পাঁচদিন ধরে কলকাতা বন্দরে ধর্মঘট চলছে। ঘনঘন মিটিং হচ্ছে রাইটার্স বিল্ডিংসে। কয়েকজন নেতা চলে গেছেন দিল্লি। মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং-এ প্রখ্যাত এক নেপালি ভাষার কবির জন্মদিবস পালনে পৌরোহিত্য করতে গেছেন। সেখান থেকে বারবার টেলিফোনে খবর নিচ্ছেন।
কয়েকটি বিদেশি জাহাজ ডেমারেজ দেবার ভয়ে বন্দর ছাড়ব ছাড়ব করছে। দু-হাজার টন চা গুদাম বন্দি হয়ে আছে, অবিলম্বে জাহাজে তুলতে না পারলে বিদেশের বাজার নষ্ট হয়ে যাবে।
ধর্মঘটের মূল কারণটি অস্পষ্ট। প্রথমে শুরু হয়েছিল দু-টি প্রতিপক্ষ শ্রমিক দলের মধ্যে ছোটোখাটো দাঙ্গা। তারপর পুলিশ এসে পড়তেই সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এখন নানারকম কঠিন কঠিন দাবি দাওয়া উত্থাপিত হয়েছে।
ভরত গুপ্ত দোতালার বারান্দায় ইজিচেয়ারে শুয়ে সূর্যাস্তের শোভা দেখছিলেন। সারাদিন আকাশ পরিষ্কার ছিল, এখন বিদায় বেলায় সূর্যের লাল রঙে কোনো খাদ নেই। আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক। কাকেরা মানুষের কাছাকাছি থাকে, কাছাকাছিই তাদের বাসা, তবু সন্ধ্যের দিকে তারা একবার আকাশে উড়ে খুব এক চোট ডেকে নেয়। এই সময় মনটা একটু বিষণ্ণ হয়ে আসে।
গণেশলাল নিঃশব্দ পায়ে এসে ভরত গুপ্তর সামনে দাঁড়াল। ডাকল না। ভরত গুপ্ত তবু টের পেলেন। তার দিকে মুখ না ফিরিয়েই বললেন, বলো। গণেশলাল বলল, পোর্টের স্ট্রাইক বোধ হয় কাল মিটে যাবে। ভরত গুপ্ত উদাসীনভাবে বললেন, কেন? আজ তো ঠিকই চলছিল।
হ্যাঁ, আজ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। কিন্তু আসিফ সাহেব এখন আত্মারামজির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আত্মারামজি ইউনিয়ানের লিডারদের কাছে ফিলার পাঠিয়েছেন।
পাকা খবর?
হ্যাঁ। একদম পাকা।
কিন্তু ধর্মঘটটা যে আর তিনদিন অন্তত চালানো দরকার।
আমাদের কাছে আত্মারামজির কয়েকটা উপকার পাওনা আছে। তার বদলে এই পোর্টের ব্যাপারটা যদি উনি ছেড়ে দেন।
হুঁ। আসিফ এখনো কলকাতাতেই আছে?
জী?
চারজন লোক সবসময় যেন ওকে চোখে চোখে রাখে।
লোক লাগানো আছে। তবে, ওনার সঙ্গেও পাকা পাকা সব লোক আছে।
লক্ষ্য রাখবে, ও কখন কোথায় যায়। পার্ক সার্কাসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শোভন যদি এখনো কলকাতায় থাকে, তাকে একটা ধমক দেবে। তারপর বলো আর কী খবর আছে?
শালিমারের রেলওয়ে শেডে আমাদের যত মাল জমে আছে, সরকার থেকে নোটিশ এসেছে তা দু-দিনের মধ্যে খালাস করতে হবে।
ওখানে কত সরষে জমে আছে?
দু-লক্ষ টন। আরও আসছে।
খুচরো দাম কত উঠেছে?
পৌনে আট।
ন-টাকা পর্যন্ত দাম না চড়লে তো ছাড়া যাবে না।
সরকার বলছে মাল খালাস না করলে মিসা প্রয়োগ করবে।
তাতে অসুবিধে কী আছে? তুমি খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
এই ব্যাপারে একটা কিছু ব্যবস্থা না করলে…
এই অবস্থায় কী করা উচিত বলে তোমার ধারণা?
স্যার, আমার তো মনে হচ্ছে, এবার বোধ হয়—
ভরত গুপ্ত পাশ ফিরে পুরোপুরি তাকালেন গণেশলালের দিকে। তারপর বললেন, তোমার কি ছুটি নেবার ইচ্ছে হয়েছে?
গণেশলাল ভয়ে ছোটো হয়ে গিয়ে বলল, না, না।
তা হলে এই সামান্য ব্যাপারে তোমার মাথা খোল না কেন?
তিনটে উপায় নেওয়া যায়। শালিমারের মজুরদের মধ্যে গন্ডগোল লাগাতে পারো। অথবা বর্ধমানে কিংবা বাঁকুড়ায় একজন এম এল এ খুন করাও। অথবা জুটমিলগুলোতে দাঙ্গা লাগাও। এর যেকোনো একটা হলেই দেখবে সরকার আর সব কিছু ভুলে সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। খবরের কাগজগুলোতে এই নিয়েই হইচই করবে। এর একটাও যদি না পার, তাহলে শালিমারের গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দাও। সরষে আমি এখন কিছুতেই বাজারে ছাড়ব না। একটা কাজ অবশ্যই করবে, কোনো ভুল না হয়। চন্দননগর বা ব্যান্ডেলের কাছে। একজন রেলের ড্রাইভারকে পাবলিক দিয়ে মার খাওয়াবে। যাতে সেদিনের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাতে গুডস ট্রেন মুভমেন্ট অন্তত তিনদিন বন্ধ থাকবে। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
আর কিছু?
স্যার, পোর্টের ব্যাপারটায় যদি আত্মারামজি ওই আসিফ সাহেবকে জিতিয়ে দেন, তাহলে কিন্তু আমাদের একটা বড়ো রকমের হার হবে।
পোর্টের ব্যাপারে আত্মারামের সঙ্গে আমার বাজি আছে। এ বাজিটাতে আমি জিতব। ওই আসিফকে আমি এখান থেকে তাড়াবই। মুম্বাইতে সোনা স্মাগলিং-এর ব্যাপারে ওর একচেটিয়া ক্ষমতা, কিন্তু কলকাতা ওকে ছেড়ে দিতেই হবে। টেলিফোনটা দাও তো!
দেয়ালের এক কোণে সাদা রঙের টেলিফোন। বিরাট লম্বা তার লাগানো, যতদূর খুশি টেনে আনা যায়।
গণেশলাল টেলিফোনটা এনে ভরত গুপ্তর পাশে রাখল। তিনি রিসিভার তুলে বললেন, আত্মারামকে দাও তো।
কিছুক্ষণ পরে ওপাশ থেকে উত্তর এল, স্যার, আত্মারামজিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
ভরত গুপ্ত এক মুহূর্ত চিন্তা করে বললেন, ময়দানে রাজস্থান টেন্টে দেখো। ওখানে পাওয়া যেতে পারে।
ঠিক সেখানেই পাওয়া গেল। ভরত গুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন, আত্মারামজি, খেলার খবর কী? সব খেলা ঠিকঠাক হচ্ছে?
আত্মারাম বিগলিত হাস্যে জানালেন, আরে ভরত গুপ্তাজি? কেয়া সারপ্রাইজ! আপনি কোন খেলার কথা জিজ্ঞেস করছেন?
তুমি যে খেলা ভালোবাসো।
আমি তো এক সঙ্গে অনেক খেলা খেলছি। বড়ো বড়ো মহাত্মারা সব বলে গেছেন, জীবনটাই একটা খেলা।
আপাতত ফুটবল খেলার কথাই হোক। কাল আপনার টিমের খেলা আছে না?
হ্যাঁ, কাল লিগের শেষ খেলা। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে। কাল তো আপনারা জিতেছেন।
হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ …
কি, জিতবেন না?
ইস্টবেঙ্গল এবার একটা খেলাতেও হারেনি।
তাতে কী হয়েছে, আপনারা হারাতে পারবেন না? ভালো করে খেলোয়াড়দের মদত দিন।
ভরত গুপ্তাজি, আপনার ফুটবল খেলায় আগ্রহ হল কবে থেকে!
আমার ইচ্ছে হচ্ছে, আপনার টিমটাকে জিতিয়ে দেওয়া।
ড্র ভি হবে না। ড্র হলেও এক পয়েন্ট পাওয়া যেত। তাহলে টিমটাকে বি ডিভিশনে
নামাতে পারত না।
এক পয়েন্ট পেলেই আপনার চলবে?
ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে? এর থেকে সাপের মুখে চুমু খাওয়া সহজ।
আত্মারামের মতন বহুদর্শী লোকও এই কথা শুনে আঁতকে উঠলেন। উত্তেজিতভাবে বললেন গুপ্তাজি, আপনি এ নিয়ে বাজি ধরতে চাইছেন?
ভরত গুপ্ত ঠাণ্ডাভাবে আবার জিজ্ঞেস করলেন, কত?
শুনুন, শুনুন।
আপনি বাজি ধরতে ভয় পাচ্ছেন?
না, না, সে-কথা হচ্ছে না। আপনি রাজস্থান টিমকে জেতাতে চাইছেন?
আমি কি কখনো আপনার উপকার করি না?
কিন্তু অচানক এ-রকম একটা ব্যাপারে হলে আমি আপনাকে এক গাড়ি আতর ভেট পাঠাব।
আপাতত আমার আতরের প্রয়োজন নেই। আপনি জানেন, বাজি ধরা আমার নেশা।
বৃষ্টির বাজিটা বড় কাঁচা ধরেছিলেন।
আত্মারামজি, মাঝে মাঝে হারতেও আমার ভালো লাগে।
ঠিক আছে, কত?
পাঁচ লাখ।
পাঁ—চ—লা–খ!
পছন্দ হল না? তাহলে, দশ লাখ?
আপনি কী বলছেন?
আমি এক কথা দু-বার বলি না। রাজি?
রাজি। ক্যাশ। টার্মস কী হবে?
ইস্টবেঙ্গল হারবে। কিংবা খেলা ড্র হবে। মোট কথা, রাজস্থান ক্লাব এবার বি ডিভিশনে নামবে না। তৃতীয়টাই বাজির শর্ত!
ঠিক আছে। রাম, রাম।
না, শোনো, আর একটা কথা আছে। তোমার ছেলে ব্রীজমোহনকে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবে? তার সঙ্গে একটু কথা বলব।
সে কুলাঙ্গারটির সঙ্গে আপনি আবার কী কথা বলবেন?
না, না, কুলাঙ্গার কেন হবে? সে তো ব্যাবসাপত্তর ভালোই করছে। আমার ছোটো মেয়েটির বিয়ে দেবার কথা ভাবছি।
আচ্ছা এ ব্যাপারে পরে কথা হবে। আমি একটা জরুরি কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আসিফ সাহেব আমাকে বললেন, আপনার সঙ্গে যদি একটা মিটমাট করা যায়–
ভরত গুপ্ত মুহূর্ত দেরি না করে কণ্ঠস্বরে বিস্ময় না ফুটিয়ে বললেন, আসিফ? সে আবার কে?
মুম্বাইয়ের লুৎফর আসিফ। আপনার সঙ্গে দেখা করেছিল।
ঠিক মনে পড়ছে না। আচ্ছা, এসব নিয়ে পরে কথা হবে। রাম রাম!
শুনুন, শুনুন এটা খুব জরুরি ব্যাবসার কথা। আসিফ সাহেবকে আপনার মনে পড়ছে না?
এখন ব্যাবসার কথা রাখুন। খেলাধুলোর কথা হচ্ছে, এর মধ্যে আবার ব্যাবসা কেন?
আপনার রাজস্থান টিম তাহলে এবার বি ডিভিশনে নামছে না!
আপনি কি দশ লাখ বললেন? পুরো দশ লাখ?
আজকাল কানে কম শুনছেন নাকি?
ঠিক আছে। রাম, রাম।
টেলিফোন রেখে দিয়ে ভরত গুপ্ত ডান হাতের তর্জনীটি কপালে ঠেকিয়ে চুপ করে বসে রইলেন এক মিনিট। তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বার করে পড়তে পড়তে বললেন, পরশুদিন ইস্টবেঙ্গল টিম মারডেকায় খেলবার জন্য কুয়ালালামপুর যাচ্ছে। টিকিট কাটা হয়ে গেছে। কালকেই লিগের শেষ খেলা। সুতরাং কালকের খেলা যদি ভেস্তে যায়, এটার আর মীমাংসা হবে না। রাজস্থান ঝুলে থাকবে, বুঝলে?
গণেশলাল বিহ্বলভাবে বলল, হ্যাঁ স্যার।
ইস্টবেঙ্গলের ছেলেগুলো কেমন?
গণেশলাল একটুও চিন্তা না করে সঙ্গে সঙ্গে বলল, স্যার, খেলার লাইনের ছেলেগুলো খুব তেজি। ওদের হাত করা খুব শক্ত।
ওদের টাকার দরকার নেই?
তা আছে, কিন্তু মানে, টাকা দিয়ে ওদের দল ভাঙানো যায় সিজনের গোড়ায়, কিন্তু একবার খেলতে নামলে একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে। তখন কিছু মনে রাখে না। টাকা খেয়েও কিছু করবে না।
তাই নাকি?
হ্যাঁ স্যার। তা ছাড়া, ওদের পাহারা দিয়ে রাখে। টাকা দিয়ে যদি কিছু হত, তাহলে গণেশলালজি কি আর চেষ্টা করতেন না?
ভরত গুপ্ত এক ধমক দিয়ে বললেন, তুমি বড়ো বেশি কথা বল! কাল ইস্টবেঙ্গল একটাও গোল দেবার আগেই খেলা বন্ধ করতে হবে। করতেই হবে। যে রেফারি থাকবে, তার চা, দুধ কিংবা জলের গেলাসে দশ ফোঁটা লাইসারজিক অ্যাসিড মিশিয়ে দেবে যেকোনো উপায়ে—তারপর সে আর মাথার ঠিক রাখতে পারবে না। প্রথমবার ভুল করা মাত্রই সবুজ গ্যালারি থেকে দশজনকে নামিয়ে দেবে মাঠে, থান ইট নিয়ে। একজন লোককে ঠিক করবে, সে মাঠের বাইরে থেকে সোজা ছুটে গিয়ে রেফারির নাকে ঠিক এমনি করে প্রচন্ড এক ঘুষি মারবে।
ভরত গুপ্ত তাঁর বিশাল হাতটা গণেশলালের দিকে ঘুষির ভঙ্গিতে তুলে বললেন, ঠিক এমনি করে—
গণেশলালের ফর্সা মুখখানা ভিজে কাগজের মতন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তবু সে বলল, আচ্ছা!
গণেশলাল জানে, এই পরিকল্পনার একটু এদিক-ওদিক হলে তার নিয়তি কোন দিকে যাবে।
ভরত গুপ্ত বললেন, এই খেলার বাজিটায় আত্মারামকে হারিয়ে বড়ো কিছু হবে না। ক্ষতি হবে না আত্মারামের, সে এর মধ্যেই সাইড বেট লাগিয়ে অনেক বেশি টাকা তুলে নেবে। কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে ব্যস্ত রাখা যাবে তাকে। লোকটা অত্যন্ত ধূর্ত—একটুক্ষণ ফাঁকা পেলেই, একটা কিছু অর্থ চিন্তা করে নেয়। কাল আত্মারাম যখন খেলার মাঠে থাকবে, সেই সময় ব্রীজমোহনের গাড়িতে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হবে। তাতে ব্রীজমোহন মারা না গেলেও পঙ্গু হয়ে থাকবে অনেকদিন। তুমি শুনেছ বোধ হয়, পরশুদিন একটা সিনেমা হলে সে উজ্জয়িনীর কাঁধে হাত রেখে কথা বলার চেষ্টা করেছিল।
হঠাৎ ভরত গুপ্তর মুখখানা ক্রোধে লাল হয়ে গেল। ঠোঁটে একটা ভয়ংকর ধরনের হাসি ফুটিয়ে বললেন, একটা গিড়ধরের বাচ্চা, তার এত সাহস! আমার মেয়ের গায়ে যে হাত ছোঁয়াতে সাহস করে, তার শাস্তি কি তুমি জানো?
গণেশলাল শুধু ঘাড় হেলালো। তারপর মৃদু গলায় বলল, কিন্তু কলকাতা পোর্টের স্ট্রাইকের ব্যাপারটা কী হবে?
ভরত গুপ্ত কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। বোঝাই যায়, তিনি ক্রোধ দমন করার চেষ্টা করছেন। কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি কদাচিৎ এ-রকম গলা চড়িয়ে কথা বলেন। ব্যাবসায়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হলেও তাঁর এ-রকম উত্তেজনা দেখা যায় না।
একটু বাদে তিনি বললেন, তুমি বলছিলে গণেশ পোর্টের ব্যাপারটা নাকি?
ওটা সম্পর্কে চিন্তা করার এখনো সময় আসেনি। দেখোই না আগে আত্মারাম কতদূর কী করে। যাক, অনেক কাজের কথা হল। এবার বলো, সেই লোকটিকে খুঁজে পেলে?
এই প্রসঙ্গটি এলেই গণেশলাল স্পষ্টতই বিরক্ত বোধ করে। কর্তার এই এক ছেলেখেলার বাতিক আছে, যার সঙ্গে ব্যাবসার কোনোরকম সম্পর্ক নেই।
সে বলল, সেরকম তো কাউকে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক লোক লাগিয়েছি।
কী আশ্চর্য, আমি যেমন চাই, সেরকম একটা লোকও কি কলকাতা শহরে নেই? বাঙালি জাতটা কি মরে গেল?
কেউই তো শেষপর্যন্ত টিকছে না। লোভ ছাড়া কি মানুষ হয়? তিনজনকে বাছাই করে রাখা হয়েছে, তাদের পেছনে সব সময় লোক ঘুরছে, এখনো পুরো রিপোর্ট আসেনি।
তারা কে কে?
একজন ইউনির্ভাসিটির মাস্টার, একজন বেকার ছোকরা আর একজন, আর একজন, খুব আশ্চর্যের ব্যাপার, একজন পুলিশ অফিসার।
ভরত গুপ্ত সহাস্যে বললেন, আশ্চর্য হবার কী আছে? পুলিশের লোক ভালো হয় না? মানুষ চিনতে তোমার এখনো অনেক দেরি আছে। এমন কিছু কিছু লোক থাকে, যারা টাকাপয়সার চেয়েও নিজেদের অহংকারটা পুষে রাখতে ভালোবাসে। আবার কেউ কেউ থাকে, যারা সবসময়ই অন্যদের থেকে আলাদা হতে চায়। অন্যদের সমান হতে গেলেই তাদের গা জ্বালা করে। আশেপাশে সকলে ঘুষ নিলে অমনি সে ভাবে, আমি নেব না! তার মানে অবশ্য এই নয় যে ওরা কখনো অন্যায় করে না কিংবা অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয় না। ওর অহংকারে একটু সুড়সুড়ি লাগিয়ে দেখো কী হয়। আর ইউনিভার্সিটির মাস্টারটির যদি কোনো ছেলে মেয়ে থাকে, তাদের দিয়ে কিছু অন্যায় করিয়ে দেখো উনি তখন কী বলেন। অনেক লোক আছে, যারা নিজেরা অন্যায় করে না, কিন্তু ছেলেমেয়ের অন্যায় সহ্য করে। সে ব্যাপারে অন্ধ। আর বেকার ছোকরা, ওকে একটা চাকরি, না, না বেকারকে চাকরির লোভ দেখাবার কোনো মানে নেই—বরং ওর কোনো চাকরি পাবার সুযোগ এলেই সেটা কেড়ে নেবে। কয়েকটা খুচরো পকেট মার লাগিয়ে দাও ওর পকেটে পয়সা থাকলেই যাতে তুলে নেয়–। পলিটিশিয়ানদের মধ্যে খোঁজ করেছ?
মিথ্যে কথা বলে না, এমন একজনকেও পাইনি।
তবু লেগে থাকো, ছাইগাদার মধ্যেও অনেক সময় রতন মেলে।
ভরত গুপ্ত উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার ছেড়ে। তারপর গণেশলালের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, টায়ারের এজেন্সিটা তোমার নামে লিখিয়ে দেব। ওর থেকে যা লাভ হবে সব তোমার।
গণেশলাল একেবারে বিগলিত হয়ে বলল, আপনি তো আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমার যা-কিছু সবই তো আপনার দেওয়া।
ভরত গুপ্ত বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু তুমি যে ছেলের বেনামীতে সিমেন্ট নিয়ে আলাদা ফাটকা খেলছ, সেটা এখন থেকে বন্ধ করে দাও। হঠাৎ আমি একদিন সিমেন্টের দর নামিয়ে দিলে তুমি মারা পড়বে। আমি যা পারি, তুমি তা পার না।
থতমতো খেয়ে গণেশলাল প্রায় তোতলা হয়ে গেল। হাত কচলাতে কচলাতে বলল, স্যার, আমি তো, আমি আপনার নিমক খাই, আমি যদি কোনোদিন আপনার সঙ্গে বেইমানি করি…
ভরত গুপ্ত তার কাঁধে একটা চাপড় মেরে বললেন, আমার আড়ালে সিমেন্টের ফাটকা বাজি খেলে তুমি আমাকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছিলে! কিন্তু ভুলে যাও কেন, সব খবরই আমার কানে আসে। মনে রেখো ওই ব্যাপারে আমিই তোমাকে বাঁচিয়েছি–।
গণেশলালকে সেখানে স্তম্ভিতভাবে দাঁড় করিয়ে রেখে ভরত গুপ্ত এগিয়ে গেলেন।
একটা ঘরের সামনে দিয়ে তিনি যেতেই ভেতর থেকে গালাগালি ছুটে এল, এই শালা ভরত! এই হারামির বাচ্চা!
ভরত গুপ্ত সেখানে দাঁড়িয়ে গণেশলালের দিকে তাকালেন। গণেশলাল দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। ভরত গুপ্ত তারপর শান্তভাবে বললেন, কী চাচাজি?
ঘরটা দরজার বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। এক পক্ককেশ বৃদ্ধ ছুটে এল জানলার কাছে। সেখান থেকে আবার বলল, এই হারামির বাচ্চা, আয় তোর মুন্ডুটা ছিড়ে নিই!
জানলার গরাদ ধরে ঝাঁকানি দিচ্ছে সেই উন্মাদ বৃদ্ধ, হঠাৎ দেখলে জেলখানার কথা মনে হয়। ভরত গুপ্ত জানলার খুব কাছে এসে বললেন, আপনার কিছু কষ্ট হচ্ছে।
পাশের ঘর থেকে অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান দেহরক্ষীটি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখলে মনে হয় সে এইমাত্র ঘুম থেকে উঠে এল।
বৃদ্ধ হাত বাড়িয়ে ভরত গুপ্তর মুখটা খিমচে দেবার চেষ্টা করতেই ভরত গুপ্ত তাড়াতাড়ি মুখ সরিয়ে নিলেন। তবু এরপর নরমভাবে বললেন, চাচাজি আপনার ব্যথা কি বেড়েছে। ডাক্তারকে খবর পাঠাব?
কাছে আয় কুত্তীর বাচ্চা, তোর জান আমি নিকলে দেব। আয়! ডরপুক! কাছে আসিস না কেন?
ভরত গুপ্ত চোখ দিয়ে অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান দেহরক্ষীকে ইঙ্গিত করলেন। সে সঙ্গে সঙ্গে মস্তবড়ো একটা সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে এগিয়ে এল। তালা খুলে ঢুকল ঘরে। তারপর, মনে হল যেন সেখানে শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বৃদ্ধটি দু-হাত চালিয়ে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানটিকে বাধা দেবার চেষ্টা করছে আর সারাবাড়ি কাঁপিয়ে চেঁচাচ্ছে। দেহরক্ষীটি অসীম বলশালী, একসময় সে বৃদ্ধকে জাপটে ধরে বাহুতে ঘ্যাঁচ করে ঢুকিয়ে দিল ইঞ্জেকশনের ছুঁচ। অবিলম্বে নিস্তেজ হয়ে এল বৃদ্ধের চিৎকার।
ভরত গুপ্তর শয়ন কক্ষের এত কাছে এইরকম একজন উন্মাদকে রাখা একটু বিসদৃশ মনে হতে পারে। কিন্তু এই উন্মাদটি অত্যন্ত মূল্যবান, ভরত গুপ্ত এঁকে চোখের আড়াল করলে দিতে চান না। আরও মুশকিলের ব্যাপার, উন্মাদরা সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়।
ভরত গুপ্ত নীচে না নেমে উঠে গেলেন ওপরের সিঁড়িতে। তিনতলায় তাঁর স্ত্রীর মহলে এলেন।
তাঁর ছেলেরা কেউ এ বাড়িতে থাকে না। তাদের জন্য আলাদা অনেক বাড়ি আছে। শুধু তাঁর এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় বেড়াতে গেছে বলে সেই পুত্রবধু এখন এ বাড়িতে, ওদের যমজ শিশু দু-টি ভরত গুপ্তর খুব প্রিয়। তাদের জন্য ইংরেজ গভর্নেস রাখা হয়েছে।
ভরত গুপ্ত এলেন তাঁর মেয়ে উজ্জয়িনীর ঘরে। এই সন্ধ্যেবেলাতেও উজ্জয়িনী বিছানায় মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। দুধের মতন সাদা নরম বিছানা, এই ঘরের বিছানার চাদর থেকে খাট আলমারি পর্যন্ত প্রত্যেকটি আসবাব বিদেশি।
দু-দিন ধরে উজ্জয়িনী বাড়ি থেকে বেরুচ্ছে না। ভালো করে খেতেও চাইছে না। ব্রীজমোহন তার অঙ্গ স্পর্শ করায় সে খুবই অপমান বোধ করেছে। ভরত গুপ্ত এ খবর আগে পেয়েও এ দু-দিনের মধ্যে মেয়েকে সান্ত্বনা জানাতে আসেননি। আজ ব্রীজমোহনের অ্যাক্সিডেন্টটা যাতে নিছক অ্যাক্সিডেন্ট না মনে হয় সেই জন্যই তিনি আত্মারামকে টেলিফোনে একবার ব্রীজমোহনের নামটা শুনিয়ে দিলেন।
ভরত গুপ্ত উজ্জয়িনীর মাথার পাশে খাটে বসে পড়ে তার চুলে হাত দিয়ে সস্নেহে ডাকলেন, ফুলকুমারী।
উজ্জয়িনী অশ্রুমাখা মুখটা ফেরালো।
সপ্তাহে মাত্র একবার ছাড়া ভরত গুপ্ত ওপরে কখনো আসেন না।
আজ এসেছেন শুধু উজ্জয়িনীর জন্য। এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখেই উজ্জয়িনীর রাগ অর্ধেকটা জল হয়ে এল। তা ছাড়া বাবা তাকে ছেলেবেলার আদরের নামে ডেকেছেন।
সে উঠে বসে বাবার বুকে মুখ রেখে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল আবার। এই কান্নার মধ্যে খানিকটা আদর আছে।
ভরত গুপ্ত বললেন, সব ঠিক হয়ে গেছে। কাঁদিস কেন!
উজ্জয়িনী বলল, আর একটুখানি কেঁদে নিই। তারপর আর কাঁদব না।
উজ্জয়িনী ফোঁপাতে লাগল, আর ভরত গুপ্ত হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন তার রেশমের মতন নরম চুলে।
উজ্জয়িনী এক মিনিট পরে মুখ তুলে বলল, তুমি কী ব্যবস্থা করেছ?
ভরত গুপ্ত সস্নেহে বললেন, তা তোর জানার দরকার নেই। ব্রীজমোহন আর কোনোদিন তোকে ছুঁতে পারবে না।
ব্রজমোহন একটা মাকড়সার মতন নোংরা!
ফুলকুমারী, তোকে একটা কিছু উপহার দিতে চাই। তোর কি চাই বলতো?
উজ্জয়িনী চট করে কিছু বলতে পারল না। এই এক ট্র্যাজেডি।
যাদের সবই আছে, তাদের চাইবার জিনিস সহজে মনে পড়ে না। বাড়ি, গাড়ি, গয়না–এসবই তো উজ্জয়িনীর আছে। অনেক ভেবেচিন্তে সে বলল, আমাকে আর একটা মিংক কোট আনিয়ে দিও!
একটা খাঁটি মিংক কোটের দাম বিদেশি মুদ্রায় পঁচিশ হাজার টাকার মতন। উপহারের জন্য টাকাটা অতিসামান্য, তবে একটু দুর্লভতার গুণ আছে।
ভরত গুপ্ত বললেন, ঠিক আছে, এ সপ্তাহেই আনিয়ে দেব এখন। নে, তুই এখন চোখের জল মুছে ফেল তো!
উজ্জয়িনী বলল, তুমি মুছিয়ে দাও।
তারপর সে প্রেমিকার মতন মুখখানি তুলে ধরল। উজ্জয়িনীর অন্যান্য অনেক ছেলে বন্ধু। থাকলেও বাবাই এখনো তার শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। বাবার মতন পুরুষ মানুষ আর কে?
ভরত গুপ্ত ঠোঁট দিয়ে উজ্জয়িনীর গাল থেকে চোখের জল মুছে নিলেন।
তেইশ বছরের উজ্জয়িনী তখন যেন তিন বছরের শিশু হয়ে গেল। সে বাবার কোলে চড়ে বসে গলা জড়িয়ে ধরে বলল, বড্ড রাগ হয়। তুমি একদম আর আমার কাছে আস না। তুমি আর আমাকে একটুও ভালোবাসো না।
ভরত গুপ্ত মেয়ের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, একদম যে সময় পাই না।
সবসময় বুঝি কাজ! একটু ছুটি নিতে পার না?
আমার ছুটি নেই। তুই এক কাজ কর, তোর তো এখন কলেজ ছুটি, তুই সুইজারল্যাণ্ড ঘুরে আয়-না কয়েকদিনের জন্য! তোর মন ভালো হবে।
উজ্জয়িনী উৎসাহিত হয়ে উঠে বলল, হ্যাঁ, বেশ ভালো হয়। তুমিও যাবে তো আমার সঙ্গে?
না রে, আমি কি করে যাব। তুই যদি কোনো বন্ধু-টন্ধু সঙ্গে নিতে চাস—
না, তুমি না গেলে আমি যাব না।
দূর পাগলি, আমি কী যেতে পারি এখন!
বাবা আর মেয়ে যখন ঘনিষ্ঠভাবে এই প্রকার বাক্যালাপ করছিল সেই সময় ভরত গুপ্তর স্ত্রী ঘরে ঢুকলেন। স্বরূপা দেবী একজন কোটিপতির স্ত্রী হলেও সবসময় একটা সাধারণ সাদা তাঁতের শাড়ি পরে থাকেন। এই ছোট্টোখাট্টো মহিলাকে বাড়ির সকলে বাঘের মতন ভয় করে।
বাল্যকালের অভ্যেস মতন তিনি এখনো স্বামীকে আপনি বলে সম্বোধন করেন। তিনি বললেন, কী ব্যাপার, আপনি আজ হঠাৎ ওপরে এলেন যে?
ভরত গুপ্ত লাজুকভাবে হেসে বললেন, মেয়েকে একটু আদর করতে ইচ্ছে হল।
স্বরূপা দেবী বললেন, যথেষ্ট হয়েছে, আজ থাক। উজ্জয়িনী, তুমি যাও, এবার ওঠো, স্নান করে এসো এখুনি।
উজ্জয়িনী বিনা প্রতিবাদে উঠে এল। বেশবাস ঠিক করে, মায়ের দিকে একবারও না তাকিয়ে চলে গেল স্নানের ঘরে। উজ্জয়িনী যাবার সময় পাছে তাঁর সঙ্গে ছোঁয়া লাগে, তাই স্বরূপা দেবী একটু সরে দাঁড়ালেন।
স্বরূপা দেবী বললেন, তুমি মেয়েকে বড্ড বেশি আদর দিচ্ছ। মেয়েমানুষের এত আশকারা ভালো নয়।
ভরত গুপ্ত দুর্বলভাবে বললেন না, না, আমি আর কী আশকারা দিই! মেয়ে তো তোমার সামনেই আছে। ব্রজমোহন ওর মনে কষ্ট দিয়েছে।
এবার ওর শাদির ব্যবস্থা করো।
সেরকম যোগ্য ছেলে কোথায়?
ভরত গুপ্ত যেন কী একটা কারণে স্ত্রীর চোখের দিকে তাকাতে পারছেন না। মুখ অন্যদিকে ফেরানো। স্বরূপা দেবী কিন্তু চেয়ে আছেন সোজাসুজি।
তিনি স্বামীকে বললেন, কাল সকালে আমি কালীঘাটের মন্দিরে পুজো দিতে যাব। সেইজন্য আপনাকে খবর পাঠাব ভেবেছিলাম। এই সময় ওপরে শুনতে পেলাম আপনার গলায় আওয়াজ। আমি ভাবতেই পারিনি, বিশেষ করে আজ শুক্রবার–
ভরত গুপ্ত দারুণ চমকে উঠে বললেন, আজ কী বার? মোটেই শুক্রবার না, আজ লক্ষ্মীবার।
না, আজই শুক্রবার।
ভরত গুপ্ত দেয়ালের ক্যালেণ্ডারের দিকে তাকালেন। তারপর গর্জন করে উঠলেন, কী। ভুল করেছি! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল! কটা বাজে? সাতটা?
ভরত গুপ্ত লাফিয়ে নামলেন খাট থেকে। দৌড়ে গেলেন দরজার দিকে।
স্বরূপা দেবী দু-হাত দিয়ে দরজা আটকে দাঁড়িয়ে বললেন, আজ থাক-না। আজ তো ভুলেই গিয়েছিলেন।
নিমেষের মধ্যে তাঁর মুখ-চোখ সম্পূর্ণ বদলে গেল। তিনি এখন পৃথক মানুষ। এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরেছেন মাথার চুল। মুখ দিয়ে একটা কোনো আহত হিংস্র জন্তুর মতন আওয়াজ বেরুচ্ছে।
ভরত গুপ্ত ধাক্কা দিয়ে স্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন। ছুটে নীচে নামতে নামতে চিৎকার করতে লাগলেন, আমার সর্বনাশ হয়ে গেল! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল!
এই সময় বাড়ির দোতলা, একতলার সিঁড়ির মুখে কোলাপসিবল গেটগুলোতে তালা বন্ধ। প্রহরীরা সবাই একতলার একটা ঘরে চুপ করে বসে আছে।
ভরত গুপ্ত দোতলার লোহার গেট ধরে ঝাঁকানি দিতে দিতে হুংকার দিতে লাগলেন, দরজা খোলো! শিগগির দরজা খোলো!
তাঁর হুকুম শুনতে কেউ এল না। সমস্ত বাড়ি নিস্তব্ধ।
খানিকক্ষণ গেট খোলার নিষ্ফল চেষ্টা করে ভরত গুপ্ত আবার দৌড়ে চলে এলেন নিজের শোবার ঘরে। দরজা বন্ধ করে দিলেন ভেতর থেকে। তারপর দেওয়ালে প্রচন্ড জোরে মাথা ঠুকতে লাগলেন আর হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচাতে লাগলেন, মা, মা, তুমি কোথায়, আমার সর্বনাশ হয়ে গেল! তুমি কোথায়? তুমি কোথায়?
সেই সময় ভরত গুপ্তকে দেখলে মনে হবে ঠিক বদ্ধ উন্মাদ।
শুক্রবার সাতটা তিন মিনিটের সময় ভরত গুপ্তর জন্মক্ষণ। প্রত্যেক শুক্রবার এই সময়ে আধ ঘণ্টার জন্য তিনি পাগল হয়ে যান।
এরা পাগলের বংশ।