আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের ওপর একটা তিনতলা বাড়ি। বাড়িটির একতলায় একটি টায়ার কোম্পানির শাখা অফিস। পেছন দিকে গুদাম। বাড়িটার দু-পাশে এমনভাবে রাস্তা তৈরি করা আছে, যাতে গাড়ি কিংবা লরি একদিক দিয়ে ঢুকে বাড়িটার পেছন দিক ঘুরে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। মালপত্র ওঠানো-নামানোর সুবিধে হয়। সন্ধ্যেবেলা অফিস বন্ধ হয়ে গেলে দু-জন দারোয়ান ছাড়া আর কেউ থাকে না।
দোতলা-তিনতলার সব ঘরের জানলা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। ঝি-চাকর শ্রেণির দু একজনকে কদাচিৎ সামনের বারান্দায় দেখা যায়।
তিনতলায় থাকে একটি রূপসী রমণী। দিনের বেলায় কোনোদিন সে বাড়ি থেকে বেরোয়। পাড়া-প্রতিবেশীরা অনেকেই তাকে চোখেও দেখেনি। কখনো কখনো সে জ্যোৎস্না রাতে খোলা চুলে ঘুরে বেড়ায় ছাদে, আর গুনগুন করে গান গায়। তখন তাকে দেখলে মনে হতে পারে, কোনো পরী হঠাৎ নেমে এসেছে। কিংবা, রূপকথার তুলনা দিতে গেলে, কোনো রাক্ষসী বুঝি সেজেছে রূপসী রমণী।
মেয়েটির নাম ছবি। কাংরা পেইন্টিংসের মেয়েদের মতনই সে বেশ-বাস পরে থাকে। রঙিন ঘাঘরা, কাঁচুলি আর সূক্ষ্ম ওড়না, তার মুখে চিকচিক করে অভ্রের গুঁড়ো। সে অন্য প্রদেশের মেয়ে হলেও বাংলা বলে মাতৃভাষার মতন।
ছবির শোবার ঘরটির সব জানলা বন্ধ থাকলেও ভেতরে এয়ার কুলার লাগানো। এই ঘরের আসবাবপত্রে একটু বেশি বাড়াবাড়ি আছে। মেঝেতে পুরু কার্পেট। জমকালো সোফা সেট, দরজা-জানলায় মখমলের পর্দা, ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে অন্তত আট-দশ রকমের বিদেশি পারফিউম ও ক্রিমের শিশি। একটা কাচের আলমারিতে নানা রকম পুতুল ও খেলনা সাজানো। এই ঘরের মধ্যে মেয়েটিকেও একটা পুতুলের মতন মনে হয়।
বিছানায় মেয়েটির কোলে মাথা দিয়ে একটি যুবক শুয়ে আছে। সে এমনই নিশ্চল যে মনে হয় বুঝি ঘুমিয়েই পড়েছে। যুবকটি বেশ লম্বা, ফরসা রং, প্রায় সুপুরুষই বলা যায়, কিন্তু মুখখানা নির্বোধের মতন। ওর নাম শোভনকুমার।
ছবি তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, এই, এবার ওঠো। সন্ধ্যে হয়ে গেল, এবার ভাগো। শোভনকুমার বলল, না যাব না।
ছবি ভুরু কুঁচকে বলল, আরে, এ-রকম বেকুব তো দেখিনি! এখানে থেকে কি মরতে চাও নাকি?
যুবকটি তড়াক করে উঠে বসে বসল, কে আমায় মারবে? কোন শালা?
ছবি এবার মিষ্টি করে হাসল। তারপর বলল, ঠিক আছে, কেউ মারবে না। কিন্তু এবার যাও এখান থেকে।
তুমি আমাকে তাড়াতে চাইছ কেন? কত টাকা চাও।
শোভনকুমার তার শার্টের বুক পকেট থেকে খান চারেক এক-শো টাকার নোট বার করে দলা পাকিয়ে ছুড়ে দিল ছবির গায়ে। বলল, এই নাও! আরও চাই?
ছবি টাকাগুলো নিয়ে ঝুঁকে এসে শোভনকুমারের পকেটে ভরে দিল। তারপর ওর গাল টিপে ধরে বলল, বোকা ছেলে, টাকা খরচ করলে অনেক মেয়ে পাওয়া যাবে। আমার কাছে আস কেন?
আমি তোমাকেই চাই।
মরার ইচ্ছে হয়েছে বুঝি? তুমি যে কলকাতায় এসেছ, তোমার কাকা জানেন?
না।
উনি কিন্তু সবই টের পেয়ে যান।
পেল তো বয়েই গেল। আমি ভয় করি নাকি? আমার ইচ্ছে মতন কলকাতায় আসতে পারব না! সব ব্যাবসাই তো আগে আমাদের ছিল।
তাই নাকি?
আলবৎ! এ তো আমার ঠাকুরদাদার কারবার। আমার বাবা হঠাৎ মারা যাবার পর কাকা সব হাত করে নিয়েছেন। ঠাকুরদাদার মাথার গন্ডগোল, তাঁকে আটকে রেখেছে বাড়িতে, একটা অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান গার্ড তাঁকে পাহারা দেয়। আমাকে যেতে দেয় না ওবাড়িতে।
তোমার জন্যে তো রাঁচিতে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন তোমার কাকা। রাঁচির ব্যাবসাও তো…
আমি রাঁচির ব্যাবসা বেচে দিয়ে কলকাতায় চলে আসব।
কলকাতায় এসো না। বম্বে, দিল্লির দিকে চলে যাও।
তুমি যাবে আমার সঙ্গে?
তোমার সঙ্গে? কোন দুঃখে।
শোভনকুমার ছবির উরুতে হাত রেখে বলল, তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না? ছবি হাই তুলে বলল, যদি বাবু ধরতে হয়, তা হলে বড়ড়া বাবুই ধরব।
আমি শাদি করব তোমাকে। তুমি যদি চাও…
শাদি? হি—হি—হি–। আমি কি কেরানির মেয়ে নাকি যে বিয়ে না হলে আমার দুঃখ ঘুচবে না!
শোভনকুমার গম্ভীর হয়ে গিয়ে ফস করে একটা সিগারেট ধরালো। সে আরও অনেক কিছু বলতে চায়, কিন্তু ঠিক ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। লোকে যখন মনের কথাটা ঠিক মতন প্রকাশ করতে পারে না, তখন হঠাৎ রেগে যায়।
রেগে গিয়ে সে আর কী করতে পারে, জ্বলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিল কার্পেটের ওপর।
ছবি তাড়াতাড়ি সেটা কুড়িয়ে নিয়ে বলল, কী হচ্ছে কী? মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
শোভনকুমারকে আরও একটু রাগ দেখাতে হবে। তাই সে গালাগালির আশ্রয় নিল। রক্তবর্ণ চোখ করে বলল, তোমার তো কুত্তীর মতন কাকার পা চাটতেই ভালো লাগে, না?
ছবি বলল, হ্যাঁ, ভালো লাগে।
ছবি হাত বাড়িয়ে শোভনকুমারের পকেট থেকে টাকাগুলো আবার তুলে নিল। বলল, এগুলো আমার কাছেই থাক। তুমি এখন যাবে, না দারোয়ানকে ডাকব?
আমি এখানে আজ সারারাত থাকব।
নীচে ঘর আছে, সেখানে শুয়ে থাকো।
শোভনকুমার সবলে ছবিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি এইখানে থাকব। তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। থাকতেই হবে। কাকাকে আমি খুন করে ফেলব একদিন। ঠিক খুন করব।
ছবি নিজেকে ছাড়াবার একটুও চেষ্টা করল না। শোভনকুমারের একটি হাত যে তার বুকের ওপরে, তাতেও তার কোনো হৃক্ষেপ নেই। তার সুর্মা-আঁকা চোখ ও টকটকে লাল রঙের ঠোঁটে তাকে বড়ো অপরূপ দেখায়। পাহাড়ি এলাকায় যেমন গন্ধহীন অনেক প্রকার সুন্দর ফুল ফোটে, ঠিক সেইরকম।
ছবি শোভনকুমারের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, পারবে?
শোভনকুমার বলল, কি? তোমার সঙ্গে আমি পারব না?
আরে বেওকুফ, মেয়েদের কাছেই শুধু গায়ের জোর দেখাতে পার। একটু আগে যা বললে, তা পারবে?
কী? কাকাকে খুন করতে তো? ঠিক একদিন খুন করব।
একদিন মানে, কবে?
শোভনকুমার একটু থতমত খেয়ে গেল। গলার আওয়াজ নীচু করে বলল, কয়েকটা লোক লাগাতে হবে। একদিন তাল বুঝে…
তোমার হাতে কত লোক আছে? তোমার কাকার চেয়ে বেশি?
বেশি লোক লাগবে কেন? ঠিক মতন লোক পেলে…
তুমি নিজে পারবে না?
আমি?
ছবিকে ছেড়ে দিয়ে শোভনকুমার আবার খাটে গিয়ে বসল। তারপর বলল, আমি নিজের হাতে ওসব নোংরা কাজ করি না।
ছবি তার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলল, যদি কোনোদিন পার, তারপর আমার কাছে এসো, ভালো করে আদর করব।
তুমি সত্যি চাও? কাকার সঙ্গে তোমার এত পেয়ার?
আমি দেখতে চাই, তুমি পার কিনা!
শোভনকুমার বীরের মতন বুকে থাপ্পড় মারতে মারতে বলল, পারব, পারব, ঠিকই পারব। একদিন কাকাকে সরিয়ে দিয়ে আমিই এই সব ব্যাবসা হাত করে ফেলব, সব কিছু আমার হবে…
এই সময় দরজায় ধাক্কা। ছবি দরজা খুলে দেখল, একজন দাসী। দাসী ফিসফিস করে বলল, বাবু এসেছেন।
কথাটা শুনেই শশাভনকুমারের মুখখানা বিবর্ণ হয়ে গেল। এরপর সে যা শুরু করল, তা রীতিমতন হাস্যকর। সে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে খাটের তলা থেকে তার চটি জোড়া বার করবার জন্য নীচু হতেই বুক পকেট থেকে টাকা ও খুচরো পয়সা পড়ে গেল। তখন আবার সেগুলো কুড়োতে লাগল এবং চটিটা পায়ে গলাতে গিয়ে ছিড়ে ফেলল একটা স্ট্র্যাপ।
ছবি হাসতে হাসতে বলল, কী, এবার তোমাকে ধরিয়ে দিই তোমার কাকার কাছে?
শোভনকুমার ছবির হাত চেপে ধরে বলল, বাঁচাও! এবারের মতন বাঁচিয়ে দাও!
সব সাহস উড়ে গেল?
চুপ! আমি কোথায় যাব?
ছবি তার প্রায় ঘাড়ে হাত দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে এল বাইরে। বারান্দার ওপাশে আর একখানা ঘরে ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিল বাইরে থেকে।
দ্রুত নিজের ঘরে ফিরে এসে ছবি চোখ বুলিয়ে দেখে নিল ঘরের মধ্যে কোনো অসংগতি আছে কিনা। সিগারেটের টুকরোটা আগেই বাইরে ফেল দিলেও ঘরে এখনো একটা হালকা সিগারেটের গন্ধ রয়ে গেছে। সে তখন স্প্রে দিয়ে সুগন্ধ ছড়াতে লাগল।
ভরত গুপ্তর ডজ গাড়িখানা এসে থেমেছে বাড়ির পেছন দিকে। ড্রাইভারের পাশে বসে থাকা একজন রক্ষী আগে নেমে দরজা খুলে সসম্ভ্রমে দাঁড়াল। ভরত গুপ্ত ধুতি আজ পাঞ্জাবিই পরে আছেন, চোখে কালো চশমা। তাঁর সঙ্গে আর একজন রয়েছে।
ভরত গুপ্ত বললেন, আসুন মিস্টার আসিফ।
মি. লুৎফর আসিফের পোশাক পাক্কা সাহেবের মতন। চেহারাও সুন্দর, টকটকে ফরসা রং। মেদহীন শরীর, সহজে বয়েস বোঝা যায় না, তবে পঁয়তাল্লিশের কম নয়। টু পিস সুট পরে আছেন, গলায় বো, বুক পকেট থেকে উঁকি মারছে ভাঁজ করা রুমাল, মাথার চুল এমন চকচকে কালো যে কোনো সন্দেহ নেই কলপ লাগানো। কালো রঙের জুতোতে এক বিন্দু ময়লা নেই। এঁরও চোখে কালো চশমা।
মিস্টার আসিফ গাড়ি থেকে নেমে একবার চারদিকে তাকালেন। তারপর বললেন, মি.
গুপ্তা, আপনার এখানে টেলিফোন আছে তো?
ভরত গুপ্ত বললেন, আপনি যা যা চাইবেন, সবই আছে।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দু-জনে আর একটিও কথা বললেন না। তিনতলার রেলিংয়ের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ছবি। সে আগে ওঁদের দুজনকে ঘরে ঢুকতে দিয়ে তারপর নিজে এল।
ভরত গুপ্ত একটা সোফা দেখিয়ে আসিফকে বললেন, বসুন।
আসিফ দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন, আগে টেলিফোন।
ভরত গুপ্ত ছবিকে বললেন, টেলিফোনটা দেখিয়ে দাও।
ছবি এঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আসিফ টেলিফোনের কাছে গিয়ে রিসিভারটা তুলে ছবির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
ছবি প্রথমে ভেবেছিল এই আগন্তুক তার রূপের তারিফ করছে। একটু বাদেই ভুল ভাঙল। ছবি সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আসিফ ফোন করবেন না। ছবি সরে এল।
ছবি ঘরে ফিরে এসে দেখল, ভরত গুপ্ত গম্ভীর মুখে বসে পা দোলাচ্ছেন। ছবির দিকে তিনি তাকালেন না।
ছবি জিজ্ঞেস করল, ওঁর জন্য কি কিছু খাবার-টাবার আনতে হবে?
উনি আসুন, ওঁকে জিজ্ঞেস করো।
ছবি তীক্ষ্ণ চোখে ভরত গুপ্তকে লক্ষ করতে লাগল। মেজাজ কীরকম আছে দেখতে চায়। ভরত গুপ্তর মেজাজ বোঝা সহজ নয়।
ভরত গুপ্তর পা দোলানিটা ছবির একটুও মনঃপুত হয় না। তার মানে উনি এখন গম্ভীরভাবে কিছু চিন্তা করছেন। এই সব লোককে বেশি চিন্তা করতে দিলেই বিপদ। কথাবার্তায় যদি ব্যস্ত রাখা যায়, তাই ছবি একটু আদুরে গলায় বলল, আপনি অনেক দিন আসেননি। আমি রোজ সন্ধ্যে বেলা আপনার জন্য–
ভরত গুপ্ত খুব কঠোরভাবে বললেন, এখন চুপ করো—
আসিফ একটা সিগারেট ধরিয়ে জ্বলন্ত সিগারেটটাই রেখে গেছেন অ্যাসট্রেতে। তাতে ছবি একটু নিশ্চিন্ত বোধ করল।
আসিফ টেলিফোন সেরে ফিরে আসার পর ভরত গুপ্তর মুখখানা আবার বদলে গেল।
তিনি বললেন, বসুন, আরাম করে বসুন। কী খাবেন?
আসিফ ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরের চারপাশ দেখে নিচ্ছেন। এইটাই ওর স্বভাব মনে হয়। তিনি বললেন, কী আছে? আমি হুইস্কি ছাড়া কিছু খাই না।
সে তো হবেই। কিছু খাবার-টাবার?
না, ধন্যবাদ। সূর্যাস্তের পর আমি কোনো খাবার মুখে ছোঁয়াই না।
ভরত গুপ্ত ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের ইঙ্গিত করলেন। ছবি কাচের আলমারি থেকে স্কচ হুইস্কির বোতল বার করল। রয়াল স্যালুট।
দু-টি গেলাসে দু-টি বড়ো পেগের পরিমাণ ঢেলে সে আসিফকে জিজ্ঞেস করল, সোড়া?
না, শুধু দু-টুকরো বরফ। ছবি দরজার কাছে দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গেই একজন দাসী আইস বক্স নিয়ে এল। যেন সে আগে থেকেই জানত। কিংবা এরা কোনো যন্ত্র।
হুইস্কির গেলাসে বরফ মিশিয়ে ছবি তুলে দিল আসিফ সাহেবের হাতে। অন্য গেলাসটি নিজের।
আসিফ একটু অবাক হয়ে ভরত গুপ্তকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার?
ভরত গুপ্ত সহাস্যে বললেন, আপনি আমার সম্পর্কে ঠিকঠাক খোঁজখবর নিয়ে আসেননি মনে হচ্ছে। আপনার মতন লোকের পক্ষে তো এ-রকম কাঁচা কাজ করা ঠিক নয়।
আসিফ ভরত গুপ্তর ব্যক্তিত্বের কাছে পরাজিত হতে মোটেই রাজি নন। তিনি ভরত গুপ্তর হাসিটা উড়িয়ে দিয়ে শুকনো গলায় বললেন, আপনি পান করেন না?
না।
এসব জিনিস এখানে রাখা থাকে? এখানে কি আপনার নিয়মিত অতিথি আসেন?
না। আপনিই সম্মানিত অতিথি। তবে, ও খায়। ছবির দিকে তাকিয়ে ভরত গুপ্ত আবার ধীরস্বরে বললেন, আমি ওসব জিনিস খেয়ে শরীর নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু নেশাগ্রস্ত স্ত্রীলোক দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি তো কখনো সিনেমা দেখি না।
আসিফ চশমাটা খুলে গেলাসে চুমুক দিয়ে বললেন, ভালো।
হুইস্কির স্বাদ, ছবি নাম্নী মেয়েটির রূপ কিংবা ভরত গুপ্তর কথা—এর কোনটা সম্পর্কে তিনি এ মন্তব্য করলেন, তা বোঝা যায় না। দেখলেই বোঝা যায়, এরা সাধারণ লোক নয়। এঁদের হাসি কিংবা গাম্ভীর্য খুবই অপ্রাসঙ্গিক।
ছবি মুখখানি মধুরতর করে প্রশ্ন করল, জনাব কি কোনো গান শুনবেন?
আসিফ সাহেব ভুরু কুঁচকে বললেন, গান? তারপরেই হেসে আবার বললেন, আপনার গান শুনলে আমি নিশ্চয়ই খুব আনন্দ পেতাম, কিন্তু আমার সময় খুব কম।
ছবি বলল, আমি গান জানি না। আমি বলছিলাম রেডিয়োগ্রামের কথা।
আমরা এখানে কাজের কথা বলতে এসেছি।
ভরত গুপ্ত বললেন, কাজ তো আছেই। এখন একটু আরাম করুন।
কাজই আমার আরাম। গুপ্তাজি, আমার হোটেলে গেলেই কথাবার্তার সুবিধে হত।
আমি দুঃখিত মি. আসিফ। আমি কখনো কোনো হোটেলের ভেতরে পা দিই না। কলকাতায় যদিও আমার নিজের দু-খানা হোটেল আছে, কিন্তু সেগুলোর ভেতরের চেহারা কেমন দেখিনি।
তা হলে আপনি যখন অন্য শহরে যান?
—যে শহরে আমার বাড়ি নেই, সেরকম কোনো জায়গায় আমি গত দশ বছরের মধ্যে যাইনি।
আসিফের মনে হল, এই লোকটা একটা হামবাগ। একে দিয়ে কাজ আদায় করা শক্ত হবে না।
ভরত গুপ্ত সঙ্গে সঙ্গে আবার যোগ করলেন, সেই জন্যই তো আপনাদের মুম্বাই শহরে, আমি কখনো যাই না।
গেলাস খালি হয়ে গেছে, ছবি আবার ভরতি করে দিল। ছবি যখন ঝুকে আসে, তখন তার বুকের অনেকখানি অংশ দেখা যায়। এইরকম নারিদের বুকের অনাবৃত অংশের দিকে পুরুষ মাত্রেরই দৃষ্টি আটকে যায়। কিন্তু আসিফ সাহেব এমনভাবে সেদিকে তাকাচ্ছেন, যেন তিনি খবরের কাগজ পড়ছেন। নারীর প্রতি মনোযোগ দেবার জন্যও এঁদের আলাদা সময় থাকে।
ভরত গুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি উপস্থিত থাকলে কি আপনার কথা বলতে অসুবিধা হবে?
আপনি যদি অসুবিধা না মনে করেন।
ভরত গুপ্ত ছবিকে বললেন, তুমি অন্য ঘরে যাও। ডাকলেই এসো।
ছবি উঠে দাঁড়িয়ে আসিফ সাহেবের চোখে চোখ ফেলবার চেষ্টা করল একবার। সক্ষম হল না। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে মন্দগতিতে।
বাইরে বেরিয়ে ছবি এদিক-ওদিক তাকালো। রেলিং দিয়ে ঝুঁকে তাকালো নীচে। ভরত গুপ্তর দেহরক্ষী একতলায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।
ছবি চলে এল তালাবন্ধ ঘরটার সামনে। দরজার টক টক শব্দ করল দু-বার। শোভনকুমার কাছে আসতেই ছবি বলল, ধরিয়ে দেব?
শোভনকুমার বলল, তা হলে তোমার কী হবে?
আমার কিছু হবে না। আমি তো তোমাকে ঘরে আটকে রেখেছি।
আমাকে ধরিয়ে দিলে তোমার কী লাভ হবে?
তোমার কাকার কাছ থেকে ইনাম পাব—
আর কত ইনাম চাও?
আমি আরও অনেক অনেক কিছু চাই।
আর কে এসেছে?
দেখলে চেনা যায় না। চুপ করে থাকো।
আসিফ গেলাসে আর একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন, আপনি জানেন গুপ্তাজি, আমি কলকাতার মাঠের সাতটা ঘোড়া কিনেছি। সব ক-টাই প্রাইজ হর্স।
হ্যাঁ, জানি।
তার মধ্যে একটা ঘোড়া চারদিন আগে মারা গেছে।
ঘোড়া বুঝি কখনো মরে না?
মানুষের মতন যখন-তখন মরে না।
ভরত গুপ্ত জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বললেন, মি. আসিফ, মানুষ আর ঘোড়ার তুলনাটা আপনি ঠিক দিলেন না। আমি তো শুনেছি, রেসের ঘোড়া বুড়ো হয়ে গেলে আপনারা গুলি করে মেরে ফেলেন। অথচ দেখুন, মানুষ বুড়ো হলেও গুলি করে মারার নিয়ম নেই। অথচ, সব মানুষই তো রেসের ঘোড়া—সবাই দৌড়োচ্ছে। যে যে হেরে যায়, পিছিয়ে পড়ে, সে শুধু সামনের লোকদের নামে দোষ দেয়—
ভরত গুপ্তর এ ধরনের ভাবগর্ভ কথায় আসিফ একদম কান দিলেন না। সংক্ষিপ্তভাবে বললেন, আমার ওই ঘোড়াটার নাম ছিল মাউন্ট ভিসুভিয়াস।
রেসের ঘোড়ার ওইরকমই সব অদ্ভুত নাম হয় বটে। এটা একটা ওয়ার্ল্ড ফেমাস ঘোড়া। ওটাকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। খুবই দুঃখের কথা।
আমার কাছে খবর আছে যে আমার সব কটা ঘোড়াকেই এ-রকমভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা চলছে।
খুব খারাপ, খুব খারাপ।
আমি এই ব্যাপারেই আপনার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে এসেছি।
মি, আসিফ, আমি ঘোড়ার কারবার করি না। আমার কারবার মানুষকে নিয়ে।
মানুষই ঘোড়ার কারবার করে। ঘোড়ারা কখনো ঘোড়ার কারবার করে না।
হা হা হা! এটা একটা কথার মতন কথা বটে!
ডক এরিয়ায় আমার তিনজন লোককে পুলিশ ধরেছে গত এক মাসের মধ্যে।
হ্যাঁ, এ খবর আমি শুনেছি বটে।
এ ব্যাপারে আপনি কী করতে পারেন?
মি. আসিফ, ডক এরিয়ায় আপনার যে তিনজন ধরা পড়েছে, তাদের আমি ছাড়াবার ব্যবস্থা করব। ওদের নামে আগে কেস উঠুক, শাস্তি হয়ে যাক, তারপর ওদের তিনজনের বদলে অন্য তিনজন জেল খাটবে। সে ব্যবস্থা আমার। কিন্তু তার বদলে…
ভরত গুপ্ত হঠাৎ থেমে আসিফের চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
আসিফ দৃষ্টি না সরিয়ে স্থির গলায় বললেন, আপনার টার্মস বলুন?
আপনার দলবলকে কলকাতার পোর্ট থেকে একেবারে দূর হয়ে যেতে হবে।
এটা কোনো টার্মস নয়।
এটাই আমার একমাত্র শর্ত। মুম্বাই আর চেন্নাইয়ের মাদ্রাজের পোর্ট আপনাদের হাতে আছে। এত দূর থেকে আপনারা কলকাতার পোর্টেও এসে অপারেট করবেন, এটা চলতে পারে না। এবার আমরা এই পোর্টটা হাতে নেব। রেসের ঘোড়া নিয়ে আপনি যা ইচ্ছে তাই করুন। ওই ব্যাপারে আপনাকে লড়তে হবে আত্মারামের সঙ্গে। কোনো জন্তুকে বিষ খাইয়ে মারার মতন নোংরা কাজ আত্মারামই করতে পারে। কিন্তু কলকাতার পোর্ট আপনাকে ছাড়তেই হবে।
আমি যে কাজে নামি, কখনো তা থেকে পিছিয়ে যাই না।
কাজে নামবার আগে অগ্র-পশ্চাৎ ভেবে দেখতে হয়।
কলকাতার পোর্ট আমাদের পুরোনো এরিয়া।
কিন্তু মুম্বাইতে থেকে আপনি কলকাতার পোর্ট কন্ট্রোল করবেন, এটা কতদিন চলবে?
তা হলে কি আমি এটা ধরে নিতে পারি, কলকাতার আমার যে তিনজন লোক অ্যারেস্টেড হয়েছে, সেটা আপনারই নির্দেশে?
তাদের ধরেছে পুলিশ। এ সম্পর্কে আমার কোনো দায়িত্ব নেই।
কিন্তু এতকাল পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি।
এসব অবান্তর কথা। আমি আপনাকে আমার শর্ত জানিয়েছি।
এতে যদি আমি রাজি হতে না পারি?
সেটা খুব দুঃখের কথা হবে।
আসিফ চুপ করে রইলেন একটু। তার সামনের হুইস্কির গেলাসটা খালি।
ভরত গুপ্ত সেই খালি গেলাস লক্ষ করে হঠাৎ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আপ্যায়ন করবার জন্য বললেন, একি, আপনি আর নিচ্ছেন না কেন? দয়া করে কিছু নিন!
বরফের বাক্সটিতে বরফ গলে জল হয়ে গেছে। ভরত গুপ্ত চেঁচিয়ে ডাকলেন, ছবি, ছবি!
ছবি তৎক্ষণাৎ এসে হাজির হল। তাকে কিছু বলতে হল না। সে চট করে বরফের বাক্সটি। নিয়ে গিয়ে বরফ ভরতি করে ফিরে এল। তারপর আসিফের পাশে বসে তাঁর গেলাসে ঢেলে দিল হুইস্কি।
আসিফ গেলাসটা তুলে নিয়ে বললেন, ধন্যবাদ।
এক চুমুকে গেলাসটা শেষ করে ফেললেন।
ছবি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আসিফের দিকে। আবার গেলাসে ঢালতে যেতেই আসিফ বললেন, থাক। একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, কলকাতা শহরটা বেশ সুন্দর।
ছবি মিষ্টি করে হেসে বলল, আপনার ভালো লেগেছে?
ভরত গুপ্ত বললেন, কলকাতা শহরের সৌভাগ্য, মি. আসিফ।
আসিফ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলি।
সে কী, এরই মধ্যে?
আটটার সময় আমার আর একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। গুপ্তাজি, আপনার সঙ্গে আবার পরে কথা হবে।
ভরত গুপ্ত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, নিশ্চয়ই। যেকোনো সময়। যখন আপনার খুশি। আপনার যেকোনো কাজে লাগতে পারলে আমি অত্যন্ত খুশি হব।
আসিফ ছবির দিকে ফিরে ঝুঁকে বিলেতি কায়দায় সৌজন্য প্রকাশ করে বললেন, আপনার সঙ্গ পেয়ে ধন্য হলাম। সন্ধ্যেটা খুব সুন্দর কাটল।
ছবি তার নিজের শরীরের অনেকখানি দেখালো আসিফকে।
ভরত গুপ্ত ওঁর সঙ্গে ঘরের বাইরে এসে বললেন, দাঁড়ান, আমার গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে, আপনি যেখানে যেতে চান–
না, তার দরকার নেই। ধন্যবাদ। আমি টেলিফোন করে দিয়েছিলাম, আমার জন্য গাড়ি নীচে অপেক্ষা করছে।
আসিফ জুতোর টক টক শব্দ তুলে নেমে গেলেন সিঁড়ি দিয়ে। একেবারে শেষ সিঁড়িতে নেমে ঘুরে তাকালেন ছবির দিকে। কী ঠাণ্ডা সেই দৃষ্টি!
ভরত গুপ্ত ঘরে ফিরে এসে আরাম করে বসলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ছবি, এই লোকটি কীরকম?
ছবি নিজের জায়গায় বসে গেলাসে হুইস্কি ঢেলে বলল, মাথা খুব ঠাণ্ডা।
হুঁ, তাই না!
মাথার মধ্যে সবসময় অনেকরকম হিসেব ঘোরে।
ঠিক। লোকটা কাজ জানে। শুধু শুধু কী আর এত বড়ো হয়েছে?
আচ্ছা, উনিই কি…
উঁহু, অত কৌতূহল ভালো না। জান না, কৌতূহলের জন্যই বিড়াল মরে? ছবিরানি, তুমি। কীরকম আছ, তাই বলো।
আমি খুব ভালো আছি।
ভালো আছ তো, তোমার মুখে হাসি নেই কেন? চোখ ছটফটে কেন?
ছবি এসে ভরত গুপ্তর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল। তারপর আদুরে গলায় বলল, কই, আপনি তো আজ আমার মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়েই দেখছেন না?
ভরত গুপ্ত নির্নিমেষে তাকিয়ে রইলেন ছবির দিকে। ঠোঁটে অল্প অল্প হাসি। যেন তিনি ছবির মুখের প্রতিটি রেখা পরীক্ষা করছেন। যেন, তাঁর দৃষ্টিতে তাপ আছে।
তিনি আলতোভাবে হাত ছোঁয়ালেন ছবির চিবুকে। তারপর হাতটা নেমে এল গলায়। ছবি বুকের ওড়নাটা ফেলে দিল। কৃত্রিমভাবে আট করা তার দুটি স্তন এখন স্পষ্ট। ভরত গুপ্ত সেখানে আঙুল দিয়ে কি যেন লিখতে লাগলেন। তিনি যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন। আপন মনে বললেন, বা!
তারপর হঠাৎ এক চড় মারলেন ছবির গালে। অতর্কিত আঘাত সামলাবার আগেই অন্য গালে আর এক চড়। রীতিমতন জোরে।
ছবির ফর্সা গালে সঙ্গে সঙ্গে লাল আঙুলের ছাপ পড়ে গেল। সে মুখ চেপে ধরে আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল। মার খাবার কারণ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না।
ভরত গুপ্ত কঠোরভাবে জিজ্ঞেস করলেন, শোভন কোথায়?
ছবি আমতা আমতা করে বলল, আমি, আমি…
আরও মার খেতে চাও?
আপনার যদি মর্জি হয়…
শোনো, সে এ বাড়িতে এসেছে দুপুর সাড়ে তিনটের সময়। আমি খবর পেয়েছি, তারপর সে আর এখান থেকে বেরোয়নি। কোথায় রেখেছ তাকে?
ছবি উঠে দাঁড়িয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল, আমি ভেবেছিলাম ওকে বাঁচাব। ও ভয় দেখিয়ে আমার সব গয়না কেড়ে নিতে এসেছিল। আমি ওকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওপাশের ঘরে তালা বন্ধ করে রেখেছি।
কীরকম ভাবে ভয় দেখালো? বন্দুক পিস্তল এনেছিল নাকি?
না। ও বলছিল, আমার নামে বদনাম করবে আপনার কাছে।
বদনাম করার কিছু আছে কি?
আপনার অজানা তো কিছুই থাকে না।
তবে ভয় পেলে কেন?
ভয় পাইনি তো। বাচ্চা ছেলে, ভাবলাম একটা ভুল করে ফেলেছে–
ওর বয়েস আর তোমার বয়েস সমান। বাচ্চা হল কি করে? দেখো, বোধ-হয় ওর ঘুম ভেঙেছে, ওকে ডেকে নিয়ে এসো।
ছবি ঘর থেকে বেরিয়ে এল, ফিরে এল শোভনকুমারকে সঙ্গে নিয়ে। শোভনকুমার সত্যি সত্যি চোখ মুছছে। যেন এইমাত্র তার ঘুম ভাঙল।
সে হাতজোড় করে, থিয়েটারের বাজে অভিনেতাদের মতন ধরা ধরা কাঁপানো গলায় বলল, চাচাজি—
ভরত গুপ্ত হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললেন, বোসো। কলকাতায় যখন আসবে, আগে থেকে খবর দিয়ে আসবে। এই শহরে একলা একলা ঘোরাফেরা করা ভালো নয়। ব্যবসাপত্তর কেমন চলছে?
শোভনকুমার নিজের পৌরুষ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে বললে, ভালো!
হাটিয়ার দিকে দু-একর জমি নীলাম হবে। সেটা তুমি ডেকে নাও। পরে এক সময় এইচ ই সি-র জমির টান পড়বেই। তখন চড়া দাম পাবে।
ওদিকে জমির দাম বেশ বেড়েছে।
টাকার দরকার হলে বংশীলালকে জানাবে। তুমি নাকি আজকাল রেস খেলছ?
কই না তো! ও, সে মাত্র একবার—
টাকা বাড়াবার যেসব উপায় আমি বলে দিই, তা কি তোমার পছন্দ নয়? ঘোড়দৌড়ে টাকা করতে হবে! ও পথ ছাড়ো। কুনওয়ার সিং বলে যে-লোকটার সঙ্গে তোমার আজকাল খুব বন্ধুত্ব হয়েছে, তার সংস্রব একেবারে ছাড়বে। দরকার হয়, তাকে রাঁচি থেকে সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবে। তুমি না পার, বংশীলাল সেই ব্যবস্থা করবে। মনে থাকবে?
আজ্ঞে।
কুনওয়ার সিং দলিল জাল করে। ওসব লোকের সঙ্গে আমাদের কোনো কারবারের দরকার নেই। যাক। তোমার স্ত্রী ভালো আছেন তো?
ছবি তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো শোভনকুমারের দিকে। শোভনকুমার যে বিবাহিত, সেটা গোপন করে গিয়েছিল ছবির কাছে।
ভরত গুপ্ত এত দ্রুত এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছেন যে শোভনকুমার তাল রাখতে পারছে না। তার ব্যক্তিত্ব একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল। তার মনে হতে লাগল, তার কাকা তাকে যেকোনো সময়ে মৃত্যুদন্ড দেবেন। তাই আগে খেলা করছেন এইরকম।
ভরত গুপ্ত খর চক্ষে চেয়ে রইলেন শোভনকুমারের দিকে। প্রায় এক মিনিট কিছুই বললেন। শোভনকুমার মুখ নীচু করে বসে আছে।
ভরত গুপ্ত আস্তে আস্তে বললেন, তোমার বাবার কাছে আমি কথা দিয়েছিলাম যে অন্তত তিনবার আমি তোমার গুরুতর অপরাধ ক্ষমা করব। একবার তুমি আত্মারামের কাছে গিয়ে আমাদের বাড়ির সব গোপন কথা ফাঁস করে দিতে গিয়েছিলে। আর একবার তুমি স্টিলের কোটা নিয়ে বেশি চালাকি করতে গিয়ে আমার বিশ লাখ টাকা ক্ষতি করিয়ে দিয়েছ। আর আজ। এবার থেকে তুমি সাবধান হও। আমি তোমাকে ভালো হয়ে ওঠার সুযোগ দিচ্ছি। আমার নিজের ছেলেকেও আমি শাস্তি দিতে ছাড়ি না।