1 of 2

৫৬. বিজয় ও স্বৈরাচার

অধ্যায় ৫৬ – বিজয় ও স্বৈরাচার

গ্রিসে, খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৭ এবং ৬২২ এর মধ্যে স্পার্টা এবং এথেন্স পাপ নির্মূল করার চেষ্টা করে

আশুরবানিপালের মৃত্যুর সময়কাল আসতে আসতে গ্রিকরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন।

ট্রয় নগরীর ৪০০ বছরের পুরনো ধ্বংসস্তূপের ওপর গ্রিক যাযাবররা একটি নতুন শহর তৈরি করেছিলেন। গ্রিক শহর চ্যালসিস ও ইরিত্রিয়া থেকে বেশকিছু মানুষকে বসবাসযোগ্য নতুন ভূখণ্ড খোঁজার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এই ‘সেটলার’রা ইতালীয় দ্বীপপুঞ্জে কমপক্ষে ৯টি নতুন শহর খুঁজে পেয়েছিলেন। তারা উত্তরে এইজিয়ান অঞ্চলে আরও সেটলার পাঠান। চালসিস থেকে এত বেশি সেটলার পাঠানো হয়েছিল যে, উত্তরে এইজিয়ান অঞ্চলের নাম বদলে চ্যালচিডাইস রাখা হয়। এইজিয়ান উপকূল গ্রিক শহরে ভরপুর হয়ে গেল। প্লেটোর ভাষায়, গ্রিকরা ‘জলাভূমিতে ব্যাঙ যেভাবে বংশবিস্তার করে’, ঠিক সেভাবে ছড়িয়ে পড়ল।

যেসব সেটলার নতুন গ্রিক শহরে বসবাস করতে লাগলেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের মূল শহর বা মেট্রোপলিস (মায়ের শহর), বা অন্যভাবে বললে, তারা যে শহর থেকে এসেছিলেন, সেই শহরের নাগরিকত্বের দাবি ত্যাগ করতে হত। তাদের ‘গ্রিক পরিচয় পুরোপুরি নতুন শহরে ঘাঁটি গাড়তে পারার সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। তারা বিদেশি ভূমিতে খাদ্য উৎপাদনের জন্য ঝুড়িভর্তি গ্রিকশস্য নিয়ে এল। এছাড়াও, বিদেশি ভূখণ্ডে আগুন জ্বালানোর জন্যেও প্রয়োজনীয় উপকরণ এল গ্রিস থেকে। গ্রিক খাবার ও আগুনের সহায়তায় এই জাতি আরও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠতে লাগল।

ভূখণ্ডের স্বল্পতার কারণে গ্রিক উপদ্বীপের প্রতিটি মেট্রোপলিস, বা মূল শহর তাদের নিজস্ব উন্নয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন দিকে সেটলার পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল।

এক্ষেত্রে দেখা গেল, মূল শহর ও তার উপনিবেশের উন্নয়ন একইসঙ্গে হতে লাগল।

শুরু থেকেই, গ্রিক শহরগুলোতে এশীয়, ইতালীয়, ফিনিশীয় এবং আফ্রিকার সংস্কৃতির চিহ্ন দেখা যায়। গ্রিক সেটলাররা থ্রেস নামের একটি অঞ্চলে বসবাস করতে লাগল। এই ভূখণ্ড ছিল কৃষ্ণসাগরের দিকে ধাবমান গিরিখাতের উত্তরে—দীর্ঘদিন আগে ফ্রিজিয়ানরা সমুদ্র পেরিয়ে এ পথেই এশিয়া মাইনরে এসে পৌঁছিয়েছিলেন। গ্রিক অভিযাত্রীরা বসফরাস প্রণালির ভেতর দিয়ে কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করে। এই অঞ্চলে, কৃষ্ণসাগর ও এর উত্তরে আরও অতিরিক্ত ভূখণ্ড ঘিরে আইওনিয়ান শহর মিলেটাস থেকে আসা নারী-পুরুষেরা প্রায় ৭০টি জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বসবাস করছিল। এরও প্রায় ১০০ বছর আগে মিলেটাসে মাইসেনীয়া থেকে আসা লোকজন বসতি তৈরি করে।

মেগারা শহর থেকে পাঠানো সেটলাররা বসফরাস প্রণালির দুই পাশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি দখল করে নেন। তারা দুইটি জমজ শহর নির্মাণ করেন—পশ্চিম উপকূলে বাইজ্যানটিয়াম ও পূর্ব উপকূলে চালসেডন।

থেরা দ্বীপে ভূখণ্ডের স্বল্পতা এক ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গেছিল।

ইতিহাসের এই পর্যায়টি ঔপনিবেশিক আমল নামেই পরিচিত, তবে তা আমাদের পরিচিত ঔপনিবেশিক আমলের অনেক আগের ঘটনা। এর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৬৩০ সাল। এ সময় থেরার বাসিন্দারা প্রতি দুই পুত্রের মধ্যে একজনকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় ভূখণ্ড ‘লিবিয়ায়’ পাঠাতে শুরু করেন।

থেরার বাসিন্দাদের নিজেদের বয়ান মতে, প্রথম অভিযাত্রীদল আফ্রিকার উপকূলের বাইরের অংশের এক দ্বীপে অবতরণ করেছিল। তারপর মূল ভূখণ্ডের আরও বেশি অংশের দখল নিতে বাড়তি সেটলার পাঠানো হল। উত্তর-আফ্রিকার উপকূলবর্তী গ্রিক উপনিবেশের নাম হল সাইরিন। তবে সাইরিনরা এক ভয়াবহ ইতিহাসের কথা বলে। তারা দাবি করে, মূল সেটলাররা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিল এবং এই দ্বীপ এতটাই অনুর্বর ছিল যে, তারা থেরায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু থেরার বাসিন্দারা তাদেরকে ফিরে আসতে দিতে চায়নি। যখন তাদের নৌকাগুলো উপকূলের কাছাকাছি এল, তারা দূর থেকে তাদের উদ্দেশে তির ছুড়তে লাগল—তাদেরকে বলা হল লিবিয়ায় ফিরে যেতে। নিরুপায় হয়ে তারা ফিরে এল।

সাইরিনের প্রথম দুই রাজা ৫৬ বছর ধরে শহরটি শাসন করলেন। তাদের বিষয়ে হেরোডোটাস বললেন, ‘সাইরেনীয়রা প্রথম যখন লিবিয়ায় জনবসতি স্থাপনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন, তখন তাদের জনসংখ্যা যত ছিল, ৫৬ বছর পরেও তা খুব একটা বাড়েনি।’ অর্থাৎ, লিবিয়ার উপকূলে পরিবেশ-পরিস্থিতি এতটাই বৈরী ছিল যে, এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে জীবন ধারণ খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তবে থেরার পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। সেখানেও লোকজন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছিল।

পেলোপোনিসের কেন্দ্রে অবস্থিত স্পার্টা শহর এই সমস্যার একটি ভিন্নধর্মী সমাধান খুঁজে বের করে।

স্পার্টার গোড়াপত্তন করেছিলেন ডোরিয়ানরা। তারা মাইসেনীয় ধ্বংসস্তুপের ওপর এই শহরটি নির্মাণ করেন। উত্তরের পর্বতমালা থেকে প্রবহমান নদী ইউরোতাসের পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি উপত্যকায় স্পার্টার অবস্থান ছিল। নদীটি পানির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি ছিল অগভীর, পাথুরে ও নৌকা চলাচলের জন্য পুরোপুরি অনুপযোগী। এ কারণে স্পার্টার বাসিন্দাদের কোনো নৌবহর ছিল না। একাধারে উপকূলীয় গ্রিক শহরগুলো নৌকা ভর্তি করে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে সেটলার পাঠাচ্ছিল, আর এদিকে স্পার্টানরা (স্পার্টার বাসিন্দা) নিজেদের অস্ত্র ও বর্মে সজ্জিত করে অপরপাশের শহর মেসেনেতে হামলা চালাচ্ছিল। বলাই বাহুল্য, লুটের জন্য উপযুক্ত শহর ছিল মেসেনে।

তবে এই যুদ্ধজয় সহজ ছিল না। স্পার্টান ও মেসেনিয়ানরা প্রায় ২০ বছর যুদ্ধ করে। ৬৩০ সাল নাগাদ মেসেনে স্পার্টার অধীনস্থ শহরে রূপান্তরিত হয়। ততদিনে স্পার্টা একটি গ্রিক শহর থেকে উন্নত হয়ে একটি পৃথক রাজত্বে রূপান্তরিত হয়েছে। স্পার্টা রাজত্বে মেসেনিয়ানরা ভৃত্যশ্রেণিতে পরিণত হয়। তারা তাদের প্রভুদের জন্য শস্য উৎপাদনের কাজ করত। টিরটেয়াস বলেন, “তারা তাদের প্রভুদের জন্য গাধার মতো খাটনি খাটত। তাদের ভূখণ্ডে যত ফল উৎপাদন হত, তার অর্ধেক তারা প্রভুদের উদ্দেশে নিবেদন করত’। এভাবেই স্পার্টানরা এক অভিজাত সম্প্রদায়ে রূপান্তরিত হয়, যাদের পুরুষরা ছিল যোদ্ধা গোত্রীয় এবং নারীরা যোদ্ধাদের মাতা।

স্পার্টায় এক ভিন্নধর্মী শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, যা প্রাচীন পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায়নি—তাদের ছিল দুই রাজা। এরা সেই কালজয়ী যমজ দুই ভাইয়ের বংশধর, যারা কয়েক প্রজন্ম আগে স্পার্টার শাসক ছিলেন। স্পার্টানরা চাইতেন দুই রাজা সর্বক্ষণ একে অপরের বিরোধিতা করুক; একজনের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকা বা একজনই সবধরনের নির্দেশনা দেবে—এ বিষয়টি তারা পছন্দ করতেন না।

এই দুই রাজার শাসনব্যবস্থার নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও, এতে মেসোপটেমিয়ার মতো রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়নি। অ্যাসিরীয়রা যেমন ভাবতেন কে রাজা হবেন, তা স্বর্গ থেকে নির্ধারণ হয়ে আসে; স্পার্টানরা সেরকম কোনো ধারণার ধারে কাছ দিয়েও যায়নি। আশুরবানিপালের ‘মহান দেবতাদের নির্দেশে সার্বভৌম ক্ষমতার চর্চার’ ধারণাটি তাদের কাছে অপরিচিত ও অপছন্দনীয় ছিল। স্পার্টায় সুমেরীয়রা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতাকে ভয় পেতেন। এ বিষয়টি প্রাচীন গল্পগুলোতে সুন্দর করে প্রকাশ করা হয়েছে।

দুই রাজার মাঝে ক্ষমতা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলতে লাগলেও স্পার্টার বাসিন্দারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য নিজেদের মতো করে ক্ষমতা সঞ্চয় করতে লাগলেন। প্রাচীন আমলের যেকোনো রাজত্বে ৩টি প্রাথমিক ক্ষমতার উৎস ছিল : সামরিক ক্ষমতা, যার মাধ্যমে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে সেনাদলের নেতৃত্ব দেওয়া যায়; এরপর আসে বিচারিক ক্ষমতা, যার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন করা যায়; তৃতীয়ত, পুরোহিতদের ধর্মীয় ক্ষমতা, যার মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা যায়।

কিছু রাষ্ট্র অন্য সবার আগে এই ত্রিমুখী ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে রূপান্তরিত করেছিল, যার মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। তারা পুরোহিত, পূজারি, আইনপ্রণেতা ও রাজার সুনির্দিষ্ট ভূমিকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল অনেক আগেই। স্পার্টায় এই তিন ধরনের ক্ষমতাই রাজার হাতে ছিল, কিন্তু এর অনেক সীমাবদ্ধতাও ছিল। জিউসের পুরোহিতরা দেবতাদের কাছ থেকে ভবিষ্যদ্বাণী পেতেন। কিন্তু ৪ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের সেসব ভবিষ্যদ্বাণী শোনার অধিকার ছিল। অর্থাৎ অশুভ কোনো বার্তা এলে তা খেয়ালখুশিমতো অবজ্ঞা করতে পারতেন না রাজা—এসব বক্তব্যের সারাংশ সারমর্ম দেশের জনগণের গোচরে আনার পরেই কেবল এ-ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তিনি। আরও ঝামেলার মধ্যে ছিল যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি নিয়ম। রাজা চাইলেও যে-কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারতেন। তবে নিয়ম ছিল, তাকে সবার আগে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, এবং যদি কোনো কারণে পিছু হটতে হয়, তবে অন্যদের পরে তাকে পেছাতে হবে। এ কারণে তারা খুব সহজে কোথাও সেনা পাঠাতেন না।

হেরোডোটাসের আমল আসতে আসতে রাজার বিচারিক ক্ষমতা দুইটি অদ্ভুত ও সুনির্দিষ্ট ভাগে ভাগ হয়ে গেছিল। যদি কোনো ব্যক্তি তার কন্যাসন্তানকে কারো কাছে বিয়ে দেওয়ার আগে মারা যান, সেক্ষেত্রে রাজা তার পছন্দ অনুযায়ী সেই মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে দিতে বাধ্য ছিলেন। তার অপর দায়িত্ব ছিল সরকারি মহাসড়ক সংক্রান্ত বিষয়ের দেখভাল করা। বাকি সবকিছুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি ২৮-সদস্য-বিশিষ্ট জ্যেষ্ঠদের কাউন্সিল কাজ করত।

তবে স্পার্টার প্রকৃত ক্ষমতা কোনো রাজা, পুজারি বা কাউন্সিলের ২৮ সদস্যের কারো হাতে ছিল না। স্পার্টা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রতিটি অণু-পরমাণু একটি অলিখিত আইন ও নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হত।

আমরা এসব আইনের বিষয়ে জানতে পারি প্লুটার্কের কাছ থেকে। তবে তার জন্ম হয় স্পার্টার আমলের কয়েক শতাব্দী পরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, স্পার্টার আইনগুলো মানবজীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থেকে একেবারে মূল বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত।

স্পার্টার শিশুরা তাদের পরিবারের সম্পদ ছিল না, বরং স্পার্টার সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হত তারা। জ্যেষ্ঠদের কাউন্সিলের এখতিয়ার মধ্যে ছিল প্রতিটি শিশুকে যাচাই-বাছাই করার। তারা একইসঙ্গে নির্ধারণ করতেন, কোন্ শিশু বেঁচে থাকবে আর কোনটিকে হত্যা করা হবে। তেগেশাস পর্বতে আপোথেতাই নামে একটি বর্জ্য ফেলার জায়গা ছিল, যার অপর নাম ছিল ‘অবমুক্তকরণের স্থান’। বেঁচে থাকার উপযোগী নয় এরকম শিশুদের এখানে এনে হত্যা করা হত। ছেলেসন্তানের বয়স ৭ হলে তাদেরকে ‘ছেলেদের পালের’ সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হত, যারা দলবেঁধে যুদ্ধকৌশল শিখত এবং বনজঙ্গলে খাবারের খোঁজ করে বেড়াত।

নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়েও সেখানে ছিল বিচিত্র কিছু নিয়ম। এ বিষয়ক নিয়ম-কানুন অনেক বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হলেও, সারমর্ম ছিল এটাই :যেকোনো নারী, যেকোনো পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে পারতেন এবং যেকোনো পুরুষও চাইলে যেকোনো নারীর সঙ্গে রাত কাটাতে পারতেন, যদি উভয় পক্ষ রাজি থাকত। এর কোনো আইনগত বাধা ছিল না, এবং বিবাহিতদের সঙ্গীদের সম্মতিতেই এসব কার্যকলাপ(!) চলত।

বস্তুত, স্পার্টার অধিবাসীরা কৃচ্ছ্রতা সাধনের দিকে বিশেষ যত্নশীল ছিলেন। এছাড়াও, স্পার্টার বাসিন্দারা বেশিরভাগ সময় দলবদ্ধ হয়ে খাওয়াদাওয়া করতেন। এর জন্য সাধারণ মেস নির্ধারণ করা থাকত। দেশের নাগরিকরা যাতে লোভী হয়ে না পড়েন, সেজন্যই এই ব্যবস্থা। প্লুটার্ক ব্যাখ্যা দেন, ‘এর ফলে কেউ নিজের বাসায় টেবিলে ও দামি চেয়ারে বসে আরাম করতে পারতেন না এবং কেউ পশুর মতো নিয়ন্ত্রণহীন খাওয়াদাওয়াও করতে পারতেন না।’

স্পার্টার ভবিষ্যৎ যোদ্ধাদের মাতা, অর্থাৎ নারীদেরকে তরুণদের সামনে নগ্ন হয়ে নৃত্য করতে বাধ্য করা হত। ফলে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য অনুপ্রাণিত হতেন। তবে প্লুটার্ক জানান, এ বিষয়টির সমন্বয় করার জন্য অপর একটি আইন করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে তাদের সামনে তরুণদের টিটকারি মারার ও তাদের ভুল শুধরে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল।

বাড়ির ছাদ ও দরজা শুধু কুড়াল ও করাত দিয়ে নির্মাণ করা যেত। আরও উন্নতমানের যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল—মানুষ যাতে খুব বেশি চাকচিক্যময় পোশাক ও বিলাসবহুল আসবাবপত্রে অভ্যস্ত হয়ে না যায়।

এই আইনগুলো অলিখিত। আরেকটি মৌখিক আইনে বলা হয়েছে, এসব আইন লিপিবদ্ধ করা বেআইনি(!)। এই আইন অনুযায়ী, নিয়ম-কানুন তখনই কাজ করে যখন তা দেশের নাগরিকদের হৃদয়ে ও চরিত্রে লেখা হয়ে যায়। স্পার্টার বাসিন্দারা নিজেরাই একে অপরের দিকে নজর রাখতেন, যাতে কেউ আইনের লঙ্ঘন না করে। প্লুটার্ক মন্তব্য করেন, ‘এমনকি, একজন ধনী ব্যক্তিও প্রথমে নিজের ঘরে বসে খাবার খেয়ে তারপর ভরা পেট নিয়ে মেসে যেতে পারতেন না। কারণ সবাই এ-ধরনের বিষয়গুলোর দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন। কেউ যদি সাধারণ মেসে এসে কম খেতেন বা পান করতেন, তাহলে বাকিরা ধরেই নিত যে তারা বাসা থেকে খেয়ে এসেছেন। তখন এসব ব্যক্তিকে টিটকারি দেওয়া হত এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবের জন্য অপমান করা হত।’

কীভাবে এই নিরন্তর আইন প্রণয়ন স্পার্টাবাসীদের চরিত্রকে প্রভাবিত করেছে, সে-বিষয়টি জারসিসকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ডিমেরাটাস।

তিনি পারস্যের রাজাকে বলেন, ‘যদিও তারা মুক্ত, তবুও তারা পুরোপুরি মুক্ত নয়।’

‘আইনই তাদের প্রভু। আপনার প্রজারা আপনাকে যতটুকু ভয় পায়, তারচেয়ে স্পার্টার মানুষ তাদের আইনকে অনেক বেশি ভয় পায়। আইন তাদেরকে যা করতে বলে, তারা তাই করে’, যোগ করেন তিনি।

ডিমেরিটাস আরও বলেন, ‘এবং আইন কখনো পরিবর্তন হয় না। তাদেরকে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষের যত সেনাই থাকুক-না কেন, তারা কখনো লেজ তুলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে পারবে না এবং তারা জয়ী হোক বা নিহত হোক, তাদেরকে আমৃত্যু নিজ নিজ অবস্থান ধরে রাখতে হবে।’

এই দর্শনের মাধ্যমে স্পার্টা রাষ্ট্র প্রাচ্যের রাজতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়েছিল।

অপরদিকে অ্যাথেন্স শহরও প্রথাগত শহরের চেয়ে বড় কিছুতে পরিণত হয়েছে। তারা স্পার্টা থেকেও আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। সেখানে রাজা বলে কোনোকিছুর অস্তিত্বই ছিল না।

অতি প্রাচীন আমলে অ্যাথেন্স ছিল একটি মাইসেনীয় শহর এবং এর শাসক ছিলেন পৌরাণিক চরিত্র থেসিউস। থেসিউসের প্রাসাদের নাম ছিল অ্যাক্রোপোলিস, যেটি একটি উঁচু পাথরের ওপর স্থাপন করা হয়েছিল। অ্যাক্রোপোলিস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘শহরের সর্বোচ্চ জায়গা এবং এটি প্রকৃতপক্ষেই একেবারে অ্যাথেন্সের কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল। মাইসেনীয়দের আধিপত্যের শেষের দিনগুলোতে অ্যাথেন্সের অনেক বাসিন্দা অন্য কোথাও চলে যান। বাকিরা দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিছু মানুষ শহরটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য থেকে যান।

২ থেকে ৩ শতাব্দীর মাঝে ধীরে ধীরে অ্যাথেন্স এসব বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে যখন ঔপনিবেশীকরণ শুরু হয়, তখন অ্যাথেন্স তার নিজের নাগরিকদের পূর্বাঞ্চলে পাঠানো শুরু করে। এশিয়া মাইনরের উপকূলে আইওনিয়ান সম্প্রদায়গুলোর অংশ হওয়ার জন্য তারা সচেষ্ট হন।

৬৫০ ও তার আগের বছরগুলোর ইতিহাস খুব দায়সারাভাবে লেখা হয়েছে এবং প্রকৃত ঘটনা ঘটার অনেক বছর পরে। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০ সালের দিকে প্যালেস্টাইনের সিজারিয়ার বিশপ অ্যাথেন্সের রাজাদের একটি তালিকা তৈরি করেন, যেখানে তাদের শাসনামলের দিন-তারিখসহ বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা শুরু হয়েছে ১৫০০ সাল থেকে এবং তা ৭০০ বছর জুড়ে বর্ণিত।

সেক্রপস থেকে শুরু করে অ্যাথেন্স রাজা ও তাদের বংশধরদের মোট রাজত্বের সময়সীমা ছিল ৪৫০ বছর।

তবে এই তালিকাটি কোনোদিক দিয়েই নিখুঁত নয়। এর সঙ্গে তুলনা করা যায় গ্রিক দেবতা ডায়োনিসিউসকে, যিনি অ্যাথেন্সের পঞ্চম রাজার আমলে দেবতা জিউসের ঊরু থেকে জন্ম নেন। তবে এ থেকে এটুকু বোঝা যায় যে এক কালে অ্যাথেন্সে রাজারা রাজত্ব করতেন। তবে কালের প্রবাহে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা কমে আসে। প্রায় ৪৫০ বছর পর রাজার ভূমিকা পরিবর্তন হয়ে যায়। তখনও রাজার কাছ থেকে তার ছেলে শাসনভার পেতেন। তবে শাসককে সেসময় ‘আরকন’ বা প্রধান বিচারপতি নামে অভিহিত করা হত। অপর এক কর্মকর্তা, যাকে পোলমার্চ বলা হত, তিনি সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব নিতেন এবং অপর একজনের ঘাড়ে ন্যস্ত হত ধর্মীয় ব্যাপারগুলো।

১৩ জন আরকনের শাসন পেরিয়ে অ্যাথেন্সের বাসিন্দারা ভোটের মাধ্যমে আরকনদের ১০ বছরের মেয়াদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করলেন। ৭০ বছর পর, আবারও এল পরিবর্তন। এবার এই দায়িত্বের মেয়াদ কমে ১ বছর হয়ে গেল। ইউসেবিয়াস বলেন, ‘প্রথম বার্ষিক আরকনের নাম ছিল ক্রিইওন। তিনি ২৪তম অলম্পিয়াডের বছরে (অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬৮৪ সালে) তিনি দায়িত্ব নেন।’

ইউয়াবিয়াসের কাছ থেকে আমরা এটুকুই জানতে পারি। এরপর তিনি অন্য পথে হেঁটে টানা ২৪৯টি অলিম্পিকের সকল চ্যাম্পিয়নের বিস্তারিত বর্ণনা লেখার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

তবে আরও বিচ্ছিন্ন বর্ণনাকে একত্রে জোড়া দিলে আমরা দেখতে পাই, ধীরে ধীরে এ-অঞ্চলগুলোতে এক রাজার রাজতন্ত্রের পরিবর্তে একাধিক শাসকের শাসনের দিকে এগিয়ে যায়। এটি ছিল একধরনের ‘অভিজাত গণতন্ত্র’। ৬৮৩ সাল নাগাদ, আরকনের দায়িত্ব পালন করতেন ৯ জন জমিদারের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড। অন্যান্য জমিদাররা তাদেরকে নির্বাচন করতেন। তবে অ্যাথেন্সের সকল বাসিন্দার সমাবেশ, বা একলেসিয়াতে তাদের এই নির্বাচনের অনুমোদন নেওয়া লাগত। সাবেক আরকনরা কাউন্সিল অব আরেইওপাগোসের সদস্য হয়ে যান। এই কাউন্সিল অ্যাক্রোপলিসের নিচে, পশ্চিম অংশের কাছাকাছি জায়গায় ‘হিল অব এরেস’ নামে একটি শৃঙ্গের উপর বৈঠক করত।

অ্যাথেন্সের রীতিনীতি স্পার্টার চেয়ে বেশি জটিল ও অপেক্ষাকৃত কম উপযোগী ছিল। কিন্তু অপরদিকে, অ্যাথেন্সের বাসিন্দারা স্পার্টানদের মতো সর্বক্ষণ অখুশি থাকতেন না এবং তাদের বিস্তারের জন্য যুদ্ধবিগ্রহের প্রয়োজন পড়ত না। ৬৪০ সাল নাগাদ অ্যাথেন্স তার চারপাশের সব প্রতিবেশীর নিজ রাজত্বের অংশ করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এই ‘অন্তর্ভুক্তিকরণ’ প্রক্রিয়াটি বেশ শান্তিপূর্ণই ছিল বলা যায়। কিছুটা দূরে অবস্থিত গ্রামগুলো অ্যাথেন্সের সুরক্ষা পেয়ে উপকৃত ও কৃতজ্ঞ হয়েছিল। শহরের দক্ষিণে অবস্থিত আত্তিকা নামের একটি ছোট ভূখণ্ডের পুরো অংশটিই বলতে গেলে অ্যাথেন্সের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অ্যাথেন্সের পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরে নিচু পর্বত ছিল। তারা তাদের পারিপার্শ্বিক থেকে খুব বেশি দূরের কোনো অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করার চেষ্টা করেনি।

তবে ৬৩২ সালে এই অর্ধ-গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো হঠাৎ করেই সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সাইলন নামের এক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন আরকনদের দায়িত্বে পরিবর্তন আনার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ইউসেবিয়াসের চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ডিয়াউলোস বা ‘ডবল রেস’ নামের ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা টানা ৮ বারের বিজয়ী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।

থুসিদিদেসের বর্ণনায় : ‘সাইলন ডেলফিতে এসে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তখন তার কাছে আসে দেবতাদের নির্দেশ—তাকে বলা হয়, জিউসের উদ্দেশে নিবেদিত বৃহত্তর উৎসবে অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস দখল করে নাও। ডেলফির ভবিষ্যদ্বক্তা বা ওরাকল ছিলেন একজন পূজারিনী, যিনি একটি তিন- পেয়ে টুলের উপর বসে থাকতেন। পারনাসাস পর্বতের একপাশে অবস্থিত সিবিলিন পাথর নামে একটি বড় আকারের পাথরের টুকরোর খাঁজে এই টুল বসানো হয়েছিল। উপাসনাকারীরা পাথর বেয়ে উপরে উঠতেন এবং পূজারিনীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন। এরপর তিনি পৃথিবীর দেবী গাইয়ার কাছে উত্তর চাইতেন এবং সেই পাথরে খাঁজে তার কাছ উত্তর চলে আসত। এরপর তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় উপস্থিত সন্ন্যাসীদের কাছে গাইয়ার বাণী পৌঁছে দিতেন। এরপর সেই সন্ন্যাসীরা ছয় ছত্রের কবিতা তৈরি করে এমন একধরনের উত্তর তৈরি করতেন, যেগুলোতে সোজাসাপ্টা কোনো তথ্য পাওয়া যেত না। একেকজন একেকভাবে এর অর্থ খুঁজে বের করতেন। এই জটিল প্রক্রিয়ার কারণে কেউ সরাসরি ওরাকলের বাণীর বিরোধিতা করতে পারতেন না।

ওরাকলের কাছ থেকে বাণী পেয়ে সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন সাইলন। তিনি ধরে নিলেন ‘জিউসের উদ্দেশে নিবেদিত বৃহত্তর উৎসব’ বলতে আসন্ন অলিম্পিকের কথাই বলা হচ্ছে। কারণ, অলিম্পিক ছাড়া আর কোন্ উৎসব এ- ধরনের ক্ষমতা দখলের জন্য উপযুক্ত। আশ্বস্ত হয়ে সাইলন তার শ্বশুরের কাছ থেকে একদল সশস্ত্র যোদ্ধা ধার করলেন, তার নিজের বন্ধুদের জড়ো করলেন এবং অ্যাক্রোপলিস দখল করে নিলেন। তিনি নিজেকে ‘একনায়ক’ বলে অভিহিত করলেন।

গ্রিক রাজনীতিতে ‘একনায়ক’ একটি কারিগরি শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর মাধ্যমে সেসব রাজনীতিবিদদের কথা বলা হত, যারা ক্ষমতায় আরোহণের স্বাভাবিক পন্থাকে (নির্বাচন ও অনুমোদন) কাঁচকলা দেখিয়ে জোর করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিতেন। সকল একনায়ক নির্দয় ছিলেন না। তবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তাদেরকে সাধারণত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু রাখতে হত। উপদ্বীপের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন গ্রিক দ্বীপে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে একনায়কদের শাসনামল দেখা যায়। সাইলনের শ্বশুরও মেগারা শহরের টাইর‍্যান্ট বা একনায়ক ছিলেন এবং এ শহরটি অ্যাথেন্স থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। এ কারণে সাইলনকে সেনা ধার দিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তার।

তবে সাইলন অলিম্পিককে ‘জিউসের মহোৎসব’ হিসেবে ধরে নিলেও প্রকৃতপক্ষে ওরাকল আরও পরের একটি উৎসবের কথা বলছিলেন, যেটি শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে অনুষ্ঠিত হয়। বস্তুত, খারাপ সময়ে ওরাকল শহর দখলের প্রয়াসটি হাতে নিয়েছিলেন।

এ থেকে প্রমাণ হয়, তিনি কোনো অভিজ্ঞ ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন না। রাজনীতির খেলার সঙ্গে জড়িত যেকোনো ব্যক্তি এটা বুঝবেন যে, এ-ধরনের সামরিক ক্যু বা উৎখাত অভিযানের জন্য সেরা সময় সেটাই, যখন শহরের বেশিরভাগ মানুষ কোনো উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য শহর ছেড়ে দূরে যাবেন। কিন্তু অলিম্পিকের সময় সম্পূর্ণ উলটো ঘটনা ঘটত। খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে অ্যাথেন্সবাসীরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। একপর্যায়ে শহর রক্ষার দায়িত্ব অর্পিত হল ৯ আরকনের ওপর।

ইতোমধ্যে সাইলন ও তার বিপর্যস্ত সঙ্গীরা খাবার ও পানির অভাবে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সাইলন ও তার ভাই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। বাকিরা যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন। কেউ কেউ দুর্ভিক্ষে মারা গেলেন।

ষড়যন্ত্রকারীরা দেবী অ্যাথেনার নাম করে জীবন ভিক্ষা চাইলেন। আরকনরা তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিতে একমত হলেন। কিন্তু যখন অন্যান্যরা মন্দির ছেড়ে যেতে শুরু করলেন, আরকনরা তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। অনেকেই দেবী দিমিতার ও পার্সিফোনির বেদিতে নিজেদের অর্পণ করলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদেরকে হত্যা করা হল। এটা ছিল প্রচলিত রীতির চরম লঙ্ঘন, কারণ কোনো দেবতা বা দেবীর চরণে জীবন ভিক্ষা চাইলে তাকে ছেড়ে দেওয়া ছিল আবশ্যিক বিষয়।

তাদের এই অপরাধের জন্য অন্যান্য অ্যাথেন্সবাসীরা এই হত্যাকারী আরকনদের নির্বাসনে পাঠাল। এরপর কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এবং বেশ রূঢ়ভাবে। তাদের সাবেক মৃত সহকর্মীদের মরদেহ মাটির নিচ থেকে খুঁড়ে বের করে এই অপরাধী আরকনদের দিকে ছুড়ে ছুড়ে মারা হয়। সাইলন পলাতক থেকে যান এবং অ্যাথেন্সের ইতিহাসের তার বিষয়ে আর কোনোকিছুই জানা যায় না।

কিন্তু এরপর থেকেই অ্যাথেন্সে মারামারি ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এ থেকে এটা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়—আরকনদের শাসনে ভালো নেই অ্যাথেন্স। আরকনরা বেশিরভাগ সময়ই তাদের খেয়ালখুশিমতো কাজ করতেন। কয়েক শতাব্দী পরে রচিত অ্যাথেন্সের সংবিধানে অ্যারিস্টটল উল্লেখ করেন : অ্যাথেন্সের তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ বস্তুত কয়েকজন বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও শক্তিশালী মানুষ মিলে চালাতেন। স্পার্টানরা যেমন নিজেদের স্বাধীন ভাবলেও তাদের আইনের কাছে দাস হিসেবে বিবেচত হতেন; একইভাবে অ্যাথেন্সের মানুষও শুধু নামমাত্র স্বাধীন ছিলেন।’

‘প্রকৃতপক্ষে, দরিদ্ররা, তাদের স্ত্রী ও শিশুরা ধনীদের দাসই ছিলেন’, যোগ করেন এই প্রখ্যাত দার্শনিক। অ্যারিস্টটল আরও বলেন, ‘তাদেরকে ছয়-অংশের ভাড়াটিয়া বলা হত, কারণ তারা এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের চাষের জমি বর্গা নিতেন। পুরো দেশের সব জমির মালিকানা অল্প কয়েকজনের হাতেই ছিল। তারা যদি কখনো “ভাড়া” দিতে ব্যর্থ হতেন, তাহলে তাদেরকে ও তাদের সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হত। এ কারণে বলা যায়, জনসাধারণের জন্য দাসত্বই ছিল সবচেয়ে তেতো বিষয়। প্রশাসনের মোটামুটি সবকিছুই তারা অপছন্দ করতেন, কিন্তু সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতেন এই দাসত্বকে। নিজেরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করলেও, দিনশেষে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রায় কোনো অর্থই তাদের কাছে থাকত না।

এই নিরন্তর বিক্ষোভের উত্তরে অ্যাথেন্সের বাসিন্দা এমন একটি কাজ করলেন, যা স্পার্টার বাসিন্দারা বছরের পর বছর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছেন—তারা তাদের সব অলিখিত ও মৌখিক আইনগুলোকে লেখনীর আওতায় নিয়ে এলেন। ততদিনে শুধু অভিজাত বংশের সদস্যদের মুখের কথায় রাজ্য শাসন করা আর যথেষ্ট থাকেনি। অ্যাথেন্সের লিখিত আইন জরুরি ছিল।

এই সুবিশাল মৌখিক রীতিকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে লিখিত নীতিমালায় রূপান্তরের সুবিশাল দায়িত্বটি ঘাড়ে নিলেন ড্রেকো নামের এক কাউন্সিলর। ড্রেকোর প্রণীত অ্যাথেন্সের আইন নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। হত্যা, চুরি ও ব্যভিচারের মতো বিষয়গুলোকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হল এবং অসংখ্য অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করা হল। হাম্মুরাবির আইনের মতো ড্রেকোর আইনেও বড় ও ছোট অপরাধের মাঝে তেমন কোনো বাছবিচার করা হত না—সব ধরনের অপরাধের জন্য সাধারণ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। প্লুটার্ক জানান, ‘যাদের বিরুদ্ধে কাজ না-করার অভিযোগ আনা হত, তারাও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হতেন। শাকসবজি ও ফলমূল চুরির শাস্তি আর মন্দিরে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের শাস্তিও একই ছিল।’

যখন ড্রেকোকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন তিনি এত নাটকীয় শাস্তির বিধান তৈরি করলেন, তার প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ‘এমনকি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অপরাধেরও শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত এবং আমি বড় অপরাদের জন্য এরচেয়ে গুরুতর কোনো শাস্তি খুঁজে পাইনি।’ এ-ধরনের গুরুতর ও ভয়াবহ শাস্তির কারণে ইংরেজি ভাষায় ড্রেকোনিয়ান ও ড্রাসটিক শব্দগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এসব শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘নিখুঁত ও ত্রুটিহীন’ মানুষের ধারণা। স্পার্টানদের অপরাধ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে এটি বেশ মিলে যায়।

প্লুটার্ক এ প্রসঙ্গে আমাদেরকে একটি মজার গল্প শুনিয়েছেন। তার বর্ণনায়, একবার এক গ্রিক এক স্পার্টানকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের দেশে কেউ ব্যাভিচার করলে তার শাস্তি কী? তখন উত্তরে স্পারটার নাগরিক জানালেন, তাকে জরিমানা দিতে হবে। তার পশুর পাল থেকে একটি মহিষ দিতে হবে তাকে। তবে এই মহিষকে এত বড় হতে হবে যে এটা যেন টাইগেতাস পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং ইউরোতাস থেকে পানি পান করতে পারে।’

‘কিন্তু এত বড় মহিষ কই পাওয়া যাবে?’, অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন গ্রিক পর্যটক। স্পার্টানের উত্তর, ‘স্পার্টায় কীভাবে ব্যভিচারী মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে?’

এতদিন পর্যন্ত এসব আইন শুধু স্পার্টার বাসিন্দারা হৃদয়ে ধারণ করতেন। অ্যাথেন্সের নেতারাও মনে করতেন যে একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজে নাগরিকরা সুপ্রশিক্ষিত ও সতর্ক থাকবে—তাদের পক্ষে এ-ধরনের অপরাধ করা সম্ভবই না। উভয় শহর তাদের রাজাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। উভয়ই রাজার পরিবর্তে ভিন্ন কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী শক্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিল।

উভয় ক্ষেত্রেই, প্রত্যেক নাগরিককে ‘নিখুঁত’ হিসেবে গড়ে তোলার তীব্র ইচ্ছার কারণে শহরগুলোতে নাগরিকরাই একে অপরের ওপর নজরদারি শুরু করল। অ্যাথেন্সের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা এক স্টেলেতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। ড্রাকোর প্রচলন করা মৃত্যুদণ্ড অ্যাথেন্সের নাগরিকরা নিজেরাই দিতে পারতেন। যে-কেউ কোনো অপহরণকারী, ব্যভিচারী বা চোরকে হাতেনাতে ধরতে পারলে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারতেন। এক অর্থে, সমাজে সমতা আনার জন্য তৈরি করা আইন বরং সকল নাগরিককে এই আইন প্রয়োগ করার সুযোগ এনে দেয়।

খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ সাল নাগাদ সোলোন নামক অ্যাথেন্সের এক নাগরিক সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় উদ্যোগ হাতে নিলেন। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন, কিন্তু তার বাবা দান-খয়রাতে পারিবারিক সম্পদের বেশিরভাগ অংশ বিলিয়ে দেন। পারিবারিক দারিদ্র্যের কারণে তার ছেলে ব্যবসাবাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হন। তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ভালো ভালো খাবার ও পানীয় এবং প্রেম-ভালোবাসায় নিমজ্জিত থেকে তিনি তার অলস সময় পার করতেন।

প্লুটার্ক মন্তব্য করেন, ‘সুন্দর ছেলেরাও সোলোনের পছন্দের ছিল।’

কালের প্রবাহে সোলোনের ব্যবসার সম্প্রসারণ হল এবং তার সমসাময়িক অনেক ব্যবসায়ীর মতো তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন। পুটার্কের কাছ থেকে আমরা সোলোনের জীবনের বেশিরভাগ বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, যখন অ্যাথেন্স সুনিশ্চিতভাবে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে লাগল, তখন ‘সবচেয়ে বোধবুদ্ধিসম্পন্ন এথেনীয়রা সোলোনের পানে চাইল’, কারণ তিনি একজন সম্মানিত মধ্যবিত্তশ্রেণির সদস্য ছিলেন। তিনি ‘ধনাঢ্যদের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, বা গরিবদের বিভিন্ন সমস্যার ভারে ভারাক্রান্ত ছিলেন না’—এ- কারণে ধনীরা তাকে তার মধ্যম পর্যায়ের সম্পদ ও গরিবরা তার সততার জন্য তাকে পছন্দ করল।

নির্বাচিত আরকন সোলোন ড্রাকোর সব আইন বাতিল করলেন (কাউকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান ছাড়া) এবং নতুন করে সব আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেন। তিনি সবধরনের আইন লিখলেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল সরকারি কার্যালয়ে চাকুরি করার যোগ্যতা থেকে শুরু করে মৃতদের জন্য শোক ও মাতম করার গ্রহণযোগ্য মাত্রা। উদাহরণস্বরূপ, কেউ শোক প্রকাশ করতে চাইলে তাতে কোনো সমস্যা ছিল না—তবে গরু জবাই দেওয়া, নিজেকে ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা অথবা এমন সব মানুষের কবর দেখতে যাওয়া, যারা তাদের আত্মীয়ই নন—এসবই মাত্রাতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল।

তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়টি ছিল শহরে ধনী ও গরিবের মাঝে সম্পদের সুষম বণ্টন, এবং স্বভাবতই, এ কাজের জন্য কেউ ধন্যবাদ পেতে পারেন না। তবে প্লুটার্কের ভাষায়, এ বিষয়ে ‘উভয় পক্ষেরই উচ্চাশা ছিল’, যার অর্থ, প্রকারান্তরে সোলোন যেকোনো একদল মানুষকে হতাশ করতে যাচ্ছিলেন, এবং তিনি ঠিক তাই করেন। তিনি দরিদ্রদের অতিমানবীয় পর্যায়ের করের বোঝা পুরোপুরি মওকুফ করে দেন, এবং ভূমির পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে নিশ্চিত করলেন, যেসব চাষি যুগের পর যুগ অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছিল, তারাই সেসব জমির মালিক যেন হতে পারে।

স্বভাবতই, এতে অ্যাথেন্সের অভিজাত সম্প্রদায় খেপে গেল। ঋণদাতারাও খুশি হতে পারলেন না—তারা কস্মিনকালেও আশা করেননি তাদের আয়ের বড় একটি উৎসকে এভাবে সোলোন গলা টিপে হত্যা করবেন। তারা ভেবেছিলেন এই করের বোঝা সব ঋণগ্রস্তদের মাঝে সমভাবে বণ্টন করা হবে। তবে এসব উদ্যোগের পরেও সবচেয়ে দরিদ্রদের কাছে কিছুই থাকল না। প্লুটার্ক বলেন, ‘সোলোন নিজেই বর্ণনা করেন, তার উদ্যোগে অ্যাথেন্সের সবাই খেপে গেল, কেউই খুশি হতে পারল না।’

এ প্রসঙ্গে তিনি সোলোনের রচিত কবিতার উল্লেখ করেন, যেটি এরকম :

‘এক সময় তাদের মন ভরে উঠেছিল বিভিন্ন অলীক আশায়,
কিন্তু এখন রাগান্বিত হয়ে তারা সকলে আমার পানে চাইল,
মনে হল যেন আমি তাদের শত্রু।’

সোলোনের এক পরিচিত ব্যক্তি আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, ঘটনাপ্রবাহ এদিকেই আগাবে। তিনি অ্যাথেন্সে অপরিচিত মুক। অ্যাথেন্সে বেড়াতে এসে তিনি আবিষ্কার করলেন, সোলোন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে নতুন আইন লেখায় মন দিচ্ছেন। সে ব্যক্তি হেসে বললেন, ‘আপনার এসব ডিগ্রির সঙ্গে মাকড়শার জালের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।’

এই অপরিচিত মুখের বরাত দিয়ে প্লুটার্ক আরও বলেন, ‘তারা যেকোনো দুর্বল ও উল্লেখযোগ্য নয় এরকম ব্যক্তিকে জালে আটকে সংকুচিত করে ফেলবে। কিন্তু যাদের হাতে ক্ষমতা ও সম্পদ রয়েছে, তারা খুব সহজেই এটাকে কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলবে।

সোলোন তার কথা মেনে নিলেন না। তিনি জোর দিয়ে বললেন, কেউ এসব আইন ভঙ্গ করবে না, যদি সেগুলোকে নাগরিকদের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে প্রণয়ন করা হয়। এটা ছিল মানবপ্রকৃতির একটি আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আইন প্রণয়ন শেষ হওয়ার পরপরই তিনি ১০ বছরের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যান। তার অনুপস্থিতিতে আইনগুলো মানুষ কীভাবে নেয় এবং ঠিক কতখানি কার্যকর হয়, এটা দেখাই ছিল তার উদ্দেশ্য। হেরোডোটাস বলেন, ‘তিনি বিশ্বভ্রমণে যাওয়ার দাবি জানালেন। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি তার নিজের হাতে প্রণীত কোনো আইন পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই চলে গেলেন।’

প্লুটার্ক লেখেন, ‘একবার তার আইনগুলো বলবৎ হওয়ার পর বিষয়টা এমন দাঁড়াল যে, প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ তার কাছে এসে নতুন আইনগুলো নিয়ে তাদের অনুমোদন বা অস্বীকৃতি জানাতে আসতে লাগলেন, অথবা আইন থেকে কিছু সরিয়ে ফেলার দাবি জানাতেন; তারপর আবারও তারা আইন বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করতেন এবং প্রতিটি অংশের বিস্তারিত ব্যাখা দেওয়ার আহ্বান জানাতেন।

এতে লাভ কী হল?

ত্যক্তবিরক্ত হয়ে সোলোন ‘বিশ্বভ্রমণে’ চলে গেলেন এবং আরও একবার অ্যাথেন্সের রাজনীতি সেই পুরনো বিভাজনমূলক ঝগড়াঝাটিতে ফিরে গেল। প্লুটার্ক দুঃখসহকারে বলেন, এসব আইনের ফলাফল বস্তুত সেই অজ্ঞাত দর্শনার্থীর পূর্বাভাসকেই আরও ভালো করে প্রমাণ করল। সোলোনের প্রত্যাশা কোনোদিক দিয়েই মিটল না।’ আরও একবার এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগে অ্যাথেন্সে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো না; শান্তি আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। অবধারিতভাবেই, একদল অ্যাথেনীয় জনগোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টায় রত হল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *