পলাতকা – গোলাম আব্বাস
প্রথম প্রথম তার বিশ্বাসই হল না, সে অনুভবই করতে পারল না যে তার স্ত্রী পালিয়ে গেছে। কিন্তু যখনি সে অনুভব করল তার স্ত্রী সত্যি পালিয়ে গেছে, তখন সে একরাশ চিন্তার সাগরে ডুবে গেল। তার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। কী আশ্চর্য, বিয়ের প্রথম বছরেই এ ব্যাপার! মন যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু বারবার যখন দেখল স্ত্রীর সব জিনিসপত্র উধাও, এমনকি তার ছোটকালের ছবিটা যেটায় একটা সাদা কবুতরকে নিজের ছোট ছোট হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাসছিল। সে ছবিটাও নেই। নিয়ে গেছে, অতএব তার আর সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকল না। সত্যি তার স্ত্রী পালিয়ে গেছে।
কয়েকদিন নীরব নিস্তব্ধতার মাঝে কাটিয়ে দিল সে। না কোথাও গেল, না চাকরটাকেও জানার সুযোগ দিল। পরে আস্তে আস্তে যখন সব বদনামির ভয় তার মন থেকে মুছে যেতে লাগল এবং তার ফিরে আসার ক্ষীণতম আশাও মন থেকে উঠে গেল, তখন সে স্থির মস্তিষ্কে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার দিকে মনোনিবেশ করল। একটা ভাবনা বারবার তার মনে এসে তাকে বড় বিব্রত করে তুলল।
এবং সে অস্থির হয়ে উঠল যখন ভাবল– ‘আমি মেয়েটাকে খাঁটি প্রাণেই চেয়েছি। সবদিকেই তাকে খুশি করার চেষ্টা করেছি। তার এমন কী আকাঙ্ক্ষা ছিল যা আমি পূরণ করিনি? আর এই কি তার প্রতিদান– যে কাউকে কিছু না বলে, ছোট এক টুকরো কাগজও লিখে না-রেখে চোরের মতো চুপে চুপে পালিয়ে গেল।
ভাবনাটা তাকে পাগল করে তুলল। আর সাথে সাথেই সে ভবিষ্যতের নিঃসঙ্গতার কথা চিন্তা করতে থাকল। এবং তার মন বারবার কেঁপে উঠল।
যৌবনের প্রথম থেকেই সে নিঃসঙ্গতার সাথে পরিচিত। গরিব মা-বাবার সন্তান সে। তারা নিজেদের প্রয়োজনমতো সামান্য লেখাপড়া শিখিয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল। দারিদ্র্য, অসহায়তার দরুন কারো সাথে মেলামেশা করার সুযোগ হয়নি তার। নিঃসঙ্গই থেকেছে সে যৌবনের প্রারম্ভ থেকে, নিঃসঙ্গতাকেই সে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মেনে নিয়েছিল। যৌবনের অনেক অংশ জীবিকার সাথে যুদ্ধ করতে করতেই শেষ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত যখন তার অবস্থার পরিবর্তন হল এবং জনসমক্ষে তাকেও একটা মূল্যবান হিসেবে প্রতীয়মান হতে লাগল– তখন সে নিজের নিঃসঙ্গ জীবনের সাথে এমনভাবে অভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল যে, তার আর যে-কোনো বিপুল মূল্যের বিনিময়েও ছাড়ার জন্য প্রস্তুত নয় সে। তা অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তার আত্মীয়স্বজনদের উদ্ভব হতে লাগল এবং তার নিঃসঙ্গতার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে লাগল।
‘ভাই, তুমি কি আজীবন কুমার থেকে যাবে!’ তারা প্রায় সময় এসে তাকে বলত– ‘তুমি মানো বা না-মানো আমরা কিন্তু চাঁদের মতো বউ একটা ঘরে তুলবই।’
এক শ্রদ্ধেয়– যে আত্মীয়তার অনেক দূর দিয়ে তার মামা হয়– বলত– দূরে যাব কেন, খান্দানের মধ্যেও মাশাল্লা কত সুন্দরী মেয়ে আছে।’
প্রত্যেকবারই তার অস্বীকৃতি হালকা হতে থাকল। এবং শেষ পর্যন্ত একদিন তার আত্মীয়ের মধ্যেই সামান্য লেখাপড়া জানা একটি মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে দেয়া হল।
পাঠ্যাবস্থায় তার ভ্রমণের শখ ছিল। প্রায়শ সঙ্গীদের সাথে তিন-চার দলে ভাগ হয়ে তারা চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ত বিভিন্ন গ্রাম-শহরের দিকে। সে কিন্তু সঙ্গীদের কাছ থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকত এবং মনেপ্রাণে তাদের ঘৃণা করত। বন্ধু-বান্ধবীরা তার সাথে মেলামেশা করত না। কিন্তু এখন সে বিভিন্ন যুবতীর সংস্রবে এসে ভাবল– এরও একটা আনন্দ আছে এবং এই প্রথমবারের মতো সে অনুভব করল কত নিষ্ফল, কত অর্থহীন জীবনই-না যাপন করে আসছে সে এতদিন ধরে।
বিয়ের পর স্বামী হিসেবে তার করণীয় কর্তব্যের ব্যাপারে সে পূর্ণ সজাগ ছিল। স্ত্রীর ভালোবাসা তাকে এমনভাবে প্রভাবান্বিত করে ফেলেছিল যে, সে অন্যান্য ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন হয়ে গেছিল। সে স্ত্রী ছাড়া কোনো পার্টি-নিমন্ত্রণে যেত না। একাকী কারো সাথে সাক্ষাত্ত করত না। স্ত্রীসঙ্গ ছাড়া থাকা তার পক্ষে এত কঠিন ছিল যে, অফিসের সময় কাটানোও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ত। বারবার ঘড়ির দিকে তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ত– কখন সময় শেষ হবে, কখন ঘরের দিকে পা বাড়াবে।
অফিস থেকে ফেরার পথে কখনো যদি হঠাৎ কোনো পুরনো কালের হাস্যরসিক বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায় এবং সে-বন্ধু যদি ক্ষণিক আনন্দ করার জন্য কোথাও যেতে আমন্ত্রণ জানায় তাহলে সে বড় নিষ্প্রাণ কণ্ঠে জবাব দিত, ‘না সাহেব, আমাকে ক্ষমা করতে হয়। এ সময়টার মালিক আমার স্ত্রী– যে সারাদিন আমার আশায় একাকী ঘরে বসে আছে।’
আবার কখনো বলত– ‘আমি এরকম কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারি না, যেখানে আমার স্ত্রী যেতে অসমর্থ।’
‘এবং এসব সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েটার জন্য’ সে উভয় হাতের মধ্যখানে মাথা রাখতে রাখতে বিড়বিড় করে বলল– ‘যার প্রেম নিছক একটা ধোঁকা।’
হঠাৎ তার স্ত্রীর ওপর রাগে, ঘৃণায় মন ভরে উঠল। তার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত বইতে শুরু করল। সে কল্পনায় দেখল, নিজের শক্ত হাত দিয়ে স্ত্রীর গলা টিপে ধরেছে, তার ভীতিগ্রস্ত চক্ষুযুগল করুণা আর ক্ষমা প্রত্যাশী। কিন্তু এ অকৃতজ্ঞ মেয়েটার জন্য তার প্রাণে কোনো দয়ামায়া নেই, কোনো ক্ষমা নেই, সে তার গলা টিপেই ধরে আছে। জোরে, আরো জোরে– এমনকি তার গৌরবর্ণের চেহারা কালচে হয়ে গেছে এবং তার বড় বড় সুন্দর চক্ষুযুগল দুটি রক্তের মাংসপিণ্ড হয়ে বেরিয়ে এসেছে… আর সে তার মৃতদেহকে মাটিতে ফেলে দিল।
কিন্তু যতই দিন অতিবাহিত হতে লাগল– প্রতিশোধের দৃঢ় সংকল্প, উন্মাদের প্রলাপ ধিমা হয়ে যেতে যেতে একটা উপহাসে পরিণত হয়ে যেতে থাকল। এমনকি তার কাছে নিজের প্রেম, তার চেয়ে উত্তম স্ত্রীর অকৃতজ্ঞতা এবং তার ওপর নিজের রাগ-ক্রোধকেও কেমন যেন হাস্যাস্পদ মনে হতে লাগল এবং একদিন তার কাছে নিজের এ অবস্থার জন্য হাসি পেল।
সে মনে মনে বলল– ‘আমি কী ধরনের বোকা যে, একটা মেয়েকে এরকম গুরুত্ব দিচ্ছি। মেয়েদের ব্যাপারে গুরুত্বসহকারে চিন্তা করাটাই বোকামি। তাদের দৃষ্টান্ত অনেকটা ছোট ছেলেদের মতো। খেলনা দিয়ে যতক্ষণ ভুলানো যায় ভোলাও! কিন্তু যখন আর খেলনায় কাজ দেবে না– কান্না জুড়ে দেবে, দুষ্টুমি শুরু করে দেবে– তখন সব চাইতে উত্তম পন্থা হবে কারো হাতে সোপর্দ করে দেয়া। প্রেম আর-কৃতজ্ঞতা, এসব ব্যাপার তো এদের জন্যে প্রতারণা মাত্র।’
একদিন সে অফিস থেকে বাসায় প্রত্যাবর্তন করছিল। পথে তার শৈশবকালের সেই হাস্যরসিক বন্ধু– যে একদা সুখ আর আনন্দ দানে উৎসাহ প্রদান করত– তাকে আসতে দেখা গেল। সে অন্য পথে মোড় নেয়ার কথা ভাবল একমুহূর্ত। কিন্তু বন্ধু তাকে দেখে ফেলেছিল। নিরুপায় হয়ে তাকেও থামতে হল। তার স্ত্রীর অন্তর্ধানের খবর বন্ধু জানত না। বন্ধু পুরনো অভ্যেস মাফিক ঈষৎ হেসে বলতে লাগল, ‘আজ ভাবী যা ইচ্ছে বলুক, তোমাকে কিন্তু সাথে না-নিয়ে আজ কিছুতেই ছাড়ব না।’
বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে তার চেহারা দেখতে থাকল সে। পরে একটা পবিত্র হাসি এসে তার ক্রোধকে দূর করে দিল। এবং সে বলে উঠল– ‘বেশ চল; কিন্তু কোথায় যাবে?’
বন্ধু আশ্চর্য হয়ে গেল।
তখনো রাতের অন্ধকার ভালো করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েনি। তারা সময় কাটাবার জন্য এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগল। যখন রাত আর তার অন্ধকার গাঢ় হয়ে উঠল বন্ধু তাকে নিয়ে এক রূপোপজীবিনীর প্রকোষ্ঠে গিয়ে হাজির হল। জীবনের এটাই তার প্রথম অভিজ্ঞতা। সুতরাং ভয়, লজ্জা, সঙ্কোচ আর অনুতাপের মর্মপীড়ায় সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। কারণ যে জীবন থেকে সে আজ পর্যন্ত পূত পবিত্র ছিল– এখন সে পূত পবিত্রতার ওপর কালো দাগ পড়ে যাবে। আর এ কালো দাগ নিছক সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েটার বদৌলতেই। কিন্তু এ মর্মপীড়া আর দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হল না। মদ্যপান করার সাথে সাথেই লজ্জার যে একটা ক্ষীণ অংশ বাকি ছিল তা-ও এক নিমিষে উড়ে গেল। এবং সেই রূপোপজীবিনীর হাস্যোজ্জ্বল চেহারা আর নৃত্যে বিভোর হয়ে থাকল সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এরপরই তার জীবনযাপন প্রণালির আর-একটা নতুন দিক শুরু হল। প্রথম প্রথম সে তার সেই আকাঙ্ক্ষিত স্থানে যাবার জন্য বন্ধুর সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত। কিন্তু পরে মনে হতে লাগল যেন বন্ধু তার জন্য একটা বাধা স্বরূপ। এবং সে একা একাই যাওয়া-আসা শুরু করল।
প্রথমে সারা মেন্ডি শহর ঘুরে-ফিরে বাজার যাচাই করত, মালামাল পরীক্ষা করত– পরে নিজের পছন্দ করা জিনিস শৌখিন মেজাজের কোনো ধনীপুত্রের মতো খরিদ করে নিত।
আনন্দোল্লাস তাকে এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, অফিস থেকে বেরিয়ে সে খুব কম দিনই ঘরে ফিরে যেত। আজ এ-কোঠা তো কাল ও-অট্টালিকা, এবং সমস্ত অট্টালিকাময় হন্যে হয়ে ঘুরত। মিথ্যা প্রেম দেখানো এবং নিজেও সে প্রেম থেকে স্বাদ গ্রহণ করা– এই ছিল তার কাজ।
এসব কথা আগে তার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হত। নতুন রাত আসত এবং নতুন করে রূপ আর প্রেমের পৃথিবী গড়ে তোলার ধ্যানে নিমগ্ন থাকত। সে মনে মনে এই নীতি পোষণ করত যে, মেয়েদের সাথে নিছক সময় আর লেনদেনের সম্পর্ক থাকা চাই এবং অন্যান্য জিনিসের মতো এদের ব্যাপারেও সবরকমের ছলনা বৈধ।
সে অফিস থেকে যা বেতন পায় তাতে একটি ছোট পরিবার স্বচ্ছন্দে সম্মানের সাথে কাটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তাতে আজেবাজে খরচ করার কোনো অবকাশ থাকে না। বিয়ের আগে তার খরচ হত নেহাত নামমাত্র,… তাই এ থেকে সে বেশ একটা মোটা অঙ্ক জমিয়ে রেখেছিল। বিয়ের পর স্ত্রীর জন্য কিছু মূল্যবান উপহারাদি খরিদ করার পরও জমা টাকা তেমন কমেনি। কিন্তু এখন দিন দিন যেভাবে মোটা মোটা অঙ্ক খরচ হতে লাগল তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এ দেউলিয়াত্বে জন্য সে চিন্তান্বিত হল। পাছে আবার একেবারে দেউলিয়া হয়ে যায়। তাহলে তো সেই রূপো-জীবিনীর কাছেও যেতে পারব না।
পরপর রাত জাগার দরুন স্বাস্থ্য তার ভেঙে গেছে, ফলে তার যাতায়াতও অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে মাসের মধ্যে বড়জোর দু’চার দিন অনুপস্থিত হত সেখানে এখন সপ্তাহের মধ্যে তিন-চার দিন অনুপস্থিত থাকতে লাগল।
একদিন সকালে সে অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ কে যেন তার কামরার
দরজায় করাঘাত করল আস্তে করে।
‘কে?’
কোনো উত্তর না-পেয়ে সে উঠে দাঁড়াল। দরজা খুলে সে চমকে উঠে স্তব্ধ হয়ে গেল– তার পলায়িতা স্ত্রী পাগলের বেশে মাথা ঝুঁকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে। তার কাপড়ে-চোপড়ে একরাশ ময়লা, উস্কো-খুস্কো চুল। চেহারা রোদে পোড়া তামাটে এবং কোটরাগত চোখ। তাকে এ অবস্থায় দেখেই হঠাৎ তার মনে হল যেন একটা কুকুরি একরাশ নরম কাদার ভেতর আরেকটা কুকুরের সাথে আলিঙ্গন করে এইমাত্র উঠে এসেছে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে সে নিশ্চুপ থাকল। পরে হঠাৎ তার পায়ের নিচে উপুড় হয়ে পড়ল এবং পা-জোড়া গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকল।
তার পা-জোড়া ছাড়িয়ে নেয়ার একটুও চেষ্টা করল না সে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। ‘ক্ষমা কর, আমাকে ক্ষমা কর।’ তার স্ত্রী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলতে লাগল– ‘আমি জানি তুমি এখন আমাকে ঘৃণা করবে। আমার চেহারা দেখার মতো উদারতাও তুমি দেখাবে না। কিন্তু তোমার কাছ থেকে আমি ভালোবাসা চাইছি না। সে আশা আমি করতে পারি না। আর আমি ভালোবাসার উপযুক্তও নই। শুধু তোমার দয়া চাই। আমার প্রতি শুধু একটু অনুগ্রহ কর। তোমার ঘরে একটু আশ্রয় দাও। এর বেশি আমি আর কিছু চাই না। আহ্, আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা কর। তোমার সাথে সাংঘাতিক প্রতারণা করে গেছি…।’
স্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রোধ আর ঘৃণার যে অগ্নি প্রথম প্রথম তার হৃদয়ে ধিকি ধিকি করে জ্বলেছিল তার কিছুটা দীর্ঘ সময় এবং কিছুটা নিজের কৃতকর্মে ঠাণ্ডা করে দিয়েছিল। এবং কিঞ্চিৎ পরিমাণ রাগ যা-ও অবশিষ্ট ছিল– এখন তার এই বিপদগ্রস্ত অবস্থা দেখে তা-ও চলে গেছে। অবশ্য তার এ অবস্থা দেখে তার মনে দয়ার উদ্রেক করছে না, বরং তার কাছে বিরক্ত লাগছে।
সে পালিয়ে যাবার পর থেকেই তার দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল সেই ভাগ্যবানটি কে, যার ভালোবাসার পুরস্কার তাকে দিয়েছে। হতে পারে সে তার বন্ধুদের একজন। অথবা কোনো আগন্তুক। কিন্তু এখন তাকে এ অবস্থায় দেখে আর সেরকম অনুসন্ধানের কোনো ইচ্ছা তার মনে উদয় হল না। সে সমস্ত ব্যাপারটাকে বিরক্তিকর বলে মনে করছে। তার ইচ্ছা অতিদ্রুত এ মেয়েটি তার সঙ্গ ত্যাগ করুক।
সে বলে যেতে লাগল– ‘তোমার ভদ্রতা এবং নিষ্পাপ হৃদয়তার ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, তুমি নিশ্চয় আমাকে তোমার ঘর থেকে তাড়িয়ে দেবে না। এ ঘর ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর অন্য কোনো আশ্রয় নেই। এ ঘর থেকে চলে গিয়ে আমি বড় কষ্ট করেছিলাম। তুমি আমার ওপর চাকরানির মতো ব্যবহারে কর! আহ্! আমি তারই উপযুক্ত।’
‘এত জোরে চেঁচিও না, চাকর শুনে ফেলবে।
অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সে জোর করে নিজের পা-জোড়া ছাড়িয়ে নিল। অতি মোলায়েমভাবে যাতে মেয়েটির কোনো চোট না-লাগে। টুপিটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।
অফিসে তার স্ত্রীর সেই কান্নার অবস্থাটা বারবার তার মনের আনাচে-কানাচে ফিরতে লাগল। তার কাছে বড় আশ্চর্য লাগছে। একি শৈশবকালের সেই চঞ্চল সুন্দরী মেয়েটি– যার সাথে ছ’মাস আগে তার প্রেম ছিল? একি সেই তন্বী প্ৰিয়তমা যে সুরভীর প্রেমে সে পাগল ছিল! সে নিজের দেহে সামান্য ধুলোও সহ্য করতে পারত না! এবং যার সাথে বাগানের ছোট পথ দিয়ে ভ্রমণ করার সময় গৌরবে নিজের বুক ফুলে যেত!
‘অগত্যা সে যদি আমার সাথে থাকতেই চায়।’ সে মনে মনে বলল– ‘তাহলে এমনিই থাকুক। আমি এত নীচ নই যে তাকে সামান্য রুটি আর কাপড় থেকে বঞ্চিত করব। তবে একথা সত্য যে, তার সাথে আমি কোনো সম্পর্ক রাখব না। আমি জানি, অবশ্য আমার একান্ত ইচ্ছাও সে আমার অমনোযোগিতা, অবহেলায় দুঃখ পেয়ে বিষণ্ন বদনে অথবা আমার ভর্ৎসনা সহ্য করতে না-পেরে একসময় তাড়াতাড়ি আবার পালিয়ে যাবে।’
তার স্ত্রী ফিরে আসার পর প্রায় দু’সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ সে একটি বারের জন্যও তার দিকে ফিরে তাকায়নি। যেন ঘরে সে নেই-ই। এদিকে কিন্তু তার স্ত্রী তার সামান্য সান্নিধ্যের জন্য উন্মুখ। কিন্তু তার উপস্থিতি মনের কল্পনায় জিইয়ে রেখেই সে দিন কাটিয়ে দিতে লাগল।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে শিয়রে তেপায়ার উপর রাখা ফুলদানির ওপর। ফুলদানিতে সুন্দর সুন্দর সতেজ ফুল যত্নের সাথে সাজানো থাকে। সে তখন মাত্র বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় কাগজ নিয়ে বসে, ঠিক তখনি চাকর চা নিয়ে আসে। সুন্দর করে কাটা আগুনে-সেঁকা টোস্ট। আর চা– যা প্রথম প্রথম বিয়ের সময় তার ভাগ্যে জুটত। সে বাথরুম থেকে এসে ড্রয়িংরুমে যেতে যেতে দেখে সব জিনিস থরে থরে সাজানো। শার্ট বা স্যুটের সাথে ম্যাচ করা নেকটাই এবং রুমাল। পালিশ করা জুতো।– দুপুরে চাপরাসি বাসা থেকে খাবার নিয়ে যায়। তখন তার প্রিয় শবজি এমন সুস্বাদুভাবে পাকানো থাকত যে, জিহ্বা চুক্ চুক্ করে আওয়াজ দিয়ে ওঠে।
এসব কাণ্ডকারখানায় তার অধরপ্রান্তে এক টুকরো দুঃখের হাসি ফোটে এবং সে মনে মনে বলে– ‘এসব আদর-যত্ন করছে নেহাত আমাকে দ্বিতীয়বার বাধ্য করার জন্যে। কিন্তু এ বান্দা আর এসব চমকে ভুলবে না।’
সে প্রায় সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায় এবং রাত একটা-দুটোর আগে খুব কম সময়ই ফিরে আসে। কোনো সময় সমস্ত রাতই বাইরে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু তাতে বাধা দেয়ার বা অনুসন্ধান করার কেউ নেই। অতএব তার এ আরাম-আয়েশের কোনো ঘাটতি দেখা যায় না।
এভাবেই ধীরে ধীরে তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেল।
বর্ষাকাল। অতএব একদিন সমস্ত আকাশ মেঘে ছেয়ে ফেলেছে এবং কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। সে অফিসে একটা মোটা অঙ্কের চেক কেটে চাপরাসিকে দিয়ে বড় উদ্বিগ্নচিত্তে সময় কাটাতে লাগল। গত আট দিন একটা রাতও সে ঘর থেকে বের হয়নি। দীর্ঘক্লান্তির অবসাদ, কখনো-বা আলসে করে অনেকক্ষণ পর্যন্ত অফিসে বসে থেকেছে। কখনো-বা মন চায়নি তাই সব দিনের আরাম সুদে-আসলে আজকে উসুল করে নেবে।
কিছুক্ষণ পর চাপরাসি খালি হাতে ফিরে এল। তার চেক ফিরিয়ে দিয়েছে। কারণ তার হিসাবে আর মাত্র কয়েক টাকা আর আনা পাই ছাড়া কিছুই বাকি নেই।
তার এ পরিণতি সম্বন্ধে সে-ও সচেতন ছিল। কিন্তু পরিণতিটা যে এত সকালে এসে যাবে তা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। কারো কাছ থেকে ধার নেয়ার কথা ভাবল সে এবং সঙ্কোচচিত্তে দু’একজনের কাছে ফোনে নিজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করল। কিন্তু মাসের শেষ অতএব এখন এত টাকা কোথায়!
হঠাৎ মনে পড়ল তার বাক্সে একটা সোনার আংটি পড়ে আছে— যার উপর দামি একটা পাথর বসানো। এটা তার স্ত্রী উপহার দিয়েছিল তাকে। যখন স্ত্রীর সাথে আত্মীয় সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে গেছে তখন এই স্মৃতিটাই-বা আর রাখে কেন?
যে-বাসনার আগুন একটু আগে ধিমা হয়ে গিয়েছিল এ মুহূর্তে আবার জ্বলে উঠল। সে ভাবল ‘আংটি নিয়ে আমাকে সন্ধ্যার আগেই জুয়েলারির কাছে গিয়ে পৌঁছনো চাই।’ তৃতীয় প্রহরে সে বাক্স থেকে আংটি বের করে বাইরে পা দিল। আঙিনা অতিক্রম করতেই সে দেখল বেগুনি রঙের শাড়িতে আপাদমস্তক ঢেকে বাতাসে এক অপূর্ব মাদকতা ছড়িয়ে একটি নারীমূর্তি হঠাৎ তার সামনে দিয়ে চলে গেল। নারীটি তাকে দেখেনি। কিন্তু সে তাকে একনজর দেখে নিয়েছে। এ দেখাটা নেহাত সামান্য হলেও তাকে আশ্চর্য করে দেয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
নারীমূর্তিটি আর কেউ নয় তার সেই পলায়িতা স্ত্রী। যাকে তিন মাস আগে হঠাৎ দেখে ভেবেছিল গোর থেকে বেরিয়ে এসেছে। দু’বেলা ভালো খাবার খেয়ে, ভালো ভালো সাবান, ক্রিম এবং আরো নানান প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহার করার দরুন তার খোয়ানো রঙ রূপ আবার ফিরে এসেছে। নরম মাংসে গাল অনেক পুরে গছে এবং চোখজোড়া আবার নব জীবনের আলোয় চমকাচ্ছে। তার বর্তমান রূপযৌবন– যেন বিয়ের প্রথম রাতের রূপযৌবন; প্রভেদ শুধু প্রথম তার চেহারায় একরাশ পবিত্রতা উঁকি দিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পবিত্রতা, সেই নিষ্পাপতার জায়গায় একটা সূক্ষ্ম গাম্ভীর্যতা, একটা হৃদয়গ্রাহী অনুতপ্ততা বিরাজিত।
তখনো সন্ধ্যা উতরোয়নি। জুয়েলারির দোকানের কাছে এসে পৌঁছল সে। বিভিন্ন দোকানে তখন লেনদেন, বেচাকেনা চলেছে পুরাদস্তুর। গ্রাহক ছাড়া একটা দোকানও খালি নেই। এর আগে আর কোনো জিনিস বিক্রি করার সুযোগ তার হয়নি– তাই সে দোকানে ঢুকবে কি ঢুকবে না ইতস্তত করছিল, কিন্তু লোকের এ ভিড় দেখে সে আরো ঘাবড়ে গেল। এত লোকের সামনে আংটি বিক্রির কথা কী করে বলা যায়। মানুষ আবার না জানি কী মনে করে বসে।
সে প্রায় ঘণ্টাখানেকের মতো ঘুরতে থাকল বিভিন্ন দোকানের আশপাশে। গ্রাহক দু’চার জন বেরিয়ে গেলে পরমুহূর্তে আবার দু’চার জন এসে ঢোকে। এ ভিড় আগের মতোই। শেষ পর্যন্ত একটা দোকানে সে দেখল গ্রাহক অপেক্ষাকৃত কম। এবং অনেক সাহসের ভর করে সে ওখানে ঢুকে পড়ল।
‘বলুন,– আপনার কী প্রয়োজন?’– জহুরি জিজ্ঞেস করল।
‘আমি–আমি কানের দুল দেখতে চাই’– সে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল। পরে জহুরি দুলের বাক্সের ভিড় জমিয়ে তুলল।
‘এ জোড়ার দাম কত?’ অগত্যা একজোড়া দুল পছন্দ করে বলল সে।
‘পঁয়ষট্টি টাকা।’
‘বাস, এটাই ঠিক। কিন্তু মাফ করবেন– সাথে টাকা আনতে ভুলে গেছি আমি, আপনি এ জোড়া আলাদা করে রাখুন। কালকে এসেই নিয়ে যাব।’
‘ঠিক আছে, ও কিছু না– ও কিছু না।’– জহুরি বাক্সগুলো তুলতে তুলতে নিস্পৃহ গলায় বলল।
দোকান থেকে বেরিয়ে সে লম্বা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
রাত তখন অনেক হয়ে গেছে। সে ভাবল আজকের প্রোগ্রামটা বাতিল করে দিতে হয়। কাল কোনো কর্মচারী দিয়েই বরং আংটিটা পাঠাব। অথবা কালকে কোনো একটা উপলক্ষে টাকা কিছু পেয়েও যেতে পারি।
প্রতি পদক্ষেপে তার আকাঙ্ক্ষার পরাজয় ঘটতে লাগল। এবং চলতে চলতে সে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মন তার দুঃখে ভারাক্রান্ত নয়। বরং তার মন-মেজাজ এক অদ্ভুত উৎফুল্লতায় সক্রিয়। সেই রূপোপজীবিনীর প্রকোষ্ঠ এখান থেকে সামান্য দূরে। হঠাৎ সেই বেশ্যার কথা তার মানসপটে ভেসে উঠল। তার কাছে না গেলেও অন্তত দূর থেকে হলেও তার রংঢং দেখার ইচ্ছে জাগল তার মনে।
অন্যান্য দিনের মতো আজকেও সেই পল্লিটা ঝকঝক করছে। আর পুরুষ পরওয়ানার মতো আলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কোনো কোনো প্রকোষ্ঠের খোলা বাতায়ন দিয়ে হালকা নীল আলো বাইরে অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ঘর থেকে নরনারীর সম্মিলিত কলহাস্যের ফাঁকে ফাঁকে সারেঙ্গির তারের ঈষৎ ঝংকার বাতাসের সাথে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
সে ধীর পদবিক্ষেপে হাঁটছে। হাঁটছে প্রতিটি ঘরের সামনে দিয়ে। এবং প্রতিটি বেশ্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানকার প্রায় বেশ্যার সাথে সে পরিচিত। এবং অনেকের প্রকোষ্ঠেই তার পদধূলি পড়ে। কিন্তু আজ সে খুব জোরে জোরে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
নিষিদ্ধ পল্লির শেষ প্রান্তে এসেই হঠাৎ তার স্ত্রীর কথা মনে পড়ল। এবং তার পরনের সেই বেগুনি রঙের নকশাযুক্ত শাড়িটিও। নেহাত অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই বেশ্যাদের সাথে তার স্ত্রীর তুলনায় লেগে গেল তার মন।
এ পর্যন্ত সে যত মেয়ে দেখেছে প্রত্যেকের রংঢং নাটকের নায়িকাদের মতো মনে হয়েছে তার। ওদের যত বেশি দূর থেকেই দেখেছে তত বেশি প্রবঞ্চক বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তাদের তুলনায় তার কাছে মনে হয়েছে তার স্ত্রী অনন্যা। তাদের মুখের কৃত্রিম তিলকের ছড়াছড়ি হয়তো তার স্ত্রীর মধ্যে নেই, কিন্তু তাই বলে তার মুখের লাবণ্য তাতে এতটুকুও ম্লান নয়। এবং সে শিক্ষাপ্রাপ্ত মেয়েদের বেহায়াপনা আচরণ তার স্ত্রীর মধ্যে নেই। আর তাদের সাজসজ্জার প্রতিও তার মনে ঘৃণার উদ্রেক করে। কেউ-বা চেহারায় একরাশ পাউডারের প্রলেপ লাগিয়ে রাখে, কেউ-বা তেরছি সিঁথি বের করে রাখে, চুলের মধ্যে ডজনে ডজনে ক্লিপ আর পিন গেঁথে রাখে। অবশ্য দু’একখানা সুন্দর চেহারা যে নেই তা নয়। কিন্তু তাদের পোশাক-পরিচ্ছদের না আছে কোনো রীতি-নীতি, না আছে রঙ-পছন্দে গভীর আন্তরিকতা। সব আজেবাজে রঙের সমাবেশ। কেউ কেউ তো গ্রাম্য মেয়েদের মতো একরাশ অলংকারে ভারি হয়ে থাকে।
হৃদয়ে ভাসমান স্ত্রীর ছবি নিয়েই সে বাড়ির দিকে এগুচ্ছিল। হঠাৎ বিয়ের প্রথম জীবনের কথা তার চোখের সামনে যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল। কী অদ্ভুত মাদকতায় ভরা সেই জীবন! যখন দাম্পত্য-জীবনের আনন্দ প্রথমবার তার সমস্ত হৃদয়মনে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং হৃদয় তার ঝড়ে-পাওয়া পাতার মতো কেঁপে উঠেছিল। সেই রাতের বিলম্বিত মুহূর্তে পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেই কাটিয়ে দেয়ার মুহূর্ত। ভাবনার অতলে তলিয়ে যেতে যেতে সে পথ চলতে থাকল।
ঘর যতই সামনে আসছে তার চলার গতি ততই দ্রুত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সে ঘরের সামনে এসে পৌঁছল। এবং তার মুখে একটা উপহাসের হাসি ছড়িয়ে পড়ল। সে মনে মনে বলল– ‘অবশ্য আমার স্ত্রীও পবিত্র নয়, কিন্তু সেই মেয়েগুলোই-বা কোথাকার সতী হয়ে গেল– যার পেছনে ঘুরে ঘুরে মরছি, এবং যাদের সান্নিধ্যের লোভে আজও মাথা কুটে মরছি।’
তার স্ত্রী ছাদের খোলা আকাশের নিচে খাটের উপর একরাশ সুগন্ধে সুরভিত হয়ে অনেকটা ঘুম ঘুম পরিবেশে বসে ছিল। আচানক খটাখট শব্দ শুনে চমকে উঠল। উৎকর্ণ হয়ে শব্দটা শুনতে লাগল। তার মনে হল কে যেন ধীর পদবিক্ষেপে সিঁড়ি দিয়ে উপরে তার কাছে আসছে।
অনুবাদ : আখতার-উন-নবী