1 of 2

৬৩ – পারস্য সাম্রাজ্যের আধিপত্য বিস্তার

অধ্যায় ৬৩ – পারস্য সাম্রাজ্যের আধিপত্য বিস্তার

খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ থেকে ৫১৪ সালের মাঝে সাইরাস দ্য গ্রেট যুদ্ধে পরাজিত হন, ক্যামবিয়াসেস মিশরের দখল নেন এবং ভারতের মগধ রাজত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে

ব্যাবিলন দখলের পর সাইরাস দ্য গ্রেট প্রায় ৯ বছর রাজ্য শাসন করেন। এরপর এক স্বল্পপরিচিত রানীর রাজত্বের সঙ্গে যুদ্ধে যেয়ে তিনি প্রাণ হারান।

তিনি উত্তরদিকে এক নতুন ভূখণ্ডে লড়াই করছিলেন। অক্সাস নদী পেরিয়ে মধ্য এশিয়ার বনজঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই অঞ্চলটি আরাল সমুদ্রের পূর্বদিকে অবস্থিত। এ অঞ্চলের পার্বত্য গোত্রগুলো স্কাইথিয়ান বংশোদ্ভূত ছিল। হেরোডোটাস তাদেরকে ‘দ্য মাসাগেতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। এই দক্ষ যোদ্ধারা ব্রোঞ্জ-খোদিত তীর-ধনুক ও বল্লম ব্যবহার করতেন। তারা ছিলেন সূর্যদেবের পূজারি—চাষবাসের পরিবর্তে গবাদি পশু পালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে তারা খাবার জোগাড় করতেন।

শুরুতে সাইরাস মাসাগেতাদের সঙ্গে সন্ধি করার চেষ্টা চালান। তিনি তাদের রানী তমিরিসের কাছে বার্তা পাঠিয়ে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তমিরিস এই অনুরোধ না-রেখে উল্টো তার ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন সাইরাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে। পারস্যের সেনাবাহিনীর একাংশের ওপর হামলা চালালেন তিনি। তবে এই হামলা ব্যর্থ হয় এবং সাইরাসের হাতে বন্দি হন তমিরিসের সন্তান।

যুদ্ধে পরাজয় ও আটক হবার লজ্জা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন সেই নাম-না-জানা রাজপুত্র। এই ঘটনা শুনে তমিরিস প্রচণ্ড রেগে গেলেন, এবং তার সেনাবাহিনীর বাকি অংশকে নিয়ে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। ৫৩০ সালে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হেরোডোটাস বলেন, ‘গ্রিক নয় এমন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত।’

প্রাচীন আমলের অন্য অনেক যুদ্ধের মতো শুরুতে তিরন্দাজ বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়। পরে বল্লম ও ছোরা নিয়ে অন্য যোদ্ধারা এতে যোগ দেন।

অ্যাসিরীয়রা যে কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছিল, ঠিক সেটাই করে দেখায় মাসাগেতা। তারা পারস্যবাহিনীকে মোটামুটি নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়। সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ হারান সাইরাস। যুদ্ধে মাসাগেতারা জয়লাভের পর তমিরিস সব মরদেহের মধ্য থেকে খুঁজে রাজার মরদেহ বের করেন। তারপর তিনি সাইরাসের মাথা কেটে সেটাকে একটি রক্তমাখা কাপড়ে পেঁচিয়ে রেখে বলেন, ‘আমি সতর্ক করেছিলাম, তোমার রক্তপিপাসা মেটাব আমি।’

৬৩.১ পারস্য ও মধ্য এশিয়া

ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার পর তমিরিস পারস্যবাসীকে বললেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাদের ‘মহান রাজার’ মরদেহ নিয়ে বিদায় হতে। যারা তখনও জীবিত ছিলেন, তারা প্রয়াত রাজার মরদেহ নিয়ে পাসারগাদি শহরে ফিরে গেলেন।

ইতোমধ্যে সাইরাস তার নিজের জন্য একটি বড়সড় সমাধি তৈরি করে রেখে গেছিলেন। তার মরদেহকে রাজকীয় পোশাক ও অলংকারে সজ্জিত করা হল। সঙ্গে দেওয়া হল অস্ত্রশস্ত্র ও পরজগতের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ।

পারস্যের রাজার বড়ছেলে দ্বিতীয় ক্যামবিসেস নতুন রাজা হলেন।

তিনি তার পিতার অধীনে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অক্সাস নদী পার হওয়ার আগেও তিনি পিতার সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সেসময় হঠাৎ করেই তিনি ছেলেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন।

ইতিহাসের পাতার অন্য আরও অনেক ‘নতুন রাজার’ মতো তিনিও চাইলেন তার পিতার কীর্তিকে ছাড়িয়ে যেতে। কিন্তু পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নয়, তিনি অন্যত্র সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়াস নিলেন—উত্তর-পূর্বের ফ্রন্টিয়ারের দিকে আগালেনই না, যেখানে তার পিতার মৃত্যু হয়েছিল। বরং তিনি শুরুতে তার রাজপ্রাসাদ ও প্রশাসনিক কেন্দ্রকে তার পিতার রাজধানী পাসারগাদি থেকে সরিয়ে নতুন শহরে স্থানান্তর করলেন, যেটা হল এলামাইটদের সেই প্রাচীন রাজধানী সুসা। এটা তার সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে ছিল। এরপর তিনি মিশরের দিকে দৃষ্টি দিলেন।

অপরদিকে মিশরের তৎকালীন ফারাও রাজা আপ্রিস তার সেনাবাহিনীকে এক বড় বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন।

বদ্বীপের পশ্চিমে গ্রিকদের স্থাপনা সাইরিন। উত্তর-আফ্রিকার উপকূলের এই অংশে থেরার মানুষরা জনবসতি স্থাপন করেছিলেন। প্রায় ৬০ বছর কোনোমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পর অবশেষে এই অঞ্চল সমৃদ্ধির মুখ দেখছিল। তাদের তৃতীয় রাজা বাস দ্য প্রসপারাস সব গ্রিক শহরের কাছে আর্জি জানান, যাতে তারা সেখানে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি তাদের সবাইকে এক খণ্ড জমি বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

শিগগির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানুষ সাইরিনে এসে উপস্থিত হন। বেশিরভাগই আসেন গ্রিকদের মূল ভূখণ্ড থেকে। তারা শহরের চারপাশের সব জমির __ নেন।

এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি উত্তর-আফ্রিকার স্থানীয় বাসিন্দারা। হেরোডোটাস এই বাসিন্দাদের নাম দেন ‘লিবিয়ান’ বা লিবীয়। তারা মিশরের কাছে এই ‘আগ্রাসনের’ জবাব দিতে সহায়তা চেয়ে বার্তা পাঠান। তারা মিশরের ফারাও রাজা আপ্রিসের আধিপত্য স্বীকার করে তার কাছে সাহায্য চান। এই ডাকে সাড়া দেন আপ্রিস। তিনি তার উত্তর-আফ্রিকার বন্ধুদের সাহায্য করতে মিশরীয় সেনাবাহিনীর একটি অংশকে সেখানে পাঠান। তবে দূর্ভাগ্যজনকভাবে, গ্রিকদের হাতে কচুকাটা হয় এই বাহিনী। হেরোডোটাসের ভাষায়, ‘কেউই মিশরে বেঁচে ফিরতে পারেনি’।

এই গোলযোগে মিশরীয় জনগণ আপ্রিসের বিরুদ্ধে চলে যায়। এমনিতেও তিনি খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না। সাইরিন থেকে বেঁচে ফেরা সেনারা স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে মিলে আপ্রিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে।

তিনি তার সেনাপতি আমাসিসকে পাঠালেন বিদ্রোহ দমন করতে। অভিজ্ঞ ও চতুর এই জেনারেল তার বাবা দ্বিতীয় পাম্মেটিকাসের আমল থেকেই এই পদে ছিলেন। তিনি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আঁতাত করলেন। তিনি তাদের জানালেন, বিদ্রোহীরা চাইলে আপ্রিসের বদলে তাকেই রাজা বানাতে পারে।

এই বিশ্বাসঘাতকতার কথা জেনে গেলেন আপ্রিস। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দূত পাঠিয়ে আমাসিসকে রাজপ্রাসাদে ফিরে আসার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ঘৃণাভরে তার এই নির্দেশকে অবজ্ঞা করলেন আমাসিস।

এ পর্যায়ে মিশরীয়দের বেশিরভাগই আপ্রিসের বিরুদ্ধে চলে যায়। আপ্রিসের পক্ষে থেকে যায় শুধু ৩০ হাজার গ্রিক বংশোদ্ভূত ভাড়াটে সেনা।

৬৩.২ মিশর ও সাইরিন

দুই সেনাবাহিনী মেমফিস ও সাইস-এর মাঝামাঝি জায়গায় মোমেমফিস নামে এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরের মুখোমুখি হল। আমাসিসের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা জয়যুক্ত হল এবং আপ্রিসকে বন্দি করা হল। আপ্রিসকে রাজবন্দি হিসেবে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসা হলেও তাকে হত্যা করা হয়নি।

তবে খুব সম্ভবত আপ্রিস পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ৩ বছর পরের তারিখ সম্বলিত একটি শিলালিপির অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয় আপ্রিস উত্তর থেকে ‘অসংখ্য গ্রিক’ সেনা নিয়ে আসেন। তিনি তীব্র হামলা চালিয়ে মিশরকে লণ্ডভণ্ড করে দেন। অর্থাৎ, আপ্রিস উত্তর থেকে ভাড়া করে বাড়তি সেনা নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।

এই এলিফ্যানটাইন শিলালিপিটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং এতে যুদ্ধের বিস্তারিত তথ্য নেই। তবে এর উপসংহারে বলা হয়, ‘আমাসিস সিংহের মতো যুদ্ধ করেন।

পরিশেষে জাহাজডুবিতে আপ্রিসের মৃত্যু হয় এবং আমাসিস সাইসের সিংহাসনে বসেন।

এ সময় সংবাদ এল, পারস্যের নতুন রাজা ক্যামবিসেস হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ক্যামবিসেসের সামনে প্রথম কাজটি ছিল একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরি করা। তবে পারস্যের কোনো নৌ-অভিজ্ঞতা বা ঐতিহ্য ছিল না। তবে সাইরাস তার ছেলের জন্য রেখে গিয়েছিলেনে এক সুবিশাল রাজ্য। তিনি এশিয়া মাইনরের উপকূলে বসবাসরত আইওনিয়ান নাবিকদের বললেন তার জন্য জাহাজ তৈরি, সেগুলোতে কর্মী নিয়োগ দিতে।

তার নিয়ন্ত্রণাধীন ফিনিশীয় শহরগুলোকেও একই নির্দেশ দিলেন তিনি। ফলে গ্রিক ও ফিনিশীয়, এই দুই দক্ষ নাবিক জাতির দক্ষতায় তৈরি হল তার নৌবাহিনী।

অভিষেকের চার বছর পর ক্যামবিসেস মিশরে হামলা শুরু করলেন। তার নৌবাহিনী উপকূল ধরে আগাতে লাগল আর পারস্যের সেনাবাহিনী মরুভূমির ভেতর দিয়ে কুচকাওয়াজ করে আগাতে লাগল। ক্যামবিসেসের সঙ্গে ছিলেন বল্লমধারী যোদ্ধা দারিয়াস। তিনি ছিলেন রাজার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীবাহিনীর অংশ। তার সাম্রাজ্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্থিয়া নামের অঞ্চলের অধিকর্তা ছিলেন দারিয়াসের পিতা।

আমাসিস পারস্যের বাহিনীর মোকাবিলায় প্রস্তুত হলেন। কিন্তু ততদিনে তার বয়স ৭০ ছাড়িয়েছে। ক্যামবিসেস এসে পৌঁছানোর আগেই বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়।

খুব সহজেই যুগপৎ স্থল ও নৌ হামলা চালিয়ে নতুন ফারাও আমাসিসের ছেলে তৃতীয় পাম্মেটিকাসকে হারালেন ক্যামবিসেস। এই যুদ্ধের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না, কিন্তু এটুকু জানা যায় যে অল্প সময়ের মধ্যেই পাম্মেটিকাস আত্মসমর্পণ করেন। তিনি এক বছরও ফারাও থাকতে পারেননি।

ক্যামবিসেস নিজেকে মিশরের ফারাও ও ‘মিশরের উচ্চ ও নিম্নাঞ্চলের রাজা হিসেবে অভিহিত করলেন। তিনি একইসঙ্গে নিজেকে দেবী ওয়াজেতের প্রিয়পাত্র হিসেবেও উপস্থাপন করেন। মিশর একীভূতকরণের আমলে এই অজগর সাপসদৃশ দেবীর মুখাবয়ব লাল মুকুটে খোদাই করা হয়েছিল।

তবে ক্যামবিসেস নতুন দেশে খুব বেশিদিন থাকেননি। তিনি মিশরের দায়িত্বভার এক গভর্নরের হাতে তুলে দিয়ে তার নিজ সাম্রাজ্যের অন্যান্য বিষয়ের দেখভাল করার জন্য রাজধানীতে ফিরে গেলেন। তবে তার এই সুসময় বেশিদিন টেকেনি। সাইরাসের মৃত্যুর ৮ বছর পর এবং মিশর দখলের ৩ বছর পর, হঠাৎ করেই, এবং খানিকটা রহস্যজনকভাবে শেষ ক্যামবিসেসের রাজত্ব।

ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস ক্যামবিসেসকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। তিনি ক্যামবিসেসকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা লিখে রেখে গেছেন। তার মতে, ক্যামবিসেস ছিলেন এক উন্মাদ, যিনি স্বেচ্ছাচারীর মতো তার সভাসদদের হত্যা করতেন। তিনি তার নিজের ভাইকে হত্যা করেন, তার নিজের দুই বোনকে বিয়ে করেন এবং তাদের একজনকে হত্যা করেন। তিনি তার সেনাবাহিনীর জন্য কোনো খাদ্য উপকরণ না নিয়েই ইথিওপিয়ায় হামলা চালাতে রওনা হন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ক্যামবিসেস সম্পূর্ণ আরব মরুভূমি পেরিয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে নিরাপদে মিশর পৌঁছাতে পেরেছিলেন—এটা অবিশ্বাস্য। ক্যামবিসেস নিজেকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে চাইলেও সে উদ্যোগ সফল হয়নি।

তবে ক্যামবিসেস যে হঠাৎ করেই মারা গিয়েছিলেন, সে-বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তার কোনো উত্তরাধিকারীও ছিল না।

সবচেয়ে পুরনো সূত্রগুলো আমাদের জানায়, ক্যামবিসেস মিশরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর সময় পাতিজেইথেস নামের একজনের কাছে তার বাসাবাড়ির দায়িত্ব দিয়ে যান। ক্যামবিসেস তার ছোটভাই বার্দিয়াকে যুদ্ধের মাঝে পারস্যে ফেরত পাঠান। রাজধানীর হালহকিকত সম্পর্কে খোঁজ নিতেই বার্দিয়াকে পাঠান তিনি।

কিন্তু মিশর থেকে পারস্য যাওয়ার পথে বার্দিয়া রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন।

মজার বিষয় হল, সেই স্টুয়ার্ড পাতিজেইথেসের ছিল স্মেরদিস নামে এক ছোটভাই, যে দেখতে অনেকটাই বার্দিয়ার মতো। তাদের চেহারায় এতই সাদৃশ্য ছিল যে একজনকে আরেকজন ভেবেও অনেকে ভুল করতেন। পাতিজেইসে যখন দূত-মারফত বার্দিয়ার অন্তর্ধানের খবর পেলেন, তখন তার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল।

তিনি সেই নিখোঁজ রাজপুত্রের জায়গায় তার নিজের ছোটভাইকে বসালেন। তিনি সবার কাছে দূত পাঠিয়ে জানালেন, ক্যামবিসেসের পরিবর্তে প্রয়াত রাজা সাইরাসের সরাসরি উত্তরাধিকারী বার্দিয়াই হবে নতুন রাজা।

ক্যামবিসেস তখন সিরিয়ার কাছাকাছি জায়গায় ছিলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশের খোঁজ নিচ্ছিলেন। হেরোডোটাস জানান, যখন ক্যামবিসেস জানলেন তার সিংহাসন চুরি হয়ে গেছে, তিনি দ্রুত তার ঘোড়ার দিকে দৌড়ে গেলেন। লাফিয়ে ঘোড়ায় চড়ার সময় খাপ থেকে তার তরবারি বের হয়ে এল। এই তরবারির আঘাতে তার ঊরু দ্বিখণ্ডিত হল। এই ক্ষতের খুব দ্রুত অবনতি হল। তিন সপ্তাহের মাঝে সেখানে পচন ধরে মর্মান্তিক যন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেলেন ক্যামবিসেস।

রাজা ক্যামবিসেসের প্রয়াণে, সেই নকল রাজা প্রায় সাত মাস নির্বিঘ্নে রাজ্য শাসন করতে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে তিনি কখনোই সুসার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বের হননি এবং পারস্যের কোনো অভিজাত ব্যক্তিকেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেননি- যারা ক্যামবিসেসের পরিবারকে ভালো করে চিনতেন।

তবে এই নাটক বেশিদিন চালাতে পারেননি তিনি। খুব শিগগির পারস্যের অভিজাত মহলে কানাঘুষা শুরু হয়। একের পর এক অভিজাত ব্যক্তি প্রশ্ন তুলতে লাগলেন, কেন এতদিনেও নতুন রাজা একবারও তাদের সঙ্গে দেখা করেননি! এদের মধ্যে ছিলেন ক্যামবিসেসের এক স্ত্রীর পিতা ও একজন অভিজ্ঞ সেনা ওথানেস এবং ক্যামবিসেসের ঢালবাহক ও দেহরক্ষী দারিয়াস। মিশরের অভিযান শেষে তিনি পারস্যে ফিরে এসেছিলেন এবং সে-মুহূর্তে অজ্ঞাত কারণে রাজধানী সুসায় অবস্থান করছিলেন।

পারস্যের সাত অভিজাত ব্যক্তি একমত হলেন, এই নকল রাজা ও তার বড়ভাইকে হত্যা করতে হবে। ওথানেস ছিলেন তাদের নেতা। তবে দারিয়াস এক বিকল্প বাতলালেন। তিনি পার্থিয়ার রাজার (দারিয়াসের পিতা) বার্তা নিয়ে এসেছেন বলে ছদ্মবেশে বাকি ছয়জনকে নিয়ে রাজপ্রাসাদে ঢুকে পড়লেন।

এই সাতজন রাজার শয়নকক্ষের কাছে এসে বিরোধিতার মুখে পড়লেন—রাজার খোজা দেহরক্ষীরা তাদেরকে ঢুকতে দিতে অস্বীকার জানাল। ফলশ্রুতিতে সেখানেই রক্তারক্তি শুরু হল। একে একে মারা পড়ল সব দেহরক্ষী, নকল রাজা ও তার ভাই।

এই সাত বিদ্ৰোহী নকল রাজার মরদেহ বাকিদের দেখিয়ে প্রমাণ করলেন যে মৃত ব্যক্তি আদতে সাইরাসের সন্তান বার্দিয়া নন।

সে মুহূর্তে পারস্যের সিংহাসন এক টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছে যায়। সাইরাসের উভয় সন্তানই অনুপস্থিত ছিলেন এবং দেশটি রাজাশূন্য অবস্থায় চলে যায়। সেই সাত বিদ্রোহী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দারিয়াসকে বেছে নিলেন।

খুব সম্ভবত তার বয়স ছিল ত্রিশের কোঠায়। তিনি ক্যামবিসেসের বিশ্বাসভাজন ছিলেন এবং অভিজাত বংশের সন্তান ছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৫২১ সালে তিনি অভিষিক্ত হলেন। সাইরাসের বংশধরদের মৃত্যুতে পারস্যের যে ক্ষতি হয়েছিল, তিনি তার ছয় সহযোগীকে নিয়ে সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিলেন।

তবে ইতিহাসের এসব উপাখ্যান নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।

আসলে মহান রাজা ক্যামবিসেসের কী হয়েছিল? সারাজীবন যুদ্ধক্ষেত্রে কাটিয়ে ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে তরবারির আঘাতে দফারফা হওয়ার গল্পটা অসম্ভব না হলেও, কিছুটা অবাস্তব ঠেকে বৈকি। অপর এক গ্রিক ইতিহাসবিদ সেসিয়াস (যিনি অতটা নির্ভরযোগ্য নয়) বলেন, কোনোকিছু করার না পেয়ে বিরক্ত হচ্ছিলেন ক্যামবিসেস। সেসময় তিনি নিজের ঊরু কেটে ফেলেন। অপর এক মিশরীয় প্যাপিরাসে বলা হয় ‘মাদুরে শুয়ে’ তার মৃত্যু হয়। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে তিনি মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন।

দারিয়াসের সিংহাসনে উত্তরণের বর্ণনায় এক বাক্যে বলা হয়, ‘ক্যামবিসেস মৃত্যুমুখে পতিত হন।’

দারিয়াসের সিংহাসনে বসার পুরো বিষয়টি নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা। প্ৰকৃত বার্দিয়া কোথায় গেলেন, সেটাও কেউ জানতে পারেনি। আবার দারিয়াসের সুবিধামতো হঠাৎ করে ক্যামবিসেসের মৃত্যুরহস্যেরও কোনো সুরাহা হয়নি।

ততদিনে পাতিজেইথিসেরও মৃত্যু হয়েছে এবং দারিয়াস তার অনুসারীদের একে একে ফাঁসি দেন। তিনি ক্যামবিসেসের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেন এবং এরপর তিনি তার প্রয়াত স্বামীর বিষয়ে আর একটি কথাও বলেননি।

সব মিলিয়ে বলা যায়, দারিয়াস নিশ্চিত করেছিলেন যে তার সিংহাসনে উত্তরণ নিয়ে কেউ যাতে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।

সিংহাসনে বসেই দারিয়াস যুদ্ধযাত্রায় গেলেনতার নব্য সাম্রাজ্যের এক অংশে বিদ্রোহের আগুন দানা বেঁধে উঠছিল।

কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ব্যাবিলনীয়রা, উত্তরে স্কাইথিয়ান, পূর্বের মেদিয়ান এবং পার্থিয়া, যেখানে তার পিতা সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেছিলেন, এর মাঝেও বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট বিদ্রোহের ঘটনা ঘটতে থাকে।

তবে অসামান্য দক্ষতায় অল্প সময়ের মাঝেই সবাইকে ‘লাইনে’ নিয়ে আসেন দারিয়াস। সাইরাসের মতো সহানুভূতিসম্পন্ন একনায়কতন্ত্র বা এ-ধরনের কোনো পোশাকি নীতিতে যাননি তিনি। তার একমাত্র মন্ত্র ছিল ‘শত্রুকে গুঁড়িয়ে’ দিতে হবে।

ক্যামবিসেসের সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ ছিল বিভিন্ন দেশ থেকে উপঢৌকন বা উপহার হিসেবে পাওয়া সেনা। এসব সেনাদের দক্ষতা কম থাকলেও তারা সংখ্যায় ছিলেন অনেক। ফলে যেকোনো যুদ্ধে অসংখ্য সেনাকে সামনে ঠেলে দিয়ে শত্রুকে বিচলিত করে ফেলা যেত।

এই কৌশল ক্যামবিসেসের জন্য কার্যকর ছিল, কারণ তার প্রতিপক্ষরা তার চেয়েও অনভিজ্ঞ ছিল। কিন্তু স্কাইথিয়ানদের বিরুদ্ধে সাইরাসের যুদ্ধে এই কৌশল একেবারেই ব্যর্থ হয়।

দারিয়াসের চিন্তাচেতনা ভিন্ন ছিল। তিনি এ-ধরনের উপহারপ্রাপ্ত বা ভাড়াটে সেনার ওপর নির্ভর না করে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করলেন—যে বাহিনী সংখ্যায় কম হলেও তারা ভালো খাবার, প্রশিক্ষণ পাবে এবং রাজার প্রতি তাদের বিশ্বস্ততাও বেশি থাকবে। এই বাহিনীতে ১০ হাজার পদাতিক ও ১০ হাজার ঘোড়সওয়ার সেনা থাকবে এবং তাদের সবাই হবে পারস্য ও মেদিয়া থেকে আগত। এই বাহিনীগুলো তার পূর্বসূরির অপেশাদার বাহিনীর চেয়ে অনেক দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করতে পারবে।

এই সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী নিয়ে খুব সহজেই ব্যাবিলন, এশিয়া মাইনর ও অন্যান্য অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করলেন দারিয়াস।

সেনাবাহিনীর জেনারেল হিসেবে তিনি যেমন দক্ষ ছিলেন, তেমনই দক্ষ ছিলেন প্রশাসক হিসেবে, যা বেশ বিরল। তিনি তার সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশ বা সাতরাপিতে বিভক্ত করলেন। প্রত্যেক সাতরাপির ছিল একজন করে বিশ্বাসভাজন প্রশাসক বা সাতরাপ। প্রত্যেক সাতরাপের জন্য একটি ‘নজরানা’ নির্ধারণ করা হল। তারা প্রতি বছর রাজধানী সুসায় এই নজরানা পাঠাতে বাধ্য ছিলেন।

যেসব সাতরাপ তাদের সাতরাপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না বা নির্ধারিত হারে নজরানা পাঠাতে ব্যর্থ হতেন, তাদেরকে ফাঁসি দেওয়া হত। এই ব্যবস্থা বেশ কার্যকর ছিল। দারিয়াস রাজার ভূমিকাই বদলে দিলেন—আগের দিনে রাজার ভয়ে জনগণ ভয়ে কাঁপত; সেই ভূমিকা বদলে সাতরাপের ওপর যায়। ফলে সাতরাপরা নজরানা আদায়ের জন্য সচেষ্ট হয়ে জনগণের সঙ্গে সেভাবে কাজ করতেন। রাজা এসবের ঊর্ধ্বে থাকতেন। এ বিষয়টি সাইরাস কখনোই নিশ্চিত করতে পারেনি।

হিব্রু বাইবেল এজরাতেও সাতরাপদের বিষয়ে বলা হয়েছে।

দারিয়াসের সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। এ পর্যায়ে তিনি ভারতবর্ষ দখলের স্বপ্ন দেখতে লাগলেন।

যখন পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পারস্য তাদের আধিপত্য বিস্তার করছিল, তখন ভারতীয় রাজত্ব মগধ তার নিজের প্রতিবেশীদের ভূখণ্ড দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে ছিল। উচ্চাভিলাষী বিমবিসারা আঙ্গার দখল নেন। বিবাহসূত্রে কোসালের অংশবিশেষ যৌতুক হিসেবে পান তিনি। তার ছেলে অজাতশত্রুও একইরকম উচ্চাভিলাষী ছিলেন—পিতার প্রয়াণের অপেক্ষায় না থেকে তিনি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন। অজাতশত্রু তার বাবাকে আটক করে রাখেন। অনাহারে মারা জান বিমবিসারা।

৬৩.৩ মগধের সম্প্রসারণ

স্বামীর শোকে মারা যান অজাতশত্রুর মা। এ পর্যায়ে তার ভাই যৌতুক হিসেবে দেওয়া কোসাল রাজ্যের অংশবিশেষ আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেন। অজাতশত্রু এই ভূখণ্ড ফিরে পেতে যুদ্ধযাত্রা করেন।

কোসালের প্রতিরক্ষা বাহিনী অজাতশত্রুকে ঠেকাতে পারলেও তাদের নিজেদের ভেতরই ছিল দ্বন্দ্ব। যুদ্ধাবস্থার সুযোগ নিয়ে রাজপুত্র তার বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করেন। কোসালের রাজাকে নির্বাসন দেয় তার নিজেরই ছেলে। তারপর সে শাক্য গণসংঘের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এই গোত্রভিত্তিক জোট থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ। তিনি এই গোত্রকে নিশ্চিহ্ন করেন। তারা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যায়।

সিংহাসনচ্যুত রাজা ছিলেন বর্ষীয়ান। কোনোমতে পালিয়ে তিনি অজাতশত্রুর রাজধানী শহর রাজগৃহের দিকে রওনা হলেন। পাঁচ পর্বত ও প্রাচীরঘেরা শহরে কাছে এসে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেন। বিষয়টা অদ্ভুত মনে হলেও আসলে তেমন অদ্ভুত নয়—তিনি অজাতশত্রুর মামা ছিলেন, এই দাবিতে আশ্রয় চাইতেই পারেন। কিন্তু শহরের তোরণ খুলে দেওয়ার আগেই তিনি ক্লান্তিতে মারা যান।

এই ঘটনায় আবারো কোসালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেলেন অজাতশত্রু। তিনি তার প্রয়াত মামার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে গেলেন। এক্ষেত্রে তার নিজেরই হামলায় মামার এই দুর্দশার বিষয়টি বেমালুম চেপে গেলেন। কিন্তু কোসাল পৌঁছানোর আগে তিনি তার নিজ দেশের সমস্যায় জর্জরিত হলেন। তার ভাই এতদিন পর্যন্ত পরাজিত রাজ্য আঙ্গার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও হঠাৎ রাজা হওয়ার জন্য বিদ্রোহ করে বসলেন। তিনি উত্তরের গণসংঘ লিচ্চাভির সঙ্গে জোট বেঁধে অজাতশত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অজাতশত্রু দুই অঞ্চলের মাঝে, গঙ্গার তীরে পাতালিপুত্র দুর্গ নির্মাণ করলেন এবং সেখান থেকে যুদ্ধযাত্রা করলেন।

এই যুদ্ধ ১২ বছর ধরে চলেছিল। কোসোলে আর তাকে যুদ্ধ করতে হয়নি। এক ভয়াবহ বন্যায় তার মামাতো ভাইয়ের পুরো সেনাবাহিনী ভেসে যায়। তিনি তার সেনাবাহিনী নিয়ে সেখানে হাজির হয়েই কোসোল দখল করে নিলেন।

অজাতশত্রু তার ভাইয়ের সঙ্গে ১২ বছর যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে তিনি বেশ অভিনব কিছু অস্ত্রের প্রয়োগ করেন। বড় পাথর ছুড়ে মারার ক্যাটাপাল্ট ও এক নতুন ধরনের রথও তৈরি করেন তিনি। এই যুদ্ধেও তিনি পেশাদার সেনাবাহিনী ব্যবহার করেন। এই বাহিনীর সদস্যদের যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না।

তবে সেনাবাহিনীই অজাতশত্রুর একমাত্র অস্ত্র ছিল না। উত্তরে মাল্লা রাজ্যের উদ্দেশে রওনা হয়ে পথিমধ্যেই প্রাণ হারান গৌতম বুদ্ধ। বুদ্ধের মৃত্যুর পর অজাতশত্রু দাবি করে বসেন, বুদ্ধের পবিত্র শিক্ষা ধারণ করে রাখার একমাত্র দাবিদার মগধ রাজ্য। তিনি বুদ্ধের সব লেখা সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নিলেন।

পশ্চিমের মতো ভারতেও এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্রেক হল—রাজত্ব গড়ে তোলা, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ধর্মীয় অনুশাসনকে আঁকড়ে ধরা, পারিবারিক কোন্দল, পেশাদার সেনাবাহিনী, সবই ছিল এখানে।

এর আগেও পারস্যের সেনাবাহিনী একবার সাইরাসের নেতৃত্বে সিন্ধুনদের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু সেখানেই তার সে অগ্রযাত্রা থামে।

দারিয়াস প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া মাইনর থেকে স্কাইল্যাক্স নামে এক কারিয়ান নাবিককে নিয়োগ দেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সিন্ধুনদ ধরে যতদূর সম্ভব এগিয়ে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের একটি পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করা।

তিনি নীলনদ থেকে লোহিত সাগরে খাল খনন করার নির্দেশ দেন, যাতে জাহাজগুলো খুব সহজে ভূমধ্যসাগরে যেতে পারে।

হেরোডোটাস বলেন, ‘তিন বছরের প্রচেষ্টায় দারিয়াস ভারতীয়দের জয় করেন।’ তবে সব ভারতীয়দের পরাভূত করতে না-পারলেও তিনি খুব সম্ভবত গান্ধারা ও কামবোজা রাজত্বকে পরাভূত করে পাঞ্জাবের অংশবিশেষের দখল করেন।

‘হিন্দুশ সাতরাপি’ তার রাজত্বের বিংশ সাতরাপি বা প্রদেশে পরিণত হয়। অন্য সব প্রদেশের মতো এই প্রদেশকেও প্রতি বছর নজরানা পাঠাতে হয়।

এই বছরগুলোতে ব্যাবিলনের কিছু লিপিকার পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্রটি তৈরি করেন, যা এখনো টিকে আছে। এই কাদামাটির ট্যাবলেটে ব্যাবিলনকে ইউফ্রেতিসের ওপর, অ্যাসিরীয়াকে পূর্বে ও অন্য সব শহরকে পারস্য উপসাগরের ‘তিক্ত পানিতে’ ভাসমান হিসেবে দেখানো হয়। আরও আটটি ভূখণ্ড এতে স্থান পায়, যেগুলো অনেক দূরে দূরে হলেও প্রথমবারের মতো কোনো মানচিত্রে বড় শহর ও সভ্যতার পাশে স্থান পায়।

এই বছরগুলোতে এক ব্যাবিলনীয় শিলালিপিতে এক ভারতীয় নারী বুসাসার কথা বলা হয়, যিনি কিশ শহরে একটি সরাইখানার পরিচালক ছিলেন। খুব সম্ভবত তিনি সিন্ধুনদ ধরে ভ্রমণ করে পারস্য উপসাগর হয়ে সমুদ্রে যাত্রা করেছিলেন। তিনি ভারত থেকে ব্যাবিলনে যাননি, বরং দারিয়াসের সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়েছিলেন।

সে আমলে ভারত ও পশ্চিমের মাঝে সেতুবন্ধনে পরিণত হয় পারস্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *