সাধারণ স্পেসকে ছেদ করে যাব। এখান থেকে ওখানে যাব কিন্তু এই দূরত্বটাই কখনো হবে একশ পারসেক-এর সমান বা তারও বেশি সময় লাগবে মাত্র কয়েক মুহূর্ত। হঠাৎ করেই আমরা এত দূরে চলে যাব যে খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।

আচ্ছা, তারপর।

যদি তারা আমাদের যানে কোনো হাইপার রিলে না বসায়। হাইপার রিলে হাইপার স্পেসের মধ্য দিয়েও সিগন্যাল পাঠাতে পারবে এই যানের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সিগন্যাল-এবং টার্মিনাসের কর্তৃপক্ষ সবসময়ই জানবে আমরা কোথায় রয়েছি। এটাই হচ্ছে তোমার প্রশ্নের উত্তর। গ্যালাক্সির কোথাও গিয়ে আমরা লুকাতে পারব না বা এমনভাবে হাইপার স্পেসে জাম্প করতে পারব না, যাতে করে তাদের যন্ত্রপাতির হাত থেকে বাঁচা যাবে।

কিন্তু, গোলান, পেলোরেট নরম সুরে বলল, আমাদের তো ফাউণ্ডেশনের প্রটেকশনের প্রয়োজন আছে, তাই না?

হ্যাঁ, জেনভ, কিন্তু শুধু তখনই, যখন আমরা চাইব। তুমি বলেছিলে সভ্যতার অগ্রগতি প্রাইভেসী কমিয়ে দিচ্ছে।–বেশ, আমি অত সভ্য হতে চাই না। স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে চাই–যদি না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি প্রটেকশন চাইব। কাজেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব, খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব যদি এখানে কোনো হাইপার রিলে না থাকে।

পেয়েছ একটাও, গোলান?

না, পাইনি। যদি পাই তাহলে কোনো না কোনো ভাবে বন্ধ করে দিতে পারব।

 তুমি দেখলে চিনতে পারবে?

এটা একটা সমস্যা। হয়তো চিনতে পারব না। একটা সাধারণ হাইপার রিলে দেখতে কেমন আমি জানি এবং জানি কিভাবে সন্দেহজনক বস্তু পরীক্ষা করতে হয়–কিন্তু এটা একটা আধুনিক যান, বিশেষ কাজের জন্য ডিজাইন করা। হয়তো এর নিজস্ব ডিজাইনেই একটা হাইপার রিলে বসানো হয়েছে, এমনভাবে যেন সহজে পাওয়া না যায়।

এমন তো হতে পারে, হয়তো কোনো হাইপারা ৰিলে নেই, সে কারণেই তুমি খুঁজে পান।

স্বপ্নেও কথাটা চিন্তা করতে পারি না আর নিশ্চিত না হয়ে হাইপার স্পেসে জাম্প করবনা।

পেলোরেটকে আনন্দিত মনে হলো। একারণেই আমরা মহাকাশে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছি। ভেবে অবাক হচ্ছিলাম আমরা এখনো জাম্প করিনি কেন। আমি জাম্প। এর কথা শুনেছি। সত্যি কথা বলতে কি কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি–ভাবছিলাম কখন তুমি বলবে কোনো বিশেষ পোশাক পরতে বা কোনো ট্যাবলেট খেতে।

কষ্ট করে একটু হাসল ট্র্যাভিজ। কিছু করার প্রয়োজন নেই। এটা প্রাচীন যুগ না। এই ধরনের একটা যানে সব কম্পিউটারের হাতে ছেড়ে দিতে পারো। তুমি শুধু নির্দেশ দেবে, সেটা করে দেবে কম্পিউটার। বুঝতেই পারবে না কিছু ঘটেছে, শুধু মাত্র বাইরের মহাকাশের দৃশ্য বদলে যাবে হঠাৎ করে। যদি স্লাইড শো কখনো। দেখে থাক তাহলে বুঝতে পারবে একটা স্লাইড সরিয়ে আরেকটা স্লাইড বসালে কেমন দেখায়। হাইপার স্পেস জাম্পও ঠিক তেমন।

যাহ্। কেউ কিছু বুঝতে পারবে না? আশ্চর্য! আমার কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।

আমি কখনোই কিছু বুঝতে পারিনি এবং যে যানগুলোয় চড়েছিলাম সেগুলো এই খেলনাটার মতো আধুনিক ছিল না। তারে শুধু হাইপার রিলের কারণে জাম্প দেরি করছিনা। আমাদেরকে টার্মিনাস থেকে আরো দূরে সরতে হবে-সূর্যের কাছ থেকেও দূরে সরতে হবে। বিশাল বস্তুগুলোর কাছ থেকে যত দূরে থাকব, জাম্প। নিয়ন্ত্রণ করা হতো সহজ হবে, মহাকাশের নির্দিষ্ট কো-অর্ডিনেটসে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনের সময় ইচ্ছা করলে তুমি কোনো গ্রহের মাত্র দুইশ কিলোমিটার উপর থেকেই জাম্প করতে পারো, তারপর নিরাপদে শেষ করার জন্য তোমাকে নির্ভর করতে হবে ভাগ্যের উপর। হয়তো কোনো বিশাল নক্ষত্র বা গ্যালাটিক কোর এ গিয়ে পড়বে এবং চোখের পলক ফেলার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। মহাকাশের বিশাল বস্তুগুলোর কাছ থেকে যত দূরে সরবে এধরনের বিপদের সম্ভাবনা ততই কমবে।

সে ক্ষেত্রে, আমি তোমার সতর্কতার প্রশংসা করছি। আমাদের খুব একটা অড়াহুড়ো নেই।

ঠিক। বিশেষ করে যেহেতু অন্য কিছু করার আগে আমি হাইপার রিলেটা খুঁজে বের করতে চাই।–অথবা যেভাবেই হোক নিজেকে সন্তুষ্ট করতে চাই যে এখানে কোনো হাইপার রিলে নেই।

ট্র্যাভিজ আবার ডুবে গেল তার নিজের চিন্তায় এবং পেলোরেট তাকে সচেতন করার জন্য গলার স্বর উঁচু করল, আমাদের হাতে সময় কত আছে?

কি?

বলতে চাচ্ছি হাইপার রিলের ব্যাপারে নিশ্চিত হলে কখন তুমি জাম্প করবে, মাই ডিয়ার চ্যাপ?

বর্তমান অবস্থান ও গতিতে বলা যায় আমরা মহাকাশে বেড়িয়ে আসার চতুর্থ দিনে জাম্প করব। সঠিক সময়টা বের করব কম্পিউটারে।

বেশ, খোঁজাখুঁজির জন্য তোমার হাতে সময় আছে দুদিন। আমি একটা প্রস্তাব রাখতে পারি?

বল।

আমার নিজের কাজের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখেছি–অবশ্যই তোমার কাজ থেকে আমার কাজ আলাদা, কিন্তু নিয়মটা হয়তো খাটানো যাবে নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে সারাক্ষণ মাথা ঘামালে লাভ হয় না। বরং আরাম কর, অন্য বিষয় নিয়ে কথা বল। এবং সচেতনভাবে একাগ্র চিন্তা না করে তোমার অবচেতন মনকে সমস্যার সমাধান করতে দাও।

ট্র্যাভিজ মনে হলো বিরক্ত হয়েছে, কিন্তু তারপরই হেসে ফেলল। বেশ, কেন নয়?–বল প্রফেসর, পৃথিবীর প্রতি তুমি আগ্রহী হয়ে উঠলে কেন? আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে একমাত্র এই নির্দিষ্ট গ্রহ থেকে, এমন অস্বাভাবিক ধারণা তোমার কেন হলো?

আহ্! স্মৃতিচারণের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল পেলোরেট। সেজন্য একটু পেছনে যেতে হবে। প্রায় ত্রিশ বছর পেছনে। যখন কলেজে ভর্তি হই, ইচ্ছা ছিল বায়োলজিস্ট হব। আমার মূল আগ্রহ ছিল বিভিন্ন গ্রহের জীব প্রজাতিগুলোর পার্থক্য নিয়ে। তুমি হয়তো জানো, তবু বলছি–পার্থক্য ছিল খুব সামান্য। সব ধরনের জীবন–অন্তত আমরা যতগুলো চিহ্নিত করেছি-সবগুলোই একই ওয়াটার বেজড প্রোটিন / নিউক্লিয়িক এসিড রসায়ন অনুসরণ করে চলে।

মিলিটারী, কলেজে, ট্র্যাভিজ বলল নিওক্লিওনিক্স এবং গ্র্যাভিটিক্স পড়ানো হতো। আমি অবশ্য বিশেষজ্ঞ হতে পারিনি। জীবনের রাসায়নিক উপাদান সম্বন্ধে খুব কমই জানি। আমাদের শেখানো হয়েছে যে পানি, প্রোটিন, এবং নিউক্লিয়িক এসিড হচ্ছে জীবনের সম্ভাব্য উপাদান।

এটা আমার মতে একটা অন্যায্য সমাধান। বরং বলা ভালো যে জীবনের অন্য কোনো ধরন পাওয়া যায়নি বা আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। যাইহোক, সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে স্থানীয় প্রজাতিগুলো যেগুলো শুধু নির্দিষ্ট গ্রহেই দেখা যায় সংখ্যায়ও খুব কম। বাসযোগ্য গ্রহগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষসহ অন্যান্য জীবপ্রজাতিগুলোর মধ্যে বায়োকেমিক্যালি এবং মরফোলজিক্যালি খুব কাছাকাছি। মিল রয়েছে। আর স্থানীয় প্রজাতিগুলো একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বেশ তাতে কি প্রমাণ হয়?

সমাধান হচ্ছে, গ্যালাক্সির একটা গ্রহ–মাত্র একটা গ্রহ–বাকীগুলো থেকে। সম্পূর্ণ আলাদা। দশ মিলিয়ন গ্রহ রয়েছে গ্যালাক্সিতে-সঠিক সংখ্যা কেউই বলতে পারবে না-জীবনের উদ্ভব ঘটিয়েছে। নিচু প্রজাতির, ক্ষণস্থায়ী, বৈচিত্র্যহীন বংশবিস্তারে অক্ষম জীবন। একটা গ্রহ, মাত্র একটা গ্রহ একা মিলিয়ন প্রজাতির জীবনের উদ্ভব ঘটিয়েছে। তার ভেতর কয়েকটি অতি উন্নতমানের, দ্রুত বংশ বিস্তারে সক্ষম। উন্নত প্রজাতির ভেতর আমরাও পড়ি। আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান, সভ্যতা স্থাপন, হাইপারেস্পেশাল ফ্লাইটের উন্নয়ন, গ্যালাক্সিতে কলোনি স্থাপনের মতো যথেষ্ট বুদ্ধিমান। গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে পড়ার সময় আমরা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত লাইফ-ফর্ম বহন করে আনি।

এভাবে চিন্তা করা থামাও, ট্র্যাভিজ নিরাসক্ত গলায় বলল। আমার মতে যুক্তি একটা আছে। অর্থাৎ আমরা রয়েছি একটা হিউম্যান গ্যালাক্সিতে। যদি ধরে নেই যে শুরু হয়েছিল কোনো একটা মাত্র গ্রহ থেকে, সেই একটা গ্রহ অবশ্যই হবে আলাদা। হবে না কেন? এমন বুনোভাবে জীবন উৎপত্তির সম্ভাবনা খুব কম–একশ মিলিয়নের এক ভাগ–কাজেই একশ মিলিয়নের মধ্যে একটা প্রাণ-বহনকারী গ্রহের সম্ভাবনা মেনে নিলে তোমার কথা ঠিক আছে।

কিন্তু সেটা কি, যা এই নির্দিষ্ট গ্রহকে অন্য গ্রহ থেকে আলাদা করেছে? পেলোরেট উত্তেজিত স্বরে বলল। কোন ধরনের পরিবেশের কারণে এটা পরিণত হয়েছে একক বৈশিষ্ট্যের গ্রহে?

হয়তো কাকতালীয়ভাবে হয়ে গেছে। তাছাড়া হিউম্যান বিয়িং এবং তারা যে সকল লাইফ ফর্মগুলো নিয়ে এসেছিল সেগুলো এখন দশ মিলিয়ন গ্রহে ছড়িয়ে আছে, সবগুলোই টিকে আছে ভালভাবে, কাজেই ঐ গ্রহগুলোও যথেষ্ট ভালো।

না! মানবজাতি ছড়িয়ে পড়ার পর, কারিগরি উন্নয়নের পর, টিকে থাকার যুদ্ধে। জয়ী হওয়ার পর ঐসব গ্রহে নিজেদের প্রয়োজনীয় প্রাণের বিকাশ ঘটিয়েছে উদাহরণ হিসেবে টার্মিনাসের কথা বলা যায়। তুমি বলতে পারবে টার্মিনাসে উন্নত প্রাণের বিকাশ ঘটেছিল? এনসাইক্লোপেডিষ্টদের যুগে যখন টার্মিনাসে মানুষের প্রথম পা পড়ে তখন সেখানে সবচেয়ে উন্নত উদ্ভিদ ছিল পাথরের উপর জন্মানো শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ। সবচেয়ে উন্নত প্রাণী ছিল সাগরে জন্মানো প্রবালের মতো কিছু কীট এবং মাটিতে উড়তে সক্ষম কিছু পতঙ্গ। সেগুলোকে আমরা বিনাশ করে সাগর এবং মাটি মাছ, খরগোশ, ছাগল, ঘাস, শস্য, গাছপালা দিয়ে ভরিয়ে তুলি। স্থানীয়ভাবে বিকশিত প্রাণের কিছুই অবশিষ্ট নেই, যা আছে তা শুধু চিড়িয়াখানা এবং অ্যাকুয়ারিয়ামে।

হুম, ট্র্যাভিজ বলল।

পেলোরেট তার দিকে তাকিয়ে থাকল প্রায় এক মিনিট, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তুমি আসলে আগ্রহী না, তাই না? স্বাভাবিক! কাউকেই আগ্রহী মনে হয়নি। কখনো। বোধহয় আমারই দোষ। বিষয়টা আমার কাছে এত আকর্ষণীয় মনে হয়, কিন্তু অন্য কারো কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি নি।

বিষয়টা আকর্ষণীয়। বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু কিন্তু তাতে কি? ট্র্যাভিজ বলল।

তোমার একবারও মনে হয়নি এই গ্রহ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, যে গ্রহ একাই তৈরি করেছিল একটা সমৃদ্ধ ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স, যা গ্যালাক্সির আর কোথাও হয়নি?

হয়তো বা, যদি তুমি বায়োলজিষ্ট হও।–আমি তা নই, তুমি জানো। কাজেই মাফ করতে হবে।

অবশ্যই, বন্ধু। আসলে কোনো বায়োলজিষ্টও দেখিনি যে এই বিষয়ে আগ্রহী। তোমাকে বলেছি, আমি বায়োলজীর ছাত্র ছিলাম। বিষয়টা নিয়ে আমার প্রফেসরের সাথে আলাপ করি। তিনি আমাকে কিছু বাস্তব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে বলেন। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে বায়োলজি বাদ দিয়ে ইতিহাস বেছে নেই–সেটা বালক বয়স থেকেই শখে পরিণত হয়েছিল আমার এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে মূলপ্রশ্ন নিয়ে গবেষণা শুরু করি।

কিন্তু এটা তোমাকে সারাজীবনের একটা লক্ষ্য তৈরি করে দিয়েছে, তাই তোমার উচিত প্রফেসরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।

হ্যাঁ, সবাই এমনই ভাববে। আমার কাজটাও এত আকর্ষণীয় যে আমি কখনো ক্লান্ত হইনা–কিন্তু আমি চাই যে তুমিও আগ্রহী হয়ে উঠো। সবসময়ই নিজে নিজে কথা বলতে ভালো লাগে না।

পিছনে মাথা হেলিয়ে ট্র্যাভিজ আন্তরিকভাবে হাসল।

 দুঃখের ছায়া পড়ল পেলোরেটের শান্তমুখে। তুমি আমাকে নিয়ে হাসছ কেন?

তোমাকে নিয়ে না, জেনভ, ট্র্যাভিজ বলল। আমি হাসছি নিজের বোকামী দেখে। তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তুমি ঠিকই বলেছিলে।

মানুষের উৎপত্তি সম্বন্ধে যা বলেছি?

না, না।–বেশ, সেটাও আছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, তুমি আমাকে বলেছিলে সমস্যা নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা না করে মনটাকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখতে। তাতে লাভ হয়েছে। তুমি যখন আমাকে জীবনের বিকাশ বোঝাচ্ছিলে তখনই আমি বুঝতে পারি কিভাবে হাইপার রিলে খুঁজতে হবে–যদি থাকে।

ওহ্, সেটা!

হ্যাঁ, সেটাই! এই মুহূর্তে আমার চিন্তার একমাত্র বিষয়। আমি এমনভাবে হাইপার রিলে খুঁজছিলাম যেন পুরনো প্রশিক্ষণ যানে দাঁড়িয়ে আছি। ভুলেই গেছি যে এই যান হচ্ছে হাজার বছরের কারিগরি উন্নয়নের ফসল। বুঝতে পেরেছ?

না, গোলান!

একটা কম্পিউটার রয়েছে। কথাটা ভুলে গেলাম কি করে?

হাত নেড়ে বলেই নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিল, পেলোরেটকেও টেনে নিয়ে চলল।

আমাকে শুধু যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে, কম্পিউটার কনট্রাক্টের উপর হাত রেখে বলল।

আসলে ব্যাপারটা তাদের একহাজার কিলোমিটার পেছনে টার্মিনাসে পৌঁছানোর চেষ্টা করা।

পৌঁছাও! কথা বল! যেন ছোঁয়ার জন্য নার্ভগুলোর শেষপ্রান্তে নতুন শাখাপ্রশাখা তৈরি হচ্ছে, বাইরের দিকে প্রসারিত হচ্ছে প্রচণ্ড গতিতে-প্রায় আলোর গতিতে।

ট্র্যাভিজ স্পর্শ অনুভব করল–বেশ, হয়তো স্পর্শ না, শুধুই অনুভূতি–বা হয়তো অনুভূতিও না, কিন্তু কোনো ব্যাপার না, যেহেতু সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য কোনো সঠিক শব্দ নেই।

সে বুঝতে পারল টার্মিনাস চলে এসেছে ধরাছোঁয়ার মধ্যে, যদিও তাদের মাঝখানে বিশাল দূরত্ব এবং প্রতি সেকেণ্ডে তা বিশ কিলোমিটার করে বাড়ছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন গ্রহ এবং মহাকাশযান এক জায়গায় স্থির এবং দূরত্ব কয়েক মিটার।

ট্র্যাভিজ কিছুই বলল না। চুপ করে রইল। আসলে যোগাযোগ পদ্ধতিটা সে পরীক্ষা করে দেখছিল, সত্যিকার যোগাযোগের কোনো ইচ্ছা নেই।

বাইরে আট পারসেক দূরে রয়েছে এনাক্ৰণ, কাছাকাছির মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহ–গ্যালাক্সিক ষ্ট্যান্ডার্ডে তাদের ঠিক পেছনে। এই মাত্র যে পদ্ধতিতে টার্মিনাসে আলোর গতিতে সংবাদ পাঠানো হলো সেভাবে উত্তর পেতে হলে সময় লাগবে। বায়ান্ন বছর।

এনানে পৌঁছাও! এনার্জনের কথা চিন্তা করো! যত পরিষ্কারভাবে পার চিন্তা কর। তুমি টার্মিনাস এবং, গ্যালাকটিক কোর অনুযায়ী অবস্থান জানো। প্রশিক্ষণের সময় তুমি এমন সব সামরিক সমস্যার সমাধান করেছ যেখানে এনাক্রণকে আবার দখল করা প্রয়োজন ছিল।

স্পেস! তুমি এনাক্ৰণে পৌঁছে গেছ।

দৃশ্য ফুটিয়ে তোল! দৃশ্য ফুটিয়ে তোল! চিন্তা কর যেন হাইপার রিলের মাধ্যমে তুমি সেখানে পৌঁছেছ।

কিছুই না! তার নার্ভগুলো ছুটল তীরের মতো কিন্তু কোনো লক্ষ্য পেলো না।

ট্র্যাভিজের হাত শিথিল হয়ে গেল। ফার স্টারে কোনো হাইপার রিলে নেই, জেনভ আমি নিশ্চিত।–তোমার কথা না শুনলে কতদিনে নিশ্চিত হতাম বলা মুশকিল।

পেলোরেটের মুখের একটা পেশীও কাঁপলনা। কিন্তু চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সাহায্যে লাগতে পেরে আমি খুশী। তার মানে কি এখন আমরা জাম্প করব?

না, এখনো দুদিন অপেক্ষা করব, নিরাপত্তার জন্য। বিশাল বস্তুগুলোর কাছ থেকে দূরে সরতে হবে, মনে আছে?-তাছাড়া এই যানটা সম্পূর্ণ নতুন, আমার কাছে অপরিচিত, কাজেই সঠিক পদ্ধতিটা জানতে হয়তো দুদিন লাগবে-বিশেষ করে প্রথম জাম্প-এর জন্য সঠিক হাইপারথ্রাষ্ট কি হবে সেই বিষয়টা। আমার একটা অনুমান আছে, তারপরেও সব কাজ করব কম্পিউটার দিয়ে।

রক্ষে করো! তার মানে আরো দুটো একঘেয়ে দিন।

একঘেয়ে? দাঁত বের করে হাসল ট্র্যাভিজ। একঘেয়েমীর কিছু নেই! তুমি আর। আমি, জেনভ, কথা বলব পৃথিবী নিয়ে।

অবশ্যই? তুমি আসলে বৃদ্ধ একজন লোককে খুশী করতে চাইছ। সেটা তোমার দয়া।

বোকা! আমি নিজেকেই খুশী করতে চাইছি। জেনভ, তুমি আমাকে যা বলেছ তার থেকে বুঝতে পারছি পৃথিবী হচ্ছে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌতূহলোদ্দীপক বস্তু।

.

২২.

আসলে পেলোরেট যখনই পৃথিবীর ব্যাপারে তার অনুমান ব্যক্ত করেছে তখনই সেটা ট্র্যাভিজের মাথায় ঢুকে গেছে। এতক্ষণ হাইপার রিলে সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে মনোযোগ দেয়নি। সমস্যার সমাধান হতেই সে মনোযোগী হয়ে উঠল।

সম্ভবত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন নিয়ে হ্যারী সেলডনের মন্তব্য গ্যালাক্সির বিপরীত শেষ প্রান্ত সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারণ করা হয়েছে। সেলডন এমনকি সেই স্থানের একটা নামও দিয়েছেন নক্ষত্রের শেষ প্রান্ত বা স্টারস এন্ড।

ইম্পেরিয়াল কোর্টে বিচার নিয়ে লিখিত গাল ডরনিকের বিবরণীতে এই কথাগুলোর উল্লেখ আছে। গ্যালাক্সির বিপরীত শেষ প্রান্ত–ঠিক এই কথাগুলোই সেলডন ডরনিকের কাছে বলেছিলেন। তারপর এগুলো নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।

কি দিয়ে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত অন্য প্রান্তের সাথে জোড়া দেয়া যাবে? সরল রেখা, বক্র রেখা, প্রিং-এর মতো প্যাচানো কিছু, বৃত্ত নাকি অন্য কিছু?

আর এখন ট্র্যাভিজের কাছে হঠাৎ করেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে গ্যালাক্সির মানচিত্রের উপর সরল বা বক্র কোনো রেখাই টানা যাবে না। ব্যাপারটা তারচেয়েও সূক্ষ্ম।

একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত হচ্ছে টার্মিনাস। এটা গ্যালাক্সির একেবারে প্রান্তে, হা-আমাদের ফাউণ্ডেশনের প্রান্ত-যার ফলে শেষ শব্দটার একটা আক্ষরিক অর্থ পাওয়া যায়। তাছাড়া সেলডন যে সময় কথাগুলো বলেছিলেন সে সময় এটাই ছিল গ্যালাক্সির সবচেয়ে নতুন বিশ্ব, যে বিশ্ব মাত্র স্থাপন হতে যাচ্ছিল, কিন্তু কোনো অস্তিত্ব ছিলনা।

তাহলে গ্যালাক্সির অপর প্রান্ত হবে কোনটা? আরেক ফাউণ্ডেশনের প্রান্ত? কেন, গ্যালাক্সির সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ব? এবং না জেনেই পেলোরেট যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে বোঝা যায় সেই বিশ্ব হচ্ছে পৃথিবী। অবশ্যই পৃথিবীতে রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।

যদিও সেলডন বলেছিলেন যে গ্যালাক্সির অপর প্রান্ত রয়েছে নক্ষত্রের শেষ প্রান্তে। কে বলবে যে তিনি রূপক শব্দ ব্যবহার করেন নি? পেলোরেটের মতো যদি মানবজাতির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে কতগুলো সরল রেখা টানা হয়, রেখাগুলো প্রতিটি প্ল্যানেটারী সিস্টেম, প্রতিটি নক্ষত্র যেগুলো একটি বাসযোগ্য গ্রহকে আলো দেয় সেগুলো থেকে, অন্য কোনো প্ল্যানটারী সিস্টেম, অন্য কোনো নক্ষত্র যেখান থেকে প্রথম অভিযাত্রীরা এসেছিল, তারপর আরো আগের কোনো নক্ষত্রকে ছেদ করবে–যতক্ষণ পর্যন্ত না সবগুলো রেখা ঐ নক্ষত্রে গিয়ে মিলিত হয় যেখান থেকে মানবজাতির উদ্ভব হয়েছিল। এই নক্ষত্রই পৃথিবীকে আলো দেয়, এটাই হচ্ছে নক্ষত্রের শেষ প্রান্ত।

ট্র্যাভিজ হেসে গল্প কণ্ঠে বলল, পৃথিবী সম্পর্কে আমাকে আরো কিছু বল, জেনভ।

মাথা নাড়ল পেলোরেট। যা জানি সবই বলেছি, সত্যি। ট্র্যানটরে হয়তো আরো কিছু জানতে পারব।

না, পারবনা, জেনভ। আমরা সেখানে কিছুই পাব না। কেন? কারণ আমরা ট্র্যানটরে যাচ্ছিনা। এই যানের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে এবং নিশ্চিত থাক আমরা যাচ্ছিনা।

পেলোরেট হা হয়ে গেছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য, তারপর বলল, ওহ্, মাই ডিয়ার ফেলো!

শোন জেনভ। এমন করোনা। আমরা যাচ্ছি পৃথিবী নামের গ্রহ খুঁজে বের করতে।

কিন্তু একমাত্র ব্র্যানটরই, যেখানে

না। ট্র্যানটরে তুমি শুধু কিছু প্রাচীন ধুলিধূসর ফিল্ম আর ডকুমেন্টস দেখে দেখে নিজে আরো প্রাচীন আর ধূলিধূসর হয়ে যাবে।

আমার কতদিনের স্বপ্ন-,

তুমি স্বপ্ন দেখেছ পৃথিবী খুঁজে বের করার। কিন্তু শুধু।

ট্র্যাভিজ উঠে দাঁড়ালো। সামনে ঝুঁকে পেলোরেটের টিউনিকের হাত ধরে বলল, দ্বিতীয়বার বলোনা প্রফেসর। দ্বিতীয়বার বলো না। এই যানে উঠার আগেই তুমি যখন প্রথম বলেছিলে আমরা পৃথিবী খুঁজতে যাচ্ছি, তখনই বলেছিলে আমরা পাবই, কারণ তোমার নিজের ভাষাতেই বলি, আমার মাথায় একটা চমৎকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আমি তোমার কাছ থেকে ট্র্যানটর শব্দটা শুনতে চাইনা। শুধু জানতে চাই চমৎকার সম্ভাবনাটা কি?

কিন্তু ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত এটা শুধুই একটা কল্পনা সামান্য আশা, সামান্য সম্ভাবনা।

ভাল! আমাকে বলো!

তুমি বুঝবে না। কিছুই বুঝবে না। এই বিষয় নিয়ে একমাত্র আমিই গবেষণা করেছি। ঐতিহাসিক, দৃঢ় বা সত্যি কোনো প্রমাণ নেই। মানুষ এমনভাবে পৃথিবী নিয়ে কথা বলে যেন এটা সত্য ঘটনা আবার কখনো মনে হয় যেন কিংবদন্তী। এ ব্যাপারে মিলিয়ন মিলিয়ন গল্পগাথা ছড়িয়ে আছে।

বেশ তুমি কিভাবে গবেষণা চালিয়েছ?

আমি সবধরনের গল্প, ইতিহাস, লোককাহিনী, পৌরাণিক কাহিনী সংগ্রহ করেছি। এমনকি গ্যালাক্সির যেখানে পৃথিবী বা মূলগ্রহের কোনো উল্লেখ আছে সেগুলোও। ত্রিশ বছর ধরে গ্যালাক্সির সবগুলো গ্রহ থেকে আমি যা পেরেছি সংগ্রহ করেছি। এখন চেয়েছিলাম এগুলোর স্ফেকে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য গ্যালাকটিক লাইব্রেরি কিন্তু তুমি শব্দটা উচ্চারণ করতে না করেছ।

ঠিক, বলো না। এটা বাদ দিয়ে বলো সব তথ্য থেকে কেন মাত্র একটা তোমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে এবং কেন সেটাকেই গুরুত্ব দিতে হবে?

পেলোরেট মাখা নাড়ল। গোলান দুঃখিত, বলতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি আসলে সৈনিক বা রাজনীতিবিদের মতো কথা বলছ। এইভাবে ইতিহাস কাজ করে না।

ট্র্যাভিজ লম্বা শ্বাস নিয়ে রাগ দমন করল। বলল কিভাবে কাজ করে, জেনভ। হাতে দুদিন সময় আছে। আমাকে শেখাও।

তুমি মাত্র একটা বা এক সাথে কয়েকটা পৌরাণিক কাহিনীর উপর নির্ভর কতে পারো না। আমাকে সেগুলো একত্র করে বিশ্লেষণ করতে হয়েছে, সংগঠিত করতে হয়েছে, বিভিন্ন বিষয়বস্তুর প্রতীক তৈরি করতে হয়েছে-অস্বাভাবিক আবহাওয়া, প্ল্যানেটারি সিস্টেমের বর্ণনা, বীরগাথা, এমন আরো শয়ে শয়ে বিষয় বিবেচনা করতে হয়েছে। দুদিনে কিছুই হবে না। আমার লেগেছে ত্রিশ বছর।

তারপর সবগুলো পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে মিল খুঁজে বের করার জন্য এবং সত্যিকার অবাস্তব কাহিনীগুলো বাদ দেয়ার জন্য আমি একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করি। একই সাথে পৃথিবীর একটা কাল্পনিক মডেল তৈরি করি। কারণ যদি আসলেই কোনো গ্রহে মানবজাতির বিকাশ ঘটে তবে সেই গ্রহের একটা ক্ষেত্রে অবশ্যই সব কাহিনী, বীরগাথার মধ্যে মিল থাকবে। তুমি চাও আমি গণিতের মাধ্যমে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করি?

এখন না, ধন্যবাদ, ট্র্যাভিজ বলল, কিন্তু তুমি কি নিশ্চিত যে তোমার গণিত শুদ্ধ? একটা ব্যাপার খেয়াল করো, টার্মিনাসে বসতি স্থাপন করা হয় পাঁচ শতাব্দী আগে এবং সেখানে যে মানুষগুলো এসেছিল তারা এসেছিল ট্রানটর থেকে। ট্র্যানটরে তারা এসেছিল এক ডজনের বেশি অন্যান্য বিশ্ব থেকে। এখন যারা জানেনা, তারা ধরে নিতে পারে যে হ্যারী সেলডন এবং স্যালভর হার্ডিন, যাদের কারো জন্মই টার্মিনাসে হয়নি, এসেছিলেন পৃথিবী থেকে এবং ট্র্যানটর পৃথিবীর আরেক নাম। সেলডন ট্র্যানটরের যে বর্ণনা দিয়েছেন-পুরো ভূ-পৃষ্ঠ ছিল ধাতুতে ঢাকা-তাতে বলা যায়, এটা পৃথিবী না। কাজেই এটা অবাস্তব কাহিনী।।

সন্তুষ্ট দেখালো পেলোরেটকে। সৈনিক আর রাজনীতিবিদ নিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলাম সেগুলো প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তুমি খুব সহজেই ধরতে পারছ। অবশ্যই আমাকে কিছু নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস এবং আমার সংগৃহীত কাহিনীগুলোর মধ্যে আমি একশোরও বেশি ভুল বের করি। তারপর প্রাপ্ত তথ্যগুলো আমার মডেলের সাথে মিলানোর চেষ্টা করি। একটা তথ্য ছিল টার্মিনাসের প্রথম যুগের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে। কম্পিউটার সবগুলো বাতিল করে দেয়। সবগুলো। আসলে আমার কল্পনা শক্তির অভাব রয়েছে, তবে আমি চেষ্টা করেছি।

আমি জানি তুমি চেষ্টা করেছ, জেনভ। তোমার মডেল থেকে পৃথিবী সম্বন্ধে কি জানতে পেরেছ?

অনেক কিছু। এক ধরনের প্রোফাইল যেমন গ্যালাক্সির প্রায় নব্বই শতাংশ বাসযোগ্য গ্রহের আবর্তন সময় হচ্ছে বাইশ থেকে ছাব্বিশ গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড আওয়ারস। তো-

ট্র্যাভিজ বাধা দিল। আশা করি এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাওনি, জেনভ। এখানে কোনো রহস্য নেই। যে গ্রহে বসতি করবে, তুমি নিশ্চয়ই চাইবেনা সেটা এত দ্রুত আবর্তন করুক যাতে বায়ু প্রবাহ ঝড়ো প্রকৃতির হবে বা এত আস্তে আবর্তন করুক যাতে তাপমাত্রার পার্থক্য অতিরিক্ত হবে। মানুষ সহনশীল বৈশিষ্ট্যের গ্রহে বাস করতে চায় এবং যখন সব বাসযোগ্য গ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলো মিলে যায় তখন কেউ বলতে পারে কি আশ্চর্য কোইন্সিডেন্স যেখানে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই বা কোইন্সিডেন্সের কিছু নেই।

সত্যি কথা বলতে কি, পেলোরেট শান্ত গলায় বলল, এটা সমাজ বিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পদার্থবিজ্ঞানেরও, আমার ধারণা-তবে যেহেতু আমি পদার্থ বিজ্ঞানী নই নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব না। যাইহোক এটাকে বলা হয় এপিক প্রিন্সিপল। পর্যবেক্ষণকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বা পর্যবেক্ষণ করে বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটায়। প্রশ্ন হচ্ছে: সেই গ্রহটা কোথায় যেটা মডেল হিসেবে কাজ করেছে? কোন গ্রহ ঠিক চব্বিশ গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড আওয়ারের এক গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড দিনে নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে?

চিন্তিতভাবে ট্র্যাভিজ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল। তোমার ধারণা সেটাই পৃথিবী? গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড যে কোনো বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেও হতে পারে, তাই না?

ঠিক তা না। মানুষের স্বভাবের সাথে মিলে না। বার হাজার বছর ট্রানটর ছিল গ্যালাক্সির ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড-বিশ হাজার বছর ধরে ছিল সবচেয়ে জনবহুল বিশ্ব। তারপরও সে তার ১.০৮ স্ট্যান্ডার্ড দিনের আবর্তন সময় গ্যালাক্সির উপর চাপিয়ে দেয় নি। টার্মিনাসের আবর্তন সময় হচ্ছে ০.৯১ গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড দিন এবং আমরাও সেটা আমাদের অধীনস্ত গ্রহগুলোর উপর চাপিয়ে দেই নি। লোকাল প্ল্যানেটারী ডে সিস্টেমের জন্য প্রতিটি গ্রহই নিজস্ব হিসাব ব্যবহার করে। আন্তগ্রহ সমন্বয়ের জন্য-কম্পিউটারের সাহায্যে লোকাল প্ল্যানেটরী ডে এবং গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড ডের সমন্বয় করা হয়। গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড ডে অবশ্যই এসেছিল পৃথিবী থেকে।

সেটাই আবশ্যিক কেন?

একটা কারণ, একসময় পৃথিবীই ছিল একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ, কাজেই এর দিন এবং বছরগুলো স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরা হয়েছে এবং অন্যান্য গ্রহে বসতি স্থাপন করার সময় এটাই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে রাখা হয়েছে। তাছাড়া পৃথিবীর যে মডেল আমি তৈরি করেছি, সেখানে দেখা গেছে যে নিজ কক্ষপথে এর আবর্তন সময় ঠিক চব্বিশ গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড ঘণ্টা এবং সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ঠিক এক গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড বছর।

কোইন্সিডেন্স হতে পারে?

পেলোরেট হাসল। এখন তুমি নিজেই কোইন্সিডেন্সের কথা বলছ। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে এমন ঘটনা কাকতালীয়ভাবে ঘটে?

বেশ বেশ, ট্র্যাভিজ ফিসফিস করে বলল।

আরো আছে। প্রাচীন একটা হিসাব ছিল যাকে বলা হতো মাস

আমি জানি।

 হিসাবটা পুরোপুরি পৃথিবীর উপগ্রহের আবর্তনের সাথে মিলে যায়। যাইহোক

হা?

আমার মডেলের একটা অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যে উপগ্রহের কথা বললাম সেটা অনেক বড়, প্রায় পৃথিবীর নিজস্ব ডায়ামিটারের চার ভাগের এক ভাগ।

কখনো শুনিনি, জেনভ। গ্যালাক্সির জনবহুল গ্রহের কোনোটারই এধরনের কোনো উপগ্রহ নেই।

সেটাই ভালো, পেলোরেট বলল। যদি বিচিত্র ও বুদ্ধিমান প্রাণী নিয়ে পৃথিবী এক অনন্যসাধারণ গ্রহ হয়, তাহলে এর কিছু বাস্তব অসাধারণত্ব থাকা উচিত।

কিন্তু বিচিত্র ও বুদ্ধিমান প্রাণের সাথে বিশাল একটা উপগ্রহের সম্পর্ক কি?

এখন তুমি আমাকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছ। উত্তরটা আমার জানা নেই। কিন্তু বিষয়টা বিবেচনার দাবী রাখে, তাই না?

ট্র্যাভিজ বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো। তাহলে সমস্যাটা কি? বাসযোগ্য গ্রহগুলোর পরিসংখ্যান থেকে এমন একটা গ্রহ বেছে নাও যার আবর্তন এবং প্রদক্ষিণ সময় ঠিক এক গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড দিন এবং এক গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড বছরের সমান। আর যদি এর একটা বিশাল উপগ্রহ থাকে, তাহলে তুমি যা খুঁজছ তা পেয়ে যাবে। আমার ধারণা তুমি সেই গ্রহটা পেয়ে গেছ।

পেলোরেটকে বিব্রত দেখালো। বেশ, তুমি যা ভাবছ, তা হয়নি। পরিসংখ্যান আমি দেখেছি কিন্তু এ ধরনের কোনো গ্রহ পাইনি।

হতভম্ব হয়ে ট্র্যাভিজ বসে পড়ল আবার। তার মানে তোমার সমস্ত যুক্তি প্রমাণ ভুল।

পুরোপুরি না, আমার মতে।

পুরোপুরি না বলতে কি বোঝায়? সমস্ত বিস্তারিত বর্ণনাসহ তুমি একটা মডেল তৈরি করেছ, কিন্তু এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু খুঁজে পাচ্ছনা। তাহলে তোমার মডেল অকার্যকর। তোমাকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।

না। আসলে বাসযোগ্য গ্রহের পরিসংখ্যান অসম্পূর্ণ। প্রায় দশ মিলিয়ন গ্রহ রয়েছে, তার মধ্যে কিছু আবার একেবারেই অখ্যাত। আসলে প্রায় অর্ধেক গ্রহেরই কোনো প্রকৃত তথ্য নেই। প্রায় ছয় লাখ চল্লিশ হাজার গ্রহের নাম বা অবস্থান ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। কিছু গ্যালাকটোগ্রাফার-এর মতে প্রায় দশ হাজার গ্রহের নাম আদৌ তালিকাভুক্ত করা হয়নি। হয়তো তাদেরই ইচ্ছায়। ইম্পেরিয়াল যুগে এভাবে তারা হয়তো কর ফাঁকি দিত।

আর পরের শতাব্দীগুলোতে, ট্র্যাভিজ মুখ ভেঙচে বলল, এগুলো হয়তো দস্যুদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

আমি ঠিক জানি না। পেলোরেট সন্দেহের গলায় বলল।

একই কথা। আমার ধারণা, তালিকায় পৃথিবীর নাম অবশ্যই আছে। পৃথিবী হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন এবং গ্যালাক্সিতে সভ্যতা স্থাপনের প্রথম যুগে এই নামটা অবশ্যই বাদ পড়েনি। তালিকায় নাম উঠলে সেটা থেকেই যাবে।

দ্বিধাগ্রস্ত দেখালো পেলোরেটকে। আসলে, আসলে–তালিকায় পৃথিবী নামে একটা গ্রহ রয়েছে।

ট্র্যাভিজ তাকিয়ে রইল। একটু আগেই তুমি বলেছ তালিকায় পৃথিবী নামটা নেই?

পৃথিবী নামে নেই। কিন্তু গায়া নামে একটা গ্রহ আছে।

তাতে কি? গেইয়াহ?

 উচ্চারণটা হবে গায়া। যার অর্থ পৃথিবী?

গায়ার অর্থ অন্যকিছু না হয়ে পৃথিবী হবে কেন, জেনভ। নামটা আমার কাছে অর্থহীন।

পেলোরেটের সাধারণ ভাবলেশহীন মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিশ্বাস করবে কি না জানি না-পৌরাণিক কাহিনীগুলো বিশ্লেষণ করে আমি জানতে পেরেছি যে পৃথিবীতে একাধিক পৃথক ভাষার প্রচলন ছিল।

কি?

 হ্যাঁ। পুরো গ্যালাক্সিতে আমাদের নিজেদেরইতো কথা বলার একহাজারটা পদ্ধতি রয়েছে।

গ্যালাক্সির বিভিন্ন জায়গায় হয়তো বাচনভঙ্গিতে পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু সেগুলো পৃথক ভাষা না। এবং যদি কখনো বোঝার সমস্যা দেখা দেয়, আমরা গ্যালাকটিক স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করতে পারি।

অবশ্যই, কিন্তু এর কারণ অনবরত আন্তমহাজাগতিক ভ্রমণ। যদি কোনো গ্রহ। দীর্ঘসময় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে, তখন?

তুমি বলছ পৃথিবীর কথা। যে নিজেই একা ছিল। এখানে বিচ্ছিন্নতার কি দেখলে?

পৃথিবী ছিল মূল গ্রহ বা প্ল্যানেট অফ অরিজিন, ভুলে যেয়োনা, যেখানে মানবজাতি এক সময় কল্পনাতীত নিচু জীবন যাপন করত। আন্তমহাজাগতিক ভ্রমণ, কম্পিউটার টেকনোলজি ছাড়াই হিংস্র পরিবেশ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছিল।

একেবারেই অসম্ভব।

এই কথায় পেলোরেট বিব্রত বোধ করল। এভাবে তর্ক করে কোনো লাভ নেই, ওল্ড চ্যাপ। আমি কোনোদিনই কাউকে বোঝাতে পারিনি। আমার দোষ, অবশ্যই।

ট্র্যাভিজ লজ্জিত হলো। জেনত, আমি দুঃখিত। না ভেবেই কথা বলছি। আসলে এই বিষয়গুলোর সাথে আমি পরিচিত না। ত্রিশ বছর ধরে তুমি যা শিখেছ সেগুলো আমাকে শিখতে হচ্ছে একবারে। একটু সুযোগ তো দিতেই হবে। ধরা যাক পৃথিবীতে প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ভাষায় কথা বলত

সম্ভবত! আধাডজন পেলোরেট নিরাসক্ত গলায় বলল। পৃথিৰী সম্ভবত বিভক্ত ছিল বিশাল কয়েকটি ভূখণ্ডে এবং প্রথমে হয়তো সেগুলোর মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। ভূ-খণ্ডগুলোর অধিবাসীরা নিজস্ব একটা ভাষা হয়তো তৈরি করে নিয়েছিল।

সতর্কতার সাথে বলল ট্র্যাভিজ, এবং এই ভূ-খণ্ডের মানুষগুলো যখন একে অপরের ব্যাপারে জানল তখন তারাও মূল প্রশ্নের মুখোমুখি হলো এবং ভেবে অবাক হলো প্রথম কোন মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল।

হয়তো, গোলান। এটাই ছিল অদের জন্য স্বাভাবিক।

এবং এই ভাষাগুলোর একটাতেই গায়া মানে পৃথিবী। শব্দটাও সেই ভাষাগুলোর একটা থেকে এসেছে।

হ্যাঁ, হ্যাঁ।

এবং কোনো কারণে পৃথিবীর মানুষ দের অন্য এক ভাষায় তাদের গ্রহকে গায়া নামে অকে।

ঠিক! তুমি খুব দ্রুত শিখছ, পোলান।

কিন্তু আমার মনে হয় এত রহস্য করার কিছু নেই। নামের পার্থক্য থাকলেও গায়া যদি আসলেই পৃথিবী হয় তবে এর আবর্তন, সময় হরে ঠিক এক গ্যালাকটিক দিন এবং প্রদক্ষিণ সময় হবে ঠিক এক গ্যালাকটিক বছর এবং একটা বিশাল উপগ্রহ থাকবে যেটা গায়াকে প্রদক্ষিণ করবে ঠিক এক মাসে।

হ্যাঁ, এমনই হওয়ার কথা।

বেশ তাহলে গায়া এই শর্তগুলো পূরণ করেছে না করেনি?

আমি বলতে পারবনা। অলিকায় এই তথ্যগুলো দেয়া নেই।

আচ্ছা? আমরা তাহলে গায়াতে গিয়ে এর আবর্তন সময় এবং উপগ্রহটা দেখতে পারি।

আমিও দেখতে চাই গোলান; পেলোরেটকে মনে হলো দ্বিধাগ্রস্ত। সমস্যা হচ্ছে। গায়ার অবস্থানের কথাও উল্লেখ নেই।

অর্থাৎ নাম ছাড়া আর কিছু জানোনা এবং এটাই তোমার চমৎকার সম্ভাবনা?

এজন্যই আমি গ্যালাকটিক লাইব্রেরিতে যেতে চেয়েছিলাম!

দাঁড়াও তুমি বলছ অস্থানের কথা বলা নেই। অন্য কোনো তথ্য নেই?

গায়ার নাম সেশেল সেক্টরের অধীনে তালিকাভুক্ত করে পাশে একটা প্রশ্নরোধক চিহ্ন দেয়া হয়েছে।

বেশ জেনত–আমরা সেশেল সেক্টরে যাব এবং যেভাবেই হোক পায়াকে খুঁজে বের করব।

.

কিষাণ

২৩.

স্টর জেনডিবল আন্তঃদেশীয় সড়ক ধরে জগিং করছে। সাধারণত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনাররা ট্র্যানটরের কৃষিপ্রধান এলাকায় যায়না। অবশ্য ইচ্ছা হলেই তারা যেতে পারে, কিন্তু খুব বেশি দূরে বা বেশি সময়ের জন্য যায়না।

জেনডিবল ব্যাতিক্রম, আর যতই দিন যাচ্ছে ততই ভেবে অবাক হচ্ছে কেন, সে ব্যতিক্রম।অবাক হওয়া বলতে বোঝায় নিজের মাইন্ড এর পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান, যে কাজটা করার জন্য প্রায়ই স্পিকারদের উৎসাহিত করা হয়। তাদের মাইন্ড একই সাথে তাদের অস্ত্র এবং তাদের লক্ষ্যবিন্দু, তাই তাদেরকে ভালভাবে মাইন্ড সুরক্ষিত রাখতে হয়। কেন সে অন্য সবার থেকে আলাদা তার জন্য জেনডিবল একটা কারণ আবিষ্কার করেছে, সেটা হচ্ছে, যে গ্রহ থেকে সে এসেছে সেই গ্রহ অন্যান্য গ্রহগুলোর তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা এবং বিশাল। বালক বয়সে যখন সে ট্রানটরে আসে (দ্বিতীয় ফাউন্ডেশনের এজেন্টের মাধ্যমে যারা গোপনে গ্যালাক্সি থেকে মেধাবী প্রতিভা সগ্রহ করে।) তখন এই গ্রহের হালকা মধ্যাকর্ষণ এবং উষ্ণ আরামদায়ক আবহাওয়া তার ভাল লেগে যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাইরে ঘোরাঘুরি সে অন্যদের থেকে বেশি উপভোগ করে।

প্রথম প্রথম নিজের খর্বকায় শরীর নিয়ে সে বিব্রত বোধ করত, ধারণা করেছিল আরামদায়ক গ্রহের শান্ত আবহাওয়া তাকে আরো দুর্বল করে দেবে। তাই সে বিভিন্ন ধরনের ব্যয়াম শুরু করে। এতে তার উচ্চতা না বাড়লেও দড়ির মতো পাকানো স্বাস্থ্য পেয়েছে। হাঁটা এবং জগিং করা তার ব্যায়ামেরই অংশ–যে ব্যাপারে স্পিকার টেবিলের সবাই কানাঘুষো করে। জেনডিবল অবশ্য সেসব পাত্তা দেয় না।

সে তার নিজের মতে চলে, কারণ সে হচ্ছে প্রথম প্রজন্ম, সদস্যদের সবাই বৃদ্ধ, কারো ছেলেমেয়ে আছে, কারো বা নাতিনাতনী পর্যন্ত আছে।

দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী সম্মেলনের সময় স্পিকারদের সবার মাইন্ড উন্মুক্ত থাকে এবং জেনডিবল জানে যে বাকী সবাই তাকে হিংসা করে। তা করুক, কিছু আসে যায় না। সে শুধু নিজেকে নিরাপদ রেখে চলে।

তাছাড়া (জেনডিবলের মন আবার তার বেশি বাইরে ঘোরার কারণ অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তার শৈশবকাল কেটেছে যে গ্রহে–সেটা যেমন বিশাল তেমনি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। যে উর্বর উপত্যকায় সে বাস করত তার চারপাশের পর্বতশ্রেণী জেনডিবলের মতে গ্যালাক্সির সর্বশ্রেষ্ঠ মাউন্টেইন রেঞ্জ। শীতকালে চমৎকার রূপ ধারণ করে। শৈশবের স্মৃতি এখনো মনে পড়ে তার, স্বপ্নে ধরা পড়ে। ভেবেই পায় না কয়েক ডজন স্কয়ার মাইলের এই প্রাচীন স্থাপনার ভেতর সে কিভাবে নিজেকে আটকে রেখেছে?

জগিং করতে করতে বিতৃষ্ণা নিয়ে চারপাশে তাকালো। ট্র্যানটর উষ্ণ ও আরামদায়ক গ্রহ হলেও কোনো সৌন্দর্য নেই। এটা যদিও একটা কৃষিপ্রধান বিশ্ব, কিন্তু কোনো উর্বরতা নেই। অনুর্বর।

কখনো উর্বর ছিলও না। আর সম্ভবত শুধু এ কারণেই ট্র্যানটর প্রথমে ক্রমবর্ধমান ইউনিয়ন অফ প্ল্যানেট এবং পরে গ্যালাকটিক এম্পায়ারের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এছাড়া আর কিছু হওয়ার কোনো গুণাবলীও এর ছিল না।

মহাধ্বংসযজ্ঞের পর ট্র্যানটরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল ধাতুর পর্যাপ্ত মজুত। এটা ছিল এক বিশাল খনি, প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রহে ট্রানটর স্বল্প মূল্যে এলয় স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম, কপার, ম্যাগনেশিয়াম সরবরাহ করত–এভাবেই সে ফিরিয়ে দিচ্ছিল তার হাজার বছরের সংগ্রহ; যত দ্রুত সংগ্রহ করেছিল তার চেয়েও দ্রুত গতিতে ভাণ্ডার শূন্য করে ফেলেছিল।

এখনো প্রচুর ধাতু আছে, তবে সেগুলো মাটির নিচে, সংগ্রহ করা কঠিন। হ্যামিশ জনগণ (নিজেদেরকে তারা কখনো ট্রানটরিয়ান বলেনা, অশুভ মনে করে; শুধু দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনাররাই শব্দটা ব্যবহার করে) ধাতুর ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কুসংস্কারের কারণে অবশ্যই।

বোকামী হয়ে যাচ্ছে কাজটা। ভূ-গর্ভস্থ ধাতু মাটিকে করে ফেলেছে বিষাক্ত এবং উর্বরতা আরো কমিয়ে দিচ্ছে। আর তাছাড়া ধীরে হলেও জনসংখ্য বাড়ছে, জমির ব্যবহার বাড়ছে।

অবরুদ্ধ দিগন্তের উপর জেনডিবলের চোখ ঘুরে বেড়াতে লাগল। ট্রানটর ভূ তাত্ত্বিকভাবে জীবিত, সবগুলো বাসযোগ্য গ্রহই তাই, কিন্তু প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে ট্রানটরের পর্বত শ্রেণীর ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের প্রধান অংশ সম্পূর্ণ হয়। উঁচুভূমি যেগুলো ছিল সেগুলো পরিণত হয় মসৃণ টিলায়। তাছাড়া ট্রানটরের ইতিহাসের গ্রেট মেটাল কোটিং-এর সময় সব পাহাড় পর্বত মাটির সাথে সমান করে দেয়া হয়।

দক্ষিণে, দৃষ্টিসীমার বাইরে রয়েছে ক্যাপিটাল বের বেলাভূমি, তার পরে রয়েছে। ইস্টার্ণ ওশান, দুটোই ভূ-গর্ভস্থ জলাধারগুলো ভেঙ্গে ফেলে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে আগের অবস্থায়।

উত্তরে রয়েছে গ্যালাকটিক লাইব্রেরির (যার অধিকাংশই মাটির নিচে) বিশাল রহস্যময় টাওয়ার এবং আরো উত্তরে রয়েছে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের ধ্বংসস্তূপ।

বাকী দুইদিকে রয়েছে খামার আর ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর। মাঠে চড়ছে গরু ছাগল হাঁস-মুরগী-প্রতিটি ট্র্যানটোরিয়ান ফার্মে এই গৃহপালিত প্রাণীগুলো দেখা যায়।

জেনডিবলের দিকে পশুপাখিগুলোর কোনো মনযোগ নেই।

গ্যালাক্সির যে কোনো স্থানে, যে কোনো জনবহুল গ্রহে জেনডিবল এই প্রাণীগুলো দেখতে পারবে কিন্তু যে কোনো দুইটা গ্রহের প্রাণী দেখতে পুরোপুরি একরকম হবে না। নিজের গ্রহের ছাগল এবং যে কুকুরটাকে সে একবার দুধ খাইয়েছিল সেটার কথা মনে পড়ল। সেগুলো ছিল ট্র্যানটরের ক্ষুদ্র আকৃতির দার্শনিকসুলভ প্রাণীগুলোর চেয়ে বড় এবং সুগঠিত, সবধরনের প্রাণীর ক্ষেত্রেই পার্থক্য রয়েছে, এবং মাংস, দুধ ডিম, পশম বা অন্য যে কোনো কিছুর জন্য কোন প্রজাতি ভালো গ্যালাক্সির কেউই সেটা হলফ করে বলতে পারে না।

কোনো হ্যামিশ কে দেখা যাচ্ছে না স্বাভাবিকভাবেই। জেনডিবলের ধারণা তারা স্কোওলারস (স্কলার শব্দটাকে হয়তো ইচ্ছাকরেই বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে) দের এড়িয়ে চলতে চায়। আবারও কুসংস্কার।

জেনডিবল ট্র্যানটরের সূর্যের দিকে তাকালো। আকাশের মাঝখানে চলে এসেছে, কিন্তু খুব বেশি তাপ ছড়াচ্ছেনা। সূর্যের এই অবস্থান এবং অক্ষাংশে উত্তাপও বেশি হয় না, ঠাণ্ডাও বেশি বাড়ে না।

মাংশপেশীতে কোনো জড়তা নেই, সারা শরীরে আরামদায়ক অনুভূতি, যথেষ্ট জগিং হয়েছে।

তাই দৌড়ানো থামিয়ে হাঁটতে লাগল, দম নিচ্ছে জোরে জোরে।

আসন্ন টেবিল মিটিং-এর জন্য সে তৈরি এবং একটু চাপ প্রয়োগ করে নীতির পরিবর্তন করতে পারলেই প্রথম ফাউণ্ডেশনের ভয়াবহ হুমকি সবাই ধরতে পারবে এবং সেটা সেলডন প্ল্যানের নিখুঁতভাবে কাজ করার উপর সবার নির্ভরতা কমাবে।

তারা কখন বুঝবে যে অতিরিক্ত নিখুঁত ভাবটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপদের চিহ্ন?

প্রস্তাবটা তারই এবং নিশ্চিত যে সেটা মিটিং-এ পাস হবে। এখন যেমন পরিস্থিতি তাতে সমস্যা হলেও বৃদ্ধ স্যানডেশ-এর সমর্থনের কারণে সেগুলো দূর হয়ে যাবে। তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে সে। এমন একজন ফার্স্ট স্পিকার হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাতে চায়না সে যার অধীনে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন ধ্বংস হয়ে যাবে।

হ্যামিশ!

জেনডিবল কেঁপে উঠল। লোকটাকে দেখার আগেই তার মাইন্ডের অস্তিত্ব সে টের পেয়েছে। হ্যামিশ মাইন্ড–একজন কৃষক, স্কুল এবং ভোতা। সতর্কতার সাথে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিল জেনডিবল। কোনো স্পর্শ যেন সনাক্ত করা না যায়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের নীতি বেশ শক্ত। কৃষকরা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ঢালের মতো। তাদেরকে রাখতে হবে যতদূর সম্ভব স্পর্শহীন। যারা ট্রানটরে ব্যবসা বাণিজ্য বা ভ্রমণের জন্য আসে তারা শুধু দেখে কৃষকদের, আর দেখে অতীত আঁকড়ে থাকা কিছু গুরুত্বহীন স্কলার। কৃষকদের সরিয়ে ফেললে বা তাদের নির্দোষভাবটাকে চাপা দিয়ে দিলে স্কলাররা সবার চোখে পড়াবে–ফল হবে ভয়াবহ। (এই একটা মানসম্পন্ন কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য শিক্ষার্থীদের নিজের হাতে করার জন্য স্বীকৃত ছিল। কৃষকদের মাইন্ড সামান্য স্পর্শ করলেই প্রাইম রেডিয়্যান্টে যে বিচ্যুতি দেখাতো তা ছিল অবাক করার মতো।)।

জেনডিবল তাকে দেখতে পেল। একজন কৃষক, আপাদমস্তক হ্যামিশ। ট্র্যানটরিয়ান কৃষকের জলজ্যান্ত প্রদর্শনী–লম্বা চওড়া, বাদামী চামড়া, রুক্ষ পোশাক, খোলা বাহু, কালো চুল, কালো চোখ, বেঢপ পদক্ষেপ। জেনডিবলের মনে হলো সে যেন গোলাবাড়ির গন্ধ পাচ্ছে। (এতটা অবজ্ঞা করা ঠিক না, সে ভাবল। প্রিম পালভার কৃষকের কাজ করতে দ্বিধা করেন নি, যদিও সেটা ছিল তার পরিকল্পনারই অংশ। তিনি ছিলেন খর্বকায় মোটা এবং নরম মানুষ। তবে শরীর নয়, মাইন্ড দিয়ে তিনি আর্কেডিকে বোকা বানিয়েছিলেন।)

কৃষক তার দিকে এগিয়ে আসছে, দ্রুত পায়ে নামছে রাস্তা ধরে, সরাসরি তার দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা জেনডিবলকে অবাক করল। কোনো হ্যামিশ নারী বা পুরুষ কখনো তার দিকে এভাবে তাকায় না। এমনকি শিশুরাও দৌড়ে গিয়ে উঁকি মারে।

জেনডিবল তার নিজের হাঁটার গতি কমালো না। যথেষ্ট চওড়া রাস্তা, কাজেই কথা না বলে বা না তাকিয়েই একে অপরকে পার হয়ে যেতে পারবে। সেটাই ভালো হবে। কৃষকের মাইন্ড থেকে দূরে থাকার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিল সে।

রাস্তার অপর পাশে সরে গেল জেনডিবল, কিন্তু কৃষক তা মানবেনা। সে থেমে দাঁড়ালো, দুপা ছড়িয়ে লম্বা হাত এমনভাবে বাড়িয়ে দিল যেন রাস্তা বন্ধ করে দেবে। তারপর জিজ্ঞেস করল, হো! তুমি একজন স্কোওলার?

যতই চেষ্টা করুক, এগিয়ে আসা মাইন্ডের হিংস্র মনোভাব অনুভব করা থেকে জেনডিবল নিজেকে বিরত রাখতে পারলনা। উপায় নেই, এখন আর কথা না বলে এগুনো যাবে না, ব্যাপারটা খারাপ হবে। সূক্ষ এবং দ্রুত শব্দ, অভিব্যক্তি, চিন্তা মানসিকতা আদানপ্রদানের মাধ্যমে যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের যোগাযোগ তৈরি হয় তাদের জন্য শুধু শব্দের সমন্বয় কঠিন ব্যাপার। অনেকটা ক্রোবার পাশে ফেলে রেখে হাত আর কাধ দিয়ে বোল্টর উল্টে ফেলার চেষ্টা করার মতো।

জেনডিবল শান্ত এবং নিরাবেগ গলায় বলল, আমি একজন স্কলার, হ্যাঁ?

হো! তুমি একজন স্কোওলার। এখন কি অন্য ভাষায় কথা বলব? আমি কি দেখছিনা যে তুমি তাদের একজন?, কৃষক ব্যাঙ্গ করে কুর্ণিশের ভঙ্গিতে মাথা নিচু করল। তুমি বেটে, চিকন, ফ্যাকাশে আর অহংকারী।

তুমি কি চাও, হ্যামিশম্যান? জেনডিবল একটুও না নড়ে জিজ্ঞেস করল।

আমাকে ডাকা হয় রাফির‍্যান্ট। এবং ক্যারল নামের প্রথম অংশ। আরো গভীর হ্যামিশ উচ্চারণে সে বলল। র উচ্চারণ যেন গলা থেকে গড়িয়ে বেরোচ্ছে।

জেনডিবল আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি আমার কাছে কি চাও, ক্যারল রাফির‍্যান্ট?

তোমাকে কিভাবে ডাকা হয়, স্কোওলার?

সেটা কোনো ব্যাপার না? তুমি আমাকে স্কলার বলে ডাকতে পারো।

আমি যখন জিজ্ঞেস করব, তখন উত্তর দিতে হবে, বেটে, অহংকারী স্কোওলার

বেশ, আমাকে ডাকা হয় স্টর জেনডিবল এবং এখন আমি নিজের কাজে যাব।

তোমার নিজের কাজটা কি?

জেনডিবলের ঘাড়ের পেছনের চুলগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। আরো কয়েকটি মাইন্ডের অস্তিত্ব টের পেয়েছে সে। না তাকিয়েই বলতে পারে পিছনে আরো তিনজন হ্যামিশ পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। দূরে আরো অনেকের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। কৃষকদের গন্ধ বেশ জোরালো।

আমার কাজ ক্যারল রাফির‍্যান্ট, তোমার কোনো মাথাব্যথা না।

তাই? রাফিরান্ট উঁচু গলায় বলল। বন্ধুরাও বলছে ওর কাজটা নাকি আমাদের মাথাব্যথা না।

হাসির শব্দ শোনা গেল আর পিছনে একটা কণ্ঠস্বর বলল, ঠিকই বলেছে, কারণ ওর কাজ হচ্ছে বই পুস্তকের নোংরা ঘাটা, যা কোনো পুরুষ লোকের কাজ না।

আমার কাজ যাই হোক, জেনডিবল দৃঢ় গলায় বলল, এখন আমি সেটাতে যাব।

তুমি কিভাবে যাবে, বেটে স্কোওলার? রাফির‍্যান্ট বলল।

তোমাকে পাশ কাটিয়ে।

তুমি চেষ্টা করবে? আমার হাত দুটোকে ভয় পাওনা?

তুমি আর তোমার বন্ধুরা মিলে? নাকি তুমি একা? জেনড়িবল হঠাৎ করে হ্যামিশ উচ্চারণে কথা বলা শুরু করল। একা তোমাকে আমি ভয় পাই না।

সত্যি কথা বলতে কি, ব্যাপারটা জেনডিবলের আচরণের সাথে মেলেনা, কিন্তু এর ফলে সম্মিলিত আক্রমণ ঠেকানো যাবে, তারপরও নিজেকে তার অভদ্র মনে হচ্ছে।

কাজ হয়েছে। রাফির‍্যান্ট আরো রেগেছে। আমি ভয় পাইনা, বুক বয়, তোমাকে সামলাতে আমি একাই যথেষ্ট। বন্ধুরা জায়গা করে দাও। সরে দাঁড়াও আর আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে দাও। দেখুক আমি ভয় পাই কিনা।

রাফির‍্যান্ট তার বিশাল মুঠি সামনে বাগিয়ে ধরল। কৃষকের হিংস্র অঙ্গভিঙ্গ দেখে জেনডিবল একটুও ভয় পায়নি; তবে একটা বিরাশি সিক্কার ঘুষি নেমে আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

জেনডিবল সতর্কভাবে এগুলো, সূক্ষ গতিতে কাজ শুরু করেছে রাফির‍্যান্ট-এর মাইন্ডের ভেতরে। বেশিনা, সামান্য একটু স্পর্শ, কিছুই বুঝতে পারবে না কিন্তু তার রিফ্লেক্স কমিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তারপর বেড়িয়ে এল, যারা জড়ো হচ্ছে। তাদের উপরও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করল। জেনডিবলের স্পিকার মাইন্ড নিপুণ দক্ষতায় আগুপিছু করছে, কোনো মাইন্ডেই বেশিক্ষণ থাকছে না, যেন কোনো চিহ্ন থাকে, কিন্তু তা প্রয়োজনীয় কোনোকিছু সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট।

কৃষকের দিকে সে বিড়ালের মতো পদক্ষেপে এগোল, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, সতর্ক এবং স্বস্তিবোধ করছে যে অন্যরা কেউ নাক গলাচ্ছে না।

হঠাৎ করেই আঘাত করল রাফির‍্যান্ট, কিন্তু জেনডিবল পেশীর স্পন্দনের আগেই সেটা দেখতে পেল কৃষকের মাইন্ডে। ঘুষিটা তার কানের পাশ দিয়ে বাতাস কেটে বেড়িয়ে গেছে। জেনডিবল একটুও নড়েনি। অন্যজন জোরে শ্বাস ফেলল।

জেনডিবল ঠেকানোর কোনো চেষ্টা করে নি বা পাল্টা আঘাত করেনি। নিজেকে আহত না করে এই বুনো আক্রমণ সে ঠেকাতে পারবে না, আর পাল্টা আঘাত কৃষক প্রতিহত করতে পারবে অনায়াসে।

শুধু তাকে ষাড়ের মতো চালাতে পারবে, বাধ্য করবে ব্যর্থ হতে। এভাবে হয়তো হ্যমিশ কৃষকের মনোবল নষ্ট করা যাবে।

রাফির‍্যান্ট হামলা করল বুনো ষাড়ের মতো, জেনডিবল তৈরি হয়েই ছিল, দ্রুত সরে গেল এক পাশে যেন হামলাটা ব্যর্থ হয়। কৃষক আবার ঘুষি চালালো এবং ব্যর্থ। হলো।

জেনডিবল হাপিয়ে গেছে। শারীরিক পরিশ্রম বেশি হচ্ছে না, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে প্রচুর মানসিক শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এভাবে বেশিক্ষণ চালানো যাবেনা।

রাফির‍্যান্ট-এর ভেতরের চাপা দেয়া ভয় এবং স্কলারদের প্রতি কুসংস্কারাচ্ছন্ন চেতনাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টার সাথে জেনডিবল যতদূর সম্ভব শান্ত গলায় বলল, আমি এখন আমার কাজে যাবো।

রাগে রাফির‍্যান্ট-এর মুখ বিকৃত হয়ে গেছে, এক মুহূর্তের জন্য সে স্থির হয়ে গেলো। জেনডিবল পরিষ্কার তার চিন্তা অনুভব করতে পারছে। বেটে স্কলারের কথা ভুলে গেছে একেবারে–যাদুমন্ত্রের মতো। জেনডিবল অনুভব করছে কৃষকের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে ভয় এবং এক মুহূর্তের জন্য

তারপর হ্যামিশ রাগ ভয়টাকে দমিয়ে দিয়ে বেড়ে উঠল।

 রাফির‍্যান্ট চিৎকার করে বলল, বন্ধুরা! স্কোওলার এখানে নাচছে। ক্ষীণ পায়ে এড়িয়ে গিয়ে সে হ্যামিশদের ঘুষির বদলে ঘুষি এই সৎ নিয়মকে অপমান করেছে। ধরো ওকে। তারপর আমরা ঘুষির বদলে ঘুষি বিনিময় করব। ওই প্রথম আঘাত করবে, আমার তরফ থেকে উপহার, আর আমি–আমি সবার পরে আঘাত করব।

হিংস্র জনতার মাঝখানে জেনডিবল একটা ফাঁক পেল। তার বাঁচার একমাত্র পথ হচ্ছে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটা বড় ফাঁক তারপর প্রাণপণে দৌড়ানো, নিজের ক্ষিপ্রগতি এবং কৃষকদের ইচ্ছাকে দমিয়ে দেয়ার ক্ষমতাকে ভরসা করে।

সে কৌশলে বেড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগল, প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ব্যয় হচ্ছে। কাজ হচ্ছেনা। প্রতিপক্ষ সংখ্যায় অনেক বেশি।

ধরা পড়ে গেল জেনডিবল।

অন্তত কয়েকটা মাইন্ড তাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য না এবং তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তার জীবন নিজের জীবন-বিপদের মুখে।

কিভাবে ঘটল?

.

২৪.

স্পিকারদের টেবিল সম্পূর্ণ হয় নি। কোনো স্পিকার দেরি করলে তার জন্য অপেক্ষা করাটা নিয়ম বহির্ভূত। স্যান্ডেস এর মতে বাকীদের অপেক্ষা করার কোনো ইচ্ছা নেই। স্টর জেনডিবল সবচেয়ে তরুণ এবং নিয়মগুলো মানে না। তার ধারণা তরুণ বয়সে সব করা যায় আর বুড়োদের পাত্তা না দিলেও চলে। অন্য স্পিকারদের কাছে জেনডিবলের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। স্যান্ডেস-এর কাছেও নেই। কিন্তু জনপ্রিয়তা এখানে বিবেচ্য বিষয় না।

ডিলোরা ডেলারমি তার কল্পনায় বাধা দিল। নীল চোখ, গোল মুখের নিষ্পাপ বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তার তীক্ষ্ণ মাইন্ড এবং নিষ্ঠুর একাগ্রতাকে ঢাকা দিয়ে রেখেছে।

ডেলারমি হেসে জিজ্ঞেস করল, ফার্স্ট স্পিকার, আমরা কি আরো অপেক্ষা করব? (আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং-এর ঘোষণা দেয়া হয়নি বলেই সে কথা বলল, কিন্তু অন্য স্পিকাররা ঠিকই অপেক্ষা করত স্যান্ডেস এর পদাধিকার বলে প্রথমে কথা শুরু করার জন্য।)।

সূক্ষ্ম অসৌজন্যমূলক আচরণ সত্ত্বেও ফার্স্ট স্পিকার জবাব দিলেন, সাধারণত অপেক্ষা করা উচিত না, স্পিকার ডেলারমি, কিন্তু যেহেতু টেবিলের সবাই একত্র হয়েছি স্পিকার জেনডিবলের কথা শোনার জন্য, তাই নিয়মটা আমরা ভাঙতে পারি।

সে কোথায়, ফার্স্ট স্পিকার?

সেটা, স্পিকার ডেলারমি, আমি জানি না।

ডেলারমি সবার দিকে তাকালো। ফার্স্ট স্পিকার ছাড়া আরো এগার জন স্পিকার। মাত্র বারজন। পাঁচ শতাব্দী ধরে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন তার ক্ষমতা দায়িত্ব বাড়িয়ে চলেছে, কিন্তু টেবিলে স্পিকারের সংখ্যা বারোজন থেকে বাড়ানোর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।  

সেলডনের মৃত্যুর পর থেকেই দ্বিতীয় ফার্স্ট স্পিকার (সেলডনকে ধরা হয় প্রথম ফার্স্ট স্পিকার) নিয়মটা চালু করেন এবং তারপর থেকে বারো জনেই স্পিকার টেবিল তৈরি হয়েছে।

বারোজন কেন? সংখ্যাটাকে খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায় এমন ছোট ছোট দলে ভাগ করা যাবে। একসাথে কাজ করার জন্য দলটা যথেষ্ট ছোট এবং কয়েকটা গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করার জন্য যথেষ্ট বড়। সংখ্যাটা বেশি হলে দলটা খুব বড় হয়ে যেত, কম হলে কার্যকারিতা কমে যেত।

সবসময় এই ব্যাখ্যাটাই দেয়া হয়। আসলে কেউই বলতে পারে না কেন এই সংখ্যাটাই নির্বাচন করা হয়েছে–আর কেনই বা সেটা অপরিবর্তনীয়। তবে দেখা যাচ্ছে যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনও ঐতিহ্য আর প্রথার বাঁধনে আটকা পড়ে আছে।

এক মুখ থেকে অন্য মুখে, এক মাইন্ড থেকে অন্য মাইন্ডে অন্যমনস্কভাবে ঘোরাঘুরি করার সময় পুরো ব্যাপারটা ভাবতে ডেলারমির মাত্র এক মুহূর্ত সময় লেগেছে।

সে সন্তুষ্ট যে জেনডিবলের প্রতি কারো কোনো সমবেদনা নেই। তরুণকে তার প্রায়ই কেঁচোর মতো মনে হয়। শুধু যোগ্যতা ও মেধার কারণে অন্য সবাই সরাসরি বিরোধিতা করছে না। (দ্বিতীয় ফাউন্ডেশনের হেমিমিলেনিয়াম ইতিহাসে মাত্র দুজন স্পিকারকে বহিষ্কার করা হয় কিন্তু তারা দোষী সাব্যস্ত হয় নি।)

যে কারণই থাকুক মিটিং-এ উপস্থিত হতে না পারাটা মারাত্মক অপরাধ এবং ডেলারমি এটা অনুভব করে খুশি যে সবার ভেতরেই বিচারের দাবী জোরালো হচ্ছে।

ফার্স্ট স্পিকার, সে বলল, স্পিকার জেনডিবল কোথায় আছে সেটা আপনি যদি না জানেন, আমি আপনাকে বলতে পারি।

বল, স্পিকার?

আমরা সবাই জানি এই তরুণ (প্রত্যেকেই খেয়াল করেছে ডেলারমি কোনো সম্মানসূচক সম্বোধন করেনি।) প্রায়ই হ্যামিশ এলাকায় যায়। ওখানে তার কাজটা কি আমি জানি না, তবে এই মুহূর্তে সে হ্যামিশদের সাথে আছে এবং ওখানের কাজটাকে মিটিং-এর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

আমি যতদূর জানি, স্পিকারদের একজন বলল, হাঁটতে বা জগিং করতে সে ওইদিকে যায়।

ডেলারমি আবারও হাসল।–হাসতে সে পছন্দ করে। এর জন্য অতিরিক্ত কিছু ব্যয় করতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরি, প্রাসাদ এবং চারপাশের পুরো অঞ্চলটাই আমাদের। জায়গাটা গ্রহের তুলনায় অনেক ছোট, কিন্তু তারপরেও প্রচুর জায়গা আছে, অন্তত ব্যায়াম করার জন্য।–ফার্স্ট স্পিকার, আমাদের শুরু করা উচিত না?

ভিতরে ভিতরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ফার্স্ট স্পিকার। টেবিলকে অপেক্ষা করিয়ে রাখার পূর্ণ ক্ষমতা তার রয়েছে অথবা জেনডিবল উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত মিটিং তিনি দীর্ঘায়িত করতে পারবেন।

না, অন্য স্পিকারদের সমর্থন ছাড়া কোনো ফার্স্ট স্পিকারই ভালভাবে প্রশাসন চালাতে পারবেনা। কাজেই তাদেরকে খেপানো ঠিক হবে না। এমনকি প্রিম পালভারও অনেক সময় তার অটল সিদ্বান্ত থেকে সরে দাঁড়াতেন। তাছাড়া জেনডিবলের আচরণ এমনকি ফার্স্ট স্পিকারের কাছেও বিরক্তিকর। তরুণ স্পিকারের বোঝা উচিত তার ইচ্ছামতো সবকিছু চলে না।

ফার্স্ট স্পিকার হিসেবে তিনি সবার আগে বক্তব্য শুরু করলেন, আমরা শুরু করব। স্পিকার জেনডিবল প্রাইম রেডিয়্যান্ট ডাটা থেকে বিপজ্জনক তথ্য পেয়েছে। তার বিশ্বাস কোনো একটি সংগঠন নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আমাদের চেয়েও দক্ষভাবে সেলডন প্ল্যান নিয়ন্ত্রণ করছে। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপারটা আমাদের বিবেচনা করা উচিত। বিষয়টা তোমাদের সবাইকে জানানো হয়েছে এবং আজকের মিটিংএ স্পিকার জেনডিবলকে তোমরা প্রশ্ন করতে পারতে যেন ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

এত কিছু বলার প্রয়োজন ছিলনা। স্যান্ডেস তার মাইন্ড উন্মুক্ত করে রেখেছেন, ফলে সবাই সব জানে। মৌখিকভাবে বলাটা নিতান্তই ভদ্রতা।

ডেলারমি দ্রুত চারপাশে তাকালো। বাকী দশজন বোধহয় জেনডিবলের বিপক্ষে। বলার জন্য তাকেই মনোনীত করেছে। কিন্তু জেনডিবল নিজেও জানে না (এখনো কোনো সম্মানসূচক সম্বোধন নেই) এই সংগঠনটা কি বা কারা।

সাধারণভাবে বললে ও, বলার ভাবে খুব সূক্ষ রুক্ষতা রয়েছে। যেন বলছে: আমি আপনার মাইন্ড দেখতে পারছি; কষ্ট করে ব্যাখ্যা করতে হবে না।

ফার্স্ট স্পিকার রুক্ষতাটা ধরতে পারলেন এবং এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। স্পিকার জেনডিবল সংগঠনের ব্যাপারে কিছু জানেনা বা বলতে পারবেনা, তার মানে এই না যে তাদের অস্তিত্ব নেই। প্রথম ফাউণ্ডেশন কখনোই আমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে পারেনি। এখন তুমি কি বলবে আমাদের অস্তিত্ব নেই?

ঠিক মিলছেনা, ডেলারমি মৃদু হেসে বলল, এমন কোনো কথা নেই যে আমরা। অপরিচিত বলেই এখনো টিকে আছি, বা কারো অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তাকে অপরিচিত হতে হবে।

সত্যি কথা। সে কারণেই স্পিকার জেনডিবলের ব্যাখ্যা আমাদের খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এর পেছনে শক্ত গাণিতিক যুক্তি রয়েছে, আমি নিজে পরীক্ষা করে দেখেছি, তোমাদেরও দেখা উচিত। তার ব্যাখ্যা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো না।

আর এই প্রথম ফাউণ্ডেশনার, গোলান ট্র্যাভিজ, আপনার মাইন্ডে যার কথা ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু উল্লেখ করেন নি।

ফার্স্ট স্পিকার কিছুটা রেগে গেলেন। স্পিকার জেনডিবলের মতে ট্র্যাভিজকে হয়তো তার অজান্তেই ঐ সংগঠন নিজেদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং তার উপরও আমাদের নজর রাখতে হবে।

যদি, ডেলারমি চেয়ারে হেলান দিয়ে বাদামী চুল পেছনে সরিয়ে বলল, সেই সংগঠন বা যাই হোক তার অস্তিত্ব থাকে এবং যদি সেটা বিপজ্জনক রকম মেন্টাল পাওয়ারের অধিকারী হয়, নিজেদেরকে খুব ভালোভাবে লুকিয়ে রাখতে পারে তাহলে প্রথম ফাউণ্ডেশনের এমন একজন সুপরিচিত উন্মাদ লোককে নিজেদের উদ্দেশ্যে সরাসরি ব্যবহার করা কি ঠিক যুক্তিযুক্ত মনে হয়?

ফার্স্ট স্পিকার, গম্ভীর গলায় বললেন, সবাই তোমার মতো করেই ভাববে। কিন্তু চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু বিষয় আমার নজরে এসেছে। আমি নিজেও পুরোটা ভালোভাবে বুঝতে পারিনি। অনিচ্ছাকৃতভাবেই তিনি তার চিন্তা মাইন্ডে গোপন করে ফেললেন, লজ্জা পেলেন অন্যরা সেটা দেখেছে বলে।

প্রত্যেক স্পিকার ফার্স্ট স্পিকারের মেন্টাল এ্যাকশন খেয়াল করল এবং তার লজ্জাবোধকে সম্মান জানালো। ডেলারমি নিজেও, কিন্তু কিছুটা অধৈর্য হয়েই সে বলল, দয়া করে আপনার চিন্তা আমাদের জানতে দিন।

ঠিক আছে। কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজকে সংগঠনটা তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আর ব্যবহার করলেও তাকে দিয়ে কতটুকু কাজ হবে। অথচ স্পিকার জেনডিবলকে নিশ্চিত মনে হয়েছে এবং একজন স্বীকৃত। স্পিকারের এরকম অন্তৰ্জন কখনো অবজ্ঞা করা উচিত না। তাই আমি ট্র্যাভিজের উপর সেলডন প্ল্যান প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।

একজন ব্যক্তির উপর? স্পিকারদের একজন নিচু অবাক গলায় বলল এবং পরবর্তী চিন্তাটার জন্য সে দুঃখবোধ করল। তার চিন্তা ছিল; কি বোকা!

একজন ব্যক্তির উপর, ফার্স্ট স্পিকার বললেন, তুমি ঠিকই ধরেছ। আমি আসলেই বোকা। আমি ভালোভাবেই জানি, একজন দূরে থাক, ছোট একদল মানুষের উপরেই এই প্ল্যান প্রয়োগ করা যাবে না। যাই হোক, আমি কৌতূহলী ছিলাম। প্রথমে ষোলটা ভিন্ন পথে ট্র্যাভিজের আন্তঃব্যক্তিক পারস্পরিক সম্পর্ক যতদূর সম্ভব পরীক্ষা করি। এরপর তার ব্যাপারে যা কিছু জানি সব ব্যবহার করি। তারপর পুরোটা সমন্বয় করি। তিনি থামলেন।

বেশ? ডেলারমি বলল,–ফলাফল কি বেশি অবাক করার মতো?

কোনো ফলাফলই পাওয়া যায়নি। একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কিছুই করা যাবে না। তারপরেও তারপরেও

তার পরেও?

ফলাফল বিশ্লেষণ করেই আমি চল্লিশ বছর কাটিয়েছি, এখন আগে থেকেই বলে দিতে পারি ফলাফল কি হবে আমার কখনো ভুল হয় না। এক্ষেত্রে, যদিও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি, আমার মনে হচ্ছে জেনডিবলের কথাই ঠিক এবং ট্র্যাভিজকে একা ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না।

কেন উচিত হবে না, ফার্স্ট স্পিকার? ডেলারমি জিজ্ঞেস করল।

আমি লজ্জিত, কারণ সেলডন প্ল্যান সম্পূর্ণ অকার্যকর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি। আরো লজ্জিত এই কারণে যে এই মুহূর্তে আমি সম্পূর্ণ অন্তৰ্জন দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি।–আমার অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র। যদি জেনডিবলের কথা ঠিক হয়–যদি কোনো অজানা উৎস থেকে আমরা বিপদের মুখোমুখি হই, তখন ট্র্যাভিজই থাকবে চালকের আসনে।

আপনার এমন অনুভূতির পেছনে কি যুক্তি আছে? ডেলারমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।

ফার্স্ট স্পিকার স্যান্ডেস টেবিলের সবার দিকে উদভ্রান্তের মতো তাকালেন, কোনো যুক্তি নেই। সাইকোহিস্টোরিক্যাল গণিত থেকে কিছু পাওয়া যায়নি, কিন্তু যতই ভাবছি ততই মনে হচ্ছে সবকিছুর চাবি হচ্ছে ট্র্যাভিজ। এই তরুণের প্রতি অবশ্যই আমাদের মনযোগ দিতে হবে।

.

২৫.

জেনডিবল বুঝতে পারছে মিটিং-এ সে সময়মতো পৌঁছতে পারবে না। হয়তো আর কোনোদিনই পৌঁছতে পারবে না।

হ্যামিশরা খুব শক্তভাবে ধরে রেখেছে আর সে পাগলের মতো একটা উপায় খুঁজছে যেন তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য তাদেরকে সে বাধ্য করতে পারে।

রাফির‍্যান্ট এখন দাঁড়িয়ে আছে সামনে, বিজয়ীর মতো। তুমি তৈরি স্কোওলার? ঘুষির বদলে ঘুষি, আঘাতের বদলে আঘাত, হ্যামিশ নিয়ম। এসো তুমিই প্রথম আঘাত কর।

তোমাকেও তাহলে আমার মতো ধরে রাখুক।

ওকে ছেড়ে দাও, রাফির‍্যান্ট বলল, না, না। শুধু হাত দুটো। হাত দুটো ছেড়ে দাও, কিন্তু পা দুটো শক্ত করে ধরে রাখে। আর নাচ দেখতে চাই না।

জেনডিবল টের পেল তার পা দুটো শক্ত করে মাটিতে চেপে ধরা হয়েছে। হাত দুটো এখন মুক্ত।

মারো স্কোওলার, একটা ঘুষি দাও।

জেনডিবলের অনুসন্ধানী মাইন্ড তারপর একটা উপায় দেখতে পেল–ক্রোধ, অবিচার এবং করুণার অনুভূতি। আর কোনো উপায় নেই। ঝুঁকিটা তাকে নিতেই হবে, সরাসরি এই অনুভূতিগুলো জোরালো করে তুলতে হবে তারপর

কোনো প্রয়োজন ছিলনা। নতুন একটা মাইন্ড সে ধরতেই পারে নি, কিন্তু সেটা একেবারে তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করল।

হঠাৎ করেই একটা ছোট কাঠামো চোখে পড়ল জেনডিবলের গাট্টাগোট্টা, জট পাকানো কালো চুল, হাত দুটো সামনে বাড়ানো।

একটা মেয়ে। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় জেনডিবল নিজের চোখে যা দেখছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

ক্যারল রাফির‍্যান্ট! মেয়েটা কৃষককে ধরে একটা ঝাঁকুনি দিল। তুমি একটা ভীতু ষাড়! আঘাতের বদলে আঘাত, হ্যামিশ নিয়ম? তোমার সাইজ স্কোওলারের দ্বিগুণ। বরং আমার সাথে মারামারি করলেও মানাবে। এর জন্য কি তোমার প্রশংসা করবে সবাই? বরং তোমাকে লজ্জা দেবে। সবাই আঙ্গুল তুলে বলবে, ঐ যে রাফির‍্যান্ট, শিশু পিটিয়ে হিরো হয়েছে। সবাই তোমাকে নিয়ে হাসবে। কোনো মর্যাদাবান হ্যামিশ পুরুষ তোমার সাথে ড্রিঙ্ক করবে না কোনো হ্যামিশ নারী তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না।

রাফির‍্যান্ট চেষ্টা করছে মুষলধারে গালি থামানোর, মেয়েটির ঘুষি থামানোর চেষ্টা করছে, দুর্বল গলায় বোঝানোর চেষ্টা করছে, শোন সুরা। শোন সুরা।

জেনডিবল টের পেল তাকে কেউ ধরে রাখেনি, রাফির‍্যান্ট তার দিকে তাকিয়ে নেই, মাইন্ডগুলো আর তাকে নিয়ে ভাবছে না।

সুরাও ভাবছে না; তার পুরো রাগ একা রাফির‍্যান্ট-এর উপর। জেনডিবল দম ফিরে পেয়েছে, এখন সে সুরার রাগ এবং রাফির‍্যান্ট-এর মাইন্ডে যে অস্বস্তিকর লজ্জাবোধ তৈরি হয়েছে, সেটাকে আরো জোড়ালো করে তুলতে চাইল। আবারো কোনো প্রয়োজন ছিল না

মেয়েটি কথা বলেই যাচ্ছে, সবাই সরে দাঁড়াও। দেখ রাফির‍্যান্ট গন্ডারটা যদি যথেষ্ট না হয় তাহলে তার আরো পাঁচ ছয়জন বন্ধু থাকতে পারো, আর লজ্জার ভাগ। নিতে পারো, তারপর ফার্মে ফিরে গিয়ে বাচ্চা ছেলে পেটানোর রোমহর্ষক কাহিনী বলতে পারবে। তুমি বলবে, আমি লোকটার হাত ধরে রেখেছিলাম, আর দানব রাফির‍্যান্ট জোরে ঘুষি মেরেছিল, যখন লোকটা ফিরতি আঘাত করে নি। তুমি বলবে, আমি তো লোকটার পা দুটো ধরে রেখেছিলাম, কাজেই আমাকেও একটু বীরত্ব দাও। তখন রাফির‍্যান্ট-জোকারটা বলবে, আসলে লোকটাকে আমি এক জায়গায় স্থির রাখতে পারছিলাম না, তাই আমার বন্ধুরা ওকে চেপে ধরেছিল, তারপর ছয়জন মিলে ওকে পিটিয়েছি।

কিন্তু সুরা, রাফির‍্যান্ট প্রায় কেঁদে ফেলেছে, আমি স্কোওলারকে প্রথম আঘাত করতে বলেছি।

ওর ঘুষিকে তুমি কত ভয় পাও, তাই না, রাফির‍্যান্ট মোটা-মাথা। ওকে ওর কাজে যেতে দাও, আর তোমরা সবাই ফিরে যাও বাড়িতে। মনে করো না যে আজকের ঘটনা সবাই ভুলে যাবে। আমাকে যদি আরো রাগাও তাহলে আরো বেশি করে এই ঘটনা ছড়াবে।

সবাই মাথা নিচু করে হাঁটা দিল, পিছনে তাকাচ্ছেনা।

জেনডিবল তাদের দিকে তাকিয়েছিল, তারপর ঘুরে তাকালো মেয়েটির দিকে। পরনে ব্লাউজ আর ট্রাউজার, ঘরে তৈরি জুতা। মুখ ঘামে ভেজা। বড় নাক, ভারী বুক (অন্তত ঢোলা ব্লাউজের উপর থেকে জেনডিবল যতটুকু বুঝতে পারল)। উন্মুক্ত বাহুদুটো পেশীবহুল।–কারণ হ্যামিশ নারীরা মাঠে হ্যামিশ পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করে।

কোমরে হাত বেঁধে মেয়েটি কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। বেশ স্কোওলার, দেরি করছেন কেন? নিজের কাজে যান। ভয় পাচ্ছেন? আমি এগিয়ে দেব?

অপরিষ্কার কাপড় থেকে জেনডিবল ঘামের গন্ধ পাচ্ছে, কিন্তু নাক কোঁচকানোটা অভদ্রতা হবে। ধন্যবাদ, মিস সুরা।

আমার নাম নোভী, মেয়েটি কঠিন গলায় বলল। সুরা নোভী। আপনি শুধু নোভী ডাকতে পারেন।

ধন্যবাদ নোভী। তুমি অনেক সাহায্য করেছ। আমি ভয় পাচ্ছিনা, তবে তুমি সাথে হাঁটলে আমার ভালো লাগবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণীদের যেভাবে সম্মান জানায়, সেভাবে মাথা নিচু করে সম্মান জানালো। লজ্জা পেল নোভী। অনিশ্চিতভাবে নিজের আচরণ সংযত করে নিল। ভাল লাগবে–আমারও। এমন ভাবে বলল যেন ভাব প্রকাশের জন্য সঠিক শব্দ খুঁজছে, তারপর হাল ছেড়ে দিল।

দুজন একসাথে হাঁটছে। জেনডিবল ভালোভাবেই জানে হাঁটার কারণে মিটিং-এ পৌঁছতে আরো দেরি হবে, কিন্তু এখন সে পুরো ঘটনা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারছে, এবং ইচ্ছা করেই আরো দেরী করছে।

দূরে বিশ্ববিদ্যালয় ভবন দেখার সাথে সাথেই সুরা নোভী থেমে দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল, মাস্টার স্কোওলার?

হ্যাঁ, নোভী?

 জায়গাটা খুব সুন্দর আর অনেক স্কোওলার থাকে, তাই না?

খুব সুন্দর। জেনডিবল বলল।

 আমার ইচ্ছা ছিল এখানে আসার এবং–এবং স্কোওলার হওয়ার।

কোনো একদিন, জেনডিবল ভদ্রগলায় বলল, জায়গাটা আমি তোমাকে দেখাব।

কথাটাকে নোভী শুধু ভদ্রতা হিসেবে নিল। আমি লিখতে পারি। স্কুলে শিখেছি। যদি আপনাকে চিঠি লিখি, সে চেষ্টা করছে গলাটা যেন স্বাভাবিক থাকে, কি লিখলে আপনার কাছে পৌঁছবে?

শুধু লিখবে, স্পিকার হাউজ, এপার্টম্যান্ট ২৭, তাহলেই হবে। কিন্তু এখন আমাকে যেতে হবে, নোভী।

সে আবারো মাথা নিচু করে সম্মান জানালো, নোভীও চেষ্টা করল তাকে অনুকরণ করার। দুজন হাঁটা দিল বিপরীত দিকে। জেনডিবল সাথে সাথেই নোভীর কথা মাইন্ড থেকে বের করে দিয়েছে। এখন ভাবছে মিটিং-এর কথা, বিশেষ করে স্পিকার ডেলোরা ডোেরমীর কথা। চিন্তাগুলো ভালো কিছু ছিল না।

.

কিষাণী

২৬.

স্পিকাররা সবাই যার যার নিজস্ব মেন্টাল শীল্ড-এ নিজেদের আলাদা করে ফেলেছে। যেন ট্র্যাভিজের ব্যাপারে ফার্স্ট স্পিকারের বক্তব্যের পরে তাকে অপমান না করার জন্য নিজেদের মাইন্ড লুকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। একই সাথে প্রত্যেকে তাকিয়ে আছে ডেলারমির দিকে। সবার ভেতর ডেলারমি বেশি সাহসী এমনকি জেনডিবলও এতটা বেপরোয়া না।

ডেলারমি সবার দৃষ্টির ব্যাপারে সচেতন, জানে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে তার উপায় নেই। তাছাড়া পরিস্থতি সে এভাবে হালকা করতে চায়না। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ইতিহাসে ভুল বিশ্লেষণের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো ফার্স্ট স্পিকারকে অপসারণ করার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখন অপসারণ করা সম্ভব। কাজেই সে পিছু হটবে না।

ফার্স্ট স্পিকার! সে নরম সুরে বলল, স্বাভাবিক ফর্সা মুখে পাতলা বর্ণহীন ঠোঁট প্রায় চোখেই পড়ে না। আপনি নিজেই বলেছেন যে আপনার বিশ্লেষণের পিছনে কোনো যুক্তি নেই, সাইকোহিষ্টোরিকাল গণিত থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। তাহলে আপনি বলছেন রহস্যময় অনুভূতির উপর ভিত্তি করে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে?

ফার্স্ট স্পিকার মুখ তুললেন, কপালে ভাজ। টেবিলের চারপাশে শীল্ড-এর ব্যাপারে তিনি সচেতন। এর অর্থ জানেন। ঠাণ্ডা গলায় বললেন, যুক্তি প্রমাণের অভাব আমি গোপন করিনি। অবান্তর কোনো কথাও বলিনি। যা বলেছি সেটা হচ্ছে একজন ফার্স্ট স্পিকারের শক্তিশালী অন্তৰ্জন, যার রয়েছে দীর্ঘ কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা, সারাজীবন যে কাটিয়েছে সেলডন প্ল্যান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সচরাচর করেন না, তিনি তাই করলেন, গর্বিত ভঙ্গিতে তাকালেন সবার দিকে, এবং একে একে সবার মেন্টাল শীল্ড সরে গেল। ডেলারমী (যখন তিনি তার দিকে তাকালেন) সরালো সবার পরে।

ডেলারমি এত স্বাভাবিকভাবে কথা বলল যেন কিছুই ঘটেনি, অবশ্যই আপনার কথা মেনে নিচ্ছি ফার্স্ট স্পিকার। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আরেকবার বিবেচনা করবেন। যেহেতু শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করার জন্য এরইমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, আপনি চাইলে আপনার বক্তব্য রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হবে-যদি সেগুলো- জেনডিবলের কণ্ঠস্বর বাধা দিল। কোন কথাগুলো রেকর্ড থেকে মুছে ফেলা হবে?

প্রতিজোড়া চোখ একসাথে ঘুরে তাকালো। শীল্ড না থাকলে সবাই ধরতে পারত যে জেনডিবল বেশ আগে থেকেই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সবাই শীল্ডের ভেতর ছিলেন? আমার কথা খেয়াল ছিল না? জেনডিবল বলল। কি চমৎকার মিটিং হচ্ছে এখানে। একজনের তো লক্ষ্য রাখা উচিত ছিল আমি আসি কি না আসি? নাকি ভেবেছিলেন আমি আসবই না?

এমন আচরণ সমস্ত নিয়ম শৃঙ্খলা পরিপন্থী। কারণ জেনডিবলের দেরিতে আসাটা যথেষ্ট খারাপ। অনুমতি না নিয়ে ভেতরে ঢোকা তার চেয়েও খারাপ। সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ফাস্ট স্পিকারের আগে কথা বলা।

ফার্স্ট স্পিকার তার দিকে ঘুরলেন। সবকিছু বাদ। নিয়ম শৃঙ্খলার ব্যাপারটা দেখতে হবে সবার আগে।

স্পিকার জেনডিবল, তিনি বললেন, তুমি দেরি করে এসেছ। অনুমতি না নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছ, কথা বলেছ। বল, কেন তোমার আসন ত্রিশ দিনের জন্য। সাসপেন্ড করা হবে না?

অবশ্যই। সাসপেনশন এর ব্যাপার পরে আসবে, প্রথমে দেখতে হবে কে আমাকে দেরি করিয়ে দিয়েছিল এবং কেন। জেনডিবলের কথাগুলো ঠাণ্ডা এবং হিসাব করা, কিন্তু তার মাইন্ড তার চিন্তাকে রাগ দিয়ে আবৃত করে রেখেছে, এবং কে সেটা ধরতে পারল এটা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।

অবশ্যই ডেলারমি ধরতে পারল। সে জোর দিয়ে বলল, এই লোকটা পাগল হয়ে গেছে।

পাগল? এই মহিলা পাগল বলেই এমন কথা বলছে। নাকি নিজের দোষ ঢাকতে চাচ্ছে।–ফার্স্ট স্পিকার, আমি পারসোন্যাল প্রিভিলেজ চাই।

কি ধরনের পারসোন্যাল প্রিভিলেজ, স্পিকার?

ফার্স্ট স্পিকার, আমি এখানেই একজনকে খুনের চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করতে চাই।

ঘরের ভেতর যেন বিস্ফোরণ ঘটল। সব স্পিকার ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়েছে, একসাথে ফিসফিস করছে, মৌখিকভাবে এবং মেন্টালি।

ফার্স্ট স্পিকার হাত তুললেন। চিৎকার করে বললেন, যে কোনো স্পিকারের পারসোন্যাল প্রিভিলেজ এর সুযোগ রয়েছে। তিনি তার কর্তৃত্ব খাটানোর চেষ্টা করলেন, মেন্টালি, পদ্ধতিটা সবার পছন্দ হবে না কিন্তু অন্য কোনো উপায় নেই।

হৈ চৈ থেমে গেল।

সবাই স্বাভাবিক এবং মেন্টালি নীরব না হওয়া পর্যন্ত জেনডিবল অপেক্ষা করল। তারপর বলল, দূরের এক হ্যামিশ রাস্তা ধরে আমি এখানে আসছিলাম। সময়মতোই মিটিং-এ পৌঁছতে পারতাম, রাস্তায় কয়েকজন কৃষক আমাকে হামলা। করে, অল্পের জন্য মার খাওয়ার হাত থেকে বেঁচেছি, হয়তো বা মৃত্যুর হাত থেকেও। যাই হোক দেরি হলেও আমি পৌঁছতে পেরেছি। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের সাথে কোনো হ্যামিশ লোক চোখ তুলে কথা বলেছে এমন ঘটনাই আমি শুনিনি–গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা।

আমিও না, ফার্স্ট স্পিকার বললেন।

ডেলারমি চিৎকার করে বলল, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনাররা হ্যামিশ এলাকায় ঘোরাঘুরি করেনা। তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছ!

সত্যি কথা, জেনডিবল বলল, যে আমি হ্যামিশ এলাকায় একা ঘোরাঘুরি করি। বিভিন্ন দিকে আমার একশ বারেরও বেশি যাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু এর আগে কেউ আমার সাথে যেচে কথা বলেনি। অন্য কেউ আমার মতো স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করে না, তাই বলে তারা যে বাইরে যায় না তা-ও না। অথচ তাদের সাথেও কেউ কখনো কথা বলেনি। আমার মনে আছে যখন ডোেমরি মাঝে মাঝে, তারপর যেন হঠাৎ করেই সম্মানসূচক সম্বোধনের কথা মনে পড়ল এবং অপমান করার উদ্দেশ্যে মুখ ভেঙচে বলল, যখন স্পিকারেস ডেলারমি মাঝে মাঝে হ্যামিশ এলাকায় যেতেন, তখনো কেউ তার সাথে যেচে কথা বলেনি।

সম্ভবত, ডেলারমি চোখ দুটো গোল করে বলল, কারণ আমি তাদের সাথে প্রথমে কথা বলতামনা এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কারণ আমি এমন আচরণ করতাম যেন আমাকে শ্রদ্ধা করাই ওদের কাজ।

আশ্চর্য, জেনডিবল বলল, অথচ আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার চেয়েও নরম ব্যবহার করেন। কিন্তু আমাকে বোঝান দেখি সব বাদ দিয়ে আজকের দিনটাকেই তারা বেছে নিল কেন, যেদিন আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ যোগ দিতে হবে?

যদি তোমার ব্যবহারের কারণে না হয়, তাহলে এটা অবশ্যই একটা দৈব ঘটনা, ডেলারমি বলল। আমি যতদূর জানি, এমনকি সেলডনের গণিতও গ্যালাক্সি থেকে দৈব সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করতে পারেনি বিশেষ করে একজন ব্যক্তির বেলায়তো অবশ্যই না। নাকি তুমিও নিজের অন্তৰ্জন থেকে কথা বলছ? (ফাস্ট স্পিকারকে কটাক্ষ করায় দুই একজন স্পিকার মেন্টালি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।)।

আমার ব্যবহারের কারণে ঘটনাটা ঘটেনি। দৈব ঘটনাওনা, কেউ ইচ্ছে করেই ঘটিয়েছে। জেনডিবল বলল।

সেটা আমরা কিভাবে জানব? ফার্স্ট স্পিকার নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন। ডেলারমির শেষ মন্তব্যের পর তিনি জেনডিবলের প্রতি নরম হয়ে পড়েছেন।

আমার মাইন্ড আপনার কাছে উন্মুক্ত, ফার্স্ট স্পিকার। আপনাকে এবং বাকী সবাইকে আমি ঘটনাটার স্মৃতি তুলে দিচ্ছি।

মুহূর্তেই সবার জানা হয়ে গেল। ফার্স্ট স্পিকার বললেন, ভয়ংকর! বিপদের। মুখেও তুমি খুব ভালো আচরণ করেছ, স্পিকার। আমি একমত যে হ্যামিশদের আচরণ ছিল খুব হিংস্র এবং কারণটা তদন্ত করে দেখতে হবে। এখন দয়া করে আলোচনায় যোগ দাও।

এক সেকেন্ড! ডেলারমি বাধা দিল। স্পিকারের স্মৃতি ঠিক আছে, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হব কি করে?

রেগে গেলেও জেনডিবল নিজেকে সামলে নিল। আমার মাইন্ড উন্মুক্ত।

আমি এমন উন্মুক্ত মাইন্ডের কথা জানি যা আসলে উন্মুক্ত থাকে না।

সেই ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই, স্পিকার, জেনডিবল বলল যেহেতু আপনি সবসময়ই আমাদের বাকী সবাইকে নজরবন্দী করে রাখেন। যাই হোক, আমার মাইন্ড যখন উন্মুক্ত, তখন সেটা পুরোপুরিই উন্মুক্ত।

ফার্স্ট স্পিকার বললেন, আমাদের আর

বাঁধা দেয়ার জন্য দুঃখিত, কিন্তু পারসোন্যাল প্রিভিলেজ-এর বিষয়টা, ডেলারমি বলল।

কি ধরনের পারসোন্যাল প্রিভিলেজ, স্পিকার?

স্পিকার জেনডিবল আমাদের একজনকে হত্যা চেষ্টার দায়ে অভিযুক্ত করেছে। যতক্ষণ সে অভিযোগ প্রত্যাহার না করছে, ততক্ষণ আমাকে সম্ভাব্য খুনী হিসেবে ধরা হবে। আপনাকেসহ ঘরের বাকী সবাইকে তাই ধরা হবে।

তুমি অভিযোগ প্রত্যাহার করবে, স্পিকার জেনডিবল? ফার্স্ট স্পিকার জিজ্ঞেস করলেন।

জেনডিবল চেয়ারে বসল, হাত দুটো পরস্পরের সাথে জোরে চেপে ধরল, যেন প্রমাণ করতে চাইছে এর আসল মালিক সেই। করব, যদি কেউ আমাকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারে কেন হ্যামিশ কৃষকরা আমাকে দেরি করিয়ে দেয়ার জন্য দল বেঁধে তৈরি হয়েছিল।

হাজারটা কারণ থাকতে পারে, ফার্স্ট স্পিকার বললেন। আমি তো বলেছি ঘটনাটা তদন্ত করে দেখা হবে। এখন আলোচনার স্বার্থে তুমি অভিযোগ প্রত্যাহার করবে?

সম্ভব না ফার্স্ট স্পিকার। হ্যামিশ কৃষকের আচরণ পরিবর্তন করার জন্য যতদূর সম্ভব সূক্ষ্মভাবে, যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেভাবে তার মাইন্ড পরীক্ষা করার জন্য অনেকগুলো মিনিট ব্যয় করেছি। কিন্তু পারিনি, তার মাইন্ডে স্বাভাবিকতা ছিল না। তার আচরণ ছিল নির্দিষ্ট যেন বাইরের একটা মাইন্ড তাকে চালাচ্ছে।

ডেলারমি হঠাৎ মৃদু হাসি দিয়ে বলল, তোমার ধারণা সেই বাইরের মাইন্ড আমাদের কারো? তোমার সেই রহস্যময় সংগঠনের কারো হতে পারেনা, যারা আমাদের চেয়েও শক্তিশালী?

হতে পারে, জেনডিবল বলল।

সে ক্ষেত্রে, আমরা যারা তোমার সেই সংগঠনের সদস্য না–তাদের কোনো দোষ নেই এবং তোমার অভিযোগ প্রত্যাহার করা উচিত। নাকি তোমার অভিযোগ এখানের কেউ একজন ওই সংগঠনের পক্ষে কাজ করছে? হয়তো আমাদের কেউ একজন দল বদল করেছে?

হয়তো বা, জেনডিবল কঠিন গলায় বলল, বুঝতে পারছে ডেলারমি তার গলায় ফাঁস পড়াচ্ছে।

মনে হয়, ডেলারমি ফাঁস এটে বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, গোপন, অজানা রহস্যময় সংগঠনের ব্যাপারটা তোমার রাতের কোনো দুঃস্বপ্ন। হ্যামিশ কৃষকদের প্রভাবিত করা হয়েছে বা স্পিকাররা গোপন কোনো পক্ষ নিয়ে কাজ করছে, তোমার এ ধরনের কল্পনার সাথে ব্যাপারটা মিলে। বল স্পিকার, আমাদের মধ্যে কে গোপন কোনো দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে? আমি?

মনে হয়না, স্পিকার। যদি হতেন, তাহলে আমাকে যে পছন্দ করেন না সেটা এত খোলাখুলি প্রচার করতেন না।

হয়তো, ডাবল-ডাবল ক্রস? ডেলারমি বলল। পুরোপুরি সন্তুষ্ট। তোমার ফ্যান্টাসীর এটাই সাধারণ সমাধান।

হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ।

স্পিকার লেসটিম জিয়ান্নি ক্ষিপ্ত হয়ে বাধা দিল। দেখুন, স্পিকার জেনডিবল, আপনি স্পিকার ডেলারমিকে অভিযুক্ত না করলে, সরাসরি আমাদের বাকী সবাইকে অভিযুক্ত করছেন। আপনাকে হত্যা করে বা দেরি করিয়ে দিয়ে আমাদের লাভ?

জেনডিবল সাথে সাথে উত্তর দিল, যেন প্রশ্নটার জন্য সে তৈরি হয়েই ছিল। যখন আমি পৌঁছাই তখন ফার্স্ট স্পিকারের কোনো একটা মন্তব্য রেকর্ড থেকে মুছে ফেলার আলোচনা হচ্ছিল। একমাত্র আমিই সেই মন্তব্যগুলো শুনতে পারিনি। সেগুলো জানতে পারলে হয়তো আমাকে দেরি করানোর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে পারব।

আমি বলছিলাম, ফার্স্ট স্পিকার বললেন, যে আমার দীর্ঘদিনের অন্তৰ্জন এবং সাইকোহিষ্টোরিক্যাল গণিতের অপ্রচলিত প্রয়োগের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি যে পুরো পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রথম ফাউণ্ডেশনার গোলান ট্র্যাভিজের উপর।–কিন্তু স্পিকার ডেলারমি এবং অন্যরা এই কথার প্রচণ্ড বিরোধিতা করছে।

অন্য স্পিকাররা কি ভাবছে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমি আপনার সাথে। একমত। ট্র্যাভিজ হচ্ছে মূল চাবিকাঠি। প্রথম ফাউণ্ডেশন থেকে তাকে বের করে দেয়ার ঘটনাটা আমাকে বেশ কৌতূহলী করে তুলেছে।

তুমি বলতে চাও, স্পিকার জেনডিবল, ডেলারমি বলল, ট্র্যাভিজ সেই রহস্যময় সংগঠনের হাতে চলে গেছে অথবা যারা তাকে বের করে দিয়েছে তারা? হয়তো তুমি এবং ফার্স্ট স্পিকার বাদে বাকী সবাই এবং সবকিছু তাদের দখলে রয়েছে?

অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দরকার নেই। বরং জিজ্ঞেস করছি, এখানে এমন কোনো স্পিকার আছেন, যে আলোচ্য বিষয়ে ফার্স্ট স্পিকার এবং আমার সাথে একমত হবেন? সম্ভবত আমার যে গাণিতিক সমাধান ফার্স্ট স্পিকার সমর্থন করেছেন সেটা আপনারা পড়েছেন?

সবাই নীরব।

আমি আবারও অনুরোধ করছি। আছেন কেউ?

তারপরেও সবাই নীরব।

 ফার্স্ট স্পিকার, আমাকে দেরি করানোর উদ্দেশ্য আপনি পেয়ে গেছেন।

বিস্তারিত বল। ফার্স্ট স্পিকার বললেন।

ট্র্যাভিজকে সামলানোর প্রয়োজনীয়তা আপনি বলেছেন। অর্থাৎ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যদি স্পিকাররা সমাধান পড়ে তাহলে সেগুলো কি হতে পারে সেটা তারা জানেন। যদি তারা একসাথে একসাথে আপনার বিরোধিতা করে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আপনি আর এগুতে পারবেন না। যদি এমনকি একজন স্পিকারও আপনাকে সমর্থন জানায় তাহলেই আপনি নতুন পলিসি প্রয়োগ করতে পারবেন। আমি সেই একজন স্পিকার যে আপনাকে সমর্থন জানাবো। এবং যারা সমাধানটা দেখেছে তারা এটা জানে, এবং আমাকে মিটিং থেকে দূরে সরিয়ে রাখাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। কৌশলটা কাজে লেগে গিয়েছিল প্রায়, কিন্তু ফার্স্ট স্পিকারকে সমর্থন জানানোর জন্য আমি পৌঁছে গেছি। আমি তার সাথে একমত এবং বাকী এগারজন সদস্যের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

ডেলারমি টেবিলে একটা ঘুষি মারল। বোঝানো হচ্ছে যে, ফার্স্ট স্পিকার কি। বলবেন সেটা কেউ আগে থেকেই জানে এবং জানে যে স্পিকার জেনডিবল সেটা সমর্থন করবে, অন্যরা করবে না। আরো বোঝানো হচ্ছে যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো স্পিকার জেনডিবলের কল্পিত সংগঠনকে ঠেকানোর জন্য এবং আমাদের এক বা একাধিক সদস্য তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

একেবারে সঠিক, জেনডিবল একমত হলো। আপনার অনুমান শক্তি চমৎকার।

 তুমি কাকে অভিযুক্ত করছ? ডেলারমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল।

কাউকে না। আমি ফার্স্ট স্পিকারকে ব্যাপারটা সামলাতে অনুরোধ করছি। এটা পরিষ্কার যে আমাদের সংগঠনেরই কেউ একজন আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমার পরামর্শ হচ্ছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সবারই সম্পূর্ণ মেন্টাল বিশ্লেষণ করতে হবে। সবার, প্রত্যেক স্পিকার, আমি এমনকি ফার্স্ট স্পিকারেরও।

কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিটিং শেষ হয়ে গেল।

ফার্স্ট স্পিকার মিটিং-এর সমাপ্তি ঘোষণা করার সাথে সাথেই, জেনডিবল–কারো সাথে কথা না বলেই ফিরে এল নিজের রুমে। সে ভালোভাবেই জানে স্পিকারদের মধ্যে তার কোনো বন্ধু নেই। ফার্স্ট স্পিকারের সমর্থন তাকে কিছুটা সান্ত্বনা দিচ্ছে।

সে ভালোভাবে বলতে পারবে না ভয়টা কি তার নিজের জন্য না দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের জন্য। মুখটা তেতো হয়ে রয়েছে।

.

৭.

ভালোভাবে ঘুমাতে পারলনা জেনডিবল। শয়নে স্বপনে, সমস্ত চিন্তা ভাবনায় সে ডেলারমির সাথে তর্ক করতে লাগল। একটা স্বপ্নে দেখল ডেলারমি তাকে ঘুষি মারার জন্য এগিয়ে আসছে, মুখে হাসি, দাঁতগুলো সূচালো।

শেষ পর্যন্ত জেগে উঠল স্বাভাবিক সময়ের একটু পরে। বিশ্রাম হয়নি। টেবিলের উপর বাজার মিটমিট শব্দ করছে।

কনট্যাক্ট চেপে ধরে সে জিজ্ঞেস করল, হ্যাঁ। কি ব্যাপার?

স্পিকার! ফ্লোর প্রকটরের গলা। আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।

দেখা করতে এসেছে? জেনডিবল অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউল পাঞ্চ করে দেখল দুপুরের আগে কিছু নেই; সময় দেখল ৮.৩২ এ, এম। ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করল, এসময় আবার কে এসেছে?

নাম বলেনি, স্পিকার তারপর পরিষ্কার বিরক্তি নিয়ে বলল, হ্যাঁমিশারদের একজন, স্পিকার। আপনার আমন্ত্রণ পেয়ে এসেছে। পরের কথাটা আরো বেশি বিরক্তি নিয়ে বলল।

আমি না নামা পর্যন্ত রিসেপসন হলে বসাও। আমার সময় লাগবে।

জেনডিবল তাড়াহুড়ো করলনা। তৈরি হতে হতে সে নিজের চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইল। বোঝা যাচ্ছে হ্যামিশদের ব্যবহার করে কেউ একজন তার চলাচলে বাধা তৈরি করছে–কিন্তু সেই একজনটা কে তাকে জানতে হবে। আর এখন তার কোয়ার্টারে একজন হ্যাঁমিশের আগমনের কারণ কি? নতুন কোনো ফাঁদ?

সেলডনের কসম, একজন হ্যামিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকল কি করে? কেনই বা ঢুকল?

একবার ভাবল সাথে অস্ত্র নেবে কিনা কিন্তু সাথে সাথেই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একজন হ্যামিশ কৃষককে সামলাতে তার বেগ পেতে হবে না। কোনো চিহ্ন থাকবে না হ্যামিশ মাইন্ডে।

 জেনডিবল বুঝতে পারল, আগের দিনের ঘটনাটা তাকে বেশ ভালোমতোই নাড়া দিয়েছে। বোধহয় সেই কৃষকটাই এসেছে? এখন আর কারো দ্বারা বা কোনোকিছু দ্বারা প্রভাবিত না হয়তো মাফ চাইতে এসেছে। কিন্তু কোথায় যেতে হবে, কার কাছে যেতে হবে সেটা রাফির‍্যান্ট কিভাবে জানবে?

জেনডিবল দৃঢ় পায়ে লম্বা করিডরের শেষ মাথায় ওয়েটিংরুমে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালো। তারপর ঘুরে গ্লাস কিউবিকলের ভিতরে প্রকটরের দিকে তাকালো।

প্রকটর, একজন মহিলা দেখা করতে এসেছে, এটা তুমি বলনি।

প্রকটর শান্ত গলায় বলল, স্পিকার, আমি বলেছি হ্যাঁমিশার। আপনি আর কিছু জিজ্ঞেস করেন নি?

মিনিমাল ইনফরমেশন, প্রকটর। আমার মনে থাকবে। (এবং দেখতে হবে, লোকটা ডেলারমির নিয়োগ কিনা। আর এখন থেকে তার চারপাশে সবার কাজকর্মের প্রতি নজর রাখতে হবে।) কনফারেন্স রুম কোনোটা খালি আছে?

৪ নম্বরটা ব্যবহার করতে পারেন। আগামী তিনঘণ্টা ওটা খালি থাকবে। প্রক্টর হ্যামিশ মহিলার দিকে একবার তাকিয়েই নির্দোষ ভাব নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল।

আমরা চার নম্বরটাই ব্যবহার করব এবং আমার উপদেশ হচ্ছে তোমার চিন্তাটাকে সামাল দাও। দ্রুত আঘাত করল জেনডিবল এবং খুব ধীরে ধীরে প্রকটর তার শীল্ড তৈরি করুল। জেনভিল জানে তার চেয়ে নিচু স্তরের কোনো মাইন্ডকে আঘাত করা মান-সম্মানের প্রশ্ন। কিন্তু যে লোক তার ঊর্ধ্বতনদের ব্যাপারে অযাচিত ভাবনা লুকিয়ে রাখতে পারে না কিছুটা শাস্তি তার প্রাপ্য। আগামী কয়েকঘণ্টা প্রক্টর সামান্য মাথাবন্ধায় ভুগবে।

.

২৮.

নামটা জেনডিবলের মনে নেই, মনে করার আগ্রহ বোধ করছেনা। মেয়েটা হয়তো আশা করবে। জড়ানো গলায় বলল, তুমি

আমি নোভী, মাস্টার স্কোওলার, প্রায় ফিসফিস করে সে বলল। প্রথম নাম সুরা। কিন্তু শুধু নোভী ডাকলেই চলবে।

হ্যাঁ নোভী। গতকাল আমাদের দেখা হয়েছিল; এখন মনে পড়ছে। আমি কোনোদিন ভুলব না যে তুমি আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বলে সে হ্যামিশ উচ্চারণ ব্যবহার করছেনা। তুমি কিভাবে এসেছ?

মাস্টার, আপনি চিঠি লিখতে বলেছিলেন। ঠিকানা বলে দিয়েছিলেন, স্পিকারস হাইজ, এপার্টম্যান্ট ২৭, দেখানোর জন্য আমি নিজে চিঠি নিয়ে এসেছি–আমার নিজের হাতের লেখা, মাস্টার। লাজুক কিন্তু গর্বিত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলল। ওরা জিজ্ঞেস করেছিল, চিঠি কার জন্য? মাথামোল রাফির‍্যান্ট-এর কাছে আপনার নাম বলতে শুনেছি। আমি বললাম চিঠিটা স্টর জেনডিলের, মাস্টার স্কোওলার।

ওরা তোমাকে আসতে দিল, নোজ? চিঠিটা দেখতে চায়নি?

আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওদের আচরণ আরেকটু ভাল হবে। আমি বলেছি, স্কোওলার জেনডিবল আমাকে এই জায়গাটা দেখাবেন বলে কথা দিয়েছেন, ওরা হাসাহাসি শুরু করল, একজন আরেকজনকে বলল, নিশ্চয়ই সবকিছু দেখাবে না, তারপর কোথায় যেতে হবে দেখিয়ে দিল, আর বলে দিল অন্য কোথাও গেলে আমাকে সাথে সাথে বের করে দেয়া হবে।

জেনডিবলের মুখ লাল হয়ে গেল। তার কোনো বিনোদনের প্রয়োজন হলেও সেটা এত খোলাখুলি হবে না এবং আরেকটু বাছবিছার করে নেবে। ট্রানটোরিয়ান মহিলার দিকে তাকিয়ে সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়তে লাগল।

মোটা তরুণী, অধিক পরিশ্রমের কারণে যা মনে হয় তারপরেও কম! পচিশের বেশি হবে না। এই বয়সে অধিকাংশ হ্যামিশ মেয়েরা বিয়ে করে ফেলে। তার কালো চুল এমনভাবে বেঁধে রেখেছে যেন বোঝা যায় সে অবিবাহিত–কুমারীত্বের প্রতীক–এবং জেনডিবল অবাক হয়নি। গতকালকেই সে যে মুখরা ভাব দেখিয়েছে এর ফলে তার হাত এবং ধারালো জিভের সামনে দাঁড়ানোর মতো কোনো হ্যামিশ পুরুষ পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। খুব বেশি সুন্দরীও না, তবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা আছে। কঠিন মুখ, হাতগুলো লাল, শক্তিশালী, পরিশ্রমের তৈরি শরীর।

জেনডিবলের দৃষ্টির কারণে নোভীর ঠোঁট কাঁপছে। সে মেয়েটার ভয় এবং বিব্রতভাব ধরতে পারল এবং করুণাবোধ করল। আগের দিন এই মেয়ে তার যে উপকার করেছে সেটা ভোলবার নয়।

সদয় ভঙ্গিতে সে বলল, তো, তুমি এসেছ–আহ্ স্কলাররা কোথায় থাকে সেটা দেখতে?

চোখ বড় হয়ে গেল নোভীর (সুন্দর চোখ), মাস্টার, আমার উপর রাগ করবেন না, কিন্তু আমি এসেছি স্কোওলার হতে।

তুমি স্কলার হতে চাও? জেনডিবল বজ্রাহতের মতো বলল। শোন

থেমে গেল। একজন সাধারণ, অশিক্ষিত ফার্মওমেনকে সে কি করে বোঝাবে যে ট্র্যানটোরিয়ানরা যাদেরকে স্কোওলার বলে সেটা হতে গেলে কি পরিমাণ বুদ্ধিমত্তা, প্রশিক্ষণ, মেন্টাল স্ট্যামিনা প্রয়োজন হয়?

কিন্তু সুরা নোভী হড়বর করে কথা বলে যাচ্ছে। আমি পড়তে লিখতে পারি। সব বই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলেছি। আমার ইচ্ছা স্কোওলার হব। কোনো চাষার বউ হব না। খামারের কাজ আমার জন্য না। আমি কোনো কৃষককে বিয়ে করবনা, তার ছেলেমেয়ের জন্ম দেব না। গর্বিত ভঙ্গিতে মাথা উঁচু করে বলল, আমাকে অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি বলেছি না। ভদ্রভাবেই কিন্তু না।

নোভী মিথ্যে কথা বলছে সেটা জেনডিবল ধরতে পারল। কেউ তাকে কখনো বিয়ের প্রস্তাব দেয়নি। জিজ্ঞেস করল, বিয়ে না করে সারাজীবন কি করবে?

নোভী টেবিলের উপর হাত দুটো ছড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি স্কোওলার হব। ফার্মওমেন হব না।

যদি তোমাকে আমি স্কলার না বানাতে পারি।

তাহলে কিছুই না হয়ে মরার জন্য অপেক্ষা করব। স্কোওলার না হলে আমি জীবনে কিছুই হব না।

জেনডিবলের একবার মনে হলো নোভীর মাইন্ড অনুসন্ধান করে দেখে তার উৎসাহ কতটুকু। কিন্তু কাজটা ঠিক হবে না। একজন স্পিকার কখনোই নিজের আনন্দের জন্য কোনো অসহায় মাইন্ড উলটপালট করতে পারে না। মেন্টাল কন্ট্রোলের বিজ্ঞান ও পদ্ধতির একটা নিজস্ব নিয়ম রয়েছে যাকে বলে মেন্টালিক্স।

ফার্মওমেন হবে না কেন, নোভী? জিজ্ঞেস করল। একটু চেষ্টা করলেই সে কোনো হ্যামিশ তরুণকে তৈরি করে দিতে পারে তাকে বিয়ে করে সুখী হওয়ার ব্যাপারে, তাকেও তৈরি করে দিতে পারে। কিন্তু কাজটা নিয়ম বহির্ভূত।

নোভী বলল, হবনা। কৃষক হচ্ছে মাটির ঢেলা। ওরা কাদামাটি নিয়ে কাজ করে করে নিজেরাও কাদামাটি হয়ে যায়। ফার্মওমেন হলে আমাকেও কাদামাটি হয়ে যেতে হবে। লেখাপড়ার জন্য সময় পাবো না। আমার মাথা, আঙ্গুল দিয়ে কপালের একপাশ দেখালো, খটখটে আর শুকনো হয়ে যাবে। না! স্কোওলাররা হয় অন্যরকম। চিন্তাশীল! (জেনডিবল ধরে নিল সে বোঝাতে চাচ্ছে বুদ্ধিমান।)

একজন স্কোওলার, নোভী আবারো বলল, সবসময়ই বই নিয়ে থাকে এবং–এবং আমি নামগুলো ভুলে গেছি। হাতের ইশারায় কি বোঝাতে চাইল জেনডিবল বুঝল না।

মাইক্রোফিল্ম, সে বলল, মাইক্রোফিল্ম এর কথা কিভাবে জানলে?

 বই থেকে, আমি অনেক জিনিস পড়েছি। গর্বের সুরে বলল নোভী।

জেনডিবল আরো জানার আগ্রহটাকে আর চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না। এই হ্যাঁমিশার বেশ অস্বাভাবিক; এমন কাউকে সে আগে কখনো দেখেনি। হ্যামিশদের কখনো দলে নেয়া হয়না, কিন্তু যদি নোভীর বয়স আরো কম হতো ধরা যাক দশ বছর

কি বিরাট অপচয়! নোভীর স্বাভাবিক অবস্থাকে সে বিঘ্নিত করবে না, কিন্তু একটা অস্বাভাবিক মাইন্ড হাতের কাছে পেয়েও যদি কোনো স্পিকার সেটা পরীক্ষা। করে কিছু শিখতে না পারল, তাতে লাভ কি হবে?

তাই সে বলল, নোভী, এখানে শান্ত হয়ে বসো। কিছু বলবেনা। কিছু বলারও চিন্তা করবে না। শুধু চিন্তা করো তুমি ঘুমাচ্ছ। বুঝতে পেরেছ?

কেন করতে হবে, মাস্টার? ভয় পেয়েছে।

কারণ আমি ভেবে দেখতে চাই তোমাকে কিভাবে স্কলার বানানো যায়। যত বইই সে পড়ুক না কেন তার কোনোটাতেই লেখা নেই স্কলারের আসল অর্থ কি। তার কাছে স্কলারের অর্থ কি সেটা জানা জরুরী হয়ে পড়েছে।

অত্যন্ত সতর্কতা ও সীমাহীন সূক্ষ্মতায় জেনডিবল নোভীর মাইন্ড পরীক্ষা করতে লাগল; প্রকৃতপক্ষে সে স্পর্শ না করেই অনুভব করছে অনেকটা পালিশ করা ধাতব পৃষ্ঠে আঙ্গুলের ছাপ ফেলে হাত রাখার মতো। নোভীর কাছে স্কলার হচ্ছে এমন একজন যে সবসময়ই বই পড়ে। কেন একজন বই পড়ে সে ব্যাপারে তার সামান্যতম ধারণাও নেই। তার মাইন্ডে স্কলারের যে ছবি তৈরি হয়েছে সেটা হচ্ছে। যে কাজগুলো সে জানে–রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার করা, বাচ্চা পালন করা সেগুলো করা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে প্রচুর বই পুস্তক রয়েছে এবং সেগুলো পড়ে সে ধীরে ধীরে শিক্ষিত হয়ে উঠবে, আসলে নোভী চাকরানী হতে চায় তার চাকরানী।

জেনডিবল ভুরু কোচকালো। হ্যামিশ চাকরানী–এবং সহজ, সাধারণ, অশিক্ষিত, শুধু লিখতে জানে। কল্পনা করা যায় না।

নোভীর মনযোগ সে বদলে দিতে পারে। কোনো একটা উপায় নিশ্চয়ই আছে যাতে তার ইচ্ছাটাকে সমন্বয় করে ফার্মওমেন হিসেবে তাকে তৈরি করা যায়, এমন কোনো উপায় যাতে কোনো চিহ্ন থাকবে না, এমনকি ডেলারমিও কোনো অভিযোগ করতে পারবে না।

নাকি একে ডেলারমিই পাঠিয়েছে? পুরো ব্যাপারটাই কি জটিল কোনো পরিকল্পনার অংশ, যাতে হ্যামিশ মাইন্ড টেম্পার করার দায়ে অভিযুক্ত করে তাকে বহিষ্কার করা যায়।

অসম্ভব। এভাবে চিন্তা করতে করতে সে পাগল হয়ে যাবে। নোভীর সাধারণ মাইন্ড প্রবাহের কোনোখানে মেন্টাল কারেন্ট সামান্য একটু পরিবর্তন করা দরকার। অল্পজোরে ধাক্কা দিলেই হবে।

যদিও কাজটা বেআইনী, কিন্তু এতে কোনো ক্ষতি হবে না এবং কেউ ধরতে পারবে না। একটু থামল।

পিছনে। পিছনে। পিছনে।

 স্পেস! প্রায় মিস করে গিয়েছিল!

সে কি স্বপ্ন দেখছে?

না। এখন সে পুরোপুরি বুঝতে পারছে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রবাহ বিশৃঙ্খল হয়ে আছে-অস্বাভাবিক বিশৃঙ্খলা। অতিমাত্রায় সূক্ষ।

সে নোভীর মাইন্ড থেকে বেড়িয়ে এলো। নরম সুরে ডাকল, নোভী।

জি, মাস্টার?

তুমি আমার সাথে কাজ করতে পারবে। আমি তোমাকে স্কলার বানাব।

আনন্দে তার চোখ চিকচিক করে উঠল। রুদ্ধশ্বাসে বলল, মাস্টার

জেনডিবল তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারল নোভী তার পা ধরতে যাচ্ছে। দুহাতে শক্ত করে ধরে ফেলল। নড়বে না, নোভী। যেখানে আছ দাঁড়িয়ে থাক–নড়বে না।

জেনডিবল যেন অর্ধপ্রশিক্ষিত প্রাণীর সাথে কথা বলছে। যখন বুঝতে পারল নোভী তার সব কথা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে, তখন তাকে ছাড়ল। মেয়েটার সবল, বাহুর ছোঁয়া এখনো সে অনুভব করতে পারছে।

যদি স্কলার হতে চাও, তোমাকে সেরকম আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ সবসময় তুমি থাকবে শান্ত, নরম সুরে কথা বলবে, আমি যা বলি তাই করবে। আমার মতো করে কথা বলা শিখতে হবে তোমাকে। অন্য স্কলারদের সাথেও মিশতে হবে। ভয় পাবে?

আমি ভয় পাবো না, মাস্টার, যদি আপনি সাথে থাকেন।

আমি তোমার সাথেই থাকব। কিন্তু এখন প্রথমেই–তোমার থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, ল্যাভেটরীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে, ডাইনিং রুমে তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, আর পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন থেকে তোমাকে স্কলারদের মতো পোশাক পড়তে হবে, নোভী।

আমার শুধু এগুলোই আছে- সে অসহায় গলায় বলল।

আমরা ব্যবস্থা করে দেব।

পোশাকের জন্য কোনো একজন মহিলাকে দরকার। আরেকজনকে দরকার যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নিয়মগুলো শেখাতে পারবে। পরনের পোশাকগুলো নিশ্চয়ই সে পরিষ্কার করে এসেছে, তারপরেও গা থেকে গন্ধ আসছে।

এবং দুজনের ভেতরের সম্পর্কটাও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। গোপন হলেও সবাই জানে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের পুরুষ (মহিলারাও) বিনোদনের জন্য মাঝে মাঝেই হ্যামিশদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। হ্যামিশ মাইন্ডে কোনো সমস্যা না হলে ব্যাপারটা নিয়ে কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করেনা। জেনডিবল কখনো এভাবে নিজের চাহিদা পূরণ করে নি, কারণ তার মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পাওয়া যায় তার চেয়ে নিম্নমানের সেক্স তার প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের মহিলারা হয়তো হ্যামিশদের তুলনায় বিরক্তিকর, একঘেয়ে, কিন্তু তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং চামড়া মসৃণ।

ব্যাপারটা যদি কেউ ভুল বোঝে এবং গুজব ছড়ায় যে কোনো স্পিকার একজন হ্যামিশকে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে এসেছে তখন পরিস্থিতি আরো বিব্রতকর হবে। যেখানে এই ফার্মওমেন, সুরা নোভী হচ্ছে স্পিকার ডেলারমি এবং অন্যদের সাথে আসন্ন লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার চাবিকাঠি।

.

২৯.

জেনডিবল আবার নোভীকে দেখল ডিনারের পরে, যে মহিলাকে দায়িত্ব দিয়েছিল সেই নিয়ে এল। এই মহিলাকে সে পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছে–অন্তত ননসেক্সয়াল ব্যাপারটা। মহিলা বুঝেছে বা না বুঝলেও সেটা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। নোভী তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সলজ্জ, গর্বিত, বিজয়িনী–সব একসাথে, অসম ভাবের মিশ্রণ।

তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, নোভী।

পোশাকগুলো গায়ে চমৎকার ফিট হয়েছে এবং মোটেই হাস্যকর দেখাচ্ছে না। আগের সাধারণ পোশাকে এতটা ভাল লাগেনি। বাইরের জীবনের রুক্ষতা সরে গেলে এবং সে নিজের ত্বকের যত্ন নেয়া শুরু করলে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।

ওল্ড এম্পায়ার, মহিলা ভেবেছে নোভী তার মিসট্রেস। সুন্দর করে সাজিয়ে তার সামনে নিয়ে এসেছে।

তারপরেই ভাবল, বেশ, মন্দ কি?

নোভীকে স্পিকার টেবিলের মুখোমুখি হতে হবে এবং সে যত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ততই সবার মন জয় করা সহজ হবে।

এই চিন্তাটার সাথে সাথেই ফার্স্ট স্পিকারের মেসেজ তার কাছে পৌঁছল। এই পদ্ধতি মেন্টালিক সোসাইটতে সাধারণ ব্যাপার। একে বলা হয় কোইন্সিডেন্স ইফেক্ট। যদি দুজন ব্যক্তি আলাদা বসে একে অপরের কথা অস্পষ্টভাবে চিন্তা করে তাহলে গতিশীল উদ্দীপনার দ্বারা দুজনের চিন্তা আরো তীক্ষ্ণ, স্পষ্ট এবং এক হয়ে যায়।

যারা ব্যাপারটা বোঝেন তাদের কাছেও বিষয়টা মনে হয় অনেক জটিল, বিশেষ করে যে কোনো একদিকে বা উভয় দিকে অস্পষ্ট চিন্তাগুলো এতই হালকা থাকে যে সচেতনভাবে সেগুলো ধরা যায় না।

আজকের সন্ধ্যা তোমার সাথে কাটাতে পারব না, নোভী, জেনডিবল বলল, আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তোমাকে রুমে পৌঁছে দিচ্ছি। সেখানে অনেক বই আছে, পড়তে পারবে। কিছু প্রয়োজন হলে কিভাবে কাউকে ডাকবে সেটা দেখিয়ে দেব–তোমার সাথে দেখা হবে আগামীকাল।

.

৩০.

জেনডিবল জ্বগলায় ডাকল, ফার্স্ট স্পিকার?

স্যান্ডেস মাথা নাড়ল কি নাড়ল না বোঝা গেলনা। তাকে আরো ক্লান্ত এবং বয়স্ক দেখাচ্ছে। পান করার অভ্যাস না থাকলেও এখন মনে হচ্ছে কড়া একটা ড্রিংকের প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত বলল, আমি তোমাকে ডেকেছি।

কোনো ম্যাসেঞ্জার পাঠাননি। সরাসরি ডাক শুনে মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু।

গুরুত্বপূর্ণ। ফার্স্ট ফাউণ্ডেশনার ট্র্যাভিজের বিষয়

হ্যাঁ?

সে ট্রানটরে আসছে না।

আবাক হয়নি জেনডিবল। কেন আসবে? আমাদের ইনফরমেশন অনুযায়ী প্রাচীন ইতিহাসের এক অধ্যাপককে সাথে নিয়ে বেড়িয়েছে পৃথিবী খুঁজতে।

হ্যাঁ, কিংবদন্তীর সেই আদিগ্রহ। এবং সে কারণেই তার ট্র্যানটরে আসা উচিত। প্রফেসর কি জানে পৃথিবী কোথায়? তুমি জানো? আমি জানি? আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব এই গ্রহ এখনো আছে বা কখনো ছিল। প্রয়োজনীয় ইনফরমেশনের জন্য তাকে লাইব্রেরিতে আসতেই হবে। এক ঘণ্টা আগেও আমার মনে হয়নি পরিস্থিতি ক্রাইসিস লেভেলে পৌঁছেছে–ফাস্ট ফাউণ্ডেশনার এখানে আসবে এবং আমরা তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু জেনে নিতে পারব এটাই ধরে নিয়েছিলাম।

হয়তো সেই কারণেই তাকে এখানে আসতে দেয়া হচ্ছেনা।

তাহলে সে যাচ্ছে কোথায়?

সেটা এখনো জানা যায়নি তাহলে।

ফার্স্ট স্পিকার চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, তোমাকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছে।

অন্য কিছু হলেই অবাক হতাম। আপনি চান সে ট্রানটরে আসুক যেন তাকে নিরাপদে রাখতে পারেন এবং সমস্ত ইনফরমেশন পেয়ে যান। বরং তাকে যদি ইচ্ছামতো কাজ করতে দেই, যেখানে খুশী যেতে দেই তাহলে আরো গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন পাওয়া যাবে না?

যথেষ্ট না! ফার্স্ট স্পিকার বললেন। তুমি আমাকে নতুন শত্রুর ব্যাপারে বিশ্বাস করিয়েছ এখন আমি আর বিশ্রাম নিতে পারি না। সবচেয়ে খারাপ আমি নিজেকে বিশ্বাস করিয়েছি যে ট্র্যাভিজকে নিরাপদে রাখতে হবে নইলে আমরা সব হারাব। ট্র্যাভিজই সবকিছুর চাবি–এই অনুভূতি থেকে আমি মুক্ত হতে পারছি না।

জেনডিবল একই সুরে বলে গেল, যাই ঘটুক, ফার্স্ট স্পিকার, আমরা হারব না। সেটা সম্ভব হতো যদি এন্টি মিউলরা নিজেদের গোপন রাখতে পারত। কিন্তু আমরা তাদের কথা জেনে ফেলেছি। এখন আর অন্ধের মতো কাজ করব না। যদি টেবিলের পরবর্তী মিটিং-এ আমরা একমত হতে পারি, তাহলেই কাউন্টার এটাক শুরু করা যাবে।

শুধু ট্র্যাভিজের কথা বলার জন্য ডাকিনি। ব্যাপারটা প্রথমেই এসেছে কারণ এটাকে আমি ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করছি। আমি পরিস্থিতির ভুল বিশ্লেষণ করেছি, এবং ক্ষমা চেয়েছি। অন্য ব্যাপার আছে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ, ফার্স্ট স্পিকার?

আরো গুরুত্বপূর্ণ, স্পিকার জেনডিবল। ফার্স্ট স্পিকার অন্যমস্কভাবে আঙ্গুল দিয়ে টেবিলে তবলা বাজাতে লাগলেন, জেনডিবল দাঁড়িয়ে আছে ধৈর্য ধরে।

শেষ পর্যন্ত তিনি হালকা গলায় বললেন, যেন কম ধাক্কা লাগে, টেবিলের এক ইমার্জেন্সী মিটিং-এ, স্পিকার ডেলারমির সভাপতিত্বে

আপনার সম্মতি ছাড়াই ফার্স্ট স্পিকার?

সে যা চায় তার জন্য আমাকে বাদ দিয়ে তিনজন স্পিকারের সম্মতি পেলেই চলবে। সেই মিটিং-এ তোমাকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, স্পিকার জেনডিবল। স্পিকার পদের জন্য তুমি অযোগ্য ঘোষিত হয়েছ। তিন শতাব্দীর মধ্যে এই প্রথম কোনো স্পিকারকে অপসারণ করার বিল উত্থাপিত হলো

অনেক কষ্টে জেনডিবল রাগ সংবরণ করল, নিশ্চয়ই আপনি আমার অপসারণের পক্ষে ভোট দেবেন না।

দেবনা, কিন্তু আমি একা। ওরা সবাই একজোট। বিলের পক্ষে ভোট হবে দশ বিপক্ষে এক। অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট সংখ্যা তুমি জানো ফাস্ট স্পিকারকেসহ আট জন, তাকে বাদ দিয়ে দশ জন।

কিন্তু আমি উপস্থিত ছিলাম না।

তুমি ভোট দিতে পারতে না।

নিজের পক্ষে কিছু বলতে পারতাম।

এখন কিছুই বলতে পারবে না। যা কিছু বলার বিচারের মুখোমুখি হয়ে বলবে, সেই কাজটাও স্বাভাবিকভাবে খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে।

চিন্তার ভারে জেনডিবলের মাথা নুয়ে পড়ল। তারপর বলল, এই ব্যাপারটা আমাকে খুব বেশি ভাবাচ্ছে না, ফার্স্ট স্পিকার। আপনার প্রথম ইন্সটিঙ্কট, আমার মতে ঠিক। ট্র্যাভিজের ব্যাপারটাকেই সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে। এর ভিত্তিতে আপনি বিচারের কাজটাকে দেরি করিয়ে দিতে পারেন না?

ফার্স্ট স্পিকার হাত তুললেন। পরিস্থিতি না বোঝার জন্য আমি তোমাকে দোষ দেই না, স্পিকার। ইমপিচমেন্ট একটা দুর্লভ ঘটনা, এমনকি আমাকেও আইনের খুটিনাটিগুলো দেখে নিতে হয়েছে। অন্য কিছুই এখন প্রাধান্য পাবে না। সবকিছু বাদ দিয়ে সরাসরি বিচারের কাজ শুরু করতে আমরা বাধ্য।

জেনডিবল ডেস্কে ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকল। আপনি সিরিয়াস না?

এটাই আইন।

পরিষ্কার এবং তাৎক্ষণিক কোনো বিপদের মুখে এই আইন প্রয়োগ করা যাবে না।

টেবিলের কাছে, স্পিকার জেনডিকল, তুমিই এখন সবচেয়ে বড় বিপদ।-না, আমার কথা শোনো। আইনে বলা হয়েছে যে একজন স্পিকারের দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দোষের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই।

কিন্তু আমার কোনো অপরাধ নেই, ফাস্ট স্পিকার, আপনিও সেটা জানেন। ব্যাপারটা স্পিকার ডেলারমির ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ছাড়া কিছুই না। ক্ষমতার অপব্যবহার যদি হয়েই থাকে, সেটা করেছে ডেলারমি। আমার দোষ হচ্ছে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য কোনো চেষ্টা কখনো করিনি–আর বোকাগুলো, যারা ভীমরতি ধরার মতো যথেষ্ট বৃদ্ধ কিন্তু ক্ষমতায় থাকার জন্য যথেষ্ট তরুণ–তাদের প্রতি মনযোগ দেইনি।

আমার মতো, স্পিকার?

জেনডিবল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দেখুন, আবারো একই কাজ করেছি। আমি অবশ্যই আপনাকে বোঝাইনি।–বেশ, দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা থোক। আগামী কালই হোক। ভাল হয় আজকে রাতে করতে পারলে। ব্যাপারটা দ্রুত মিটিয়ে ফেলে ট্র্যাভিজের ব্যাপারে মনযোগ দিতে হবে।

স্পিকার জেনডিবল, মনে হয় পরিস্থিতি তুমি বুঝতে পারনি। এর আগেও ইমপিচমেন্টের ঘটনা ঘটেছে–বেশি না, মাত্র দুইটা। তাদের কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু তুমি দোষী সাব্যস্ত হবেই। তারপর তোমার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে এবং নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে না। এমনকি বার্ষিক সভায়ও তুমি ভোট দিতে পারবে না।

আপনি সেটা ঠেকানোর কোনো চেষ্টা করবেন না?

আমি পারি না। সবাই আমার বিরুদ্ধে ভোট দেবে। তারপর আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। স্পিকাররা সেটাই চাইছে।

এবং ডেলারমি হবে ফার্স্ট স্পিকার।

সেরকম ঘটারই জোর সম্ভাবনা।

কিন্তু সেটা ঘটতে দেয়া যাবে না।

ঠিক! সেকারণেই আমি তোমাকে দোষী সাব্যস্ত করে ভোট দেব।

জেনডিবল লম্বা শ্বাস টানল। তারপরেও আমি দ্রুত বিচারের দাবী জানাচ্ছি।

আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য তুমি তৈরি হবার সময় পাবে।

 কিসের আত্মপক্ষ? ওরা কোনো কথাই শুনবেনা। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুন!

কেস তৈরি করার জন্য টেবিলের সময় দরকার।

ওদের কোনো কেস নেই, প্রয়োজনও নেই। আমাকে তারা দোষী বানিয়েছে, আর কিছু দরকার নেই। আসলে কালকে হলেও আমি অপরাধী, আজকে হলেও অপরাধী। ব্যাপারটা ওদেরকে জানান।

ফার্স্ট স্পিকার উঠে দাঁড়ালেন। ডেস্কের দুপারে দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইল।

 তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?

ট্র্যাভিজের বিষয়টা অপেক্ষা করবে না।

তুমি দোষী প্রমাণিত হলে, সব স্পিকার আমার বিরুদ্ধে চলে গেলে, কোন কাজটা হবে?

জেনডিবল ফিসফিস করে বলল, ভয় পাবেন না। আমাকে কেউ দোষী বানাতে পারবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *