প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড
চতুর্থ খণ্ড
পঞ্চম খণ্ড

৫.৩ প্রথম মাথা নিচু করে

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

১.

জেভাৰ্ত জীবনে এই প্রথম মাথা নিচু করে এবং পেছন দিকে হাত দুটো করে র‍্যু দ্য লা হোমি আর্মে থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। এর আগে পর্যন্ত সে সব সময় নেপোলিয়নের মতো মাথা উঁচু করে এবং হাত দুটো আড়াআড়ি করে বুকের উপর এক দৃঢ় সংকল্পের পরিচায়ক হিসেবে রাখত। পেছনের দিকে হাত রাখা হল অনিশ্চয়তার এবং সিদ্ধান্তের অভাবের পরিচায়ক। এটা কোনওদিন দেখা যায়নি তার মধ্যে। কিন্তু আজ তার জীবনে যেন এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আজ এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার চিহ্ন তার চেহারা ও চোখ-মুখের উপর ফুটে উঠেছে।

নৈশ নির্জন রাস্তা দিয়ে একা হাঁটতে হাঁটতে সে সেন নদীর ধারে পর্যন্ত নোতার দ্যামের কাছে প্লেস দু শ্যাবেলেতের পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছি একটা জায়গায় এল। তার পর ঘাসের উপর এক জায়গায় হাতের উপর চিবুকটা রেখে বসল।

আজ সারাদিন ধরে তার মনটা বড় অশান্ত হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছিল তার মধ্যে যেন ভয়ংকর একটা বিপ্লব চলছে এবং সে বিপ্লবে তার আত্মাটা পীড়িত হচ্ছে। তার মনে হচ্ছিল সে তার কর্তব্যকর্ম ঠিকমতো করতে পারছে না। সে যখন আজ সন্ধ্যায় অপ্রত্যাশিতভাবে নদীর ধারে ভালর্জা’র দেখা পেয়ে যায় তখন পরস্পরবিরুদ্ধ দুটো অনুভূতির তরঙ্গাঘাতে দুলতে থাকে তার মনটা। তার একবার মনে হচ্ছিল সে যেন নেকড়ে এবং সে তার শিকার ধরে ফেলেছে। আবার মনে হচ্ছিল সে যেন কুকুর এবং সে তার প্রভুকে দেখতে পেয়েছে।

আজ সে তার জীবনে প্রথম তার সামনে দুটো পথ দেখতে পেল। এতদিন পর্যন্ত কেবল একটা পথই ছিল তার সামনে। একটি পথে গেলে তাকে ভলজাঁ’র মতো আইনের চোখে এক দাগি অপরাধীর কাছ থেকে তার জীবনকে ভিক্ষাস্বরূপ গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হবে এবং তা হলে তার ব্যক্তিগত স্বার্থের কাছে তার কর্তব্যবোধকে বিসর্জন দিতে হবে এবং সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করতে হবে। অন্য পথে গেলে তার বিবেকের ওপর আস্থা রেখে ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভিক্ষার দানস্বরূপ পাওয়া জীবনকে ত্যাগ করতে হবে।

এই দুটো পথের একটাকে বেছে নিয়ে এই উভয়সংকট থেকে মুক্তি তাকে পেতেই হবে। ভলজাঁ তাকে দয়া করবে এবং সেই দয়া তাকে গ্রহণ করতে হবে সেকথা ভেবে আশ্চর্য হয়ে গেল সে। কিন্তু কী এখন করবে সে? ভলজাঁকে গ্রেপ্তার করা তার পক্ষে অসম্ভব, আবার তাকে ছেড়ে দেওয়াটা সমান খারাপ হবে। তাকে ছেড়ে দিলে আইনরক্ষক এক অফিসার একজন অপরাধীতে পরিণত হবে। এবং একজন অপরাধী আইনের চোখে ধুলো দিয়ে মাথা উঁচু করে বেড়াবে।

নিজের কর্তব্যকর্মের বাইরে কোনও বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার অভ্যাস নেই তার, কারণ তার মনে হয় যে কোনও গভীর চিন্তার মধ্যেই একটা দ্বন্দ্ব আছে। সে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হওয়া সত্যিই কষ্টকর বলে সে এই ধরনের চিন্তাকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু আজকের ঘটনার পর এ চিন্তাকে পরিহার করতে পারল না সে এবং সে চিন্তা এবং নিদারুণ পীড়ন ও যন্ত্রণার ব্যাপার হয়ে উঠল তার কাছে।

সে যা করেছে তা ভাবতে গেলেও সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে তার। তার মতো এক কড়া পুলিশ অফিসার হয়ে সব নিয়মকানুন ও বিধি অগ্রাহ্য করে অপরাধীকে হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে সে। সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের কথা না ভেবে ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখেছে সে। এটা কি এক অমার্জনীয় অপরাধ নয়? কিন্তু এখন কী করতে পারে সে? এখন একমাত্র পথ হল এখনি ভলজাঁ’র ঠিকানা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা। এ পথ বা উপায়ের কথা জানত সে কিন্তু সে পথ সে উপায় গ্রহণ করতে পারেনি সে।

করতে পারেনি, কারণ কী একটা জিনিস যেন বাধা দিচ্ছিল তাকে। কিন্তু কী সে জিনিস? বিচার, রায়, দণ্ড, সরকারি কর্তৃত্ব এবং পুলিশ–এ ছাড়া জীবনে আর কোনও জিনিস আছে কি? এক মহা অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ল জেতার্ত। একজন দণ্ডিত অপরাধী বিচারের রায়কে ব্যর্থ করে দিয়ে পালিয়ে বেড়াবে আর যার হাতে আইনরক্ষার ভার, সবাইকে আইনের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য করাই যার কাজ, সে তাকে আইনের কাছ থেকে দূরে পালাতে সাহায্য করবে। তা হলে এই দু জন লোক অর্থাৎ সে নিজে এক ভলজাঁ দু জনেই কি আইনভঙ্গকারী হচ্ছে না? সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভলজাঁ ঘুরে বেড়াবে আর জেভাৰ্তই সমাজের ক্ষতি করে সরকারের টাকায় বেঁচে থাকবে।

ব্যারিকেড থেকে নিয়ে আসা আহত বিদ্রোহীর কথাটা মাঝে একবার মনে পড়েছিল তার। তার অপরাধ ভলজাঁ’র অপরাধের থেকে অনেক কম। তাছাড়া এতক্ষণ সে হয়তো মারা গেছে। একমাত্র জাঁ ভলজাঁ’র চিন্তাই তাকে একই সঙ্গে পীড়িত ও ভীত করে তুলেছিল। যে সব নীতি দিয়ে মানুষকে এতদিন বিচার করে এসেছে সে, সে সব নীতির কাঠামোটা আজ হঠাৎ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তার চোখের সামনে।

তার প্রতি ভলজাঁ’র উদারতা সত্যিই আশ্চর্যান্বিত করে তোলে তাকে। ভলজাঁর পেছনে মঁসিয়ে ম্যালেনের মূর্তিটাও দেখতে পায় সে যেন। দুটি মূর্তিই আজ যেন মিশে এক হয়ে গেছে। দুটি মূর্তিই শ্রদ্ধার যযাগ্য। আজ জেভার্তের চেতনার নিষিদ্ধ সীমানায় ভয়ংকর একটা ভাব যেন অনধিকার প্রবেশ করল সে ভাব হল এক দণ্ডিত কয়েদির প্রতি শ্রদ্ধা। এটা ভাবতে শিউরে উঠছিল সে। তবু এই শ্রদ্ধার ভাবটাকে অস্বীকার করে এড়িয়ে যেতে পারল না সে। অন্তরের মধ্যে ওই অপরাধীর মহত্ত্বকে স্বীকৃতি না দিয়ে পারল না। যে অপরাধী দেবদূতেরই সমতুল। অবশ্য বিনা দ্বন্দ্বে এ স্বীকৃতি দান করতে পারেনি সে। সে এক মুহূর্তের জন্য একথা অস্বীকার করতে পারেনি যে আইন এবং আইনকে বলবৎ করার মতো সহজ কাজ আর কিছু হতে পারে না। তবু সে যখন আজ ভলজাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার কাঁধের উপর একটা হাত রাখে তখন তার অন্তরাত্মার গম্ভীর হতে বেরিয়ে এসে একটা কণ্ঠস্বর তাকে বাধা দিয়ে বলে ওঠে, তুমি তোমার মুক্তিদাতাকে বন্দি করবে? সে তখন আপনা থেকে ছোট হয়ে যায় ভলজাঁ’র কাছে।

আজ তার হঠাৎ মনে হল সে যেন আইন, নীতি আর আচরণবিধি নিয়েই বাঁচতে পারবে না সারাজীবন এবং আজ সে সেই আইন ও নীতির রাজ্যসীমানা অতিক্রম করে দয়া, মানবতা, কৃতজ্ঞতা, ন্যায়বিচার প্রভৃতি সমন্বিত এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছে। আজ তার জগতে যেন এক নতুন সূর্য উঠেছে এবং যে ছিল একদিন সামান্য এক অন্ধকারের পেঁচা আজ তাকে ঈগল হয়ে সে সূর্যকে বরণ করে নিতে হবে। আজ সে কথা স্বীকার করতে বাধ্য হল যে পৃথিবীতে দয়া বলে একটা জিনিস আছে। ভলজাঁর মতো লোক যদি দয়া দেখাতে পারে তা হলে সে কেন দয়া দেখাবে না?

অনেক নতুন প্রশ্ন জাগল তার মনে এবং তার উত্তরগুলো অভিভূত করে তুলঁল তাকে। তাকে দয়া দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে ভলজাঁ কি কোনও কর্তব্য সাধন করেছে? সে কি উচিত কাজ করেছে? না, তার থেকে আরও বড় বড় করেছে। কিন্তু সে নিজে সেই দয়ার প্রতিদান দিয়ে তার কর্তব্যে অবহেলা করেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মানুষের জীবনে কর্তব্যকর্মের ঊর্ধ্বেও একটা জিনিস আছে। এইখানেই তার চিরাচরিত ভাবধারার কাঠামোটা ভেঙে যাওয়ায় সে মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল। আইন-শৃঙ্খলা ছাড়া জীবনে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালনীয় বস্তু আর কী আছে? যদিও ধর্ম ও চার্চকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে সে তবু তার মনে হয় ধর্ম সামাজিক শৃঙ্খলারই একটি দিক। পুলিশবাহিনীই তার কাছে প্রকৃত ধর্ম আর আইন-শৃঙ্খলাই তার জীবনের একমাত্র ব্রত। মঁসিয়ে গিসলকেত নামে তার এক উপরওয়ালা অফিসার ছিল। তার আদেশ মেনে চলা তার জীবনের পবিত্র কর্তব্য। তার সঙ্গে কোনও ব্যাপারে মতবিরোধ হলে তার পদত্যাগ করা উচিত। অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে উপরওয়ালাকে সে দেবতার মতো মানে।

মোট কথা, একজন অপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে আইনভঙ্গের এক অমার্জনীয় অপরাধে অপরাধী হয়ে উঠেছে সে। সে বুঝল সরকারি কর্তৃত্বের সব অধিকার জীবন থেকে চলে গেছে তার। তার বেঁচে থাকার কোনও যুক্তি নেই।

আবেগ মানুষকে একবার আচ্ছন্ন করে বসলে তা ক্রমশ বেড়ে যায়। সে খালি ভাবতে থাকে দয়ার দ্বারা দয়ার প্রতিদান দিয়ে আন্যায় করে ফেলেছে সে। বরফের মতো কঠিন হয়েও সে গলে গেছে। এতদূর কঠোর বাস্তববাদী ও কাজের লোক হয়েও আজ পথ হারিয়ে ফেলল জেভা। আজ সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হল কোনও কিছুই অভ্রান্ত নয় জগতে। সব অভ্রান্তের মধ্যেও একটা ভ্রান্তি আছে; সব গোঁড়ামি ও নীতিবাদিতার মধ্যে ক্রটি আছে; কোনও সমাজ সম্পূর্ণরূপে দোষমুক্ত নয়; অমোঘ অপরিবর্তনীয় কোনও নীতি বা নিয়মকানুনের মধ্যেও ভুল আছে; বিচারকরাও রক্তমাংসের মানুষ আর আইনও ভুল করে। রেললাইনের মতো সোজা জেভার্তের জীবনের কথাটা আজ কেমন যেন একেবারে ভাঙচুর হয়ে গেল।

কিন্তু আজ পর্যন্ত জেভার্ত অজ্ঞাত-অজানিত কোনও সত্যে বিশ্বাস করেনি। অথচ আজকের সব চিন্তা ক্রমশ তার জীবনের যত সব পরীক্ষিত প্রমাণিত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যের দিকেই নিয়ে যেতে লাগল তাকে। তার জীবনের সব বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিটা বিপর্যস্ত হয়ে গেল একেবারে অথচ নতুন কোনও বিশ্বাস বা মূল্যবোধকে নিঃসংশয়ে আঁকড়ে ধরতে পারল না সে। একদিকে দয়া করার অপরাধ আর একটিকে কর্তব্যকর্মে ত্রুটির অপরাধ–এই দুই অপরাধবোধের দ্বারা নিষ্পেষিত হতে লাগল তার মনটা। আজ জেতার্ত দেখল তার সামনে কোনও পথ নেই, শুধু এক বিরাট অন্তহীন তলহীন এক অন্ধকার খাদ।

সে ভাবতে লাগল মানবজগতের যে সব ঘটনা ঘটে তা সবই ঈশ্বরের দান। তা হলে যে সব অরাজকতা ও বিপ্লবের ঘটনা ঘটে তা-ও কি ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই ঘটে?

জেভার্তের চোখমুখ সহসা কঠোর হয়ে উঠল। মনে হল সে যেন এক দৃঢ় সংকল্প করে ফেলেছে।

সে বুঝতে পেরেছে সব আইন, সব ন্যায়নীতি, সব জ্ঞান, সব বিধি বিশৃঙ্খলায় ও বৈপরীত্যে ভরা। এই ধরনের অবস্থা কখনও সহ্য করা যায় না।

এইভাবে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ল জেতার্ত। তার সামনে এখন মাত্র দুটো পথই খোলা আছে। হয় তাকে ভলজাঁকে ধরে তাকে জেলে পাঠাতে…

নদীর ধার থেকে উঠে পড়ল জেভাৰ্ত। মাথা উঁচু করে পথ হাঁটতে লাগল। সোজা প্লেস দ্য শ্যাতেলেত্তে থানায় চলে গেল। থানাটাতে তখন লণ্ঠনের আলো জুলছিল। সার্জেন্টকে তার কার্ড দেখিয়ে ঢুকে গিয়ে অফিসঘরের টেবিলে বসে রিপোর্ট লিখল জেতার্ত। রিপোর্ট লেখার পর এই ভাবে স্বাক্ষর করল, প্রথম শ্রেণির ইন্সপেক্টর জেতার্ত প্লেস দ্য শ্যাতেলেত্তে বসে এই রিপোর্ট লিখল, ৭ জুন প্রায় রাত্রি একটা।

রিপোর্টের কাগজটা ভাঁজ করে তার উপর ঠিকানা লিখে থানা থেকে বেরিয়ে এল জেভার্ত। নদীর ধারের সেই জায়গাটাতেই ফিরে গেল সে। তখন আকাশে মেঘ থাকায় একটা তারাও দেখা যাচ্ছিল না। আশপাশের কোনও বাড়ির আলোও দেখা যাচ্ছিল না। রাস্তায় কোনও পথচারী ছিল না।

জেভার্ত নদীর ধারের যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আমরা জানি নদীর স্রোত খুব প্রবল। মাঝিরা সেদিকে যায় না। সেখানে একবার পড়লে ভালো সাঁতার জানা লোকও উঠে আসতে পারে না কখনও।

নিজের দিকে একবার তাকাল জেতার্ত। অন্ধকারে নদীর বুকটাকে দেখা যাচ্ছিল না মোটেই, শুধু জলস্রোতের অবিরাম শব্দ শোনা যাচ্ছিল। জেভার্তের মনে হল সে যেন জগৎ ও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছে। তার সামনে পৃথিবীর আর কোনও অংশ নেই, জীবন নেই, কোনও পথ নেই। তার সামনে আছে শুধু সর্বগ্রাসী এক শূন্যতা। অনেকক্ষণ ধরে নিশ্চল হয়ে সেইখানে দাঁড়িয়ে রইল জেভাৰ্ত। পরে সে তার মাথার টুপিটা খুলে ঘাসের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিল। ক্রমে তার লম্বা চেহারা অন্ধকার নদীর দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে অবশেষে পড়ে গেল।

জলের উপর একটা শব্দ হল মাত্র, তার পরই সব শেষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *