এরূপ একটি ঘটনা কুমায়ুন-অবস্থাকালে দেখিয়াছিলাম। তরাই হইতে এক ভীষণ ব্যাঘ্র আসিয়া দেশ বিধ্বস্ত করিতেছিল। অল্প দিনেই শতাধিক লোক ব্যাঘ্র-কবলিত হইল। সরকার হইতে বাঘ মারিবার অনেক চেষ্টা হইয়াছিল; কিন্তু সকলই নিষ্ফল হইল। গ্রামবাসীরা তখন নিরুপায় হইয়া কালু সিংহের শরণাপন্ন হইল। সে কোনো কালে শিকার করিত, কিন্তু অস্ত্র আইনের নিষেধহেতু বহুকাল যাবৎ তাহার পুরাতন এক-নলা বন্দুক ব্যবহার করে নাই। বাঘ দিনের বেলায় মাঠে মহিষ বধ করিয়াছিল; সেই মহিষের আর্তনাদ স্পষ্ট শুনিতে পাইয়াছিলাম। রাত্রে সে স্থানে বাঘ ফিরিয়া আসিবে, এই আশায় নিকটের ঝোপের আড়ালে কালু সিং প্রতীক্ষা করিতেছিল। সন্ধ্যার সময় সাক্ষাৎ যমস্বরূপ বাঘ দেখা দিল; মাঝখানে ৩ হাত মাত্র ব্যবধান। ভয়ে কালু সিংহের সমস্ত শরীর কাঁপিতেছিল, কোনোরূপেই বন্দুক স্থির করিয়া লক্ষ্য করিতে পারিতেছিল না। কালু সিংহের নিকট পরে শুনিলাম-‘তখন আমি নিজকে ধমক দিয়া বলিলাম; একি কালু সিং? স্ত্রী, বহিন, বাল-বাচ্চাদের জান বাঁচাইবার জন্য তোমাকে এখানে পাঠাইয়াছে, আর তুমি ঝোপের আড়ালে শুইয়া আছ? অমনি ভিতর দিয়া আগুনের মতো কি একটা ছুটিয়া গেল; তাহাতে শরীর লোহার মতো শক্ত হইল। তখন বাঘের সামনে দাঁড়াইলাম। বাঘ আমাকে লক্ষ্য করিয়া লাফ দিল সেই সঙ্গেই আমার বন্দুকের আওয়াজ হইল, আর বাঘ মরিল।’
স্নায়ুর ভিতর দিয়া কি-একটা ছুটিয়া যায়, যাহাতে শরীর লোহার মতন কঠিন হয়। তখন সেই লৌহ-বর্ম ভেদ করিয়া বাহিরের কোনো ভয় ভিতরে প্রবেশ করিতে পারে না। স্নায়ুসূত্রে কি পরিবর্তন ঘটে যাহা দ্বারা এরূপ অসম্ভবও সম্ভব হয়? স্নায়ুর ভিতরে উত্তেজনা-প্রবাহ সম্পূর্ণ অদৃশ্য; তাহার প্রকৃতি কি, তাহা কি নিয়মে চালিত হয়, তাহার কিছুই জানা নাই। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা এই তথ্য নির্ণীত হইবে মনে করিয়া বিশ বৎসর যাবৎ সন্ধানে নিযুক্ত ছিলাম।